কোরান সূরা আনকাবূত আয়াত 13 তাফসীর
﴿وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ ۖ وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَمَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ﴾
[ العنكبوت: 13]
তারা নিজেদের পাপভার এবং তার সাথে আরও কিছু পাপভার বহন করবে। অবশ্য তারা যে সব মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে। [সূরা আনকাবূত: 13]
Surah Al-Ankabut in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ankabut ayat 13
আর তারা তাদের বোঝা অবশ্যই বইবে, আর তাদের বোঝার সঙ্গে অন্য বোঝাও। আর কিয়ামতের দিনে তাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে যা তারা উাবন করেছিল সে-সন্বন্ধে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৩. বাতিলের দিকে আহŸানকারী মুশরিকরা তাদের নিজেদের গুনাহগুলো তো বহন করবেই বরং তারা তাদের দা’ওয়াতের অনুসারীদের গুনাহগুলোও বহন করবে। তবে অনুসারীদের গুনাহ এতটুকুও কম করা হবে না। উপরন্তু তাদেরকে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে তারা দুনিয়াতে কি কি বাতিল কাজ করেছে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
ওরা অবশ্যই নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং তার সঙ্গে আরও কিছু পাপের বোঝা[১] এবং ওরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই ওদেরকে প্রশ্ন করা হবে। [১] অর্থাৎ, কুফরের নেতারা ও ভ্রষ্টতার দিকে আহবানকারীরা নিজেরা শুধু নিজেদের বোঝাই বইবে না; বরং তার সাথে ঐ সকল লোকেদের পাপের বোঝাও তাদের উপর হবে, যারা তাদের চেষ্টায় পথভ্রষ্ট হয়েছিল। এ বিষয়টি সূরা নাহল ১৬:২৫ নং আয়াতেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের মধ্যে আছে, " যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহবান করে ( দাওয়াত দেয় ) সে ব্যক্তির ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ হবে। এতে তাদের সওয়াব থেকে কিছু মাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি অসৎ পথের দিকে আহবান করে সেই ব্যক্তির ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমাণ গোনাহর ভাগী হবে। এতে তাদের গোনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না। " ( মুসলিম ২৬৭৪নং প্রমুখ ) এই নিয়মানুসারে কিয়ামত পর্যন্ত অন্যায়ভাবে যত হত্যা হবে তাদের পাপের একটি অংশ আদমের পুত্র কাবীলের উপর বর্তাবে। কারণ, মানুষের ইতিহাসে সেই প্রথম অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। ( মুসনাদে আহমাদ )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তারা তো বহন করবে নিজেদের ভার এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা [ ১ ]; আর তারা যে মিথ্যা রটনা করত সে সম্পর্কে কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। [ ১ ] অর্থাৎ কাফেররা মুসলিমগণকে বলত, তোমরা অহেতুক আখেরাতে শাস্তির ভয়ে আমাদের পথে চলছ না। আমরা কথা দিচ্ছি, যদি তোমাদের কথাই সত্য হয় যে, আমাদের পথে চললে আখেরাতে শাস্তি পেতে হবে, তবে তোমাদের পাপভার আমরাই বহন করব। যা কিছু শাস্তি হবে, আমাদেরই হবে। [ ইবন কাসীর ] সাধারণ মুসলিমগণের সাথে কাফেরদের এমনি ধরনের উক্তির জওয়াবে আল্লাহ্ তা‘আলা বলছেন, যারা এরূপ বলে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী। আখেরাতের ভয়াবহ আযাব দেখে তারা তাদের পাপভার বহন করবেই না। কাজেই তাদের এই ওয়াদা মিথ্যা। তাছাড়া তোমাদের পাপভার বহন করে তারা তোমাদেরকে মুক্ত করে দেবে- একথা তো ভ্রান্ত ও মিথ্যা, তবে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করা ও সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা স্বয়ং একটি বড় পাপ। এই পাপভারও তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা নিজেদের পাপভারও বহন করবে এবং যাদের বিভ্রান্ত করেছিল, তাদের পাপভারও এক সাথে বহন করবে। [ ইবন কাসীর ] এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, যে ব্যাক্তি অপরকে পাপকাজে লিপ্ত করতে অনুপ্রাণিত করে অথবা পাপকাজে তাকে সাহায্য করে, সে-ও আসল পাপীর অনুরূপ অপরাধী। কুরআন মজীদের অন্য এক জায়গায় এ নিয়মটিকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, “ যাতে কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝাও পুরোপুরি বহন করে এবং এমনসব লোকদের বোঝার একটি অংশও বহন করে যাদেরকে তারা জ্ঞান ছাড়াই গোমরাহ করে ।” [ সূরা আন-নাহলঃ ২৫ ] আর এ নিয়মটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিমোক্ত হাদীসটিতে বর্ণনা করেছেনঃ “ যে ব্যাক্তি সঠিক পথের দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সমান প্রতিদান পাবে যারা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করে, এ জন্য তাদের প্ৰাপ্যে কোন কমতি করা হবে না । আর যে ব্যাক্তি গোমরাহীর দিকে আহ্বান জানায় সে তাদের সবার সমান গোনাহের ভাগী হবে যারা তার অনুসরণ করে এবং এ জন্য তাদের গোনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না।” [ মুসলিমঃ ২৬৭৪ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর কুরায়েশ কাফিররা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্যে তাদেরকে একথাও বলতোঃ “ তোমরা আমাদের মাযহাবের উপর আমল কর, এতে যদি কোন পাপ হয় তবে তা আমরাই বহন করবো । অথচ এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে এটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। কেউ তার নিকটতম আত্মীয়েরও পাপের বোঝা বহন করবে না এবং করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ বন্ধু বন্ধুর তত্ত্ব নিবে না, তাদেরকে করা হবে একে অপরের দৃষ্টিগোচর ।" ( ৭০:১০-১১ ) হ্যাঁ, তবে এ লোকগুলো নিজেদের পাপের বোঝা বহন করবে এবং যাদেরকে তারা পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরও পাপের বোঝা এদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ঐ পথভ্রষ্ট লোকেরাও বোঝামুক্ত হবে না। তাদের পাপের বোঝা তাদের উপরই থাকবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যেন তারা তাদের বোঝা পূর্ণভাবে বহন করে কিয়ামতের দিন এবং অজ্ঞতা বশতঃ যাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরও বোঝা বহন করে ।" ( ১৬:২৫ )সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “ যে ব্যক্তি লোকদেরকে হিদায়াতের দাওয়াত দিবে, কিয়ামত পর্যন্ত যেসব লোক ঐ হিদায়াতের উপর চলবে তাদের সবারই পুণ্য ঐ একটি লোক লাভ করবে, অথচ তাদের পুণ্য হতে কিছুই কম করা হবে না । অনুরূপভাবে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেবে, যারা ওর উপর আমল করবে সবারই গুনাহ তার উপর পড়বে এবং তাদের গুনাহ হতে কিছুই কম করা হবে না।”আর একটি হাদীসে আছেঃ “ ভূ-পৃষ্ঠে যত খুনাখুনি হবে, সবগুলোর পাপ হযরত আদম ( আঃ )-এর ঐ পুত্রের উপর পতিত হবে, যে অন্যায়ভাবে তার ভাইকে হত্যা করেছিল । কেননা, হত্যার সূচনা তার থেকেই হয়।”মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে সম্পর্কে কিয়ামত দিবসে তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।হযরত আবু উমামা ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সমস্ত রিসালাত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তিনি একথাও বলেছেনঃ তোমরা যুলুম হতে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলবেন- “ আমার ইজ্জত ও মর্যাদার শপথ! আজ একটি যুলুমও ছেড়ে দিবো না ।” অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেনঃ “ অমুকের পুত্র অমুক কোথায়?” সে তখন আসবে এবং পর্বত বরাবর পুণ্য তার সাথে থাকবে । এমনকি হাশরের মাঠে উপস্থিত লোকদের দৃষ্টি তার দিকে উঠবে। সে আল্লাহর সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেনঃ “ এ ব্যক্তি কারো উপর যুলুম করে থাকলে সে যেন আজ প্রতিশোধ নিয়ে নিজের হক আদায় করে নেয় ।” একথা শুনে এদিক-ওদিক হতে লোকেরা এসে তাকে ঘিরে নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা তখন বলবেনঃ “ আমার এই বান্দাদেরকে তাদের হক আদায় করিয়ে দাও ।” ফেরেশতারা বলবেনঃ “ কিভাবে আমরা তাদের হক আদায় করিয়ে দিবো?” আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ “তার পুণ্যগুলো নিয়ে এদেরকে দিয়ে দাও ।” এরূপই করা হবে। শেষ পর্যন্ত তার আর কোন পুণ্য অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু অত্যাচারিত ও হকদার আরও বাকী থেকে যাবে। আল্লাহ তা'আলা তখন বলবেনঃ “ এদেরকেও এদের হক আদায় করিয়ে দাও ।” ফেরেশতারা বলবেনঃ “ এখন তো তার কাছে আর কোন পণ্য বাকী নেই!” আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “তাদের পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দাও ।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতবুদ্ধি হয়ে।( আরবি )-এ আয়াতটি পাঠ করেন। ( এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে মুআয ( রাঃ )! নিশ্চয়ই মুমিনকে তার সমস্ত চেষ্টা-শ্রম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, এমনকি তার চক্ষুদ্বয়ের সুরমা ও তার অঙ্গুলি দ্বারা ঠাসা মাটি সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হবে । দেখো, যেন এরূপ না হয় যে, কিয়ামতের দিন কেউ তোমার পুণ্য নিয়ে নেয়।” ( এ হাদীসটিও ইবনে আবি হাতিমই (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)
সূরা আনকাবূত আয়াত 13 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমাদেরকে প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদেরকে সদুপদেশ দেই। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনসব বিষয় জানি,
- তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়।
- যখন তারা মুসলমানদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলেঃ আমরা মুসলমান হয়েছি। আর যখন পরস্পরের সাথে
- অনন্তর জালেমরা এতে অন্য শব্দ বদলে দিল তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে বলা হয়েছিল। সুতরাং আমি
- যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা। এদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলাম।
- আমি যে শ্রেষ্ট এ ব্যক্তি থেকে, যে নীচ এবং কথা বলতেও সক্ষম নয়।
- যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক
- যাতে তারা অস্বীকার করে যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব, মজা লুটে নাও, সত্বরই জানতে পারবে।
- এবং তারা তার জামায় কৃত্রিম রক্ত লাগিয়ে আনল। বললেনঃ এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের মন
- তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনকাবূত ডাউনলোড করুন:
সূরা Ankabut mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ankabut শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers