কোরান সূরা নিসা আয়াত 33 তাফসীর
﴿وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ ۚ وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا﴾
[ النساء: 33]
পিতা-মাতা এবং নিকটাত্নীয়গণ যা ত্যাগ করে যান সেসবের জন্যই আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা নিঃসন্দেহে সব কিছুই প্রত্যক্ষ করেন। [সূরা নিসা: 33]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 33
আর প্রত্যেকের জন্য আমরা উত্তরাধিকার নির্ধারিত করেছি যা পিতামাতা ও নিকট-আত্মীয়রা রেখে যায়। আর যাদের সঙ্গে তোমাদের ডান হাতের দ্বারা অঙ্গীকার করেছ তাদের ভাগ তা হলে প্রদান করো। আল্লাহ্ নিঃসন্দেহ সব-কিছু তেই সাক্ষ্যদাতা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩৩. তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি আসাবাহ বা ওয়ারিশ বানিয়েছি। যারা তাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা যে মিরাস রেখে গেছে তার ওয়ারিশ হবে। আর যাদের সাথে তোমরা শক্ত অঙ্গীকার করেছো জোটবদ্ধ থাকা ও সহযোগিতার উপর তাদেরকে তাদের মিরাসের অংশটুকু দিয়ে দিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সকল বিষয়ে সাক্ষী। তোমাদের কসম ও অঙ্গীকারের উপর সাক্ষী থাকা তারই অন্যতম। কারো সাথে জোটবদ্ধ থাকার ভিত্তিতে মিরাস এটি ইসলামের শুরু যুগে ছিলো যা পরবর্তীতে রহিত হয়ে গেছে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
( নারী-পুরুষ ) সকলের জন্যই পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আমি উত্তরাধিকারী করেছি।[১] আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের ( প্রাপ্য ) অংশ তাদেরকে প্রদান কর। [২] নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী। [১] مَوَالِيْ 'মাওয়ালী' হলمَوْلَى 'মাওলা'র বহুবচন। কয়েকটি অর্থে এটি ব্যবহার হয়। যেমন, বন্ধু, স্বাধীন করা ক্রীতদাস, চাচাতো ভাই এবং প্রতিবেশী। এখানে এর অর্থ হল ওয়ারেস বা উত্তরাধিকারী। অর্থাৎ, প্রত্যেক নারী-পুরুষের ত্যক্ত সম্পদের ওয়ারেস হবে তার পিতা-মাতা এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়রা। [২] এই আয়াত রহিত, না রহিত নয় এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইবনে জারীর প্রভৃতি মুফাসসিরগণ এটিকে রহিত মানেন না এবং أَيْمَانُكُمْ ( অঙ্গীকার বা চুক্তি ) বলতে এমন শপথ ও অঙ্গীকারকে বুঝিয়েছেন যা একে অপরের সাহায্যের জন্য ইসলামের পূর্বে দুই ব্যক্তি অথবা দু'টি গোত্রের মধ্যে করা হয়েছে এবং ইসলামের পরেও তা বহাল আছে। نَصِيْبَهُمْ ( অংশ ) বলতে উক্ত শপথ ও অঙ্গীকার রক্ষা স্বরূপ পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতায় অংশগ্রহণ করাকে বুঝানো হয়েছে। আর ইবনে কাসীর এবং অন্য কিছু মুফাসসিরদের নিকট এ আয়াত রহিত। কেননা, أَيْمَانُكُمْ ( অঙ্গীকার বা চুক্তি ) বলতে তাঁদের নিকট সেই অঙ্গীকার, যা হিজরতের পর আনসারী ও মুহাজির সাহাবাগণের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে হয়েছিল। এতে একজন মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর মালের তাঁর আত্মীয়দের পরিবর্তে ওয়ারেস হতেন, কিন্তু এটা যেহেতু কেবল সাময়িক ব্যবস্থা স্বরূপ ছিল, তাই পরে [وَأُولُوا الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَى بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللهِ] " যারা আত্মীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পরের বেশী হকদার। " ( আনফালঃ ৭৫ ) আয়াত নাযিল করে তা রহিত করে দিলেন। [فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ] ( তাদের (প্রাপ্য ) অংশ তাদেরকে প্রদান কর) এর অর্থ বন্ধুত্ব, ভালবাসা ও এক অপরের সহযোগিতা; অনুরূপ অসীয়ত স্বরূপ কিছু দেওয়াও এর মধ্যে শামিল। বন্ধুত্বের বন্ধন এবং শপথ, অঙ্গীকার বা চুক্তিবন্ধন অথবা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ফলে ওয়ারেস হওয়ার কথা এখন আর ধারণাই করা যাবে না। আলেমদের একটি দল এ থেকে এমন দুই ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যাদের কমপক্ষে একজনের কোন ওয়ারেসই নেই। তারা পরস্পর এই চুক্তি করে যে, আমি তোমার বন্ধু। কোন অপরাধ করে ফেললে তুমি আমার সাহায্য করো। আর আমাকে হত্যা করা হলে, আমার রক্তপণ তুমি নিয়ে নিও। ফলে এই ওয়ারেসহীন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার মাল উক্ত ব্যক্তি নিয়ে নেবে। তবে শর্ত হল, সত্যিকারেই যেন তার কোন ওয়ারেস না থাকে। অন্য একদল আলেম আয়াতের আরো এক অর্থ বর্ণনা করেছেন; তাঁরা বলেন, [وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ] ( যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ) থেকে স্ত্রী ও স্বামীকে বুঝানো হয়েছে এবং এর সম্পর্ক হল, الأَقْرَبُوْنَ ( আত্মীয়-স্বজন ) এর সাথে। অর্থ দাঁড়াবে, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ( অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রী ), তারা যা কিছু ছেড়ে যাবে, তাদের হকদার ( ওয়ারেস ) আমি নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। অতএব এই হকদারদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ দিয়ে দাও। অর্থাৎ, পূর্বের আয়াতে বিস্তারিতভাবে মীরাসের অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্তাকারে তার প্রতি আরো একটু তাকীদ করা হয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমরা উত্তরাধিকারী করেছি [ ১ ] এবং যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দেবে [ ২ ]। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বকিছুর সম্যক দ্রষ্টা। [ ১ ] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেনঃ মুহাজেররা যখন মদীনায় হিজরত করে আসত, তখন আনসারদের নিকটাত্মীয়দের বাদ দিয়ে যাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন মুহাজেররা তাদের ওয়ারিস হত। তারপর যখন আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়, তখন তা রহিত হয়ে যায়। [ বুখারীঃ ২২৯২, ৪৫৮০,৬৭৪৭ ] [ ২ ] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যখন ‘আর যাদের সাথে তোমরা অংগীকারাবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দেবে’ এ আয়াত নাযিল হয়, তখন কেউ কেউ অপর কারও সাথে বংশীয় কোন সম্পর্ক না থাকা সত্বেও চুক্তিবদ্ধ হতো, এর ফলে একে অপরের ওয়ারিশ হতো। তারপর যখন আল্লাহর বাণী ‘আর আত্মীয়রা আল্লাহর বিধানে একে অন্যের চেয়ে বেশী হকদার’। [ সূরা আল-আনফাল:৭৫; আল-আহযাব:৬ ] এ আয়াত নাযিল হয়, তখন তাও রহিত হয়ে যায়। [ মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৩৪৬; তাবারী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
বহু মুফাসসির হতে বর্ণিত আছে যে, শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে ‘উত্তরাধিকারী'। কারও কারও মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘আসাবা'। পিতৃব্য পুত্রদেরকেও ‘মাওলা বলা হয়। যেমন হযরত ফযল ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর নিম্নের কবিতায় রয়েছেঃ ( আরবী ) সুতরাং আয়াতের ভাবার্থ হল এই যে, হে জনগণ! তোমাদের মধ্য হতে প্রত্যেকের জন্যে আমি আসাবা বানিয়ে দিয়েছি যারা সে মালের উত্তরাধিকারী হবে যা তাদের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে যাবে। আর যারা তোমাদের মুখের ভাই তাদেরকে তাদের উত্তরাধিকারের অংশ প্রদান কর। যেমন শপথের সময় তোমাদের মধ্যে অঙ্গীকার হয়েছিল।এটা ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের নির্দেশ। পরে এটা রহিত হয়ে যায় এবং নির্দেশ দেয়া হয় যে, যাদের সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছে সে অঙ্গীকার ঠিক রাখতে হবে এবং তাদেরকে ভুলে যাওয়া চলবে না, কিন্তু তারা মীরাস পাবে না। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ( আরবী ) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে উত্তরাধিকারী। আর পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, মুহাজিরগণ যখন মদীনায় আগমন করেন তখন তথাকার প্রথা অনুযায়ী তাঁরা তাঁদের আনসার ভাইদের উত্তরাধিকারী হতেন এবং আনসারদের আত্মীয়-স্বজন তাঁদের উত্তরাধিকারী হতেন না। সুতরাং এ আয়াত দ্বারা উক্ত প্রথা রহিত হয়ে যায় এবং তাদেরকে বলা হয়-'তোমরা তোমাদের ভাইদেরকে সাহায্য কর, তাদের উপকার কর এবং তাদের মঙ্গল কামনা কর। কিন্তু তারা তোমাদের মীরাস পাবে না। হ্যা, তবে তোমরা তাদের জন্য অসিয়ত করে যাও।' ইসলামের পূর্বে প্রথা ছিল এই যে, দুই ব্যক্তি অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে বলতো, আমি তোমার উত্তরাধিকারী।' এভাবে আরব গোত্রগুলো অঙ্গীকার ও চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়তো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘অজ্ঞতার যুগের শপথ এবং অঙ্গীকার ও চুক্তিকে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে। কিন্তু এখন ইসলামে শপথ এবং এ প্রকারের আহাদ ও অঙ্গীকার নেই। ঐগুলোকে এ আয়াতটি রহিত করে দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে যে, চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তিদের তুলনায় আত্মীয়-স্বজনগণই আল্লাহর কিতাবের নির্দেশক্রমে বেশী উত্তম।ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ইসলামে শপথ নেই এবং অজ্ঞতা যুগের প্রত্যেক শপথর্কে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে । যদি আমাকে লাল রঙের উটও দেয়া হয় এবং ঐ শপথকে ভেঙ্গে দিতে বলা হয় যা দারুন নদওয়ায় করা হয়েছিল, তথাপি আমি তা পছন্দ করবো না।' হযরত ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমি বাল্যকালে মুতায়্যাবাইনের’ শপথের সময় আমার মাতুলদের সাথে ছিলাম । সুতরাং আমি লাল রঙের উট পেলেও সে শপথকে ভেঙ্গে দেয়া পছন্দ করবো না। সুতরাং এটা স্মরণ রাখার যোগ্য যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুরাইশ ও আনসারের মধ্যে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তা ছিল শুধুমাত্র প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি করার জন্যে। হযরত কায়েস ইবনে আ’সেম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে কসম' সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ‘অজ্ঞতার যুগে যে কসম ছিল তা তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে, কিন্তু ইসলামে কসম নেই।'হযরত উম্মে সালমা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ ইসলামে হলফ’ নেই, কিন্তু অজ্ঞতা যুগের হলফকে ইসলাম দৃঢ় করেছে।' মক্কা বিজয়ের দিনেও রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) দাঁড়িয়ে স্বীয় ভাষণে এ কথাই ঘোষণা করেছিলেন।হযরত দাউদ ইবনে হুসাইন ( রঃ ) বলেন, আমি হযরত উম্মে সা’দ বিনতে রুবায়ের ( রাঃ ) নিকট কুরআন কারীম পাঠ করতাম। আমার সাথে তাঁর পৌত্র মূসা ইবনে সা’দও ( রঃ ) পড়তেন। হযরত উম্মে সা'দ ( রাঃ ) পিতৃহীনা অবস্থায় হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর ক্রোড়ে লালিত পালিত হয়েছিলেন। আমি এ আয়াতের ( আরবী ) পাঠ করি। তখন শিক্ষিকা আমাকে বাধা দিয়ে বলেনঃ ( আরবী ) পড়। জেনে রেখ যে, এ আয়াতটি হযরত আবূ বকর ( রাঃ ) এবং তাঁর পুত্র হযরত আবদুর রহমান ( রাঃ )-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত আবদুর রহমান ( রাঃ ) প্রথমে ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তাই হযরত আবু বকর ( রাঃ ) শপথ করে বলেনঃ “ আমি তাকে উত্তরাধিকারী করবো না । অতঃপর যখন তিনি মুসলমানদের তরবারীর চাপে বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন তখন হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর প্রতি আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হয় যে, তিনি যেন স্বীয় পুত্র আবদুর রহমানকে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত না করেন। কিন্তু এ উক্তিটি গারীব। প্রথমটিই সঠিক উক্তি।মোটকথা, এ আয়াত এবং হাদীসসমূহ দ্বারা ঐ মনীষীদের উক্তি খণ্ডন করা হচ্ছে যারা শপথ ও অঙ্গীকারের উপর ভিিত্ত করে এখনও উত্তরাধিকার দেয়ার পক্ষপাতি। যেমন ইমাম আবূ হানীফা ( রঃ ) এবং তাঁর সহচরদের এ ধারণা রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ ) হতেও এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু সঠিক মাযহাব হচ্ছে জমহুরের মাযহাব এবং ইমাম মালিক ( রঃ ), ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ )-এর প্রসিদ্ধ মাযহাবও সঠিকই বটে।অতএব, উল্লিখিত আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হচ্ছে তার আত্মীয়-স্বজন, অন্য কেউ নয়। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ অংশীদার উত্তরাধিকারীদেরকে তাদের অংশ মুতাবিক অংশ দিয়ে বাকী যা থাকবে তা আসাবাগণ পাবে। উত্তরাধিকারী হচ্ছে ওরাই যাদের বর্ণনা ফারায়েযের দু'টি আয়াতে রয়েছে। আর যাদের সঙ্গে তোমরা দৃঢ়চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে ( অর্থাৎ এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ) তাদেরকে মীরাস প্রদান কর।' এর পরে যে হলফ হবে তা ক্রিয়াশীল মনে করা হবে না। আবার এও বলা হয়েছে যে, অঙ্গীকার ও শপথ এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই হোক বা পরেই তোক নির্দেশ একই যে, যাদের সাথে অঙ্গীকার করা হবে। তারা মীরাস পাবে না। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর উক্তি অনুসারে তাদের অংশ হচ্ছে সাহায্য সহানুভূতি, মঙ্গল কামনা এবং অসিয়ত-মীরাস নয়। তিনি বলেন, ‘জনগণ অঙ্গীকার ও চুক্তি করতো যে, তাদের মধ্যে যে প্রথমে মারা যাবে অপর জন তার ওয়ারিস হবে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা ( আরবী ) এ আয়াতটি অবতীর্ণ করে নির্দেশ দেন যে, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন একে অপরের সাথে বেশী সম্পর্কযুক্ত, তবে তোমরা তোমাদের বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। ( ৩৩:৬ ) অর্থাৎ তাদের জন্যে যদি এক তৃতীয়াংশ মাল অসিয়ত করে যাও তবে তা বৈধ। সুপরিচিত ও সুপ্রসিদ্ধ কাজও এটাই। পূর্ববর্তী আরো বহু মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি ( আরবী )-এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর ( রঃ ) বলেন যে, তাদেরকে তাদের অংশ দাও’ -এর ভাবার্থ হচ্ছে মীরাস। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) একটি লোককে স্বীয় ‘মাওলা' বানিয়েছিলেন এবং তাকে উত্তরাধিকারী করেছিলেন। হযরত ইবনুল মুসাইয়াব ( রঃ ) বলেন যে, এ আয়াতটি ঐ লোকদের ব্যাপারে অবর্তীণ হয় নিজেদের পুত্রদের ছাড়া অন্যদেরকে নিজেদের পুত্র বানিয়ে নিতে এবং তাদেরকে তাদের সম্পত্তির প্রকৃত উত্তরাধিকারী বলে সাব্যস্ত করতো। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের অংশ অসিয়তের মাধ্যমে দিতে বলেছেন এবং মীরাস দিতে বলেছেন ( আরবী ) অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনদেরকে। আল্লাহ তা'আলা শুধু মুখের ও পালিত পুত্রদেরকে মীরাস দিতে নিষেধ করেছেন এবং খুব অপছন্দও করেছেন। তবে তাদেরকে অসিয়তের মাধ্যমে দিতে বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন, আমার নিকট মনোনীত উক্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে অংশ দাও’ -এর ভাবার্থ হচ্ছে-তাদেরকে সাহায্য সহানুভূতির অংশ দাও। কিন্তু এটা নয় যে, তাদেরকে তাদের মীরাসের অংশ দাও। এ অর্থ করলে আয়াতটিকে মানসুখ' বলার কোন কারণ থাকে না বা একথা বলারও প্রয়োজন হয় না যে, এ নির্দেশ পূর্বে ছিল এখন নেই। বরং আয়াত শুধু ঐ কথার নির্দেশ করেছে যে, তোমাদের মধ্যে একে অপরের সাহায্য সহানুভূতি করার যে অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা পূরণ কর। সুতরাং এ আয়াতটি ‘মুহকাম’ ও রহিতহীন। কিন্তু ইমাম সাহেবের এ উক্তির ব্যাপারে কিছু চিন্তার বিষয় রয়েছে। কেননা, এটা নিঃসন্দেহ যে, কতগুলো অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি শুধু সাহায্য সহানুভূতির উপরই হতো। কিন্তু এতেও সন্দেহ নেই যে, কতগুলো অঙ্গীকার মীরাসের উপরও হতো। যেমন পূর্ববর্তী বহু গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে এবং যেমন হযরত ইবনে আববাস ( রাঃ )-এর তাফসীরেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, মুহাজিরগণ আনসারদের উত্তরাধিকারী হতেন এবং তাদের আত্মীয়গণ উত্তরাধিকারী হতেন না। অবশেষে এটা রহিত হয়ে যায়। তাহলে ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) একথা কিরূপে বলতে পারেন যে, এ আয়াতটি মুহকাম ও রহিতহীন? এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সূরা নিসা আয়াত 33 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আর যারা আমার আয়াত সমূহকে ব্যর্থ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, তাদের জন্যে রয়েছে
- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি
- যখন মূসা তাঁর যুবক (সঙ্গী) কে বললেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌছা পর্যন্ত আমি আসব
- কাফেরগণ, তোমরা কিছুদিন খেয়ে নাও এবং ভোগ করে নাও। তোমরা তো অপরাধী।
- আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর
- সর্ববিধ প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং অন্ধকার ও আলোর উদ্ভব
- যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে
- ফল-মূল এবং তারা সম্মানিত।
- আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।
- এতদসত্ত্বেও এরা সন্দেহে পতিত হয়ে ক্রীড়া-কৌতুক করছে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers