কোরান সূরা নাজ্ম আয়াত 32 তাফসীর
﴿الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ ۚ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنشَأَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ ۖ فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ﴾
[ النجم: 32]
যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে কচি শিশু ছিলে। অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী। [সূরা নাজ্ম: 32]
Surah An-Najm in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Najm ayat 32
যারা বর্জন করে বড় বড় পাপাচার ও অশ্লীল কাজ -- মুখোমুখি হওয়া ভিন্ন -- তোমার প্রভু পরিত্রাণে নিশ্চয়ই অপরিসীম। তিনি তোমাদের ভালো জানেন যখন থেকে তিনি তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে, আর যখন তোমরা ছিলে তোমাদের মায়ের পেটে ভ্রণরূপে। অতএব তোমরা তোমাদের নিজেদের গুণগান করো না। তিনিই ভালো জানেন তাকে যে ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩২. যারা ছোট-খাটো অপরাধ ছাড়া গুরুতর ও অশ্লীল পাপগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে এবং বেশী বেশী নফল আমল করবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমার অধিকারী। বান্দারা তাওবা করলেই তিনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। তিনি তাদের অবস্থা ও বিষয়াদি সম্পর্কে তখন থেকেই জানেন যখন তাদের পিতা আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। আর তখন থেকে যখন তোমরা নিজেদের মাতাদের পেটে বোঝা হিসাবে দফায় দফায় রূপান্তরিত হচ্ছিলে। তাঁর নিকট এ সবের কোন কিছুই গোপন নয়। তাই তোমরা নিজেরা নিজেদের সাফাই গেয়ে মুত্তাকী হওয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ো না। কেননা, তিনিই ভালো জানেন, কে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে থাকে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া[১] গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বিরত থাকে।[২] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অপরিসীম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর।[৩] অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না।[৪] তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে। [১] لَمَمٌ এর আভিধানিক অর্থ অল্প ও ছোট হওয়া। আর এ থেকেই বলা হয়, أَلَمَّ بالمكان অর্থাৎ, গৃহে অল্পক্ষণ ছিল। ألَمَّ بالطَّعَام অল্প একটু খেয়েছে। অনুরূপ কোন জিনিসকে কেবল স্পর্শ করা বা তার নিকটবর্তী হওয়া অথবা কোন কাজকে লাগাতার নয়; বরং কেবল এক বা দু'বার করা কিংবা অন্তরে কেবল খেয়ালের উদয় হওয়া, এ সবকেই لمم বলা হয়। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) لمم এর এই ভাষাগত প্রয়োগ ও তার অর্থের দিকে লক্ষ্য করেই তার অর্থ করা হয় 'সাগীরা গুনাহ' ( ছোট-খাট পাপ )। অর্থাৎ, কোন বড় পাপের প্রাথমিক পর্যায়ের জিনিস করে ফেলা। তবে বড় পাপ থেকে বিরত থাকা অথবা কোন পাপ এক-দু'বার করে ফেলা অতঃপর চিরতরে তা বর্জন করা কিংবা কোন পাপ করার কথা কেবল মনে ভেবে নেওয়া; কিন্তু কার্যতঃ তার ধারে-পাশেও না যাওয়া। এগুলো ছোট গুনাহ বলে গণ্য হবে। যেগুলো মহান আল্লাহ বড় পাপ থেকে বিরত থাকার কারণে ক্ষমা করে দিবেন।[২] كَبَائِر হল كَبِيْرَةٌ এর বহুবচন। কাবীরা গোনাহ, গুরুতর পাপ তথা মহাপাপের সংজ্ঞায় মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে এমন সব পাপকে কাবীরা তথা মহাপাপ বলা হয়, যার উপর জাহান্নামের হুমকি এসেছে অথবা যে পাপে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিন্দাবাদ কুরআন ও হাদীসে আলোচিত হয়েছে ( অথবা যে পাপের কারণে পাপীকে অভিশাপ করা হয়েছে )। অনুরূপ উলামাগণ এ কথাও বলেছেন যে, অব্যাহতভাবে কোন ছোট পাপ করতে থাকলে তা মহাপাপে পরিণত হয়ে যায়। এ ছাড়া 'কাবীরা' গুনাহের অর্থ ও তার প্রকৃতত্বে যেমন মতভেদ রয়েছে, অনুরূপ মতভেদ তার সংখ্যার ব্যাপারেও রয়েছে। কোন কোন আলেম ঐ মহাপাপসমূহকে একটি পুস্তিকার মধ্যে একত্রিতও করেছেন। যেমন, ইমাম যাহাবী ( রঃ ) রচিত 'কিতাবুল কাবাইর' এবং ফকীহ হাইতামী রচিত 'আয্-যাওয়াজির' প্রভৃতি। فَوَاحِشُ হল فَاحِشَةٌ এর বহুবচন। অশ্লীল কাজ। যেমন, ব্যভিচার, সমলিঙ্গী ব্যভিচার ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেছেন, যেসব পাপের জন্য দন্ডবিধি আছে, সেগুলো সব فواحش এর অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি অশ্লীলতার দৃশ্যাদি যেহেতু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সেহেতু আধুনিক সভ্যতায় এটাকেই সভ্যতা ও ফ্যাশন মনে করা হচ্ছে। এমন কি মুসলিমরাও ঐ অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার এই সভ্যতাকে লাফ দিয়ে লুফে নিয়েছে। তাই দেখা যায়, আজ তাদের ঘরে ঘরে টিভি, ভিসিআর, ভিসিপি, ভিসিডি ইত্যাদি ব্যাপক হয়ে পড়েছে। মহিলারা কেবল পর্দা ত্যাগ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং সুন্দরভাবে সাজগোজ করে ( অর্ধনগ্নাবস্থায় ) রূপ-সৌন্দর্য বিতরণ করতে করতে বাইরে বেড়ানোটাকে নিজেদের একটা ফ্যাশন ও অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের যৌথ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যৌথ অফিস-আদালত, যৌথ সভাসমিতি এবং ( পার্ক, সমুদ্র-সৈকত প্রভৃতি ) আরো বিভিন্ন স্থানে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা ও দ্বিধা-সংকোচহীন সংলাপ দিনের দিন বেড়ে চলেছে। ( বেড়ে চলেছে অবৈধ ভালবাসা ও তথাকথিত পছন্দ করে বিয়ে করার নামে 'লাভম্যারেজ' ও 'লিভ টুগ্যাদার'। ) অথচ এ সবই 'ফাওয়াহিশ' ( অশ্লীলতা )এর অন্তর্ভুক্ত। আয়াতে যাদের ক্ষমা করার কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তারা মহাপাপ ও অশ্লীলতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে; তাতে তারা লিপ্ত থাকবে না।[৩] أ جِنَّةٌহল جَنِيْنٌ এর বহুবচন। ( এর মূল অর্থঃ গুপ্ত ) গর্ভস্থ ভ্রূণকে جَنِيْنٌ বলা হয়। কারণ, তা লোক চক্ষু থেকে গোপনে থাকে।[৪] অর্থাৎ, তাঁর নিকট যখন তোমাদের কোন অবস্থা ও আচরণ লুক্কায়িত নেই; এমনকি তোমরা যখন মাতৃগর্ভে ছিলে, যেখানে তোমাদেরকে দেখার কারো সাধ্য ছিল না, সেখানেও তিনি তোমাদের যাবতীয় অবস্থা ও খবরাখবর সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তখন আত্মপ্রশংসা করার এবং নিজেদের মুখে নিজেদের সততার বর্ণনা দেওয়ার দরকার কি? অর্থাৎ, এ রকম করো না। যাতে লোক দেখানো কাজ থেকে তোমরা বাঁচতে পার।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
যারা বিরত থাকে গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে, ছোটখাট অপরাধ ব্যতীত [ ১ ]। নিশ্চয় আপনার রবের ক্ষমা অপরিসীম ; তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত---যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। অতএব তোমরা আত্মপ্ৰশংসা করো না, তিনিই সম্যক জানেন তার সম্পর্কে যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে [ ২ ]। [ ১ ] এতে اللمم শব্দের মাধ্যমে ব্যাতিক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। এই ব্যাতিক্রমের সারমর্ম হচ্ছে, ছোটখাট গোনাহে লিপ্ত হওয়া তাদেরকে সৎকর্মর উপাধি থেকে বঞ্চিত করে না। اللَّمَم শব্দের তাফসীর প্রসঙ্গে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের কাছ থেকে দু'রকম উক্তি বর্ণিত আছে। ( এক ) এর অর্থ সগীরা অর্থাৎ ছোটখাট গোনাহ। সূরা আন-নিসার ৩১ নং আয়াতে একে سئات বলা হয়েছে। এই উক্তি ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে ইবনে-কাসীর বর্ণনা করেছেন। ( দুই ) এর অর্থ সেসব গোনাহ, যা কদাচিৎ সংঘটিত হয়, অতঃপর তা থেকে তওবা করত চিরতরে বর্জন করা হয়।[ ইবন কাসীর ] এই উক্তিও ইবনে-কাসীর প্রথমে মুজাহিদ থেকে এবং পরে ইবনে আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। [ দেখুন, বুখারী: ৬৬১২ ] [ ২ ] أجنة শব্দটি جنين এর বহুবচন। এর অর্থ গর্ভস্থত ভ্ৰাণ। [ কুরতুবী ] আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “ তোমরা নিজেদের পবিত্ৰতা দাবি করো না । কারণ, আল্লাহ-ই ভাল জানেন কে কতটুকু মুত্তাকী”। শ্রেষ্ঠত্ব তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল, বাহ্যিক কাজ-কর্মের ওপর নয়। তাকওয়াও তা-ই ধর্তব্য যা মৃত্যু পর্যন্ত কায়েম থাকে। যয়নব বিনতে আবু সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর পিতামাতা তার নাম রেখেছিলেন ‘বাররা’ যার অর্থ সৎকর্মপরায়ণ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করে এই নাম রাখতে নিষেধ করেন। কারণ, এতে সৎ হওয়ার দাবি রয়েছে। অতঃপর তাঁর নাম পরিবর্তন করে যায়নব রাখা হয়। [ মুসলিম: ১৮, ১৯ ]। অনরূপভাবে, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে অন্য এক ব্যক্তির প্রশং করলে তিনি নিষেধ করে বললেনঃ তুমি যদি কারও প্রশংসা করতেই চাও, তবে এ কথা বলে করঃ আমার জানা মতে এই ব্যক্তি সৎ, আল্লাহভীরু। সে আল্লাহর কাছেও পাক পবিত্র কিনা আমি জানি না। [ বুখারী: ২৬৬২, মুসলিম: ৬৫, মুসনাদে আহমাদ: ৫/৪১,৪৫ ] এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে একটি বর্ণনা এসেছে, সাবেত ইবনুল হারিস আনসারী বলেন, ইয়াহূদীদের কোন সন্তান ছোট অবস্থায় মারা গেলে তারা তাকে বলত, সে সিদ্দীকীনের মর্যাদায় পৌঁছে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ কথা পৌঁছলে তিনি বললেন, ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে। কোন সন্তান তার মায়ের পেটে থাকতেই তার সৌভাগ্যবান হওয়া বা দূৰ্ভাগা হওয়া লিখে নেয়া হয়েছে। তারপর আল্লাহ তা'আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [ মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী: ২/৮১,৮২ হাদীস নং ১৩৬৮ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৩১-৩২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, আসমান ও যমীনের মালিক, অভাবমুক্ত, প্রকৃত শাহানশাহ, ন্যায় বিচারক ও সঠিক সৃষ্টিকর্তা এবং সত্য ও ন্যায়পরায়ণ আল্লাহ তা'আলাই বটে। তিনি প্রত্যেককেই তার আমলের প্রতিদান প্রদানকারী। পুণ্যের ভাল প্রতিদান এবং পাপের মন্দ শাস্তি তিনিই প্রদান করবেন। তার নিকট সৎলোক তারাই যারা তাঁর হারামকৃত জিনিস ও কাজ হতে, বড় বড় পাপ হতে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কার্য হতে দূরে থাকে। মানুষ হিসেবে তাদের দ্বারা কোন ছোট-খাট গুনাহ হলেও আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে দেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ যদি তোমরা বড় বড় পাপরাশি হতে বেঁচে থাকো তবে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলোকে ক্ষমা করে দিবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবিষ্ট করবে ।” ( ৪:৩১ ) আর এখানেও আল্লাহ তা'আলা বলে যে, তিনি মানবীয় ছোট-খাট অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, তাঁর মতে ( আরবী )-এর যে তাফসীর হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত হাদীসে করা হয়েছে তা হতে উত্তম তাফসীর আর কিছু হতে পারে না। তা এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা আদম-সন্তানের উপর তার জেনা বা ব্যভিচারের অংশ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যা সে অবশ্যই পাবে । চক্ষুর জেনা হলো দর্শন করা, মুখের জেনা হলো বলা, অন্তরে অনুরাগ, আসক্তি ও আকাঙ্ক্ষা জাগে, এখন লজ্জাস্থান ওকে সত্য করে দেখায় অথবা মিথ্যারূপে প্রদর্শন করে।” ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে )হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “ চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার হলো তাকানো, ওষ্ঠদ্বয়ের জেনা হচ্ছে চুম্বন করা, হস্তদ্বয়ের ব্যভিচার ধরা এবং পদদ্বয়ের জেনা হলো চলা, আর লজ্জাস্থান ওটাকে সত্য অথবা মিথ্যারূপে প্রকাশ করে । অর্থাৎ লজ্জাস্থানকে যদি সে বাধা দিতে না পারে এবং কুকার্য করেই বসে তবে সমস্ত অঙ্গেরই জেনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি সে লজ্জাস্থান বা গুপ্তাঙ্গকে সামলিয়ে নিতে পারে এবং কুকার্যে লিপ্ত না হয় তবে ঐগুলো সবই ( আরবী )-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।” ( এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) হলো চুম্বন করা, দেখা ও স্পর্শ করা। আর যখন গুপ্তস্থানগুলো মিলিত হয়ে যাবে তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং ব্যভিচার সাব্যস্ত হয়ে পড়বে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে এই বাক্যের তাফসীর এটাই বর্ণিত আছে যা উপরে বর্ণিত হলো। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, পাপে অপবিত্র হয়ে যাওয়ার পর তা ছেড়ে দিলে ওটা ( আরবী )-এর মধ্যে গণ্য হবে। একজন কবি বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! যদি আপনি ক্ষমা করেন তবে সবকিছুই ক্ষমা করে দেন, আর আপনার কোন এমন বান্দা আছে যে, সে অপরাধ করেনি?” হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার সময় প্রায়ই এই ছন্দটি পাঠ করতো । তাফসীরে ইবনে জারীরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর উপরোক্তে শ্লোকটি পাঠ করার কথা বর্ণিত আছে এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) ওটাকে হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। বাযযার ( রঃ ) বলেন যে, তাঁর এ হাদীসের অন্য কোন সনদ জানা নেই। শুধু এই সনদেই মারফু রূপে ওটা বর্ণিত আছে। ইবনে আবি হাতিম ( রঃ ) এবং বাগাভীও ( রঃ ) এটা বর্ণনা করেছেন। বাগাভী ( রঃ ) এটাকে সূরায়ে তানযীলের তাফসীরে রিওয়াইয়াত করেছেন। কিন্তু এটা মারফু হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ( আরবী ) এর ভাবার্থ এই যে, জেনার নিকটবর্তী হওয়ার পর তাওবা করে এবং আর ওদিকে ফিরে আসে না। চুরির নিকটবর্তী হওয়ার পর চুরি করলো না এবং তাওবা করে ফিরে আসলো। অনুরূপভাবে মদ্যপানের নিকটবর্তী হয়ে মদ্যপান করলো না এবং তাওবা করে ফিরে আসলো। এগুলো সবই ( আরবী ) -এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর জন্যে মুমিন ক্ষমার্হ।হযরত হাসান ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। একটি রিওয়াইয়াতে সাহাবীগণ ( রাঃ ) হতে প্রায়ই এটা বর্ণিত হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ( রাঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে যুবায়ের ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) হলো হদ্দে জেনা ও আযাবে আখিরাতের মধ্যবর্তী শুনাহ। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ( আরবী ) হলো ঐ জিনিস যা দুই হদ্দের মাঝে অবস্থিত, হচ্ছে দুনিয়া ও হদ্দে আখিরাত। নামায এর কাফফারা হয়ে যায়। ( আরবী ) হলো জাহান্নাম ওয়াজিবকারী হতে ক্ষুদ্রতর পাপ। হদ্দে দুনিয়া তো ঐ পার্থিব শাস্তি যা আল্লাহ তাআলা কোন পাপের কারণে নির্ধারণ করেছেন। আর হদ্দে আখিরাত হলো ওটাই যার কারণে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নাম ওয়াজিব করেছেন, কিন্তু ওর শাস্তি দুনিয়ায় নির্ধারণ করেননি।মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “ তোমার প্রতিপালকের ক্ষমা অপরিসীম । ওটা প্রত্যেক জিনিসকে ঘিরে নিয়েছে এবং সমস্ত পাপকে ওটা পরিবেষ্টনকারী। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ ( হে নবী সঃ! আমার এ কথাটি আমার বান্দাদেরকে ) তুমি বলঃ হে । আমার বান্দারা, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি করেছো! তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ে যেয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” ( ৩৯:৫৩ ) মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হতে। অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদম ( আঃ )-কে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করেছেন, যারা পিঁপড়ার মত ছড়িয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি তাদেরকে দুই দলে বিভক্ত করেছেন, একদলকে জান্নাতের জন্যে এবং অপর দলকে জাহান্নামের জন্যে।অতঃপর বলা হচ্ছেঃ যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর। অর্থাৎ ঐ সময় আল্লাহর নির্ধারিত ফেরেশতা তোমাদের জীবিকা, বয়স, পুণ্য এবং পাপ লিখে নেয়। বহু শিশু পেট হতেই পড়ে যায়, অনেক শিশু দুগ্ধপান অবস্থায় মারা যায়, বহু শিশু মারা যায় দুধ ছাড়ানোর পর, অনেকে মারা যায় যৌবনে পদার্পণ করার পূর্বেই, যৌবনাবস্থাতেই বহু লোকে ইহলোক ত্যাগ করে। এখন এই সমুদয় মনযিল অতিক্রম করার পর যখন বার্ধক্য এসে পড়ে, যার পরে মৃত্যু ছাড়া আর কোন মনযিল নেই, এখনো যদি আমরা না বুঝি ও সতর্ক না হই তবে আমাদের চেয়ে বড় উদাসীন আর কে হতে পারে?মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না । অর্থাৎ তোমাদের সৎ আমলের প্রশংসা তোমরা নিজেরা করো না।অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “ তোমাদের মধ্যে মুত্তাকী কে, কার অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে তা আল্লাহ তাআলাই খুব ভাল জানেন ।' যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ তুমি কি ঐ লোকদেরকে দেখোনি, যারা নিজেদের প্রশংসা নিজেরাই করেছে? বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে পাক পবিত্র করে থাকেন এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না ।” ( ৪:৪৯ )মহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমি আমার কন্যার নাম বিররাহ রেখেছিলাম । তখন আমাকে হযরত যায়নাব বিনতু আবি সালমা ( রাঃ ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এ নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। স্বয়ং আমার নামও বিররাহ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে বলেনঃ “ তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না । তোমাদের পুণ্যবানদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই সম্যক অবহিত।” তখন সাহাবীগণ বললেনঃ “ তাহলে এর নাম কি রাখতে হবে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তোমরা এর নাম যায়নাব রেখে দাও ।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু বাকরাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে কোন একটি লোকের খুব প্রশংসা করে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন তাকে বলেনঃ “ তোমার অকল্যাণ হোক! তুমি তো তোমার সাথীর গলা কেটে দিলে?” একথা তিনি কয়েকবার বললেন । অতঃপর তিনি বললেন, কারো প্রশংসা যদি করতেই হবে তবে বলবেঃ “ আমার ধারণা অমুক লোকটি এই রূপ । সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই আছে।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে )হযরত হারিস ইবনে হাম্মাম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত উসমান ( রাঃ )-এর সামনে তাঁর প্রশংসা করে। তখন হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ ( রাঃ ) লোকটির মুখে মাটি নিক্ষেপ করেন এবং বলেনঃ “ আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করি ।” ( এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ ) ও ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)
সূরা নাজ্ম আয়াত 32 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি, তারা তাকে চিনে, যেমন তাদের সন্তানদেরকে চিনে। যারা নিজেদেরকে ক্ষতির
- মুমিনগণ! তোমরা যখন মুমিন নারীদেরকে বিবাহ কর, অতঃপর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,
- বলাবাহুল্য পরকালে এরাই ক্ষতি গ্রস্ত হবে।
- সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন।
- অতঃপর আমি তা রেখেছি এক সংরক্ষিত আধারে,
- আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ
- মূসা বলল, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি ফেরাউনকে এবং তার সর্দারদেরকে পার্থব জীবনের আড়ম্বর দান করেছ,
- বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন
- সে বিশ্বাস করেনি এবং নামায পড়েনি;
- তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাজ্ম ডাউনলোড করুন:
সূরা Najm mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Najm শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers