কোরান সূরা আলে-ইমরান আয়াত 186 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Al Imran ayat 186 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আলে-ইমরান আয়াত 186 আরবি পাঠে(Al Imran).
  
   

﴿۞ لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ﴾
[ آل عمران: 186]

অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার। [সূরা আলে-ইমরান: 186]

Surah Al Imran in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Imran ayat 186


নিশ্চয়ই তোমাদের পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধনসম্পত্তি ও তোমাদের লোকজনের মাধ্যমে, আর নিঃসন্দেহ তোমরা শুনতে পাবে তোমাদের আগে যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের থেকে এবং যারা শরিক করে তাদের থেকে অনেক গালিগালাজ। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো ও ভয়ভক্তি করো তবে নিশ্চয় সেটি হবে সৎসাহসের কাজ।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৮৬. হে মু’মিনরা! তোমাদেরকে সম্পদের ব্যাপারে অবশ্যই পরীক্ষা করা হবে। তোমরা তাতে বাধ্যতামূলক অধিকারগুলো আদায় করছো কী না তা দেখা হবে। এমনকি তাতে রকমারি বিপদাপদও নাযিল হবে। তেমনিভাবে তোমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবেও পরীক্ষা করা হবে। তোমরা শরীয়তের বিধি-বিধানগুলো মেনে চলছো কী না তা দেখা হবে। এমনকি তোমাদের উপর রকমারি বিপদাপদও নাযিল হবে। আর তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব এবং মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথাও শুনতে পাবে। তারা তোমাদের ব্যাপারে এবং তোমাদের ধর্মের ব্যাপারেও অনেক আঘাতমূলক কথা বলবে। যদি তোমরা রকমারি বিপদাপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে ধৈর্য ধারণ করতে পারো এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করতে পারো তাহলে তা এমন একটি কাজ হবে যাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতার প্রয়োজন।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


( হে বিশ্বাসিগণ! ) নিশ্চয় তোমাদের ধনৈশ্বর্য ও জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করা হবে।[১] আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের এবং অংশীবাদী ( মুশরিক )দের কাছ থেকে অবশ্যই তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনতে পাবে। সুতরাং যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং সংযমী হও, তাহলে তা হবে দৃঢ়সংকল্পের কাজ। [২] [১] ঈমানদারদেরকে তাদের ঈমান অনুযায়ী পরীক্ষা করার কথা আলোচিত হয়েছে। সূরা বাক্বারার ২:১৫৫ নং আয়াতেও এই ধরনের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এই আয়াতের তফসীরে একটি ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে। তা হল, মুনাফিকদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তখনও ( বাহ্যিক ) ইসলাম প্রকাশ করেনি এবং বদরের যুদ্ধও তখন পর্যন্ত সংঘটিত হয়নি। এমন এক দিনে নবী করীম ( সাঃ ) ( রোগাক্রান্ত ) সা'দ ইবনে উবাদা ( রাঃ )-কে দেখার জন্য বানী-হারেস ইবনে খাযরাজে গেলেন। পথে এক মজলিসে কিছু মুশরিক, ইয়াহুদী এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই প্রভৃতি বসেছিল। রসূল ( সাঃ )-এর সওয়ারীর পায়ের উড়ন্ত ধুলো তাদের গায়ে লাগলে তারা ক্ষুব্ধ ভাব প্রকাশ করল। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদেরকে ইসলাম কবুল করার দাওয়াতও দিলেন। ফলে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বেআদবীমূলক বাক্যও ব্যবহার করল। সেখানে কিছু মুসলিমও ছিলেন। তাঁরা তাদের বিপরীত রসূল ( সাঃ )-এর প্রশংসা করলেন। তাদের উভয়ের মধ্যে ঝগড়া বেধে যাওয়ার উপক্রম হলে তিনি তাদেরকে থামালেন। অতঃপর তিনি সা'দ ( রাঃ )-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে এ ঘটনা শুনান। শুনে সা'দ ( রাঃ ) বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের এই ধরনের কথা বলার কারণ হল, আপনার মদীনা আগমনের পূর্বে এখানের বাসিন্দারা তার মাথায় মুকুট পরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আপনার আগমনে তার এই সুন্দর স্বপ্ন অবাস্তব রয়ে গেল। এতে সে চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার এই ধরনের কথাগুলো উক্ত কারণঘটিত বিদ্বেষ ও ঔদ্ধত্যেরই বহিঃপ্রকাশ। কাজেই আপনি ক্ষমাশীলতা প্রয়োগ করুন। ( সহীহ বুখারী থেকে সংগৃহীত সার-সংক্ষেপ ) [২] 'তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল' বলতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের বুঝানো হয়েছে। এরা বিভিন্নভাবে নবী করীম ( সাঃ ), ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিন্দা গেয়ে বেড়াত। মুশরিকদের অবস্থাও অনুরূপ ছিল। এ ছাড়াও মদীনা আসার পর মুনাফিকগণ বিশেষতঃ তাদের সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রসূল ( সাঃ )-এর ব্যাপারে তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে বেড়াত। রসূল ( সাঃ )-এর মদীনা আসার পূর্বে মদীনাবাসীরা তাদের সর্দারের মাথায় সর্দারীর মুকুট পরানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিয়েছিল। রসূল ( সাঃ )-এর আগমনের কারণে তার এই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এতে সে চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল। তাই প্রতিশোধ গ্রহণ করার নিমিত্তেও এই লোকটি রসূল ( সাঃ )-এর বিরুদ্ধে গালিগালাজ করার কোন সুযোগ পেলে, তা হাত ছাড়া করে না। ( যেমন, পূর্বের টীকায় বুখারীর হাওয়ালায় এই ঘটনার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ) এই রকম পরিস্থিতিতে মুসলিমদেরকে ক্ষমা, ধৈর্য এবং আল্লাহভীরুতার পথ অবলম্বন করার কথা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সত্যের প্রতি আহবায়কদের বহু কষ্ট ও কঠিন সমস্যার শিকার হওয়ার বিষয়টা সত্য পথের নানা পর্যায়ে স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এর চিকিৎসাঃ ধৈর্য ধারণ, আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন বৈ আর কিছুই নয়। ( ইবনে কাসীর )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তোমাদেরকে অবশ্যই তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবনে পরীক্ষা করা হবে। তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং তাক্‌ওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয়ই তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ []। [] এ আয়াতে মুসলিমদেরকে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, দ্বীনের জন্য জান-মালের কুরবানী দিতে হবে এবং কাফের, মুশরিক ও আহলে কিতাবদের কটুক্তি এবং কষ্ট দানের কারণে ঘাবড়ে যাওয়া উচিত নয়। এ সমস্তই হলো তাদের জন্য পরীক্ষা। এতে ধৈর্য ধারণ করা এবং নিজেদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তাকওয়ার পরাকাষ্ঠা সাধনে নিয়োজিত থাকাই হল তাদের কর্তব্য। উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধায় চড়ে আমাকে পেছনে বসিয়ে সা’দ ইবনে উবাদাকে দেখতে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের বৈঠকখানার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনো সে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানালেন। এমতাবস্থায় সে তার নাকে কাপড় দিয়ে বলল, আমাদেরকে আমাদের বৈঠকখানায় কষ্ট দিও না। যে তোমার কাছে যায় তাকে তোমার কথা শোনাও। এতে মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহুদীদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কষ্টে তাদের ঝগড়া থামিয়ে সা’দ ইবনে উবাদার কাছে গিয়ে ঘটনাটা জানালেন। সা’দ ইবনে উবাদা বললেন, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ্‌র শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনাকে সত্যদ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। কিন্তু এ লোকগুলো আপনার আসার পূর্বেই ঐ লোকটাকে নেতা বানাতে চেয়েছিল। আপনার আগমনের পর সে কিছু না পাওয়াতে তার মানসিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে সে এসব কথা বলছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীরা কাফেরদেরকে এমনিতেও ক্ষমা করে দিতেন। এভাবে তাদের কষ্ট সহ্য করে তিনি বদর যুদ্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। [ বুখারীঃ ৪৫৬৬ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, কা’ব ইবনে আশরাফ ইয়াহুদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদনামী করে বেড়াত এবং কবিতার মাধ্যমে কাফেরদেরকে রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী করে তুলত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আসলেন সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক পেলেন। তাদের সাথে তিনি একটি সন্ধিতে আসার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মুশরিক ও ইয়াহুদীরা তাঁকে এবং সাহাবাদেরকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিতে আরম্ভ করল। তখন এ আয়াত নাযিল করে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ধৈর্য ধারনের নির্দেশ দিলেন। [ আবু দাউদঃ ৩০০০ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


১৮৫-১৮৬ নং আয়াতের তাফসীর: সাধারণভাবে সমস্ত সৃষ্টজীবকে জানানো হচ্ছে যে, প্রত্যেক জীবই মরণশীল। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ এ পৃথিবীর যত কিছু রয়েছে সবই ধ্বংসশীল। শুধু তোমার প্রভুর মুখমণ্ডলই চির বিদ্যমান থাকবে যিনি মহা সম্মানিত ও মহান দাতা। ( ৫৫:২৬-২৭ ) সুতরাং একমাত্র সেই এক আল্লাহই চিরস্থায়ী জীবনের অধিকারী। তিনি কখনও ধ্বংস হবেন না। দানব ও মানব প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ। গ্রহণকারী। অনুরূপভাবে ফেরেশতামণ্ডলী ও আরশ বহনকারীগণও মরণশীল। শুধুমাত্র এক অদ্বিতীয় আল্লাহই চিরকাল বাকী থাকবেন। তাঁর কোন লয় ও ক্ষয় নেই। প্রথমেও তিনিই এবং শেষেও তিনিই থাকবেন। যখন সবাই মরে যাবে, দীর্ঘ মেয়াদী সময় শেষ হয়ে যাবে, হযরত আদম ( আঃ )-এর পৃষ্ঠ হতে যত সন্তান হবার ছিল হয়ে যাবে, অতঃপর সকলেই মৃত্যুর ঘাটে অবতরণ করবে এবং সমস্ত সৃষ্টজীব ধ্বংস হয়ে যাবে, সে সময় আল্লাহ তা'আলার হুকুমে কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন তিনি সকলকেই তাদের ছোট বড় সমস্ত কার্যের প্রতিদান প্রদান করবেন। কারও উপর অণুপরিমাণও অত্যাচার করা হবে না। এ কথাই পরবর্তী বাক্যে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আলী ( রাঃ ) বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ইতেকালের পর আমাদের নিকট এরূপ অনুভূত হয় যে, যেন কেউ আসছেন। পায়ের শব্দ শুনা যাচ্ছে, কিন্তু কোন লোককে দেখা যায় না। তিনি এসে বলেনঃ “ হে নবী পরিবারের লোকগণ! আপনাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর করুণা ও আশীর্বাদ বর্ষিত হোক! প্রত্যেক জীবই মৃত্যুর আশ্বাদ গ্রহণকারী । কিয়ামতের পর আপনাদের সকলকেই সমস্ত কার্যের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। বিপদে যারা ধৈর্য ধারণ করেছে তাদের পুরস্কার মহান আল্লাহর নিকট রয়েছে। আল্লাহ তাআলার উপরই ভরসা করুন এবং তারই নিকট মঙ্গলের আশা রাখুন। জেনে রাখুন যে, প্রকৃতপক্ষে বিপদগ্রস্ত ঐ ব্যক্তি যে পুণ্য লাভ হতে বঞ্চিত হয়ে যায়। আপনাদের উপর আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে শান্তি, করুণা ও বরকত নাযিল হোক।' ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ) হযরত আলী ( রাঃ )-এর ধারণা মতে তিনি ছিলেন হযরত খিযির ( আঃ )। সারকথা এই যে, সফলকাম হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করতঃ জান্নাতে প্রবেশ লাভ করে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘জান্নাতের মধ্যে একটি চাবুক বরাবর জায়গা পেয়ে যাওয়া দুনিয়া ও তন্মধ্যকার সমস্ত জিনিস হতে উত্তম। তোমাদের ইচ্ছে পাঠ কর- ( আরবী ) অর্থাৎ যে কেউ অগ্নি হতে বিমুক্ত হয়েছ ও জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে, ফলতঃ সেই সফলকাম হয়েছে। এ পরবর্তী বেশীটুকু ছাড়া এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। আর বেশীটুকু সহ মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ও ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যেও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তি পাওয়ার ও জান্নাতে প্রবেশ করার যার ইচ্ছে রয়েছে সে যেন মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর উপর ও কিয়ামতের উপর বিশ্বাস রাখে এবং জনগণের সাথে সেই ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজের জন্যে পছন্দ করে। এ হাদীসটি। ( আরবী ) ( ৩:১০২ ) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদে এবং আকী ইবনে জাররাহের তাফসীরেও এই হাদীসটি রয়েছে। এরপর দুনিয়ার নিকৃষ্টতা ও তুচ্ছতার কথা বর্ণিত হচ্ছে যে, দুনিয়া অত্যন্ত নিকৃষ্ট, ধ্বংসশীল ও ক্ষণস্থায়ী জিনিস। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ তোমরা ইহলৌকিক জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছ অথচ পারলৌকিক জীবন উত্তম ও স্থায়ী।' ( ৭৮:১৬-১৭ ) অন্য জায়গায় রয়েছে-“ তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো শুধুমাত্র ইহলৌকিক জীবনের উপকারের বস্তু ও সৌন্দর্য; উত্তম ও স্থায়ী তো ওটাই যা আল্লাহর নিকট রয়েছে । হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! কোন লোক সমুদ্রে অঙ্গুলী ডুবালে তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগে যে পানি উঠে সেই পানির সঙ্গে সমুদ্রের পানির যে তুলনা পরকালের তুলনায় দুনিয়া ঠিক তদ্রুপ' । হযরত কাতাদাহ ( রঃ ) বলেন, দুনিয়া প্রতারণার একটা বেড়া ছাড়া আর কি? যাকে ছেড়ে তোমাদেরকে বিদায় হতে হবে। যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তাঁর শপথ! এ তো অতিসত্বরই তোমাদের হতে পৃথক হয়ে যাবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং এখানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় প্রদান করতঃ আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লেগে পড় এবং সাধ্যনুসারে পুণ্য অর্জন কর। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা ছাড়া কোন কাজ সাধিত হয় না। অতঃপর মানুষের পরীক্ষার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। যেমন এক জায়গায় রয়েছে- ( আরবী ) অর্থাৎ ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা ইত্যাদি দিয়ে পরীক্ষা করবো।' ( ২:১৫৫ ) ভাবার্থ এই যে, মুমিনের পরীক্ষা অবশ্যই হয়ে থাকে। কখনো জীবনের উপর, কখনো অর্থের উপর, কখনো পরিবারের উপর এবং কখনো অন্য কিছুর উপর, মুত্তাকীর তারতম্য অনুযায়ী পরীক্ষা হয়ে থাকে। যে খুব বেশী ধর্মভীরু তার পরীক্ষা বেশী কঠিন হয়। আর যার ঈমানে দুর্বলতা রয়েছে তার পরীক্ষা হালকা হয়। এরপর আল্লাহ তাআলা সাহাবা-ই-কিরাম ( রাঃ )-কে সংবাদ দিচ্ছেন-বদরের যুদ্ধের পূর্বে গ্রন্থধারী ও অংশীবাদীদের নিকট হতে তোমাদেরকে বহু দুঃখজনক কথা শুনতে হবে। তারপর তাদেরকে সান্ত্বনা। দিয়ে বলেছেন- সে সময় তোমাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে হবে ও সংযমী হতে হবে এবং মুত্তাকী হওয়ার উপর এটা খুব কঠিন কাজই বটে'। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ ( রাঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এবং তাঁর সাহাবীবর্গ মুশরিক ও আহলে কিতাবের অপরাধ প্রায়ই ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের কষ্টদায়ক কথার উপর ধৈর্যধারণ করতেন ও আল্লাহ তা'আলার এ নির্দেশের উপর আমল করতেন। অবশেষে জিহাদের আয়াত অবতীর্ণ হয়। সহীহ বুখারী শরীফে এ আয়াতের তাফসীরে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় গাধার উপর আরোহণ করতঃ হযরত উসামা ( রাঃ )-কে পিছনে বসিয়ে নিয়ে রোগাক্রান্ত হযরত সা'দ ইবনে উবাদা ( রাঃ )-কে দেখবার জন্যে বানূ হারিস খাযরাজের গোত্রের মধ্যে গমন করেন। এটা বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। পথে একটি জনসমাবেশ দেখা যায়, যেখানে মুসলমান, ইয়াহূদী ও মুশরিক সবাই উপস্থিত ছিল। ওর মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালও ছিল। তখন পর্যন্ত সে প্রকাশ্যভাবে কুফরীর রঙ্গেই রঞ্জিত ছিল। মুসলমানদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাও ( রাঃ ) বিদ্যমান ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সোয়ারী হতে ধূলোবালি উড়তে থাকলে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই নাকে কাপড় দিয়ে বলেঃ ‘ধূলা উড়াবেন না।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নিকটে পৌঁছেই গিয়েছিলেন। সোয়ারী হতে নেমে তিনি সালাম করেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। তাদেরকে তিনি কুরআন কারীমের কয়েকটি আয়াতও শুনিয়ে দেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলে, “ শুনুন জনাব, আপনার এ পন্থা আমাদের নিকট মোটেই পছন্দনীয় নয় । আপনার কথা সত্যই বা হলো, কিন্তু তাই বলে এটা উচিত নয় যে, আপনি আপনার সমাবেশে এসে আমাদেরকে কষ্ট দেবেন। আপনার বাড়ীতে যে যাবে তাকেই আপনি শুনাবেন।' এ কথা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ( রাঃ ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! অবশ্যই আপনি আমাদের সভায় আগমন করবেন। আপনার কথা শুনবার তো আমাদের চাহিদা আছেই। তাদের মধ্যে তখন হট্টগোলের সৃষ্টি হয়ে যায়। একে অপরকে ভাল-মন্দ বলতে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবার উপক্রম হয়ে যায়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বুঝানোর ফলে অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং সবাই নীরব হয়ে যায়। তিনি স্বীয় সোয়ারীর উপর আরোহণ করে হযরত সা'দ ( রাঃ )-এর নিকট গমন করেন এবং তথায় গিয়ে হযরত সা'দ ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ হে আবু হাব্বার! আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তো আজকে এরূপ এরূপ করেছে ।' হযরত সা'দ ( রাঃ ) বলেন, এরূপ হতে দিন! ক্ষমা করুন! যে আল্লাহ আপনার প্রতি পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তার শপথ! আপনার সঙ্গে তো তার চরম শত্রুতা রয়েছে এবং এটা হওয়া স্বাভাবিক। কেননা, এখানকার মানুষ তাকে তাদের নেতা নির্বাচন করতে চেয়েছিল এবং তার জন্যে নেতৃত্বের পাগড়ী তৈরীরও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আল্লাহ তা'আলা আপনাকে স্বীয় নবী করে পাঠিয়ে দেন। জনগণ আপনাকে নবী বলে স্বীকার করে নেয়। সুতরাং তার নেতৃত্ব চলে যায়। ফলে সে চরম দুঃখিত হয়। এ জন্যেই সে ক্রোধে ও হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে। যা সে বলেছে বলেছেই। আপনি তার কথার উপর গুরুত্ব দেবেন না।' অতএব রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে ক্ষমা করে দেন এবং এটা তার অভ্যাসই ছিল। তার সাহাবীগণও ইয়াহূদী ও মুশরিকদের অপরাধ ক্ষমা করে দিতেন এবং উপরোক্ত আয়াতে প্রদত্ত নির্দেশের উপর আমল করতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিহাদের অনুমতি দেয়া হয় এবং প্রথম। বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যে যুদ্ধে কাফিরদের নেতৃবৃন্দ নিহত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইসলামের এই অগ্রগতি দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও তার সঙ্গীরা ভীত হয়ে পড়ে এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হাতে বায়আত গ্রহণ ও নিজেদেরকে বাহ্যতঃ মুসলমানরূপে পরিচিত করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না। সুতরাং এটা স্মরণ রাখা উচিত যে, প্রত্যেক পন্থী যারা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে থাকে তাদের উপর অবশ্যই বিপদ-আপদ এসে থাকে। কাজেই আল্লাহর পথে এসব বিপদ-আপদ সহ্য করা, তার উপর পূর্ণ ভরসা রাখা, তারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা মুমিনদের একান্ত কর্তব্য।

সূরা আলে-ইমরান আয়াত 186 সূরা

لتبلون في أموالكم وأنفسكم ولتسمعن من الذين أوتوا الكتاب من قبلكم ومن الذين أشركوا أذى كثيرا وإن تصبروا وتتقوا فإن ذلك من عزم الأمور

سورة: آل عمران - آية: ( 186 )  - جزء: ( 4 )  -  صفحة: ( 74 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে এবং যা পশ্চাতে আছে এবং সবকিছু আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত
  2. আল্লাহর পথ। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল যা কিছু আছে, সব তাঁরই। শুনে রাখ, আল্লাহ তা’আলার কাছেই
  3. সে আবার দৃষ্টিপাত করেছে,
  4. এমনিভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশের বুকে প্রতিষ্ঠা দান করেছি। সে তথায় যেখানে ইচ্ছা স্থান করে
  5. তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিল, অতঃপর কত কঠোর হয়েছিল আমার অস্বীকৃতি।
  6. যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব
  7. আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তাঁরা বলে ছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে
  8. এরপর বলা হবে, একেই তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
  9. সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের
  10. বস্তুতঃ তারা ছিল গোনাহগার। তারপর আমার পক্ষ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য বিষয় উপস্থিত হল,

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আলে-ইমরান ডাউনলোড করুন:

সূরা Al Imran mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Imran শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আলে-ইমরান  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, May 17, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب