কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 33 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Baqarah ayat 33 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা বাকারাহ্ আয়াত 33 আরবি পাঠে(Baqarah).
  
   

﴿قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ ۖ فَلَمَّا أَنبَأَهُم بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ﴾
[ البقرة: 33]

তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর! [সূরা বাকারাহ্: 33]

Surah Al-Baqarah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 33


তিনি বললেন -- “হে আদম! এ-সবের নামাবলী এদের কাছে বর্ণনা কর।” তাই সে যখন তাদের কাছে এ-সবের নামাবলী বর্ণনা করল, তিনি বললেন -- “আমি কি তোমাদের বলি নি যে আমি নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রহস্যসব জানি? আর আমি জানি যা তোমরা প্রকাশ করেছ, আর যা তোমরা লুকিয়ে রেখে চলেছ।”


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩৩. তখন আল্লাহ তা‘আলা আদম ( আলাইহিস-সালাম ) কে বললেন: তুমি তাদেরকে এগুলোর নাম বলে দাও। যখন আদম ( আলাইহিস-সালাম ) তাঁদেরকে তাঁর প্রতিপালকের দেয়া জ্ঞানানুযায়ী সব বলে দিলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাদেরকে বললেন: আমি কি তোমাদেরকে ইতোপূর্বে এ কথা বলিনি যে, নিশ্চয়ই আমি আকাশ ও জমিনের সকল বস্তু সম্পর্কে জানি। আর আমি জানি তোমরা নিজেদের যে অবস্থাগুলো প্রকাশ করেছো। আর যা তোমরা মনে মনে পোষণ করছো।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তিনি বললেন, ‘হে আদম! ওদেরকে ( ফিরিশতাদেরকে ) এদের ( এ সকলের ) নাম বলে দাও।’ অতঃপর যখন সে তাদেরকে সে-সবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্বন্ধে আমি অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর বা গোপন রাখ নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ ( ১ ) ( ১ ) 'আসমা' তথা নামসমূহ বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিস-পত্রের নামসমূহ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ যা মহান আল্লাহ 'ইলহাম' ও 'ইলক্বা' ( অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করা )র মাধ্যমে আদম ( আঃ )-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর যখন আদম ( আঃ )-কে ঐ জিনিসগুলোর নাম বলতে বলা হল, তখন তিনি সত্বর তা বলে দিলেন। অথচ ফিরিশতাগণ তা পারেননি। এইভাবে আল্লাহ তাআলা প্রথমতঃ ফিরিশতাদের সামনে আদম সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করলেন। দ্বিতীয়তঃ দুনিয়ার নিয়ম-নীতি পরিচালনার জন্য জ্ঞানের কত গুরুত্ব এবং তার কত ফযীলত ও মর্যাদা তা বর্ণনা করে দিলেন। যখন ফিরিশতাদের সামনে ( আদম সৃষ্টির ) যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন তাঁরা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি যে অতি সল্প তা স্বীকার ক'রে নিলেন। আর ফিরিশতাদের এই স্বীকৃতি দ্বারা এ কথাও পরিষ্কার হয়ে গেল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা একমাত্র আল্লাহর সত্তা। তাঁর বিশিষ্ট বান্দাদের কেবল ততটাই জ্ঞান থাকে, যতটা মহান আল্লাহ তাঁদেরকে দান করেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তিনি বললেন, ‘ হে আদম ! তাদেরকে এসবের নাম বলে দিন ’। অতঃপর তিনি ( আদম ) তাদের কে সেসবের নাম বলে দিলে তিনি ( আল্লাহ্‌ ) বললেন, ‘ আমি কি তোমাদের কে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আসমান ও যমীনের গায়েব জানি। আরও জানি যা তোমরা ব্যক্ত করো এবং যা তোমরা গোপন করতে []। [] কাতাদাহ ও আবুল আলীয়া বলেন, তারা যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, আমাদের রব আল্লাহ্ তা'আলা যা-ই সৃষ্টি করুক না কেন আমরা তার থেকে বেশী জ্ঞানী ও সম্মানিত থাকব। [ তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ ] তাছাড়া বিভিন্ন সাহাবা থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা যা প্রকাশ করেছিল তা হলো, “ আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে” । আর যা গোপন করছিল তা হচ্ছে, ইবলীস তার মনের মধ্যে যে গর্ব ও অহঙ্কার গোপন করে রাখছিল তা। [ ইবনে কাসীর ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৩১-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর এখানে একথারই বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা একটা বিশেষ জ্ঞানে হযরত আদম ( আঃ ) কে ফেরেশতাদের উপর মর্যাদা দান করেছেন।এটা ফেরেশতাদের হযরত আদম ( আঃ ) কে সিজদা করার পরের ঘটনা। কিন্তু তাঁকে সৃষ্টি করার মধ্যে মহান আল্লাহর যে হিকমত নিহিত ছিল এবং যা ফেরেশতাগণ জানতেন না, তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়ার কারণে এ ঘটনাকেই পূর্বে বর্ণনা করেছেন এবং ফেরেশতাদের সিজদা করার ঘটনা, যা পূর্বে ঘটেছিল তা পরে বর্ণনা করেছেন, যেন খলীফা সৃষ্টি করার যৌক্তিকতা ও নিপূণতা প্রকাশ পায় এবং জানা যায় যে, হযরত আদম ( আঃ )-এর মর্যাদা ও সম্মান লাভ হয়েছে। এমন এক বিদ্যার কারণে যে বিদ্যা ফেরেশতাদের নেই। আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি হযরত আদম ( আঃ ) কে সমুদয় বস্তুর নাম শিখিয়ে দেন, অর্থাৎ তাঁর সন্তানদের নাম, সমস্ত জীব জন্তুর নাম, যমীন, আসমান, পাহাড় পর্বত, জল-স্থল, ঘোড়া, গাধা, বরতন, পশু-পাখী, ফেরেশতা ও তারকারাজি ইত্যাদি সমুদয় ছোট বড় জিনিসের নাম।হযরত ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, তাঁকে ফেরেশতা ও মানুষের নাম শিখানো হয়েছিল। কেননা এর পরে ( আরবি ) শব্দটি এসেছে এবং এটা বিবেক সম্পন্ন প্রাণীর জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু ইবনে জারীরের ( রঃ ) একথাটি বিবেক সম্মত কথা নয় যে, যেখানে বিবেক সম্পন্ন ও বিবেকহীন একত্রিত হয়ে থাকে, সেখানে যে শব্দ আনা হয় তা শুধু বুদ্ধিজীবিদের জন্যেই আনা হয়। যেমন কুরআন মাজীদে আছেঃ আল্লাহ সমুদয় সৃষ্টজীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, তাদের মধ্যে কতকগুলো পেটের ভরে ধীরে ধীরে চলে, কতকগুলো চলে দুই পায়ের ভরে, আবার কতকগুলো চার পায়ের ভরে চলে থাকে । আল্লাহ যা চান তাই সৃষ্টি করে থাকেন এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান।" সুতরাং এই আয়াতে প্রকাশিত হলো যে, বিবেকহীন প্রাণীও এর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু ( আরবি ) বা শব্দের রূপ এসেছে বিবেক সম্পন্নদের। তা ছাড়া হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদের ( রাঃ ) পঠনে ও আছে। হযরত উবাই বিন কা‘আবের ( রাঃ ) পঠনে ( আরবি ) ও আছে। সঠিক কথা এই যে, হযরত আদম ( আঃ ) কে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত জিনিসের নামই শিখিয়ে ছিলেন। প্রজাতিগত নাম, গুণগত নাম এবং ক্রিয়াগত নামও শিখিয়েছিলেন। যেমন হযরত ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) কথা আছে যে, গুহ্যদ্বার দিয়ে নির্গত বায়ুর নামও শিখিয়েছিলেন ( সহীহ বুখারী, কিতাবুত তাফসীর )। একটি সুদীর্ঘ হাদীস এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী ( রঃ ) এ হাদীসটি এনেছেন। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কিয়ামতের দিন ঈমানদারগণ একত্রিত হয়ে বলবে-“আমরা যদি কোন একজনকে সুপারিশকারীরূপে আল্লাহর নিকট পাঠাতাম তবে কতই ভাল হতো । সুতরাং তারা সবাই মিলে হযরত আদম ( আঃ )-এর নিকট আসবে এবং তাকে বলবে আপনি আমাদের সবারই পিতা। আল্লাহ পাক আপনাকে স্বহস্তে সৃষ্টি করেছেন, স্বীয় ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন, আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করুন যেন আমরা আমাদের এই স্থানে শান্তি লাভ করতে পারি।' এ কথা শুনে তিনি উত্তরে বলবেনঃ ‘আমার এ যোগ্যতা নেই। তার স্বীয় পাপের কথা স্মরণ হয়ে যাবে, সুতরাং তিনি লজ্জিত হবেন। তিনি বলবেনঃ তোমরা হযরত নূহের ( আঃ ) কাছে যাও। তিনি প্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ পৃথিবীবাসীর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তারা এ উত্তর শুনে ষত নূহের ( আঃ ) নিকট আসবে। তিনিও এ উত্তরই দেবেন এবং আল্লাহর ইমর বিরুদ্ধে স্বীয় পুত্রের জন্যে প্রার্থনার কথা স্মরণ করে তিনি লজ্জিত হবেন এবং বলবেনঃ ‘তোমরা রাহমানের ( আল্লাহর ) বন্ধু হযরত ইবরাহীমের ( আঃ ) নিকট যাও।' তারা সব তাঁর কাছে আসবে কিন্তু এখানেও ঐ উত্তরই পাবে। তিনি বলবেনঃ “ তোমরা হযরত মূসা ( আঃ )-এর কাছে যাও, তার সাথে অল্লাহ এ কথা বলেছিলেন এবং তাঁকে তাওরাত দান করেছিলেন । এ কথা শুনে। মই হযরত মূসার ( আঃ ) নিকট আসবে এবং তার নিকট এ প্রার্থনাই জানাবে। কিন্তু এখানেও একই উত্তর পাবে। প্রতিশোধ গ্রহণ ছাড়াই একটি লোককে মেরে ফেলার কণা তার স্বরুণ হয়ে যাবে এবং তিনি লজ্জাবোধ করবেন ও বলবেনঃ ‘তোমরা হযরত ঈসার ( আঃ ) কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, তার কালেমা এবং তাঁর রূহু। এরা সব এখানে আসবে কিন্তু এখানেও ঐ উত্তরই পাবে। তিনি বলবেনঃ তোমরা মুহাম্মদ ( সঃ )-এর নিকট যাও। তাঁর পূর্বেও পরের সমস্ত পাপ মার্জনা করা হয়েছে। তারা সবাই আমার নিকট আসবে। আমি অগ্রসর হব। আমার প্রভুকে দেখা মাত্রই আমি সিজদায় পড়ে যাব। যে পর্যন্ত আল্লাহ পাককে মঞ্জুর হবে, আমি সিজদায় পড়েই থাকবো। অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ ‘মাথা উঠাও, যাজ্ঞা কর, দেয়া হবে; বল, শোনা হবে। এবং সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি আমার মস্তক উত্তোলন করবো এবং আল্লাহর প্রশংসা করবো যা তিনি আমাকে ঐ সময়েই শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করবো। আমার জন্যে সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তাদেরকে আমি বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে পুনরায় তাঁর নিকট ফিরে আসবে। আবার আমার প্রভুকে দেখে এ রকমই সিজদায় পড়ে যাবো। পুনরায় সুপারিশ করবো। আমার জন্যে সীমা নির্ধারিত হবে। তাদেরকেও বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তৃতীয়বার আসবো। আবার চতুর্থবার আসবো। শেষ পর্যন্ত দোযখে শুধুমাত্র ওরাই থাকবে যাদেরকে কুরআন মাজীদ বন্দী রেখেছে এবং যাদের জন্য জাহান্নামে চির অবস্থান ওয়াজিব হয়ে গেছে ( অর্থাৎ মুশরিক ও কাফির )।সহীহ মুসলিম, সুনান-ই- নাসাঈ, সুনান-ই- ইবনে মাজাহ্ ইত্যাদির মধ্যে শাফাআতের এই হাদীসটি বিদ্যমান রয়েছে। এখানে এই হাদীসটি আনার উদ্দেশ্য এই যে, এই হাদীসটির মধ্যে এ কথাটিও আছেঃ লোকেরা হযরত আদম ( আঃ ) কে বলবে ‘আল্লাহ আপনাকে সব জিনিষের নাম শিখিয়েছেন। অতঃপর ঐ জিনিষগুলো ফেরেশতাদের সামনে পেশ করেন এবং তাদেরকে বলেন-'তোমরা যদি তোমাদের একথায় সত্যবাদী হও যে, সমস্ত মাখলুক অপেক্ষা ভোমৱাই বেশী জ্ঞানী বা একথাই সঠিক যে, যমীনে আল্লাহ খলীফা বানাইবেন না, তবে এসব জিনিসের নাম বল। এটাও বর্ণিত আছে যে, যদি তোমরা এ কথায় সত্যবাদী হও বানী আদম বিবাদ বিসম্বাদ ও রক্তারক্তি করবে, তবে এ গুলোর নাম বল। কিন্তু প্রথমটিই বেশী সঠিক মত। যেন এতে এ ধমক রয়েছে যে, আচ্ছা! তোমরা যে বলছো যমীনে খলীফা হওয়ার যোগ্যে আমরাই, মানুষ নয়, যদি তোমরা এতে সত্যবাদী হও তবে যেসব জিনিষ তোমাদের সামনে বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোর নাম বলতো? আর যদি তোমরা তা বলতে না পার তবে তোমাদের এটা বুঝে নেয়া উচিত যে, যা তোমাদের সামনে বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোরই নাম তোমরা বলতে পারলে না, তবে ভবিষ্যতে আগত জিনিষের জ্ঞান তোমাদের কিরূপে হতে পারে? ' ফেরেশতারা এটা শোনা মাত্রাই আল্লাহ তা'আলার পবিত্র ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে এবং তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা বর্ণনা করতে আরম্ভ করলেন। আর বললেন যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যতটুকু শিখিয়েছেন, আমরা ততটুকুই জানি। সমস্ত জিনিষকে পরিবেষ্টনকারী জ্ঞান তো একমাত্র আপনারই আছে। আপনিই সমুদয় জিনিষের সংবাদ রাখেন। আপনার সমুদয় আদেশ ও নিষেধ হিকমত পরিপূর্ণ। যাকে কিছু শিখিয়ে দেন তাও হিকমত এবং যাকে শিক্ষা হতে বঞ্চিত রাখেন সেও হিকমতে। আপনি মহা প্রজ্ঞাময় ও ন্যায় বিচারক। ‘সুবহানাল্লাহ’-এর তাফসীর ও তার অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, 'সুবহানাল্লাহ' -এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর পবিত্রতা, অর্থাৎ তিনি সমস্ত অশ্লীলতা থেকে পবিত্র। হযরত উমার ( রাঃ ) একদা হযরত আলী ( রাঃ ) এবং তাঁর পার্শ্বে উপবিষ্ট অন্য কয়েকজন সাহাবী ( রাঃ ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তো জানি, কিন্তু সুবহানাল্লাহ' কি কালেমা?” হযরত আলী ( রাঃ ) উত্তরে বলেনঃ “এ কালেমাটি মহান আল্লাহ নিজের জন্যে পছন্দ করেন এবং এতে তিনি খুব খুশী হন, আর এটা বলা তাঁর নিকট খুবই প্রিয় । হযরত মাইমুন বিন মাহান ( রঃ ) বলেন যে, ওতে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমস্ত অশ্লীলতা হতে পবিত্র হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। হযরত আদম ( আঃ ) এভাবে নাম বলেছেনঃ “ আপনার নাম জিবরাইল ( আঃ ), আপনার নাম মিকাঈল ( আঃ ), আপনার নাম ইসরাফীল ( আঃ ) এমন কি তাকে চিল, কাক ইত্যাদি সব কিছুর নাম জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সবই বলে দেন । ফেরেশতারা যখন হযরত আদম ( আঃ )-এর মর্যাদার কথা বুঝতে পারলেন তখন আল্লাহ পাক তাদেরকে বললেনঃ “ দেখ, আমি তোমাদেরকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, আমি প্রত্যেক প্রকাশ্য ও গোপনীয় বিষয় জানি ।” যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “ তোমরা উচ্চস্বরে বল ( বা না বল ), আল্লাহ গোপন হতে গোপনতম খবর জানেন । আরেক জায়গায় আছে “ এ লোকেরা সেই আল্লাহকে কেন সিজদা করে না যিনি আকাশসমূহের ও পৃথিবীর গোপনীয় জিনিসগুলো বের করে থাকেন এবং যিনি তোমাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় সই জানেন? আল্লাহ একাই উপাস্য এবং তিনিই আরশ-ই-আযীমের প্রভু । তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন রাখ আমি তা জানি।” ভাবার্থ এই যে, ইবলীসের অন্তরে যে ফখর ও অহংকার লুকায়িত ছিল আল্লাহ অ জানতেন। আর ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তাতে ছিল প্রকাশ্য কথা। তাহলে আল্লাহ তা'আলা যে বললেনঃ “ তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন রাখ, আমি সবই জানি” এর অর্থ দাঁড়ালো এই যে, ফেরেশতারা যা প্রকাশ করেছিলেন তা আল্লাহ জানেন এবং ইবলীস তার অন্তরে যা গোপন রেখেছিল সেটাও তিনি জানতেন ।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) এবং আরও কয়েকজন সাহাবী ( রাঃ ) ও সাঈদ বিন যুবাইর ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ), যহহাক ( রঃ ) এবং সাওরীরও এটাই মত। ইবনে জারীরও ( রঃ ) এটাকে পছন্দ করেছেন। আবুল আলিয়া ( রঃ ), রাবী বিন আনাস ( রঃ ), হাসান ( রঃ ) এবং কাতাদার ( রঃ ) কথা এই যে, ফেরেশতাদের গোপনীয় কথা ছিলঃ যে মাখলূকই আল্লাহ পাক সৃষ্টি করুন না কেন, আমরাই তাদের চাইতে বেশী জ্ঞানী ও মর্যাদাবান হবো।' কিন্তু পরে এটা প্রমাণিত হয়ে গেল এবং তারাও জানতে পারলেন যে, জ্ঞান ও মর্যাদা দুটোতেই হযরত আদম ( আঃ ) তাঁদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছেন। হযরত আবদুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে বলেনঃ “ যেমন তোমরা এসব জিনিসের নাম অবহিত নও, দ্রুপ তোমরা এটাও জানতে পার না যে, তাদের মধ্যে ভাল ও মন্দ উভয়ই হবে । তাদের মধ্যে কতকগুলো অনুগত হবে এবং কতকগুলো হবে অবাধ্য। আর পূর্বেই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমাকে বেহেশত ও দোযখ দু'টোই পুরণ করতে হবে। কিন্তু তোমাদেরকে তার সংবাদ দেইনি। এখন ফেরেশতাগণ হযরত আদম ( আঃ ) কে প্রদত্ত জ্ঞান উপলব্ধি করে তাঁর প্রধান্য স্বীকার করে নেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, সবচেয়ে উত্তম মত হচ্ছে হযরত ইবনে আব্বাসের ( রাঃ ) মতটি। তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা যেন বলছেনঃ ‘ফেরেশতামণ্ডলী! আকাশ ও পৃথিবীর অদৃশ্যের জ্ঞান, তোমাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয়তার জ্ঞান আমার আছে। তাদের প্রকাশ্য কথা এবং ইবলীসের গোপনীয় অহংকারের কথাও আল্লাহ জানতেন। এতে গোপনকারী শুধুমাত্র ইবলীস ছিল। কিন্তু বহুবচনের বা ( আরবি ) রূপ আনা হয়েছে। কেননা, আরবে এই প্রচলন আছে ও তাদের কথায় এটা পাওয়া যায় যে, তারা এক বা কয়েকজনের একটি কাজকে সকলের দিকে সম্বন্ধ লাগিয়ে থাকে। তারা বলে থাকেঃ সৈন্যগণকে মেরে ফেলা হয়েছে বা তারা পরাজিত হয়েছে। অথচ পরাজয় বা হত্যা একজনের বা কয়েকজনের হয়ে থাকে, কিন্তু তারা বহু বচনের রূপ এনে। থাকে।বানূ তামীম গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে তার ঘরের পিছন হতে ডেকেছিল। কিন্তু কুরআন মাজীদে এর বর্ণনা নিম্নরূপে এসেছেঃ “ যারা তোমাকে ( নবী সঃ )-কে ঘরের পিছন থেকে ডেকে থাকে.... ।' তা হলে দেখা যাচ্ছে যে, ডাক দিয়েছিল একজনই কিন্তু রূপ আনা হয়েছে বহু বচনের। কাজেই ফেরেশতাদের মধ্যে গোপনকারী শুধু শয়তান হলেও বহু বচনের রূপ ব্যবহার করা হয়েছে।

সূরা বাকারাহ্ আয়াত 33 সূরা

قال ياآدم أنبئهم بأسمائهم فلما أنبأهم بأسمائهم قال ألم أقل لكم إني أعلم غيب السموات والأرض وأعلم ما تبدون وما كنتم تكتمون

سورة: البقرة - آية: ( 33 )  - جزء: ( 1 )  -  صفحة: ( 6 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার
  2. হে আমার পালনকর্তা! তবে আপনি আমাকে গোনাহগার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করবেন না।
  3. অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
  4. অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর
  5. তিনি ইচ্ছা করলে বাতাসকে থামিয়ে দেন। তখন জাহাজসমূহ সমুদ্রপৃষ্ঠে নিশ্চল হয়ে পড়ে যেন পাহাড়। নিশ্চয়
  6. আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে দুয়েই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে
  7. শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।
  8. কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ
  9. এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার
  10. তার ঠিকানা হবে হাবিয়া।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:

সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত বাকারাহ্  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, November 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers