কোরান সূরা নাস্র আয়াত 3 তাফসীর
﴿فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا﴾
[ النصر: 3]
তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী। [সূরা নাস্র: 3]
Surah An-Nasr in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nasr ayat 3
তখন তোমার প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করো ও তাঁর পরিত্রাণ খোঁজো। নিঃসন্দেহ তিনি বারবার প্রত্যাবর্তনকারী।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩. তখন আপনি জেনে নিবেন যে, এটি আপনার সাথে আগত মিশনের পরিসমাপ্তির প্রতি ইঙ্গিত। তাই আপনি নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য ও বিজয়ের নিআমতের শুকরিয়া স্বরূপ তাঁর প্রশংসাজড়িত পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চান। নিশ্চয়ই তিনি অধিকহারে তাওবা কবুলকারী। তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন ও তাদেরকে ক্ষমা করেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবা গ্রহণকারী। [১] [১] অর্থাৎ, বুঝে নাও যে, রিসালতের তবলীগ ও হক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যা তোমার উপর ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার দুনিয়া থেকে তোমার বিদায় নেওয়ার পালা এসে গেছে। এ জন্য তুমি আল্লাহর তসবীহ, প্রশংসা এবং ক্ষমা প্রার্থনায় অধিকাধিক মনোযোগী হও। এ থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনের শেষ দিনগুলিতে উক্ত কর্মাবলী করতে অধিক যত্নবান হওয়া উচিত।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তখন আপনি আপনার রবের প্ৰশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী [ ১ ]। [ ১ ] একাধিক হাদীস ও সাহাবীর উক্তিতে আছে যে, এ সূরায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত আছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বদরী সাহাবীগণের সাথে তার কাছে প্রবেশাধিকার দিয়েছিলেন। তারা এটাকে মনে-প্ৰাণে মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা বলেই ফেলল, একে আবার আমাদের সাথে কেন? আমাদের কাছে তার সমবয়সী সন্তান-সন্ততি রয়েছে। তখন উমর বললেন, তোমরা তো জান সে কোথেকে এসেছে। তারপর একদিন তিনি তাদের মজলিসে তাকে ডেকে পাঠালেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমাকে তাদের মাঝে ডেকে আমাকে তাদের সাথে রাখার ব্যাপারটি স্পষ্ট করারই ইচ্ছা পোষণ করেছেন। অতঃপর উমর বললেন, তোমরা মহান আল্লাহ্র বাণী, “ ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহ” সম্পর্কে কি বল? তাদের কেউ বলল, আমাদের বিজয় লাভ হলে যেন আমরা আল্লাহ্র প্রশংসা ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই তা-ই বলা হয়েছে । আবার তাদের অনেকেই কিছু না বলে চুপ ছিল। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে ইবনে আব্বাস! তুমি কি অনুরুপ বল? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে কি বল? আমি বললাম, এটা তো রাসূলের মৃত্যুর সময়, যা তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, “ যখন আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয় এসে যাবে”, আর এটাই হবে আপনার জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার আলামত, “সুতরাং আপনি আপনার রবের সপ্ৰশংস তাসবীহ পাঠ করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চান; কেননা তিনিই তো তাওবা কবুলকারী” । তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি যা বললে তা ছাড়া এ সূরা সম্পর্কে আর কিছু আমি জানি না।” [ বুখারী: ৪৯৭০ ] সুতরাং সূরার অর্থ হচ্ছে, আপনার দুনিয়াতে অবস্থান করার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেছে, তাবলীগ তথা পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব পালিত হয়েছে। অতএব, আপনি তাসবীহ ও ইস্তেগফারে মনোনিবেশ করুন। [ ইবনুল কায়্যিম: ইলামুল মুয়াক্কিয়ীন, ১/৪৩৬ ] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: এই সূরা নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাতের পর এই দো‘আ পাঠ করতেন سُبْحَا نَكَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَ بِحِمْدِكَ، اللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ [ বুখারিঃ ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৩, ৪৯৬৭, মুসলিম: ৪৮৪, আবু দাউদ: ৮৭৭, ইবনে মাজাহ: ৮৮৯ ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ বয়সে বেশী বেশী আগত দো‘আ পাঠ করতেনঃ سُبحَانَ اللّٰهِ وَ بِحَمْدِهِ، أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ [ মুসলিমঃ ৪৮৪, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৩৫ ] অনুরূপভাবে উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, এই সূরা নাযিল হওয়ার পর তিনি উঠাবসা, চলাফেরা তথা সর্বাবস্থায় سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ এই দো‘আ পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, আমাকে এর আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর প্রমাণস্বরূপ সূরাটি তেলাওয়াত করতেন। [ তাবারীঃ ৩৮২৮৪ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
পূর্বেই হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, এই সূরাটি কুরআন কারীমের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ ( রাঃ ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ সর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু' ( সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে । )” হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) তখন বললেনঃ “ তুমি সত্য বলেছো ।” ( এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আইয়ামে তাশরীকের ( ১১ই, ১২ইও ১৩ই যিল হজ্ব তারিখের ) মধ্যভাগে ( আরবি ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উপর অবতীর্ণ হলে তিনি বুঝতে পারেন যে, এটা বিদায়ী সূরা। সুতরাং তখনই তিনি সওয়ারী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ খুৎবাহ প্রদান করলেন। ( এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযার (রঃ ) এবং হাফিয বারহাকী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন ( আরবি ) সূরা অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) হযরত ফাতিমা ( রাঃ )-কে ডেকে বলেনঃ “ আমার পরলোক গমনের খবর এসে গেছে ।” এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা ( রাঃ ) কাঁদতে শুরু করলেন। তারপরই তিনি হাসতে লাগলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “ আমার আব্বার ( সঃ ) পরলোক গমনের সময় নিকটবর্তী হওয়ার খবর শুনে আমার কান্না এসেছিল । কিন্তু আমার কান্নার সময় তিনি আমাকে বললেনঃ “ তুমি ধৈর্য ধারণ করে । আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে তুমিই সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসায়ীতে এটা বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাতে হযরত ফাতিমার ( রঃ ) উল্লেখ করা হয়নি) ১-৩ নং আয়াতের তাফসীর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বয়স্ক মুজাহিদদের সাথে হযরত উমার ( রাঃ ) আমাকেও শামিল করে নিতেন । এ কারণে কারো কারো মনে সম্ভবতঃ অসন্তুষ্টির ভাব সৃষ্টি হয়ে থাকবে। একদা তাদের মধ্যে একজন আমার সম্পর্কে মন্তব্য করলেনঃ সে যেন আমাদের সাথে না থাকে। তার সমবয়সী ছেলে আমাদেরও তো রয়েছে।” তার এ মন্তব্য শুনে হযরত উমার ( রাঃ ) তাঁকে বললেনঃ তোমরা তো তাকে খুব ভাল রূপেই জান!” একদিন তিনি সবাইকে ডাকলেন এবং আমাকেও স্মরণ করলেন আমি বুঝতে পারলাম যে, আজ তিনি তাদেরকে কিছু দেখাতে চান। আমরা সবাই হাজির হলে তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ( আরবি ) সূরাটি সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি ( অর্থাৎ এ সূরাটি কিসের ইঙ্গিত বহন করছে )।” কেউ কেউ বললেনঃ “ এ সূরায় আল্লাহ তাআলার গুণগান করার জন্যে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে । আল্লাহ তা'আলার সাহায্য এলে এবং আমাদের বিজয় সূচিত হলেই যেন আমরা এইরূপ করি।” কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ নীরব থাকলেন, কিছুই বললেন হযরত উমার ( রাঃ ) তখন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ তোমার মতামতও কি এদের মতই?” আমি উত্তরে বললামঃ না, বরং আমি এই বুঝেছি এ সূরায় রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) পরলোক গমনের ইঙ্গিত রয়েছে । তাঁকে এটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তার ইহলৌকিক জীবন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং তিনি যেন তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একথা শুনে হযরত উমার ( রাঃ ) বললেনঃ “ আমিও এটাই বুঝেছি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ ( এ বছরই আমার ইন্তেকাল হবে ) আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে ।” মুজাহিদ ( রঃ ), আবুল আলিয়া ( রঃ ), যহহাক ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজনও এই তাফসীর বর্ণনা করেছেন। ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মদীনায় অবস্থান করছিলেন, একদা তিনি বলেনঃ “ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান! আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে পড়েছে । ইয়ামনের অধিবাসীরা এসে গেছে।” তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! ইয়ামনবাসীরা কেমন লোক?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “তারা কোমল প্রাণ ও পরিচ্ছন্ন স্বভাবের অধিকারী । ঈমান, বুদ্ধিমত্তা এবং হিকমত এ সবই ইয়ামনবাসীদের রয়েছে।” ( এ হাদসিটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যেহেতু এ সূরাটিতে রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) পরলোকগমনের সংবাদ ছিল সেহেতু সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আখেরাতের কাজে পূর্বের চেয়ে অধিক মনোযোগী হন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং ইয়ামনবাসী এসে পড়েছে ।” তখন একটি লোক জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! ইয়ামনবাসীরা কি ( প্রকৃতির লোকে )?” উত্তরে তিনি বললেন! “তাদের অন্তর কোমল, স্বভাব নম্র এবং তারা ঈমান ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ।” ( এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, সূরা সমূহের মধ্যে পুরো সূরা অবতীর্ণ হওয়ার দিক থেকে ( আরবি ) এ সূরাটিই সর্বশেষ সূরা। ( এ হাদীসটিও ইমাম তিবরানী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,( আরবি ) এ সূরাটি অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তা শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন, অতঃপর বলেনঃ “ সব মানুষ এক দিকে এবং আমি ও আমার সাহাবীরা এক দিকে । জেনে রেখো যে, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই, তবে রয়েছে। জিহাদ এবং নিয়ত।” মারওয়ানকে হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) এ হাদীসটি শোনালে তিনি বলে ওঠেনঃ “ তুমি মিথ্যা বলছো” ঐ সময় মারওয়ানের সাথে তার মজলিসে হযরত রাফে ইবনে খাদীজ ( রঃ ) এবং হযরত যায়েদ ইবনে সাবিতও ( রাঃ ) উপবিষ্ট ছিলেন । হযরত আবু সাঈদ ( রাঃ ) তাঁদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন! “ এঁরাও এ হাদীসটি জানেন এবং বর্ণনা করতে পারেন । কিন্তু একজন নিজের নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশংকায় এবং অপরজন যাকাত আদায়ের পদমর্যাদা থেকে বরখাস্ত হওয়ার ভয়ে এটা বর্ণনা করছেন না।" একথা শুনে মারওয়ান হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) কে চাবুক মারতে উদ্যত হলে উভয় সাহাবী মারওয়ানকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “ শোনো মারওয়ান! হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) সত্য কথাই বলেছেন । ( এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে)হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কা বিজয়ের দিন বলেনঃ “ হিজরত আর অবশিষ্ট নেই, তবে জিহাদ এবং নিয়ত বাকি রয়েছে । তোমাদেরকে যখন চলতে বলা হবে তখন তোমরা উঠে দাড়িয়ে চলতে শুরু করবে।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) ও ইমাম মুসলিম ( রঃ ) তাখরীজ করেছেন) তবে হ্যা, এটাও মনে রাখতে হবে যে, যে সব সাহাবী ( রাঃ ) হযরত উমারের ( রাঃ ) প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেনঃ “ যখন আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর শহর ও দূর্গের বিজয় দান করবেন এবং আমাদেরকে সাহায্য করবেন তখন আমরা যেন তার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি, এ সূরায় এ নির্দেশই তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন । তাছাড়া আমরা যেন নামায আদায় করি ও নিজেদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করি, এ নির্দেশও আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তাদের এ অর্থ ও তাফসীরও খুবই সুন্দর ও বিশুদ্ধ, এতে কোন সন্দেহ নেই। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কা বিজয়ের দিন চাশতের আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন, যদিও কেউ কেউ বলেন যে, ওটা ছিল চাশতের নামায, কিন্তু আমরা জানি যে, তিনি চাশতের নামায নিয়মিতভাবে আদায় করতেন না। তাছাড়া ঐসময় ব্যস্ততা ছিল এবং কাজকর্মও অনেক ছিল। তিনি ছিলেন মুসাফির, এ অবস্থায় কি করে তিনি চাশতের নামায পড়তে পারেন? এছাড়া রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কা বিজয়ের সময়ে মক্কা শরীফে রমযানের শেষ পর্যন্ত উনিশ দিন অবস্থান করেছিলেন। ঐ সময়ে তিনি ফরয নামাযও কসর করেছিলেন। তিনি রোযাও রাখেননি। তাঁর সঙ্গীয় প্রায় দশ হাজার মুসলমান সবাই এ নিয়ম পালন করেছিলেন। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আট রাকআত নামায মক্কা বিজয়ের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ছিল। এ কারণেই সেনাবাহিনী প্রধান বা সমকালীন ইমামের জন্যে কোন শহর জয় করার সাথে সাথে ঐ শহরে আট রাকআত নামায আদায় করা মুস্তাহাব।হযরত সা'দ ইবনে অক্কাস ( রাঃ ) মাদায়েন বিজয়ের দিন অনুরূপ আট রাকআত নামায আদায় করেছিলেন। এই আট রাকআত নামায দুই রাকআত করে আদায় করতে হবে। কারো কারো মতে আট রাকআতে একবার সালাম ফিরালেই চলবে। অর্থাৎ একবারই সালাম ফিরানোর নিয়তে আট রাকআত নামায পড়া যাবে। কিন্তু সুনানে আবি দাউদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ নামায প্রতি দুই রাকআতে সালাম ফিরিয়ে আদায় করেছিলেন। অন্যান্য তাফসীরও বিশুদ্ধ। যেমন, ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) প্রমুখ গুরুজন বলেছেন যে, এ সূরায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে তার ইন্তেকালের সংবাদ দেয়া হয়েছে।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী ( সঃ )! যে মক্কা থেকে কাফিররা তোমাকে চলে যেতে বাধ্য করেছে, সেই মক্কা বিজয় যখন তুমি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে, নিজের পরিশ্রমের ফলে যখন দেখতে পাবে, আরো যখন দেখতে পাবে যে, জনগণ আল্লাহর ধর্মে দলে দলে প্রবেশ করছে তখন তুমি স্বীয় প্রতিপালকের তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করবে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তুমি পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকো। মনে রেখো যে, তোমার ইহকালীন দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং এখন পরকালের প্রতি মনোযোগী হও। সেখানে তোমার জন্যে বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। তোমার মেহমানদারী স্বয়ং আমিই করবো। কাজেই আমার রহমত ও কুদরতের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে অধিক পরিমাণে আমার প্রশংসা করো, তাওবা ইসতিগফার করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুল করে থাকেন।সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভর রুকু ও সিজদায় নিম্নলিখিত তাসবীহ অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! আপনি মহাপবিত্র এবং আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা । হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন! রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরআন কারীমের ( আরবি ) এ আয়াতের উপর অধিক পরিমাণে আমল করতেন।অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁর শেষ জীবনে নিম্নলিখিত কালেমাগুলো অধিক পরিমাণে পাঠ করতেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আল্লাহ মহাপবিত্র, তার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবা করছি ।” তিনি আরো বলতেনঃ “ আমার প্রতিপালক আমাকে আদেশ দিয়ে রেখেছেনঃ যখন আমি দেখতে পাই যে, মক্কা বিজয় অত্যাসন্ন এবং দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করছে তখন যেন আমি এ কালেমা অধিক পরিমাণে পাঠ করি । সুতরাং আল্লাহর রহমতে আমি মক্কা বিজয় প্রত্যক্ষ করেছি। এ কারণে এখন ( মনোযোগ সহকারে ) এ কালেমা নিয়মিত পাঠ করছি।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে )তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, শেষ বয়সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উঠতে বসতে চলতে ফিরতে এবং আসতে যেতে নিম্নের তাসবীহ পড়তে থাকতেনঃ( আরবি ) অর্থাৎ “ আল্লাহ মহাপবিত্র এবং তাঁর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা ।" হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি একবার এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সূরা নাসর তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “আল্লাহপাক আমাকে এরকমই আদেশ দিয়েছেন ।”মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নামাযে প্রায়ই এ সূরা তিলাওয়াত করতেন এবং রুকূতে তিনবার নিম্নের দু'আ পড়তেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! আপনি মহা পবিত্র । হে আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।" বিজয় অর্থে এখানে মক্কা বিজয়কে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন মতানৈক্য নেই। আরবের সাধারণ গোত্রগুলোর মধ্যে ব্যাপারে কোনই মতানৈক্য হয়নি। আরবের সাধারন গোত্রগুলো অপেক্ষা করছিল যে, যদি মুহাম্মদ ( সঃ ) স্বজাতির উপর জয়যুক্ত হন এবং মক্কা তাঁর পদানত হয় তবে তিনি যে সত্য নবী এব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ থাকবে না।আল্লাহ তা'আলা যখন তাঁর প্রিয় নবী ( সঃ ) কে মহাবিজয় দান করলেন তখন এরা সবাই দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করলো। এরপর দু'বছর যেতে যেতেই সমগ্র আরব ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করলো। প্রত্যেক গোত্রের উপর ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য। সহীহ বুখারীতেও হযরত আমর ইবনে সালমার ( রাঃ )এ উক্তি বিদ্যমান রয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সাথে সকল গোত্র ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তারা ইসলাম গ্রহণের জন্যে অপেক্ষা করছিল এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলঃ নবী মুহাম্মদ ( সঃ ) কে এবং তাঁর স্বজাতিকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। যদি মুহাম্মদ ( সঃ ) সত্য নবী হয়ে থাকেন তবে নিজের জাতির উপর অবশ্যই জয়যুক্ত হবেন এবং মক্কার উপর তার বিজয় পতাকা উড়বে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের প্রাপ্য।মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে যে, হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহর এক প্রতিবেশী সফর থেকে ফিরে আসার পর হযরত জাবির ( রাঃ ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। সেই প্রতিবেশী মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ, দ্বন্দ্ব-কলহ এবং নতুন নতুন বিদআতের কথা ব্যক্ত করলে হযরত জাবির ( রাঃ )-এর চক্ষুদ্বয় অশ্রু সজল হয়ে উঠলো। তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বললেনঃ “ আমি সরদারে দো জাহান, শাফীউল মুযনিবীন, রহমাতুল লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ ( সঃ )-এর মুখে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে বটে, কিন্তু শীঘ্রই তারা দলে দলে এই দ্বীন থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করবে ।”
সূরা নাস্র আয়াত 3 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যে সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করে।
- এ কারণে যে, তারা দয়াময় আল্লাহর জন্যে সন্তান আহবান করে।
- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে
- তিনি বললেনঃ তোমাদেরকে প্রত্যহ যে খাদ্য দেয়া হয়, তা তোমাদের কাছে আসার আগেই আমি তার
- আমি তোমাদের বিশ্বস্ত পয়গম্বর।
- শপথ জনকের ও যা জন্ম দেয়।
- আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে,
- আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন,
- তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল।
- এবং লিখিত কিতাবের,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাস্র ডাউনলোড করুন:
সূরা Nasr mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nasr শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers