কোরান সূরা হুজরাত আয়াত 13 তাফসীর
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ﴾
[ الحجرات: 13]
হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [সূরা হুজরাত: 13]
Surah Al-Hujuraat in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Hujurat ayat 13
ওহে মানবজাতি! নিঃসন্দেহ আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারী থেকে, আর আমরা তোমাদের বানিয়েছি নানান জাতি ও গোত্র যেন তোমরা চিনতে পার। নিশ্চয় আল্লাহ্র কাছে তোমাদের মধ্যে সব-চাইতে সম্মানিত সেইজন যে তোমাদের মধ্যে সব- চাইতে বেশি ধর্মভীরু। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পূর্ণ-ওয়াকিফহাল।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৩. হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ তথা তোমাদের পিতা আদম ও একজন নারী তথা তোমাদের মাতা হাওয়া ( আলাইহিমাস-সালাম ) থেকে সৃষ্টি করেছি। ফলে তোমাদের বংশ এক। তাই বংশ নিয়ে কেউ কারো সাথে যেন অহংকার না করে। অতঃপর তোমাদেরকে বহু জাতি ও বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে। যেন একে অপরকে চিনতে পারো; পরস্পর অহংকারের জন্য নয়। কেননা, বিশেষত্ব কেবল তাকওয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তাই তিনি বলেছেন “অবশ্যই আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সেই বেশী সম্মানী যে যতো বেশী আল্লাহভীরু। অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে অবগত। এমন কি তোমাদের পূর্ণতা কিংবা অপূর্ণতার খবরও তিনি রাখেন। তাঁর নিকট এ সবের কোন কিছুই গোপন থাকে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে,[১] পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার।[২] তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহ-ভীরু।[৩] আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন। [১] অর্থাৎ, আদম ও হাওয়া عليهما السلام থেকে। অর্থাৎ, তোমাদের সকলের মূল একই। তোমরা সকলে একই পিতা-মাতার সন্তান। অতএব কারো কেবল কুলমান ও বংশের ভিত্তিতে অহংকার করার কোন অধিকার নেই। কারণ, সকলের বংশ আদম ( আঃ )-এর সাথে গিয়ে মিলে যায়। [২] شُعُوْبٌ হল شَعْبٌ-এর বহুবচন। জাতি বা বিরাট গোত্র। ( আরবী ভাষায় অপেক্ষাকৃত ছোট বংশ ও গোত্র অর্থে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি পরিভাষা ব্যবহার হয়। যেমন, ) شعب এর পরে আসে قبيلة তারপর عمارة তারপর بطن তারপর فصيلة তারপর عشيرة ( ফাতহুল ক্বাদীর ) উদ্দেশ্য হল, বিভিন্ন জাতি, বংশ ও গোত্রের এই বণ্টন কেবল পরস্পর পরিচিতির জন্য। যাতে তোমরা আপোসের জ্ঞাতি-বন্ধন বজায় রাখতে পার। এর অর্থ এই নয় যে, একে অপরের উপর নিজের আভিজাত্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন কর। যেমন দুর্ভাগ্যবশতঃ ( আজকাল ) বংশ ও আভিজাত্যকেই শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি বানিয়ে নেওয়া হয়। অথচ ইসলাম এসে এটাকে মিটিয়ে দিয়েছে এবং এটাকে জাহেলী যুগের কর্ম তথা মূর্খতা বলে আখ্যায়িত করেছে। [৩] অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট মর্যাদা ও উৎকৃষ্টতার মাপকাঠি এমন বংশ, গোত্র ও আভিজাত্য নয়, যা গ্রহণ করা কোন মানুষের এখতিয়ারেই নেই, বরং মাপকাঠি হল আল্লাহভীরুতা; যা অবলম্বন করা মানুষের ইচ্ছা ও এখতিয়ারভুক্ত। এই আয়াতই হল সেই উলামাদের দলীল যাঁরা বিবাহে বরকনের বংশীয় সমতাকে জরুরী মনে করেন না এবং কেবল দ্বীনদারির ভিত্তিতে বিবাহ সম্পন্ন হওয়াকে পছন্দ করেন। ( ইবনে কাসীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে [ ১ ], আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমারা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার [ ২ ]। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যাক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। [ ১ ] আল্লাহর এ বাণীটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বিভিন্ন বক্তৃতা ও উক্তিতে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমন-মক্কা বিজয়ের সময় কাবার তাওয়াফের পর তিনি যে বক্তৃতা করেছিলেন তাতে বলেছিলেনঃ “ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের দোষ-ত্রুটি ও অহংকার দূর করে দিয়েছেন । হে লোকেরা! সমস্ত মানুষ দু’ ভাগে বিভক্ত। এক, নেককার ও পরহেজগার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদার অধিকারী। দুই, পাপী ও দুরাচার যারা আল্লাহর দৃষ্টিতে নিকৃষ্ট। অন্যথায় সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির সৃষ্টি।” (তিরমিয়ী: ৩১৯৩] অনুরূপভাবে, বিদায় হজ্জের সময় আইয়ামে তাশরীকের মাঝামাঝি সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, “ হে লোকজন! সাবধান তোমাদের আল্লাহ একজন । কোন অনারবের ওপর কোন আরবের ও কোন আরবের ওপর কোন অনারবের কোন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোন শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। আমি কি তোমাদেরকে পৌঁছিয়েছি? তারা বলল, আল্লাহর রাসূল পৌঁছিয়েছেন। তিনি বললেন, তাহলে যারা এখানে উপস্থিত আছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বাণী পৌঁছিয়ে দেয়।” [ মুসনাদে আহমাদ: ৫/৪১১ ] অন্য হাদীসে এসেছে, “ তোমরা সবাই আদমের সন্তান । আর আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। লোকজন তাদের বাপদাদার নাম নিয়ে গর্ব করা থেকে বিরত হোক। তা না হলে আল্লাহর দৃষ্টিতে তারা নাক দিয়ে পায়খানা ঠেলে এমন নগণ্য কীট থেকেও নীচ বলে গণ্য হবে।” [ মুসনাদে বায্যার: ৩৫৮৪ ] আর একটি হাদীসে তিনি বলেছেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তোমাদের বংশ ও আভিজাত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না । তোমাদের মধ্যে যে বেশী আল্লাহভীরু সে-ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী”। [ ইবনে জারীর: ৩১৭৭২ ] আরো একটি হাদীসের ভাষা হচ্ছেঃ “আল্লাহ তা'আলা তোমাদের চেহারা-আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজ-কর্ম দেখেন ৷” [ মুসলিম: ২৫৬৪, ইবনে মাজাহ: ৪১৪৩ ] [ ২ ] কোন কোন মুফাসসিরের মতে, বড় বড় গোত্রকে شعون আর তার চেয়ে ছোট গোত্রকে قباىٔل বলা হয়। অপর কারও মতে, অনারব জাতিসমূহের বংশ পরিচয় যেহেতু সংরক্ষিত নেই সেহেতু তাদেরকে شعون বলা হয় এবং আরব জাতিসমূহের বংশ পরিচয় সংরক্ষিত আছে, তাদেরকে قباىٔل বলা হয়। [ দেখুন-কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, তিনি সমস্ত মানুষকে একটি মাত্র প্রাণ হতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ হযরত আদম ( আঃ ) হতে। হযরত আদম ( আঃ ) হতেই তিনি তাঁর স্ত্রী হযরত হাওয়া ( আঃ )-কে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর এ দু’জন হতে তিনি সমস্ত মানুষ ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ( আরবী ) শব্দটি ( আরবী ) শব্দ হতে ( আরবী ) বা সাধারণ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, আরব ( আরবী )-এর অন্তর্ভুক্ত। তারপর কুরায়েশ, গায়ের কুরায়েশ, এরপর আবার এটা বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হওয়া এসবগুলো ( আরবী )-এর মধ্যে পড়ে। কেউ কেউ বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা অনারব এবং ( আরবী ) দ্বারা আরব দলগুলোকে বুঝানো হয়েছে। যেমন বানী ইসরাঈলকে ( আরবী ) বলা হয়েছে। আমি এসব বিষয় একটি পৃথক ভূমিকায় লিখে দিয়েছি, যেগুলো আমি আবূ উমার ইবনে আবদিল বারর ( রঃ )-এর কিতাবুল ইশবাহ' হতে এবং ‘কিতাবুল ফাসদ ওয়াল উমাম ফী মা'রেফাতে আনসাবিল আরাবে ওয়াল আজামে’ হতে সগ্রহ করেছি। এই পবিত্র আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, হযরত আদম ( আঃ ) যাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার দিকে সম্পর্কিত হওয়ার দিক দিয়ে সারা জাহানের মানুষ একই মর্যাদা বিশিষ্ট। এখন যিনি যা কিছু ফযীলত লাভ করেছেন বা করবেন তা হবে দ্বীনি কাজকর্ম এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্যের ভিত্তিতে। রহস্য এটাই যে, এই আয়াতটিকে গীবত হতে বিরত রাখা এবং একে অপরকে অপদস্থ, অপমানিত এবং তুচ্ছ ও ঘৃণিত জ্ঞান করা হতে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আয়াতের পরে আনয়ন করা হয়েছে যে, সমস্ত মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কের দিক দিয়ে সমান। জাতি, গোত্র ইত্যাদি শুধু পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যে। যেমন বলা হয়ঃ অমুকের পুত্র অমুক, অমুক গোত্রের লোক। আসলে মানুষ হিসেবে সবাই সমান। হযরত সুফিয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন যে, হুমায়ের গোত্র তাদের মিত্রদের দিকে সম্পর্কিত হতো এবং হিজাযী আরব নিজেদেরকে নিজেদের গোত্রসমূহের দিকে সম্পর্কযুক্ত করতো।হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা নসবনামা বা বংশ তালিকার জ্ঞান লাভ কর, যাতে তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতে পার । আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখার কারণে জনগণ তোমাদেরকে মহব্বত করবে এবং তোমাদের ধন-মাল ও জীবন-আয়ুতে বরকত হবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। এই সনদে এ হাদীসটি গারীব)এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ( আল্লাহ তাআলার নিকট বংশ গরিমা মর্যাদা লাভের কোন কারণ নয়, বরং ) আল্লাহ তাআলার নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু।হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি কে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু ( সেই সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি ) ।” সাহাবীগণ ( রাঃ ) বললেনঃ “ আমরা আপনাকে এটা জিজ্ঞেস করিনি ।” তখন তিনি বললেনঃ “ তাহলে সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান ছিলেন হযরত ইউসুফ ( আঃ ) । তিনি নিজে আল্লাহর নবী ছিলেন, আল্লাহর নবীর তিনি পুত্র ছিলেন, তাঁর দাদাও ছিলেন নবী এবং তাঁর দাদার পিতা তো ছিলেন হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ ( আঃ )।” তাঁরা পুনরায় বললেনঃ “ আমরা আপনাকে এটাও জিজ্ঞেস করিনি ।' তিনি বললেনঃ “ তাহলে কি তোমরা আমাকে আরবদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছো?” তাঁরা জবাবে বললেনঃ “হ্যাঁ ।” তিনি তখন বললেনঃ “ অজ্ঞতার যুগে তোমাদের মধ্যে যারা উত্তম ছিল, ইসলামেও তারাই উত্তম হবে যখন তারা দ্বীনের বোধশক্তি লাভ করবে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তোমাদের আকৃতির দিকে দেখেন না এবং তোমাদের ধন-মালের দিকেও দেখেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তরের দিকে ও তোমাদের আমলের দিকে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) ও ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ তুমি মনে রেখো যে, তুমি লাল ও কালোর কারণে কোন মর্যাদা রাখে না । হ্যাঁ, তবে তুমি মর্যাদা লাভ করতে পার আল্লাহভীরুতার মাধ্যমে।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত খারাশ আল আসরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছেনঃ “ মুসলমানরা সবাই পরস্পর ভাই ভাই । কারো উপর কারো কোন ফযীলত নেই, শুধু তাকওয়ার মাধ্যমে ফযীলত রয়েছে।” ( এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হুযাইফা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা সবাই আদম সন্তান, আর আদম ( আঃ )-কে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দ্বারা । ( মানব ) সম্প্রদায় যেন তাদের বাপ-দাদাদের নামের উপর গৌরব প্রকাশ করা হতে বিরত থাকে, নতুবা তারা আল্লাহ তা'আলার নিকট বালুর ঢিবি অথবা আবী পাখি হতেও হালকা হয়ে যাবে।” ( এ হাদীসটি আবু বকর আল বাযার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। তাঁর হাতের ছড়ি দ্বারা তিনি রুকনগুলো চুম্বন করেন। অতঃপর মসজিদে উষ্ট্ৰীটিকে বসাবার মত জায়গা ছিল না বলে জনগণ তাকে হাতে হাতে নামিয়ে নেন এবং উজ্জ্বীটিকে বাতনে সায়েলে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেন। অতঃপর তিনি স্বীয় উষ্ট্রীর উপর সওয়ার হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন যাতে আল্লাহ তা'আলার হামদ ও সানা বর্ণনা করার পর তিনি বলেনঃ “ এখন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের হতে অজ্ঞতার যুগের উপকরণসমূহ এবং বাপ দাদার নামে গর্ব করার প্রথা দূর করে দিয়েছেন । দুই শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। এক শ্রেণীর মানুষ তো নেককার, পরহেযগার এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আর দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ বদকার এবং আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত।” অতঃপর তিনি ( আরবী ) এই আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ আমি আমার এ কথা বলছি এবং আমি আমার জন্যে ও তোমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত উকবা ইবনে আমির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমাদের এই নসবনামা বা বংশ-তালিকা তোমাদের জন্যে কোন ফলদায়ক নয় । তোমরা সবাই সমভাবে হযরত আদম ( আঃ )-এরই সন্তান। তোমাদের কারো উপর কারো কোন মর্যাদা নেই। মর্যাদা শুধু তাকওয়ার কারণে রয়েছে। মানুষের মন্দ হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট যে, সে হবে কর্কশ ভাষী, কৃপণ ও অকথ্যভাবে উচ্চারণকারী।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তোমাদের বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না । তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক আল্লাহভীরু।হযরত দুররাহ বিনতে আবি লাহাব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা মিম্বরের উপর ছিলেন এমন সময় একটি লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম লোক কে?” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “যে সবচেয়ে বেশী অতিথি সেবক, সর্বাপেক্ষা বেশী পরহেযগার, সবচেয়ে বেশী ভাল কাজের আদেশদাতা, সর্বাপেক্ষা অধিক মন্দ কাজ হতে নিষেধকারী এবং সবচেয়ে বেশী আত্মীয়তার সম্পর্ক মিলিতকারী ( সেই সর্বাপেক্ষা উত্তম লোক ) ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহকে ভয় করে এরূপ লোক ছাড়া দুনিয়ার কোন জিনিস এবং কোন লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে কখনো মুগ্ধ করতো না।” ( এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে সবকিছু জানেন এবং তোমাদের সমস্ত কাজ-কর্মের খবর রাখেন ।' হিদায়াত লাভের যে যোগ্য তাকে তিনি হিদায়াত দান করে থাকেন এবং যে এর যোগ্য নয় সে সুপথ প্রাপ্ত হয় না। করুণা ও শাস্তি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। ফযীলত বা মর্যাদা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে চান তাকে বুযুর্গী দান করে থাকেন। সমস্ত বিষয়ের খবর তিনি রাখেন। কিছুই তার জ্ঞান বহির্ভূত নয়। এই আয়াত এবং উপরে বর্ণিত হাদীসগুলোকে দলীল রূপে গ্রহণ করে আলেমগণ বলেন যে, বিবাহে বংশ ও আভিজাত্য শর্ত নয়। দ্বীন ছাড়া অন্য কোন শর্তই ধর্তব্য নয়। কোন কোন আলেমের মতে বংশ ও আভিজাত্যের বিচার বিবেচনা করাও শর্ত। এঁদের অন্য দলীল রয়েছে, যা ইলমে ফিকাহর কিতাবগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। আর আমরাও এগুলোকে কিতাবুল আহকামে বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলারই প্রাপ্য। হযরত আবদুর রহমান ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, বানু হাশেম গোত্রের একটি লোককে তিনি বলতে শুনেনঃ “ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে আমিই সবচেয়ে বেশী সম্পর্কযুক্ত । তখন আর একটি লোকে বলেনঃ “ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে তোমার যে সম্পর্ক রয়েছে তদপেক্ষা বেশী সম্পর্ক তার সাথে আমার রয়েছে ।” ( এটা ইমাম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)
সূরা হুজরাত আয়াত 13 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অপর কিতাব প্রাপ্তরা যে বিভ্রান্ত হয়েছে, তা হয়েছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেই।
- আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম। কারণ আমরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট ছিলাম।
- অতএব, দেখ গোনাহগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।
- মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।
- অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর সঙ্গিগণকে বোঝাই করা নৌকায় রক্ষা করলাম।
- তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি
- এবং আমার মন হতবল হয়ে পড়ে এবং আমার জিহবা অচল হয়ে যায়। সুতরাং হারুনের কাছে
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- যে ব্যক্তি আল্লাহ তাঁর ফেরেশতা ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চিতই আল্লাহ
- তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তাঁকেই গ্রহণ করুন কর্মবিধায়করূপে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হুজরাত ডাউনলোড করুন:
সূরা Hujurat mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Hujurat শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers