কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 196 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Baqarah ayat 196 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বাকারাহ্ আয়াত 196 আরবি পাঠে(Baqarah).
  
   

﴿وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ ۚ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۖ وَلَا تَحْلِقُوا رُءُوسَكُمْ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْهَدْيُ مَحِلَّهُ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ بِهِ أَذًى مِّن رَّأْسِهِ فَفِدْيَةٌ مِّن صِيَامٍ أَوْ صَدَقَةٍ أَوْ نُسُكٍ ۚ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَمَن تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ ۚ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ ۗ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ ۗ ذَٰلِكَ لِمَن لَّمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ﴾
[ البقرة: 196]

আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর। যদি তোমরা বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের উপর ধার্য। আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করবে না, যতক্ষণ না কোরবাণী যথাস্থানে পৌছে যাবে। যারা তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা মাথায় যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে রোজা করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা কুরবানী করবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্জ্ব ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে চাও, তবে যাকিছু সহজলভ্য, তা দিয়ে কুরবানী করাই তার উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা কোরবানীর পশু পাবে না, তারা হজ্জ্বের দিনগুলোর মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর সাতটি রোযা রাখবে ফিরে যাবার পর। এভাবে দশটি রোযা পূর্ণ হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি তাদের জন্য, যাদের পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে জেনো যে, আল্লাহর আযাব বড়ই কঠিন। [সূরা বাকারাহ্: 196]

Surah Al-Baqarah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 196


আর আল্লাহ্‌র জন্য সম্পূর্ণ করো হজ এবং উমরাহ। কিন্তু যদি বাধা পাও, তবে কুরবানির যা-কিছু পাওয়া যায় তাই, আর তোমাদের মাথা কামাবে না যতক্ষণ না কুরবানি তার গন্তব্যস্থানে পৌঁছেছে কিন্তু তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় অথবা তার মাথায় রোগ থাকে, তবে প্রতিবিধান হচ্ছে রোযা রেখে বা সদকা দিয়ে বা কুরবানি ক’রে। কিন্তু যখন তোমরা নিরাপদ বোধ করবে তখন যে উমরাহ্‌কে হজের সঙ্গে সংযোজন ক’রে লাভবান হতে চায়, সে যেন কুরবানির যা-কিছু পায় তাই। কিন্তু যে পায় না, রোযা হচ্ছে হজের সময়ে তিনদিন আর তোমরা যখন ফিরে এস তখন সাত, -- এই হলো পুরো দশ। এটা তার জন্য যার পরিবার পবিত্র- মজজিদে হাজির থাকে না। আর আল্লাহ্‌কে ভয়-ভক্তি করো, আর জেনে রেখো যে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ প্রতিফলদানে কঠোর।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১৯৬. তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হজ্জ ও উমরাহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করো। আর যদি তোমরা রোগ ও শত্রæর দরুন তা পরিপূর্ণ করতে বাধাগ্রস্ত হও তাহলে তোমরা উট, গরু ও ছাগলের মধ্যে যেটি সহজে পাও সেটিই হাদি হিসেবে জবাই করো। যাতে তোমরা নিজেদের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যেতে পারো। আর তোমরা নিজেদের মাথা মুÐন কিংবা চুল ছোট করো না যতক্ষণনা হাদি এমন জায়গায় পৌঁছাবে যেখানে তাকে জবাই করা জায়িয। যদি হারামে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় তাহলে সেখানেই সেটিকে জবাই করবে যেখানে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে। আর যদি তাকে হারামে ঢুকতে বাধা না দেয়া হয় তাহলে সে ঈদের দিনে অথবা তার পরের তাশরীকের তিন দিনে তথা যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে হারামেই সেটিকে জবাই করবে। তোমাদের কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা তার মাথার চুল উকুন বা তদ্রƒপ কোন কিছুর দ্বারা কষ্টের কারণে মুÐন করলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। তবে তাকে এ জন্য তিনটি রোযা, হারাম এলাকার ছয়জন মিসকীনকে খাওয়ানো কিংবা একটি ছাগল ফিদয়াহ হিসেবে দিতে হবে। তবে ছাগলের ক্ষেত্রে সেটিকে জবাই করে এর গোস্ত হারামের ফকিরদের মাঝে বন্টন করা হবে। অতঃপর তোমরা যদি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করো তাহলে তোমাদের যে ব্যক্তি হজ্জের মাসগুলোতে উমরার ফায়েদা গ্রহণ করবে এবং ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ এমন কোন কাজ করবে অতঃপর সে বছরেই হজ্জ করবে সে যেন একটি ছাগল জবাই অথবা সাত জনে মিলে একটি উট বা গরু জবাই তথা যা তার জন্য সহজ তাই করে। আর যদি সে কোন হাদি জবাই করার সক্ষমতা না রাখে তাহলে সে এর পরিবর্তে হজ্জের দিনগুলোতে তিনটি এবং বাড়ি ফিরে সাতটি রোযা রাখবে। যাতে দশটি রোযা একেবারেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সুবিধাটুকু শুধু তাদের জন্য যাদের ঘর-বাড়ী কা’বা ঘরের নিকটবর্তী নয়। সুতরাং হাদিসহ অথবা তার পরিবর্তে রোযাসহ এ তামাত্তু’ হজ্জটি হারামের অধিবাসী এবং তার নিকটবর্তী লোকদের জন্য নয়। কারণ, তাদের তামাত্তু’ করার কোন প্রয়োজনই নেই। যেহেতু তারা হারামের এলাকাতেই থাকে এবং তাদের জন্য তামাত্তু’ না করে শুধু তাওয়াফ করাই যথেষ্ট। আর তোমরা শরীয়তের অনুসরণ ও তাঁর দেয়া সীমারেখার প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ লঙ্ঘনকারীদের কঠিন শাস্তিদাতা।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ও উমরাহ পূর্ণভাবে সম্পাদন কর,[১] কিন্তু ( ইহরাম বাঁধার পর ) যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে সহজলভ্য ( পশু ) কুরবানী কর[২] এবং যে পর্যন্ত কুরবানীর ( পশু ) তার যবেহস্থলে উপস্থিত না হয়, তোমরা মস্তক মুন্ডন করো না ( হালাল হয়ো না )।[৩] অতএব তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে, অথবা মাথায় কোন ব্যাধি থাকলে ( এবং তার জন্য মস্তক মুন্ডন করতে হলে তার পরিবর্তে ) সে রোযা রাখবে কিংবা সাদকাহ করবে, কিংবা কুরবানী দ্বারা তার ফিদ্ইয়া ( বিনিময় ) দেবে।[৪] অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জ্বের পূর্বে উমরাহ দ্বারা লাভবান হতে চায়, সে সহজলভ্য কুরবানী করবে। কিন্তু যদি কেউ কুরবানী না পায় ( বা দিতে অক্ষম হয় ), তাহলে তাকে হজ্জের সময় তিন দিন এবং গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর সাত দিন [৫] -- এই পূর্ণ দশ দিন রোযা পালন করতে হবে। এই নিয়ম সেই ব্যক্তির জন্য, যার পরিবার-পরিজন পবিত্র কা’বার নিকটে ( মক্কায় ) বাস করে না।[৬] আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [১] হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধে নেওয়ার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব, যদিও তা ( হজ্জ ও উমরাহ ) নফল হয়। ( আইসারুত তাফাসীর ) [২] অর্থাৎ, যদি পথে শত্রু অথবা কঠিন অসুস্থতার কারণে বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে একটি পশু, উট অথবা গরু ( গোটা অথবা এক সপ্তমাংশ ) অথবা ছাগল বা ভেড়া সেখানেই যবেহ করে মাথা নেড়া করে হালাল হয়ে যাও। যেমন, নবী করীম ( সাঃ ) এবং তাঁর সাহাবীগণ হুদাইবিয়্যাতে কুরবানী যবেহ করেছিলেন। আর হুদাইবিয়্যা হারাম সীমানার বাইরে। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) অতঃপর আগামী বছরে তার কাযা কর। যেমন, নবী করীম ( সাঃ ) সন ৬ হিজরীর উমরার কাযা সন ৭ হিজরীতে করেছিলেন। [৩] এর সংযোগ {وَاَتِمُّوا الْحَجَّ} ( আর তোমরা হজ্জ--- সম্পাদন কর )এর সাথে। আর এর সম্পর্ক হল নিরাপদ পরিস্থিতির সাথে। অর্থাৎ, নিরাপদ অবস্থায় ততক্ষণ পর্যন্ত মাথা নেড়া করবে না ( ইহরাম খুলে হালাল হবে না ), যতক্ষণ না হজ্জের সমস্ত কার্যাদি পূরণ করেছ। [৪] অর্থাৎ, সে যদি এমন কষ্টে পতিত হয়ে পড়ে যে, তাকে মাথার চুল কাটতেই হবে, তাহলে তাকে ফিদ্ইয়া ( বিনিময় ) অবশ্যই দিতে হবে। হাদীস অনুযায়ী এ রকম ( অসুবিধাগ্রস্ত ) ব্যক্তি ছ'জন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে অথবা একটি ছাগল যবেহ করবে কিংবা তিন দিন রোযা রাখবে। রোযা ব্যতীত অন্য দু'টি ফিদ্ইয়ার স্থানের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, খাদ্য দান ও ছাগল যবেহ করার কাজ মক্কাতে করতে হবে। আবার কেউ বলেছেন, রোযার মতই এর জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। ইমাম শাওকানী এই মতেরই সমর্থন করেছেন। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) [৫] হজ্জ তিন প্রকার; ইফরাদঃ কেবল হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধা। ক্বিরানঃ হজ্জ ও উমরার এক সাথে নিয়ত করে ইহরাম বাঁধা। এই উভয় অবস্থায় হজ্জের সমস্ত কার্যাদি সুসম্পন্ন না করে ইহরাম খোলা বৈধ নয়। তামাত্তুঃ এতেও হজ্জ ও উমরার নিয়ত হয়। তবে প্রথমে উমরার নিয়তে ইহরাম বাঁধা হয় এবং উমরাহ সম্পূর্ণ করে ইহরাম খুলে দেওয়া হয় এবং যুল-হজ্জ মাসের ৮ তারীখে হজ্জের জন্য মক্কা থেকেই দ্বিতীয়বার ইহরাম বাঁধা হয়। 'তামাত্তু'র অর্থ লাভবান হওয়া। অর্থাৎ, উমরাহ ও হজ্জের মাঝে ইহরাম খুলে লাভবান হওয়া হয়। হজ্জে ক্বিরান এবং হজ্জে তামাত্তু'তে একটি হাদ্ই ( অর্থাৎ, একটি ছাগল বা ভেড়া কিংবা উট বা গরুর এক সপ্তমাংশ ) কুরবানী দিতে হবে। যদি কেউ কুরবানী দিতে না পারে, তাহলে সে হজ্জের দিনগুলোতে তিনটি এবং বাড়ি ফিরে সাতটি রোযা রাখবে। হজ্জের দিনগুলোতে যে রোযা রাখবে, তা হয় ৯ই যুল-হজ্জের ( আরাফার দিনের ) আগে রাখবে অথবা তাশরীকের দিনগুলোতে রাখবে। [৬] অর্থাৎ, তামাত্তু' হজ্জ ও কুরবানী বা রোযা রাখা কেবল তাদের জন্য বিধেয়, যারা মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়। অর্থাৎ, হারাম সীমানার অথবা তার এত কাছের বাসিন্দা নয় যে, তাদের সফরে নামায কসর করা যায়। ( ইবনে কাসীর, ইবনে জারীর )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর তোমরা হজ ও ‘উমরা পূর্ণ কর [] আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে। অতঃপর যদি তোমরা বাঁধা প্রাপ্ত হও তাহলে সহজলভ্য হাদঈ [] প্রদান করো। আর তোমরা মাথা মুণ্ডন করো না [], যে পর্যন্ত হাদঈ তার স্থানে না পৌছে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ হয় বা মাথায় কষ্টদায়ক কিছু হয় তবে সিয়াম কিংবা সাদাকা অথবা পশু যবেহ দ্বারা তার ফিদ্‌ইয়া দিবে []। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কেউ উমরাকে হজের সঙ্গে মিলিয়ে লাভবান হতে চায় [] সে সহজলভ্য হাদঈ যবাই করবে। কিন্তু যদি কেউ তা না পায়, তবে তাকে হজের সময় তিন দিন এবং ঘরে ফিরার পর সাত দিন এ পূর্ণ দশ দিন সিয়াম পালন করতে হবে। এটা তাদের জন্য, যাদের পরিজনবর্গ মসজিদুল হারামের বাসিন্দা নয়। আর তোমরা আল্লাহ্‌র তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর [] [] হজ সর্বসম্মতভাবে ইসলামের আরকানসমূহের মধ্যে একটি রুকন এবং ইসলামের ফরযসমূহ বা অবশ্যকরণীয় বিষয়সমূহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। কুরআনের বহু আয়াত এবং অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে এর প্রতি তাকিদ ও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। [] হাদঈ বলতে এমন জানোয়ার বুঝায় যা মীকাতের বাইরের লোকদের মধ্য থেকে যারা হজ ও উমরা একই সফরে আদায় করবে, তাদের উপর আল্লাহ্‌র জন্য যবেহু করা ওয়াজিব হয়। যার রক্ত হারাম এলাকায় পড়তে হয়। মনে রাখাতে হবে যে, তা সাধারণ কুরবানী নয়। [] আয়াতে মাথা মুণ্ডনকে ইহরাম ভঙ্গ করার নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ইহরাম অবস্থায় চুল ছাঁটা বা কাটা অথবা মাথা মুণ্ডন করা নিষিদ্ধ। [] যদি কোন অসুস্থতার দরুন মাথা বা শরীরের অন্য কোন স্থানের চুল কাটতে হয় অথবা মাথায় উকুন হওয়াতে বিশেষ কষ্ট পায়, তবে এমতাবস্থায় মাথার চুল বা শরীরের অন্য কোন স্থানের লোম কাটা জায়েয। কিন্তু এর ফিদইয়া বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর তা হচ্ছে সাওম পালন করা বা সদকা দেয়া বা যবেহ্ করা। ফিদইয়া যবেহ করার জন্য হারামের সীমারেখা নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সাওম পালন বা সদকা দেয়ার জন্য কোন বিশেষ স্থান নির্ধারিত নেই। তা যে কোন স্থানে আদায় করা চলে। কুরআনের শব্দের মধ্যে সাওমের কোন সংখ্যা নির্ধারিত নেই এবং সদকারও কোন পরিমাণ নির্দেশ করা হয়নি। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী কাব ইবনে উজরার এমনি অবস্থার প্রেক্ষিতে এরশাদ করেছেনঃ ‘তিন দিন সাওম অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাবার দাও, প্রত্যেক মিসকীনকে মাথাপিছু অর্ধ সা’ খাবার দাও এবং তোমার মাথা মুণ্ডন করে ফেল'। [ বুখারীঃ ৪৫১৭ ] [] হজের মাসে হজের সাথে উমরাকে একত্রিকরণের দু'টি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে, মীকাত হতে হজ ও উমরাহর জন্য একত্রে এহ্‌রাম করা। শরীআতের পরিভাষায় একে ‘হজে-কেরান’ বলা হয়। এর এহ্‌রাম হজের এহ্‌রামের সাথেই ছাড়তে হবে, হজের শেষদিন পর্যন্ত তাকে এহ্‌রাম অবস্থায়ই কাটাতে হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, মীকাত হতে শুধু উমরার এহরাম করবে। মক্কায় আগমনের পর উমরার কাজ-কর্ম শেষ করে এহ্‌রাম খুলবে এবং ৮ই জিলহজ তারিখে মীনা যাওয়ার প্রাক্কালে স্ব স্ব স্থান থেকে এহ্‌রাম বেঁধে নেবে। শরীআতের পরিভাষায় একে ‘হজে-তামাতু’ বলা হয়। [] আয়াতটিতে প্রথমে তাকওয়া অবলম্বন করার আদেশ দেয়া হয়েছে; যার অর্থ এসব নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত, সতর্ক ও ভীত থাকা বুঝায়। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলীর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। আজকাল হজ্ব ও উমরাকারীগণের অধিকাংশই এ সম্পর্কে অসতর্ক। তারা প্রথমতঃ হজ্ব ও উমরার নিয়মাবলী জানতেই চেষ্টা করে না। আর যদিওবা জেনে নেয়, অনেকেই তা যথাযথভাবে পালন করে না। অনেকে ওয়াজিবও পরিত্যাগ করে। আর সুন্নাত ও মুস্তাহাবের তো কথাই নেই। আল্লাহ্‌ সবাইকে নিজ নিজ আমল যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


পূর্বে যেহেতু রোযার বর্ণনা হয়েছিল অতঃপর জিহাদের বর্ণনা হয়েছে এখানে হজ্বের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে এবং নির্দেশ দেয়া হচ্ছে-‘তোমরা হজ্ব ও উমরাহকে পূর্ণ কর।' বাহ্যিক শব্দ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, হজ্ব ও উমরাহ আরম্ভ করার পর সে গুলো পূর্ণ করা উচিত। সমস্ত আলেম এ বিষয়ে একমত যে, হজ্বব্রত ও উমরাহ ব্রত আরম্ভ করার পর ওগুলো পূর্ণ করা অবশ্য কর্তব্য যদিও উমরাহব্রত ওয়াজিব ও মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে দু'টি উক্তি রয়েছে, যেগুলো আমি ‘কিতাবুল আহকামের মধ্যে পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছি হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন, ‘পূর্ণ করার অর্থ এই যে, তোমরা নিজ নিজ বাড়ী হতে ইহরাম বাঁধবে হযরত সুফইয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন, এগুলো পূর্ণ করার অর্থ এই যে, তোমরা নিজ নিজ বাড়ী হতে ইহরাম বাঁধবে। তোমাদের এই সফর হবে হজ্ব ও উমরাহর উদ্দেশ্যে। মীকাতে' ( যেখান হতে ইহরাম বাঁধতে হয় ) পৌছে উচ্চৈঃস্বরে ‘লাব্বায়েক পাঠ আরম্ভ করবে। তোমাদের অভিপ্রায় ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্য কোন ইহলৌকিক কার্য সাধনের জন্যে হবে না। তোমরা হয়তো বেরিয়েছো নিজের কাজে মক্কার নিকটবর্তী হয়ে তোমাদের খেয়াল হলো যে, এসো আমরা হজ্ব ও উমরাহব্রত পালন করে নেই। এভাবেও হজ্ব ও উমরাহ আদায় হয়ে যাবে বটে কিন্তু পূর্ণ হবে না। পূর্ণ করা এই যে, শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই বাড়ী হতে বের হবে। হযরত মাকহুল ( রঃ ) বলেন যে, ওগুলো পূর্ণ করার অর্থ হচ্ছে ওগুলো মীকাত’ হতে আরম্ভ করা।হযরত উমার ( রাঃ ) বলেন যে, ওগুলো পূর্ণ করার অর্থ হচ্ছে ওদুটো পৃথক পৃথকভাবে আদায় করা এবং উমরাহকে হজ্বের মাসে আদায় না করা। কেননা কুরআন মাজীদের মধ্যে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ হজ্বের মাসগুলো নির্দিষ্ট।' ( ২:১৯৭ ) হ্যরত কাসিম বিন মুহাম্মদ ( রঃ ) বলেন যে, হজ্বের মাস গুলোতে উমরাহ পালন করা পূর্ণ হওয়া নয়। তিনি জিজ্ঞাসিত হন যে, মুহাররম মাসে উমরাহ করা কিরূপ: তিনি উত্তরে বলেনঃ ‘মানুষ ওকেতো পূর্ণই বলতেন। কিন্তু এই উক্তিটি সমালোচনার যোগ্য। কেননা,এটা প্রমাণিত বিষয়। যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) চারটি উমরাহ করেন এবং চারটিই করেন যুকিাদা মাসে। প্রথমটি হচ্ছে ‘উমরাতুল হুদায়বিয়া' হিজরী ৬ষ্ঠ সনের যু’কাদা মাসে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘উমরাতুল কাযা' হিজরী সপ্তম সনের যু'কাদা মাসে। তৃতীয়টি হচ্ছে ‘উমরাতুল জা'আররানা’ হিজরী অষ্টম সনের যু'কাদা মাসে এবং চতুর্থটি হচ্ছে ঐ উমরাহ যা তিনি হিজরী দশম সনে বিদায় হজ্বের সাথে যুকাদা মাসে আদায় করেন। এই চারটি উমরাহ ছাড়া হিজরতের পরে রাসূলুল্লাহ' ( সঃ ) আর কোন উমরাহ পালন করেননি। হাঁ, তবে তিনি হযরত উম্মে হানী ( রাঃ )-কে বলেছিলেনঃ রমযান মাসে উমরাহ করা আমার সাথে হজ্ব করার সমান ( পুণ্য )। একথা তিনি তাঁকে এজন্যেই বলেছিলেন যে, তাঁর সাথে হজে যাওয়ার তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যানবাহনের অভাবে তাঁকে সাথে নিতে পারেননি। যেমন সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে এই ঘটনাটি পূর্ণভাবে নকল করা হয়েছে। হযরত সাঈদ বিন যুবাইর ( রঃ ) তো পরিষ্কারভাবে বলেন যে, এটা হযরত উম্মে হানীর ( রাঃ ) জন্যে বিশিষ্ট ছিল। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, হজ্ব ও উমরাহর ইহরাম বাঁধার পর ওদু’টো পূর্ণ না করেই ছেড়ে দেয়া জায়েয নয়। হজ্ব ঐ সময় পূর্ণ হয় কুরবানীর দিন ( দশই জিলহজ্বে ) যখন জামারা-ই-উকবাকে পাথর মারা হয়, বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করা হয় এবং সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যস্থলে দৌড়ান হয়। এখন হজ্ব পূর্ণ হয়ে গেল। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, হজ ‘আরাফার নাম এবং উমরাহ হচ্ছে তাওয়াফের নাম হযরত আবদুল্লাহর ( রঃ ) কিরআত হচ্ছে নিম্নরূপঃ ( আরবি )অর্থাৎ তোমরা হজ্ব ও উমরাহকে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পূর্ণ কর।' সুতরাং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত গেলেই উমরাহ পূর্ণ হয়ে যায়। হযরত সাঈদ বিন যুবাইরের ( রঃ ) নিকট এটা আলোচিত হলে তিনি বলেন হযরত ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) কিরআতও এটাই ছিল। হযরত শা’বীর ( রঃ ) পঠনে ‘ওয়াল উমরাতু’ রয়েছে। তিনি বলেন যে, উমরাহ ওয়াজিব নয়। তবে তিনি এর বিপরীতও বর্ণনা করেছেন। বহু হাদীসে কয়েকটি সনদসহ হযরত আনাস ( রাঃ ) প্রভৃতি সাহাবীদের ( রাঃ ) একটি দল হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হজ্ব ও উমরাহ এ দু'টোকেই একত্রিত করেছেন এবং বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর সাহাবীগণকে ( রাঃ ) বলেছেনঃ যার নিকট কুরবানীর জন্তু রয়েছে সে যেন হজ্ব ও উমরাহর একই সাথে ইহরাম বাঁধে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, কিয়ামত পর্যন্ত উমরাহ হজ্বের মধ্যে প্রবেশ লাভ করেছে। আবু মুহাম্মদ বিন আবি হাতীম ( রঃ ) স্বীয় কিতাবের মধ্যে একটি বর্ণনা এনেছেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করে। তার নিকট হতে যাফরানের সুগন্ধি আসছিল। সে জুব্বা পরিহিত ছিল। সে জিজ্ঞেস করে ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার ইহরামের ব্যাপারে নির্দেশ কি:' তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) জিজ্ঞেস করেনঃ ‘প্রশ্নকারী কোথায়: সে বলে-“ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি বিদ্যমান রয়েছি' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বলেন, 'যাফরানযুক্ত কাপড় খুলে ফেলল এবং শরীরকে খুব ভাল করে ঘর্ষণ করে গগাসল করে এসো ও যা তুমি তোমার হজ্বের জন্যে করে থাকো তাই উমরাহর জন্যেও কর।' এই হাদীসটি গরীব। কোন কোন বর্ণনায় গোসল করার ও এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার উল্লেখ নেই। একটি বর্ণনায় তার নাম লায়লা বিন উমাইয়া ( রাঃ ) এসেছে। অন্য বর্ণনায় সাফওয়ান বিন উমাইয়া ( রাঃ ) রয়েছে।অতঃপর বলা হচ্ছে-‘তোমরা যদি বাধা প্রাপ্ত হও তবে যা সহজ প্রাপ্য হয় তাই উৎসর্গ কর। মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন যে,এই আয়াতটি হিজরী ষষ্ঠ সনে হুদায়বিয়ার প্রান্তরে অবতীর্ণ হয়, যখন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে মক্কা যেতে বাধা দিয়েছিল এবং ঐ সম্বন্ধেই পূর্ণ একটি সূরা আল ফাত্হ্ অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীগণ ( রাঃ ) অনুমতি লাভ করেন যে, তারা যেন সেখানেই তাদের কুরবানীর জন্তুগুলো যবাহ্ করে দেন। ফলে সত্তরটি উষ্ট্র যবাহ করা হয়, মস্তক মুণ্ডন করা হয় এবং ইহরাম ভেঙ্গে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ( সঃ ) নির্দেশ শুনে সাহাবীগণ ( রাঃ ) প্রথমে কিছুটা সংকোচবোধ করেন। তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন যে, সম্ভবতঃ এই নির্দেশকে রহিতকারী কোন নির্দেশ অবতীর্ণ হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বয়ং বাইরে এসে মস্তক মুণ্ডন করেন, তার দেখাদেখি সবাই এ কাজে অগ্রসর হন। কতকগুলো লোক মস্তক মুণ্ডন করেন এবং কতকগুলো লোক চুল ছেঁটে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ মস্তক মুণ্ডনকারীদের উপর আল্লাহ তা'আলা করুণা বর্ষণ করুন। জনগণ বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! যারা চুল হেঁটেছেন তাদের জন্যেও প্রার্থনা করুন ।' তিনি পুনরায় মুণ্ডনকারীদের জন্যে ও প্রার্থনা করেন। তৃতীয়বারে চুল ছোটকারীদের জন্যেও তিনি প্রার্থনা করেন। এক একটি উষ্ট্রে সাতজন করে লোক অংশীদার ছিলেন। সাহাবীদের ( রাঃ ) মোট সংখ্যা ছিল চৌদ্দশো। তাঁরা হুদায়বিয়া প্রান্তরে অবস্থান করেছিলেন যা হারাম শরীফের সীমা বহির্ভূত ছিল। তবে এটাও বর্ণিত আছে যে, ওটা হারাম শরীফের সীমান্তে অবস্থিত ছিল। আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে যে, যারা শত্রু কর্তৃক বাধা প্রাপ্ত হবে শুধু তাদের জন্যেই কি এই নির্দেশ, না যারা রোগের কারণে বাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের জন্যেও এই অনুমতি রয়েছে যে, তারা ঐ জায়গাতেই ইহরাম ভেঙ্গে দেবে, মস্তক মুণ্ডন করবে এবং কুরবানী করবে: হযরত ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) মতে তো শুধুমাত্র প্রথম প্রকারের লোকদের জন্যেই এই অনুমতি রয়েছে। হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ), তাউস ( রঃ ), যুহরী ( রঃ ) এবং যায়েদ বিন আসলামও ( রঃ ) এ কথাই বলেন। কিন্তু মুসনাদ-ই-আহমাদের একটি মার’ হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তির হাত পা ভেঙ্গে গেছে কিংবা সে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। বা খোড়া হয়ে গেছে সে ব্যক্তি হালাল হয়ে গেছে। সে আগামী বছর হজ্ব করে নেবে। হাদীসের বর্ণনাকারী বলেনঃ “ আমি এটা হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হযরত আবু হুরাইরার ( রাঃ ) নিকটও বর্ণনা করেছি । তারাও বলেছেন-এটা সত্য।' সুনান-ই-আরবা'আর মধ্যেও এ হাদীসটি রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), হযরত ইবনে যুবাইর ( রাঃ ), আলকামা ( রাঃ ), সাঈদ বিন মুসাইয়াব ( রঃ ), উরওয়া বিন যুবাইর ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ), আতা ( রঃ ) এবং মুকাতিল বিন হিব্বান ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে যে, রুগ্ন হয়ে পড়া এবং খোড়া হয়ে যাওয়াও এ রকমই ওজর। হযরত সুফইয়ান সাওরী ( রঃ ) প্রত্যেক বিপদ ও কষ্টকেই এ রকমই ওজর বলে থাকেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদীসে রয়েছে যে, হযরত যুবাইর বিন আবদুল্লাহর ( রাঃ ) কন্যা যবাআহ্ ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেন,-“ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার হজ্ব করবার ইচ্ছে হয়; কিন্তু আমি রুগ্ন থাকি । রাসূলুল্লাহ( সঃ ) বলেনঃ হজ্বে চলে যাও এবং শর্ত কর যে, ( তোমার ) ইহরাম সমাপনের ওটাই স্থান যেখানে তুমি রোগের কারণে থেমে যেতে বাধ্য হয়ে পড়বে। এই হাদীসের উপর ভিত্তি করেই কোন কোন আলেম বলেন যে, হজ্ব শর্ত করা জায়েয। ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) বলেন, 'যদি এই হাদীসটি সঠিক হয় তবে আমারও উক্তি তাই।' ইমাম বায়হাকী ( রঃ ) ও হাফিযদের মধ্যে অন্যান্যগণ বলেন যে, এই হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক। অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-যা সহজ প্রাপ্য হয় তাই কুরবানী করবে।' হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বর্ণনা করেন, উষ্ট্র-উষ্ট্ৰী, বলদ-গাভী, ছাগ-ছাগী এবং ভেড়া-ভেড়ী এই আট প্রকারের মধ্য হতে ইচ্ছে মত যবাহ করবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে শুধু ছাগীও বর্ণিত আছে এবং আরও বহু মুফাসসিরও এটাই বলেছেন। ইমাম চতুষ্টয়েরও এটাই মাযহাব। হযরত আয়েশা ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) প্রভৃতি মনীষী বলেন যে, এর ভাবার্থ শুধুমাত্র উষ্ট্র ও গাভী। খুব সম্ভব তাদের দলীল হুদায়বিয়ার ঘটনাই হবে। তথায় কোন সাহাবী হতে ছাগ-ছাগী যবাহ করা বর্ণিত হয়নি। তারা একমাত্র গরু ও উটই কুরবানী দিয়েছিলেন।সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে হযরত জাবির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে তাঁরা বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, আমরা সাত জন করে মানুষ এক একটি গরু ও উটে শরীক হয়ে যাবো।' হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, যার যে জন্তু যবাহ করার ক্ষমতা রয়েছে সে তাই যবাহ করবে। যদি ধনী হয় তবে উট, যদি এর চেয়ে কম ক্ষমতাবান হয় তবে গরু, এর চেয়েও কম ক্ষমতা রাখলে ছাগল যবাহ করবে। হযরত উরওয়া ( রঃ ) বলেন যে, এটা মূল্যের আধিক্য ও স্বল্পতার উপর নির্ভর করে। জমহুরের কথা মত ছাগ-ছাগী দেয়াই যথেষ্ট। তাদের দলীল হচ্ছে এই যে, কুরআন মাজীদের মধ্যে সহজলভ্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ কমপক্ষে ঐ জিনিষ যাকে কুরবানী বলা যেতে পারে। আর কুরবানীর জন্তু হচ্ছে উট, গরু, ছাগল ও ভেড়া। যেমন জ্ঞানের সমুদ্র কুরআন পাকের ব্যাখ্যাতা এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পিতৃব্য পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) উক্তি রয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একবার ছাগলের কুরবানী দিয়েছিলেন।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-“ যে পর্যন্ত কুরবানীর জন্তু তার স্বস্থানে না পৌছে সে পর্যন্ত তোমরা তোমাদের মস্তক মুণ্ডন করো না । এর সংযোগ। ( আরবি )-এর সঙ্গে রয়েছে, ( আরবি )-এর সঙ্গে নয়। ইবনে জারিরের ( রঃ ) এখানে ত্রুটি হয়ে গেছে। কারণ এই যে, হুদায়বিয়ায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে ও তাঁর সহচরবৃন্দকে যখন হারাম শরীফে যেতে বাধা প্রদান করা হয়, তখন তারা সবাই হারামের বাইরেই মস্তক মুণ্ডন এবং কুরবানীও করেন কিন্তু শান্তি ও নিরাপত্তার সময় এটা জায়েয নয়। যে পর্যন্ত না কুরবানীর প্রাণী যবাহর স্থানে পৌছে যায় এবং হাজীগণ তাদের হজ্ব ও উমরাহর যাবতীয় কার্য হতে অবকাশ লাভ করেন-যদি তারা একই সাথে দুটোরই ইহরাম বেঁধে থাকেন। কিংবা ঐ দুটোর একটি কার্য হতে অবকাশ লাভ করেন, যদি তারা শুধুমাত্র হজ্বেরই। ইহরাম বেঁধে থাকেন বা হজ্বে তামাত্তোর নিয়্যাত করে থাকেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত হাফসা ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেন,-“ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! সবাই তো ইহরাম ভেঙ্গে দিয়েছে; কিন্তু আপনি যে ইহরামের অবস্থাতেই রয়েছেন:' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বলেনঃ হাঁ, আমি আমার মাথাকে আঠা যুক্ত করেছি এবং আমার কুরবানীর প্রাণীর গলদেশে চিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছি । সুতরাং যে পর্যন্ত না এটা যবাহ্ করার স্থানে পৌছে যায় সে পর্যন্ত আমি ইহরাম ভেঙ্গে দেবো না।'এরপরে নির্দেশ হচ্ছে যে, রুগ্ন ও মস্তক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ‘ফিদিয়া দেবে। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ বিন মাকাল ( রঃ ) বলেনঃ “ আমি কুফার মসজিদে হযরত কা'ব বিন আজরার ( রাঃ ) পাশে বসে ছিলাম । তাকে আমি এই আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, ‘আমাকে রাসূলুল্লাহ( সঃ ) নিকট উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই সময় আমার মুখের উপর উকুন বয়ে চলছিল। আমাকে দেখে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘তোমার অবস্থা যে এতোদূর পর্যন্ত পৌছে যাবে আমি তা ধারণাই করিনি। তুমি কি একটি ছাগী যবাহ করারও ক্ষমতা রাখো না:' আমি বলি-আমি তো দরিদ্র লোক। তিনি বলেনঃ যাও মস্তক মুণ্ডন কর এবং তিনটি রোযা রাখ বা ছ’জন মিসকীনকে অর্ধ সা' ( প্রায় সোয়া সের সোয়া ছটাক ) করে খাদ্য দিয়ে দাও।' ' সুতরাং এই আয়াতটি আমারই সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয় এবং নির্দেশ হিসেবে এ রকম প্রত্যেক ওজরযুক্ত লোকের জন্যেই প্রযোজ্য।' অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, হযরত কা'ব বিন আজরা ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি হাঁড়ির নীচে জ্বাল দিচ্ছিলাম । এমন সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার নিকট আগমন করেন। সে সময় আমার মুখের উপর দিয়ে উকুন বয়ে চলছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে এ অবস্থায় দেখে এ মাসআলাটি আমাকে বলে দেন। অন্য আর একটি বর্ণনায় রয়েছে, হযরত কা'ব বিন আজরা ( রাঃ ) বর্ণনা করেনঃ ‘আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) -এর সাথে হুদায়বিয়ায় ছিলাম। সে সময় আমরা ইহরামের অবস্থায় ছিলাম এবং মুশরিকরা আমাদেরকে বাধা প্রদান করেছিল। আমার মাথায় বড় বড় চুল ছিল যাতে অত্যধিক উকুন হয়ে গিয়েছিল। উকুনগুলো আমার মুখের উপর দিয়ে বয়ে চলছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় আমাকে বলেন-“ উকুন কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে, না তোমার মাথাকে: অতঃপর তিনি মস্তক মুণ্ডনের নির্দেশ দেন । তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর বর্ণনায় রয়েছে, ‘অতঃপর আমি মস্তক মুণ্ডন করি ও একটি ছাগী কুরবানী দেই।অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন ( আরবি ) অর্থাৎ কুরবানী হচ্ছে একটি ছাগী। আর রোযা রাখলে তিন দিন এবং সাদকা করলে এক ফরক ( পায়মান বা পরিমাপ যন্ত্র ) মিসকীনদের মধ্যে বন্টন করা।' হযরত আলী ( রাঃ ), মুহাম্মদ বিন কা'ব ( রঃ ), আলকামা ( রঃ ), ইবরাহীম ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), আতা ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ) এবং রাবী বিন আনাসেরও ( রঃ ) ফতওয়া এটাই। তাফসীর-ই-ইবনে আবি হাতিমের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত কা'ব বিন আজরাকে ( রঃ ) তিনটি মাসআলা জানিয়ে দিয়ে বলেছিলেনঃ ‘এ তিনটির মধ্যে যে কোন একটির উপর তুমি আমল করলেই যথেষ্ট হবে।' হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যেখানে , শব্দ দিয়ে দু-তিনটি রূপ বর্ণনা করা হয় সেখানে যে কোন একটিকে গ্রহণ করার অধিকার থাকে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ), ইকরামা ( রঃ ), আতা' ( রঃ ), তাঊস ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ), হামিদ আ'রাজ ( রঃ ), ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ) এবং যহাক ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম চতুষ্টয় এবং অধিকাংশ আলেমেরও এটাই মাযহাব যে, ইচ্ছে করলে এক ফরক অর্থাৎ তিন সা' ( সাড়ে সাত সের ) ছ’জন মিসকীনের মধ্যে বন্টন করতে হবে এবং কুরবানী করলে। একটি ছাগী কুরবানী করতে হবে। এই তিনটির মধ্যে যেটি ইচ্ছে হয় পালন করতে হবে।পরম করুণাময় আল্লাহ এখানে যেহেতু অবকাশ দিতেই চান এজন্যেই সর্বপ্রথম রোযার বর্ণনা দিয়েছেন, যা সর্বাপেক্ষা সহজ। অতঃপর সাদকার কথা বলেছেন এবং সর্বশেষে কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ( সঃ ) যেহেতু সর্বোত্তমের উপর আমল করবার ইচ্ছা, তাই তিনি সর্বপ্রথম ছাগল কুরবানীর বর্ণনা দিয়েছেন, অতঃপর ছ'জন মিসকীনকে খাওয়ানোরে কথা বলেছেন এবং সর্বশেষে তিনটি রোযার উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শৃংখলা হিসেবে দু’টোরই অবস্থান অতি চমৎকার। হযরত সাঈদ বিন যুবাইর ( রঃ ) এই আয়াতের ভাবার্থ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ তার উপর খাদ্যের নির্দেশ দেয়া হবে। যদি তার কাছে তা বিদ্যমান থাকে তবে তা দিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করবে। নচেৎ রৌপ্য মুদ্রা দ্বারা ছাগলের মূল্য নির্ণয় করবে এবং তা দিয়ে খাদ্য ক্রয় করবে, অতঃপর তা সাদকা করে দেবে। নতুবা অর্ধ সা এর পরিবর্তে একটা রোযা রাখবে। হযরত হাসান বসরীর ( রঃ ) মতে যখন মুহরিমের মস্তকে কোন রোগ হয় তখন সে মস্তক মুণ্ডন করবে এবং নিম্নলিখিত তিনটির মধ্যে যে কোন একটি দ্বারা ফিদইয়াহ আদায় করবেঃ ( ১ ) রোযা দশদিন। ( ২ ) দশজন মিসকীনকে আহার করান, প্রত্যেক মিসকীনকে এক ‘মাকুক’ খেজুর ও এক মাকুক’ গম দিতে হবে( ৩ ) একটি ছাগল কুরবানী করা। হযরত ইকরামাও ( রঃ ) দশ মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর কথাই বলেন। কিন্তু এই উক্তিটি সঠিক নয়। কেননা, মারফু হাদীসে এসেছে যে, রোযা তিনটি, ছ’জন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো ও একটি ছাগল কুরবানী করা। এই তিনটির যে কোন একটি গ্রহণ করার ব্যাপারে স্বাধীনতা রয়েছে। বলা হচ্ছে যে, ছাগল কুরবানী করবে বা তিনটি রোযা রাখবে অথবা ছ’জন মিসকীনকে আহার করাবে। হাঁ, এই শৃংখলা রয়েছে ইহরামের অবস্থায় শিকারকারীর জন্যেও। যেমন কুরআন কারীমের শব্দ রয়েছে এবং ধর্মশাস্ত্রবিদগণের ইজমাও রয়েছে। কিন্তু এখানে শৃংখলার প্রয়োজন নেই। বরং ইচ্ছাধীন রাখা হয়েছে। তাউস ( রঃ ) বলেন যে, এই কুরবানী ও সাদকা মক্কাতেই করতে হবে। তবে রোযা যেখানে। ইচ্ছা সেখানেই করতে পারে। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত ইবনে জাফরের ( রাঃ ) গোলাম হযরত আবু আসমা ( রাঃ ) বলেনঃ হযরত উসমান বিন আফফান ( রাঃ )হজে বের হন। তার সাথে হযরত আলী ( রাঃ ) এবং হযরত হুসাইন ( রাঃ ) ছিলেন। আমি ইবনে জাফরের সঙ্গে ছিলাম। আমরা দেখি যে, একটি লোক ঘুমিয়ে রয়েছেন এবং তার উস্ত্রী তার শিয়রে বাঁধা রয়েছে। আমি তাঁকে জাগিয়ে দেখি যে, তিনি হযরত হুসাইন বিন আলী ( রাঃ ) হযরত ইবনে জাফর ( রাঃ ) তাঁকে উঠিয়ে নেন। অবশেষে আমরা সাকিয়া নামক স্থানে পৌছি। তথায় আমরা বিশ দিন পর্যন্ত তার সেবায় নিয়োজিত থাকি। একদা হযরত আলী ( রাঃ ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, অবস্থা কেমন:' হযরত হুসাইন ( রাঃ ) তাঁর মস্তকের প্রতি ইঙ্গিত করেন। হযরত আলী ( রাঃ তাকে মস্তক মুণ্ডনের নির্দেশ দেন। অতঃপর উট যবাহ করেন। তাহলে যদি তাঁর এই উট কুরবানী করা ইহরাম হতে হালাল হওয়ার জন্যে হয়ে থাকে তবে তো ভাল কথা। আর যদি এটা ফিদইয়ার জন্যে হয়ে থাকে তবে এটা স্পষ্ট কথা যে, এই কুরবানী মক্কার বাইরে করা হয়েছিল।এরপরে ইরশাদ হচ্ছে যে,যে ব্যক্তি হজ্বে তামাত্তু করে সেও কুরবানী করবে, সে হজ্ব ও উমরাহর ইহরাম এক সাথে বেঁধে থাকুক অথবা প্রথমে উমরাহর ইহরাম বেঁধে ওর কার্যাবলী শেষ করার পর হজের ইহরাম বেঁধে থাকুক। শেষেরটাই প্রকৃত ‘তামাতু এবং ধর্মশাস্ত্রবিদদের উক্তিতে এটাই প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। তবে সাধারণ তামাত্তু বলতে দু’টোকেই বুঝায়। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কোন কোন বর্ণনাকারী তো বলেন যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ও (সঃ ) হজে তামাত্ত করেছিলেন। অন্যান্যগণ বলেন যে, তিনি হজ্ব ও উমরাহর ইহরাম এক সাথে বেঁধে ছিলেন। তাঁরা সবাই বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এর সাথে কুরবানীর জন্তু ছিল। সুতরাং আয়াতটিতে এই নির্দেশ রয়েছে যে, হজ্বে তামাতুকারী যে কুরবানীর উপর সক্ষম হবে তাই করবে। এর সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে একটি ছাগল কুরবানী করা। গরুর কুরবানীও করতে পারে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ( সঃ ) তাঁর সহধর্মিণীগণের পক্ষ হতে গরু কুরবানী করেছিলেন, তাঁরা সবাই হজ্বে তামাত্তু করেছিলেন। ( তাফসীর -ই-ইবনে মিরদুওয়াই )। এর দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে তামাতুর ব্যবস্থা শরীয়তে রয়েছে। হযরত ইমরান বিন হুসাইন ( রাঃ ) বলেন, কুরআন মাজীদে তামাতুর আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমরা রাসূলুল্লাহ( সঃ ) সাথে হজ্বে তামাত্ত্ব করেছি। অতঃপর কুরআন কারীমেও এর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত আয়াত অবতীর্ণ হয়নি এবং রাসূলুল্লাহ( সঃ ) এটা হতে বাধা দান করেননি। জনগণ নিজেদের মতানুসারে এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।' ইমাম বুখারী ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা হযরত উমার ( রাঃ )-কে বুঝানো হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের মতে ইমাম বুখারীর এই কথা সম্পূর্ণরূপেই সঠিক। হযরত উমার ( রাঃ ) হতে নকল করা হয়েছে যে, তিনি জনগণকে এটা হতে বাধা দিতেন এবং বলতেন, “ আমরা যদি আল্লাহ তা'আলার কিতাবকে গ্রহণ করি তবে ওর মধ্যে হজ্ব ও উমরাহকে পুরো করার নির্দেশ বিদ্যমান রয়েছে । যেমন বলা হয়েছে ( আরবি ) অর্থাৎ “ তোমরা হজ্ব ও উমরাহকে আল্লাহর জন্যে পুরো কর ।' ( ২:১৯৬ ) তবে এটা মনে রাখা দরকার যে, হযরত উমারের ( রাঃ ) এই বাধা প্রদান হারাম হিসেবে ছিল না। বরং এ জন্যেই ছিল যে, যেন মানুষ খুব বেশী করে হজ্ব ও উমরাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করে।এরপরে বলা হচ্ছে-যে ব্যক্তি প্রাপ্ত না হয় সে হজ্বের মধ্যে তিনটি রোযা রাখবে এবং হজ্বব্রত সমাপ্ত করে প্রত্যাবর্তনের সময় আর সাতটি রোযা রাখবে। সুতরাং পূর্ণ দশটি রোযা হয়ে যাবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুরবানীর উপর সক্ষম না হবে সে রোযা রাখবে। তিনটি রোযা হজ্বের দিনগুলোতে রাখবে। আলেমদের মতে এই রোযাগুলো আরাফার দিনের অর্থাৎ ৯ই জিল হজ্ব তারিখের পূর্ববর্তী দিনগুলোতে রাখাই উত্তম। হযরত আতা ( রঃ )-এর উক্তি এটাই। কিংবা ইহরাম বাঁধা মাত্রই রাখবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) প্রভৃতি মনীষীর উক্তি এটাই। কেননা, কুরআন মাজীদে ( আরবি ) শব্দ রয়েছে। হযরত তাউস ( রঃ ), হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) প্রভৃতি মনীষী এটাও বলেন যে, শাওয়াল মাসের প্রথম দিকেই এই রোযাগুলো রাখা বৈধ। হযরত শা'বী ( রঃ ) প্রভৃতি মনীষী বলেন যে, এই রোযাগুলোর মধ্যে যদি আরাফার দিনের রোযা সংযোজিত করে শেষ করে তবুও চলবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে এটাও নকল করা হয়েছে যে, আরাফার দিনের পূর্বে যদি দু’দিনের দু’টো রোযা রাখে এবং তৃতীয় দিন আরাফার দিন হয় তবে এও জায়েয হবে। হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) একথাই বলেন। হযরত আলীরও ( রাঃ ) উক্তি এটাই।যদি কোন ব্যক্তির এই তিনটি রোযা বা দু'একটি রোযা ছুটে যায় এবং ‘আইয়্যামে তাশরীক' অর্থাৎ ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিন এসে পড়ে তবে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে উমারের ( রাঃ ) উক্তি এই যে, এই ব্যক্তি এ দিনগুলোতেও এই রোযাগুলো রাখতে পারে ( সহীহ বুখারী )। ইমাম শাফিঈরও ( রাঃ ) প্রথম উক্তি এটাই। হযরত আলী ( রাঃ ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। হযরত ইকরামা ( রঃ ), হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) এবং হযরত উরওয়া বিন যুবাইর ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। তাদের দলীল এই যে, ( আরবি ) শব্দটি সাধারণ। সুতরাং এই দিনগুলো এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, সহীহ মুসলিমের মধ্যে হাদীস রয়েছে যে, আইয়্যামে তাশরীক’ হচ্ছে খাওয়া, পান করা ও আল্লাহ তাআলার যিকির করার দিন।অতঃপর সাতটি রোযা রাখতে হবে হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তনের পর। এর ভাবার্থ এক তো এই যে, ফিরে যখন স্বীয় অবস্থান স্থলে পৌছে যাবে। সুতরাং ফিরবার সময় পথেও এই রোযাগুলো রাখতে পারে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) হযরত আতা' ( রাঃ ) একথাই বলেন। কিংবা এর ভাবার্থ হচ্ছে স্বদেশে পৌঁছে যাওয়া। হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) এটাই বলেন। আরও বহু তাবেঈনের মাযহাব এটাই। এমনকি হযরত ইবনে জাবিরের ( রঃ ) মতে এর উপরে ইজমা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফের একটি সুদীর্ঘ হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, ‘হাজ্বাতুল বিদা’য় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উমরার সাথে হজ্বে তামাতু’ করেন এবং যুলহুলায়ফায়’ কুরবানী দেন। তিনি কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়েছিলেন। তিনি উমরাহ করেন অতঃপর হজ্ব করেন। জনগণও তাঁর সাথে হজ্বে তামাত্ত্ব করেন। কতকগুলো লোক কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়েছিলেন; কিন্তু কতকগুলো লোকের সাথে কুরবানীর জন্তু ছিল না। মক্কায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঘোষণা করেন, যাদের নিকট কুরবানীর জন্তু রয়েছে তারা হজ্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইহরামের অবস্থাতেই থাকবে। আর যাদের কাছে কুরবানীর জন্তু নেই তারা বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতঃ সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়িয়ে ইহরাম ভেঙ্গে দেবে। মস্তক মুন্ডন করবে অথবা হেঁটে দেবে।' অতঃপর হজ্বের ইহরাম বেঁধে নেবে। কুরবানী দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে হজ্বের মধ্যে তিনটি রোযা রাখবে এবং সাতটি রোযা স্বদেশে ফিরে গিয়ে রাখবে।' ( সহীত বুখারী ও মুসলিম )। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, এই সাতটি রোযা স্বদেশে ফিরে গিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর বলা হচ্ছে-‘এই পূর্ণ দশ দিন।' এই কথাটি জোর দেয়ার জন্যে বলা হয়েছে। যেমন আরবী ভাষায় বলা হয়ে থাকে, ‘আমি স্বচক্ষে দেখেছি, কানে শুনেছি এবং হাতে লিখেছি। কুরআন মাজীদের মধ্যেও রয়েছে ( আরবি ) অর্থাৎ না কোন পাখী যা তার দু'পাখার সাহায্যে উড়ে থাকে।' ( ৬:৩৮ ) অন্য স্থানে রয়েছে। ( আরবি ) অর্থাৎ ( হে নবী সঃ ) তুমি, তোমার ডান হাত দ্বারা লিখ না ।' ( ২৯:৪৮ ) আর এক জায়গায় রয়েছে-‘আমি মূসার ( আঃ ) সঙ্গে ত্রিশ রাত্রির ওয়াদা করেছি এবং আরও দশ দিয়ে তা পূর্ণ করেছি। অতঃপর তার প্রভুর নির্দিষ্ট চল্লিশ রাত্রি পূর্ণ হলো। অতএব এসব জায়গায় যেমন শুধু জোর দেয়ার জন্যেই এই শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে তেমনই এই বাক্যটিও জোর দেয়ার জন্যেই আনা হয়েছে। আবার এও বলা হয়েছে যে, এটা হচ্ছে পূর্ণ করার নির্দেশ। ( আরবি ) শব্দটির ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এটা কুরবানীর পরিবর্তে যথেষ্ট। এরপরে বলা হচ্ছে যে, এই নির্দেশ ঐসব লোকের জন্যে যাদের পরিবার পরিজন ‘মসজিদে হারামে’ অবস্থানকারী না হয়। হারামবাসী যে হজ্বে তামাত্ত্ব করতে পারে না এর উপর তো ইজমা রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) একথাই বলেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলতেন“ হে মক্কাবাসী! তোমরা হজ্বে তামাতু করতে পার না । তামাতু বিদেশী লোকদের জন্যে বৈধ করা হয়েছে। তোমাদেরকে তো সামান্য দূর যেতে হয়। অল্প দূর গিয়েই তোমরা উমরাহর ইহরাম বেঁধে থাকো।' হযরত তাউসেরও ( রঃ ) ব্যাখ্যা এটাই। কিন্তু হযরত আতা' ( রঃ ) বলেন যে, যারা মীকাতের ( ইহরাম বাঁধার স্থানসমূহ ) মধ্যে রয়েছে তাদের জন্যেও এই নির্দেশ। তাদের জন্যেও তামাত্ত জায়েয নয়। মাকহুলও ( রাঃ ) একথাই বলেন। তাহলে আরাফা, মুদালাফা, আরনা এবং রাজী’র অধিবাসীদের জন্যেও এই নির্দেশ। যুহরী ( রঃ ) বলেন যে, যারা মক্কা শরীফ হতে একদিনের পথের বা তার চেয়ে কম পথের ব্যবধানের উপর রয়েছে, তারা হজ্বে তামাত্ত্ব করতে পারে, অন্যেরা পারে না। হযরত আতা ( রঃ ) দু’দিনের কথাও বলেছেন।ইমাম শাফিঈর ( রঃ ) মাযহাব এই যে, হারামের অধিবাসী এবং যারা এরূপ দূরবর্তী জায়গায় রয়েছে যেখানে মক্কাবাসীদের জন্যে নামায কসর করা জায়েয নয় এদের সবারই জন্যেই এই নির্দেশ। কেননা, এদেরকেও মক্কার অধিবাসীই বলা হবে। এদের ছাড়া অন্যান্য সবাই মুসাফির। সুতরাং তাদের সবারই জন্যে হজ্বের মধ্যে তামাত্তু করা জায়েয। অতঃপর বলা হচ্ছে-আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর । তাঁর নির্দেশাবলী মেনে চল এবং যেসব কাজের উপর তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন তা থেকে বিরত থাক। জেনে রেখো যে, তার অবাধ্যদেরকে তিনি কঠিন শাস্তি দিয়ে থাকেন।

সূরা বাকারাহ্ আয়াত 196 সূরা

وأتموا الحج والعمرة لله فإن أحصرتم فما استيسر من الهدي ولا تحلقوا رءوسكم حتى يبلغ الهدي محله فمن كان منكم مريضا أو به أذى من رأسه ففدية من صيام أو صدقة أو نسك فإذا أمنتم فمن تمتع بالعمرة إلى الحج فما استيسر من الهدي فمن لم يجد فصيام ثلاثة أيام في الحج وسبعة إذا رجعتم تلك عشرة كاملة ذلك لمن لم يكن أهله حاضري المسجد الحرام واتقوا الله واعلموا أن الله شديد العقاب

سورة: البقرة - آية: ( 196 )  - جزء: ( 2 )  -  صفحة: ( 30 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।
  2. বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে,
  3. সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ।
  4. আমি নূহকে আরোহণ করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে।
  5. তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা
  6. হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান
  7. যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ,
  8. আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
  9. অতএব, সে তার সভাসদদেরকে আহবান করুক।
  10. সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:

সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, May 15, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب