কোরান সূরা ক্বামার আয়াত 17 তাফসীর
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ﴾
[ القمر: 17]
আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? [সূরা ক্বামার: 17]
Surah Al-Qamar in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Qamar ayat 17
আর আমরা তো অবশ্যই কুরআনকে উপদেশগ্রহণের জন্য সহজবোধ্য করে দিয়েছি, কিন্তু কেউ কি আছে যে উপদেশপ্রাপ্তদের মধ্যেকার?
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৭. আমি কুরআনকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করেছি। কেউ কি আছে তাতে নিহিত শিক্ষা ও উপদেশসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে?!
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয় আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি।[১] অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? [১] অর্থাৎ, এর অর্থ ও তাৎপর্য উপলব্ধি করা, এ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা এবং তা মুখস্থ করা আমি সহজ করে দিয়েছি। অতএব, এটা বাস্তব যে, কুরআন কারীম অলৌকিকতা ও ভাষাশৈলীর দিক দিয়ে অতি উচ্চস্তরের কিতাব হওয়া সত্ত্বেও কোন আরবের মানুষ তার প্রতি একটু মনোযোগ ও গুরুত্ব দিলে ব্যাকরণ, অভিধান ও সাহিত্যের কোন বই-পুস্তক না পড়েই তা অনায়াসে বুঝে নেয়। অনুরূপ এটি পৃথিবীর এমন অনন্য গ্রন্থ যার প্রতিটি শব্দ ( অর্থ না জেনেও ) হুবহু মুখস্থ করে নেওয়া যায়। এ ছাড়া কোন ক্ষুদ্র পুস্তকও এইভাবে মুখস্থ করা ও রাখা অতি কঠিন হয়। মানুষ যদি তার অন্তর ও বিবেকের দুয়ার উন্মুক্ত রেখে কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের দৃষ্টিতে পড়ে, নসীহতের কানে শোনে এবং উপলব্ধিকারী অন্তর দিয়ে এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, তবে দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের দরজাসমূহ তার জন্য খুলে যায় এবং কুরআন তার অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে কুফরী ও পাপাচরণের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার করে দেয়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর অবশ্যই আমারা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য [ ১ ], এতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? [ ১ ] ذكر এর অর্থ দ্বিবিধ ( এক ) মুখস্থ বা স্মরণ করা এবং ( দুই ) উপদেশ ও শিক্ষা অর্জন করা। এখানে উভয় অর্থ বোঝানো যেতে পারে। আল্লাহ তা'আলা কুরআনকে মুখস্থ করার জন্যে সহজ করে দিয়েছেন। ইতিপূর্বে অন্য কোন ঐশীগ্রন্থ এরূপ ছিল না। তাওরাত, ইঞ্জীল ও যাবুর মানুষের মুখস্থ ছিল না। [ কুরতুবী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৯-১৭ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! তোমার এই উম্মতের পূর্বে হযরত নূহ ( আঃ )-এর উম্মতও তাদের নবী আমার বান্দা হযরত নূহ ( আঃ )-কে অবিশ্বাস করেছিল, পাগল বলেছিল এবং শাসন গর্জন ও ধমক দিয়ে বলেছিলঃ “ হে নূহ ( আঃ )! যদি তুমি তোমার এ কাজ হতে বিরত না হও তবে অবশ্যই আমরা তোমাকে পাথর দ্বারা হত্যা করবে । আমার বান্দা ও রাসূল হযরত নূহ ( আঃ ) তখন আমাকে ডাক দিয়ে বললোঃ “ হে আমার প্রতিপালক! আমি তো অসহায় । আমি কোনক্রমেই আর নিজেকে বাঁচাতে পারছি না এবং আপনার দ্বীনেরও হিফাযত করতে পারছি না। সুতরাং আপনি আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকে বিজয় দান করুন। তাঁর এ প্রার্থনা আল্লাহ তা'আলা কবুল করলেন এবং ঐ কাফির কওমের উপর প্রসিদ্ধ তুফান পাঠালেন। আকাশ হতে মুষল ধারের বৃষ্টির দরযা খুলে দিলেন এবং যমীন হতে উথলিয়ে ওঠা পানির প্রস্রবণের মুখ খুলে দিলেন। এমন কি যা পানির জায়গা ছিল না, যেমন উনান ইত্যাদি হতে পানি উঠতে লাগলো। চতুর্দিক পানিতে ভরে গেল। আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হলো না এবং যমীন হতে পানি উঠাও বন্ধ হলো না। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এটা চলতেই থাকলো। আকাশের মেঘ হতেই বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে থাকে। কিন্তু ঐ সময় আকাশ হতে পানির দরযা খুলে দেয়া হয়েছিল এবং আল্লাহর শাস্তি বৃষ্টির আকারে বর্ষিত হচ্ছিল। না এর পূর্বে কখনো এতো বেশী পানি বর্ষিত হয়েছিল, না এর পরে কখনো এরূপ পানি বর্ষিত হয়েছে। এদিকে আকাশের এই অবস্থা, আর ওদিকে যমীনের উপর এ আদেশ হয়েছিল যে, ওটা যেন পানি উগলিয়ে দেয়। সুতরাং চতুর্দিকে শুধু পানি আর পানি।হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন যে, আকাশের মুখ খুলে দেয়া হয় এবং ওগুলো দিয়ে অনবরত পানি বর্ষিত হতে থাকে।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে ( নূহ আঃ-কে ) আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও কীলক নির্মিত এক নৌযানে। ( আরবী ) শব্দের অর্থ হলো নৌকার বাম দিকের অংশ এবং প্রাথমিক অংশ যার উপর ঢেউ এসে লাগে। ওর মূল জোড়কেও বলা হয়েছে।আল্লাহ পাক বলেনঃ “ ওটা আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলতো, এটা পুরস্কার তার জন্যে যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল । হযরত নূহ ( আঃ )-কে সাহায্য করার মাধ্যমে এটা ছিল কাফিরদের হতে প্রতিশোধ গ্রহণ। ইরশাদ হচ্ছেঃ আমি এটাকে রেখে দিয়েছি এক নিদর্শন রূপে। অর্থাৎ ঐ নৌকাকে শিক্ষণীয় বিষয় রূপে বাকী রেখেছি। হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এই উম্মতের প্রথম যুগের লোকেরাও ঐ নৌকাটি দেখেছে। কিন্তু এর প্রকাশ্য অর্থ হলোঃ ঐ নৌকার নমুনায় অন্যান্য নৌকাগুলো আমি নিদর্শন হিসেবে দুনিয়ায় কায়েম রেখেছি। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ তাদের এক নিদর্শন এই যে, আমি তাদের বংশধরদেরকে বোঝাই নৌযানে আরোহণ করিয়েছিলাম। আর তাদের জন্যে অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে।” ( ৩৬:৪১-৪২ ) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ যখন জলোচ্ছাস হয়েছিল তখন আমি তোমাদেরকে আরোহণ করিয়েছিলাম নৌযানে । আমি এটা করেছিলাম তোমাদের শিক্ষার জন্যে এবং এই জন্যে যে, শ্রুতিধর কর্ণ এটা সংরক্ষণ করে।" ( ৬৯:১১-১২ ) এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেনঃ সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে ( আরবী ) পড়িয়েছেন । ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতেও এই শব্দের কিরআত এরূপই বর্ণিত আছে। হযরত আসওয়াদ ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ এই শব্দটি না হবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি হযরত আবদুল্লাহ ( রাঃ )-কে পড়তে শুনেছি … দ্বারা এবং তিনি বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দ্বারাই পড়তে শুনেছেন ।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ কি কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী ।' অর্থাৎ যারা আমার সাথে কুফরী করেছিল, আমার রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিল এবং আমার উপদেশ হতে শিক্ষা গ্রহণ করেনি তাদের প্রতি আমার শাস্তি কতই না কঠোর ছিল! কিভাবেই না আমি আমার রাসূলদের শত্রুদের হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি। আর কেমন করে আমি সত্য ধর্মের শত্রুদের ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি।মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আমি কুরআন কারীমের শব্দ ও অর্থ প্রত্যেক এমন ব্যক্তির জন্যে সহজ করে দিয়েছি যে এর দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করতে চায় । যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃঅর্থাৎ “ আমি তোমার প্রতি ( নবী সঃ-এর প্রতি ) বরকতময় কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তারা এর আয়াতগুলো সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং যেন জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে ।” ( ৩৮:২৯ ) আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি কুরআনকে উপদেশের জন্যে সহজ করেছি । আরো বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তুমি ওটা দ্বারা মুত্তাকীদের সুসংবাদ দিতে পার এবং বিতণ্ডা প্রবণ সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার ।" ( ১৯:৯৭ )হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর কিরআত ও তিলাওয়াত আল্লাহ তা'আলা সহজ করে দিয়েছেন।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যদি আল্লাহ তা'আলা একে সহজসাধ্য না করতেন তবে মাখলুকের ক্ষমতা ছিল না যে, তারা আল্লাহর কালাম পড়তে পারে। আমি বলি যে, ঐ সহজগুলোর মধ্যে একটি সহজ ওটাই যা পূর্বে হাদীসে গত হয়েছে। তা এই যে, এই কুরআন সাতটি কিরআতের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। এই হাদীসের সমস্ত পন্থা ও শব্দ আমরা ইতিপূর্বে জমা করে দিয়েছি। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। মোটকথা, আল্লাহ তাআলা কুরআনকে খুবই সহজ করে দিয়েছেন। সুতরাং কুরআন হতে উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? অর্থাৎ কেউ এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে তাকে সাহায্য করা হবে।
সূরা ক্বামার আয়াত 17 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
- যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা
- তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম।
- এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।
- আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত
- আমি তাদের প্রতি একটিমাত্র নিনাদ প্রেরণ করেছিলাম। এতেই তারা হয়ে গেল শুষ্ক শাখাপল্লব নির্মিত দলিত
- আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ
- আল্লাহ প্রদত্ত উদ্ধৃত্ত তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও, আর আমি তো তোমাদের উপর
- ফল এবং ঘাস
- বলুনঃ তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ক্বামার ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Qamar mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Qamar শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers