কোরান সূরা সাজ্দা আয়াত 17 তাফসীর
﴿فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
[ السجدة: 17]
কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। [সূরা সাজ্দা: 17]
Surah As-Sajdah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Sajdah ayat 17
সুতরাং কোনো সত্ত্বা জানে না চোখজুড়ানো কী তাদের জন্য লুকোনো রয়েছে, -- একটি পুরস্কার যা তারা করে যাচ্ছিল তার জন্য।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৭. কোন মানুষ সে সম্পর্কে জানে না আল্লাহ তার দুনিয়ার জীবনে কৃত নেক আমলের প্রতিদান স্বরূপ চক্ষু শীতলকারী কী তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। এটি এমন মহা প্রতিদান যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ অনুধাবন করতে পারে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ[১] নয়ন-প্রীতিকর কি ( পুরস্কার ) লুকিয়ে রাখা হয়েছে।[২] [১] এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহর রহমতের অধিকারী হতে হলে নেক আমল অপরিহার্য। [২] نفسٌ শব্দটি 'নাকিরাহ' যাতে ব্যাপকতার অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ঐ সকল নিয়ামত যা আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত মু'মিনদের জন্য লুক্কায়িত রেখেছেন, যা দেখে তাঁদের চোখ জুড়িয়ে যাবে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। এর ব্যাখ্যা নবী ( সাঃ ) হাদীসে কুদসীতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, " আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য ঐ সকল বস্তু প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের কল্পনায়ও তা আসেনি। " ( সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা সিজদাহ )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ [ ১ ]! [ ১ ] হাদীসে কুদসীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “ আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস তৈরী করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না ।” [ বুখারী: ৪৭৭৯; মুসলিম: ১৮৯, ২৪২৪ ] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহকে বললেন, জান্নাতে কার অবস্থানগত মর্যাদা সবচেয়ে সামান্য হবে? তিনি বললেন, সে এক ব্যক্তি, তাকে সমস্ত জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পরে জান্নাতের নিকট নিয়ে আসা হবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে রব! সবাই তাদের স্থান নিয়ে নিয়েছে। তারা তাদের যা নেবার তা নিয়েছে। তখন তাকে বলা হবে, তুমি কি সন্তুষ্ট হবে, যদি তোমাকে দুনিয়ার বাদশাদের রাজত্বের মত রাজত্ব দেয়া হয়? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তা-ই রইল, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ, আরও অনুরূপ। পঞ্চম বারে আল্লাহ বলবেন, তুমি কি সস্তুষ্ট হয়েছ? সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। তখন তিনি বলবেন, এটা তোমার জন্য, তাছাড়া অনুরূপ দশগুণ। আর তোমার জন্য থাকবে তাতে যা তোমার মন চায়, তোমার চোখ শান্তি করে, সে বলবে, হে রব! আমি সন্তুষ্ট। সে বলবে, হে রব! ( এই যদি আমার অবস্থা হয় ) তবে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারীর কি অবস্থা? তিনি বলবেন, তাদের জন্য আমি নিজ হাতে তাদের সম্মানের বীজ বপন করেছি, আর তাতে আমার মোহর মেরে দিয়েছি। সুতরাং কোন চোখে দেখেনি, কোন কান শুনেনি, আর কোন মানুষের মনে তা উদিত হয়নি। তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন [ মুসলিম: ১৮৯ ] অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ যে কেউ জান্নাতে যাবে নেয়ামত প্রাপ্ত হবে, সে কোনদিন নিরাশ হবে না, তার কাপড় পুরনো হবে না, আর তার যৌবন নিঃশেষ হবে না ।” [ মুসলিম: ২৮৩৬ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৫-১৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সত্যিকারের ঈমানদারদের লক্ষণ এই যে, তারা আন্তরিকতার সাথে কান লাগিয়ে আমার কথা শ্রবণ করে থাকে। আর ঐ। অনুযায়ী তারা আমল করে। মুখে তারা এগুলো স্বীকার করে ও সত্য বলে মেনে নেয়। আর অন্তরেও তারা এগুলোকে সত্য বলেই জানে। তারা সিজদায় পড়ে তাদের প্রতিপালকের তসবীহ পাঠ করে ও প্রশংসা কীর্তন করে। সত্যের অনুসরণে তারা মোটেই পিছ পা হয় না। তারা হঠকারিতা করে না। এ বিদআতগুলো কাফিররা করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ যারা আমার উপাসনায় অহংকার করে, সত্বরই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে ।” ( ৪০:৬০ )এই খাঁটি ঈমানদারদের একটি লক্ষণ এটাও যে, রাত্রে তারা বিছানা ছেড়ে দিয়ে উঠে পড়ে এবং তাহাজ্জুদের নামায আদায় করে থাকে। কেউ কেউ মাগরিব ও এশার নামাযের মধ্যবর্তী নামাযকে বুঝিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে এশার নামাযের জন্যে অপেক্ষা করা। আবার কারো কারো মত এই যে, এর দ্বারা এশা ও ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করাকে বুঝানো হয়েছে। এই মুমিনরা আল্লাহর আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়া ও তার নিয়ামত লাভ করার জন্যে তাঁর নিকট প্রার্থনা করে থাকে। সাথে সাথে তারা দান খায়রাতও করে থাকে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী তারা আল্লাহর পথে খরচ করে। তারা এমন পুণ্যের কাজও করে যার সম্পর্ক তাদের নিজেদের সাথে। আবার এমন পুণ্যের কাজগুলোও করে যেগুলোর সম্পর্ক থাকে অন্যদের সাথে। এসব পুণ্যের কাজে তিনি সর্বাপেক্ষা অগ্রগামী, যার মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। অর্থাৎ আদম-সন্তানদের নেতা ও দোজাহানের গৌরব হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )। এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ( রাঃ ) তাঁর নিম্নের কবিতার মধ্যে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) রয়েছেন যিনি সকাল হওয়া মাত্রই আল্লাহর পবিত্র কিতাব পাঠ করে থাকেন । তিনি আমাদেরকে অন্ধত্বের পর পথ প্রদর্শন করেছেন, আমাদের অন্তর এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখে যে, তিনি যা বলেছেন তা সংঘটিত হবেই। রাত্রে যখন মুশরিকরা গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন থাকে তখন তার পার্শ্বদেশ শয্যা হতে পৃথক হয়ে যায় ( অর্থাৎ তিনি শয্যা ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়েন )।”হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা দুই ব্যক্তির উপর খুবই খুশী হন । এক হলো ঐ ব্যক্তি যে শান্তি ও আরামের নিদ্রায় বিভোর থাকে, কিন্তু হঠাৎ তার আল্লাহর নিয়ামত ও শাস্তির কথা স্মরণ হয়ে যায় এবং তখনই সে বিছানা ত্যাগ করে উঠে পড়ে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে নামায শুরু করে দেয়। দ্বিতীয় হলো ঐ ব্যক্তি যে জিহাদে লিপ্ত রয়েছে, কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে অনুভব করে যে, মুসলমানরা পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তখন সে এ চিন্তা করে যে, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে গেলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এবং সামনে অগ্রসর হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। সুতরাং সে সম্মুখে অগ্রস হওয়াই পছন্দ করলো এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্তই থাকলো। শেষ পর্যন্ত সে স্বীয় গর্দান আল্লাহর পথে লুটিয়ে দিলো। আল্লাহ তাআলা গর্বভরে ফেরেশতাদেরকে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে বলেন এবং তার প্রশংসা করেন। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত মুআয ইবনে জাবাল ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সফরে নবী ( সঃ )-এর সঙ্গে ছিলাম। সকালের দিকে আমি তার খুব নিকটবর্তী হয়ে চলছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর নবী ( সঃ )! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে ও জাহান্নাম হতে দূরে রাখবে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ তুমি খুব বড় প্রশ্ন করেছে । তবে আল্লাহ যার জন্যে তা সহজ করে দেন তার জন্যে তা সহজ হয়ে যায়। তাহলে শুনো, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমযানের রোযা রাখবে ও বায়তুল্লাহর হজ্ব করবে।” তারপর তিনি বলেনঃ “ আমি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহের কথা কি বলে দিবো না? তাহলো: রোযা ঢাল স্বরূপ, দান-খয়রাত পাপ ও অপরাধ মুছে ফেলে এবং মধ্য রাত্রে মানুষের নামায ।” অতঃপর তিনি ( আরবি )-এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং ( আরবি ) পর্যন্ত পৌঁছে যান। এরপর তিনি বলেনঃ “ আমি কি তোমাকে এই বিষয়ের ( আমরে দ্বীনের ) মাথা, স্তম্ভ এবং চূড়া ও উচ্চতার কথা বলবো না? জেনে রেখো যে, এই আমরের ( দ্বীনের ) মাথা ইসলাম, এর স্তম্ভ নামায এবং এর চূড়া ও উচ্চতা হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ ।” তারপর তিনি বলেনঃ “ আমি কি তোমাকে এসব কাজের নেতার খবর দিবো না?” অতঃপর তিনি স্বীয় জিহ্বা ধরে বললেনঃ “এটাকে সংযত রাখবে ।” আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা যে কথা বলছি একারণেও কি আমাদেরকে পাকাড়ও করা হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ ওরে নির্বোধ মুআয ( রাঃ )! তোমার কি এটুকুও জানা নেই যে, মানুষকে মুখের ভরে ( অথবা নাকের ভরে ) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে শুধু তার জিহ্বার ধারের কারণে ।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )এ হাদীসই কয়েকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। একটি সনদে এও আছে যে, ( আরবি )-এ আয়াতটি পাঠ করে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছিলেনঃ “ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বান্দার রাত্রের নামায পড়া ।” অন্য রিওয়াইয়াতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর এ উক্তিও বর্ণিত আছে যে, মানুষের অর্ধরাত্রে নামাযে দাঁড়ানোকে বুঝানো হয়েছে। তারপর তার উপরোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করাও বর্ণিত আছে।হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তাআলা প্রথম ও শেষের সমস্ত লোককে একত্রিত করবেন । তখন একজন ঘোষণাকারী ( ফেরেশতা ) উচ্চ স্বরে ঘোষণা করবেন যার ঘোষণা সমস্ত সৃষ্টজীব শুনতে পাবে। তিনি ঘোষণা করবেনঃ “ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত কে তা আজ সবাই জানতে পারবে ।” আবার তিনি ঘোষণা করবেনঃ “ যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা হতে পৃথক থাকতো ( অর্থাৎ যারা তাহাজ্জুদ পড়তে ) তারা যেন দাঁড়িয়ে যায় । তখন তারা দাড়িয়ে যাবে। কিন্তু তাদের সংখ্যা হবে খুবই কম। ( এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আসলাম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত বিলাল ( রাঃ ) বলেনঃ ‘যখন ( আরবি )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন আমরা মজলিসে বসেছিলাম। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীদের ( রাঃ ) কেউ কেউ মাগরেবের পর এশা পর্যন্ত নামাযের মধ্যে ছিলেন, এমন সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ( এটা বাযযার (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের এই একটি মাত্র সনদ)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ কেউই জানে না তাদের জন্যে নয়নপ্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ। যেহেতু তারা গোপনে ইবাদত করতো সেহেতু আমিও গোপনে তাদের জন্যে তাদের নয়নপ্রীতিকর নিয়ামতরাজি মওজুদ করে রেখেছি যা কেউ না চোখে দেখেছে, না কানে শুনেছে, কল্পনা করেছে। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্যে এমন রহমত ও নিয়ামত প্রস্তুত রেখেছি যা কেউ চোখে দেখেনি, কানে শুনেনি এবং অন্তরে কল্পনাও করেনি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) বলেন, কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাঠ করতে পারঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ কেউই জানে না তাদের জন্যে নয়নপ্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ ।”এই রিওয়াইয়াতে ( আরবি )-এর স্থলে ( আরবি ) পড়াও বর্ণিত আছে।আর একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাকে যে নিয়ামত দেয়া হবে তা কখনো শেষ হবে না । তার কাপড় পুরাতন হবে না, তার যৌবনে ভাটা পড়বে না। তার জন্যে জান্নাতে এমন নিয়ামত রয়েছে যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ণ শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে কল্পনাও জাগেনি।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) হযরত সাহল ইবনে সা'দ আস সাইদী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম, তিনি জান্নাতের গুণাবলী বর্ণনা করেন। হাদীসের শেষ ভাগে তিনি বলেনঃ “ তাতে এমন নিয়ামত রয়েছে যা চক্ষু দেখেনি, কর্ণ শুনেনি এবং মানুষের অন্তরে কল্পনাও জাগেনি ।” অতঃপর তিনি ( আরবি ) পর্যন্ত আয়াতগুলো পাঠ করেন।” ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্যে এমন নিয়ামত প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং মানুষের অন্তর কল্পনাও করতে পারেনি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত মুগীরা ইবনে শুবা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ হযরত মূসা ( আঃ ) তার মহিমান্বিত প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতীদের মর্যাদা কি?” উত্তরে মহান আল্লাহ বলেনঃ “সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতী হলো ঐ ব্যক্তি যে সমস্ত জান্নাতীর জান্নাতে চলে যাওয়ার পরে আসবে । তাকে বলা হবেঃ “ জান্নাতে প্রবেশ কর ।” সে বলবেঃ “ হে আল্লাহ! কোথায় যাবো? সবাই তো নিজ নিজ স্থান দখল করে নিয়েছে এবং নিজ নিজ জিনিস সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে?” তাকে বলা হবেঃ “তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, তোমাকে এতোটা দেয়া হবে যতোটা দুনিয়ার কোন বাদশাহর ছিল?” সে উত্তরে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! হ্যাঁ, আমি এতেই সন্তুষ্ট হবো ।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “ যাও, তোমাকে ততটাই দেয়া হলো এবং আরো ততোটা, আরো ততোটা, আরো ততোটা ও আরো ততোটা ।” সে তখন বলবেঃ “ হে আমার প্রতিপালক! যথেষ্ট হয়েছে । আমি এতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।” আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “ যাও, আমি তোমাকে এগুলো সবই দিলাম । এবং আরো দশগুণ দিলাম। তোমার জন্যে আরো রয়েছে যা তোমার মন চাইবে এবং তোমার চক্ষু ঠাণ্ডা হবে।” সে বলবেঃ “ হে আমার প্রতিপালক! আমার তো আশা পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমি খুশী হয়েছি ।” হযরত মূসা ( আঃ ) তখন বললেনঃ “ হে আল্লাহ! তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জান্নাতীদের অবস্থা কি?” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এরা ঐ সব লোক যাদের কারামত আমি স্বহস্তে বপন করেছি এবং ওর উপর আমার মোহর লাগিয়েছি । সুতরাং তা কেউ না দেখতে পেয়েছে, না শুনতে পেয়েছে, না কেউ অন্তরে ধারণা করতে পেরেছে। এর স্বরূপ মহামহিমান্বিত আল্লাহর কিতাবের ( আরবি ) আয়াতটি।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত আমির ইবনে আবদিল ওয়াহেদ ( রঃ ) বলেন যে, তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছেঃ একজন জান্নাতী স্বীয় হুরের ভালবাসা ও প্রেমালাপে সত্তর বছর পর্যন্ত মশগুল থাকবে। অন্য কোন দিকে সে লক্ষ্যই করবে না। তারপর যখন সে অন্য দিকে লক্ষ্য করবে তখন দেখবে যে, প্রথমটির চেয়ে অধিকতর সুন্দরী ও নূরানী চেহারার হুর পাশেই বসে আছে। এ হুরটি তাকে তার প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখে বলবেঃ “ এবার আমার বাসনা পূর্ণ হবে ।” লোকটি তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ “ তুমি কে?” সে উত্তরে বলবেঃ “আমি অতিরিক্তদের মধ্যে একজন ।” তখন সে সম্পূর্ণরূপে তারই প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। পুনরায় তার সাথে সত্তর বছরকাল প্রেমালাপে ও আমোদ আহ্লাদে সে কাটিয়ে দেবে। এরপর অন্য দিকে যখন তার দৃষ্টি ফিরবে তখন দেখবে যে, এর চেয়েও বেশী সুন্দরী হুর পাশেই অবস্থান করছে। এ হুরটি বলবেঃ “ এখন তো সময় হয়েছে, এবার তো আমার পালা ।” জান্নাতী লোকটি তাকে প্রশ্ন করবেঃ “ তুমি কে?” হুরটি উত্তর দেবেঃ “আমি তাদেরই একজন যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “কেউই জানে না তাদের জন্যে নয়নপ্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ । ( এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ) বলেন যে, ফেরেশতারা দুনিয়ার দিনের পরিমাপে প্রতিদিন তিনবার করে জান্নাতীদের কাছে আসবেন জান্নাতে আদন হতে আল্লাহ প্রদত্ত উপঢৌকন নিয়ে যা তাদের জান্নাতে থাকবে না। এ আয়াতে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঐ ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেনঃ “ আল্লাহ তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট ।” আবুল ইয়ামানী আল হাওযানী হতে অথবা অন্য কেউ হতে বর্ণিত আছে যে, জান্নাতের একশ’টি শ্রেণী বা স্তর রয়েছে। প্রথমটি চাদির তৈরী। ওর যমীনও চাদির এবং বাসভবনগুলোও চাদির। ওর মাটি হলো মৃগনাভি। দ্বিতীয়টি সোনার তৈরী, যমীনও সোনার, ঘরবাড়ীও সোনার, পানপাত্রও সোনার এবং মাটি হলো মৃগনাভি। তৃতীয়টি মণি-মুক্তার তৈরী, যমীনও মণি-মুক্তার, বাড়ী-ঘরও মণি-মুক্তার, পানপাত্রগুলোও মণি-মুক্তার এবং মাটি হলো মৃগনাভি। বাকী সাতানব্বইটি তো হলো এমনই যেগুলো না কোন চক্ষু দেখেছে, না কোন কর্ণ শুনেছে এবং না কোন অন্তরে কল্পনা জেগেছে। অতঃপর তিনি ( আরবি )-এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। ( এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) হযরত রূহুল আমীন ( হ্যরত জিবরাঈল আঃ ) হতে বর্ণনা করেছেনঃ “ মানুষের পাপ ও পুণ্য আনয়ন করা হবে । একটি অপরটি হতে কম করা হবে। অতঃপর যদি একটি পুণ্যও বেঁচে যায় তবে আল্লাহ তা'আলা ওটাকে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং জান্নাতের প্রশস্ততা দান করবেন।” বর্ণনাকারী ইয়াযদারদকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ পুণ্য কোথায় গেল?” উত্তরে তিনি নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “এরা ওরাই যাদের ভাল কাজগুলো আমি কবুল করে নিয়েছি এবং পাপগুলোকে ক্ষমা করে দিয়েছি ।" ( ৪৬:১৬ ) বর্ণনাকারী বলেনঃ “ তাহলে ( আরবি )-এ আয়াতের অর্থ কি?” জবাবে তিনি বলেনঃ “বান্দা যখন পুণ্যের কাজ গোপনে করে তখন আল্লাহ তা'আলাও কিয়ামতের দিন তার শান্তির জন্যে নয়নপ্রীতিকর যা গোপন করে রেখেছিলেন তা তাকে প্রদান করবেন । ( এটাও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)
সূরা সাজ্দা আয়াত 17 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে বাগানে এক বিপদ এসে পতিত হলো। যখন তারা নিদ্রিত ছিল।
- হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের উপর থেকে শাস্তি প্রত্যাহার করুন, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করছি।
- তাদেরকে তো শ্রবণের জায়গা থেকে দূরে রাখা রয়েছে।
- অতঃপর যখন বিলকীস এসে গেল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে
- তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে
- হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা
- আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা
- আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল।
- আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।
- তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা সাজ্দা ডাউনলোড করুন:
সূরা Sajdah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Sajdah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers