কোরান সূরা হুজরাত আয়াত 12 তাফসীর
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ﴾
[ الحجرات: 12]
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। [সূরা হুজরাত: 12]
Surah Al-Hujuraat in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Hujurat ayat 12
ওহে যারা ঈমান এনেছ! অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্দেহ এড়িয়ে চল, কেননা কোনো কোনো সন্দেহ নিশ্চয়ই পাপজনক। আর তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না, আর তোমাদের কেউ-কেউ অন্যদের আড়ালে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি চায় যে সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? নিশ্চিত তোমরা এটি ঘৃণা কর। আর আল্লাহ্কে ভয়-ভক্তি করো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ বারবার প্রত্যাবর্তনকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১২. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারীরা! তোমরা কোন ধরনের কারণ ও লক্ষণ ব্যতিরেকে বেশী বেশী কুধারণা থেকে বিরত থাকো। কেননা, যার বাহ্যিক আচরণ ভালো তার ব্যাপারে কুধারণা রাখা পাপ। তোমরা পেছন থেকে মু’মিনদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। আরো বিরত থাকো কারো অপছন্দের কথা তার পেছনে উল্লেখ করা থেকে। কেননা, এর উদাহরণ হলো নিজ ভাইয়ের মরা লাশের মাংস ভক্ষণের ন্যায়। কেউ কি তার ভাইয়ের মরা লাশের মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করে? অতএব, তার গীবত করাকেও অপছন্দ করো। কেননা, এটি এর মতোই। আর তোমরা আল্লাহকে তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে ভয় করো। অবশ্যই আল্লাহ তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তিনি তাদেরকে দয়া করেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ[১] এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না[২] এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা ( গীবত ) করো না।[৩] তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভায়ের গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে কর।[৪] তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। [১] ظَنٌّ এর অর্থ ধারণা করা। অর্থাৎ, সৎ ও আল্লাহভীরু ভালো লোকদের ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করা, যা মন্দ অথচ ভিত্তিহীন এবং যা মিথ্যা অপবাদের আওতায় পড়ে। তাই এর অনুবাদ করা হয়, কুধারণা। হাদীসে এটাকে أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ ( সব চাইতে বড় মিথ্যা ) গণ্য করে এ থেকে বিরত থাকার প্রতি তাকীদ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ( إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ ) অর্থাৎ, তোমরা কুধারণা থেকে দূরে থাক। ( বুখারী, মুসলিম ) পক্ষান্তরে পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তিদের পাপের কারণে তাদের পাপের উপর কুধারণা পোষণ করা সেই কুধারণা নয়, যেটাকে এখানে পাপ বলা হয়েছে এবং যা থেকে বিরত থাকতে তাকীদ করা হয়েছে। উলামাগণ বলেন, বাহ্যতঃ ভালো লোকের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা বৈধ নয়। তবে বাহ্যতঃ মন্দ লোক পাপাচারীর প্রতি মন্দ ধারণা করা অবৈধ নয়। ( কুরত্বুবী ) [২] অর্থাৎ, এই সন্ধানে থাকা যে, কোন গোপন দোষ-ত্রুটি পেলে বদনাম করা যাবে। এটাকেই تجسّس ( জাসুসী ) বলে, যা নিষেধ। হাদীসেও এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি কারো কোন দোষ-ত্রুটি তোমরা জানতে পার, তবে তা গোপন কর। না সেটাকে মানুষের সামনে বলে বেড়াও, আর না খুঁজে খুঁজে দোষ বের কর। বর্তমানে ব্যক্তি-স্বাধীনতার বড় চর্চা করা হয়। ইসলামও দোষ অনুসন্ধান করা থেকে নিষেধ করে মানুষের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা সম্পাদন না করে অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত সে অপরের কষ্টের কারণ না হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলো অবাধ স্বাধীনতার শিক্ষা দিয়ে সকল মানুষকে ব্যাপক ফ্যাসাদের অনুমতি দিয়ে রেখেছে। যার ফলে সমাজের সকল প্রকার নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গেছে। [৩] গীবতের অর্থ হল, অন্য লোকের কাছে কোন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা ( নিন্দা বা সমালোচনা করা ), যা সে অপছন্দ করে। আর যদি তার প্রতি এমন দোষের কথা সম্পৃক্ত করা হয়, যা তার মধ্যে নেই, তাহলে তা মিথ্যা অপবাদ হবে। স্ব-স্ব স্থানে দু'টোই বড় অপরাধ ও মহাপাপ। [৪] অর্থাৎ, অপরের কাছে কোন মুসলিম ভাইয়ের নিন্দা গাওয়া ঐ রকমই, যেমন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে তো কেউ পছন্দ করে না, কিন্তু গীবত হল মানুষের অতি প্রিয় খাদ্য।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক ; কারণ কোন কোন অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না [ ১ ]। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে [ ২ ]? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। [ ১ ] এই আয়াতে পারস্পরিক হক ও সামাজিক রীতি-নীতি ব্যক্ত হয়েছে এবং এতে তিনটি বিষয় হারাম করা হয়েছে। ( এক ) ধারণা, ( দুই ) কোনো গোপন দোষ সন্ধান করা এবং ( তিন ) গীবত অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে শুনলে অসহনীয় মনে করত। তন্মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে, الظن বা প্ৰবল ধারণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ তোমাদের কারও আল্লাহর প্রতি সু-ধারণা পোষণ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করা উচিত নয় ।” [ মুসলিম: ৫১২৫, আবুদাউদ: ২৭০৬, ইবনে মাজাহ: ৪১৫৭ ] অন্য এক হাদীসে আছে ‘আমি আমার বান্দার সাথে তেমনি ব্যবহার করি, যেমন সে আমার সম্বন্ধে ধারণা রাখে। এখন সে আমার প্রতি যা ইচ্ছা ধারণা রাখুক। [ মুসনাদে আহমাদ: ১৫৪৪২ ] এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করা ফরয এবং কু-ধারণা পোষন করা হারাম। এমনিভাবে যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ব্যতিরেকে কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক । কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’ [ বুখারী: ৪০৬৬, মুসলিম: ২৫৬৩ ] আয়াতে দ্বিতীয় নিষিদ্ধ বিষয় হচ্ছে, কারও দোষ সন্ধান করা। এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার খোতবার দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ “ হে সেই সব লোকজন, যারা মুখে ঈমান এনেছো । কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্ৰবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গোপনীয় বিষয় খোঁজে বেড়িও না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে আল্লাহ্ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর আল্লাহ যার ক্ৰটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।” [ আবু দাউদ: ৪৮৮০ ] মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “ তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো । তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেবে।” [ আবু দাউদ: ৪৮৮৮ ] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না । কেননা, যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্ব-গৃহেও লাঞ্ছিত করে দেন।” [ আবুদাউদ: ৪৮৮০ ] দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার এ নির্দেশ শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং ইসলামী সরকারের জন্যেও। এ ক্ষেত্রে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ ঘটনা অতীব শিক্ষাপ্ৰদ। একবার রাতের বেলা তিনি এক ব্যক্তির কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাইতেছিল। তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি তার সাথী আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেনঃ এ ঘরটি কার? বলা হল, এটা রবী’আ ইবন উমাইয়া ইবন খালফ এর ঘর। তারা এখন শরাব খাচ্ছে। আপনার কি অভিমত? অতঃপর আব্দুর রাহমান ইবন আওফ বললেন, আমার অভিমত হচ্ছে যে, আমরা আল্লাহ যা নিষেধ করেছে তা-ই করে ফেলছি। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করে বলেছেন: “ তোমরা গোপন বিষয়ে অন্বেষণ করো না” । [ সূরা আল-হুজুরাত: ১২ ] তখন উমর ফিরে আসলেন এবং তাকে ছেড়ে গেলেন।[ মুস্তাদরাকে হাকিম: ৮২৪৯, মাকারিমূল আখলাক:আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর আল খারায়েতী: ৩৯৮,৪২০, মুসান্নাফে আদির রাজ্জাকঃ ১০/২২১ ] এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, খুঁজে খুঁজে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা এবং তারপর তাদেরকে পাকড়াও করা শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, ইসলামী সরকারের জন্যও জায়েয নয়। একটি হাদীসেও একথা উল্লেখিত হয়েছে। উক্ত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “ শাসকরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয় ।” [ আবু দাউদ: ৪৮৮৯ ] আয়াতে নিষিদ্ধ তৃতীয় বিষয় হচ্ছে গীবত। গীবতের সংজ্ঞায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কারো এমন কথা বলা যা শুনলে সে অপছন্দ করবে । প্রশ্ন হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সত্যিই থেকে থাকে তাহলে আপনার মত কি? তিনি বললেনঃ তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তো তুমি তার গীবত করলে। আর তা যদি না থাকে তাহলে অপবাদ আরোপ করলে।” [ মুসলিম: ২৫৮৯, আবুদাউদ: ৪৮৭৪, তিরমিযীঃ ১৯৩৪ ] [ ২ ] এই আয়াতে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ করতে গিয়ে গীবিতের নিষিদ্ধতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং একে মৃত মুসলিমের মাংস ভক্ষণের সমতুল্য প্রকাশ করে এর নিষিদ্ধতা ও নীচতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মি'রাজের রাত্রির হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হল, আমি এমন এক সম্পপ্রদায়ের কাছ দিয়ে গেলাম যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহের মাংস আচড়াচ্ছিল। আমি জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা তাদের ভাইয়ের গীবত করত এবং তাদের ইজ্জতহানি করত। [ মুসনাদে আহমাদ: ৩/২২৪, আবুদাউদ: ৪৮৭৮ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে কুধারণা পোষণ করা হতে, অপবাদ দেয়া হতে এবং পরিবার পরিজন এবং অপর লোকদের অন্তরে অযথা ভয় সৃষ্টি করা হতে নিষেধ করছেন। তিনি বলেছেন যে, অনেক সময় এরূপ ধারণা সম্পূর্ণ পাপের কারণ হয়ে থাকে। সুতরাং মানুষের এ ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “ তোমার মুসলমান ভাই এর মুখ হতে যে কালেমা বের হয় তুমি যথা সম্ভব ওটার প্রতি ভাল ধারণাই পোষণ করবে ।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি নবী ( সঃ )-কে দেখেছি যে, তিনি কা'বা ঘরের তাওয়াফ করছেন এবং বলছেনঃ “তুমি কতই না পবিত্র ঘর! তোমার গন্ধ কতই না উত্তম! তুমি কতই না সম্মানিত! তুমি কতই না মর্যাদা সম্পন্ন! যার হাতে মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! মুমিনের মর্যাদা, তার জান ও মালের মর্যাদা এবং তার সম্পর্কে শুধুমাত্র ভাল ধারণা পোষণ করা হবে এই হিসেবে তার মর্যাদা আল্লাহ তাআলার নিকট তোমার মর্যাদার চেয়েও বেশী বড় ।” ( এ হাদীসটি আবু আবদিল্লাহ ইবনে মাজাহ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা কু-ধারণা হতে বেঁচে থাকো, কু-ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা । তোমরা কারো গোপন তথ্য সন্ধান করো না, একে অপরের বুযুর্গী লাভ করার চেষ্টায় লেগে থেকো না, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না এবং সবাই মিলে তোমরা আল্লাহর বান্দারা ভাই ভাই হয়ে যাও।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা একে অপরের সাথে মতবিরোধ করো না, একে অপরের সাথে মেলামেশা পরিত্যাগ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো, বরং আল্লাহর বান্দারা সবাই মিলে ভাই ভাই হয়ে যাও । কোন মুসলমানের জন্যে এটা বৈধ নয় যে, সে তার মুসলমান ভাইএর সাথে তিন দিনের বেশী কথাবার্তা বলা ও মেলামেশা করা পরিত্যাগ করে। ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) ও ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এটাকে সহীহ বলেছেন)হযরত হারেসাহ ইবনে নু'মান ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তিনটি অভ্যাস আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই থাকবে । ( এক ) লক্ষণ দেখে শুভাশুভ নির্ণয় করা, ( দুই ) হিংসা করা এবং ( তিন ) কু-ধারণা পোষণ করা।” একটি লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এর সংশোধন কিরূপে হতে পারে? উত্তরে তিনি বলেনঃ “হিংসা করলে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, কু-ধারণা পোষণ করলে তা ছেড়ে দিবে এবং লক্ষণ দেখে যখন শুভাশুভ নির্ণয় করবে তখন স্বীয় কাজ হতে বিরত থাকবে না, বরং সেই কাজ পুরো করবে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত যায়েদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোককে হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ )-এর নিকট আনয়ন করা হয় এবং তাকে বলা হয়ঃ “ এটা অমুক । ব্যক্তি, এর দাড়ি হতে মদ্যের ফোটা পড়তে রয়েছে।” তখন হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বললেনঃ “ আমাদের কারো গোপন বিষয় সন্ধান করতে নিষেধ করা হয়েছে । যদি আমাদের সামনে কারো কোন বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়ে তবে আমরা তাকে ঐ জন্যে পাকড়াও করতে পারি।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, উকবার লেখক দাজীন ( রাঃ )-এর নিকট হযরত আবুল হায়সাম ( রঃ ) গেলেন এবং তাঁকে বললেনঃ “ আমার প্রতিবেশীদের কতক মদ্যপায়ী রয়েছে । আমার মনে হচ্ছে যে, আমি পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়ে দিই।” হযরত দাজীন ( রাঃ ) বললেনঃ “ না, না, এ কাজ করো না, বরং তাদেরকে বুঝাও, উপদেশ দাও । আর তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করতে থাকো।” কিছুদিন পর হযরত আবুল হায়সাম ( রঃ ) হযরত দাজীন ( রাঃ )-এর নিকট আবার আসলেন এবং তাঁকে বললেনঃ “ আমি কোনক্রমেই তাদেরকে মদ্যপান হতে বিরত রাখতে পারলাম না । সুতরাং এখন অবশ্যই আমি পুলিশকে ডেকে এনে তাদেরকে ধরিয়ে দিবো।” হযরত দাজীন ( রাঃ ) বললেন, আমি তোমাকে এ কাজ না করতে অনুরোধ করছি। জেনে রেখো যে, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছিঃ “ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ গোপন করে রাখে সে এতো বেশী পুণ্য লাভ করে যে, সে যেন কোন জীবন্ত প্রোথিতকৃতা মেয়েকে বাঁচিয়ে নিলো ।” ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী ( সঃ )-কে বলতে শুনেছেনঃ “ যখন তুমি জনগণের গোপন দোষের সন্ধানে লেগে পড়বে তখন তুমি তাদেরকে প্রায় বিনষ্ট করে ফেলবে ।” তখন হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) বলেনঃ “ হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে যে কথাটি শুনেছেন তার দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাঁর উপকার সাধন করেছেন ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু উমামা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমীর বা বাদশাহ যখন নিজের অধীনস্থ লোকদের গোপন দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করতে থাকে তখন সে যেন তাদেরকে বিনষ্টই করে থাকে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা একে অপরের গোপন মহান আল্লাহ বলেনঃ বিষয় সন্ধান করো না ।”( আরবী ) শব্দের প্রয়োগ সাধারণতঃ মন্দের উপরই হয়ে থাকে। আর ( আরবী )-এর প্রয়োগ হয় ভাল কিছু সন্ধানের উপর। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা হযরত ইয়াকূব ( আঃ )-এর খবর দিতে গিয়ে বলেন যে, তিনি তার সন্তানদেরকে বলেছিলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে আমার পুত্রগণ! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার সহদরের ( সহদর ভাই-এর ) অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর আশিস হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না ।” ( ১২:৮৭ ) আবার কখনো কখনো এ দুটো শব্দেরই প্রয়োগ মন্দের উপর হয়ে থাকে। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না, একে অপরের প্রতিহিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে চলো না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দারা সব ভাই ভাই হয়ে যাও ।”ইমাম আওযায়ী ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) বলা হয় কোন বিষয়ে খোঁজ নেয়াকে। আর ( আরবী ) বলা হয় ঐ লোকদের কানা-ঘুষার উপর কান লাগিয়ে দেয়াকে যারা কাউকেও নিজেদের কথা গোপনে শুনাতে চায় এবং ( আরবী ) বলা হয় একে অপরের উপর বিরক্ত হয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা গীবত করতে নিষেধ করছেন।হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! গীবত কি?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “গীবত হলো এই যে, তুমি তোমার ( মুসলমান ) ভাইএর অসাক্ষাতে তার সম্বন্ধে এমন কিছু আলোচনা করবে যা সে অপছন্দ করে । আবার প্রশ্ন করা হয়ঃ “ তার সম্বন্ধে যা আলোচনা করা হয় তা যদি তার মধ্যে বাস্তবে থাকে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ, গীবত তো এটাই । আর যদি বাস্তবে ঐ দোষ তার মধ্যে না থাকে তবে ওটা তো অপবাদ।" ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী ( সঃ )-কে বলেনঃ “ সুফিয়া ( রাঃ ) তো এরূপ এরূপ অর্থাৎ বেঁটে!” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “তুমি এমন কথা বললে যে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিলানো যায় তবে সমুদ্রের সমস্ত পানিকে নষ্ট করে দিবে ।" হযরত আয়েশা ( রাঃ ) অন্য একটি লোক সম্বন্ধে এই ধরনের কথা বললে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আমি এটা শুনতে পছন্দ করি না যদিও এতে আমার বড় লাভ হয় ।” ( ইমাম আবু দাউদই (রঃ ) এ হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসসান ইবনে মাখরিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা একটি মহিলা হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর নিকট আগমন করে। যখন সে ফিরে যেতে উদ্যতা হয় তখন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) মহিলাটির দিকে ইঙ্গিত করে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেনঃ “ মহিলাটি খুবই বেঁটে ।" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন হযরত আয়েশা ( রাঃ )-কে বললেনঃ “ তুমি তার গীবত করলে?” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মোটকথা, গীবত হারাম বা অবৈধ এবং এর অবৈধতার উপর মুসলমানদের ইজমা হয়েছে । হ্যাঁ, তবে শরীয়তের যৌক্তিকতায় কারো এ ধরনের কথা আলোচনা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন সতর্ককরণ, উপদেশ দান এবং মঙ্গল কামনাকরণ। যেমন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একজন পাপাচারী লোকের সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “ তাকে তোমরা আমার কাছে আসার অনুমতি দাও, তবে সে তার গোত্রের মধ্যে বড় মন্দ লোক ।” যেমন তিনি আরো বলেছিলেনঃ “ মুআবিয়া দরিদ্র লোক, আর আবুল জাহম বড়ই প্রহারকারী ব্যক্তি ।” একথা তিনি ঐ সময় বলেছিলেন যখন তাঁরা দু’জন হযরত ফাতিমা বিনতে কায়েস ( রাঃ )-কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আরো এ ধরনের ব্যাপারে এর অনুমতি রয়েছে। বাকী অন্যান্য সর্বক্ষেত্রেই গীবত হারাম ও কবীরা গুনাহ। এ জন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে?' অর্থাৎ তোমরা তোমাদের মৃত ভাই-এর গোশত খেতে যেমন ঘৃণাবোধ কর, গীবতকে এর চেয়েও বেশী ঘৃণা করা তোমাদের উচিত । যেমন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে কোন কিছু দান করার পর তা ফিরিয়ে নেয় সে ঐ কুকুরের মত যে বমি করার পর পুনরায় তা ভক্ষণ করে ।" আরো বলেনঃ “ খারাপ দৃষ্টান্ত আমাদের জন্যে সমীচীন নয় ।” বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছিলেনঃ “ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের উপর এমনই পবিত্র যেমন পবিত্র তোমাদের এই দিনটি, এই মাসটি ও এই শহরটি ।” হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক মুসলমানের উপর প্রত্যেক মুসলমানের মাল, মান-সম্মান ও রক্ত হারাম ( অর্থাৎ মাল আত্মসাৎ করা, মান-সম্মান হানী করা এবং খুন করা হারাম ) । মানুষের মন্দ হওয়ার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অন্য মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু বুরদা আল বালভী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ হে ঐ লোকের দল! যারা শুধু মুখে ঈমান এনেছো, কিন্তু অন্তরে ঈমান রাখখানি, তোমরা মুসলমানদের গীবত করা ছেড়ে দাও, তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান করো না। যদি তোমরা তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধান কর এবং ওগুলোর পিছনে লেগে থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের গোপন দোষ প্রকাশ করে দিবেন, এমন কি তোমরা তোমাদের পরিবার পরিজনদের কাছেও মন্দ লোক বলে বিবেচিত হবে এবং লজ্জিত হবে।” ( এহাদীসটিও ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত বারা ইবনে আযিব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা ভাষণদান করেন, যা পর্দানশীন মহিলাদের কর্ণকুহরেও পৌঁছে। এই ভাষণে তিনি উপরে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করেন।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আবি ইয়ালায় বর্ণিত হয়েছে )একদা হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) কাবার দিকে তাকিয়ে বলেনঃ “ তোমার পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে শেষ করা যায় না । কিন্তু আল্লাহ তা'আলার নিকট একজন মুমিন মানুষের মর্যাদা, পবিত্রতা ও শ্রেষ্ঠত্ব তোমার চেয়েও বেশী।” হযরত মিসওয়ার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের ক্ষতিসাধন করে এর বিনিময়ে এক গ্রাস খাদ্য লাভ করবে, ( কিয়ামতের দিন ) তাকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম হতে ঐ পরিমাণ খাদ্য খাওয়াবেন । অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের ক্ষতিসাধন করে ওর বিনিময়ে পোশাক লাভ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে ঐ পরিমাণ জাহান্নামের পোশাক পরাবেন। যে ব্যক্তি কোন লোকের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাবার ও শুনাবার জন্যে দাড়াবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে দেখাবার শুনাবার জায়গায় দাড় করবেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মিরাজের রাত্রে আমি দেখি যে, কতকগুলো লোকের তামার নখ রয়েছে, ঐগুলো দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা নুচতে রয়েছে । আমি হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-কে জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা? উত্তরে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) বললেনঃ “ এরা ওরাই যারা লোকদের গোশত খেতো ( অর্থাৎ গীবতকরতো ) ।” ( এ হাদীসটিও ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি মিরাজের রাত্রিতে যা দেখেছিলেন তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ “ জিবরাঈল ( আঃ ) আমাকে বহু লোকের সমাবেশের, পার্শ্ব দিয়ে নিয়ে গেলেন যাদের মধ্যে পুরুষও ছিল এবং নারীও ছিল । ফেরেশতারা তাদের পার্শ্বদেশের গোশত কেটে নিচ্ছেন, অতঃপর তাদেরকে তা খেতে বাধ্য করছেন। তারা তা চিবাতে রয়েছে। আমি তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) উত্তরে বলেনঃ “ এরা হলো ঐ সব লোক যারা ছিল তিরস্কারকারী, গীবতকারী এবং চুগলখোর । আজ তাদেরকে তাদের নিজেদেরই গোশত খাওয়ানো হচ্ছে। [ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) ] এটা খুবই দীর্ঘ হাদীস এবং আমরা পূর্ণ হাদীসটি সূরায়ে সুবহান বা বানী ইসরাঈলের তাফসীরেও বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলারই প্রাপ্য। হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জনগণকে রোযা রাখার নির্দেশ দেন এবং বলেনঃ “ আমি না বলা পর্যন্ত কেউ যেন ইফতার না করে । সন্ধ্যার সময় জনগণ এক এক করে আসতে থাকে এবং তার নিকট ইফতার করার অনুমতি প্রার্থনা করে। তিনি প্রত্যেককে অনুমতি দেন এবং তারা প্রত্যেকে ইফতার করে। ইতিমধ্যে একজন লোক এসে বলেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! দু’জন স্ত্রীলোকও রোযা রেখেছিল যারা আপনার পরিবারেরই মহিলা । সুতরাং তাদেরকে আপনি ইফতার করার অনুমতি দিন!” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন লোকটির দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। লোকটি দ্বিতীয়বার আর করলো। তখন তিনি বললেনঃ “ তারা রোযা রাখেনি । যারা মানুষের গোশত খায় তারা কি রোযাদার হতে পারে? যাও, তাদেরকে বলো, যদি তারা রোযা রেখে থাকে তবে যেন বমি করে ফেলে দেয়।” সুতরাং তারা বমি করলো যার ফলে রক্তপিণ্ড বের হয়ে পড়লো। লোকটি এসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এ সংবাদ দিলো। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ যদি তারা ঐ অবস্থাতেই মারা যেতো তবে অবশ্যই তারা জাহান্নামের গ্রাস হয়ে যেতো । ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর সনদও দুর্বল এবং মতনও গারীব)অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ঐ লোকটি বলেছিলঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! মহিলা দু’টির অবস্থা রোযার কারণে খুবই শোচনীয় হয়ে গেছে । পিপাসায় তারা অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়েছে।” ওটা ছিল দুপুর বেলা। তার কথায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নীরব থাকলেন। লোকটি পুনরায় বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! মহিলাদ্বয়ের অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, অল্পক্ষণের মধ্যে হয়তো তারা মারাই যাবে ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন তাকে বললেনঃ “ তাদেরকে ডেকে নিয়ে এসো ।” তারা আসলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদের একজনের সামনে দুধের একটি পেয়ালা রেখে বললেনঃ “ এতে বমি কর ।” সে বমি করলে তার মুখ দিয়ে পূজ, জমাট বৃক্ত ইত্যাদি বের হয়ে আসলো। তাতে পেয়ালাটির অর্ধেক ভর্তি হলো। অতঃপর অপর মহিলাটির সামনে পেয়ালাটি রেখে তাতে তাকেও বমি করতে বললেন। সে বমি করলে তার মুখ দিয়েও উপরোক্তে জিনিসগুলো এবং গোশতের টুকরা ইত্যাদি বের হলো। এখন পেয়ালাটি এসব জিনিসে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ মহিলা দু’টিকে তোমরা দেখো, তারা এমন জিনিস দ্বারা রোযা রেখেছিল যা আল্লাহ তাদের জন্যে হালাল করেছেন, আর তারা এমন জিনিস দিয়ে ইফতার করেছে যা আল্লাহ তাদের উপর হারাম করেছেন । তারা দুজনে বসে মানুষের গোশত খাচ্ছিল ( অর্থাৎ গীবত করছিল )।”হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মায়েয ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি ব্যভিচার করে ফেলেছি ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এমনকি হযরত মায়েয ( রাঃ ) চারবার একথার পুনরাবৃত্তি করলেন। পঞ্চমবারে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ তুমি কি সত্যিই ব্যভিচার করেছো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “জ্বী, হা ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পুনরায় তাঁকে প্রশ্ন করলেনঃ “ ব্যভিচার কাকে বলে তা তুমি জান কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ “হ্যাঁ, মানুষ তার হালাল স্ত্রীর সাথে যা করে আমি হারাম স্ত্রীলোকের সাথে ঠিক তাই করেছি ।” রাসূলুল্লাহ প্রশ্ন করলেনঃ “ এখন তোমার উদ্দেশ্য কি?” “আমার উদ্দেশ্য এই যে, আমাকে আপনি এই গুনাহ হতে পবিত্র করবেন ।” জবাব দিলেন তিনি। “ তুমি কি তোমার গুপ্তাঙ্গকে এরূপভাবে প্রবেশ করিয়েছিলে যেরূপভাবে শলাকা সুরমাদানীর মধ্যে এবং কাষ্ঠ কুঁয়ার মধ্যে প্রবেশ করে?” প্রশ্ন করলেন তিনি । “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! হ্যাঁ এই ভাবেই ।” তিনি উত্তর দিলেন। তখন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে রজম করার অর্থাৎ অর্ধেক পুঁতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দেন এবং এভাবেই তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দু'টি লোককে পরস্পর বলাবলি করতে শুনলেনঃ “ এ লোকটিকে দেখো, আল্লাহ তার দোষ গোপন করে রেখেছিলেন, কিন্তু সে নিজেই নিজেকে ছাড়লো না, ফলে কুকুরের মত তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো ।" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একথা শুনে চলতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন যে, পথে একটি মৃত গাধা পড়ে রয়েছে। তিনি বললেনঃ “ অমুক অমুক কোথায়?" তারা আসলে তিনি বললেনঃ “তোমরা সওয়ারী হতে অবতরণ কর এবং এই মৃত গাধার গোশত ভক্ষণ কর ।" তারা বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন, এটা কি খাওয়ার যোগ্য?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তোমরা তোমাদের ( মুসলমান ) ভাই এর যে দোষ বর্ণনা করছিলে ওটা এর চেয়েও জঘন্য ছিল । যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! সে ( অর্থাৎ হযরত মায়েয রাঃ ) তো এখন জান্নাতের নদীতে সাঁতার দিচ্ছে।” ( এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটির ইসনাদ বিশুদ্ধ)হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা নবী ( সঃ )-এর সাথে ( সফরে ) ছিলাম এমন সময় মৃত সড়া-পচা দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস বইতে শুরু করলো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বললেনঃ “ এটা কিসের দুর্গন্ধ তা তোমরা জান কি?” এটা হলো ঐ লোকদের দুর্গন্ধ যারা মানুষের গীবত করে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমরা একবার এক সফরে নবী ( সঃ )-এর সাথে ছিলাম । হঠাৎ দুর্গন্ধময় বাতাস বইতে শুরু করে। তখন নবী ( সঃ ) বললেনঃ “ এটা হলো মুনাফিকদের দুর্গন্ধ যারা মুসলমানদের গীবত করে ?" ( এ হাদীসটি হযরত আবদ ইবনে হুমায়েদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত সুদ্দী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, এক সফরে হযরত সালমান ( রাঃ ) দুজন লোকের সঙ্গে ছিলেন যাদের তিনি খিদমত করতেন । তারা তাকে খেতে দিতেন। একবার হযরত সালমান ( রাঃ ) শুয়ে পড়েছিলেন, ইতিমধ্যে যাত্রীদল তথা হতে প্রস্থান করেন। পরবর্তী বিশ্রামস্থলে পৌঁছে ঐ দুই ব্যক্তি দেখেন যে, হযরত সালমান ( রাঃ ) আসেননি। কাজেই বাধ্য হয়ে তাদেরকে নিজেদের হাতেই তাঁবু খাটাতে হয়। তাই তাঁরা রাগান্বিত হয়ে বলেনঃ “ সালমান ( রাঃ )-এর কাজতো এটাই যে, অপরের রান্নাকৃত খাবার খাবে এবং অপরের খাটানো তাবুতে বিশ্রাম করবে ( অর্থাৎ নিজে কিছুই করবে না ) ।” কিছুক্ষণ পর হযরত সালমান ( রাঃ ) আসলেন। ঐ দুই ব্যক্তির নিকট তরকারী ছিল না। সুতরাং তারা তাকে বললেনঃ “ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে তুমি আমাদের জন্যে কিছু তরকারী নিয়ে এসো ।” তিনি গেলেন এবং বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ! আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন । যদি আপনার কাছে তরকারী থাকে তবে আমাকে দিন।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ ‘তারা তরকারী কি করবে? তারা তরকারী তো পেয়েই গেছে।” হযরত সালমান ( রাঃ ) ফিরে গেলেন এবং গিয়ে সঙ্গীদ্বয়কে ঐ কথা বললেন। তাঁরা উঠে তখন নিজেরাই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট হাযির হলেন এবং বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাদের কাছে তো তরকারী নেই এবং আপনি তা পাঠানওনি ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদেরকে বললেনঃ “ তোমরা তো সালমান ( রাঃ )-এর গোশতের তরকারী খেয়েছো, যেহেতু তোমরা তার সম্পর্কে এরূপ এরূপ কথা বলেছে ।” ঐ সময় ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ( আরবী ) বলার কারণ এই যে, ঐ সময় হযরত সালমান ( রাঃ ) ঘুমিয়ে ছিলেন, আর তাঁর সঙ্গীদ্বয় তাঁর গীবত করছিলেন। হাফিয যিয়াউল মুকাদ্দাসী ( রঃ ) স্বীয় মুখতার' নামক গ্রন্থে প্রায় এ ধরনেরই একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন এবং ওটা হযরত আবু বকর ( রাঃ ) ও হযরত উমার ( রাঃ )-এর ঘটনা। তাতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে বলেনঃ “ তোমাদের ঐ খাদেমের গোশত আমি তোমাদের দাঁতে লেগে থাকতে দেখছি ।” তাঁদের গোলামটি তাদের খাদ্য রান্না করেই ঘুমিয়েছিল এমতাবস্থায় তার সম্পর্কে তাঁদের শুধু এটুকু বলা বর্ণিত আছেঃ “ এ তো দেখি খুবই ঘুমাতে পারে?” তাঁরা দু’জন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি আমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন!” তিনি তখন তাঁদেরকে বলেনঃ “তোমরা তাকেই ( গোলামকেই ) তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বল । সেই তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।”হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় তার ( মুসলিম ) ভাই এর গোশত খেয়েছে ( অর্থাৎ তার গীবত করেছে ), কিয়ামতের দিন ঐ গোশত তার সামনে আনয়ন করা হবে এবং তাকে বলা হবেঃ “যেমন তুমি তার জীবিতাবস্থায় তার গোশত খেয়েছিলে তেমনই এখন মৃত অবস্থায়ও তার গোশত ভক্ষণ কর ।” সে তখন ভীষণ চীৎকার ও হায় হায় করবে। তাকে জোরপূর্বক ঐ গোশত ভক্ষণ করানো হবে।” ( এটা হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা খুবই দুর্বল রিওয়াইয়াত)এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ।' অর্থাৎ তাঁকে ভয় করে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চল এবং তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়। তাওবাকারীর তাওবা আল্লাহ কবুল করে থাকেন। যে তার দিকে ফিরে আসে এবং তার উপর নির্ভরশীল হয়, তিনি তার উপর দয়া করেন। যেহেতু তিনি তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু। জমহুর উলামা বলেনঃ গীবতকারীর তাওবার পন্থা এই যে, সে ঐ অভ্যাস পরিত্যাগ করবে এবং আর কখনো ঐ পাপ করবে না।পূর্বে যা করেছে ওর উপরও লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া শর্ত কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যার গীবত করেছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া শর্ত কি না এ ব্যাপারেও মতানৈক্য আছে। কেউ কেউ বলেন যে, এটাও শর্ত নয়। কারণ হয় ততা সে কোন খবরই রাখে না। সুতরাং যখন সে তার কাছে ক্ষমা চাইতে যাবে তখন সে হয় তো দুঃখিত হবে। সুতরাং এর উৎকৃষ্ট পন্থা এই যে, যে মজলিসে তার দোষ সে বর্ণনা করতো সেই মজলিসে তার গুণ বর্ণনা করবে। আর ঐ অন্যায় হতে সে যথাসাধ্য নিজেকে বিরত রাখবে। এটাই বিনিময় হয়ে যাবে।হযরত আনাস জুহনী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের সহায়তা করে এমন অবস্থায় যে, কোন মুনাফিক তার দুর্নাম করছে, আল্লাহ তখন একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করে দেন যিনি কিয়ামতের দিন তার ( দেহের ) গোশতকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন । আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনের উপর কোন অপবাদ দিবে এবং এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হয় শুধু তাকে কলংকিত করা, আল্লাহ তা'আলা তাকে পুলসিরাতের উপর আটক করে দিবেন, যে পর্যন্ত না প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবি দাউদে বর্ণিত হয়েছে )হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ ( রাঃ ) এবং হযরত আবু তালহা ইবনে সাহল আনসারী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের বে-ইযযতী করে এমন জায়গায় যেখানে তার মানহানী করা হয়, তাকে আল্লাহ তা'আলা এমন জায়গায় অপমানিত করবেন যেখানে সে তার সাহায্যের প্রত্যাশী । আর যে ব্যক্তি এরূপ স্থলে তার ( মুসলিম ) ভাই এর সহায়তা করবে, আল্লাহ তা'আলাও এরূপ জায়গায় তাকে সাহায্য করবেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)
সূরা হুজরাত আয়াত 12 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ করান যাকে ইচ্ছা। আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে
- তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?
- ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ।
- হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।
- তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন।
- তুমি আমাদের মত মানুষ বৈ তো নও। আমাদের ধারণা-তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
- কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ধার দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি
- অতঃপর যখন তারা তাঁর কাছ থেকে নিরাশ হয়ে গেল, তখন পরামর্শের জন্যে এখানে বসল। তাদের
- অতঃপর ফেরাউন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল এবং সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জত করল।
- না আপনি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চান? আপনার পালনকর্তার প্রতিদান উত্তম এবং তিনিই রিযিকদাতা।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হুজরাত ডাউনলোড করুন:
সূরা Hujurat mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Hujurat শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers