কোরান সূরা রা'দ আয়াত 25 তাফসীর
﴿وَالَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ﴾
[ الرعد: 25]
এবং যারা আল্লাহর অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে, সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওরা ঐ সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। [সূরা রা'দ: 25]
Surah Ar-Rad in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Raad ayat 25
আর যারা আল্লাহ্র সাথের অংগীকার ভঙ্গ করে সেটির সুদৃঢ়ীকরণের পরে, আর ছিন্ন করে যা অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন, আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, এরাই -- এদের জন্যেই রয়েছে ধিক্কার, আর এদেরই জন্যে আছে নিকৃষ্ট আবাস।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২৫. যারা আল্লাহর সাথে শক্ত অঙ্গীকারের পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা যে আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখার আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে তারা হলো দুর্ভাগা; আল্লাহর দয়া থেকে অনেক দূরে। বস্তুতঃ তারা আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণতি তথা জাহান্নাম।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ´ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস। [১] [১] এখানে সৎকর্মশীলদের সাথে অসৎকর্মশীলদের পরিণাম বর্ণনা করেছেন, যেন মানুষ এই পরিণাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ্র সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যই রয়েছে লা’নত এবং তাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের মন্দ আবাস [ ১ ]। [ ১ ] এ আয়াতে সে সমস্ত অপরিণামদর্শী লোকদের আলোচনা করা হচ্ছে, যারা পূর্ববর্তী গুণগুলোর বিপরীত কাজ করে। তাদের জন্য কি শাস্তি রয়েছে তাও বর্ণনা করা হয়েছে। [ ফাতহুল কাদীর ] এ সমস্ত অবাধ্য বান্দাদের স্বভাব হলো যে, তারা আল্লাহ্ তা’আলার অঙ্গীকারকে পাকাপোক্ত করার পর তা ভংগ করে থাকে। হাদীসে অঙ্গীকার ভঙ্গ করাকে মুনাফিকের একটি আলামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। [ ইবন কাসীর ] অবাধ্য বান্দাদের দ্বিতীয় স্বভাব এরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, তারা ঐসব সম্পর্ক ছিন্ন করে, যেগুলো বজায় রাখতে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মীয়তার সম্পর্কও আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া সমস্ত নবী-রাসূলদের উপর ঈমান আনাও এর অন্তর্ভুক্ত। [ কুরতুবী ] তৃতীয় স্বভাব এই যে, তারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে। তারা কুফরি ও গোনাহ করে যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে। [ কুরতুবী ] যারা আল্লাহ্ তা’আলা ও মানুষের অঙ্গীকারের পরওয়া করে না এবং কারো অধিকার ও সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য করে না, তাদের কর্মকাণ্ড যে অপরাপর লোকদের ক্ষতি ও কষ্টের কারণ হবে, তা বলাই বাহুল্য। ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি-কাটাকাটির বাজার গরম হবে। এটা এক বিরাট ফাসাদ। আবুল আলীয়া রাহেমাহুল্লাহ বলেন, মুনাফিক শ্রেণীর লোক যখন মানুষের উপর কর্তৃত্ব করে তখন ছয়টি খারাপ অভ্যাস ও কর্ম করে থাকেঃ কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তার বিপরীত কাজ করে, তাদের কাছে আমানত রাখা হলে তা খেয়ানত করে, আল্লাহ্র নেয়া অঙ্গীকারকে ভঙ্গ করে, আল্লাহ্ যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা কর্তন করে এবং যমীনের মধ্যে বিপর্যয় ও ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করে। আর যখন তারা কর্তৃত্বে থাকে না বা অন্যরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করে তখন তারা তিনটি কাজ করেঃ কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তার বিপরীত করে এবং আমানতের খেয়ানত করে। [ ইবন কাসীর ] হাদীসেও তাদের কর্মকাণ্ডের কথা বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি, যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে, যখন ওয়াদা করবে তার বিপরীত করবে এবং যখন আমানত রাখা হবে তখন তার খেয়ানত করবে’৷ [ বুখারীঃ ৩৩, মুসলিমঃ ৫৯ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যখন অঙ্গীকার করবে তা ভঙ্গ করবে, যখন ঝগড়া করবে গালি-গালাজ করবে’। [ বুখারীঃ ৩৪, মুসলিমঃ ৫৮ ] অবাধ্য বান্দাদের এই সমস্ত স্বভাব বর্ণনা করার পর তাদের শাস্তি উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য লা’নত ও মন্দ আবাস রয়েছে। লা’নতের অর্থ আল্লাহ্র রহমত থেকে দূরে থাকা এবং বঞ্ছিত হওয়া। [ কুরতুবী ] বলাবাহুল্য, আল্লাহ্র রহমত থেকে দূরে থাকাই সর্বাপেক্ষা বড় আযাব এবং সব বিপদের বড় বিপদ। পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে যেমন অনুগত বান্দাদের প্রতিদান উল্লেখ করে বলা হয়েছিল যে, তাদের স্থান হবে জান্নাতে, ফিরিশতারা তাদেরকে সালাম করে বলবে যে, এসব নেয়ামত তোমাদের সবর ও আনুগত্যের ফলশ্রুতি, তেমনিভাবে এ আয়াতে অবাধ্যদের অশুভ পরিণতি বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, তাদের উপর আল্লাহ্র লা’নত অর্থাৎ তারা আল্লাহ্র রহমত থেকে দূরে এবং তাদের জন্য জাহান্নামের আবাস অবধারিত। এতে বুঝা যায় যে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং আত্মীয় ও স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা অভিসম্পাত ও জাহান্নামের কারণ।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
মুমিনমু’মিনদের গুণাবলী উপরে বর্ণনা করার পর এখানে ঐ হতভাগ্যদের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে, যারা মুমিনমু’মিনদের বিপরীত স্বভাব বিশিষ্ট। তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদার প্রতি না কোন ভ্রুক্ষেপ করতো, না তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখতো, না আল্লাহ তাআ’লার আদেশ নিষেধের প্রতি কোন খেয়াল রাখতো। এরা হচ্ছে অভিশপ্ত দল এবং এদের পরিণাম বড়ই মন্দ। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “ মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি । যখন তারা কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন কোন ওয়াদা করে তখন খেলাফ করে এবং যখন তাদের কাছে কোন আমানত রাখা হয় তখন তারা খেয়ানত করে।” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছেঃ “ যখন কোন চুক্তি করে তখন তা ভঙ্গ করে, যখন ঝগড়া করে তখন কটু ও অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ করে ।” এই শ্রেণীর লোক আল্লাহ তাআ’লার করুণা লাভ করবে না। এবং এদের পরিণাম হবে খুবই মন্দ। এরা হচ্ছে জাহান্নামী দল।( আরবি ) এই আয়াতের ব্যাপারে আবুল আ’লিয়া ( রঃ ) বলেন যে, মুনাফিকদের মধ্যে ছ'টি অভ্যাস প্রকাশ পায় যখন তারা বিজয়ী হয়। অভ্যাসগুলি হচ্ছেঃ মিথ্যা কথা বলা,ওয়াদা খেলাফ করা, আমানতের খিয়ানত করা, আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করা, আল্লাহ তাআ’লা যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন তা অক্ষুন্ন না রাখা এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিশৃংখলা ও অশান্তি ছড়িয়ে দেয়া। আর যখন তারা বিজিত হয় তখন তাদের তিনটি স্বভাব প্রকাশ পায়ঃ যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।
সূরা রা'দ আয়াত 25 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যদ্দ্বারা তোমার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে তোমার
- তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্ত করেছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি।
- আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।
- মুমিনগণ, যখন তোমাদেরকে বলা হয়ঃ মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে
- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নভোমন্ডলে যা আছে এবং ভূমন্ডলে যা আছে সব কিছুর মালিক এবং
- এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ তা’আলার এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
- তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত
- অতএব, এটা তো কেবল এক মহা-নাদ,
- তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার
- যা মানুষকে ঘিরে ফেলবে। এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা রা'দ ডাউনলোড করুন:
সূরা Raad mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Raad শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers