কোরান সূরা জিন আয়াত 28 তাফসীর
﴿لِّيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَىٰ كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا﴾
[ الجن: 28]
যাতে আল্লাহ তা’আলা জেনে নেন যে, রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কি না। রসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন। [সূরা জিন: 28]
Surah Al-Jinn in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Jinn ayat 28
যেন তিনি জানতে পারেন যে তাঁরা তাঁদের প্রভুর বাণীসমূহ পৌঁছে দিয়েছেন কি না, আর তিনি ঘিরে আছেন তাঁদের কাছের সব- কিছু, আর তিনি সব-কিছুর হিসাব রাখেন গোনে-গোনে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২৮. যাতে করে রাসূল জানতে পারেন যে, তাঁর পূর্বে যতো রাসূল ছিলেন তাঁরা নিজেদের রবের বার্তাসমূহ পৌঁছে দিয়েছেন যা পৌঁছে দেয়ার জন্য তাঁরা আদিষ্ট হোন। কেননা, আল্লাহ সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং আল্লাহ রাসূল ও ফিরিশতাদের নিকট থাকা সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। ফলে তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আর তিনি সর্ব বিষয়কে গণনা করে রেখেছেন। ফলে তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যাতে তিনি জেনে নেন, তারা তাদের প্রতিপালকের বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছে;[১] আর তাদের নিকট[২] যা আছে, তা তাঁর জ্ঞানায়ত্ত এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের সংখ্যা গুনে রেখেছেন। [৩] [১] لِيَعْلَمَ ( যাতে তিনি বা সে--- ) এর সর্বনাম কার জন্য? কারো নিকট তা রসূল ( সাঃ )-এর জন্য। অর্থাৎ, যাতে সে জেনে যায় যে, তার পূর্বের নবীরাও আল্লাহর পয়গাম ঐভাবেই পৌঁছিয়েছে, যেভাবে সে পৌঁছিয়েছে। অথবা দায়িত্বশীল ফিরিশতারা তাদের প্রতিপালকের পয়গাম পয়গম্বরের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আবার কারো নিকট সর্বনাম মহান আল্লাহর জন্য ব্যবহার হয়েছে। আর তখন এর অর্থ হবে, মহান আল্লাহ ফিরিশতাদের মাধ্যমে তাঁর নবীদের হিফাযত করেন, যাতে তারা নবুঅতের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। অনুরূপ নবীদের প্রতি কৃত অহীর হিফাযতও তিনি করেন, যাতে তিনি জেনে যান যে, তাঁর নবীরা তাদের প্রতিপালকের পয়গামগুলো ঠিকমত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে অথবা ফিরিশতারা পয়গম্বরদের কাছে আল্লাহর অহী পৌঁছে দিয়েছে। মহান আল্লাহ যদিও প্রতিটি বিষয়ে পূর্ব থেকেই জ্ঞাত থাকেন, তবুও এই ধরনের স্থানগুলোতে তাঁর জানার অর্থ হল, বিষয় সংঘটিত হওয়ার বাস্তবরূপ দর্শন। যেমন, {لِنَعْلَمَ مَنْ يَتَّبِعُ الرَّسُولَ} ( যাতে জানতে পারি যে, কে রসূলের অনুসরণ করে---। ) ( বাক্বারাহঃ ১৪৩ ) {وَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيَعْلَمَنَّ المُنَافِقِينَ} (আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা বিশ্বাসী এবং কারা মুনাফিক ।) ( আনকাবূতঃ ১১ ) ইত্যাদি আয়াতগুলোতে এসেছে। ( ইবনে কাসীর ) [২] ফিরিশতাদের নিকট অথবা পয়গম্বরদের নিকট। [৩] কেননা, তিনিই হলেন অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞাতা। যা হয়ে গেছে এবং যা ভবিষ্যতে হবে, সব কিছুকে তিনি গণনা করে রেখেছেন। অর্থাৎ, সব কিছুই তাঁর জ্ঞানায়ত্ত রয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
যাতে তিনি প্রকাশ করেন যে, অবশ্যই তারা তাদের রবের রিসালাত পৌছে দিয়েছেন [ ১ ]। আর তাদের কাছে যা আছে তা তিনি জ্ঞানে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি প্রতিটি বস্তু গণনা করে হিসেব রেখেছেন [ ২ ] । [ ১ ] এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, রাসূল নিশ্চিতভাবে জানবেন যে, ফেরেশতারা তাঁর কাছে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীসমূহ ঠিক ঠিক পৌঁছিয়ে দিয়েছে। দুই, আল্লাহ্ তা‘আলা জানবেন যে, রাসূলগণ তাঁদের রবের বাণীসমূহ তাঁর বান্দাদের কাছে ঠিকমত পৌছিয়ে দিয়েছেন। [ ইবন কাসীর ] আয়াতটির শব্দমালা সবগুলো অর্থেরই ধারক। [ ২ ] অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর পরিসংখ্যান আল্লাহ্ তা‘আলারই গোচরীভুত। তিনি প্রত্যেকটি বস্তু বিস্তারিতভাবে জানেন, আর সব কিছুই তিনি হিসেব করে রেখেছেন, কোন কিছুই তার অজানা নয়। [ মুয়াসসার, কুরতুবী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
২৫-২৮ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী ( সঃ )! তুমি জনগণকে বলে দাওঃ কিয়ামত কখন হবে এ জ্ঞান আমার নেই। এমন কি ওর সময় নিকটবর্তী কি দূরবর্তী এটাও আমার জানা নেই। অধিকাংশ মূখ ও অজ্ঞ লোকের মধ্যে যে এটা প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যমীনের ভিতরের জিনিসেরও খবর রাখেন, এটা যে সম্পূর্ণ ভুল কথা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো এই আয়াতে কারীমাটি। এই রিওয়াইয়াতের কোন মূল ভিত্তিই নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা। আমরা এটা কোন কিতাবে পাইনি। হ্যাঁ, এর বিপরীতটা পরিষ্কারভাবে সাব্যস্ত আছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো তখন তিনি তার না জানার কথা প্রকাশ করতেন। হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) গ্রাম্য লোকের রূপ ধরে তার নিকট এসে তাঁকে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি তাঁকে পরিষ্কারভাবে উত্তর দিয়েছিলেন যে, এর জ্ঞান যেমন জিজ্ঞেসকারীর নেই তেমনই জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিরও নেই।অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, একজন গ্রাম্য লোক উচ্চস্বরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে প্রশ্ন করেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! কিয়ামত কখন হবে?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “কিয়ামত তো অবশ্যই হবে, এখন তুমি এর জন্যে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তা বল দেখি?” লোকটি বললোঃ “আমার কাছে রোযা নামাযের আধিক্য নেই, তবে এটা সত্য যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-কে ভালবাসী ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন তাকে বললেনঃ “ তুমি যাকে ভালবাস তার সাথেই তুমি থাকবে ।" হযরত আনাস ( রাঃ ) বলেন যে, মুসলমানরা এ হাদীস শুনে যতো বেশী খুশী হয়েছিল অন্য হাদীস শুনে ততো বেশী খুশী হয়নি। এ হাদীস দ্বারাও জানা গেল যে, কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর জানা ছিল না।মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এই উম্মতকে আল্লাহ অর্ধদিন পর্যন্ত অবকাশ দিবেন ।" অন্য একটি রিওয়াইয়াতে এটুকু বেশী রয়েছে যে, হযরত সা'দ ( রাঃ )-কে প্রশ্ন করা হয়ঃ “ অর্ধদিন দ্বারা উদ্দেশ্য কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পাঁচশ বছর ।এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ আল্লাহ অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না, তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। যেমন আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ যা তিনি ইচ্ছা করেন তদ্ব্যতীত তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত্ব করতে পারে না ।”( ২:২৫৫ ) মানুষের মধ্য থেকেই হোক বা দানবের মধ্য থেকেই হোক, যাকে আল্লাহ যেটুকু চান অবহিত করে থাকেন। আবার এর আরো বিশেষত্ব এই যে, তার হিফাজত এবং সাথে সাথে এই ইলমের প্রসারের জন্যে যা আল্লাহ তাকে দিয়েছেন, তার আশেপাশে সদা রক্ষক ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন।( আরবি ) বা ( আরবি ) সর্বনামটি কারো কারো মতে নবী ( সঃ )-এর দিকে ফিরেছে। অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর সামনে ও পিছনে চারজন ফেরেশতা থাকতেন, যাতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, তারা তাদের প্রতিপালকের পয়গাম সঠিকভাবে তার নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আবার কারো কারো মতে, এর ( আরবি ) টি আহলে শিরকের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ পালাক্রমে আগমনকারী ফেরেশতারা আল্লাহর নবী ( সঃ )-কে শয়তান হতে ও তাঁর অনিষ্ঠ হতে রক্ষা করেন, যাতে আহলে শিরক জানতে পারে যে, রাসূলগণ আল্লাহর রিসালাত আদায় করেছেন। অর্থাৎ রাসূলদেরকে অবিশ্বাসকারীরাও যেন তাদের রিসালাতকে জেনে নেয়। কিন্তু এতে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। ইয়াকূব ( রঃ )-এর কিরআত পেশের সাথে রয়েছে। অর্থাৎ জনগণ যেন জেনে নেয় যে, রাসূলগণ তাবলীগ করেছেন। আর সম্ভবতঃ ভাবার্থ এও হবে যে, যেন আল্লাহ জেনে নেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর ফেরেশতাদেরকে পাঠিয়ে তাঁর রাসূলদের হিফাযত করে থাকেন, যেন তারা রিসালাত আদায় করতে পারেন ও ওহীর হিফাজত করতে পারেন। আর যেন আল্লাহ তা'আলা জেনে নেন যে, তাঁরা রিসালাত আদায় করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তুমি এ যাবৎ যে কিবলা অনুসরণ করছিলে ওকে আমি এই উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যাতে জানতে পারি কে রাসূল ( সঃ )-এর অনুসরণ করে এবং কে ফিরে যায়?" ( ২:১৪৩ ) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন ঈমানদারদেরকে এবং মুনাফিকদেরকে ।”( ২৯:১১ ) এই ধরনের আরো আয়াতসমূহ রয়েছে। ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তো প্রথম হতেই জানেন, কিন্তু তা তিনি প্রকাশ করেও জেনে নেন। এই জন্যেই এখানে এর পরেই বলেন যে, তিনি সবকিছুরই বিস্তারিত হিসাব রাখেন।
সূরা জিন আয়াত 28 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তাদের কাছে থাকবে আনতনয়না সমবয়স্কা রমণীগণ।
- বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
- তারাই হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট মর্যাদা, ক্ষমা এবং সম্মানজনক রুযী।
- বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এটি তাদের কলুষের সাথে আরো কলুষ বৃদ্ধি করেছে এবং তারা
- আর বিস্মিত হয়ো না তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির দরুন। আল্লাহ তো এই চান যে,
- তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও
- যদি কাফেররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে
- আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে
- অতঃপর আমি তোমাদেরকে যমীনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর।
- সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন?
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা জিন ডাউনলোড করুন:
সূরা Jinn mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Jinn শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers