কোরান সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 30 তাফসীর
﴿إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا﴾
[ الإسراء: 30]
নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন। [সূরা বনী ইসরাঈল: 30]
Surah Al-Isra in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Isra ayat 30
নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু রিযেক বাড়িয়ে দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছে করেন আর মেপেজোখে দেন। নিঃসন্দেহ তিনি তাঁর বান্দাদের চির ওয়াকিফহাল, সর্বদ্রষ্টা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩০. নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যার ব্যাপারে চান তার রিযিক প্রশস্ত করেন আর যার ব্যাপারে চান তার রিযিক সঙ্কীর্ণ করেন। তবে তা হয়ে থাকে তাঁর এক নিপুণ কৌশলের ভিত্তিতেই। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সম্যক ওয়াকিফহাল ও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর নিকট তাদের কোন কিছুই গোপন নয়। সুতরাং তিনি তাদের ব্যাপারে যা চান তাই সিদ্ধান্ত দেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা হ্রাস করেন; [১] নিশ্চয় তিনি তাঁর দাসদেরকে ভালভাবে জানেন ও দেখেন। [১] এতে ঈমানদারদের জন্য রয়েছে সান্তনা। তাঁদের কাছে রুযী ও বিলাস-উপকরণের প্রাচুর্য না থাকলেও তার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর নিকট তাঁদের সম্মান নেই, বরং রুযীতে প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতার সম্পর্ক তো আল্লাহর হিকমত ও কৌশলের সাথে; যার খবর কেবল তিনিই জানেন। তিনি তাঁর শত্রুদেরকে কারূন বানিয়ে দেন এবং তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে এতটাই দেন যে, কোন রকমে তাদের চলে যায়। এ সবই তাঁর ইচ্ছার ব্যাপার। অধিক সম্পদ-সম্পত্তির মালিক ( ধনী ) তাঁর প্রিয় নয় এবং জীবন ধারণের মত সামান্য উপকরণের মালিক ( গরীব ) তাঁর অপ্রিয় নয়। ( অনুরূপ এর বিপরীত হওয়াও জরুরী নয়। -সম্পাদক )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয়ই তোমার রব যার জন্য ইচ্ছে তাঁর রিযক বাড়িয়ে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছে তা সীমিত করেন; নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা [ ১ ]। [ ১ ] সুতরাং কাউকে রিযক বেশী ও কম দেয়ার মধ্যে তাঁর বিরাট হেকমত রয়েছে। তিনি জানেন কাকে বেশী দিলে সে আরো বেশী পেতে চাইবে বা গর্বে সীমালঙ্গন করবে: অথবা কুফরীর কারণ হবে। আবার কাকে বেশী না দিলে তার জন্য তা কুফরীর কারণ হবে। আর কাকে কম দিলেও সে ধৈর্যশীল প্রমাণিত হবে। আর কাকে সম্পদ কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেবে। সুতরাং যিনি সবকিছুর খবর রাখেন তিনি প্রত্যেককে তার জন্য যা উপযোগী সে অনুসারে রিযক দান করেন। দেখুন, [ ইবন কাসীর ] অথবা, আয়াতের আল্লাহর নাম দু’টোর উদ্দেশ্য, তিনি জানেন যা তারা গোপন রাখে এবং যা প্রকাশ করে। তার কাছে কোন কিছুই গোপন নেই। তিনি বান্দাদের অবস্থান সম্পর্কে অধিক অবহিত, তাদের রিযক বণ্টনের ব্যাপারে সর্বদ্ৰষ্টা। এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তিনিই বান্দাদের রিযিকের ব্যবস্থা করেন। তাই পরবর্তী আয়াতে মানুষের রিযিকের আলোচনা করা হয়েছে। [ ফাতহুল কাদীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
২৯-৩০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ জীবনে খরচ করার ব্যাপারে তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। কৃপণ ও হয়ো না এবং অপব্যয়ীও হয়ো না। তোমার হাত তোমার গ্রীবার সাথে বেঁধো না, অর্থাৎ এমন কৃপণ হয়ো না যে, কাউকেও কিছু দিবে না। ইয়াহূদীরাও এই বাক পদ্ধতিই ব্যবহার করতো এবং বলতো যে, আল্লাহর হাত বদ্ধ রয়েছে। তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাৎ অবতীর্ণ হোক যে, তারা কার্পণ্যের দিকে আল্লাহ তাআলার সম্পর্ক স্থাপন করতো। অথচ আল্লাহ তাআলা বড় দাতা, দয়ালু এবং পবিত্র। কার্পণ্য থেকে তিনি বহু দূরে রয়েছেন। মহান আল্লাহ কার্পণ্য থেকে নিষেধ করার পর অপব্যয় থেকেও নিষেধ করছেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা এতো মুক্ত হস্ত হয়ো না যে, সাধ্যের অতিরিক্ত দান করে ফেলবে। অতঃপর তিনি এই হুকুম দু’টির কারণ বর্ণনা করছেন যে, কৃপণতা করলে তোমরা নিন্দার পাত্র হয়ে যাবে। সবাই বলবে যে, লোকটি বড়ই কৃপণ। সুতরাং সবাই তোমার থেকে দূরে সরে থাকবে। কারণ, তারা জানে যে, তোমার কাছে দান প্রাপ্তির কোন আশা নেই। যেমন যুহায়ের ইবনু আবি সালমা তাঁর মুআল্লাকায় বলেছেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ যে মালদার হয়ে তার মাল তার কওমের উপর খরচ করতে কার্পণ্য করে, তার থেকে মানুষ অমুখাপেক্ষী হয়ে তার দুর্নাম করে থাকে ।” সুতরাং কাপণ্যের কারণে মানুষ মরূপে গণ্য হয়ে যায় এবং সে মানুষের চোখের বালি হয়ে পড়ে। সবাই তাকে ভৎসনা করে থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি দান খায়রাত করার ব্যপারে সীমা ছাড়িয়ে যায়, শেষে সে অসমর্থ হয়ে বসে পড়ে। তার হাত শূন্য হয়ে যায় এবং এর ফলে সে দুর্বল ও অপারগ হয়ে পড়ে। যেমন কোন জন্তু চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পথে আটকে পড়ে। ( আরবি ) শব্দটি সূরায়ে মুকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে ক্লান্ত হওয়া।সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কৃপণ ও দাতার দৃষ্টান্ত ঐ দুই ব্যক্তির মত যাদের গায়ে বক্ষ হতে গলা পর্যন্ত দু'টি লোহার জুব্বা রয়েছে । দাতা ব্যক্তি যখন যখন খরচ করে তখন তখন ওর কড়া গুলি আলগা হয়ে যায় এবং তার হাত খুলে যায়। শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং ওর চিহ্ন মিটিয়ে দেয় আর কৃপণ ব্যক্তি যখনই খরচ করার ইচ্ছা করে তখনই তার জুব্বার কড়া গুলি আরো জড়ো হয়ে যায়। সে যতই ওটাকে প্রশস্ত করার ইচ্ছা করে ততই তা সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং কোন জায়গাই থাকে না।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আরো রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আসমা বিনতে আবি বকরকে ( রাঃ ) বলেনঃ “ এদিকে ওদিকে আল্লাহর পথে খরচ করতে থাকো, জমা রেখো না । অন্যথায় আল্লাহ তাআলাও দান বন্ধ করে দিবেন।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ গণে গণে রেখো না, অন্যথায় আল্লাহ তাআলা ও গণে গণে বন্ধ করে দিবেন।সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ হে আবূ হুরাইরা ( রাঃ ) ! তুমি আল্লাহর পথে খরচ করতে থাকো, আল্লাহ তাআলাও তোমাকে দিতে থাকবেন ।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় দু’জন ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করে থাকেন । একজন প্রার্থনা করেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনি দাতাকে প্রতিদান প্রদান করুন ।” আর অন্যজন প্রার্থনা করেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কৃপণের মাল ধ্বংস করে দিন।সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ দান খয়রাতে কারো মাল কমে যায় না এবং প্রত্যেক দাতাকে আল্লাহ তাআলা সম্মানিত করে থাকেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশক্রমে অন্যদের সাথে বিনয়পূর্ণ ব্যবহার করে, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা উঁচু করে দেন।” অন্য হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা লোভ হতে বেঁচে থাকো । এই লোভ লালসাই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লোভ লালসার প্রথম হুকুম হলোঃ “ তুমি কার্পণ্য কর । তখন সে কার্পণ্য করে। তারপর সে বলেঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কর। সে তা-ই করে। অতঃপর সে বলেঃ ‘অসৎ কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়। এবারও সে তার কথা মতই কাজ করে।”ইমাম বায়হাকীর ( রঃ ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, মানুষ যখন দান করে তখন শয়তানের চোয়াল ভেঙ্গে যায়। মুসনাদের হাদীসে আছে যে, মধ্যম পন্থায় ব্যয়কারী কখনো দরিদ্র হয় না।এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহ তাআ'লাই হচ্ছেন তাঁর বান্দাদেরকে রিযকদাতা। তিনিই রিযক বৃদ্ধি করে থাকেন এবং তিনিই হ্রাস করে থাকেন। তিনি যাকে ইচ্ছা ধনী এবং যাকে ইচ্ছা গরীব করে থাকেন। তাঁর প্রতিটি কাজ হিকমত বা নিপূণতায় পরিপূর্ণ। তিনি ভাল রূপে জানেন কে সম্পদ লাভের যোগ্য, আর কে দরিদ্র অবস্থায় কালাতিপাত করার যোগ্য। হাদীসে কুদসীতে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ আমার কতকগুলি বান্দা এমন রয়েছে যারা দরিদ্র থাকারই যোগ্য । যদি আমি তাদেরকে ধনী করে দিই তবে তাদের দ্বীন ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার কতক বান্দা এমনও রন্মেছে যে, যারা সম্পদশালী হওয়ারই যোগ্য। যদি আমি তাদেরকে দরিদ্র করে ফেলি তবে তাদের দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবে। হাঁ তবে এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, কতকগুলি লোকের পক্ষে ধনের প্রাচুর্য ঢিল বা অবকাশ হিসেবে হয়ে থাকে। এবং কতকগুলি মানুষের পক্ষে দারিদ্র শাস্তি স্বরূপ হয়ে থাকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দু'টো হতেই রক্ষা করুন!
সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত 30 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে?আমরা
- ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়ও।
- আমি যদি ইচ্ছা করি, তবে আকাশ থেকে তাদের কাছে কোন নিদর্শন নাযিল করতে পারি। অতঃপর
- অতঃপর তাদের মধ্যে দলগুলো পৃথক পৃথক পথ অবলম্বন করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে ধবংস।
- তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, তাদের সঙ্গী লোকটির মস্তিষ্কে কোন বিকৃতি নেই? তিনি তো ভীতি
- অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।
- আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন
- এটা এ জন্যে যে, আপনার প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে জুলুমের কারণে ধ্বংস করেন না এমতাবস্থায়
- তারা তাদের পালনকর্তার রসূলকে অমান্য করেছিল। ফলে তিনি তাদেরকে কঠোরহস্তে পাকড়াও করলেন।
- বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বনী ইসরাঈল ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Isra mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Isra শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers