কোরান সূরা তাওবা আয়াত 119 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Tawbah ayat 119 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা তাওবা আয়াত 119 আরবি পাঠে(Tawbah).
  
   

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ﴾
[ التوبة: 119]

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। [সূরা তাওবা: 119]

Surah At-Tawbah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Tawbah ayat 119


ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্‌কে ভয়শ্রদ্ধা করো আর সত্যপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হও।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১১৯. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী এবং তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং ঈমান, কথা ও কাজে সত্যবাদীদের সাথেই থাকো। কারণ, সত্য ছাড়া তোমাদের কোন নাজাত নেই।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।[১] [১] সত্যবাদিতার কারণে আল্লাহ তাআলা সেই তিনজন সাহাবী ( রাঃ )-এর শুধু অপরাধই ক্ষমা করে দেননি; বরং তাঁদের তওবার কথা কুরআনের আয়াতরূপে অবতীর্ণ করেছেন। ফলে মু'মিনদেরকে আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করার ও সত্যবাদীদের সাথে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ এই যে, যে ব্যক্তির মাঝে আল্লাহ-ভীতি থাকবে সে সত্যবাদীও হবে। আর যে মিথ্যুক হবে, জেনে রাখুন যে, তার অন্তর আল্লাহ-ভীতি থেকে খালি হবে। এই জন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মিথ্যা বলা মুনাফিক্বের একটি লক্ষণ।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক []। [] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে জিহাদ থেকে বিরত থাকায় যে ক্রটি কতিপয় নিষ্ঠাবান সাহাবীর দ্বারাও হয়ে গেল এবং পরে তাঁদের তাওবাহ কবুল হলো, এ ছিল তাঁদের তাকওয়ারই ফলশ্রুতি। তাই এ আয়াতের মাধ্যমে সমস্ত মুসলিমকে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর “ তোমরা সবাই সত্যবাদীদের সাথে থাক” বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সত্যবাদীদের সাহচর্য এবং তাদের অনুরূপ আমলের মাধ্যমেই তাকওয়া লাভ হয় । আর এভাবেই কেউ ধ্বংস থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে। [ ইবন কাসীর ] হাদীসেও সত্যবাদিতার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ তোমরা সত্যবাদিতা অবলম্বন কর; কেননা সত্যবাদিতা সৎকাজের দিকে নিয়ে যায়, আর সৎকাজ জান্নাতের পথনির্দেশ করে । মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তাকে সত্যবাদী হিসেবে লিখা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক; কেননা মিথ্যা পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, আর একজন মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টায় থাকে শেষ পর্যন্ত তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখা হয়।” [ বুখারী ৬০৯৪; মুসলিমঃ ২৬০৭ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১১৮-১১৯ নং আয়াতের তাফসীর: আব্দুল্লাহ ইবনে কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ ) তাবুকের যুদ্ধে তার অংশগ্রহণ না করার কাহিনী এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে গমন না করার ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, তাবুকের যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোন যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সঙ্গ লাভ থেকে বঞ্চিত হইনি। অবশ্য বদর যুদ্ধেও আমি শরীক হতে পারিনি। তবে এ যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি তাদের প্রতি কোন দোষারোপ করা হয়নি। ব্যাপারটা ছিল এই যে, ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরায়েশদের একটি যাত্রীদলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেখানে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুযায়ী পূর্বে কোন দিন নির্ধারণ করা ছাড়াই তার শত্রুদের সাথে মুকাবিলা হয়। আকাবার রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথেই ছিলাম, তিনি ইসলামের উপর আমাদের বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। বদরের যুদ্ধে উপস্থিতি অপেক্ষা আকাবার রাত্রে উপস্থিতি আমার নিকট বেশী পছন্দনীয় ছিল, যদিও জনগণের মধ্যে বদরের খ্যাতি বেশী রয়েছে। এখন তাবুকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে আমি যে অংশগ্রহণ করতে পারিনি তার ঘটনা এই যে, যেই সময় আমি তাবুকের যুদ্ধ থেকে পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম সেই সময় আমার আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই স্বচ্ছল। ইতিপূর্বে আমার কখনো দু’টি সওয়ারী ছিল না। কিন্তু এই যুদ্ধে আমি দু’টি সওয়ারীও রাখতে পারতাম। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন কোন যুদ্ধ যাত্রার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি সাধারণভাবে এ সংবাদ ছড়িয়ে দিতেন না। এই যুদ্ধে গমনের সময় কঠিন গরম ছিল এবং এটা ছিল খুবই দূরের সফর। আর এই সফরে বন জঙ্গল অতিক্রম করতে হয়েছিল এবং বহু সংখ্যক শত্রুর মুকাবিলা করতে হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মুসলিমদেরকে এ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে, তারা তাদের সুবিধামত শত্রুর মুকাবিলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তিনি নিজের ইচ্ছার কথা মুসলিমদের নিকট প্রকাশ করেছিলেন। মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে এতো অধিক সংখ্যায় ছিলেন যে, তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা কঠিন ছিল। কা'ব ( রাঃ ) বলেন, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম হবে যাদের অনুপস্থিতির খবর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জানতে পারবেন। বরং এই ধারণা ছিল যে, সৈন্যদের সংখ্যাধিক্যের কারণে অনুপস্থিতদের খবর তিনি জানতেই পারবেন না, যতক্ষণ না আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয়। এই যুদ্ধের উদ্দেশ্যে এমন সময় যাত্রা শুরু করা হয়েছিল যখন গাছের ফল পেকে গিয়েছিল এবং গাছের ছায়া ছিল তখন অনেক আরামদায়ক। এমতাবস্থায় আমার প্রবৃত্তি আরামপ্রিয়তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এবং মুসলিমরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সকালে উঠে আমি জিহাদের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বের হতাম কিন্তু শূন্য হাতে ফিরে আসতাম। প্রস্তুতি এবং সফরের আসবাবপত্র ক্রয় ইত্যাদি কিছুই করতাম না। মনকে এ বলে প্রবোধ দিতাম যে, যখনই ইচ্ছা করবো তখনই ক্ষণিকের মধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলবো। এভাবে দিন অতিবাহিত হতে থাকে। জনগণ পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলে, এমন কি মুসলিমরা এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জিহাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে দেন। আমি মনে মনে বলি যে, দু একদিন পরে প্রস্তুতি গ্রহণ করে আমিও তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাবো।ইতিমধ্যে মুসলিম সেনাদল বহু দূরে চলে গেছেন। আমি প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশ্যে বের হই। কিন্তু এবারও প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়াই ফিরে আসি। শেষ পর্যন্ত প্রত্যহ এরূপই হতে থাকে এবং দিন অতিবাহিত হতেই থাকে। সৈন্যেরা যুদ্ধ করতে লাগলেন। এখন আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাবো। তখনও যদি আমি যাত্রা শুরু করতাম! কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও হয়ে উঠলো না। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর যুদ্ধে গমনের পর যখন আমি বাজারে যেতাম তখন এ দেখে আমার বড়ই দুঃখ হতো যে, কোন মুসলিম দৃষ্টিগোচর হলে হয় তার উপর কপটতার অভিশাপ পরিলক্ষিত হতো, না হয় এমন মুসলিমকে দেখা যেতো যারা বাস্তবিকই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ক্ষমার্হ অথবা খোড়া ও বিকলাঙ্গ ছিল। তাবুকে পৌছার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে স্মরণ করে জিজ্ঞেস করেনঃ কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ )-এর কি হয়েছে?' তখন বানু সালমা গোত্রের একটি লোক উত্তরে বলেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! স্বচ্ছলতা ও আরামপ্রিয়তা তাকে মদীনাতেই আটকিয়ে রেখেছে ।” এ কথা শুনে মুয়াজ ইবনে জাবাল ( রাঃ ) তাকে বলেনঃ “ তুমি ভুল ধারণা পোষণ করছো । হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তার সম্পর্কে আমরা ভাল ধারণাই রাখি।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর এ কথা শুনে নীরব হয়ে যান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন তাবূক হতে প্রত্যাবর্তন করেন তখন আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, এখন কি করি? আমি মিথ্যা বাহানার কথা চিন্তা করলাম যাতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে পারি। সুতরাং আমি সকলের মত জানতে লাগলাম এবং যখন অবগত হলাম যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এসেই পড়েছেন তখন মিথ্যা চিন্তা মন থেকে দূর করে দিলাম। এখন আমি ভালরূপে বুঝতে পারলাম যে, কোন বাহানা দ্বারা আমি রক্ষা পেতে পারি না। তাই আমি সত্য বলারই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। নবী ( সঃ ) সফর থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম মসজিদে অবস্থান করলেন। দু'রাকাআত সালাত আদায় করে তিনি লোকদেরকে নিয়ে বৈঠক করলেন। এখন যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা এসে ওর পেশ করতে লাগলো এবং কসম খেতে শুরু করলো। এরূপ লোকদের সংখ্যা আশিজনের কিছু বেশী ছিল। নবী ( সঃ ) তাদের বাহ্যিক কথার উপর ভিত্তি করে তা ককূল করে নিচ্ছিলেন এবং তাদের অবহেলার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনাও করছিলেন। কিন্তু তাদের মনের গোপন কথা তিনি আল্লাহ তা'আলার দিকে সমর্পণ করছিলেন। অতঃপর আমার পালা আসলো। আমি গিয়ে সালাম করলাম। তিনি ক্রোধের হাসি হাসলেন। তারপর আমাকে বললেনঃ “ এখানে এসো ।” আমি তার সামনে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ “ তুমি কেন ( যুদ্ধে না গিয়ে ) পিছনে রয়ে গিয়েছিলে? তুমি কি যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে আসবাবপত্র ক্রয় করনি?” আমি উত্তরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! যদি আমি এ সময় আপনি ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলতাম তবে এমন বানানো ওযর পেশ করতাম যে, তা কবুল করতেই হতো । কেননা, কথা বানানো, তর্ক বিতর্ক এবং ওযর পেশ করার যোগ্যতা আমার যথেষ্ট আছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, এই সময় মিথ্যা কথা বানিয়ে নিয়ে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারবো বটে, তবে আল্লাহ আপনাকে সত্বরই আমার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট করবেন। আর যদি আমি সত্য কথা বলি তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি উত্তম পরিণামের আশা করতে পারি। হে নবী ( সঃ )! আমার কোন গ্রহণযোগ্য ওযর ছিল না। প্রকৃতপক্ষে আমার কাছে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার কোনই বাহানা নেই। আমার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ এ লোকটি বাস্তবিকই সত্য কথা বলেছে । ঠিক আছে, তুমি এখন যাও এবং তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশের অপেক্ষা কর।” সুতরাং আমি চলে আসলাম। বানু সালমা গোত্রের লোকেরাও আমার সাথে আসলো এবং আমাকে বললোঃ আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে আমরা আপনাকে কোন অপরাধ করতে দেখিনি । অন্যান্য লোকেরা যেমন আল্লাহর নবী ( সঃ )-এর সামনে ওযর পেশ করলো তেমনি আপনিও কেন তাঁর কাছে কোন একটা ওযর পেশ করলেন না? তাহলে নবী ( সঃ ) অন্যদের ন্যায় আপনার জন্যেও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আর তার ক্ষমা প্রার্থনাই আপনার জন্যে যথেষ্ট হতো। মোটকথা, লোকগুলো এর উপর এতো জোর দিলো যে, আমি পুনরায় ফিরে গিয়ে কিছু ওযর পেশ করার ইচ্ছা করেই ফেললাম। তাই আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মত আর কারো কি এরূপ পরিস্থিতি হয়েছে? তারা উত্তরে বললোঃ “ হ্যা, আপনার মত আরো দুটি লোক সত্য কথাই বলে দিয়েছে ।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? উত্তরে বলা হলোঃ “ তারা হচ্ছে মুরারাহ্ ইবনে রাবী' এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া আলওয়াকেফী ।” বলা হয়েছে যে, এ দু'টি লোক সৎলোক রূপে পরিচিত ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমি তাদেরই পদাংক অনুসরণ করলাম। সুতরাং আমি পুনরায় আর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গমন করলাম না। এখন আমি জানতে পারলাম যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জনগণকে আমাদের সাথে সালাম-কালাম করতে নিষেধ করে দিয়েছেন এবং লোকেরা আমাদেরকে বয়কট করেছে। তারা আমাদের থেকে এমনভাবে বদলে গেছে যে, যমীনে অবস্থান আমাদের কাছে একটা বোঝা স্বরূপ মনে হয়েছে। এভাবে আমাদের উপর দিয়ে পঞ্চাশ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় । ঐ দু’জন তো মুখ লুকিয়ে গৃহ-বাস অবলম্বন করতঃ সদা কাঁদতে থাকেন। কিন্তু আমি কিছুটা শক্ত প্রকৃতির লোক ছিলাম বলে আমার মধ্যে ধৈর্য অবলম্বনের শক্তি ছিল। তাই আমি বরাবর জামাআতে সালাত পড়তে থাকি এবং বাজারে ঘোরাফেরা করি। কিন্তু আমার সাথে কেউ কথা বলতো না। আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে যেতাম, তাঁকে সালাম করতাম এবং সালামের জবাবে তাঁর ঠোট নড়ছে কি-না তা লক্ষ্য করতাম। আমি তার পাশেই সালাত আদায় । করতাম। আমি আড়চোখে তাকাতাম এবং দেখতাম যে, আমি সালাত শুরু করলে তিনি আমার দিকে দৃষ্টিপাত করতেন। আর আমি তার দিকে মুখ করে বসলে তিনি আমার দিক হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। যখন এই বয়কটের। সময়কাল দীর্ঘ হয়ে যায় তখন আমি একদা আবু কাতাদা ( রাঃ )-এর বাড়ীর প্রাচীরের উপর দিয়ে তার কাছে গমন করি। তিনি আমার চাচাতো ভাই হতেন। আমি তাকে খুবই ভালবাসতাম। আমি তাঁকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের জবাব দেননি । আমি তাকে বলি, হে আবু কাতাদা ( রাঃ )! আপনার কি জানা আছে যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-কে ভালবাসি? তিনি শুনে নীরব থাকেন। আমি আল্লাহর কসম দিয়ে কথা বলি। তবুও তিনি কথা বলেন না। পুনরায় আমি কসম দেই। কিন্তু তিনি অপরিচিতের মত বলেনঃ আল্লাহ ও তার রাসূল ( সঃ )-ই খুব ভাল জানেন ।” এতে আমার কান্না এসে যায়। অতঃপর আমি প্রাচীর টপকে ফিরে আসি। একদা আমি মদীনার বাজারে ঘুরতেছিলাম। এমন সময় সিরিয়ার একজন কিবতী, যে মদীনার বাজারে কিছু খাবারের জিনিস বিক্রি করছিল, লোকদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ “ কেউ আমাকে কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ )-এর ঠিকানা দিতে পারে কি?” লোকেরা আমাকে ইশারায় দেখিয়ে দেয় । সুতরাং সে আমার কাছে আগমন করে এবং গাসসানের বাদশাহর একখানা চিঠি আমাকে প্রদান করে। আমি লিখাপড়া জানতাম। চিঠি পড়ে দেখি যে, তাতে লিখা রয়েছে- “ আমাদের কাছে এ খবর পৌঁছেছে যে, আপনার সঙ্গী ( নবী সঃ ) আপনার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করেছেন । আল্লাহ তো আপনাকে একজন সাধারণ লোক করেননি! আপনার মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন । আপনাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দান করবো।” এটা পড়ে আমি মনে মনে বললাম যে, এটি একটি নতুন বিপদ। অতঃপর আমি চিঠিখানা ( আগুনের ) চুল্লীতে ফেলে দেই। পঞ্চাশ দিনের মধ্যে যখন চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর একজন দূত আমার নিকট এসে বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আপনাকে স্ত্রী থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম, তালাক দিতে বলেছেন । কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ না, শুধুমাত্র স্ত্রী হতে পৃথক থাকতে বলেছেন ।” দূত এ কথাও বললেন যে, অপর দু’জনকেও এই নির্দেশই দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, বাপের বাড়ী চলে যাও। দেখা যাক, আল্লাহ তাআলার কি নির্দেশ আসে। হিলাল ইবনে উমাইয়া ( রাঃ )-এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে আরয করেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার স্বামী একজন খুবই দুর্বল ও বৃদ্ধ লোক । তাঁর সেবা করার কোন লোক নেই । আমি যদি তার সেবায় লেগে থাকি তবে আশা করি আপনি অমত করবেন না!” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেনঃ “ আচ্ছা, ঠিক আছে । তবে তুমি তার সাথে সহবাস করবে না ।” সে তখন বলেঃ “ তার তো নড়াচড়া করারই শক্তি নেই । আপনার অসন্তুষ্টির দিন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি শুধু কাঁদছেনই।” আমার পরিবারের একজন লোক আমাকে বললোঃ “ আপনিও রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আপনার স্ত্রী থেকে খিদমত নেয়ার অনুমতি প্রার্থনা করুন, যেমন হিলাল ( রাঃ ) অনুমতি লাভ করেছেন ।” আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে এ ব্যাপারে আবেদন করবো না। জানি না তিনি কি বলেন! আমি তো একজন যুবক লোক। কারো সেবা গ্রহণের আমার প্রয়োজন নেই। এরপর আরো দশ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় এবং জনগণের সম্পর্ক ছিন্নতার পঞ্চাশ দিন কেটে যায়। পঞ্চাশতম দিনের সকালে আমার ঘরের ছাদের উপর ফজরের সালাত আদায় করে ঐ অবস্থায় বসেছিলাম যে অবস্থার কথা মহান আল্লাহ তাঁর কালামে পাকে বলেছেনঃ “ যখন ভূ-পৃষ্ঠ নিজ প্রশস্ততা সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হতে লাগলো এবং তারা নিজেরা নিজেদের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়লো, আর তারা বুঝতে পারলো যে, আল্লাহর পাকড়াও হতে কোথাও আশ্রয় পাওয়া যেতে পারে না তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করা ব্যতীত ।” এমন সময় ‘সালা' পাহাড় হতে একজন চীকারকারীর শব্দ আমার কানে আসলো । সে উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে বলছিলঃ “ হে কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ )! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন!” এটা শোনা মাত্রই আমি সিজদায় পতিত হই এবং বুঝতে পারি যে, আল্লাহ তা'আলা আমার দুআ কবুল করেছেন । আমার দুঃখ ও বিপদের দিন ফুরিয়েছে। ফজরের সালাতের পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ তা'আলা এই তিনজনের তাওবা কবূল করেছেন। লোকেরা আমাদেরকে সুসংবাদ জানাতে দৌড়িয়ে আসে। তারা ঐ দু'জনের কাছেও যায় এবং আমার কাছেও আসে । একটি লোক দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে আমার কাছে আগমন করে। কিন্তু পাহাড়ের উপর উঠে চীকারকারী সবচেয়ে বেশী সফলকাম হয়। কেননা, তার মাধ্যমেই আমি সর্বপ্রথম সংবাদ পাই। কারণ, ঘোড়ার গতি অপেক্ষা শব্দের গতি বেশী। সুতরাং যখন ঐ লোকটি আমার সাথে সাক্ষাৎ করে যার শব্দ আমি শুনেছিলাম, তখন তার শুভ সংবাদ প্রদানের বিনিময়ে আমি আমার পরনের কাপড় তাকে পরিয়ে দেই। আল্লাহর কসম! সেই সময় আমার কাছে দ্বিতীয় কাপড় আর ছিল না, অপরের কাছে কাপড় ধার করে আমি তা পরিধান করি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হই। পথে লোকেরা দলে দলে আমার সাথে মিলিত হয় এবং আমাকে মুবারকবাদ জানাতে থাকে। আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) লোকজনের মাঝে বসে আছেন। আমাকে দেখেই তালহা ইবনে আবদিল্লাহ ( রাঃ ) দৌড়িয়ে এসে। আমার সাথে মুসাফাহা করেন এবং আমাকে মুবারকবাদ জানান। আল্লাহর কমস! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে এই অভ্যর্থনা করেননি। কা'ব ( রাঃ ) তালহা ( রাঃ )-এর এই আন্তরিকতা কখনো বিস্মৃতি হননি। আমি এসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে সালাম করি। তাঁর মুখমণ্ডল খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তিনি বললেনঃ “ খুশী হয়ে যাও । সম্ভবতঃ তোমার জন্মগ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত তোমার জীবনে এর চেয়ে বড় খুশীর দিন আর আসেনি।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই সুসংবাদ কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি উত্তরে বললেনঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন খুশী হতেন তখন তার চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। তা যেন চাদের খণ্ড বিশেষ। তাঁর খুশীর চিহ্ন তাঁর চেহারাতেই প্রকাশিত হতো। আমি আর করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার তাওবা ককূলের এই বরকত হওয়া উচিত যে, আমি আমার সমস্ত সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর পথে বিলিয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ এরূপ করো না, কিছু রেখে দাও এবং কিছু সাদকা কর । এটাই হচ্ছে উত্তম পন্থা।” এ কারণে খায়বার থেকে আমি যে অংশ লাভ করেছি তা আমার জন্যে রেখে দিলাম। হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! সত্যবাদিতার বরকতে আল্লাহ আমাকে মুক্তি দান করেছেন। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে সত্যবাদিতার বর্ণনা করেছি তখন। থেকে কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রার্থনা এই যে, ভবিষ্যতেও যেন তিনি আমার মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বের না করেন। ( এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)( আরবী ) আল্লাহ পাকের এই উক্তি সম্পর্কে কা'ব ( রাঃ ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমার উপর আল্লাহ তা'আলার এর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কি হতে পারে যে, তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে সত্য কথা বলার তাওফীক দান করেছেন? নতুবা আমিও ঐ লোকদের মতই ধ্বংস হয়ে যেতাম যারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে। মিথ্যা কথা বলে পারলৌকিক জীবনের দিক দিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই লোকদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হ্যা, তারা তখন তোমাদের সামনে আল্লাহর শপথ করে বলবে যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, যেন তোমরা তাদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও; অতএব, তারা হচ্ছে অতিশয় অপবিত্র আর তাদের ঠিকানা হচ্ছে । জাহান্নাম, সেই সব কর্মের বিনিময়ে যা তারা করতো। তারা এ জন্যে শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি রাযী হয়ে যাও, অনন্তর যদি তোমরা তাদের প্রতি রাযী হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো এমন দুষ্কর্মকারী লোকদের প্রতি রাযী হন না।” ( ৯:৯৫-৯৬ ) এই আয়াতটি পাঠ করে কা'ব ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমাদের তিন ব্যক্তির ফায়সালা ঐ লোকদের পিছনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল যারা মিথ্যা শপথ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে তাদের বাহ্যিক শপথকে মেনে নিয়ে তাদের বায়আত ককূল করতে হয়েছিল । তিনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনাও করেছিলেন। কিন্তু আমাদের ফায়সালা তিনি স্থগিত রেখেছিলেন যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা'আলা ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। আমাদেরকে পিছনে নিক্ষেপ করা দ্বারা আমাদের ফায়সালাকে পিছনে নিক্ষেপ করা বুঝানো হয়েছে, এটা নয় যে, আমাদেরকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে পিছনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।" এই হাদীসটি বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত এবং মুত্তাফিক আলাইহে। ইমাম বুখারী ( রঃ ) এবং ইমাম মুসলিমও ( রঃ ) যুহরী ( রঃ )-এর হাদীস হতে এরূপই রিওয়ায়াত করেছেন। এই হাদীসটি উত্তম পন্থায় এই আয়াতে কারীমার তাফসীর করছে। পূর্ববর্তী গুরুজনদের প্রায় সবাই এরূপই রিওয়ায়াত করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ ( রাঃ )-এরও এই আয়াত সম্পর্কে এই উক্তিই রয়েছে যে, এই তিনজন হচ্ছেন কা'ব ইবনে মালিক ( রাঃ ), হিলাল ইবনে উমাইয়া ( রাঃ ) এবং মুরারা ইবনে রাবী ( রাঃ )। এঁরা সবাই আনসারী ছিলেন। মুজাহিদ ( রঃ ), যহ্হাক ( রঃ ), কাতাদা ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ) প্রমুখ এটাই বলেছেন। সবাই মুরারা ইবনে রাবীআ বলেছেন। ইমাম মুসলিমও ( রঃ ) ইবনে রাবীআ' লিখেছেন। কিন্তু কোন কোন নুসখায় রয়েছে রাবী ইবনে মুরারা। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে মুরারা ইবনে রাবীআ ( রাঃ ) লিখিত আছে। আর রিওয়ায়াতও এটাই আছে। আর এ কথা যে বলা হয়েছে যে, অপর দু’ব্যক্তি বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন তা ইমাম যুহরী ( রঃ )-এর ভুল ধারণা মনে করা হয়েছে। কেননা, এই তিনজনের কেউই বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন না। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।আল্লাহ তা'আলা ঐ তিন ব্যক্তির দুশ্চিন্তার বর্ণনা দিলেন যা তারা মুসলিমদের বয়কটের পঞ্চাশ দিন ভোগ করেছিলেন এবং তাঁদের জীবন ও দুনিয়া তাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। তাঁদের বাইরে যাতায়াতও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা কি করবেন তা অনুধাবন করতে পারছিলেন না। তারা বুঝেছিলেন যে, ধৈর্য ধারণ এবং লাঞ্ছনা ও অপমানের উপর সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে মিথ্যা ওযর পেশ না করার কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে কিছুকাল শাস্তি ভোগ করানোর পর তাদের তাওবা কবুল করেন। এ জন্যে তিনি বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ( কাজে কর্মে ) সত্যবাদীদের সধ্যে থাকো ।” তাহলে তোমরা ধ্বংস ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে। ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )। বলেছেনঃ “ তোমরা শুধু সত্য কথা বল । কেননা, সত্যবাদিতা হচ্ছে পুণ্যের কাজ। আর পুণ্য জান্নাত পর্যন্ত পৌছিয়ে থাকে। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে, তার নাম আল্লাহর দফতরে সত্যবাদীরূপে লিখিত হয়। মিথ্যা কথা বলা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকো। কেননা, মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নাম পর্যন্ত পৌছিয়ে দেয়। মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলতে থাকে তখন আল্লাহর দফতরে তার নাম ‘মিথ্যাবাদী' রূপে লিখে দেয়া হয়। এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আন্তরিকভাবে বা রহস্যভাবে, কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা বৈধ নয় । ইচ্ছা করলে আল্লাহ তাআলার ( আরবী ) -এই উক্তিটি পাঠ কর।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “ তোমরা কি মনে করতে পার যে, কেউ এই হুকুমের আওতার বহির্ভূত হতে পারে?” আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুহাম্মাদ ( সঃ ) ও তাঁর সাহাবীগণ । যহহাক ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা আবু বকর ( রাঃ ) ও উমার ( রাঃ )-কে বুঝানো হয়েছে। হাসান বসরী ( রঃ ) বলেনঃ ( আরবী ) বা সত্যবাদীদের সাথে সামিল হতে চাইলে দুনিয়া হতে উদাসীন থাকো এবং সাধারণ মানুষের সাথে মেলামেশা কম কর।”

সূরা তাওবা আয়াত 119 সূরা

ياأيها الذين آمنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين

سورة: التوبة - آية: ( 119 )  - جزء: ( 11 )  -  صفحة: ( 206 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক
  2. যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের
  3. আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায়
  4. আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব
  5. যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে
  6. আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের
  7. এবং আপনার পালনকর্তা ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত হবেন,
  8. তুমি বল, আমি আমার নিজের ক্ষতি কিংবা লাভেরও মালিক নই, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন।
  9. তাদের অন্তরে যা কিছু দুঃখ ছিল, আমি তা বের করে দেব। তাদের তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণী
  10. তাদের কাছে কি আপনার পালনকর্তার ভান্ডার রয়েছে, না তারাই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক?

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাওবা ডাউনলোড করুন:

সূরা Tawbah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Tawbah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত তাওবা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত তাওবা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত তাওবা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত তাওবা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত তাওবা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত তাওবা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত তাওবা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত তাওবা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত তাওবা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত তাওবা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত তাওবা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত তাওবা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত তাওবা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত তাওবা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত তাওবা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত তাওবা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত তাওবা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত তাওবা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত তাওবা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Thursday, May 9, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب