কোরান সূরা রূম আয়াত 30 তাফসীর
﴿فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا ۚ فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
[ الروم: 30]
তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। [সূরা রূম: 30]
Surah Ar-Rum in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Rum ayat 30
অতএব তোমার মুখ ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠভাবে কায়েম করো। আল্লাহ্র প্রকৃতি -- যার উপরে তিনি মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আল্লাহ্র সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন নেই। এটিই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম, কিন্তু অধিকাংশ লোকেই জানে না।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩০. অতএব হে রাসূল! আপনি ও আপনার সাহাবীগণ অন্যসব দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওই দ্বীনের প্রতি ধাবিত হোন যার পথনির্দেশ আল্লাহ দান করেছেন। এটি সেই ইসলাম যার উপর মানুষের স্বভাব স্থির করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনরূপ পরিবর্তন নেই। এটিই সেই সরল দ্বীন যাতে কোনরূপ বক্রতা নেই। তবে বেশীরভাগ মানুষ একথা জানেনা যে, এটিই সঠিক দ্বীন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মে প্রতিষ্ঠিত রাখ।[১] আল্লাহর সেই প্রকৃতির অনুসরণ কর; যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।[২] আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।[৩] এটিই সরল ধর্ম; [৪] কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। [৫] [১] অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ব ও তাঁর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং বাতিল ধর্মসমূহের প্রতি ভ্রূক্ষেপও করো না। [২] فطرت শব্দের মৌলিক অর্থ হল সৃষ্টি। এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বা প্রকৃতি বলে ইসলাম ও তওহীদকে বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তাআলা মু'মিন-কাফের প্রত্যেক মানুষকে ইসলাম ও তওহীদের প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই জন্য তওহীদ মানুষের প্রকৃতি অর্থাৎ সহজাত ও স্বভাব-ধর্ম। যেমন যে সময় আল্লাহ তাআলা মানুষের আত্মা সৃষ্টি করেন তখন বলেন, 'আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?' তার উত্তরে মানুষ বলেছিল, অবশ্যই। এ থেকেও পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মানুষের আসল ধর্ম হল একত্ব। পরে অবশ্য বিভিন্ন খারাপ পরিবেশ অথবা অন্য কোন প্রতিবন্ধক অনেককে সেই প্রকৃতি ( ইসলামে ) প্রতিষ্ঠিত থাকতে বাধা দান করে; ফলে তারা কাফের হয়েই থাকে। যেমন নবী ( সাঃ ) হাদীসে বলেছেন, " প্রত্যেক শিশু ( ইসলামের ) প্রকৃতির উপর জন্ম নেয়। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে দেয়। " ( বুখারীঃ তাফসীর সূরা রূম, মুসলিমঃ কিতাবুল ক্বাদার ) [৩] অর্থাৎ, আল্লাহর সেই সৃষ্টি বা প্রকৃতিকে পরিবর্তন করো না; বরং সঠিক তরবিয়ত দিয়ে তার লালন-পালন ও বড় কর। যাতে ঈমান ও তওহীদ কচি-কাঁচা শিশুদের মনে-প্রাণে বদ্ধমূল হয়ে যায়। এখানে বাক্যটি খবর স্বরূপ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার হয়েছে আজ্ঞার অর্থে। অর্থাৎ, নেতিবাচক বাক্য নিষেধাজ্ঞার অর্থে ব্যবহার হয়েছে। ( 'আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই' অর্থাৎ, 'আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন করো না।' ) [৪] অর্থাৎ, যে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে বলা হয়েছে অথবা যে দ্বীন মানুষের প্রকৃতিগত, সেটাই হচ্ছে সরল ও সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। [৫] এই জন্যই তারা ইসলাম ও তওহীদের ব্যাপারে অজ্ঞ থেকে যায়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
কাজেই আপনি একনিষ্ঠ হয়ে নিজ চেহারাকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন [ ১ ]। আল্লাহর ফিতরাত ( স্বাভাবিক রীতি বা দ্বীন ইসলাম ) [ ২ ], যার উপর ( চলার যোগ্য করে ) তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই [ ৩ ]। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
[ ১ ] অর্থাৎ একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারাকে এদিকে স্থির নিবদ্ধ করো, এরপর আবার অন্যদিকে ফিরে যেও না। জীবনের জন্য এ পথটি গ্রহণ করে নেবার পর অন্য কোন পথের দিকে দৃষ্টিও দেয়া যাবে না। [ ফাতহুল কাদীর ]
[ ২ ] অর্থাৎ এ দ্বীনকে আঁকড়ে থাকো ৷ অন্য কোন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে নিজেদেরকে কলুষিত করো না। পরবর্তী বাক্যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর ফিতরত বলে সেই ফিতরত বোঝানো হয়েছে, যার উপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তবে এখানে ফিতরত বলে কি বোঝানো হয়েছে এ সম্পর্কে তফসীরকারদের অনেক উক্তির মধ্যে দুইটি উক্তি প্ৰসিদ্ধ।
( এক ) ফিতরত বলে ইসলাম বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে মুসলিম সৃষ্টি করেছেন। যদি পরিবেশ কোন কিছু খারাপ না করে, তবে প্রতিটি জন্মগ্রহণকারী শিশু ভবিষ্যতে মুসলিমই হবে। কিন্তু অভ্যাসগতভাবেই পিতা-মাতা তাকে ইসলামবিরোধী বিষয়াদি শিক্ষা দেয়। ফলে সে ইসলামের উপর কায়েম থাকে না। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রতিটি শিশুই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায় বা নাসারা বানায় অথবা মাজুসী বানায়। যেমন কোন জন্তুকে তোমরা সম্পূর্ণ দোষমুক্ত জন্ম নিতে দেখ, সেখানে তোমরা তাকে নাক কাটা অবস্থায় পাও না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন।’ [ বুখারী:৪৭৭৫, মুসলিম: ২৬৫৮ ]
( দুই ) ফিতরত বলে যোগ্যতা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্রষ্টাকে চেনার ও তাঁকে মেনে চলার যোগ্যতা নিহিত রেখেছেন। এর ফলে মানুষ ইসলাম গ্ৰহণ করে যদি সে যোগ্যতাকে কাজে লাগায়। [ ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী ]
[ ৩ ] এ আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে, এক: তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করো না। [ ফাতহুল কাদীর ] দুই.
এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বলে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, তোমরা আল্লাহর এ দ্বীনকে পরিবর্তন করোনা। তিনি মানুষকে ইসলামের উপর সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তাদেরকে অন্যান্য মানব মতবাদে দীক্ষিত করো না। [ বাগভী ]| তিন.
অথবা আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ মানুষকে নিজের বান্দায় পরিণত করেছেন। কেউ চাইলেও এ কাঠামোয় কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। মানুষ বান্দা থেকে অ-বান্দা হতে পারে না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে নিলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষের ইলাহ হতে পারে না। [ ইবন কাসীর ]
সূরা রূম আয়াত 30 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি হুকুম অমান্যকারী।
- বলবে, তোমরা তো আমাদের কাছে ডান দিক থেকে আসতে।
- হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং
- সে সমস্ত লোক, যারা বলে যে, আল্লাহ আমাদিগকে এমন কোন রসূলের ওপর বিশ্বাস না করতে
- তিনি বললেনঃ অতঃপর তোমাদের প্রধান উদ্দেশ্য কি হে আল্লাহর প্রেরিতগণ ?
- যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে।
- যা আছে এক গোপন কিতাবে,
- তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমারাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে
- যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।
- শপথ রাত্রির, যখন সে আচ্ছন্ন করে,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা রূম ডাউনলোড করুন:
সূরা Rum mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Rum শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers