কোরান সূরা রা'দ আয়াত 2 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Raad ayat 2 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা রা'দ আয়াত 2 আরবি পাঠে(Raad).
  
   

﴿اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ﴾
[ الرعد: 2]

আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। [সূরা রা'দ: 2]

Surah Ar-Rad in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Raad ayat 2


আল্লাহ্‌ই তিনি যিনি মহাকাশমন্ডলকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন কোনো স্তম্ভ ছাড়া -- তোমরা তো এ দেখছ, আর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে অনুগত করলেন। প্রত্যেকে আবর্তন করছে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে। তিনিই ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করেন, বিশদভাবে বর্ণনা করেন নির্দেশাবলী, যেন তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎকার সন্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।


Tafsir Mokhtasar Bangla


২. তিনি আল্লাহ যিনি আকাশগুলোকে দৃশ্যমান কোন খুঁটি ছাড়া উঁচু করে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি কোন ধরন ও দৃষ্টান্ত ছাড়া তাঁর সাথে মানানসই সুমহান আরশের উপর সুউচ্চ ও সমুন্নত হয়েছেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তাঁর সৃষ্টির উপকারের জন্য অনুগত করেছেন। সূর্য ও চন্দ্রের প্রত্যেকেই আল্লাহর জানা সীমিত সময় পর্যন্ত চলতে থাকবে। তিনি তাঁর ইচ্ছামতো আকাশ ও জমিনে আদেশ জারি করেন এবং তাঁর ক্ষমতা বুঝায় এমন নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন। যাতে তারা কিয়ামতের দিন তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাতে দৃঢ় বিশ্বাসী হয় এবং সে জন্য নেক আমলের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন[১] এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে।[২] তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার। [১] استَوَى عَلَى العَرش এর ভাবার্থ ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর অর্থ মহান আল্লাহর আরশে অবস্থান করা। হাদীস বিশারদদের তরীকা এটাই যে, তাঁরা আল্লাহর কোন গুণের তা'বীল ( অপব্যাখ্যা ) করেন না, যেমন অন্যরা মহান আল্লাহর উক্ত গুণের এবং তাঁর অন্যান্য গুণের অপব্যাখ্যা করে থাকে। হাদীস বিশারদগণ এও বলেছেন যে, তাঁর গুণাবলীর কেমনত্বও বর্ণনা করা যাবে না এবং কোন কিছুর সাথে তুলনাও করা যাবে না। তিনি বলেন: ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ﴾ অর্থ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। ( সূরা শূরা ৪২:১১ ) [২] এর একটি অর্থ এই যে, 'প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করবে।' অর্থাৎ কিয়ামত অবধি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য তার স্থির হওয়ার সময় পর্যন্ত চলছে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। ( সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৮ ) দ্বিতীয় অর্থ এই যে, চন্দ্র এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। সূর্য নিজের চক্র এক বছরে এবং চন্দ্র এক মাসে পূর্ণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্রের জন্যে আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিনণ কক্ষপথ। ( সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৯ ) সাতটি বৃহৎ বৃহৎ গ্রহ রয়েছে, ওদের মধ্যে দু'টি হলো সূর্য এবং চন্দ্র। এখানে শুধু উক্ত দু'টি গ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন, কেননা এ দুটিই ( মানুষের চক্ষুদৃষ্টিতে ) সর্বাধিক বিশাল এবং মহত্বপূর্ণ। এ দুটিও যখন আল্লাহর নির্দেশাধীন, তাহলে অন্যগুলো নিশ্চিতরূপে তাঁর নির্দেশাধীন হবে। আর যখন এরা আল্লাহর হুকুমের অধীনে, তখন এরা মা'বূদ ( উপাস্য ) হতে পারে না। মা'বূদ তো তিনিই, যিনি এদেরকে অধীনস্থ করে রেখেছেন। তাই তিনি বলেন,﴿لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِله الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্র-সূর্যকে সিজদা করো না, সেই আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করতে চাও। ( সূরা ফুসস্বিলাত ৪১:৩৭ ) অন্যত্র বলেন, ﴿وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। ( সূরা আ'রাফ ৭:৫৪ )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আল্লাহ্, যিনি আসমানসমূহ উপরে স্থাপন করেছেন খুঁটি ছাড়া [], তোমরা তা দেখছ []। তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন [] এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়মাধীন করেছেন []; প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে []। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন, আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন [], যাতে তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাত সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার []। [] আয়াতের এক অনুবাদ উপরে করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহকে কোন খুঁটি ব্যতীত উপরে উঠিয়েছেন, তোমরা সে আসমানসমূহকে দেখতে পাচ্ছ। [ তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর ] অর্থাৎ আল্লাহ্ এমন এক সত্তা, যিনি আসমানসমূহকে সুবিস্তৃত ও বিশাল গম্বুজাকার খুঁটি ব্যতীত উচ্চে উন্নীত রেখেছেন যেমন তোমরা আসমানসমূহকে এ অবস্থায়ই দেখ। এ অর্থের স্বপক্ষে আমরা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র দেখতে পাই সেখানে বলা হয়েছে, “ আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পড়ে না যায় পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া ।” [ সূরা আল-হাজ্জঃ ৬৫ ] তবে আয়াতের অন্য এক অনুবাদ হলো, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহকে অদৃশ্য ও অননুভূত স্তম্ভসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ অনুবাদটি ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, হাসান ও কাতাদা রাহেমাহুমুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে। [ তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর ] তবে ইবন কাসীর প্রথম তাফসীরকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [] কুরআনুল কারীমের কতিপয় আয়াতে আকাশ দৃষ্টিগোচর হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে; যেমন এ আয়াতে ( تَرَوْنَهَا ) বলা হয়েছে এবং অন্য এক আয়াতে ( وَاِلَى السَّمَاۗءِ كَيْفَ رُفِعَتْ ) [ সূরা আল-গাশিয়াহঃ ১৮ ] বলা হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনায় এটা এসেছে যে, যমীনের আশেপাশে যা আছে যেমনঃ বাতাস, পানি ইত্যাদি প্রথম আসমান এ সবগুলোকে সবদিক থেকে সমভাবে বেষ্টন করে আছে। যে কোন দিক থেকেই প্রথম আসমানের দিকে যাত্রা করা হউক না কেন তা পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বে রয়েছে। আবার প্রথম আসমান বা নিকটতম আসমানের পুরূত্বও পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বের মত। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় আসমানও প্রথম আসমানকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছে। এ দু’টোর দূরত্ব পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বের মত। আবার দ্বিতীয় আসমানের পুরূত্বও পাঁচশত বছরের রাস্তার মত। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমানও তদ্রুপ দূরত্ব ও পুরত্ব বিশিষ্ট। এ আসমানসমূহকে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোন প্রকার বাহ্যিক খুঁটি ব্যতীতই ধারন করে রেখেছেন। সেগুলো একটির উপর আরেকটি পড়ে যাচ্ছেনা এটা একদিকে যেমন তাঁর মহা শক্তিধর ও ক্ষমতাবান হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে অন্যদিকে আসমান ও যমীন যে কত প্রকাণ্ড সৃষ্টি তার এক প্রচ্ছন্ন ধারণা আমাদেরকে দেয়। [ ইবন কাসীর ] মহান আল্লাহ্ বলেন, “ মানুষকে সৃষ্টি করা অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি তো কঠিনতর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না ।" [ সূরা গাফেরঃ ৫৭ ] অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং তাদের মত পৃথিবীও, তাদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন । [ সূরা আত-ত্বালাকঃ ১২ ] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত আসমান ও এর ভিতরে যা আছে এবং এর মাঝখানে যা আছে তা সবই কুরসীর মধ্যে যেন বিস্তীর্ণ যমীনের মধ্যে একটি আংটি আর কুরসী হলো মহান আরশের মধ্যে তদ্রুপ একটি আংটি স্বরূপ যা এক বিস্তীর্ণ যমীনে পড়ে আছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর আরশ তার পরিমাণ তো মহান আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নির্ধারণ করে বলতে পারবে না। [ তাবারী ] [] এর ব্যাখ্যা সূরা বাকারাহ এবং সূরা আল-আ’রাফে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সংক্ষেপে এখানে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ্ আরশের উপর উঠার ব্যাপারটি তাঁর একটি বিশেষ গুণ। তিনি আরশের উপর উঠেছেন বলে আমরা স্বীকৃতি দেব। কিন্তু কিভাবে তিনি তা করেছেন তা আমাদের জ্ঞানের বাইরের বিষয়। [] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সূর্য ও চন্দ্রকে আজ্ঞাধীন করেছেন। প্রত্যেকটিই একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে। আজ্ঞাধীন করার অর্থ এই যে, উভয়কে তিনি সৃষ্টিকুলের উপকারের জন্য, তাঁর বান্দাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নিয়োজিত করেছেন, মূলত: প্রতিটি সৃষ্টিই স্রষ্টার আজ্ঞাধীন। [ কুরতুবী ] যে কাজে তাদেরকে আল্লাহ্ নিয়োজিত করেছেন তারা অহৰ্নিশ তা করে যাচ্ছে। হাজারো বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে; কিন্তু কোন সময় তাদের গতি চুল পরিমাণও কম-বেশী হয়নি। তারা ক্লান্ত হয় না এবং কোন সময় নিজের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে অন্য কাজে লিপ্ত হয় না। [ কুরতুবী ] [] আয়াতে উল্লেখিত ( أجل ) শব্দটির মূল অর্থঃ সময়। তবে অন্যান্য অর্থেও এর ব্যবহার আছে। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ বর্ণনায় কয়েকটি মত রয়েছেঃ এক, এখানে ( اَجَلٍ مُّسَمًّى ) বা সুনির্দিষ্ট মেয়াদ বলতে বুঝানো হয়েছে যে, চাঁদ ও সূর্য কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে চলতে থাকবে। যখন সূর্যকে গুটিয়ে নেয়া হবে, চাঁদকে নিষ্প্রভ করা হবে, তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে আর গ্রহ নক্ষত্রগুলো খসে পড়বে, তখন পর্যন্ত এগুলো চলবে। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “ আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ” [ সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮ ] এখানে গন্তব্য বলে সুনির্দিষ্ট সময়ও উদ্দেশ্য হতে পারে । [ ইবন কাসীর; কুরতুবী ] দুই, কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতের অর্থ, আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক গ্রহের জন্যে একটি বিশেষ গতি ও বিশেষ কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তারা সব সময় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্ধারিত গতিতে চলমান থাকে। চন্দ্র নিজ কক্ষপথ এক মাসে এবং সূর্য এক বছরে অতিক্রম করে। [ কুরতুবী ] তিন, অথবা আয়াতের অর্থ, আল্লাহ্ সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানের প্রতি ধাবিত করান। আর সে গন্তব্যস্থান হলো আরশের নীচে। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বিস্তারিত এসেছে সূরা ইয়াসীনে যার বর্ণনা আসবে। [ ইবন কাসীর ] [] অর্থাৎ তিনি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। এর মানে, আল্লাহ্ তা’আলা অপার শক্তির নিদর্শনাবলী তিনি বর্ণনা করছেন। [ বাগভী; ফাতহুল কাদীর ] অর্থাৎ তিনি বিস্তারিত প্রমাণ পেশ করছেন যে, যিনি পূর্ব বর্ণিত কাজগুলো করতে পারেন তিনি অবশ্যই মানুষকে মৃত্যুর পর পুনরায় আনতে সক্ষম। [ কুরতুবী ] এগুলো আরও প্রমাণ করছে যে, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাঁর সৃষ্টিকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। [ ইবন কাসীর ] ( ৭ ) অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টজগৎ ও তার বিস্ময়কর পরিচালন-ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা'আলা এজন্য কায়েম করেছেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করে আখেরাত ও কেয়ামতে বিশ্বাসী হও এবং সত্য বলে মেনে নাও। [ বাগভী ] কেননা, এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা ও সৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করার পর আখেরাতে মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করাকে আল্লাহ্র শক্তি বহির্ভূত মনে করা সম্ভব হবে না।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


আল্লাহ তাআ’লা নিজের ক্ষমতার পূর্ণতা এবং সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের খবর দিচ্ছেন যে, তিনি বিনা স্তম্ভে আকাশকে উর্ধে স্থাপন করেছেন। আকাশকে তিনি যমীন হতে কতই না উঁচুতে রেখেছেন! শুধু নিজের আদেশে ওটাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন যার শেষ সীমারেখার খবর কেউ রাখে না। দুনিয়ার আকাশ সারা যমীন এবং ওর চার পাশে পানি, বাতাস ইত্যাদি যা কিছু রয়েছে সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে রয়েছে। সব দিক থেকেই আসমান যমীন হতে সমানভাবে উঁচু রয়েছে। যমীন হতে আসমানের দুরত্ব হচ্ছে পাঁচ শ’ বছরের পথ। সবদিকেই ওটা এতোটা উঁচু। ওর পুরু ও ঘনত্বও পাঁচ শ' বছরের ব্যবধানে আছে। আবার দ্বিতীয় আকাশ এই দুনিয়ার আকাশকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। প্রথম আকাশ হতে দ্বিতীয় আকাশের ব্যবধানও পাঁচ শ' বছরের পথ। অনুরূপভাবে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আকাশও একে অপর হতে পাঁচ শ’ বছরের পথের দূরত্বে অবস্থিত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ আল্লাহ এমন যিনি সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপ সংখ্যক যমীনও রয়েছে ।( ৬৫: ১২ )। হাদীস শরীফে রয়েছে যে, সাতটি আকাশ এবং ওগুলির মাঝে যা কিছু রয়েছে সেগুলি কুরসীর তুলনায় এইরূপ যেইরূপ কোন প্রশস্ত ও বিরাট ময়দানে কোন একটা বৃত্ত। আর কুরসী আর্‌শের তুলনায় তদ্রুপ। আর্‌শের পরিমাপ মহা মহিমান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের বর্ণনা রয়েছে যে, আর্‌শ হতে যমীনের দূরত্ব পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ।কোন কোন মুফাসসির বলেন যে, আকাশের স্তম্ভ রয়েছে বটে, কিন্তু তা দেখা যায় না। কিন্তু আইয়াস ইবনু মুআ’বিয়া ( রঃ ) বলেন, আসমান যমীনের উপর গম্বুজের ন্যায় রয়েছে। অর্থাৎ তাতে কোন স্তম্ভ নেই। এই উক্তিটিই কুরআন কারীমের বাকরীতিরও যোগ্য বটে। এবং ( আরবি ) ( ২২: ৪ ৬৫ ) এই আয়াত দ্বারাও এটাই প্রতীয়মান হয়। সুতরাং ( আরবি ) এই কথা দ্বারা আকাশে স্তম্ভ না থাকার প্রতিই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আসমান বিনা স্তম্ভে এই পরিমাণ উঁচুতে রয়েছে এবং তোমরা তা স্বচক্ষে অবলোকন করছে। এটা হচ্ছে মহামহিমান্বিত আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতারই একটি নিদর্শন। উমাইয়া ইবনু সালাতের নিম্নের কবিতায় রয়েছে, যার কবিতা সম্পর্কে হাদীসে আছে, “ তার কবিতা ঈমান এনেছে এবং তার অন্তর কুফরী করছে” আবার একথা ও বলা হয়েছে যে, এগুলি হচ্ছে হযরত যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফাইলের ( রাঃ ) কবিতা । কবিতাগুলি নিম্নরূপঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আপনি সেই আল্লাহ যিনি স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে স্বীয় নবী মূসাকে ( আঃ ) হারুণ ( আঃ ) সহ রাসূল করে ফিরাউনের নিকট পাঠিয়েছিলেন । আপনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ তোমরা যাও এবং অবাধ্য ফিরাউনকে আল্লাহর দিকে আহবান করো এবং তাকে বললাঃ তুমি কি এই উঁচু আকাশকে বিনা স্তম্ভে নির্মাণ করেছো? তাতে সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি কি তুমিই সৃষ্টি করেছো? আর মাটি হতে ফসল উৎপাদনকারী এবং গাছে ফল সৃষ্টিকারী কি তুমি? ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআ’লার এই বিরাট বিরাট নিদর্শনাবলী কি গভীরভাবে চিন্তাকারী মানুষের জন্যে তার অস্তিত্বের দলীল নয়?” ‘অতঃপর আল্লাহ আর্‌শের উপর সমাসীন হলেন’ এর তাফসীর সুরায়ে আরাফে বর্ণিত হয়েছে সেখানে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি যেভাবে আছেন সে ভাবেই থাকবেন। অবস্থা, তুলনা, সাদৃশ্য ইত্যাদি থেকে আল্লাহর সত্ত্বা পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে। সূর্য ও চন্দ্র তাঁরই নির্দেশক্রমে আবর্তিত হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত এরূপ ভাবেই আবর্তিত হতে থাকবে। যেমন-আল্লাহ পাকের উক্তিঃ ‘প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে।’ বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ এ দু'টো এদের শেষ সময় পর্যন্ত অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ।( ৩৬: ৩৮ ) বলা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট গন্তব্য দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্‌শের নীচে যা যমীনের নিম্নদেশের সাথে অন্য দিক থেকে মিলিত আছে। এটা এবং সমস্ত তারকা এখান পর্যন্ত পৌঁছে আর্‌শ থেকে আরো দূরে হয়ে যায়। কেননা, সঠিক কথা, যার উপর বহু দলীল প্রমাণ রয়েছে তা এই যে, ওটা গম্বুজ। পৃথিবীর সঙ্গে সংযুক্ত অবশিষ্ট আসমানের মতো ওটা পরিবেষ্টনকারী। কেননা ওর পায়া আছে এবং ওকে বহনকারী রয়েছেন। ঘূর্ণায়মান আকাশের ব্যাপারে এটা কল্পনায় আসতে পারে না। যে কেউই চিন্তা গবেষণা করবে সেই এটাকে সত্য বলে মেনে নেবে। কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান যাদের রয়েছে তাঁরা এই ফলাফলেই পৌঁছবেন। আল্লাহ তাআ’লার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।এখানে শুধুমাত্র সূর্য ও চন্দ্রের উল্লেখ করার কারণ এই যে, চলমান ৭ ( সাতটি ) গ্রহের মধ্যে এ দুটোই বড় ও উজ্জ্বল। সুতরাং এ দুটোই যখন নিয়মাধীন তখন অন্যগুলো তো নিয়মাধীন হওয়া স্বাভাবিক। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘তোমরা সূর্য ও চন্দ্রকে সিজদা করো না। এর দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ তোমরা অন্যান্য নক্ষত্রগুলোকেও সিজদা করো না। অন্য জায়গায় বিস্তারিত ভাবেও রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের বাধ্য । সৃষ্টি ও হুকুম তাঁরই, তিনিই কল্যাণময় এবং তিনিই বিশ্বপ্রতিপালক।” ( ৭ :৫৪ )আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ “ তিনি নিদর্শন সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার ।' অর্থাৎ মানুষ যেন এ সব নির্দশন দেখে নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করতে পারে যে, আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর পুনরায় জীবিত করবেন এবং তাঁর কাছে তাদেরকে একত্রিত করা হবে।

সূরা রা'দ আয়াত 2 সূরা

الله الذي رفع السموات بغير عمد ترونها ثم استوى على العرش وسخر الشمس والقمر كل يجري لأجل مسمى يدبر الأمر يفصل الآيات لعلكم بلقاء ربكم توقنون

سورة: الرعد - آية: ( 2 )  - جزء: ( 13 )  -  صفحة: ( 249 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. আপনি বলুনঃ কে তোমাদেরকে স্থল ও জলের অন্ধকার থেকে উদ্ধার করেন, যখন তোমরা তাঁকে বিনীতভাবে
  2. তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত থেকে ডান
  3. মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে?
  4. আপনি কি বধিরকে শোনাতে পারবেন? অথবা যে অন্ধ ও যে স্পষ্ট পথ ভ্রষ্টতায় লিপ্ত, তাকে
  5. এবং যে মন্দ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অগ্নিতে অধঃমূখে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা করছিলে,
  6. এটা সৎপথ প্রদর্শন, আর যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক
  7. অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ ও
  8. আর ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।
  9. তারা বলল, হে নূহ যদি তুমি বিরত না হও, তবে তুমি নিশ্চিতই প্রস্তরাঘাতে নিহত হবে।
  10. অনন্তর আমি তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা রা'দ ডাউনলোড করুন:

সূরা Raad mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Raad শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত রা'দ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত রা'দ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত রা'দ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত রা'দ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত রা'দ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত রা'দ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত রা'দ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত রা'দ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত রা'দ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত রা'দ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত রা'দ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত রা'দ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত রা'দ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত রা'দ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত রা'দ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত রা'দ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত রা'দ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত রা'দ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত রা'দ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত রা'দ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত রা'দ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত রা'দ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত রা'দ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত রা'দ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত রা'দ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers