কোরান সূরা সাফ্ফ আয়াত 14 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Saff ayat 14 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা সাফ্ফ আয়াত 14 আরবি পাঠে(Saff).
  
   

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا أَنصَارَ اللَّهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّينَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللَّهِ ۖ فَآمَنَت طَّائِفَةٌ مِّن بَنِي إِسْرَائِيلَ وَكَفَرَت طَّائِفَةٌ ۖ فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَىٰ عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ﴾
[ الصف: 14]

মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে-মরিয়ম তার শিষ্যবর্গকে বলেছিল, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী-ইসরাঈলের একদল বিশ্বাস স্থাপন করল এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তি যোগালাম, ফলে তারা বিজয়ী হল। [সূরা সাফ্ফ: 14]

Surah As-Saff in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Saff ayat 14


ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহ্‌র সাহায্যকারী হও, যেমন মরিয়ম-পুত্র ঈসা শিষ্যদের বলেছিলেন -- ''কারা আল্লাহ্‌র তরফে আমার সাহায্যকারী হবে?’’ শিষ্যেরা বলেছিল, ''আমরাই আল্লাহ্‌র সাহায্যকারী।’’ সুতরাং ইসরাইলের বংশধরদের মধ্যের একদল বিশ্বাস করেছিল এবং একদল অবিশ্বাস করেছিল। সেজন্য যারা ঈমান এনেছিল তাদের আমরা সাহায্য করেছিলাম তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে, ফলে পরক্ষণেই তারা উপরহাত হয়েছিল।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৪. হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো এবং তাঁর প্রবর্তিত বিধান অনুযায়ী আমল করে থাকো তোমরা রাসূল আনিত আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। যেমননিভাবে হাওয়ারীরা ঈসা ( আলাইহিস-সালামের ) এর আহŸানে সাড়া দিয়ে তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিলো। যখন তিনি এই বলে ডাক দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর প্রতি আমার সাহায্যকারী কে আছো? তখন তারা ত্বরিত এ বলে উত্তর দিয়েছিলো যে, আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। এতে করে বনী ইসরাইলের এক পক্ষ ঈসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর উপর ঈমান আনলো এবং অপর পক্ষ কুফরী করলো। তাই আমি ঈসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর উপর ঈমান আনয়নকারীদেরকে কাফিরদের উপর সাহায্য করলাম। ফলে তারা ওদের উপর বিজয়ী হলো।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও,[১] যেমন মারয়্যাম তনয় ঈসা তার শিষ্যদেরকে বলেছিল, ‘আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে?’ শিষ্যগণ বলেছিল, ‘আমরাই তো আল্লাহর সাহায্যকারী।’[২] অতঃপর বানী ইস্রাঈলের একদল বিশ্বাস করল এবং একদল অবিশ্বাস করল। [৩] পরে আমি বিশ্বাসীদেরকে তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হল। [৪] [১] সর্বাস্থায়; নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে এবং জান ও মালের মাধ্যমেও। যখনই যে সময়ে এবং যে অবস্থাতেই তোমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল দ্বীনের জন্য ডাক দেবেন, তখনই তোমরা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বলবে, 'লাব্বায়িক' ( আমরা হাজির )। যেভাবে ঈসা ( আঃ )-এর শিষ্যরা তাঁর ডাকে 'লাববায়িক' বলেছিলেন। [২] অর্থাৎ, যে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের নির্দেশ মহান আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন, সেই দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে আমরা হব আপনার সাহায্যকারী। এইভাবে রসূল ( সাঃ ) হজ্জের মৌসুমে বলতেন, " কে আছে এমন যে আমাকে আশ্রয় দিবে, যাতে আমি মানুষের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিতে পারি। কারণ, কুরাইশরা আমাকে রিসালাতের দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছে না। " নবী করীম ( সাঃ )-এর এই ডাকে মদীনার আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা সাড়া দিয়েছিলেন এবং তাঁর হাতে তাঁরা বায়আত করে তাঁকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অনুরূপ তাঁরা তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, যদি আপনি হিজরত করে মদীনায় আসেন, তবে আমরাই আপনার হিফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করছি। সুতরাং যখন তিনি হিজরত করে মদীনায় এলেন, তখন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরাই তাঁর এবং তাঁর সমস্ত সঙ্গী-সাথীর পরিপূর্ণ সাহায্য করেছিলেন। এমন কি আল্লাহ এবং তাঁর রসূল ( সাঃ ) তাঁদের নামই রেখে দিলেন, 'আনসার'। আর এই নামই তাঁদের পরিচয় হয়ে রইল। رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وأَرْضَاهُمْ ( ইবনে কাসীর ) [৩] এরা ছিল সেই ইয়াহুদী, যারা ঈসা ( আঃ )-এর নবুঅতকে কেবল অস্বীকারই করেনি, বরং তাঁর এবং তাঁর মায়ের উপর মিথ্যা অপবাদও দিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, এই বিচ্ছিন্নতা ও দলাদলি তখন সৃষ্টি হয়, যখন ঈসা ( আঃ )-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হল। এক দল বলল, মহান আল্লাহই ঈসা ( আঃ )-এর আকার নিয়ে যমীনে অবতরণ করেছিলেন। এখন তিনি আবার আসমানে চলে গেছেন। এদেরকে 'য়্যা'কূবিয়্যাহ' ফির্কা বলা হয়। 'নাসত্বুরিয়্যাহ' ফির্কাদের বক্তব্য হল, তিনি 'ইবনুল্লাহ' ( আল্লাহর বেটা ) ছিলেন। পিতা পুত্রকে আসমানে ডেকে নিয়েছেন। তৃতীয় ফির্কা বলল, তিনি আল্লাহর বান্দাহ এবং তাঁর রসূল ছিলেন। বলা বাহুল্য, এটাই হল হকপন্থী ফির্কা। [৪] অর্থাৎ, নবী ( সাঃ )-কে প্রেরণ করে আমি এই শেষোক্ত ফির্কাটিকে অন্য ভ্রষ্ট ফির্কার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছি। তাই সঠিক আকীদার অধিকারী এই দলটি নবী ( সাঃ )-এর উপরও ঈমান আনল। আর এইভাবে আমি দলীল-প্রমাণের দিক দিয়েও সমস্ত কাফেরদের উপর এদেরকে জয়যুক্ত করলাম এবং শক্তি ও রাজত্বের দিক দিয়েও। আর এই জয়ের সর্ব শেষ বিকাশ ঘটবে তখন, যখন কিয়ামতের পূর্বকালে ঈসা ( আঃ ) পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। যেমন, এই অবতরণ ও বিজয়ের কথা স্পষ্টরূপে বহু সহীহ হাদীসে বহুধাসূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও, যেমন মারইয়াম-পুত্র ‘ঈসা হাওয়ারীগণকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী হবে?’ হাওয়ারীগণ বলেছিলেন, ‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী []।’ তারপর বনী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফরী করল। তখন আমরা যারা ঈমান এনেছিল, তাদের শত্রুদের মুকাবিলায় তাদেরকে শক্তিশালী করলাম, ফলে তারা বিজয়ী হল []। [] حَوَارِيِّيْنَ শব্দটি حَوَارِي এর বহুবচন। এর অর্থ আন্তরিক বন্ধু। ঈসা আলাইহিস সালাম এর অনুসারীদেরকে ‘হাওয়ারী’ বলা হত। [ ইবন কাসীর ] [] এই আয়াতের তাফসীরে আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, ঈসা আলাইহিস সালাম আসমানে উখিত হওয়ার পর নাসারারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল বলল, তিনি ইলাহ ছিলেন এবং আসমানে চলে গেছেন। দ্বিতীয় দল বলল, তিনি ইলাহ ছিলেন না বরং ইলাহর পুত্র ছিলেন। এখন আল্লাহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং শক্ৰদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তৃতীয় দল বিশুদ্ধ ও সত্যকথা বলল। তারা বলল, “ তিনি ইলাহও ছিলেন না, ইলাহর পুত্রও ছিলেন না; বরং আল্লাহর দাস ও রাসূল ছিলেন । আল্লাহ তা'আলা তাকে শক্ৰদের কবল থেকে হেফাযত ও উচ্চ মর্তবা দান করার জন্যে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।' মূলত: এরাই ছিল সত্যিকার ঈমানদার। প্রত্যেক দলের সাথে কিছু কিছু জনসাধারণও যোগদান করে এবং পারস্পরিক কলহ বাড়তে বাড়তে যুদ্ধের উপক্রম হয়। ঘটনাচক্রে উভয় কাফের দল মুমিনদের মোকাবিলায় প্রবল হয়ে ওঠে। অবশেষে আল্লাহ তা'আলা সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রেরণ করেন। তিনি মুমিন দলকে সমর্থন দেন। এভাবে পরিণামে মুমিন দল যুক্তি প্রমাণের নিরীখে বিজয়ী হয়ে যায়। এই তফসীর অনুযায়ী আয়াতে উল্লেখিত الَّذِيْنَ امَنُوْا বা “ যারা ঈমান এনেছে” বলে ঈসা আলাইহিসসালাম-এর উম্মতের মুমিনগণকেই বোঝানো হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহায্য ও সমর্থনে বিজয়ের গৌরব অর্জন করবে । সে হিসেবে উম্মতে মুহাম্মদী যারা রাসূলের প্রকৃত অনুসারী তারা সর্বদা বিজয়ী থাকবে। [ দেখুন: তাফসীরে তাবারী: ২৮/৬০, দ্বিয়া আল-মাকদেসী: আল-মুখতারাহ: ১০/৩৭৬-২৭৮, নং ৪০২ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সদা-সর্বদা জান-মাল, ইজ্জত-আবরূ, কথা এবং কাজ দ্বারা আল্লাহকে সাহায্য করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর ডাকে সাড়া দেয়, যেমন হাওয়ারীগণ হযরত ঈসা ( আঃ )-এর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহর পথে কে আমাকে সাহায্যকারী হবে? অর্থাৎ আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার কাজে কে আমার সাহায্যকারী হবে? তখন হযরত ঈসা ( আঃ )-এর অনুসারী হাওয়ারীরা বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। অর্থাৎ আল্লাহর এই দ্বীনের কাজে আমরাই আপনার সঙ্গী হিসেবে কাজ করবে, আপনাকে সাহায্য করবে ও আপনার অনুসারী হিসেবে থাকবো। তখন হযরত ঈসা ( আঃ ) তাদেরকে প্রচারক হিসেবে সিরিয়ার শহরগুলোতে পাঠিয়ে দেন। হজ্বের মৌসুমে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-ও বলেছিলেনঃ “ এমন কেউ আছে কি যে আমাকে জায়গা দিতে পারে যাতে আমি আল্লাহর রিসালাতকে জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে পারি? কুরায়েশরা তো আমাকে আমার প্রতিপালকের বাণী মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার কাজে বাধা প্রদান করেছে ।” তখন মদীনার অধিবাসী আউস ও খাযরাজ গোত্রীয় লোকদেরকে মহান আল্লাহ এই সৌভাগ্যের অধিকারী করেন যে, তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। তারা তাঁর কথা মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। তাঁরা এই প্রতিজ্ঞা করেন যে, যদি রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁদের বাসভূমিতে চলে যান তবে কোনক্রমেই তাঁরা তাঁর কোন ক্ষতি সাধন হতে দিবেন না। তারা তার পক্ষ হতে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে তাকে রক্ষা করবেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন তাঁর সঙ্গীগণসহ হিজরত করে তাদের বাসভূমি মদীনা নগরীতে পৌঁছলেন তখন বাস্তবিকই তাঁরা তাঁদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন এবং তাদের কথাকে বাস্তবে রূপদান করলেন। এ কারণেই তারা ‘আনসার এই মহান উপাধিতে ভূষিত হনআল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদেরকে সন্তুষ্ট রাখুন। মহান আল্লাহ বলেনঃ “ অতঃপর বানী ইসরাঈলের একদল ঈমান আনলো এবং একদল কফরী করলো' অর্থাৎ যখন ঈসা ( আঃ ) তাঁর অনুসারী হাওয়ারীদেরকে নিয়ে দ্বীনের তাবলীগ করতে শুরু করলেন তখন বানী ইসরাঈলের কিছু লোক সঠিক পথে এসে গেল, আর কিছু লোক এপথে আসলো না । এমনকি তারা। তাকে এবং তাঁর সতী-সাধ্বী মাতার প্রতি জঘন্যতম অপবাদ রচনা করলো। এই ইয়াহুদীদের উপর চিরতরে আল্লাহর গযব পতিত হলো। আবার যারা তাঁকে মেনে নিলো তাদের মধ্যে একটি দল মানার ব্যাপারে সীমালংঘন করলো এবং তাকে তার মর্যাদার চেয়েও বাড়িয়ে দিলো। এদের মধ্যেও আবার কয়েকটি দল হয়ে গেল। একটি দল বলতে লাগলো যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) আল্লাহর পুত্র ( নাউযুবিল্লাহ )। অন্য একটি দল বললো যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) তিনজনের একজন অর্থাৎ পিতা, পুত্র ও রূহুল কুদস। আর একটি দল তো তাকে আল্লাহ বলেই স্বীকার করে নিলো। এসবের আলোচনা সূরায়ে নিসায় বিস্তারিতভাবে রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ পরে আমি মুমিনদেরকে শক্তিশালী করলাম তাদের শত্রুদের মুকাবিলায়। অর্থাৎ আমি তাদেরকে তাদের শত্রু খৃষ্টানদের উপর বিজয়ী করলাম। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ যখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ হযরত ঈসা ( আঃ )-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার ইচ্ছা করলেন তখন হযরত ঈসা ( আঃ ) গোসল করে পাক সাফ হয়ে স্বীয় সহচরদের নিকট আসলেন। ঐ সময় তার মাথা হতে পানির ফোটা ঝরে পড়ছিল। তাঁর সহচরগণ ছিলেন বারোজন। তাঁরা একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাদের মধ্যে এসেই বললেনঃ “ তোমাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে আমার উপর ঈমান এনেছে বটে কিন্তু পরে কুফরী করবে । একবার নয়, বরং বারো বার।” অতঃপর তিনি বললেনঃ “ তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে এই ব্যাপারে প্রস্তুত হতে পারে যে, তাকে আমার চেহারার সাথে সাদৃশ্যযুক্ত করে দেয়া হবে এবং আমার পরিবর্তে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে, অতঃপর সে জান্নাতে আমার সাথে আমার মর্যাদায় থাকবে?” তাঁর একথার জবাবে তাঁদের মধ্যে বয়সে যিনি সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি বললেনঃ “আমি এ জন্যে প্রস্তুত আছি । হযরত ঈসা ( আঃ ) তাকে বললেনঃ “ তুমি বসে পড় ।” অতঃপর পুনরায় তিনি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। এবারও ঐ যুবকটি দাড়িয়ে বললেনঃ “ আমিই এজন্যে প্রস্তুত । হযরত ঈসা ( আঃ ) এবারও তাঁকে বসে যেতে বললেন। তৃতীয়বার হযরত ঈসা ( আঃ ) ঐ কথাই বললেন এবং তৃতীয়বারও ঐ যুবকটিই দাঁড়িয়ে সম্মতি জানালেন। এবার তিনি বললেনঃ “ আচ্ছা, বেশ!” তৎক্ষণাৎ তার আকৃতি সম্পূর্ণরূপে হযরত ঈসা ( আঃ )-এর মত হয়ে গেল এবং হযরত ঈসা ( আঃ )-কে ঐ ঘরের একটি ছিদ্র দিয়ে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হলো । হযরত ঈসা ( আঃ )-কে অনুসন্ধানকারী ইয়াহূদীরা দৌড়িয়ে আসলো এবং ঐ যুবকটিকে ঈসা ( আঃ ) মনে করে গ্রেফতার করলো ও হত্যা করে শূলে চড়িয়ে দিলো। হযরত ঈসা ( আঃ )-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঐ অবশিষ্ট এগারোজন লোকের মধ্য হতে কেউ কেউ বারো বার কুফরী করলো, অথচ ইতিপূর্বে তারা ঈমানদার ছিল।অতঃপর হযরত ঈসা ( আঃ )-কে মান্যকারী বানী ইসরাঈলের দলটি তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে গেল। একটি দল বললোঃ “ স্বয়ং আল্লাহ হযরত ( হযরত ঈসা আঃ-এর আকৃতিতে ) যতদিন ইচ্ছা করেছিলেন আমাদের মধ্যে ছিলেন । অতঃপর তিনি আকাশে উঠে গেলেন।" এই দলটিকে ইয়াকুবিয়্যাহ বলা হয়। দ্বিতীয় দলটি বললোঃ আল্লাহর পুত্র ( নাউযুবিল্লাহ ) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী আমাদের মাঝে ছিলেন, অতঃপর তিনি তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিলেন ।” এই দলটিকে বলা হয় নাসতুরিয়্যাহ। তৃতীয় দলটি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাদের আকীদাহ বা বিশ্বাস এই যে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাদের মধ্যে ছিলেন, অতঃপর তিনি ( আল্লাহ ) তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। এই দলটি হলো মুসলিম দল।অতঃপর ঐ কাফির দল দুটির শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তারা ঐ মুসলিম দলটিকে মেরে পিটে হত্যা ও ধ্বংস করতে শুরু করে। অবশেষে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-কে প্রেরণ করেন। বানী ইসরাঈলের ঐ মুসলিম দলটি তাঁর উপরও ঈমান আনয়ন করে। সুতরাং এই ঈমানদার দলটিকে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করেন এবং তাদেরকে তাদের শত্রুদের উপর জয়যুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিজয়ী হওয়া এবং দ্বীন ইসলামের অন্যান্য দ্বীনগুলোকে পরাজিত করাই হলো তাদের বিজয়ী হওয়া ও তাদের শত্রুদের উপর জয়লাভ করা।" ( এটা তাফসীরে ইবনে জারীরে ও সুনানে নাসাঈতে বর্ণিত হয়েছে )সুতরাং এই উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সদাসর্বদা বিজয়ীই থাকবে, শেষ পর্যন্ত কিয়ামত এসে যাবে এবং এই উম্মতের শেষের লোকগুলো হযরত ঈসা ( আঃ )-এর সঙ্গী হয়ে মাসীহ দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন, যেমন সহীহ হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

সূরা সাফ্ফ আয়াত 14 সূরা

ياأيها الذين آمنوا كونوا أنصار الله كما قال عيسى ابن مريم للحواريين من أنصاري إلى الله قال الحواريون نحن أنصار الله فآمنت طائفة من بني إسرائيل وكفرت طائفة فأيدنا الذين آمنوا على عدوهم فأصبحوا ظاهرين

سورة: الصف - آية: ( 14 )  - جزء: ( 28 )  -  صفحة: ( 552 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এটি তাদের কলুষের সাথে আরো কলুষ বৃদ্ধি করেছে এবং তারা
  2. ফেরাউনের সম্প্রদায়ের নিকট; তারা কি ভয় করে না?
  3. আর বানিয়ে নিল মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকারাদির দ্বারা একটি বাছুর তা থেকে বেরুচ্ছিল
  4. সেখানে তারা একে অপরকে পানপাত্র দেবে; যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপকর্মও নেই।
  5. যার বাস্তবতায় কোন সংশয় নেই।
  6. তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,
  7. আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস,
  8. যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন
  9. তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত
  10. আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি?

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা সাফ্ফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Saff mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Saff শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত সাফ্ফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Monday, November 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers