কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 13 তাফসীর
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ﴾
[ البقرة: 13]
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। [সূরা বাকারাহ্: 13]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 13
আর যখন তাদের বলা হলো -- “তোমরাও ঈমান আনো যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে”, তারা বললে -- “আমরা কি বিশ্বাস করব যেমন মূর্খরা বিশ্বাস করছে?” তারা নিজেরাই কি নিঃসন্দেহে মূর্খ নয়? কিন্তু তারা জানে না।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৩. তাদেরকে মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সাহাবীদের মতো ঈমান আনতে আদেশ করা হলে তারা ঠাট্টাচ্ছলে বলে: আমরা কি বোকাদের মতো ঈমান আনবো?! বস্তুতঃ তারাই বোকা। অথচ তারা সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যখন তাদের বলা হয়, ‘অপরাপর লোকদের মত তোমারাও বিশ্বাস কর’, তারা বলে, ‘নির্বোধেরা যেরূপ বিশ্বাস করেছে আমরাও কি সেরূপ বিশ্বাস করব?’( ১ ) সাবধান! এরাই নির্বোধ, কিন্তু এরা জানে না। ( ২ ) ( ১ ) ঐ মুনাফিক্বরা সেই সাহাবায়ে কেরাম ( রাঃ )-দেরকে অজ্ঞ-মুর্খ বা নির্বোধ বলেছে, যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় জান ও মাল কুরবানী করতে কোন দ্বিধা করেননি। আর বর্তমানের মুনাফিক্বরা বুঝাতে চায় যে, সাহাবায়ে কেরাম ( রাঃ ) ঈমান-ধন থেকেই বঞ্চিত ছিলেন -নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক। মহান আল্লাহ অতীত ও বর্তমান উভয় কালের মুনাফিক্বদের কথা খন্ডন ক'রে বলেন, উচ্চতর অভীষ্ট লাভের জন্য পার্থিব স্বার্থসমূহ কুরবানী দেওয়া অজ্ঞতা নয়, বরং তা-ই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা ও সৌভাগ্যের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম ( রাঃ )গণ তো এই সৌভাগ্যেরই প্রমাণ প্রস্তুত করেছেন। আর এই জন্যেই তাঁরা কেবল পাক্কা মু'মিনই নন, বরং তাঁরা হলেন ( অপরের ) ঈমান নির্ণায়ক মাপকাঠি ও কষ্টিপাথর। এখন তো ঈমান তারই গণ্য হবে, যে তাঁদের মত ঈমান আনবে। " তোমরা যেরূপ বিশ্বাস করেছ তারা যদি সেরূপ বিশ্বাস করে, তাহলে নিশ্চয় তারা সুপথ পাবে। " ( সূরা বাক্বারা ২:১৩৭ ) ( ২ ) পরিষ্কার কথা যে, সত্বর ( নগদ ) অর্জিত হয় এমন লাভের জন্য যা দেরীতে বা পরে অর্জিত হবে এমন লাভের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা, আখেরাতের স্থায়ী ও চিরন্তন জীবনের তুলনায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষকে ভয় করা হল অত্যধিক নির্বুদ্ধিতা। আর এই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় মুনাফিক্বরা দিয়ে এক বাস্তব সত্য থেকে অজ্ঞই রয়ে গেছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘ তোমরা ঈমান আন যেমন লোকেরা ঈমান এনেছে’ [ ১ ] , তারা বলে, ; নির্বোধ লোকেরা যেরুপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরুপ ঈমান আনবো [ ২ ] ?’ সাবধান ! নিশ্চয় এরা নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না। [ ১ ] এ আয়াতে মুনাফেকদের সামনে সত্যিকারের ঈমানের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, অন্যান্য লোক যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও অনুরূপভাবে ঈমান আন। এখানে ‘নাস’ শব্দের দ্বারা সাহাবীগণকে বোঝানো হয়েছে। কেননা কুরআন নাযিলের যুগে তারাই ঈমান এনেছিলেন। আর আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে সাহাবীগণের ঈমানের অনুরূপ ঈমানই গ্রহণযোগ্য। যে বিষয়ে তারা যেভাবে ঈমান এনেছিলেন অনুরূপ ঈমান যদি অন্যরা আনে তবেই তাকে ঈমান বলা হয়। এতে বোঝা গেল যে, সাহাবীগণের সমষ্টিগত ঈমানই ঈমানের কষ্টিপাথর। তাদের অনুসরণ করেই পরবর্তীরা ঈমানের অধিকারী হয়েছিলেন। সাহাবাদের ঈমানের মূলমন্ত্র ছিল আল্লাহ্, ফেরেশতা, কিতাব, রাসূল, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান, জান্নাত ও জাহান্নাম সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদির উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য। সুতরাং তাদের মত ঈমানই সবার মধ্যে পাওয়া যেতে হবে। [ তাফসীরে ইবনে কাসীর ] [ ২ ] সে যুগের মুনাফেকরা সাহাবীগণকে বোকা বলে আখ্যায়িত করেছে। বস্তুতঃ এ ধরনের গোমরাহী সর্বযুগেই চলে আসছে। যারা ভ্রষ্টকে পথ দেখায়, তাদের ভাগ্যে সাধারনতঃ বোকা, অশিক্ষিত, মূর্খ প্রভৃতি আখ্যাই জুটে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্ পরিস্কার ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, এসব লোক নিজেরাই বোকা। কেননা, এমন উজ্জ্বল ও প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী থাকা সত্ত্বেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করার মত জ্ঞান-বুদ্ধি তাদের হয়নি। তাদের বোকামীর কারণেই তারা যে কঠিন মূর্খতা ও পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত সেটা বুঝতেই পারছে না। নিঃসন্দেহে বোকামী ও মূর্খতা যারা বুঝতেই পারে না তারা সবচেয়ে বড় বোকা। [ ইবনে কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
ভাবার্থ এই যে, যখন এই মুনাফিকদেরকে সাহাবীদের ( রাঃ ) মত আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, কিতাবসমূহের উপর এবং রাসূলগণের ( আঃ ) উপর ঈমান আনতে, মৃত্যুর পর পুনর্জীবন এবং বেহেশত ও দোযখের সত্যতা স্বীকার করতে ও রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য বরণ করতে ভাল কাজ করতে ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকতে বলা হয় তখন এই অভিশপ্ত দলটি এরূপ ঈমান আনাকে নির্বোধদের ঈমান আনা বলে আখ্যায়িত করে থাকে। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) ও অন্যান্য কয়েকজন সাহাবী ( রাঃ ), রাবী বিন আনাস ( রঃ ), আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম ( রঃ ) প্রমুখও এই তাফসীর বর্ণনা করেছেন ( আরবি ) শব্দটি ( আরবি ) শব্দের বহুবচন যেমন ( আরবি ) শব্দের ( আরবি ) বহুবচন ( আরবি ) শব্দের বহুবচন ( আরবি )এসে থাকে। মূর্খ, দুর্বল অভিমত, স্বল্পজ্ঞান বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং যারা লাভ ক্ষতি মাসলিহাত সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না তাদেরকে বলা হয়। কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আছেঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তোমরা অল্প বুদ্ধিসম্পন্নদেরকে স্বীয় মাল প্রদান করো না যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে জীবন ধারণের উপরকণ করে দিয়েছেন ।' ( ৪:৫ ) সাধারণ মুফাসৃসিরগণের অভিমত এই যে, এই আয়াতে ( আরবি )-এর ভাবার্থ হচ্ছে নারীগণ ও ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা। ঐ মুশরিকদের উপর এখানেও বিশ্বপ্রভু আল্লাহ জোর দিয়ে বলছেন যে, নির্বোধ তো এরাই, কিন্তু সাথে সাথে তারা এতই গণ্ডমূর্খ যে, নিজেদের নির্বুদ্ধিতার অনুভূতিও রাখে না এবং মূর্খতা ও ভ্রষ্টতা অনুধাবন করতে পারে না। এর চেয়ে বেশী তাদের অন্ধত্ব, দৃষ্টিহীনতা এবং সুপথ থেকে দূরে সরে থাকা আর কি হতে পারে?
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 13 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না
- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি
- তারা কি সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যে, মেঘের আড়ালে তাদের সামনে আসবেন আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ
- এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম যে, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং
- তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ
- এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।
- অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে।
- অথবা এমন কোন বস্তু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন; তথাপি তারা বলবেঃ আমাদের কে পুর্নবার
- তিনিই আল্লাহ নভোমন্ডলে এবং ভূমন্ডলে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় জানেন এবং তোমরা যা
- তারা তথায় শতাব্দীর পর শতাব্দী অবস্থান করবে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers