কোরান সূরা ফাত্হ আয়াত 29 তাফসীর
﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
[ الفتح: 29]
মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। [সূরা ফাত্হ: 29]
Surah Al-Fath in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Fath ayat 29
মুহাম্মদ আল্লাহ্র রসূল, আর যারা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তারা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে কোমলভাবাপন্ন, তুমি তাদের দেখতে পাবে তারা আল্লাহ্র কাছ থেকে করুণাভান্ডার ও সন্তষ্টি কামনা ক’রে রুকু করছে সিজদা করছে। তাদের পরিচায়ক হচ্ছে তাদের মুখমন্ডলের উপরে সিজদার ছাপের মধ্যে। এমনটাই তাদের উদাহরণ তওরাতে এবং তাদের উদাহরণ ইঞ্জিলেও, -- বপন করা শস্যবীজের মতো যা তার অঙ্কুর উদগত করে, তারপর তাকে শক্ত করে, তারপর তা পুষ্ট হয়, তারপর তা খাড়া হয় তার কান্ডের উপরে, -- বপনকারীদের আনন্দবর্ধন করে, তিনি যেন তাদের কারণে অবিশ্বাসীদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে আল্লাহ্ তাদের মধ্যের লোকজনকে ওয়াদা করেছেন পরিত্রাণ ও এক মহান প্রতিদান।
Tafsir Mokhtasar Bangla
২৯. মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) হলেন আল্লাহর রাসূল। তাঁর সাথীগণ বিদ্রোহী কাফিরদের মুকাবিলায় কঠোর। তবে তাঁরা পরস্পর দয়া, ভালোবাসা ও অনুরাগের বন্ধনে আবদ্ধ। হে দর্শক! তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে রুক‚কারী, সাজদাকারী। তাঁরা আল্লাহর নিকট কামনা করে যে, তিনি যেন তাঁদেরকে স্বীয় ক্ষমা ও সম্মানী প্রতিদান দ্বারা ধন্য করেন। আর যেন তিনি তাঁদের উপর সন্তুষ্ট হন। তাঁদের চেহারায় সাজদাহর চিহ্ন তথা হেদায়েত, ভারসাম্যতা ও নামাযের আলো পরিলক্ষিত হয়। তাঁদের এই পরিচয় পেশ করেছে মূসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত। আর ঈসা ( আলাইহিস-সালাম ) এর উপর অবতীর্ণ ইঞ্জীলে তাঁদের যে পরিচয় বিবৃত হয়েছে তা হলো এই যে, তাঁরা নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পূর্ণতায় এমন শস্যের ন্যায় যে তার কলি বের করে। অতঃপর তা শক্তিশালী হয়। অতঃপর সে তার স্বকীয়তার উপর দÐায়মান হয়। যার পরিপক্কতা ও সৌন্দর্য চাষীদেরকে আনন্দ দেয়। তার পরিপক্কতা, দৃঢ়তা ও পূর্ণতা দ্বারা আল্লাহ কাফিরদেরকে রাগান্বিত করেন। বস্তুতঃ এটি হলো আল্লাহর অঙ্গীকার যদ্বারা তিনি ঈমানদার ও পুণ্যবান সাহাবীদেরকে তাঁদের পাপ মার্জনার ব্যবস্থা করেছেন। ফলে তিনি তাঁদেরকে পাকড়াও করবেন না এবং তাঁদেরকে তিনি মহা পুরস্কার তথা জান্নাত প্রদান করবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল; আর তার সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত অবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতে দেখবে। তাদের মুখমন্ডলে সিজদার চিহ্ন থাকবে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপই এবং ইঞ্জীলেও।[১] তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা নির্গত করে কিশলয়,[২] অতঃপর তাকে শক্ত করে এবং তা পুষ্ট হয় ও দৃঢ়ভাবে কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে যায়; যা চাষীদেরকে মুগ্ধ করে।[৩] এভাবে ( আল্লাহ বিশ্বাসীদের সমৃদ্ধি দ্বারা ) অবিশ্বাসীদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন।[৪] ওদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের। [৫] [১] 'ইঞ্জীল' শব্দের উপর থামলে অর্থ হবে, তাঁদের এই গুণাবলী যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, তা তাওরাত ও ইঞ্জীলেও আলোচিত হয়েছে এবং পরের كَزَرْعٍ শব্দের পূর্বে هُمْ ঊহ্য থাকবে। কেউ কেউ فِي التَّوْرَاةِ এর উপর থামেন। অর্থাৎ, তাদের উল্লিখিত গুণগুলো তাওরাতে আছে। আর {ومَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيْلِ} কে كَزَرْعٍ এর সাথে মিলিয়ে পড়েন। অর্থাৎ, ইঞ্জীলে যার দৃষ্টান্ত, একটি চারাগাছ বা ক্ষেতের মত। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) [২] شَطْأَهُ হল চারা গাছের সেই প্রথম কিশলয় ( কচি পাতা ); যা মহান আল্লাহর কুদরতে বীজ থেকে নির্গত হয়। [৩] এখানে সাহাবায়ে কিরাম ( রাঃ )গণের দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। শুরুর দিকে তো তাঁরা স্বল্প ছিলেন। অতঃপর সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে শক্তিশালী হন। যেমন, ফসল প্রথমে তো দুর্বল হয়, তারপর দিনের দিন সবল হতে থাকে এবং এইভাবে একদিন শক্ত কান্ডের উপর দাঁড়িয়ে যায়। [৪] অথবা তারা অন্তর্জ্বালার শিকার হয়। অর্থাৎ, সাহাবায়ে কিরাম ( রাঃ )-দের দিনের দিন প্রভাব-প্রতিপত্তি, বল ও শক্তি বর্ধমান হওয়া কাফেরদের জন্য অন্তর্জবালার কারণ ছিল। কেননা, এতে ইসলামের পরিধি সম্প্রসারিত এবং কুফরীর পরিসীমা সংকীর্ণ হচ্ছিল। এই আয়াতের ভিত্তিতে কোন কোন ইমাম সাহাবা ( রাঃ )-দের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে কাফের গণ্য করেছেন। এ ছাড়াও এই ভ্রান্ত দলের অন্যান্য আকীদা-বিশ্বাসও তাদের কুফরীর কথা প্রমাণ করে। [৫] এই পূর্ণ আয়াতের প্রত্যেকটি অংশ সাহাবায়ে কিরামদের মাহাত্ম্য, ফযীলত, আখেরাতের ক্ষমা এবং তাঁদের মহান প্রতিদান লাভের কথাকে সুস্পষ্ট করে। এরপরও সাহাবাদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী মুসলিম হওয়ার দাবী করলে তাকে তার মুসলিম হওয়ার দাবীতে কিভাবে সত্যবাদী মেনে নেওয়া যেতে পারে?
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল ; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল ; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট ; এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জীলে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নিৰ্গত হয় কচিপাতা, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের [ ১ ]। [ ১ ] منهم অব্যয়টি এখানে সবার মতে বর্ণনামূলক। অর্থ এই যে, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন। এ থেকে প্রথমতঃ জানা গেল যে, সব সাহাবায়ে কেরামই ঈমান এনেছেন সৎকর্ম করতেন। দ্বিতীয়তঃ তাদের সবাইকে ক্ষমা ও মহাপুরষ্কারের ওয়াদা দেয়া হয়েছে। তিনি তাদের উপর সস্তুষ্টি হয়েই এ ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির এই ঘোষণা নিশ্চয়তা দেয় যে, তারা সবাই মৃত্যু পর্যন্ত ঈমান ও সৎকর্মের উপর কায়েম থাকবেন। কারণ, আল্লাহ আলীম ও খবীর তথা সর্বজ্ঞ। যদি কারও সম্পর্কে তার জানা থাকে যে, সে ঈমান থেকে কোনো না কোনো সময় মুখ ফিরিয়ে নেবে, তবে তার প্রতি আল্লাহ স্বীয় সস্তুষ্টি ঘোষণা করতে পারেন না। ইবন আবদুল বার রাহেমাহুল্লাহ বলেন, “ আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তার প্রতি এরপর কখনও অসন্তুষ্ট হন না ।’ এই আয়াতের ভিত্তিতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বাই’আতে-রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ জাহান্নামে যাবে না। [ আবু দাউদ: ৪০৩৪ ] [ আরো দেখুন- ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এই আয়াতের প্রথমে নবী ( সঃ )-এর বিশেষণ ও গুণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যে, তিনি আল্লাহর সত্য রাসূল। তারপর তার সাহাবীদের ( রাঃ ) গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তাঁরা কাফিরদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনকারী এবং মুসলমানদের প্রতি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশকারী। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা মুমিনদের সামনে নরম ও কাফিরদের সামনে কঠোর ।" ( ৫:৫৪ ) প্রত্যেক মুমিনেরই এরূপ স্বভাব হওয়া উচিত যে, সে মুমিনদের সামনে বিনয় প্রকাশ করবে এবং কাফিরদের সামনে হবে কঠোর। কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পার্শ্ববর্তী কাফিরদের সাথে জিহাদ কর, তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করে ।” ( ৯:১২৩ )রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ পারস্পরিক প্রেম প্রীতি ও নম্রতার ব্যাপারে মুমিনদের দৃষ্টান্ত একটি দেহের মত । যদি দেহের কোন অঙ্গে ব্যথা হয় তবে সারা দেহ ব্যথা অনুভব করে ও অস্থির থাকে। জ্বর হলে নিদ্রা হারিয়ে যায় ও জেগে থাকতে হয়।”রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আরো বলেনঃ “ এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে প্রাচীর বা দেয়াল স্বরূপ যার এক অংশ অপর অংশকে দৃঢ় ও শক্ত করে । তারপর তিনি এক হাতের অঙ্গুলীগুলো অপর হাতের আঙ্গুল গুলোর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেখিয়ে দেন। তারপর তাদের আরো বিশেষণ বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা ভাল কাজ খুব বেশী বেশী করেন, বিশেষ করে তাঁরা নিয়মিতভাবে নামায প্রতিষ্ঠিত করেন যা সমস্ত পূণ্য কাজ হতে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম।অতঃপর মহান আল্লাহ তাদের পুণ্য বৃদ্ধিকারী বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা পুণ্য কাজগুলো সম্পাদন করেন আন্তরিকতার সাথে এবং এর দ্বারা তারা কামনা করেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর সন্তুষ্টি। তাঁরা তাঁদের পুণ্য কাজের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলার নিকটই যাজ্ঞা করেন এবং তাহলো সুখময় জান্নাত। মহান আল্লাহ তাদেরকে এই জান্নাত দান করবেন এবং সাথে সাথে তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্টও থাকবেন। এটাই খুব বড় জিনিস। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, চেহারায় সিজদার চিহ্ন দ্বারা সচ্চরিত্র উদ্দেশ্য। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এটা হলো বিনয় ও নম্রতা।হযরত মানসূর ( রঃ ) হযরত মুজাহিদ ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ আমার তো ধারণা ছিল যে, এর দ্বারা নামাযের চিহ্ন উদ্দেশ্য যা মাথায় পড়ে থাকে ।" তখন হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এটা তো তাদের কপালেও পড়ে থাকে যদিও তাদের অন্তর ফিরাউনের চেয়েও শক্ত হয়। হযরত সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, নামায তাদের চেহারা সুন্দর করে দেয়। পূর্বযুগীয় কোন কোন গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি রাত্রে বেশী নামায পড়বে তার চেহারা সুন্দর হবে। সুনানে ইবনে মাজাহতে হযরত জাবির ( রাঃ )-এর রিওয়াইয়াতে এই বিষয়ের একটি মারফু হাদীসও রয়েছে। কিন্তু সঠিক কথা এই যে, এটা মাওকুফ হাদীস। কোন কোন মনীষীর উক্তি আছে যে, পুণ্যের কারণে অন্তরে নূর বা জ্যোতি সৃষ্টি হয়, চেহারায় ঔজ্জ্বল্য প্রকাশ পায়, জীবিকার পথ প্রশস্ত হয় এবং মানুষের অন্তরে প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি হয়।আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান ( রাঃ ) বলেন যে, যে ব্যক্তি স্বীয় আভ্যন্তরীণ অবস্থা সংশোধন করে এবং গোপনে ভাল কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডলে ও জিহ্বার ধারে তা প্রকাশ করে থাকেন। মোটকথা, অন্তরের দর্পণ হলো চেহারা। সুতরাং অন্তরে যা থাকে তা চেহারায় প্রকাশিত হয়। অতএব, মুমিন যখন তার অন্তর ঠিক করে নেয় এবং নিজের ভিতরকে সুন্দর করে তখন আল্লাহ তা'আলা তার বাহিরকেও জনগণের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেন।হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ ) বলেন যে, যে ব্যক্তি তার অভ্যন্তরকে ঠিক ও সংশোধন করে, আল্লাহ তা'আলা তার বাহিরকেও সুসজ্জিত করেন।হযরত জুনদুব ইবনে সুফিয়ান বাজালী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি যে বিষয় গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা তাকে ওরই চাদর পরিয়ে দেন । যদি সে ভাল বিষয় গোপন রাখে তবে ভাল এর চাদর এবং যদি মন্দ বিষয় গোপন রাখে তবে মন্দেরই চাদর পরিয়ে থাকেন। ( এ হাদীসটি আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আরযামী নামক এর একজন বর্ণনাকারী পরিত্যক্ত)হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমাদের কেউ যদি কোন কাজ কোন শক্ত পাথরের মধ্যে ঢুকেও করে যার মধ্যে কোন দরযাও নেই এবং কোন ছিদ্রও নেই । তবুও তা আল্লাহ তাআলা লোকের সামনে প্রকাশ করে দিবেন, তা ভালই হোক অথবা মন্দই হোক।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ভাল পন্থা, উত্তম চরিত্র এবং মধ্যম পথ অবলম্বন নবুওয়াতের পঁচিশটি অংশের মধ্যে একটি অংশ ।" ( এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )মোটকথা, সাহাবায়ে কিরাম ( রাঃ )-এর অন্তর ছিল কলুষ মুক্ত এবং আমলও ছিল উত্তম। সুতরাং যার দৃষ্টি তাদের পবিত্র চেহারার উপর পড়তো, সে তাদের পবিত্রতা অনুভব করতে পারতো এবং সে তাদের চাল-চলনে ও মধুর আচরণে খুশী হতো।হযরত মালিক ( রাঃ ) বলেন যে, যখন সাহাবীগণ সিরিয়া জয় করেন তখন তথাকার খৃষ্টানরা তাদের চেহারার দিকে তাকিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ওঠেঃ “ আল্লাহর কসম! এঁরা তো হযরত ঈসা ( আঃ )-এর হাওয়ারীগণ ( হযরত ঈসা (আঃ )-এর ১২জন শিষ্যকে হাওয়ারী বলা হয়) হতেও শ্রেষ্ঠ ও উত্তম!' প্রকৃতপক্ষে তাদের এ উক্তিটি চরম সত্য । পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে এই উম্মতের ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব বিদ্যমান রয়েছে। এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীবর্গ ( রাঃ )। এঁদের বর্ণনা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে এবং পূর্বের ঘটনাবলীর মধ্যে বিদ্যমান আছে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেন যে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এই রূপই এবং ইঞ্জীলেও। এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয়। অতঃপর এটা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্যে আনন্দদায়ক। অনুরূপভাবে সাহাবীগণও ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পৃষ্ঠপোষক এবং সাহায্যকারী ছিলেন। তাঁরা তাঁর সাথেই সম্পর্ক রাখতেন যেমন চারাগাছের সম্পর্ক থাকে ক্ষেত্রের সাথে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ এই ভাবে আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন ।হযরত ইমাম মালিক ( রঃ ) এই আয়াতটি রাফেযী সম্প্রদায়ের কুফরীর উপর দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কেননা, তারা সাহাবায়ে কিরামের ( রাঃ ) প্রতি শক্রতা পোষণ করে থাকে। আর যারা সাহাবীদের ( রাঃ ) প্রতি শত্রুতা পোষণ করে তারা কাফির। এই মাসআলায় উলামার একটি দলও ইমাম মালিক ( রঃ )-এর সাথে রয়েছেন। সাহাবায়ে কিরামের ফযীলত এবং তাদের পদস্খলন সম্পর্কে কটুক্তি করা হতে বিরত থাকা সম্পর্কীয় বহু হাদীস এসেছে। স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা তাঁদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের প্রতি নিজের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে এটাই কি যথেষ্ট নয়? এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ঈমানদার ও সকর্মশীলদের জন্যে আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি তাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তাদেরকে মহাপুরস্কার অর্থাৎ উত্তম জীবিকা, প্রচুর সওয়াব এবং বড় বিনিময় প্রদান করবেন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য ও অটল। এটা কখনো পরিবর্তন হবে না এবং এর ব্যতিক্রম হবে না। তাঁদের পদাংক অনুসরণকারীদের জন্যেও এ অঙ্গীকার সাব্যস্ত আছে। কিন্তু তাদের যে মর্যাদা ও ফযীলত রয়েছে তা এই উম্মতের অন্য কারো নেই। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদেরকে সন্তুষ্ট রাখুন। আর জান্নাতুল ফিরদাউসকে তাঁদের আশ্রয়স্থল ও আবাসস্থল করুন! আর তিনি করেছেনও তাই। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সাঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা আমার সাহাবীদেরকে ( রাঃ ) গালি দিয়ো না ও মন্দ বলো না । যাঁর অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড়ের সমানও স্বর্ণ খরচ করে ( অর্থাৎ দান করে ) তবুও তাঁদের কারো এক মুদ্দ ( প্রায় এক পোয়া ) এমনকি অর্ধ মুদ্দ পরিমাণ ( দানকৃত ) শস্যের সমান সওয়াবও সে লাভ করতে পারবে না ( অর্থাৎ তাদের কেউ এ পরিমাণ শস্য দান করে যে সওয়াব পেয়েছেন, তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা দান করেও ঐ সওয়াব লাভ করতে পারবে না )।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) স্বীয় সহীহ' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
সূরা ফাত্হ আয়াত 29 সূরা
محمد رسول الله والذين معه أشداء على الكفار رحماء بينهم تراهم ركعا سجدا يبتغون فضلا من الله ورضوانا سيماهم في وجوههم من أثر السجود ذلك مثلهم في التوراة ومثلهم في الإنجيل كزرع أخرج شطأه فآزره فاستغلظ فاستوى على سوقه يعجب الزراع ليغيظ بهم الكفار وعد الله الذين آمنوا وعملوا الصالحات منهم مغفرة وأجرا عظيما
سورة: الفتح - آية: ( 29 ) - جزء: ( 26 ) - صفحة: ( 515 )English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তুমি কি দেখ না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের
- আপনি জানেন, যে রাত্রিতে আসে সেটা কি?
- আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন
- রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে
- বলুনঃ হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন
- আপনি জানেন তা কি?
- আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও
- বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল।
- যারা নিজেরাও কার্পন্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সে সব বিষয়
- আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তা দেবেন।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ফাত্হ ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Fath mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Fath শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers