কোরান সূরা মুমতাহিনাহ আয়াত 12 তাফসীর
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
[ الممتحنة: 12]
হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। [সূরা মুমতাহিনাহ: 12]
Surah Al-Mumtahanah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Mumtahina ayat 12
হে প্রিয় নবী! যখন বিশ্বাসিনী নারীরা তোমার কাছে আসে তোমার নিকট আনুগত্যের শপথ ক’রে যে তারা আল্লাহ্র সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, আর চুরি করবে না, আর ব্যভিচার করবে না, আর তাদের সন্তানদের তারা হত্যা করবে না, আর তারা এমন কোনো মিথ্যা কলঙ্ক রটনা করবে না যা তাদের হাতের ও তাদের পায়ের মধ্যে তারা উদ্ভাবন করে, আর সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্যতা করবে না, -- তেমন ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য গ্রহণ করো এবং আল্লাহ্র কাছে তাদের জন্য পরিত্রাণ খুঁজো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১২. হে রাসূল! আপনার নিকট যখন মুমিন মহিলারা আগমন করে -যেমন মক্কা বিজয়ের সময় তারা এসেছিল- এ শপথ নিয়ে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন প্রকার শিরক করবে না বরং কেবল তাঁরই ইবাদাত করবে, তারা চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, এমনকি জাহিলী যুগের প্রথা অনুসারে তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তাদের স্বামীদের সাথে জারজ সন্তানদেরকে জড়াবে না, ন্যায় কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না যথা বিলাপ করা, চুল মুÐানো ও গাল চাপড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তাহলে আপনি তাদেরকে বায়আত করান এবং আপনার নিকট বায়আত গ্রহণের পর আল্লাহর নিকট তাদের পূর্বে কৃত পাপের জন্য ক্ষমা চান। আল্লাহ অবশ্যই তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা তাঁর নিকট ক্ষমা চায় তাদের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তাদের ব্যাপারে দায়াপরবশ।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে নবী! বিশ্বাসী নারীরা যখন তোমার নিকট এসে বায়আত করে এই মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তান-সন্ততিদের হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়আত গ্রহণ কর[১] এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [১] এই 'বায়আত' সেই সময় নেওয়া হত, যখন মহিলারা হিজরত করে আসত। যেমন, সহীহ বুখারীতে সূরা মুমতাহিনার তফসীরে এসেছে। এ ছাড়া মক্কা বিজয়ের দিনেও নবী ( সাঃ ) কুরাইশ মহিলাদের কাছ থেকে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। বায়আত নেওয়ার সময় তিনি কেবল মৌখিকভাবে তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিতেন। কোন মহিলার হাত তিনি স্পর্শ করতেন না। আয়েশা ( রাঃ ) বলেন, আল্লাহর কসম! বায়আত গ্রহণকালে নবী করীম ( সাঃ )-এর হাত কখনোও কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। বায়আত নেওয়ার সময় তিনি কেবল বলতেন, " আমি এই কথার উপর তোমার কাছে বায়আত গ্রহণ করলাম। " ( বুখারী, সূরা মুমতাহিনার তাফসীর পরিচ্ছেদ ) বায়আতে তিনি মহিলাদের কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতিও নিতেন যে, তারা শোকে রোদন করবে না, বুকের কাপড় ছিঁড়ে মাতম করবে না। মাথার চুল ছিঁড়াছিঁড়ি করবে না এবং জাহেলী যুগের মহিলাদের মত ডাক পাড়বে না। ( বুখারী ও মুসলিম প্রভৃতি ) এই বায়আতে নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদির কথা উল্লেখ নেই। কারণ, এগুলো ইসলামের রুকন এবং দ্বীনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ আচার, বিধায় তার বর্ণনার প্রয়োজন হয় না। তিনি বিশেষ করে সেই জিনিসগুলোর বায়আত নেন, সাধারণতঃ যেগুলো মহিলাদের দ্বারা বেশী হয়ে থাকে। যাতে তারা দ্বীনের রুকনগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়ার সাথে সাথে এই জিনিসগুলো থেকেও বিরত থাকে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উলামা, দ্বীনের প্রতি আহবানকারী এবং বক্তাগণ যেন তাঁদের বক্তব্যকে কেবল আরকানে দ্বীন বর্ণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রাখেন। কেননা, এগুলো তো পূর্ব থেকেই স্পষ্ট। বরং তাঁদের উচিত সেই সব অন্যায়-অনাচার, অনিসলামী রসম-রেওয়াজ, কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদ জানানো, যা সমাজে ব্যাপকভাবে চলছে এবং যা থেকে নামায-রোযার প্রতি যত্নবান ব্যক্তিরাও অনেক সময় দূরে থাকে না।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে নবী! মুমিন নারীগণ যখন আপনার কাছে কাছে এসে বাই’আত করে [ ১ ] এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবেনা, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন আপনি তাদের বাই’আত গ্ৰহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [ ১ ] এ আয়াতে মুসলিম নারীদের কাছ থেকে একটি বিস্তারিত আনুগত্যের শপথ নেয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ঈমান ও আকায়েদসহ। শরীআতের বিধিবিধান পালন করারও অঙ্গীকার রয়েছে। যদিও এই শপথ মুহাজির নারীদের ঈমান পরীক্ষার পরিশিষ্ট হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু ভাষার ব্যাপকতার কারণে এটা শুধু তাদের বেলায়ই প্রযোজ্য নয়। বরং সব মুসলিম নারীর জন্যে ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। বাস্তব ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে শুধু মুহাজির নারীরাই নয়, অন্যান্য নারীরাও শপথ করেছে। উমাইমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “ আমি আরও কয়েকজন মহিলাসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে শপথ করেছি । তিনি আমাদের কাছ থেকে শরীআতের বিধিবিধান পালনের অঙ্গীকার নেন এবং সাথে সাথে এই বাক্যও উচ্চারণ করান فِيْىحَااسْتَطَعْتُنَّ وٓأَطَقْتُنَّ অর্থাৎ “ আমরা এসব বিষয় পালনে অঙ্গীকার করি যে পর্যন্ত আমাদের সাধ্যে কুলায়” । উমাইমা এরপর বলেন, এ থেকে জানা গেল যে, আমাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্নেহ-মমতা আমাদের নিজেদের চাইতেও বেশি ছিল। আমরাতো নিঃশর্ত অঙ্গীকারই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদেরকে শর্তযুক্ত অঙ্গীকার শিক্ষা দিলেন। ফলে অপারগ অবস্থায় বিরুদ্ধাচরণ হয়ে গেলে তা অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল হবে না। [ তিরমিয়ী: ১৫৯৭, ইবনে মাজাহ: ২৮৭৪ ] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা এই শপথ সম্পর্কে বলেনঃ মহিলাদের এই শপথ কেবল কথাবার্তার মাধ্যমে হয়েছে- হাতের উপর হাত রেখে শপথ হয়নি, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে হত। বস্তুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত কখনও কোন গায়রে মাহরাম নারীর হাতকে স্পর্শ করেনি ৷ [ বুখারী: ৪৮৯১, মুসলিম: ১৮৬৬ ] বিভিন্ন হাদীস থেকে প্রমাণিত আছে যে, এই শপথ কেবল হুদায়বিয়ার ঘটনার পরেই নয়; বরং বারবার হয়েছে। মক্কাবিজয়ের দিনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের কাছ থেকে শপথ গ্রহণ করেন। তখন যারা আনুগত্যের শপথ করেছিল, তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দাও ছিল। সে নিজেকে গোপন রাখতে চেয়েছিল, এরপর শপথের কিছু বিবরণ জিজ্ঞাসা করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সে একাধিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছিল। [ দেখুন, বুখারী: ২২:১১, ৭১৮০, মুসলিম: ১৭১৪ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ যেসব মুসলমান নারী হিজরত করে নবী ( সঃ )-এর নিকট আসতো তাদের পরীক্ষা এই আয়াত দ্বারাই নেয়া হতো । যারা এ কথাগুলো স্বীকার করে নিতো তাদেরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলতেনঃ “ আমি তোমাদের নিকট হতে বায়আত গ্রহণ করলাম ।” এটা নয় যে, তিনি তাদের হাতে হাত রাখতেন। আল্লাহর কসম! বায়আত গ্রহণের সময় তিনি কখনো কোন নারীর হাতে হাত রাখেননি। শুধু মুখে বলতেনঃ “ আমি এই কথাগুলোর উপর তোমাদের বায়আত গ্রহণ করলাম ।”হযরত উমাইমাহ্ বিনতে রুকাইকাহ্ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ কয়েকজন মহিলার সাথে আমিও রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর নিকট বায়আত গ্রহণের জন্যে হাযির হই । তখন রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী আমাদের নিকট হতে আহাদ-অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। আমরা এগুলো স্বীকার করে নিলে তনি বলেনঃ ‘আমরা আমাদের শক্তি ও সাধ্য অনুসারে পালন করবে’ একথাও বল। আমরা বললামঃ আমাদের প্রতি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর করুণা আমাদের নিজেদের চেয়েও বেশী। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমাদের সাথে মুসাফাহা ( করমর্দন ) করবেন না? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ না, আমি বেগানা নারীদের সাথে করমর্দন করি না । আমার একজন নারীকে বলে দেয়া একশ’ জন নারীর জন্যে যথেষ্ট।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম তিরমিযী ( রঃ ), ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ্ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এটাকে হাসান সহীহ্ বলেছেন)মুসনাদে আহমাদে এটুকু বেশীও রয়েছে যে, হযরত উমাইমাহ্ ( রাঃ ) বলেনঃ “ তিনি আমাদের মধ্যে কোন মহিলার সাথে মুসাফাহা করেননি ।” হযরত উমাইমাহ্ নাম্নী এই মহিলাটি হযরত খাদীজা ( রাঃ )-এর ভগ্নী ও হযরত ফতিমা ( রাঃ )-এর খালা হতেন। হযরত সালমা বিনতে কায়েস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর খালা ছিলেন, তার সাথে দুই কিবলামুখী হয়ে নামায পড়েছেন এবং যিনি বানী আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের একজন মহিলা ছিলেন, তিনি বলেন, আনসারদের নারীদের সাথে বায়আত গ্রহণের জন্যে আমিও রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর খিদমতে হাযির হয়েছিলাম। যখন তিনি আমাদের উপর শর্ত করলেন যে, আমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবো না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবো না এবং সত্ত্বার্যে তাঁকে অমান্য করবে না, তারপর তিনি এ কথাও বললেনঃ “ তোমরা তোমাদের স্বামীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা করবে না ।” তখন আমরা এগুলো স্বীকার করে নিয়ে বায়আত গ্রহণ করলাম এবং ফিরে যেতে উদ্যত হলাম। হঠাৎ করে আমার একটি কথা স্মরণ হওয়ায় আমি একজন মহিলাকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট পাঠালাম এই উদ্দেশ্যে যে, স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা করার অর্থ কি তা যেন সে তাকে জিজ্ঞেস করে। উত্তরে তিনি বললেনঃ “ এর অর্থ এই যে, তুমি তোমার স্বামীর মাল গোপনে তার অজান্তে কাউকেও দিবে না ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা বিনতে কুদামাহ ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি আমার মাতা রায়েতাহ্ বিনতে সুফিয়ান খুযাইয়্যাহ্ ( রাঃ )-এর সাথে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট বায়আত গ্রহণকারিণীদের মধ্যে ছিলাম । রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বললেনঃ “ আমি এই মর্মে তোমাদের বায়আত নিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং কার্যে আমাকে অমান্য করবে না । নারীরা স্বীকারোক্তি করছিল। আমার মাতার নির্দেশক্রমে আমিও স্বীকার করলাম এবং বায়আত গ্রহণ করিণীদের মধ্যে শামিল হয়ে গেলাম।” ( এই হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উম্মে আতিয়্যাহ্ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট বায়আত করলাম, তখন তিনি আমাদের সামনে ( আরবী )-এ আয়াতটি পাঠ করলেন এবং তিনি আমাদেরকে মৃতের উপর বিলাপ করতেও নিষেধ করলেন । রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর বায়আত গ্রহণকালীন সময়ের মাঝেই একজন মহিলা তার হাতখানা টেনে নেয় এবং বলেঃ “ মৃতের উপর বিলাপ করা হতে বিরত থাকার উপর বায়আত করছি না । কারণ অমুক মহিলা আমার অমুক মৃতের উপর বিলাপ করার কাজে আমাকে সাহায্য করেছে। এর বিনিময় হিসেবে তার মৃতের উপর আমাকে বিলাপ করতেই হবে।” রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) এ কথা শুনে নীরব থাকলেন, কিছুই বললেন না। অতঃপর সে চলে গেল। কিন্তু অল্পক্ষণ পর সে ফিরে এসে বায়আত করলো।সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি আছে। তাতে এও রয়েছে যে, এই শর্তটি শুধু ঐ মহিলাটি এবং হযরত উম্মে সুলাইম বিনতে মুলহানই ( রাঃ ) পুরো করেছিলেন।সহীহ বুখারীর অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, পাঁচজন মহিলা এই অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিলেন। তাঁরা হলেন উম্মে সুলাইম ( রাঃ ), উম্মুল আ’লা ( রাঃ ), আবু সাবরার কন্যা ও হযরত মুআয ( রাঃ )-এর স্ত্রী এবং আর দুই জন মহিলা। অথবা আবূ সাবরার কন্যা ও হযরত মুআয ( রাঃ )-এর স্ত্রী এবং আর একজন মহিলা। নবী ( সঃ ) ঈদের দিনেও নারীদের নিকট হতে এই বিষয়গুলোর উপর বায়আত গ্রহণ করতেন। সহীহ বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “ আমি রমযানের ঈদের নামাযে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে, হযরত আবূ বকর ( রাঃ )-এর সাথে, হযরত উমার ( রাঃ )-এর সাথে এবং হযরত উসমান ( রাঃ )-এর সাথে নামায পড়েছি । তারা প্রত্যেকেই খুবার পূর্বে নামায পড়তেন। একবার রাসুলুল্লাহ ( সঃ ) খুৎবার অবস্থায় মিম্বর হতে নেমে পড়েন। এখনো যেন ঐ দৃশ্য আমার চোখের সামনে রয়েছে। লোকদেরকে বসানো হচ্ছিল এবং তিনি তাদের মধ্য দিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তিনি স্ত্রী লোকদের নিকট আসেন। তাঁর সাথে হযরত বিলালও ( রাঃ ) ছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি ( আরবী ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি নারীদেরকে প্রশ্ন করেনঃ “ তোমরা এই অঙ্গীকারের উপর অটল থাকবে তো?” একজন স্ত্রী লোক জবাবে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ! হা ( আমরা এর উপ দৃঢ়ভাবে কায়েম থাকবো ) ।” অন্য কোন স্ত্রীলোক জবাব দিলো না। হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত হাসান ( রঃ )-এর জানা নেই যে, যে মহিলাটি জবাব দিয়েছিলেন তিনি কে ছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) মহিলাদেরকে বলেনঃ “ তোমরা দান-খয়রাত কর ।” হযরত বিলাল ( রাঃ ) তার কাপড় বিছিয়ে দিলেন। তখন নারীরা তাদের পাথর বিহীন ও পাথরযুক্ত আংটিগুলো আল্লাহর ওয়াস্তে দান করতে লাগলেন।মুসনাদে আহমাদের রিওয়াইয়াতে হযরত উমাইমাহ্ ( রাঃ )-এর বায়আতের বর্ণনায় এ আয়াত ছাড়াও এটুকু আরো রয়েছে যে, মৃতের উপর বিলাপ না করা এবং অজ্ঞতার যুগের মত সাজ-সজ্জা করে অপর পুরুষকে না দেখানো।সহীহ্ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) এক মজলিসে পুরুষদেরকেও বলেনঃ “ আমার নিকট ঐ বিষয়গুলোর উপর বায়আত কর যা এই আয়াতে রয়েছে । যে ব্যক্তি এই বায়আতকে ঠিক রাখবে তার পুরস্কার আল্লাহ্। তা'আলার নিকট রয়েছে আর যে ব্যক্তি এর বিপরীত কিছু করবে এবং তা মুসলিম হুকুমতের কাছে গোপন বা অপ্রকাশিত থাকবে তার হিসাব আল্লাহ্ তা'আলার নিকট রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন এবং ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন।”হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত ( রাঃ ) বলেনঃ “ আকাবায়ে ঊলায় ( প্রথম আকাবায় ) আমরা বারজন লোক রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর কাছে বায়আত করি এবং তিনি আমাদের নিকট হতে ঐ বিষয়গুলোর উপর বায়আত গ্রহণ করেন যেগুলো এই আয়াতে রয়েছে । আর তিনি আমাদেরকে বলেনঃ “ যদি তোমরা এগুলো পূর্ণ কর তবে তোমাদের জন্যে জান্নাত অবধারিত ।” এটা জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বের ঘটনা।ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর রিওয়াইয়াতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ )-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন নারীদেরকে বলে দেনঃ “ রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) তোমাদের কাছে ঐ বিষয়ের উপর বায়আত নিচ্ছেন যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না ।” এই বায়আতের জন্যে আগমনকারিণীদের মধ্যে হিন্দাও ছিল, যে ছিল উা ইবনে রাবীআর কন্যা, যে ( উহুদের যুদ্ধে ) হযরত হামযা ( রাঃ )-এর পেট ফেঁড়েছিল। সে নারীদের মধ্যে এমন অবস্থায় ছিল যে, কেউ যেন তাকে চিন্তে না পারে। ঘোষণা শুনার পর সে বললোঃ “ আমি কিছু বলতে চাই । কিন্তু যদি আমি বলি তবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে চিনে ফেলবেন এবং যদি তিনি চিনে নেন তবে অবশ্যই আমাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন। আর এ কারণেই আমি এই বেশে এসেছি, যেন তিনি আমাকে চিনতে না পারেন। তার এ কথায় নারীরা নীরব থাকলো এবং তার পক্ষ হতে কথা বলতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো। তখন হিন্দা অপরিচিতা অবস্থাতেই বললোঃ “ এটা ঠিকই তো, পুরুষদেরকে যখন শিক করতে নিষেধ করা হয়েছে তখন নারীদেরকে কেন নিষেধ করা হবে না?” তার এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) শুধু তার দিকে তাকালেন । অতঃপর তিনি হযরত উমার ( রাঃ )-কে বললেনঃ “ বল- তারা চুরি করবে না ।” তখন হিন্দা বললোঃ “ আমি মাঝে মাঝে আবু সুফিয়ান ( রাঃ )-এর খুবই সাধারণ জিনিস তার অজান্তে নিয়ে থাকি, এটাও কি চুরির মধ্যে গণ্য হবে, না হবে না?” হযরত আবু সুফিয়ান ( রাঃ ) ঐ মজলিসেই উপস্থিত ছিলেন । তিনি তাকে বললেনঃ “ আমার ঘর হতে তুমি যা কিছু নিয়েছে তা খরচ হয়েই থাকুক অথবা এখনো কিছু বাকী থাকুক, সবই আমি তোমার জন্যে বৈধ ঘোষণা করলাম ।” এ দেখে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) হেসে ফেললেন এবং তিনি তাকে চিনে নিলেন। অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন। সে এসেই তাঁর হাত ধরে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। তখন রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) তাকে বললেনঃ “ তুমিই কি হিন্দা?” সে উত্তরে বললোঃ “অতীতের গুনাহ্ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন ।” রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) তখন তার দিক হতে ফিরে গিয়ে পুনরায় বায়আত প্রসঙ্গ উঠিয়ে বললেনঃ “ তারা ( নারীরা ) ব্যভিচার করবে না ।” তখন হিন্দা বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কোন স্বাধীনা নারী কি ব্যভিচার করে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বললেনঃ “না, আল্লাহর কসম! স্বাধীনা নারী ব্যভিচার করে না । তারপর তিনি বললেনঃ “ তারা তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না ।” একথা শুনে হিন্দা বললোঃ “ আপনি তাদেরকে বদরের যুদ্ধের দিন হত্যা করেছেন, সুতরাং আপনি জানেন এবং তারা জানে ।” অতঃপর তিনি বললেনঃ “ তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না ।” তারপর বললেনঃ “ সৎকার্যে আমাকে অমান্য করবে না ।” বর্ণনাকারী বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) নারীদেরকে মৃতের উপর বিলাপ করতেও নিষেধ করেন। অজ্ঞতাযুগের লোকেরা মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করতো, কাপড় চিড়তো, মুখ নুচুতো, চুল কাটাতো এবং হায়, হায় করতো। ( এই আসারটি গারীব এবং এর কতক অংশে নাকারাতও রয়েছে। কেননা, হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ ) এবং তাঁর স্ত্রী হিন্দার ইসলাম গ্রহণের সময় তাঁদের রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দিক হতে কোন ভয়ই ছিল না, বরং ঐ সময়ও তিনি আন্তরিকতা এবং প্রেম-প্রীতি প্রকাশ করেছিলেন। সুতরাং এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, মক্কা বিজয়ের দিন বায়আত সম্পর্কীয় এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। নবী ( সঃ ) সাফা পাহাড়ের উপর পুরুষদের বায়আত নিয়েছিলেন এবং হযরত উমার ( রাঃ ) নারীদের বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। তাতে এও রয়েছে যে, সন্তান-হত্যার নিষেধাজ্ঞা শুনে হযরত হিন্দা ( রাঃ ) বলেছিলেনঃ “ আমরা তো তাদেরকে ছোট অবস্থায় লালন-পালন করেছি, আপনারা বড় অবস্থায় তাদেরকে হত্যা করেছেন!” একথা শুনে হযরত উমার ( রাঃ ) হাসিতে লুটিয়ে পড়েন । ( ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) এটা বর্ণনা করেছেন)হযতর আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হিন্দা বিনতে উবাহ বায়আত করার জন্যে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করে। তার হাতের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেনঃ “ তুমি যাও এবং হাতের রঙ বদলিয়ে এসো ।” সে গেল এবং মেহেদী দ্বারা হাত রাঙ্গিয়ে আসলো। তিনি তখন বললেনঃ “ আমি তোমার কাছে বায়আত নিচ্ছি যে, তুমি আল্লাহর সাথে কোন শরীক করবে না ।” অতঃপর সে তার কাছে বায়আত করলো। ঐ সময় তার হাতে সোনার দু’টি কংকন ছিল। সে বললোঃ “ এ দু’টি সম্পর্কে আপনি কি মত পোষণ করেন?” জবাবে তিনি বললেনঃ “এ দু'টি হলো জাহান্নামের আগুনের দু’টি অঙ্গার ।” [ এটাও বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) ]হযরত শা'বী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) এমন অবস্থায় নারীদের নিকট হতে বায়আত গ্রহণ করেন যে, তার হাতে একখানা কাপড় ছিল যা তিনি তার হস্ত-তালুতে রেখেছিলেন। তিনি বলেনঃ “ তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না ।” তখন একজন মহিলা বলে ওঠেঃ “ আপনি তাদের বাপ-দাদাদেরকে হত্যা করেছেন, আর আমাদেরকে তাদের সন্তানদের ব্যাপারে অসিয়ত করছেন!” এটা ছিল বায়আতের প্রাথমিক রূপ । এরপর রাসূলুল্লাহ্ এই নীতি চালু করেন যে, বায়আত করার জন্যে যখন নারীরা একত্রিত হতো তখন তিনি সমস্ত বিষয় তাদের সামনে পেশ করতেন এবং তারা ওগুলো মেনে নিয়ে ফিরে যেতো।মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “ হে নবী ( সঃ )! মুমিনা নারীরা যখন তোমার নিকট বায়আত করার জন্যে আসে অর্থাৎ যখন তারা তোমার কাছে এসব শর্তের উপর রায়আত করার জন্যে আসে তখন তুমি তাদের নিকট হতে এই মর্মে বায়আত গ্রহণ করো যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক স্থির করবে না, অপর লোকের মাল চুরি করবে না, তবে হ্যাঁ, যার স্বামী তার ক্ষমতা অনুযায়ী তার স্ত্রীকে খাদ্য ও পোশাক না দেয় তাহলে স্ত্রীর জন্যে এটা বৈধ যে, সে তার স্বামীর মাল হতে প্রথা অনুযায়ী ও নিজের প্রয়োজন মুতাবেক গ্রহণ করবে, যদিও তার স্বামী তা জানতে পারে । এর দলীল হচ্ছে হযরত হিন্দা সম্পৰ্কীয় হাদীসটি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার স্বামী আবু সুফিয়ান ( রাঃ ) একজন কৃপণ লোক । তিনি আমাকে এই পরিমাণ খরচ দেন না যা আমার ও আমার সন্তানদের জন্যে যথেষ্ট হতে পারে। এমতাবস্থায় যদি আমি তার অজান্তে তার মাল হতে কিছু গ্রহণ করি তবে তা আমার জন্যে বৈধ হবে কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেনঃ “ প্রচলিত পন্থায় তুমি তার মাল হতে এই পরিমাণ নিয়ে নিবে যা তোমার এবং তোমার সন্তানদের জন্যে যথেষ্ট হয় । ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে )মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা ব্যভিচার করবে না। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয়ই এটা নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ ও মন্দ পথ ।” ( ১৭:৩২ )হযরত সামরা ( রাঃ ) বর্ণিত হাদীসে ব্যভিচারের শাস্তি জাহান্নামের অগ্নির যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রূপে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ফাতিমা বিনতে উবাহ্ ( রাঃ ) যখন বায়আত করার জন্যে আগমন করেন এবং তাঁর সামনে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) ( আরবী ) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। তখন তিনি তাঁর হাতখানা তার মাথার উপর রাখেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার এই লজ্জা দেখে মুগ্ধ হন। তখন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেনঃ “ সবাই এই শর্তগুলোর উপর বায়আত করেছে ।” একথা শুনে তিনিও বায়আত করেন। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর বায়আত গ্রহণের পদ্ধতি উপরে বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ ‘তারা তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। এই হুকুমটি সাধারণ। ভূমিষ্ট হয়ে গেছে এরূপ সন্তানও এই হুকুমেরই আওতায় পড়ে। যেমন জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা তাদের এরূপ সন্তানকে পানাহারের ভয়ে হত্যা করতো। আর সন্তান গর্ভপাত করাও এই নিষেধাজ্ঞারই আওতাধীন, হয় তা এই ভাবেই হোক যে ঔষধের মাধ্যমে গর্ভধারণই করবে না, না হয় গর্ভস্থ সন্তানকে কোন প্রকারে ফেলে দিবে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ “ তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না ।' হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) প্রমুখ গুরুজন এর একটি ভাবার্থ এই বর্ণনা করেছেন যে, তারা তাদের স্বামীর সন্তান ছাড়া অন্যের সন্তানকে তাদের স্বামীর সন্তান বলবে না।হযরত আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন মুলাআনার ( স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর লা'নত করা ) আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেনঃ “ যে নারী ( সন্তানকে ) এমন কওমের মধ্যে প্রবেশ করায় যে ঐ কওমের নয় তার সাথে আল্লাহর কোনই সম্পর্ক নেই । আর যে পুরুষ তার সন্তানকে অস্বীকার করে অথচ সে তার দিকে তাকায়, আল্লাহ্ তা'আলা ঐ ব্যক্তি হতে আড়াল হয়ে যাবেন এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষের সামনে তাকে অপদস্থ করবেন।” ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তারা সৎকার্যে তোমাকে ( নবী সঃ-কে ) অমান্য করবে না ।' অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) যা নির্দেশ দিবেন তা তারা মেনে চলবে এবং যা হতে নিষেধ করবেন তা হতে তারা বিরত থাকবে। আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় নবী ( সঃ )-এর আনুগত্যও শুধু মা'রূফ বা সৎকার্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর মা'রূফই হচ্ছে আনুগত্য। ইবনে যায়েদ ( রঃ ) বলেনঃ “ দেখুন, সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর আনুগত্য করার হুকুমও শুধু সৎকার্যেই রয়েছে । এই বায়আত গ্রহণের দিন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নারীদের নিকট হতে মৃতের উপর বিলাপ না করার স্বীকৃতিও নিয়েছিলেন, যেমন হযরত উম্মে আতিয়্যা ( রাঃ )-এর হাদীসে গত হয়েছে।হযরত কাতাদাহ্ ( রঃ ) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে- এই বায়আতে এও ছিল যে, গাইরি মুহরিম বা বিবাহ নিষিদ্ধ নয় এরূপ পুরুষ ললাকের সঙ্গে যেন নারীরা কথা না বলে। তখন হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ ( রাঃ ) বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কোন কোন সময় এমনও হয় । যে, আমরা বাড়ীতে থাকি না এমতাবস্থায় আমাদের বাড়ীতে মেহমান এসে পড়ে ( ঐ সময়ও কি আমাদের স্ত্রীরা মেহমানের সাথে কথা বলতে পারবে না? )।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বললেনঃ “ তাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করা আমার উদ্দেশ্য নয় ( তাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলতে আমি নিষেধ করছি না ) ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) হযরত হাসান ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) এই বায়আত গ্রহণের সময় নারীদেরকে মুহরিম ছাড়া অন্য কোন পুরুষ লোকের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “ কোন কোন লোক এমনও আছে যে, সে বেগানা নারীর সাথে কথা বলে মজা উপভোগ করে থাকে, এমনকি তার উরুদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ হতে মযী বেরিয়ে পড়ে ।” [ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) ]উপরে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, মৃতের উপর বিলাপ না করার শর্তের উপর একটি নারী বলেছিলঃ “ অমুক গোত্রের মহিলারা আমার বিলাপের সময় আমার সাথে বিলাপে যোগ দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছে । সুতরাং তাদের বিলাপের সময় আমিও তাদের সাথে যোগ দিয়ে অবশ্যই বিনিময় প্রদান করবে।” তখন তাকে তাদের বিলাপে যোগ দেয়ার জন্যে যেতে বলা হয়। সুতরাং সে যায় ও তাদের বিলাপে যোগ দেয় এবং সেখান হতে ফিরে এসে আর বিলাপ না করার উপর বায়আত করে।উম্মে মুলায়েম ( রাঃ ), যার নাম ঐ দুই মহিলার মধ্যে রয়েছে যারা বিলাপ না করার বায়আত পূর্ণ করেছিলেন, তিনি হলেন মুলহানের কন্যা এবং হযরত আনাস ( রাঃ )-এর মাতা। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যে মহিলাটি বিনিময় হিসেবে বিলাপ করার অনুমতি চেয়েছিল, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।এটাই হলো ঐ মা'রূফ বা সকার্য যাতে অবাধ্যতা নিষিদ্ধ। বায়আতকারিণীদের মধ্য হতে একজন মহিলা বলেছিলেনঃ “ সৎকার্যে আমরা রসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-কে অমান্য করবো না ।” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ বিপদের সময় আমরা মুখ নুচবো না, চুল কাটাবো না, কাপড় ফাড়বো না এবং হায়, হায় করবে না।হযরত উম্মে আতিয়্যা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) যখন মদীনায় আমাদের নিকট শুভাগমন করেন তখন একদা তিনি নির্দেশ দেন । যে, সমস্ত আনসারিয়্যাহ মহিলা যেন একটি ঘরে একত্রিত হয়। অতঃপর তিনি হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ )-কে তথায় প্রেরণ করেন। হযরত উমার ( রাঃ ) তখন দরযার উপর দাঁড়িয়ে যান এবং সালাম করেন। আমরা তাঁর সালামের জবাব দিই। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ আমি রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর দূতরূপে আপনাদের নিকট আগমন করেছি । আমরা বললামঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) এবং তাঁর দূতকে মুবারকবাদ জানাচ্ছি। তিনি বললেনঃ “ রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর নির্দেশক্রমে আমি আপনাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যে, আপনারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক না করার, চুরি না করার এবং ব্যভিচার না করার বায়আত আমার কাছে করবেন ।” আমরা বললামঃ “ আমরা প্রস্তুত আছি এবং স্বীকার করছি । অতঃপর তিনি বাইরে দাঁড়িয়েই স্বীয় হস্ত ভিতরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন এবং আমরাও আমাদের হস্তগুলো ভিতরেই বাড়িয়ে দিলাম। তিনি বললেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন!” তারপর আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো যে, আমরা যেন আমাদের ঋতুবতী নারীদেরকে এবং যুবতী ও কুমারী মেয়েদেরকে ঈদের মাঠে নিয়ে যাই । জুমআর নামায আমাদের উপর ফরয নয়। আমরা যেন জানাযার সাথে গমন না করি।” হাদীসের বর্ণনাকারী ইসমাঈল ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি হযরত উম্মে আতিয়্যাহ্ ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করি- সৎকার্যে নারীরা রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ )-এর অবাধ্য হবে না এ কথার অর্থ কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “এর অর্থ এই যে, তারা বিলাপ করবে না ।” ( এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি বিপদের সময় গাল চাপড়ায়, চুল ছিড়ে, কাপড় ফাড়ে এবং জাহেলী যুগের লোকের মত হায়, হায় করে সে আমাদের মধ্যে নয় ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) ও ইমাম মুসলিম ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু মালিক আশআরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলিয়াত যুগের চারটি কাজ রয়েছে যা তারা পরিত্যাগ করবে না । ( এক ) বংশের উপর গৌরব প্রকাশ করা, ( দুই ) মানুষকে তার বংশের কারণে বিদ্রুপ করা, ( তিন ) নক্ষত্রের নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং ( চার ) মৃতের উপর বিলাপ করা।” তিনি আরো বলেনঃ “ বিলাপকারিণী নারী তাওবা না করে মারা গেলে তাকে কিয়ামতের দিন গন্ধকের জামা পরানো হবে এবং খোস-পাঁচড়াযুক্ত চাদর গায়ে জড়ানো হবে ।” [ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হাফিয আবূ ইয়ালা ( রঃ ) ] হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বিলাপকারিণীর উপর এবং কান লাগিয়ে বিলাপ শ্রবণকারিণীর উপর লানত করেছেন। ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তারা সৎকার্যে তোমাকে অমান্য করবে না’ এর দ্বারা বিলাপ করাকে বুঝানো হয়েছে। ( ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযীও ( রঃ ) কিতাবুত তাফসীরের মধ্যে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
সূরা মুমতাহিনাহ আয়াত 12 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি তো জানেন আমরা যা কিছু গোপনে করি এবং যা কিছু প্রকাশ্য
- অতঃপর তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায় তোমাদের
- আমরা সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। তারা ছিল এক সম্প্রদায়-যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা
- যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয়
- এই দু’টি ছাড়া আরও দু’টি উদ্যান রয়েছে।
- আর আল্লাহ কোন জাতিকে হেদায়েত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে
- আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর
- অতঃপর উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা জাহান্নামে যাবে এবং চিরকাল তথায় বসবাস করবে। এটাই
- যে নারী তার স্বামীর বিষয়ে আপনার সাথে বাদানুবাদ করছে এবং অভিযোগ পেশ করছে আল্লাহর দরবারে,
- শুন, যে দিন এক আহবানকারী নিকটবর্তী স্থান থেকে আহবান করবে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা মুমতাহিনাহ ডাউনলোড করুন:
সূরা Mumtahina mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Mumtahina শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers