কোরান সূরা নিসা আয়াত 154 তাফসীর
﴿وَرَفَعْنَا فَوْقَهُمُ الطُّورَ بِمِيثَاقِهِمْ وَقُلْنَا لَهُمُ ادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُلْنَا لَهُمْ لَا تَعْدُوا فِي السَّبْتِ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا﴾
[ النساء: 154]
আর তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেবার উদ্দেশ্যে আমি তাদের উপর তূর পর্বতকে তুলে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, অবনত মস্তকে দরজায় ঢোক। আর বলেছিলাম, শনিবার দিন সীমালংঘন করো না। এভাবে তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। [সূরা নিসা: 154]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 154
কিন্তু তাদের অঙ্গীকার তাদের ভেঙ্গে দেবার ফলে, আর আল্লাহ্র নির্দেশের প্রতি তাদের অবিশ্বাসের জন্যে, আর নবীগণকে না- হক্ভাবে তাদের হত্যা করতে যাবার জন্যে, আর তাদের বলার জন্য -- ''আমাদের হৃদয় হ’ল গেলাফ।’’ না, আল্লাহ্ তাদের উপরে সীল মেরে দিয়েছেন তাদের অবিশ্বাসের জন্যেচ তাই তারা ঈমান আনে না অল্প ছাড়া, --
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৫৪. আমি তাদের কাছ থেকে শক্ত অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য তাদের মাথার উপর পাহাড় উঁচিয়ে ধরি। যাতে তারা ভয়ে তার উপর আমল করে। আর আমি তা উঁচিয়ে ধরার পর তাদেরকে বললাম: তোমরা বাইতুল-মাক্বদিসের দরজা দিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে সাজদারত অবস্থায় তাতে প্রবেশ করো। তখন তারা পিঠ বাঁকিয়ে তাতে প্রবেশ করে। আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা শনিবার মাছ শিকারের হঠকারিতা দেখিও না। তখন তারা হঠকারিতা দেখিয়ে মাছ শিকার করে। অথচ আমি ইতোপূর্বে এ ব্যাপারে তাদের থেকে শক্ত ও কঠিন অঙ্গীকার নেই। কিন্তু তারা সে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আর তাদের অঙ্গীকার নেবার সময় তূর পর্বতকে তাদের উপর উচ্চ করে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘নতশিরে ( নগরের ) দ্বার প্রবেশ কর’ এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘শনিবারে ( বিশ্রামের দিন মাছ ধরে ) সীমালংঘন করো না’ এবং তাদের নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য ‘তূর’ পর্বতকে আমরা তাদের উপর উত্তোলন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘নত শিরে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর [ ১ ]।’ আর আমরা তাদেরকে আরও বলেছিলাম, ‘শনিবারে সীমালংঘন করো না’; এবং আমরা তাদের কাছ থেকৈ দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। [ ১ ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা ( প্রস্তাবিত শহরে ) সিজদারত অবস্থায় প্রবেশ কর এবং বল, ( হে আল্লাহ! ) আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তারা তা পরিবর্তন ( সিজদারত অবস্থায় প্রবেশ না করে ) নিতম্বের উপর ভর করে এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন এর পরিবর্তে যবের দানা চাই বলতে বলতে প্রবেশ করল। [ বুখারীঃ ৩৪০৩ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৫৩-১৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেছিল- হযরত মূসা ( আঃ ) যেমন তাওরাত একই সাথে লিখিত অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে এনেছিলেন, দ্রুপ আপনিও পূর্ণভাবে লিখিত কোন আসমানী কিতাব আনয়ন করুন। এও বর্ণিত আছে যে, তারা বলেছিল-আপনি আল্লাহ তা'আলার নিকট হতে আমাদের নামে এমন পত্র আনয়ন করুন যাতে আপনাকে নবীরূপে মেনে নেয়ার নির্দেশ থাকে। এরূপ প্রশ্ন তারা বিদ্রুপ, অবাধ্যতা এবং কুফরীর উদ্দেশ্যেই করেছিল। যেমন মক্কাবাসীও তাকে অনুরূপ এক প্রশ্ন করেছিল যা সূরা-ই-সুবহানে উল্লিখিত আছে। তারা বলেছিল-“ যে পর্যন্ত আরব ভূমির উপর আপনি নদী প্রবাহিত করে তাকে সবুজ শ্যামল প্রান্তরে পরিণত না করবেন সে পর্যন্ত আমরা আপনার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবো না । সুতরাং আল্লাহ স্বীয় নবী ( সঃ )-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন-তাদের এ অবাধ্যতা এবং বাজে প্রশ্নের কারণে আপনি মোটেই দুঃখিত হবেন না। তাদের এটা পুরাতন অভ্যাস। তারা হযরত মূসা ( আঃ )-কে এর চেয়েও জঘন্যতর প্রশ্ন করেছিল। তারা তাকে বলেছিল-আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে প্রদর্শন কর। এ অহংকার, অবাধ্যতা এবং বাজে প্রশ্নের প্রতিফলও তাদেরকে ভোগ করতে হয়েছে। অর্থাৎ আকাশের বিদ্যুৎ তাদের উপর পতিত হয়েছিল। যেমন সূরা-ই-বাকারায় বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তথায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ এবং যখন তোমরা বলেছিলে-হে মূসা, আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে দর্শন না করা পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বাস করবো না । তখন বিদ্যুৎ তোমাদেরকে আক্রমণ করেছিল ও তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে। তৎপর তোমাদের মৃত্যুর পর আমি তোমাদেরকে সঞ্জীবিত করেছিলাম-যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” ( ২:৫৫-৫৬ )অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-‘বড় বড় নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ করার পরেও তারা গো বৎসের পূজো আরম্ভ করে দেয়। মিসরে তাদের শত্রু ফিরআউনের হযরত মূসা ( আঃ )-এর মোকাবিলায় ডুবে মরা, তার সমস্ত সৈন্যের দুর্ভাগ্যের মৃত্যুবরণ করা, তাদের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সমুদ্র অতিক্রম করে যাওয়া, এ সবগুলোই তাদের চোখের সামনে সংঘটিত হয়েছে। তথাপি সেখান হতে কিছু দূর গিয়েই তারা মূর্তি পূজকদেরকে মূর্তিপূজো করতে দেখে স্বীয় নবী ( আঃ )-কে বলে-আমাদের জন্যও এরূপ একটি মা’রূদ বানিয়ে দাও।' এর পূর্ণ বিবরণ সূরা-ই-আরাফ এবং সূরা-ই-ত্বাহার মধ্যেও রয়েছে।অতঃপর হযরত মূসা ( আঃ ) আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেন এবং তাদের তাওবা কবূল হওয়ার পন্থা এই বলে দেয়া হয় যে, যারা গো-বৎসের পূজো করেনি তারা পূজোকারীদেরকে হত্যা করবে। যখন হত্যাকার্য আরম্ভ হয়ে যায় তখন আল্লাহ পাক তাদের তাওবা কবুল করলেন এবং মৃতদেরকেও জীবিত করে দেন। তাই আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেন-ওটাকেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি এবং এ মহা পাপকেও আমি মাফ করেছি। আর হযরত মূসা ( আঃ )-কে প্রকাশ্য প্রভাব প্রদান করেছি।যখন তারা তাওরাতের নির্দেশাবলী মান্য করতে অস্বীকার করে এবং হযরত মূসা ( আঃ )-এর আনুগত্য স্বীকারে অসম্মত হয় তখন আল্লাহ তা'আলা তাদের মাথার উপর তুর পাহাড়কে সমুচ্চ করেন এবং তাদেরকে বলেন-“ তোমরা এখন আমার আহকাম মানবে কি-না বল? নতুবা এ পর্বতকে আমি তোমাদের উপর নিক্ষেপ করবো । তখন তারা সবাই সিজদায় পড়ে গিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে এবং নির্দেশাবলী মেনে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। তাদের অন্তরে এত ভয় হয়েছিল যে, সিজদার মধ্যেও তারা আড় চোখে উপরের দিকে দেখে যে, না জানি পর্বত তাদের উপর পড়ে যায় এবং তারা মৃত্যু মুখে পতিত হয়ে যায়। অতঃপর পর্বত সরিয়ে দেয়া হয়।এরপর তাদের অন্য অবাধ্যতার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা কথা ও কাজ দু'টোই পরিবর্তন করেছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল-“ তোমরা সিজদা করতে করতে বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজায় প্রবেশ কর এবং ( আরবী ) বল ।' অর্থাৎ তোমরা বল হে আল্লাহ! আপনি আমাদের পাপ মার্জনা করুন। আমরা আপনার পথে জিহাদ করা হতে বিরত রয়েছি, যার শাস্তি স্বরূপ আমরা ‘তিহ’ প্রান্তরে হতবুদ্ধি হয়ে চল্লিশ বছর পর্যন্ত ঘুরে বেরিয়েছি। কিন্তু এখানেও তাদের হঠকারিতা প্রকাশ পেয়েছে। তারা হাঁটুর ভরে চলতে চলতে বায়তুল মুকাদ্দাসের দরজায় পৌছে এবং ( আরবী ) বলে। অর্থাৎ আমাদেরকে চুলের মধ্যে গম দান। করুন। তাদের আরও দুষ্টামি এই যে, শনিবারের মর্যাদা রক্ষার জন্যে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওর বিরুদ্ধাচরণেও তারা প্রস্তুত হয়ে যায় এবং কৌশল করে পাপকার্যে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যেমন সূরা-ই-আ'রাফের ( আরবী ) ( ৭:১৬৩ ) -এ আয়াতের তাফসীরে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।একটি হাদীসেও রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদীদের নিকট বিশেষ করে শনিবারের মর্যাদা রক্ষার উপর অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। এ পূর্ণ হাদীসটি সূরা-ই-সুবহানের ( ১৭:১০১ )-এ আয়াতের তাফসীরে ইনশাআল্লাহ আসবে।
সূরা নিসা আয়াত 154 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, সে বলবেঃ নাও, তোমরাও আমলনামা পড়ে দেখ।
- এবং সমুন্নত ছাদের,
- হাঁ, তোমার কাছে আমার নির্দেশ এসেছিল; অতঃপর তুমি তাকে মিথ্যা বলেছিলে, অহংকার করেছিলে এবং কাফেরদের
- তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে না। তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও
- অতএব, তোমরা কিরূপে আত্নরক্ষা করবে যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন বালককে করে দিব বৃদ্ধ?
- এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।
- নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে-
- তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সব
- তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।
- এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers