কোরান সূরা নিসা আয়াত 23 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Nisa ayat 23 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা নিসা আয়াত 23 আরবি পাঠে(Nisa).
  
   

﴿حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
[ النساء: 23]

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। [সূরা নিসা: 23]

Surah An-Nisa in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 23


তোমাদের জন্য অবৈধ হচ্ছে -- তোমাদের মায়েরা আর তোমাদের মেয়েরা আর তোমাদের বোনেরা আর তোমাদের ফুফুরা আর তোমাদের মাসীরা, আর ভাইয়ের মেয়েরা ও বোনের মেয়েরা, আর তোমাদের মায়েরা যারা তোমাদের স্তন্যদান করেছে, আর দুধ- মায়ের দিক থেকে তোমাদের বোনেরা, আর তোমাদের স্ত্রীদের মায়েরা, আর তোমাদের সৎ-মেয়েরা যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে -- তোমাদের তেমন স্ত্রীদের থেকে যাদের সাথে সহবাস করেছ, কিন্তু যদি তাদের সাথে সহবাস করে না থাক তবে তোমাদের অপরাধ হবে না, আর যারা তোমাদের ঔরস থেকে তোমাদের তেমন ছেলেদের স্ত্রীরা; আর যেন তোমরা দুই বোনের মধ্যে জমায়েৎ করো -- অবশ্য যা ইতিমধ্যে ঘটে গেছে তা ব্যতীত। অবশ্য আল্লাহ্ হচ্ছেন পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।


Tafsir Mokhtasar Bangla


২৩. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন তোমাদের মা-নানীদেরকে বিবাহ করা; তারা যতো উপরেরই হোক না কেন। তথা মায়ের মা ও তার নানী। চাই তা বাপের পক্ষ থেকে হোক কিংবা মায়ের পক্ষ থেকে। তোমাদের মেয়েদেরকে; তারা যতো নিচেরই হোক না কেন। তথা মেয়ে ও মেয়ের মেয়ে। তেমনিভাবে ছেলের মেয়ে ও মেয়ের মেয়ে; তারা যতো নিচেরই হোক না কেন। তোমাদের বোনদেরকে; চাই তারা মাতা-পিতা উভয়ের পক্ষ থেকে হোক অথবা কোন একজনের পক্ষ থেকে। তোমাদের ফুফীদেরকে তেমনিভাবে তোমাদের বাপ-দাদা ও মা-নানীদের ফুফীদেরকেও; তারা যতো উপরেরই হোক না কেন। তোমাদের খালাদেরকে; তেমনিভাবে তোমাদের মা-নানী ও বাপ-দাদাদের খালাদেরকেও; তারা যতো উপরেরই হোক না কেন। তোমাদের ভাই ও বোনের মেয়েদেরকে এবং তাদের সন্তানদেরকে; তারা যতো নিচেরই হোক না কেন। তোমাদের দুধ মা এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে। তোমাদের স্ত্রীদের মায়েদেরকে; চাই তোমরা তাদের সাথে সহবাস করো কিংবা নাই করো। তোমাদের স্ত্রীদের অন্যের ঔরসজাত মেয়েদেরকে। যদিও তারা সাধারণত তোমাদের ঘরেই লালিত-পালিত ও বড় হয়েছে। তেমনিভাবে যারা তোমাদের ঘরে লালিত-পালিত হয়নি তারাও। যদি তোমরা তাদের মায়েদের সাথে সহবাস করে থাকো। আর যদি তোমরা তাদের মায়েদের সাথে সহবাস না করে থাকো তাহলে তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ করায় তোমাদের কোন অসুবিধে নেই। আরো হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা। যদিও তারা এখনো তাদের সাথে সহবাস করেনি। এ বিধানের অধীনে আরো রয়েছে দুধ ছেলেদের স্ত্রীরাও। আরো তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে বংশীয় অথবা দুধপান সম্পর্কীয় দু’ বোনকে একই জনের বিবাহ বন্ধনে একত্রিত করা। তবে জাহিলী যুগে গত হওয়া বিষয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তেমনিভাবে কোন মহিলা ও তার ফুফী অথবা তার খালাকে একই ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনে একত্রিত করা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তোমাদের জন্য হারাম ( নিষিদ্ধ ) করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণ, কন্যাগণ, ভগিনীগণ, ফুফুগণ, ভ্রাতুষ্পুত্রীগণ, ভাগিনেয়ীগণ, দুগ্ধ-মাতাগণ, দুগ্ধ-ভগিনীগণ, শাশুড়িগণ ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস হয়েছে, তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যাগণ, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, তবে যদি তাদের ( কন্যাদের মাতার ) সাথে সহবাস না হয়ে থাকে, তাহলে তোমাদের ( বিবাহে ) কোন দোষ নেই। আর তোমাদের জন্য তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীকে ( হারাম করা হয়েছে। হারাম করা হয়েছে ) দুই ভগিনীকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা গত হয়ে গেছে, তা ( ধর্তব্য নয় )। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[১] [১] যে মহিলাদের সাথে বিবাহ হারাম এখানে তার বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে সাত প্রকার নারী বংশীয় সম্পর্কের কারণে হারাম। আর সাত প্রকার নারী দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম এবং চার প্রকার নারী বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম। এ ছাড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, ফুফু-ভাইঝি অথবা খালা-বুনঝি উভয়কে একত্রে বিবাহ করা হারাম। বংশীয় সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হলঃ মায়েরা, মেয়েরা, বোনেরা, ফুফুরা, খালারা এবং ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। আর দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, দুধমায়েরা, দুধ মেয়েরা, দুধ বোনেরা, দুধ ফুফুরা, দুধ খালারা এবং দুধ ভাইঝি ও ভাগ্নীরা। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, শাশুড়ী, সৎ মেয়ে ( যে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে তার প্রথম স্বামীর মেয়েরা ) এবং পুত্রবধু ও দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা। এ ছাড়া পিতার স্ত্রীও হারাম ( যার কথা পূর্বে এসেছে )। আর হাদীস অনুযায়ী স্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার ( স্ত্রীর ) ফুফু, খালা এবং তার ভাইঝি ও ভাগ্নীর সাথে বিবাহ হারাম। মায়েরা বলতে মায়ের মা ( নানী ), মায়ের দাদী এবং বাপের মা ( দাদী ) ও দাদীর মা ও তার দাদী এইভাবে পর্যায়ক্রমে যত আসবে সকলেই মায়ের আওতায় পড়বে। আর মেয়ের আওতায় পড়বে, পুতনীরা, নাতনীরা এবং পুতনী ও নাতনীদের মেয়েরা। ব্যভিচারের মাধ্যমে জন্ম লাভকারিণী বেটি মেয়ের মধ্যে শামিল হবে কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তিন ইমাম তাকে মেয়ের মধ্যেই শামিল করেছেন এবং তার সাথে বিবাহ হারাম মনে করেছেন। তবে ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, সে বিধিসম্মত মেয়ে নয়। কাজেই যেভাবে সে [يُوصِيكُمُ اللهُ فِي أَوْلادِكُمْ] ( মহান আল্লাহ তোমাদেরকে ত্যক্ত সম্পদ সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। ) সন্তানের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সকলের ঐক্যমতে সে ওয়ারিস হয় না, অনুরূপ সে এই আয়াতেও মেয়ের মধ্যে শামিল হবে না। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত। ( ইবনে কাসীর ) বোনের পর্যায়ে পড়বে সহোদরা বোন, বৈপিত্রেয়ী বোন এবং বৈমাত্রেয়ী বোন সকলেই। ফুফুর মধ্যে বাপের, নানার এবং দাদার তিন প্রকার বোনরা শামিল। খালার অন্তর্ভুক্ত হল, মায়ের এবং নানী ও দাদীর তিন প্রকারের বোনরা। ভাইঝি বলতে তিন প্রকার ( সহোদর, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় ) ভাইদের আপন মেয়ে এবং তাদের মেয়েদের মেয়ে সকলেই শামিল। ভাগ্নীর পর্যায়ে পড়ে তিন প্রকার বোনদের আপন মেয়ে এবং তাদের মেয়েদের মেয়ে। দুধ সম্পর্কের কারণে যারা হারাম তারা হল, দুধ মা, যার দুধ আপনি দুধ পানের নির্দিষ্ট সময়ে ( অর্থাৎ, দু'বছরের মধ্যেই ) পান করেছেন। দুধ বোন, সেই মহিলা যাকে আপনার আপন মা অথবা দুধমা দুধ পান করিয়েছে। আপনার সাথেই পান করিয়ে থাক অথবা আপনার আগেই কিংবা আপনার পরে আপনার অন্য ভাই-বোনদের সাথে পান করিয়ে থাক। অনুরূপ যে মহিলার আপন মা অথবা দুধমা আপনাকে দুধ পান করিয়েছে, যদিও বিভিন্ন সময়ে পান করিয়ে থাকে। দুধ পানের কারণে সেই সমস্ত সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে, যা বংশীয় কারণে হারাম হয়। অর্থাৎ, দুধ মায়ের বংশীয় ও দুধ সম্পর্কের সন্তানরা দুধ পানকারীর ভাই-বোন, এই মায়ের স্বামী তার পিতা, এই পিতার বোনরা তার ফুফু, এই মায়ের বোনরা তার খালা, এবং এই মায়ের স্বামীর ভায়েরা তার চাচা হয়ে যাবে। আর দুধ পানকারী শিশুর বংশীয় ভাই-বোন ইত্যাদি দুধ পানের কারণে এই পরিবারের উপর হারাম হবে না। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয় তারা হল, স্ত্রীর মা অর্থাৎ, শাশুড়ী। ( স্ত্রীর নানী-দাদীও এর অন্তর্ভুক্ত হবে ) যদি কোন মহিলাকে বিবাহ করার পরে পরেই সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তবুও তার মায়ের ( শাশুড়ীর ) সাথে বিবাহ হারাম হবে। তবে যদি কোন মহিলাকে বিয়ের পর সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) رَبِيْبة 'রাবীবা' ( সৎ বেটী ) স্ত্রীর আগের স্বামীর মেয়ে। এটা শর্তের ভিত্তিতে হারাম হয়। যেমন, যদি সৎ বেটীর মায়ের সাথে সহবাস করে নেয় তবেই সে হারাম হবে, অন্যথা তার সাথে বিয়ে হালাল। فِي حُجُوْرِكُمْ ( যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে ) এটা অধিকাংশ অবস্থার দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, শর্ত হিসাবে বলা হয়নি। অতএব এই মেয়ে যদি কোন অন্য কারো অভিভাবকত্বে বা অন্য স্থানে লালিতা-পালিতা হয় বা অন্য জায়গায় বসবাস করে থাকে, তবুও তার সাথে বিবাহ হারাম। حلائل হল حَلِيْلَةٌ এর বহুবচন। حَلَّ يَحِلُّ ( অবতরণ করা ) ধাতু থেকে فَعِيْلَةٌ এর ওজনে فَاعِلَةٌ এর অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। স্ত্রীকে 'হালীলা' এই জন্য বলা হয়েছে যে, তার ( অবতরণের জায়গা ) বাসস্থান স্বামীর সাথেই হয়। অর্থাৎ, যেখানে স্বামী অবতরণ করে বা বসবাস করে, সেখানে সেও অবতরণ করে বা বসবাস করে। পোতা ও নাতীরাও পুত্রের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, তাদের স্ত্রীদের সাথেও বিবাহ হারাম। অনুরূপ দুধ সম্পর্কের ছেলেদের স্ত্রীরাও হারাম হবে। مِنْ أَصْلابِكُمْ ( তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী ) কথাটি সংযুক্ত করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, পালিত পুত্রের স্ত্রীর সাথে বিবাহ হারাম নয়। দুই বোনের ( দুধ সম্পর্কের হোক বা বংশীয় সম্পর্কের তাদের ) সাথে একই সময়ে বিবাহ হারাম। তবে তাদের কোন একজনের মৃত্যুর পর অথবা তালাকের পর ইদ্দত শেষে অপরজনের সাথে বিয়ে জায়েয। অনুরূপ চারজন স্ত্রীর মধ্য থেকে কোন একজনকে তালাক দেওয়ার পর পঞ্চমজনের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহ করার অনুমতি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দত পূরণ না হয়েছে। বিঃ দ্রষ্টব্যঃ ব্যভিচার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হবে কি না? এ ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাগণের উক্তি হল, কোন ব্যক্তি কোন মহিলার সাথে ব্যভিচার করে ফেললে, ব্যভিচারের কারণে হারাম সাব্যস্ত হবে না। অনুরূপ স্ত্রীর মা ( শাশুড়ী ) অথবা মেয়ের সাথে কেউ ব্যভিচার করে ফেললে, আপন স্ত্রী তার উপর হারাম হয়ে যাবে না। ( প্রমাণের জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল ক্বাদীর ) হানাফী ও অন্য কিছু উলামাদের মত হল, ব্যভিচারে হারাম সাব্যস্ত হয়ে যাবে। তবে প্রথমে উল্লিখিত মতের সমর্থন কিছু হাদীসে পাওয়া যায়।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে [] তোমাদের মা [], মেয়ে [], বোন [], ফুফু [], খালা [], ভাইয়ের মেয়ে [], বোনের মেয়ে [], দুধমা [], দুধবোন [ ১০ ], শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার আগের স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত মেয়ে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে [ ১১ ], তবে যদি তাদের সাথে সংগত না হয়ে থাক তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। আর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী [ ১২ ] ও দুই বোনকে একত্র করা, আগে যা হয়েছে, হয়েছে [ ১৩ ]। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। চতুর্থ রুকূ‘ [] আলোচ্য আয়াতসমূহে যাদের সাথে বিয়ে হারাম, এমন নারীদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। তারা তিনভাগে বিভক্তঃ এক.
ঐ সমস্ত হারাম নারী কোন অবস্থাতেই হালাল হয় না, তাদেরকে ‘মুহাররামাতে আবাদীয়া’ বা ‘চিরতরে হারাম মহিলা’ বলা হয়। এ জাতীয় মহিলা তিন শ্রেণীরঃ ( ১ ) বংশগত হারাম নারী, ( ২ ) দুধের কারণে হারাম নারী এবং ( ৩ ) শ্বশুর সম্পর্কের কারণে হারাম নারী চিরতরে হারাম। দুই.
কোন কোন নারী চিরতরে হারাম নয়, কোন কোন অবস্থায় তারা হালালও হয়ে যায়। তাদেরকে ‘মুহাররামাতে মুআক্কাতাহ’ বা সাময়িক কারণে হারাম বলা হয়। এরা আবার দু’ শ্রেণীতে বিভক্তঃ ( ১ ) পরস্ত্রী সে যতক্ষণ পর্যন্ত পরের স্ত্রী থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম। কিন্তু যখনই অপরের স্ত্রী হওয়া থেকে মুক্ত হবে তখনই সে হালাল হয়ে যাবে। ( ২ ) কোন কোন মহিলা শুধুমাত্র অন্যের সাথে একসাথে বিবাহ করা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিবাহ করা হারাম নয়। যেমন, দুই বোনকে একসাথে স্ত্রী হিসেবে রাখা। খালা ও বোনঝিকে একসাথে স্ত্রী হিসেবে রাখা। [] অর্থাৎ আপন জননীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে। অর্থের ব্যাপকতায় দাদী, নানী সবই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [] স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা হারাম। কন্যার কন্যাকে এবং পুত্রের কন্যাকেও বিয়ে করা হারাম। মোটকথা, কন্যা, পৌত্রী, প্রপৌত্রী, দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী এদের সবাইকে বিয়ে করা হারাম। [] সহদোরা বোনকে বিয়ে করা হারাম। এমনিভাবে বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয়া বোনকেও বিয়ে করা হারাম। [] পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয়া বোনকে বিয়ে করা হারাম। তিন প্রকার ফুফুকেই বিয়ে করা যায় না। [] আপন জননীর তিন প্রকার বোন, প্রত্যেকের সাথেই বিয়ে করা হারাম। [] ভ্রাতুষ্পপুত্রীর সাথেও বিয়ে হারাম; আপন হোক বৈমাত্রেয় হোক - বিয়ে হালাল নয়। [] বোনের কন্যা অর্থাৎ ভাগ্নেয়ীর সাথেও বিয়ে হারাম। এখানেও বোনকে ব্যাপক অর্থে বুঝতে হবে। [] যেসব নারীর স্তন্য পান করা হয়, তারা জননী না হলেও বিবাহ হারাম হওয়ার ব্যাপারে জননীর পর্যায়ভুক্ত এবং তাদের সাথে বিবাহ হারাম। ফেকাহবিদগণের পরিভাষায় একে ‘হুরমাতে রেযাআত’ বলা হয়। তবে কেবলমাত্র শিশু অবস্থায় দুধ পান করলেই এই ‘হুরমাত’ কার্যকরী হয়। [ ১০ ] অর্থাৎ দুধ পানের সাথে সম্পর্কিত যেসব বোন আছে, তাদেরকে বিয়ে করা হারাম। এর বিশদ বিবরণ এই যে, দুধ পানের নির্দিষ্ট সময়কালে কোন বালক অথবা বালিকা কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে সে তাদের মা এবং তার স্বামী তাদের পিতা হয়ে যায়। এছাড়া সে স্ত্রীলোকের আপন পুত্র-কন্যা তাদেরই ভাই-বোন হয়ে যায়। অনুরূপ সে স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা হয় এবং সে স্ত্রীলোকের দেবর-ভাসুররা তাদের চাচা হয়ে যায়। তার স্বামীর বোনেরা শিশুদের ফুফু হয়ে যায়। দুধ পানের কারণে তাদের সবার পরস্পরের বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়ে যায়। বংশগত সম্পর্কের কারণে পরস্পর যেসব বিয়ে হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণে সেসব সম্পৰ্কীদের সাথে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়। তাই একটি বালক ও একটি বালিকা কোন মহিলার দুধ পান করলে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে হতে পারে না। এমনিভাবে দুধভাই ও বোনের কন্যার সাথেও বিয়ে হতে পারে না। উকবা ইবন হারেস বলেন, তিনি আবি ইহাব ইবন আযীযের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এক মহিলা এসে বলল, আমি উকবাকে এবং যাকে সে বিয়ে করেছে উভয়কে দুধ পান করিয়েছি। উকবা বললেন, আমি জানি না যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। এর পূর্বে আপনি আমাকে কখনো বলেননি। তারপর তিনি মদীনায় আসলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিভাবে এটা সম্ভব অথচ বলা হয়েছে। তখন উকবা তার স্ত্রীকে পৃথক করে দিলেন এবং অন্য একজনকে বিয়ে করেন। [ বুখারীঃ ৮৮ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। এমতাবস্থায় আয়েশা শুনতে পেলেন যে, হাফসার ঘরে যাওয়ার জন্য একজন পুরুষ লোক অনুমতি চাচ্ছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একলোক আপনার পরিবারভুক্ত ঘরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার তো মনে হয় এটা অমুক ব্যক্তি। হাফসার কোন এক দুধ চাচা। তখন আয়েশা বললেন, অমুক যদি জীবিত থাকত-আয়েশার কোন এক দুধ চাচা তাহলে কি সে আমার কাছে প্রবেশ করতে পারত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যা, জন্মগত কারণে যা হারাম হয়, দুধগত কারণেও তা হারাম হয়৷ [ বুখারী ৫০৯৯; মুসলিম: ১৪৪৪ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, জন্মের কারণে যাদেরকে হারাম গণ্য করো দুধ পানের কারণেও তাদেরকে হারাম গণ্য করবে। [ মুসলিম: ১৪৪৫ ] তবে এ দুধপান দু’বছরের মধ্যে হয়েছে কি না সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন জরুরী; কারণ, হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুধ পানের সময়টুকু যেন ঐ সময়েই সংঘটিত হয় যখন সন্তানের দুধ ছাড়া আর কোন খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হতো না। [ বুখারী ৫১০২; মুসলিম: ১৪৫৫ ] [ ১১ ] এখানে অভিভাবকত্ব থাকার কথাটা শর্ত হিসাবে নয়; বরং সাধারণতঃ এ ধরনের মেয়েরা মায়ের সাথেই থাকে আর মা দ্বিতীয় বিবাহের কারণে তার স্বামীর কাছেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এ ধরনের মেয়েদের অভিভাবকত্ব থাকা না থাকা উভয় অবস্থাতেই তাদের বিয়ে করা হারাম। উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আবু সুফিয়ানের মেয়েকে বিয়ে করবেন? রাসূল বললেন যে, তাকে বিয়ে করা আমার জন্য জায়েয হবে না। আমি বললাম, আমি শুনেছি আপনি নাকি বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন। রাসূল বললেন, তুমি কি উম্মে সালামার মেয়ের কথা বলছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি সে আমার রাবীবা নাও হত তারপরও আমার জন্য জায়েয হত না। কেননা, আমাকে এবং তার পিতাকে সুআইবাহ দুধ পান করিয়েছেন। তোমরা তোমাদের কন্যাদের এবং তোমাদের বোনদের আমার কাছে বিয়ের জন্য পেশ করো না। [ বুখারীঃ ৫১০৬ ] [ ১২ ] অর্থাৎ আপন পুত্রের বিবাহিতা স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম। যদিও পুত্র শুধু বিবাহই করে-সহবাস না করে। [ ১৩ ] এখানে বুঝানো হয়েছে যে, পূর্বে এ ধরনের যা কিছু ঘটেছে তা আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু যদি কেউ এরূপ অবস্থায় ইসলামে প্রবেশ করে তবে তাদের মধ্য থেকে দু’জনের একজনকে তালাক দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, ফাইরোয আদ-দাইলামী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললামঃ আমি ঈমান এনেছি অথচ দুই বোন আমার স্ত্রী হিসেবে আছে। রাসূল বললেনঃ তুমি তাদের যে কোন একজনকে তালাক দিয়ে দাও। [ ইবন মাজাহঃ ১৯৫১, তিরমিযীঃ ১১২৯ ] অনুরূপভাবে এ একত্রিতকরণের মাস’আলার মধ্যে এমন দু’জনকেও একত্রে বিয়ে করা জায়েয নাই, যাদের একজন পুরুষ সাব্যস্ত হলে অন্যজনের জন্য তাকে বিয়ে করা জায়েয হত না। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা এবং তার ফুফু অনুরূপভাবে কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। [ বুখারীঃ ৫১০৯ ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


বংশজাত, দুগ্ধ পান সম্বন্ধীয় এবং বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে যেসব স্ত্রীলোক পুরুষদের জন্যে হারাম এ আয়াতে তাদেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, সাত প্রকারের নারী বংশের কারণে এবং সাত প্রকারের নারী বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণে পুরুষদের উপর হারাম করা হয়েছে।অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন। ভগ্নি কন্যাগণ পর্যন্ত তো হচ্ছে বংশজাত আত্মীয়। জমহুর উলামা এ আয়াত দ্বারা দলীল নিয়েছেন যে, ব্যভিচার দ্বারা যে মেয়ে জন্মগ্রহণ করবে সে মেয়েটিও ঐ ব্যভিচারীর উপর হারাম হবে। কেননা, সেও মেয়ে, অতএব হারাম। ইমাম আবু হানীফা ( রঃ ), ইমাম মালিক ( রঃ ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ )-এর এটাই মাযহাব। ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) হতে এর বৈধতার কথা বর্ণিত আছে। কেননা, শরীয়ত হিসেবে এটা কন্যা নয়। সুতরাং উত্তরাধিকারের ব্যাপারে যেমন মেয়ের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে উত্তরাধিকার পায় না, তদ্রুপই আয়াতের মধ্য যে কয়জনকে হারাম করা হয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্ত সে নয়।এরপর বলা হচ্ছে-‘তোমাদের আপন মাতা যেমন তোমাদের উপর হারাম, তদ্রপ তোমাদের দুধ-মাতাও তোমাদের জন্য হারাম।' সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে রয়েছেঃ ‘জন্ম যাকে হারাম করে স্তন্যপানও তাকে হারাম করে।' সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, বংশের কারণে যে হারাম হয়, দুগ্ধ পানের কারণেও সে হারাম হয়।ধর্মশাস্ত্রবিদগণ এতে চারটি অবস্থা এবং কেউ কেউ ছয়টি অবস্থা নির্দিষ্ট করেছেন যা আহকামের শাখার গ্রন্থরাজির মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত কথা এই যে, এর মধ্যে কিছুই নির্দিষ্ট নেই। কেননা, ওরই মত কতগুলো অবস্থা বংশের মধ্যেও পাওয়া যায় এবং ঐ অবস্থাগুলোর মধ্যে কতগুলো শুধু বৈবাহিক সম্বন্ধের কারণেই হারাম হয়ে থাকে। সুতরাং হাদীসের উপর কোন প্রতিবাদ উঠতে পারে না। এখন কয়বার দুধপান করলে অবৈধতা সাব্যস্ত হয় সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। দুধপান করামাত্রই অবৈধতা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। ইমাম মালিক ( রঃ ) এ কথাই বলেন। হযরত ইবনে উমার ( রঃ ), সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রঃ ), উরওয়া ( রঃ ), ইবনে যুবাইর ( রঃ ) এবং যুহরী ( রঃ )-এর উক্তিও এটাই। দলীল এই যে, স্তন্য পান এখানে সাধারণ।কেহ কেহ বলেন যে, তিনবার পান করলে অবৈধতা সাব্যস্ত হবে। যেমন সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ একবার চোষণ করা বা দু’বার পান করা হারাম করেনা ।' এ হাদীসটি বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে। ইমাম আহমাদ ( রঃ ), ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ ( রঃ ), আবু উবাইদাহ ( রঃ ) এবং আবু সাউরও এ কথাই বলেন। আলী ( রাঃ ), আয়িশা ( রাঃ ), উম্মে আফযাল ( রাঃ ), ইবন যুবাইর ( রঃ ), সুলাইমান ইবন ইয়াসার ( রঃ ) এবং সাঈদ ইবন যুবাইর ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। তাদের দলীল হচ্ছে সহীহ মুসলিমের উপরোক্ত হাদীসটি।হযরত আয়েশা ( রাঃ ) বলেন যে, পূর্বে কুরআন পাকের মধ্যে দশবার দুধ পানের উপর অবৈধতার হুকুম অবতীর্ণ হয়েছিল। পরে ওটা রহিত হয়ে পাঁচবারের উপর রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মৃত্যু পর্যন্ত ওটা পঠিত হতে থাকে। দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে হযরত সালহা বিনতে সাহীল ( রাঃ )-এর বর্ণনাটি, তাঁকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন হযরত আবু হুযাইফার ( রাঃ ) গোলাম হযরত সালিম ( রাঃ )-কে পাঁচবার দুধপান করিয়ে দেন।কোন স্ত্রীলোক তার নিকট কোন পুরুষ লোকের যাতায়াতকে পছন্দ করলে এ হাদীসটি অনুযায়ীই হযরত আয়েশা ( রাঃ ) তাকে এ নির্দেশই দিতেন। ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং তাঁর সহচরগণেরও ঘোষণা এটাই যে, পাঁচবার দুধ পানই নির্ভরযোগ্য। এটা স্মরণীয় বিষয় যে, জমহূরের মতে এ দুধপান শিশুর দুধ ছেড়ে দেয়ার পূর্বে অর্থাৎ দু'বছরের মধ্যেই হতে হবে। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা-ই-বাকারার ( আরবী ) ( ২:২৩৩ )-এর তাফসীরের মধ্যে দেয়া হয়েছে। আবার এ দুধ পানের ক্রিয়া দুধ মাতার স্বামী পর্যন্ত পৌছবে কি-না এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। জমহুর ও ইমাম চতুষ্টয়ের মতে এটা স্বামীর উপরও ক্রিয়াশীল হবে কিন্তু পূর্ববর্তী কোন কোন মনীষীর মতে এটা শুধু দুধ দাত্রী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, দুধ পিতা পর্যন্ত পৌছবে না। এর ব্যাখ্যার স্থান হচ্ছে আহকামের বড় বড় গ্রন্থগুলো, তাফসীর নয়। আল্লাহ পাক বলেনঃ শাশুড়ী হারাম।' যে মেয়ের সাথে বিয়ে হবে, এ বিবাহ বন্ধনের সাথে সাথেই তার মা হারাম হয়ে যাবে, মেয়ের স্বামী তার সঙ্গে সঙ্গম করুক আর নাই করুক। হ্যাঁ, তবে যে নারীকে বিয়ে করছে তার সাথে তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা রয়েছে। এখন যদি বিয়ের পর ঐ স্ত্রীলোকটির স্বামী তার সাথে সঙ্গম করে থাকে তবে তার মেয়েটি তার স্বামীর জন্যে হারাম হয়ে যাবে।আর যদি সঙ্গমের পূর্বেই স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় তবে তার কন্যা তার স্বামীর জন্যে হারাম হবে না। এজন্যেই এ আয়াতে এ শর্ত লাগানো। হয়েছে। কোন কোন লোক সর্বনামটিকে শাশুড়ী ও প্রতিপালিতা মেয়ে উভয়ের দিকেই ফিরিয়েছেন। তাঁরা বলেন যে, শাশুড়ীও ঐ সময় হারাম হয় যখন তার মেয়ের সঙ্গে তার জামাতার নির্জনবাস হয়, নচেৎ হারাম হয় না। শুধু বিবাহ বন্ধন দ্বারা স্ত্রীর মাতাও হারাম হয় না এবং স্ত্রীর মেয়েও হারাম হয় না।হযরত আলী ( রাঃ ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে বিয়ে করেছে, অতঃপর সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়েছে, সে ঐ মেয়ের মাতাকে বিয়ে করতে পারে, যেমন প্রতিপালিতা মেয়েকে এভাবেই তার মাতাকে তালাক দেয়ার পর বিয়ে করা যায়। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত ( রাঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত ( রাঃ ) হতেই আর একটি বর্ণনা রয়েছে যে, যখন ঐ স্ত্রী তার স্বামীর সাথে সঙ্গমের পূর্বেই মারা যাবে এবং এ স্বামী তার উত্তরাধিকার গ্রহণ করবে তখন তার মাতাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করা মাকরূহ হবে। হ্যা, তবে যদি সঙ্গমের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয় তবে ইচ্ছে করলে তার মাতাকে বিয়ে করতে পারে।হযরত আবু বকর ইবনে কিনানা ( রাঃ ) বলেন, আমার পিতা তায়েফের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। তার সাথে আমার নির্জন বাস হয়নি এমতাবস্থায় আমার চাচা ( মেয়েটির পিতা ) মারা যান। তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ আমার শাশুড়ী বিধবা হন। তিনি বড় সম্পদ শালিনী ছিলেন। তাই আমার পিতা আমাকে পরামর্শ দেন যে, আমি যেন তার মেয়েকে তালাক দিয়ে তাকেই বিয়ে করি।আমি তখন হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে এ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, তুমি তাকে বিয়ে করতে পার।' অতঃপর আমি হযরত ইবনে উমার ( রাঃ )-কে জিজ্ঞাস করি। তিনি বলেন, তুমি তাকে বিয়ে করতে পার না। আমি আমার পিতার নিকট এটা বর্ণনা করি। তিনি ঐ দু' মনীষীর ফতওয়া লিখে দিয়ে হযরত মুআবিয়া ( রাঃ )-এর নিকট পত্র লিখেন। হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) উত্তরে লিখেন, 'আমি হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করতে পারি না। তোমরাই অবস্থা সম্যক উপলব্ধি করছো, কারণ অবস্থা তোমাদের সামনে রয়েছে। সে ছাড়া আরও বহু স্ত্রীলোক রয়েছে। মোটকথা তিনি অনুমতিও দিলেন না এবং নিষেধও করলেন না। আমার পিতা তখন তাঁর বাসনা আমার শাশুড়ীর দিক হতে ফিরিয়ে নেন এবং তার সাথে আমার বিয়ে দেয়া হতে বিরত থাকেন।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের ( রাঃ ) বলেন যে, স্ত্রীর কন্যা ও স্ত্রীর মাতার একই হুকুম। যদি স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম না হয় তবে এ দু’জনই হালাল হবে। কিন্তু এর ইসনাদে সন্দেহযুক্ত বর্ণনাকারী রয়েছে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ )-এর এটাই উক্তি। ইবনে যুবাইর ( রাঃ )-এবং হযরত ইবনে আব্বাসও ( রাঃ ) ঐ দিকেই গেছেন। হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। শাফিঈ মাযহাব অবলম্বীদের মধ্যে আবুল হাসান ( রঃ ) আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সারূনী ( রঃ ) হতেও রাফেঈর উক্তি অনুযায়ী এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে! কিন্তু পরে তিনি তার একথা হতে প্রত্যাবর্তন করেন।তাবরানীর হাদীসে রয়েছে যে, ‘ফারাহ গোত্রের শাখা ‘কাখ’ গোত্রের একটি লোক একটি নারীকে বিয়ে করে। অতঃপর তার বিধবা মাতার সৌন্দর্যের প্রতি তার দৃষ্টি নিবন্ধ হয়। তাই সে হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ )-কে মাসআলা জিজ্ঞেস করে, তার মাতাকে বিয়ে করা আমার জন্যে বৈধ কি?' তিনি বলেন, হ্যা।' সুতরাং সেই মহিলাটিকে তালাক দিয়ে তার মাতাকে বিয়ে করে নেয়। তার ছেলেমেয়েও হয়।অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) মদীনায় আগমন করেন। এখানে তিনি এ মাসআলাটি বিশ্লেষণ করেন। ফলে তিনি জানতে পারেন যে, এটা হালাল নয়। অতঃপর তিনি কুফা প্রত্যাবর্তন করে ঐ লোকটিকে বলেন, ‘তোমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দাও। সে তোমার জন্যে হারাম।' লোকটি তার আদেশ প্রতিপালন করতঃ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয় ।জমহুর উলামা এ দিকেই গেছেন যে, মেয়ে শুধু বিবাহ বন্ধন দ্বারা হারাম হয়। যে পর্যন্ত না তার মায়ের সঙ্গে তার স্বামীর সঙ্গম হয়। তবে মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই সঙ্গম না হলেও মা হারাম হয়ে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নির্জনবাসের পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয় কিংবা মহিলাটি মারা যায়, তখন তার মা তার স্বামীর জন্যে হালাল নয়। এটা সন্দেহযুক্ত বলেই তিনি তা অপছন্দ করেন। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন ( রাঃ ), হযরত মাসরূক ( রঃ ), হযরত তাউস ( রঃ ), হযরত ইকরামা ( রঃ ), হযরত আতা' ( রঃ ) হযরত হাসান বসরী ( রঃ ), হযরত ইবনে সীরীন ( রঃ ), হযরত কাতাদাহ ( রঃ ) এবং হযরত যুহরী ( রঃ ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। ইমাম চতুষ্টয়, সাতজন ধর্মশাস্ত্রবিদ, জমহুর উলামা এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মনীষীবর্গের এটাই মাযহাব।ইমাম ইবনে জুরায়েজ ( রঃ ) বলেন, ঐ মনীষীদের উক্তি সঠিক যারা শাশুড়ীকে উভয় অবস্থাতেই হারাম বলে থাকেন। কেননা, মহান আল্লাহ তাদের অবৈধতার সঙ্গে সঙ্গমের শর্ত আরোপ করেননি, যেমন মেয়ের মায়ের জন্যে এ শর্ত আরোপ করেছেন। তাছাড়া এর উপর ইজমা হয়েছে যা এমন দলীল যে, যার বিপরীত করা সে সময় বৈধই নয় যখন ওর উপর সবাই একমত হয়। সনদের ব্যাপারে সমালোচনা থাকলেও একটি গারীব হাদীসেও এটা বর্ণিত আছে। যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ 'যখন কোন পুরুষ কোন স্ত্রীকে বিয়ে করে তখন তার মাকে বিয়ে করা হালাল নয়, স্বামী ঐ মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম করুক আর নাই করুক। হ্যা, তবে যে মহিলাকে বিয়ে করেছে তাকে যদি সঙ্গমের পূর্বে তালাক দিয়ে দেয় তবে ইচ্ছে করলে তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। এ হাদীসটির সনদ দুর্বল বটে, কিন্তু এ মাসআলার উপর ইজমা হয়ে গেছে যা এর বিশুদ্ধতার উপর এমন এক সাক্ষী যার পরে আর কোন সাক্ষ্যের আবশ্যকতা নেই। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-“ তোমাদের প্রতিপালিতা ঐ মেয়েগুলো তোমাদের জন্যে হারাম যারা তোমাদের ক্রোড়ে অবস্থিতা, যদি তাদের মাতাদের সঙ্গে তোমাদের নির্জনবাস হয়ে থাকে । জমহূরের ঘোষণা এই যে, তারা ক্রোড়ে লালিত পালিতা হোক আর নাই হোক সর্বাবস্থাতেই হারাম হবে। যেহেতু এরূপ মেয়েরা সাধারণতঃ তাদের মাতাদের সাথেই থাকে এবং স্বীয় বৈপিত্রের ( সৎ বাপের ) নিকট প্রতি পালিত হয় সেহেতু একথা বলা হয়েছে। এটা কোন শর্ত নয়। যেমন নিম্নের আয়াতে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ যদি তোমাদের দাসীরা পবিত্র থাকতে ইচ্ছে করে তবে তোমরা তাদেরকে নির্লজ্জতার কার্যে বাধ্য করো না।' ( ২৪:৩৩ ) এখানেও যদি তারা। পবিত্র থাকতে ইচ্ছে করে’ এ শর্তটি ঘটনার প্রাধান্য হিসেবে করা হয়েছে। অর্থ এই নয় যে, যদি তারা পবিত্র থাকতে না চায় তবে তাদেরকে নির্লজ্জতার কাজে উত্তেজিত কর। অনুরূপভাবে এ আয়াতেও বলা হয়েছে যে, যদি ক্রোড়ে অবস্থান করে। তাহলে বুঝা গেল যে, ক্রোড়ে অবস্থান না করলেও হারাম হবে।সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, হযরত উম্মে হাবীবা ( রাঃ ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি আমার বোন আবু সুফইয়ানের কন্য ইযহূকে বিয়ে করুন। তিনি বলেনঃ তুমি এটা পছন্দ কর? হযরত উম্মে হাবীবা ( রাঃ ) বলেন ‘হ্যাঁ, আমি আপনাকে শূন্য রাখতে পারি না। তাছাড়া এ সকার্যে আমি আমার বোনকেও জড়িয়ে দেব না কেন? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বলেনঃ জেনে রেখো যে, এটা আমার জন্যে বৈধ নয়।'উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে হাবীবা ( রাঃ ) তখন বলেন, “ আমি তো শুনেছি যে, আপনি নাকি আবু সালমা ( রাঃ )-এর মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “উম্মে সালমা ( রাঃ )-এর গর্ভের মেয়েটির কথা বলছ?তিনি বলেন, হ্যাঁ । তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘জেনে রেখো, প্রথমতঃ সে আমার উপর এ জন্যে হারাম যে, সে আমার প্রতিপালিতা, সে আমারই ক্রোড়ে লালিত পালিত হচ্ছে। দ্বিতীয়তঃ যদি এরূপ না হতো তবুও সে আমার উপর হারামই হতো। কেননা, সে আমার দুগ্ধ ভ্রাতার কন্যা, আমার ভ্রাতুস্পুত্রী। আমাকে ও তার পিতা আবু সালমা ( রাঃ )-কে সাওবিয়া দুধ পান করিয়েছিলেন। সাবধান! তোমাদের কন্য ও ভগ্নীদেরকে আমার উপর পেশ করো না।'সহীহ বুখারীর মধ্যে নিম্নরূপ শব্দ রয়েছেঃ ‘উম্মে সালমা ( রাঃ )-এর সাথে আমার বিয়ে যদি নাও হতো তথাপি সে আমার উপর হালাল হতো না। সুতরাং অবৈধতার মূল তিনি বিয়েকেই স্থির করেছেন। এ মাযহাবই হচ্ছে ইমাম চতুষ্টয়ের, সাতজন ধর্ম শাস্ত্রবিদের এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহূরের। এও বলা হয়েছে যে, যদি মেয়েটি ক্রোড়ে প্রতিপালিত হয় তবে হারাম হবে নচেৎ হারাম হবে না।হযরত মালিক ইবন আউস ইবন হাসান ( রঃ ) বলেন, আমার স্ত্রী সন্ত নাদি রেখে মারা যায়। তার প্রতি আমার খুবই ভালবাসা ছিল। এ জন্য তার মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত শোকাভিভূত হয়ে পড়ি। ঘটনাক্রমে হযরত আলী ( রাঃ )-এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি আমাকে চিন্তিত দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। আমি ঘটনাটি তাঁর নিকট বর্ণনা করি। তিনি তখন আমাকে বলেন, “ তোমার পূর্বে তার স্বামীর কোন সন্তান আছে কি?' আমি বলি হ্যাঁ, একটি কন্যা আছে এবং সে তায়েফে অবস্থান করে । তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে বিয়ে করে নাও।'আমি তখন কুরআন কারীমের এ আয়াতটি পাঠ করে তাকে বলি, এর ভাবার্থ কি হবে? তিনি বলেনঃ “ এটা সে সময় হতো যদি সে তোমার নিকট লালিত পালিত হতো । আর সে তো তোমার কথামত তায়েফে রয়েছে। তোমার নিকটেই তো নেই। এর ইসনাদ সহীহ হলেও এ উক্তটি সম্পূর্ণ গারীব।হযরত দাউদ ইবনে আলী যাহেরী ( রঃ ) এবং তাঁর সহচরগণ ঐদিকেই গেছেন। রাফেঈ ( রঃ ) হযরত ইমাম মালিক ( রঃ )-এরও এ উক্তির কথাই বলেছেন। ইবনে হাযামও ( রঃ ) এটাই গ্রহণ করেছেন। আমাদের শায়েখ হাফিয আবি আব্দিল্লাহ যাহবী ( রঃ ) বলেন, “ আমি এ কথাটি শায়েখ তাকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া ( রঃ )-এর নিকট পেশ করলে তিনি ওটাকে অত্যন্ত কঠিন অনুভব করেন এবং নীরবতা অবলম্বন করেন । ( আরবী ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে ঘর। যেমন হযরত আবু উবাইদাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। তবে নিজের অধিকারে যে দাসী রয়েছে এবং তার সাথে তার মেয়েও রয়েছে, তার সম্বন্ধে হযরত উমার ( রাঃ ) জিজ্ঞাসিত হন যে, একের পর অন্য বৈধ হবে কি-না?' তখন হযরত উমার ( রাঃ ) বলেন, এক আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, হালাল এবং অন্য আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে যে হারাম। সুতরাং আমি ওটা কখনও করবো না। শায়েখ আবু উমার ইবনে আব্দিল্লাহ ( রঃ ) বলেন, কারও জন্যে এটা হালাল নয় যে, কোন স্ত্রীলোকের উপর অধিকার লাভ করার কারণে তার সঙ্গে সঙ্গম করবে অতঃপর একই অধিকারের উপর ভিত্তি করে তার মেয়ের সঙ্গেও সঙ্গম করবে এবং এ মাসআলায় আলেমদের মধ্যে কোন মতবিরোধ নেই। কেননা আল্লাহ তা'আলা ওটাকে বিয়েতেও হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। আলেমদের মতে কারও উপরে অধিকার লাভ বিয়েরই অনুসারী। কিন্তু হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে ও হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে যে বর্ণনা দেয়া হয় তার উপর ফতওয়া প্রদানকারী ইমামগণ এবং তাদের অনুসারী কেউই নেই। হযরত কাতাদাহ ( রঃ ) বলেন যে, স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যা মেয়ে এবং মেয়ের মেয়ে এভাবে যতই নিম্নস্তরে যাক না কেন, সবাই হারাম। হযরত কাতাদা ( রঃ )-এর বর্ণনা মতে হযরত আবুল আলিয়া ( রঃ ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী )-এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘নারীদেরকে বিয়ে করা।' হযরত আতা’ ( রঃ ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘তাদের কাপড় সরিয়ে দেয়া, স্পর্শ করা এবং উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে তাদের পদদ্বয়ের মধ্যস্থলে বসে পড়া।' ইবনে জুরাইজ জিজ্ঞেস করেন, 'যদি এ কাজ স্ত্রীর বাড়ীতেই হয়? হযরত আতা’ উত্তরে বলেন, এখানকার ওখানকার দুটোর হুকুম একই। এরূপ যদি হয়ে যায় তবে তার মেয়ে তার স্বামীর উপর হারাম হয়ে যাবে।'ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, শুধু নির্জনবাসের দ্বারাই তার মেয়ের অবৈধতা সাব্যস্ত হয় না। যদি সঙ্গম করা, স্পর্শ করা এবং কামপ্রবৃত্তির সাথে।তার কোন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করার পূর্বেই তালাক দিয়ে দেয় তবে সর্বসম্মতিক্রমে একথা সাব্যস্ত হয় যে, স্ত্রীর মেয়ে তার উপর হারাম হবে না।এরপর বলা হচ্ছে-‘তোমাদের পুত্রবধুগণও তোমাদের উপর হারাম, যারা তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের পত্নী’। অর্থাৎ পালক পুত্রের স্ত্রী হারাম নয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ যখন যায়েদ তার নিকট হতে স্বীয় প্রয়োজন পুরো করে নেয়, তখন আমি তাকে তোমার বিবাহে দিয়ে দেই, যেন মুমিনদের উপর তাদের পালিত পুত্রদের ব্যাপারে কোন সংকীর্ণতা না থাকে।' ( ৩৩:৩৭ )হযরত আতা’ ( রঃ ) বলেন, আমরা শুনতাম যে যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত যায়েদ ( রাঃ )-এর স্ত্রী হযরত যায়নাব ( রাঃ )-কে বিয়ে করেন তখন মক্কার কুরাইশরা তার সমালোচনা শুরু করে দেয়। তখন ( আরবী ) ( ৩৩:৪ ) এ আয়াতটি এবং ( আরবী ) ( ৩৩:৪০ )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। আয়াতগুলোর অর্থ হচ্ছেঃ “ তোমাদের পালক পুত্রগণকে তিনি তোমাদের পুত্র করেননি । মুহাম্মাদ ( সঃ ) তোমাদের পুরুষদের কারও পিতা নয়।হযরত হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ( রঃ ) বলেন যে, এ আয়াতগুলো অস্পষ্ট, যেমন তোমাদের পুত্রদের স্ত্রীগণ, তোমাদের শাশুড়ীগণ। হযরত তাউস ( রঃ ), হযরত ইবরাহীম ( রঃ ), হযরত যুহরী ( রঃ ) এবং হযরত মাকহুল ( রঃ ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে। আমি বলি অস্পষ্টের ভাবার্থ হচ্ছে সাধারণ। অর্থাৎ যাদের সাথে সঙ্গম করা হয়েছে এবং যাদের সাথে সঙ্গম করা হয়নি সবাই এর মধ্যে জড়িত। শুধু বিয়ে করার পরেই অবৈধতা সাব্যস্ত হয়ে যায়, সঙ্গম হোক আর নাই হোক। এ মাসআলার উপর সবাই একমত যে, কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আয়াতে তো শুধু ঔরসজাত পুত্রের উল্লেখ আছে, তাহলে দুধ পুত্রের স্ত্রী অবৈধ হওয়া কিরূপে সাব্যস্ত হবে। তবে এর উত্তর হবে এই যে, ওর অবৈধতা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিম্নের হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে। তিনি বলেনঃ স্তন্যপান দ্বারা ওটাই হারাম হয় যা হারাম হয় বংশের দ্বারা। জমহুরের মাযহাব এটাই যে, দুধ পুত্রের স্ত্রীও হারাম। কোন কোন লোক তো এর উপরই ইজমা নকল করেছেন।অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন-“ বিবাহে দু বোনকে একত্রিত করাও তোমাদের জন্যে হারাম । অধীনস্থ দাসীদের উপরও এ হুকুম প্রযোজ্য যে, একই সময় দু’ বোনের সাথে সঙ্গম করা হারাম। কিন্তু অজ্ঞতার যুগে যা হয়ে গেছে তা আমি ক্ষমা করে দিলাম। সুতরাং জানা গেল যে, আগামীতে কোন সময় এ কাজ কারও জন্যে বৈধ নয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ প্রথম মৃত্যু ছাড়া তথায় তারা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না। ( ৪৪ঃ৫৬ ) তাহলে জানা যাচ্ছে যে, আগামীতে আর মৃত্যুর আগমন ঘটবে না।সাহাবা, তাবেঈন, ঈমানগণ এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমদের ইজমা আছে যে, একই সাথে দু বোনকে বিয়ে করা হারাম। যে ব্যক্তি মুসলমান হবে এবং তার বিয়েতে দু’বোন থাকবে, তাকে এ অধিকার দেয়া হবে যে, সে যে কোন একজনকে রাখবে অপরজনকে তালাক দেবে। আর এটা তাকে করতেই হবে। হযরত যহ্হাক ইবনে ফীরোয ( রাঃ ) বলেন, আমি যখন মুসলমান হই। তখন আমার বিয়েতে দু' স্ত্রী ছিল যারা পরস্পর ভগ্নী ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন একজনকে তালাক দিয়ে দেই। ( মুসনাদ-ই-আহমাদ ) সুনান-ই-ইবনে মাজা, সুনান-ই-আবি দাউদ ও জামেউত্ তিরমিযীর মধ্যে এ হাদীসটি রয়েছে। জামেউত্ তিরমিযীর মধ্যে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘এ দু'জনের মধ্যে যাকে ইচ্ছে রাখ অপরজনকে তালাক দাও। ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এ হাদসিটি হাসান বলেছেন। সুনান-ই-ইবনে মাজার মধ্যে আবু খাররাশের এরূপ ঘটনাও বর্ণিত আছে। সম্ভবতঃ যহ্হাক ইবনে ফীররাযেরই কুনইয়াত আবু খাররাশ হবে এবং ঘটনাটি একই হবে। আবার এর বিপরীত হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। হযরত দায়লামী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আরয করেন, “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার বিবাহে দু’বোন রয়েছে । তিনি বলেনঃ “ তাদের মধ্যে যাকে চাও একজনকে তালাক দিয়ে দাও । ( তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই )সুতরাং দায়লামী অর্থে হযরত যহ্হাক ইবনে ফীরোযকেই বুঝানো হয়েছে। তিনি ইয়ামনের ঐ নেতৃবর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা অভিশপ্ত আসওয়াদ আনসী মুতানাব্বীকে হত্যা করেছিলেন। পরস্পর দু’ বোন এ রূপ দু’জন দাসীকে একই সাথে একত্রিত করে তাদের সাথে সঙ্গম করাও হারাম। এর দলীল হচ্ছে এ আয়াতটির সাধারণতা, যার মধ্যে স্ত্রী ও দাসী উভয়ই জড়িত রয়েছে।হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি এটাকে মকরূহ বলেন। প্রশ্নকারী বলে, কুরআন কারীমে যে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ ‘কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী।'( ২৩:৭ ) তখন হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেন, “ তোমার উটও তো তোমার দক্ষিণ হস্তের অধিকারে রয়েছে ।' জমহুরের প্রসিদ্ধ উক্তিও এটাই এবং ইমাম চুতষ্টয় প্রভৃতি মনীষীও এ কথাই বলেন। তবে পূর্ববর্তী কোন কোন মহামানব এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। হযরত উসমান ইবনে আফফান ( রাঃ )-কে এ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একটি আয়াত এটাকে হালাল করছে এবং অপরটি হারাম করছে। আমি তো এটা হতে নিষেধ করি না। প্রশ্নকারী তথা হতে বের হয়। পথে একজন সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ হলে তাঁকেও এ প্রশ্ন করে। তিনি বলেন, 'আমার অধিকার থাকলে এরূপ কার্যকারীকে আমি শিক্ষামূলক শাস্তি প্রদান করতাম।ইমাম মালিক ( রঃ ) বলেন, “ আমার ধারণা এ উক্তিকারী খুব সম্ভব হযরত আলী ( রাঃ ) ছিলেন । হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম ( রাঃ ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে। ইসতিকার-ই-ইবনে আবদিল বারর’ গ্রন্থে রয়েছে যে, এ ঘটনার বর্ণনাকারী কাবীসা ইবনে যাভীব হযরত আলী ( রাঃ )-এর নাম নেয়নি, কারণ সে আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের প্রিয়পাত্র ছিল এবং তাদের উপর তার নাম খুব কঠিন ঠেকতো।হযরত আইয়াস ইবনে আমের বলেন, আমি হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করি, আমার অধিকারে দু'টি দাসী রয়েছে যারা পরস্পর দু' বোন। একজনের সাথে আমি সম্পর্ক স্থাপন করেছি এবং আমার ঔরসে তার সন্তানাদিও হয়েছে। এখন আমার মনে চাচ্ছে যে, তার বোনটি যে আমার দাসী হিসেবে রয়েছে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করি। তাহলে বলুন শরীয়তে এ ব্যাপারে কি হুকুম রয়েছে?তিনি বলেন, প্রথম দাসীটিকে আযাদ করে দিয়ে তার বোনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পার।' তিনি বলেন, লোকে তো বলে যে, আমি তার বিয়ে করিয়ে দিয়ে তার বোনের সঙ্গে মিলিত হতে পারি।' হযরত আলী ( রাঃ ) তখন বলেন, ‘দেখ এ অবস্থাতেও ক্ষতি রয়েছে। তা হচ্ছে এই যে, যদি তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় বা মারা যায় তবে সে পুনরায় তোমার নিকট ফিরে আসবে। সুতরাং তাকে আযাদ করে দেয়ার মধ্যেই নিরাপত্তা রয়েছে।'অতঃপর তিনি আমার হাত ধারণ করে বলেন, জেনে রেখো যে, আযাদ ও দাসী স্ত্রীলোকদের হুকুম বৈধতা ও অবৈধতার দিক দিয়ে একই। হ্যাঁ, তবে সংখ্যায় পার্থক্য রয়েছে। আযাদ মহিলাদেরকে চারটের বেশী একত্রিত করা যায় না। কিন্তু দাসীদের সংখ্যার কোন শর্ত নেই।' দুগ্ধ পানের সম্পর্কের ফলে ঐ সমুদয় স্ত্রীলোক হারাম হয়ে যায়, বংশীয় সম্পর্কের কারণে যেগুলো হারাম হয়ে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে যে, হযরত উসমান ( রাঃ )-এর মতই হযরত আলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। যেমন তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, হযরত আলী ( রাঃ ) বলেছেন, পরস্পর বোন হয় এরূপ দু'টি দাসীকে একই সময়ে একত্রিত করে তাদের সাথে সঙ্গম করার বৈধতা এক আয়াত দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে এবং অপর আয়াত দ্বারা অবৈধতা সাব্যস্ত হচ্ছে।'হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন, দাসীদের সাথে আমার আত্মীয়তার কারণে তারা অন্যান্য গুটিকয়েক দাসীকে আমার উপর হারাম করে থাকে। কিন্তু তাদের পরস্পরের আত্মীয়তার কারণে হারাম করে না। অজ্ঞতা যুগের লোকেরাও। ঐ সমুদয় নারীকে হারাম বলে জানতো যাদেরকে তোমরা হারাম মনে করে থাক। কিন্তু তারা শুধু পিতার স্ত্রীকে অর্থাৎ বিমাতাকে এবং একই সাথে বিবাহে দু' বোনকে একত্রিত করাকে হারাম মনে করতো না। কিন্তু ইসলাম এসে এ দু’টোকেও হারাম করে দেয়। এ জন্যেই এ দু'টোর অবৈধতার বর্ণনার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, যে বিয়ে হয়েছে তা হয়েছেই। হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেন, “ যে আযাদ স্ত্রীলোকগুলো হারাম ঐ দাসীগুলোও হারাম । হ্যাঁ, তবে সংখ্যায় এক নয়। অর্থাৎ আযাদ মহিলাদেরকে চারটের বেশী একত্রিত করা যায় না। কিন্তু দাসীদের জন্যে কোন সীমা নেই।' হযরত শা'বীও ( রঃ ) এটাই বলেন।হযরত আবু আমর ( রঃ ) বলেন, হযরত উসমান ( রাঃ ) এ ব্যাপারে যা বলেছেন, পূর্ববর্তী মনীষীদের একটি দলও এটাই বলেছেন, যাদের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) রয়েছেন । কিন্তু প্রথমতঃ এর নকলে তো স্বয়ং ঐ মনীষীদের মধ্যেই বহু কিছু মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।দ্বিতীয়তঃ এ উক্তির দিকে বিবেকসম্পন্ন আলেমগণ মোটেই মনোযোগ দেননি এবং তা গ্রহণও করেননি। হেজায, ইরাক, সিরিয়া এমনকি পূর্ব পশ্চিমের সমস্ত ধর্মশাস্ত্রবিদ ওর বিপক্ষে রয়েছেন।' মুষ্টিমেয় কয়েকজন শুধু শব্দের প্রতি লক্ষ্য করেই এবং কোন চিন্তা ও বুদ্ধি বিবেচনা না করেই তাদের হতে পৃথক রয়েছেন ও ইজমার বিপরীত মত পোষণ করেছেন। যারা পূর্ণ জ্ঞানের ও বিবেচনা শক্তির অধিকারী তাঁরা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, দু'বোনকে যেমন বিবাহে একত্রিত করা যায় না, তদ্রপ ঐ দাসীদের সাথেও একই সময় সঙ্গম করতে পারে না, যারা পরস্পর বোন। অনুরূপভাবে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে যে, এ আয়াতে মাতা, কন্যা, বোন ইত্যাদিকে হারাম করা হয়েছে। এদের সাথে যেমন বিয়ে হারাম, তদ্রুপ যদি তারা দাসী হয়ে অধীন হয়ে যায়, তবে তাদের সাথেও মিলন হারাম।মোটকথা, বিয়ের ও দাসীদের উপর অধিকার লাভের পরে, এ দু’ অবস্থাতেই এরা সবাই সমান। না তাদেরকে বিয়ে করে তাদের সাথে মিলন বৈধ, না তাদের উপর অধিকার লাভের পর তাদের সাথে মিলন বৈধ। অনুরূপভাবে এ হুকুমই হচ্ছে একই সাথে দু' বোনকে একত্রিত করণ এবং শাশুড়ীর ও স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত কন্যার একত্রিত করণ। স্বয়ং তাদের জমহূরেরও এটাই মাযহাব। আর এটাই হচ্ছে ঐ দলীল যা ঐ গুটিকয়েক বিপক্ষীর উপর পূর্ণ সনদ ও পরিপূর্ণ হুজ্জত।মোটকথা একই সাথে দু' বোনকে বিয়েতে একত্রিত করাও হারাম এবং দু’ বোনকে দাসীরূপে রেখে তাদের সাথে মিলিত হওয়াও হারাম।

সূরা নিসা আয়াত 23 সূরা

حرمت عليكم أمهاتكم وبناتكم وأخواتكم وعماتكم وخالاتكم وبنات الأخ وبنات الأخت وأمهاتكم اللاتي أرضعنكم وأخواتكم من الرضاعة وأمهات نسائكم وربائبكم اللاتي في حجوركم من نسائكم اللاتي دخلتم بهن فإن لم تكونوا دخلتم بهن فلا جناح عليكم وحلائل أبنائكم الذين من أصلابكم وأن تجمعوا بين الأختين إلا ما قد سلف إن الله كان غفورا رحيما

سورة: النساء - آية: ( 23 )  - جزء: ( 4 )  -  صفحة: ( 81 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং
  2. তাছাড়া তারা যখন বলতে আরম্ভ করে যে, ইয়া আল্লাহ, এই যদি তোমার পক্ষ থেকে (আগত)
  3. তারা বিশ্বাস স্থাপন করল অতঃপর আমি তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবনোপভোগ করতে দিলাম।
  4. অতঃপর উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা জাহান্নামে যাবে এবং চিরকাল তথায় বসবাস করবে। এটাই
  5. আল্লাহ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন।
  6. সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নূহ
  7. প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম।
  8. তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন? যদি তিনি ইচ্ছা করেন,
  9. আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে
  10. অভিযোগের পথ তো তাদের ব্যাপারে রয়েছে, যারা তোমার নিকট অব্যাহতি কামনা করে অথচ তারা সম্পদশালী।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:

সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত নিসা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত নিসা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত নিসা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত নিসা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত নিসা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত নিসা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত নিসা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত নিসা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত নিসা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত নিসা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত নিসা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত নিসা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত নিসা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত নিসা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত নিসা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত নিসা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত নিসা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত নিসা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত নিসা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Saturday, May 18, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب