কোরান সূরা আনআম আয়াত 124 তাফসীর
﴿وَإِذَا جَاءَتْهُمْ آيَةٌ قَالُوا لَن نُّؤْمِنَ حَتَّىٰ نُؤْتَىٰ مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللَّهِ ۘ اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ ۗ سَيُصِيبُ الَّذِينَ أَجْرَمُوا صَغَارٌ عِندَ اللَّهِ وَعَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا كَانُوا يَمْكُرُونَ﴾
[ الأنعام: 124]
যখন তাদের কাছে কোন আয়াত পৌঁছে, তখন বলে, আমরা কখনই মানব না যে, পর্যন্ত না আমরাও তা প্রদত্ত হই, যা আল্লাহর রসূলগণ প্রদত্ত হয়েছেন। আল্লাহ এ বিষয়ে সুপারিজ্ঞাত যে, কোথায় স্বীয় পয়গাম প্রেরণ করতে হবে। যারা অপরাধ করছে, তারা অতিসত্বর আল্লাহর কাছে পৌছে লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি পাবে, তাদের চক্রান্তের কারণে। [সূরা আনআম: 124]
Surah Al-Anam in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anam ayat 124
আর যখন তাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসে, তারা বলে -- ''আমরা কখনো বিশ্বাস করবো না যে পর্যন্ত না আল্লাহ্র রসূলদের যা দেয়া হয়েছে তার অনুরূপ কিছু আমাদেরও দেওয়া হয়।’’ আল্লাহ্ই ভালো জানেন কোথায় তাঁর প্রত্যাদেশের ভারার্পণ করবেন। যারা অপরাধ করে চলে তাদের উপরে শীঘ্রই ঘটবে আল্লাহ্র তরফ থেকে লাঞ্ছনা এবং কঠোর শাস্তি -- তারা যা চক্রান্ত করে চলেছে সেজন্য।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১২৪. বড় বড় কাফিরদের নিকট আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর নবীর উপর নাযিলকৃত কোন নিদর্শন নেমে আসলে তারা বলে: আল্লাহ তা‘আলা নবীদের মতো নবুওয়াত ও রিসালাত না দেয়া পর্যন্ত আমরা এর উপর ঈমান আনবো না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি উত্তরে বলেন: নিশ্চয়ই তিনি জানেন কে রিসালাতের উপযুক্ত এবং কে তার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারে। অতঃপর তিনি তাঁকেই নবুওয়াত ও রিসালাতের গুরু দায়িত্বভার বিশেষভাবে দিয়ে থাকেন। অচিরেই সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান ও ষড়যন্ত্রের কারণে গাদ্দারদের প্রতি অসম্মান, লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আর যখন তাদের নিকট কোন নিদর্শন আসে, তখন তারা বলে, ‘আল্লাহর রসূলগণকে যা দেওয়া হয়েছিল, আমাদেরকে তা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কখনোও বিশ্বাস করব না।’[১] রসূলের পদ বা দায়িত্ব আল্লাহ কার উপর অর্পণ করবেন, তা তিনিই ভাল জানেন।[২] যারা অপরাধ করেছে, তাদের চক্রান্তের কারণে আল্লাহর নিকট হতে তাদের উপর লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি আপতিত হবে। [১] অর্থাৎ, তাদের কাছেও ফিরিশতা অহী আনয়ন করুন এবং তাদের মাথাতেও নবুঅত ও রিসালাতের মুকুট পরানো হোক। [২] অর্থাৎ, কাকে নবী বানানো যাবে, এ সিদ্ধান্ত ( মানুষের হাতে নেই; বরং তা আছে ) একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনিই সকল বিষয়ের হিকমত ও কল্যাণ সম্বন্ধে অবগত। আর তিনিই ভালো জানেন এ মহান পদের যোগ্যতম ব্যক্তি কে? মক্কার কোন চৌধুরী, জননেতা, নাকি আব্দুল্লাহ ও আমিনার অনাথ সন্তান?
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর যখন তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলে, ‘ আল্লাহ্র রাসূলগণকে যা দেয়া হয়েছিল আমাদেরকেও তার অনুরূপ না দেয়া পর্যন্ত আমরা কখনো ঈমান আনবো না।’ আল্লাহ্ তাঁর রিসালাত কোথায় অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন। যারা অপরাধ করেছে , তাদের চক্রান্তের কারণে আল্লহার কাছে [ ১ ] লাঞ্ছনা ও কঠোর শাস্তি অচিরেই তাদের উপর আপতিত হবে [ ২ ]। [ ১ ] ‘আল্লাহর কাছে’ -এর এক অর্থ এই যে, তারা নিজেদেরকে সম্মানিত ভাবলেও আল্লাহর নিকট তারা সম্মানিত নয়। অথবা কেয়ামতের দিন যখন তারা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, তখন অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় উপস্থিত হবে। অতঃপর তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ এই যে, এখানে অর্থ হবে, আল্লাহর কাছ থেকে অর্থাৎ বর্তমানে বাহ্যতঃ তারা সর্দার ও সম্মানিত হলেও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে তীব্র অপমান ও লাঞ্ছনা স্পর্শ করবে। এমনটি দুনিয়াতেও হতে পারে এবং আখেরাতেও। [ কুরতুবী ] যেমন, নবীগণের শক্রদের ব্যাপারে জগতের ইতিহাসে এরূপ হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ তাদের শক্ররা পরিণামে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বড় বড় শক্র, যারা নিজেরা সম্মানী বলে খুব আস্ফালন করত, তারা একে একে ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছে, না হয় অপমানিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আবু জাহল, আবু লাহাব প্রমূখ কুরাইশ সর্দারদের অবস্থা বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ফুটে উঠেছে। [ ২ ] অর্থ এই যে, সত্যের যেসব শক্র আজ স্বগোত্রে সর্দার ও বড় লোক খেতাবে ভূষিত, অতিসত্বর তাদের বড়ত্ব ও সম্মান ধুলায় লুষ্ঠিত হবে। [ কুরতুবী ] আল্লাহর কাছে তারা তীব্র অপমান ও লাঞ্ছনা ভোগ করবে এবং কঠোর শাস্তিতে পতিত হবে। যা তাদের বর্তমান অহংকারেরই যথাযথ শাস্তি। [ সা'দী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১২৩-১২৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহপাক বলেন- হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! যেমন তোমার দেশের বড় বড় লোকেরা পাপী ও কাফির রূপে প্রমাণিত হয়েছে, যারা নিজেরাও আল্লাহর পথ থেকে বিমুখ হয়ে আছে এবং অন্যদেরকেও কুফরীর দিকে আহ্বান করতে রয়েছে, আর তোমার বিরোধিতায় ও শত্রুতায় অগ্রগামী হয়েছে, দ্রুপ তোমার পূর্বের রাসূলদের সাথেও ধনী ও প্রভাবশালী লোকেরা শত্রুতা করে এসেছিল। অতঃপর তারা যে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছিল তা তো অজানা নয়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ এভাবেই আমি প্রত্যেক জনপদে ওর প্রভাবশালী ও শীর্ষস্থানীয় লোকদেরকে পাপাচারী করেছিলাম এবং নবীদের শত্রু বানিয়ে রেখেছিলাম। অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ আমি যখন কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তথাকার ধনী ও প্রভাবশালীদের ঐ জনপদে অশান্তি সৃষ্টি করার ও পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ ঘটে যায় ।” ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেন, কিন্তু তারা আনুগত্য স্বীকারের পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করে দেয়। ফলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। মহান আল্লাহ এক স্থানে বলেনঃ “ যখনই আমি কোন জনপদে কোন ভয় প্রদর্শক পাঠাই তখনই সেখানকার সম্পদশালীরা বলেআমরা তো তোমাকে মানি না । তারা বলে-আমরা ধন মালে ও সন্তান সন্ততিতে তোমাদের উপরে রয়েছি, সুতরাং আমাদের শাস্তি দেয়া হবে না। মহান আল্লাহ কাফিরদের উক্তি দিয়ে বলেনঃ “ জনপদে সম্পদশালী ও প্রভাবশালী লোকেরা বলে-আমরা আমাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদেরকে এর উপরই পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করবো ।" ( আরবী ) শব্দের এখানে ভাবার্থ হচ্ছে-তারা নিজেদের বাজে ও অসৎ কথা দ্বারা লোকদেরকে বিভ্রান্তির পথে ডেকে থাকে। যেমন হযরত নূহ ( আঃ )-এর কওম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা খুব বড় রকমের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল ।” ( ৭১:২২ ) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “ ( হে মুহাম্মাদ সঃ )! যদি তুমি ঐ অত্যাচারীদেরকে দেখতে! যখন তারা তাদের প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে পরস্পর কথা বলাবলি করবে এবং শিষ্য গুরুকে ও অনুসারীরা অনুসৃতদেরকে বলবে যদি আমরা তোমাদের পদাংক অনুসরণ না করতাম তবে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম । তখন নেতারা অধীনস্থদেরকে বলবে-আমরা তোমাদেরকে হিদায়াত থেকে বাধা তো কমই দিয়েছিলাম, তোমরা নিজেরাই তো পাপী ও অপরাধী ছিলে, আর আমরা কুফরী অবলম্বন করি এবং আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করি এটা তোমাদেরই পরামর্শ ছিল, সুতরাং তোমরা নিজেদের সাথে আমাদেরকেও জড়িয়ে ফেলেছো।সুফিয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন যে, কুরআন কারীমে উল্লিখিত ( আরবী ) -এর ভাবার্থ হচ্ছে অমিল বা কাজ।আল্লাহ পাক বলেন- তারা শুধু নিজেদেরকে নিজেরা প্রবঞ্চিত করছে, অথচ তারা এই সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পারছে না। অর্থাৎ এই প্রতারণা এবং অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করার শাস্তি তাদের নিজেদেরই উপর পতিত হবে এটা তারা মোটেই বুঝে উঠছে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ এই নেতারা নিজেদের পাপের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝা বহন করবে ।” তিনি আরও বলেনঃ “ পথভ্রষ্টকারীরা কতই নিকৃষ্ট বোঝা বহন করছে, অথচ তারা বুঝছে না তারা অন্যদের বোঝাও বহন করতে আছে!” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ঐ লোকদের কাছে যখন আমার কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলে-আমরা কখনও ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না আমাদের কাছে ঐ সমস্ত নিদর্শন পেশ করা হয় যেগুলো আল্লাহর ( পূর্ববর্তী ) রাসূলদের প্রদান করা হয়েছিল । তারা বলতো- দলীল হিসেবে রাসূল ( সঃ )-এর সাথে ফেরেশতাগণও কেন আগমন করেন না, যেমন তাঁরা রাসূলদের কাছে অহী পৌছিয়ে থাকেন? যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যারা আমার সাথে সাক্ষাৎ করাকে বিশ্বাস করে না তারা বলে-আমাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে কেন অবতীর্ণ করা হয় না অথবা কেন আমরা আমাদের প্রভুকে দেখতে পাই না?( আরবী ) অর্থাৎ নবুওয়াতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করতে হয় এবং প্রকৃতপক্ষে রাসূল হওয়ার যোগ্য কে তা আল্লাহ ভালরূপেই জানেন । যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তারা বলে-এই কুরআন দুটি বড় শহরের কোন এক ব্যক্তির উপর কেন অবতীর্ণ করা হয়নি? তারা কি আল্লাহর রহমত নিজেদের হাতেই বণ্টন করে নেবে?" এখানে দু’টি শহর বা গ্রাম বলতে মক্কা ও তায়েফকে বুঝানো হয়েছে । ঐ দুষ্ট লোকেরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) -এর প্রতি শত্রুতা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেই একথা বলতো। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ হে নবী ( সঃ )! যখন কাফিররা তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়ে নেয় ( এবং বলে ) এই লোকটিই কি তোমাদের মা'বৃদদের সম্পর্কে সমালোচনা করে থাকে? অথচ তারা রহমানের ( আল্লাহর ) যিকিরকে ভুলে বসেছে । আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “ যখন তারা তোমাকে দেখে তখন তোমাকে ( মুহাম্মাদ সঃ -কে ) উপহাসের পাত্র বানিয়ে নেয় এবং বলে এটাই কি সেই লোক যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন?” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে নবী ( সঃ )! তোমার পূর্বেও রাসূলদের সাথে এরূপ বিদ্রুপ ও উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সেই উপহাসের জন্যে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ।” অথচ ঐ দুর্ভাগারা নবী মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর ফযীলত, বংশ মর্যাদা, গোত্রীয় সম্মান এবং তাঁর জন্মভূমি মক্কার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিল। আল্লাহ, সমস্ত ফেরেশতা এবং মুমিনদের পক্ষ থেকে তাঁর উপর দরূদ বর্ষিত হাক। এমন কি ঐ লোকগুলো তাঁর নবুওয়াত লাভের পূর্বেও তার মধুর ও নির্মল চরিত্রের এমনভাবে স্বীকারোক্তি করেছিল যে, তাঁকে আল- আমীন ( বিশ্বস্ত, সত্যবাদী ও আমানতদার ) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কাফিরদের নেতা আবু সুফিয়ান পর্যন্ত তার সত্যবাদিতায় এতো প্রভাবান্বিত ছিলেন যে, যখন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর বংশ সম্পর্কে তাঁকে ( আবু সুফিয়ানকে ) জিজ্ঞাসাবাদ করেন তখন তিনি নিঃসংকোচে উত্তর দেন-“ আমাদের মধ্যে তিনি অতি সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোক ।” তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করেনঃ “ এর পূর্বে কখনও তিনি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়েছিলেন কি?” আবু সুফিয়ান উত্তরে বলেছিলেনঃ “না ।” যাহাক, এটা খুবই দীর্ঘ হাদীস। এর দ্বারা রোম সম্রাট প্রমাণ লাভ করেছিলেন যে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, এসব হচ্ছে তাঁর নবুওয়াত ও সত্যবাদিতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম ( আঃ )-এর সন্তানদের মধ্য হতে ইসমাঈল ( আঃ )-কে মনোনীত করেছেন, বানী ইসমাঈলের মধ্য হতে বানী কিনানাকে মনোনীত করেছেন, বানী কিনানার মধ্য হতে কুরায়েশকে বেছে নিয়েছেন, কুরায়েশের মধ্য হতে বানী হাশিমকে পছন্দ করেছেন এবং বানী হাশিমের মধ্য হতে আমাকে মনোনীত করেছেন । ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) ও ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ বানী আদমের উত্তম যুগ একের পর এক আসতে রয়েছে । শেষ পর্যন্ত ঐ উত্তম যুগও এসে গেছে যার মধ্যে আমি রয়েছি।” হযরত আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মিম্বরের উপর আরোহণ করে বলেনঃ “ আমি কে?” জনগণ উত্তরে বলেনঃ “আপনি আল্লাহর রাসূল ।” তখন তিনি বলেনঃ “ হ্যা, আমি হচ্ছি মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব ( সঃ )! আল্লাহ মাখলুকাত সৃষ্টি করেন এবং স্বীয় মাখলুকাতের মধ্যে আমাকে সবচেয়ে উত্তম করে সৃষ্টি করেন । লোকদেরকে তিনি দু' দলে ভাগ করেন এবং আমাকে উত্তম দলের অন্তর্ভুক্ত করেন। যখন তিনি গোত্রগুলো সৃষ্টি করেন তখন তিনি আমার গোত্রকেই উত্তম গোত্র বলে ঘোষণা করেন। তিনি বংশ সৃষ্টি করলে আমাকে তিনি সর্বোত্তম বংশের মধ্যেই সৃষ্টি করেন। আমি বংশের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম এবং ব্যক্তি হিসেবেও আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সত্য কথাই বলেছেন।হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ জিবরাঈল ( আঃ ) আমাকে বলেছেন- “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আমি ভূ-পৃষ্ঠের পূর্ব ও পশ্চিমে সব দিকেই ঘুরেছি, কিন্তু মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর চেয়ে উত্তম আর কাউকেও পাইনি । আমি সমস্ত পূর্ব ও পশ্চিমে অনুসন্ধান করেছি কিন্তু বানু হাশিমের বংশ অপেক্ষা মর্যাদা সম্পন্ন বংশ কোথাও পাইনি।" ( হাদীসটি হাকিম (রঃ ) ও বায়হাকী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখন তিনি মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর অন্তরকে সমস্ত বান্দার অন্তর অপেক্ষা উত্তম পান । সুতরাং তিনি তাঁকে নিজের জন্যে মনোনীত করেন। অতঃপর তিনি মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর অন্তর দেখার পর অন্যান্য বান্দাদের অন্তরের প্রতি পুনরায় লক্ষ্য করেন। তখন তিনি মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর সাহাবীদের অন্তরকে সর্বাপেক্ষা উত্তম পান। সুতরাং তিনি তাদেরকে তাঁর রাসূলের উযীর মনোনীত করেন। তারা তাঁর দ্বীনের উপর সংগ্রাম চালিয়ে যান। অতএব, মুসলমানরা যাকে ভাল মনে করে সে আল্লাহর কাছেও ভাল এবং মুসলমানরা যাকে মন্দ মনে করে সে আল্লাহর কাছেও মন্দ। ( হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে মাওকুফ রূপে তাখরীজ করেছেন)হযরত সালমান ( রাঃ ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে বলেনঃ “ হে সালমান ( রাঃ )! তুমি আমার প্রতি হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করো না এবং আমার প্রতি অসন্তুষ্ট থেকো না । নতুবা তুমি স্বীয় দ্বীন থেকে সরে পড়বে।” তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কিরূপে আমি আপনার প্রতি হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করতে পারি? আপনার মাধ্যমেই তো আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন! তখন তিনি বলেনঃ “ তুমি যদি আরব সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা পোষণ কর তবে আমার প্রতিই শত্রুতা পোষণ করা হবে ।”বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখে। যখন তাঁর প্রতি তার দৃষ্টি পড়ে তখন সে ভয় পেয়ে যায় এবং লোকদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ ইনি কে?' উত্তরে বলা হয়ঃ ইনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর চাচাতো ভাই হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )। লোকটি তখন বলেঃ “ নবুওয়াতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করা উচিত এবং এর যোগ্য ব্যক্তি কে তা আল্লাহ ভালরূপেই অবগত আছেন ।” ( এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) তাখরীজ করেছেন)( আরবী ) -এটা রিসালাতের অনুসরণ করা থেকে অহংকারকারী এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর আনুগত্য স্বীকার করা হতে গর্বকারীর জন্যে কঠিন ধমক। আল্লাহর কাছে তাকে চিরকালের জন্যে ঘৃণিত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে। অনুরূপভাবে যেসব লোক অহংকার করবে, কিয়ামতের দিন তাদের ভাগ্যে লাঞ্ছনাই রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “ যারা আমার ইবাদত করার ব্যাপারে অহংকার করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদেরকে উলুটো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ তাদের মন্দ কার্যের কারণে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে । কেননা, প্রতারণা সাধারণতঃ গোপনীয়ই হয়ে থাকে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ঠকবাজী ও প্রতারণা করাকে বলা হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবেই মকরকারীকে কিয়ামতের দিন পূর্ণ শাস্তি প্রদান করা হবে। তাই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ তাদের এই ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার কারণেই আল্লাহর নিকট হতে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু তাই বলে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ কারও উপর মোটেই অত্যাচার করেন না। যেমন তিনি বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ সেই দিন সমস্ত গোপনীয় কথা প্রকাশিত হয়ে পড়বে ।” ( ৮৬:৯ ) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতকের জন্যে কিয়ামতের দিন একটা পতাকা থাকবে এবং ওটা তার নিতম্বের সাথে লেগে থাকবে । বলা হবে- এটা হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুক গাদ্দার বা বিশ্বাসঘাতক। এতে হিকমত এই রয়েছে যে, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা যেহেতু গোপনীয়ভাবে থাকে সেহেতু জনগণ তার থেকে সতর্ক থাকার সুযোগ পায় না এবং সে যে প্রতারক এটা তারা জানতেই পারে না। এই কারণেই কিয়ামতের দিন ওটা একটা পতাকা হয়ে যাবে এবং সেটা প্রতারকের প্রতারণার কথা ঘোষণা করতে থাকবে।
সূরা আনআম আয়াত 124 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
- যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে।
- রাজ্যাধিপতি, পবিত্র, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও যা
- নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলেঃ আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
- এটা তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি ভূমন্ডল ও সমুচ্চ নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।
- অতঃপর আপনি জানেন, বিচার দিবস কি?
- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে
- আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন,
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোন ফেরকার কথা মান, তাহলে ঈমান আনার পর তারা
- অতঃপর আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে বাগানে এক বিপদ এসে পতিত হলো। যখন তারা নিদ্রিত ছিল।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনআম ডাউনলোড করুন:
সূরা Anam mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anam শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers