কোরান সূরা দুখান আয়াত 33 তাফসীর
﴿وَآتَيْنَاهُم مِّنَ الْآيَاتِ مَا فِيهِ بَلَاءٌ مُّبِينٌ﴾
[ الدخان: 33]
এবং আমি তাদেরকে এমন নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম যাতে ছিল স্পষ্ট সাহায্য। [সূরা দুখান: 33]
Surah Ad-Dukhaan in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Ad Dukhaan ayat 33
আর তাদের দিয়েছিলাম কতক নিদর্শনাবলী যার মধ্যে ছিল এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৩৩. তাদেরকে এমন সব দলীল-প্রমাণাদি দিয়েছি যদ্বারা আমি মূসা ( আলাহিস-সালাম ) কে সহযোগিতা করেছি। যাতে তাদের জন্য মান্না-সালওয়ার মতো স্পষ্ট নি‘আমত রয়েছে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এবং ওদেরকে দিয়েছিলাম নিদর্শনাবলী; যাতে ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা। [১] [১] নিদর্শনাবলী বলতে, সেই মু'জিযাসমূহকে বুঝানো হয়েছে, যা মূসা ( আঃ )-কে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোতে পরীক্ষার দিক এই ছিল যে, মহান আল্লাহ দেখতে চেয়েছিলেন, তারা কিভাবে আমল করে? অথবা নিদর্শনাবলী বলতে সেই সব অনুগ্রহকে বুঝানো হয়েছে, যা মহান আল্লাহ তাদের প্রতি করেছিলেন। যেমন, ফিরআউনীদেরকে ডুবিয়ে মেরে তাদেরকে রক্ষা করা, তাদের জন্য সমুদ্র চিরে পথ বানিয়ে দেওয়া, মেঘ দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করা, মান্ন ও সালওয়া অবতরণ করা ইত্যাদি। এতে পরীক্ষা এই ছিল যে, এই জাতি এইসব অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করছে, নাকি তার অকৃতজ্ঞতা করে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার রাস্তা অবলম্বন করছে --তা দেখা।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর আমারা তাদেরকে এমন নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম যাতে ছিল সুস্পষ্ট পরীক্ষা [ ১ ] ; [ ১ ] এখানে লাঠি, দীপ্তিময় শুভ্ৰ হাত ইত্যাদি মু'জিযা বোঝানো হয়েছে। بلاء শব্দের দু'অৰ্থ পুরস্কার ও পরীক্ষা। এখানে উভয় অর্থ অনায়াসে সম্ভবপর। [ দেখুন, কুরতুবী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৭-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি ঐ মুশরিকদের পূর্বে মিসরের কিবতীদেরকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি তাদের কাছে তাঁর সম্মানিত রাসূল হযরত মূসা ( আঃ )-কে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত মূসা ( আঃ ) তাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ তোমরা বানী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিয়ো না । আমি আমার নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে কতকগুলো মু'জিযা নিয়ে এসেছি। যারা হিদায়াত মেনে নিবে তারা শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে। আল্লাহ তা'আলা আমাকে তার অহীর আমানতদার করে তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন। আমি তোমাদের নিকট তার বাণী পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের আল্লাহর বাণীকে মেনে না নিয়ে উদ্ধত্য প্রকাশ করা মোটেই উচিত নয়। তার বর্ণনাকৃত দলীল-প্রমাণাদি ও আহকামের সামনে মাথা নত করা একান্ত কর্তব্য। যারা তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি তোমাদের সামনে প্রকাশ্য দলীল ও স্পষ্ট নিদর্শন পেশ করছি। তোমাদের মন্দ কথন ও অপবাদ হতে আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) ও আবু সালেহ ( রঃ ) এ অর্থই করেছেন। আর কাতাদা ( রঃ ) পাথর দ্বারা হত্যা করা অর্থ নিয়েছেন। অর্থাৎ “ আমি তোমাদের দেয়া মুখের কষ্ট ও হাতের কষ্ট হতে আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর শরণাপন্ন হচ্ছি ।' হযরত মূসা ( আঃ ) তাদেরকে আরো বললেনঃ “ যদি তোমরা আমার কথা মান্য না কর, আমার উপর যদি তোমাদের আস্থা না থাকে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনতে মন না চায় তবে কমপক্ষে আমাকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকো এবং ঐ সময়ের জন্যে প্রস্তুত থাকো যখন আল্লাহ তা'আলা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করবেন ।” অতঃপর যখন হযরত মূসা ( আঃ ) তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন অবস্থান করলেন, অন্তর খুলে তাদের মধ্যে প্রচার কার্য চালিয়ে গেলেন, তাদের সর্বপ্রকারের মঙ্গল কামনা করলেন এবং তাদের হিদায়াতের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেন, তখনও দেখলেন যে, দিন দিন তারা কুফরীর দিকেই এগিয়ে চলছে, ফলে বাধ্য হয়ে তিনি আল্লাহ তা'আলার নিকট তাদের জন্যে বদদু'আ করলেন। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ মূসা ( আঃ ) বললোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি ফিরাউন ও তার পারিষদবর্গকে পার্থিব জীবনে বাহ্যাড়ম্বর ও ধন-দৌলত প্রদান করেছেন যেন তারা ( আপনার বান্দাদেরকে ) আপনার পৃথ হতে ভ্রষ্ট করে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের ধন-মালকে আপনি ধ্বংস করে দিন এবং তাদের অন্তরকে শক্ত করে দিন, সুতরাং তারা যেন ঈমান আনয়ন না করে যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে । তিনি ( আল্লাহ ) বললেন:তোমাদের দু’জনের ( হযরত মূসা আঃ ও হযরত হারূনের আঃ ) প্রার্থনা কবূল করা হলো, সুতরাং তোমরা স্থির থাকো।" ( ১০:৮৮-৮৯ )এখানে রয়েছেঃ “ আমি মূসা ( আঃ )-কে বললাম, তুমি আমার বান্দাদেরকে অর্থাৎ বানী ইসরাঈলকে নিয়ে রজনী যোগে বের হয়ে পড়, নিশ্চয়ই তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে । কিন্তু নির্ভয়ে চলে যাবে। আমি তোমাদের জন্যে সমুদ্রকে শুষ্ক করে দিবো।” অতঃপর হযরত মূসা ( আঃ ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। ফিরাউন তার লোক-লশকর নিয়ে বানী ইসরাঈলকে পাকড়াও করার উদ্দেশ্যে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো। পথে সমুদ্র প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো। হযরত মূসা ( আঃ ) বানী ইসরাঈলকে নিয়ে সমুদ্রে নেমে পড়লেন। পানি শুকিয়ে গেল। সুতরাং তিনি সঙ্গীসহ সমুদ্র পার হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি ইচ্ছা করলেন যে, সমুদ্রে লাঠি মেরে ওকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন, যাতে ফিরাউন এবং তার লোকজন সমুদ্র পার হতে না পারে। তখন আল্লাহ তা'আলা তাঁর কাছে অহী। করলেনঃ সমুদ্রকে স্থির থাকতে দাও, তারা এমন বাহিনী যারা নিমজ্জিত হবে।'( আরবী )-এর অর্থ হলো শুষ্ক রাস্তা, যা নিজের প্রকৃত অবস্থার উপর থাকে। মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য এই যে, সমুদ্রকে যেন প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া না হয় যে পর্যন্ত না শত্রুরা এক এক করে সবাই সমুদ্রের মধ্যে এসে পড়ে। এসে পড়লেই সমুদ্রকে প্রবাহিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে এবং এর ফলে সবাই নিমজ্জিত হবে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ তারা পশ্চাতে রেখে গিয়েছিল কত উদ্যান ও প্রস্রবণ, কত শস্যক্ষেত্র ও সুরম্য অট্টালিকা, কত বিলাস উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিতো! এসব ছেড়ে তারা সবাই ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল ।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) বলেন যে, মিসরের নীল সাগর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নদীগুলোর সরদার এবং সমস্ত নদী ওর অধীনস্থ। যখন ওকে প্রবাহিত রাখার আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা হয় তখন সমস্ত নদীকে তাতে পানি পৌছিয়ে দেয়ার হুকুম করা হয়। আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছানুযায়ী তাতে পানি আসতে থাকে। অতঃপর তিনি নদীগুলোকে বন্ধ করে দেন এবং ওগুলোকে নিজ নিজ জায়গায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।ফিরাউন এবং তার পারিষদবর্গের ঐ বাগানগুলো নীল সাগরের উভয় তীর ধরে ক্রমান্বয়ে চলে গিয়েছিল। এই ক্রমপরম্পরা ‘আসওয়ান’ হতে রাশীদ’ পর্যন্ত ছিল। এর নয়াট উপনদী ছিল। ওগুলোর নাম হলোঃ ইসকানদারিয়া, দিমইয়াত, সারদোস, মাফ, ফুয়ূম, মুনতাহা। এগুলোর একটির সঙ্গে অপরটির সংযোগ ছিল। একটি হতে অপরটি বিচ্ছিন্ন ছিল না। পাহাড়ের পাদদেশে তাদের শস্যক্ষেত্র ছিল যা মিসর হতে নিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত বরাবর চলে গিয়েছিল। নদীর পানি এই সবগুলোকে সিক্ত করতো। তারা পরম সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করছিল। কিন্তু তারা গর্বে ফুলে উঠেছিল। পরিশেষে তারা এসব নিয়ামত রেখে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছিল। এক রাত্রির মধ্যেই তারা সমস্ত নিয়ামত ছেড়ে দুনিয়া হতে চির বিদায় গ্রহণ করে এবং তাদেরকে ভূষির মত উড়িয়ে দেয়া হয় এবং গত হয়ে যাওয়া দিনের মত নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। এমনভাবে তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয় যে, আর উথিত হয়নি। তারা জাহান্নামবাসী হয়ে যায় এবং ওটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান। আল্লাহ তা'আলা এই সমুদয় নিয়ামতের উত্তরাধিকারী করে দেন বানী ইসরাঈলকে। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বানী ইসরাঈল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি ।”( ৭:১৩৭ ) এখানেও ‘ভিন্ন সম্প্রদায়কে উত্তরাধিকারী করেছিলাম' দ্বারা বানী ইসরাঈলকেই বুঝানো হয়েছে। এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ‘আকাশ ও পৃথিবী কেউই তাদের জন্যে অশ্রুপাত করেনি। কেননা, ঐ পাপীদের এমন কোন সৎ আমলই ছিল না যা আকাশে উঠে থাকে এবং এখন না উঠার কারণে তারা কাঁদবে বা দুঃখ-আফসোস করবে। আর যমীনেও এমন জায়গা ছিল না যেখানে বসে তারা আল্লাহর ইবাদত করতো এবং এখন তাদেরকে না পেয়ে ওটা দুঃখ ও শোক প্রকাশ করবে। কাজেই এগুলো তাদের ধ্বংসের কারণে কাদলো না এবং দুঃখ প্রকাশ করলো না।'মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ ‘তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।' হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ ‘আকাশের দু’টি দরযা রয়েছে, একটি দিয়ে তার ( মানুষের ) রূযী নেমে আসে এবং অপরটি দিয়ে তার আমল এবং কথা উপরে উঠে যায়। যখন সে মারা যায় এবং তার আমল ও রিযক বন্ধ হয়ে যায় তখন ও দুটি কাদতে থাকে।” অতঃপর তিনি ( আরবী ) এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। তারপর তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা যমীনে কোন ভাল কাজ করেনি যে, তাদের মৃত্যুর কারণে যমীন কাঁদবে এবং তাদের কোন ভাল কথা ও ভাল কাজ আকাশে উঠে না যে, ওগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আকাশ কাঁদবে।” ( এ হাদীসটি হাফিয আবূ ইয়ালা মুসিলী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত শুরাইহ ইবনে আবীদিল হারামী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ইসলাম দারিদ্রের অবস্থায় শুরু হয়েছে এবং সত্বরই দারিদ্রের অবস্থায় ফিরে যাবে, যেমনভাবে শুরু হয়েছিল । জেনে রেখো যে, মুমিন কোথায়ও অপরিচিত মুসাফিরের মত মৃত্যুবরণ করে না। মুমিন সফরে যে কোন জায়গায় মারা যায়, সেখানে তার জন্যে কোন ক্রন্দনকারী না থাকলেও তার জন্যে যমীন ও আসমান ক্রন্দন করে। তারপর তিনি ( আরবী )-এই আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন যে, এ দু'টো কাফিরদের জন্যে কাঁদে না।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)কোন এক ব্যক্তি হযরত আলী ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আসমান ও যমীন কারো জন্যে কখনো কেঁদেছে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আজ তুমি আমাকে এমন একটি কথা জিজ্ঞেস করলে যা ইতিপূর্বে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি । তাহলে শুনো, বান্দার জন্যে যমীনে নামাযের একটি জায়গা থাকে এবং তার আমল উপরে উঠার জন্যে আসমানে একটি জায়গা থাকে। ফিরাউন এবং তার লোকদের কোন ভাল আমল ছিলই না। কাজেই না যমীন তাদের জন্যে কেঁদেছে, না আসমান এবং না তাদেরকে অবকাশ দেয়া হয় যে, তারা পরে কোন সৎ আমল করতে পারে।” হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কেও এই প্রশ্নই করা হলে তিনিও প্রায় ঐ উত্তরই দেন, এমন কি তিনি একথাও বলেন যে, মুমিনদের জন্যে যমীন চল্লিশ দিন পর্যন্ত কাঁদতে থাকে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) এটা বর্ণনা করলে এক ব্যক্তি এতে বিস্ময় প্রকাশ করলো। তখন তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এতে বিস্ময়ের বিষয় কি আছে? যে বান্দা তার রুকূ' ও সিজদা দ্বারা যমীনকে আবাদ রাখতো, যে বান্দার তাকবীর ও তাসবীহর শব্দ আসমান বরাবরই শুনতে থাকতো, ঐ আবেদ বান্দার জন্যে এ দুটি কেন কাদবে না?হযরত কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, ফিরাউন ও তার লোকদের মত লাঞ্ছিত ও অপমানিত লোকদের জন্যে যমীন ও আসমান কাদবে কেন?ইবরাহীম ( রঃ ) বলেন যে, যখন হতে দুনিয়া রয়েছে তখন হতে আসমান শুধু দুই ব্যক্তির জন্যে কেঁদেছে। তাঁর ছাত্র আবীদ ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “ আসমান ও যমীন কি প্রত্যেক মুমিনের জন্যে কাঁদে না?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “শুধু ঐ স্থানটুকু কঁাদে যে স্থানটুকু দিয়ে তার আমল উপরে উঠে যায় ।” অতঃপ তিনি বলেন যে, আসমানের রক্তরঙ্গে রঞ্জিত ও চর্মের রূপ ধারণ করাই হলো ওর ক্রন্দন করা। আসমানের এরূপ অবস্থা শুধু দুই ব্যক্তির শাহাদতের সময় হয়েছিল। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া ( আঃ )-কে যখন শহীদ করে দেয়া হয় তখন আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিল এবং রক্ত বর্ষণ করেছিল। আর হযরত হুসাইন ইবনে আলী ( রাঃ )-কে যখন শহীদ করা হয় তখনও আকাশ লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। ( এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন) ইয়াযীদ ইবনে আবি যিয়াদ ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হুসাইন ( রাঃ )-এর শাহাদাতের কারণে চার মাস পর্যন্ত আকাশের প্রান্ত লাল ছিল এবং এই লালিমাই ওর ক্রন্দন। সুদ্দী কাবীরও ( রঃ ) এটাই বলেছেন। আতা খুরাসানী ( রঃ ) বলেন যে, আকাশের প্রান্ত লাল বর্ণ ধারণ করাই হলো ওর ক্রন্দন।এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত হুসাইন ( রাঃ )-কে হত্যা করার দিন তার বধ্যভূমির যে কোন পাথরকেই উল্টানো হতো ওরই নীচে জমাট রক্ত পাওয়া যেতো। ঐদিন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিল, আকাশ-প্রান্ত লাল বর্ণ ধারণ করেছিল এবং পাথর বর্ষিত হয়েছিল। কিন্তু এসবের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এগুলো শিয়া সম্প্রদায়ের বানানো কাহিনী। এগুলো সবই ভিত্তিহীন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, হযরত হুসাইন ( রাঃ )-এর শাহাদাতের ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক। কিন্তু শিয়া সম্প্রদায় এটাকে অতিরঞ্জিত করেছে এবং এর মধ্যে বহু মিথ্যা ঘটনা ঢুকিয়ে দিয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।এটা খেয়াল রাখার বিষয় যে, দুনিয়ায় এর চেয়েও বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা হযরত হুসাইন ( রাঃ )-এর শাহাদাতের ঘটনা হতেও বেশী মর্মান্তিক। কিন্তু এগুলো সংঘটিত হওয়ার সময়ও আসমান, যমীন প্রভৃতির মধ্যে এরূপ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁরই সম্মানিত পিতা হযরত আলীও ( রাঃ ) শহীদ হয়েছিলেন যিনি সর্বসম্মতভাবে তাঁর চেয়ে উত্তম ছিলেন। কিন্তু তখনো তো পাথরের নীচে জমাট রক্ত দেখা যায়নি এবং অন্য কিছুও পৃরিলক্ষিত হয়নি। হযরত উসমান ইবনে আফফান ( রাঃ )-কে ঘিরে নেয়া হয় এবং বিনা দোষে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব ( রাঃ )-কে ফজরের নামাযের অবস্থায় নামায-স্থলেই হত্যা করে দেয়া হয়। এটা ছিল এমনই এক কঠিন বিপদ যেমনটি ইতিপূর্বে মুসলমানদের কাছে কখনো পৌঁছেনি। কিন্তু এসব ঘটনার কোন একটিরও সময় ঐ সব ব্যাপার ঘটেনি, হযরত হুসাইন ( রাঃ )-এর হত্যার সময় যেগুলো ঘটার কথা শিয়ারা প্রচার করেছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলোকে বাদ দিয়ে যদি সমস্ত মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক জগতের নেতা হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ )-কেই শুধু ধরা হয় তবুও দেখা যাবে যে, তাঁর মৃত্যুর সময়ও শিয়াদের কথিত ঘটনাগুলোর একটিও ঘটেনি। আরো দেখা যায় যে, যেই দিন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পুত্র হযরত ইবরাহীম ( রাঃ ) ইন্তেকাল করেন সেই দিনই ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণ হয়। তখন কে একজন বলে ওঠে যে, হযরত ইবরাহীম ( রাঃ )-এর মৃত্যুর কারণেই সূর্য গ্রহণ হয়েছে। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সূর্য গ্রহণের নামায আদায় করেন, অতঃপর ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে বলেনঃ “ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে দু'টি নিদর্শন । কারো জন্ম ও মৃত্যুর কারণে এ দুটোতে গ্রহণ লাগে না।”এরপর আল্লাহ তা'আলা বানী ইসরাঈলের প্রতি নিজের অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “ আমি তো উদ্ধার করেছিলাম বানী ইসরাঈলকে ফিরাউনের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হতে । নিশ্চয়ই সে ছিল পরাক্রান্ত সীমালংঘন কারীদের মধ্যে।' সে বানী ইসরাঈলকে ঘৃণার পাত্র মনে করতো। তাদের দ্বারা সে নিকৃষ্টতম কার্য করিয়ে নিতো। তাদের দ্বারা সে বড় বড় কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করিয়ে নিতো। সে আত্মগর্বে ফুলে উঠেছিল। আল্লাহর যমীনে সে হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। তার এসব মন্দ কর্মে তার কওমও তার সহযোগী ছিল।এরপর আল্লাহ তাআলা বানী ইসরাঈলের উপর নিজের আর একটি অনুগ্রহের কথা বলেনঃ “ আমি জেনে শুনেই তাদেরকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম ।' অর্থাৎ তিনি ঐ যুগের সমস্ত লোকের উপর বানী ইসরাঈলকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। প্রত্যেক যুগকেই বলা হয়। অর্থ এটা নয় যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত লোকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল। এটা আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তির মতঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে মূসা ( আঃ )! আমি তোমাকে লোকদের উপর মনোনীত করেছি ।”( ৭:১৪৪ ) অর্থাৎ তার যুগের লোকদের উপর। হযরত মরিয়ম ( আঃ ) সম্পর্কে আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তিটিও অনুরূপঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তিনি তোমাকে ( হযরত মরিয়ম আঃ-কে ) বিশ্বের নারীদের মধ্যে মনোনীত করেছেন ।”( ৩:৪২ ) অর্থাৎ তাঁর যুগের সমস্ত নারীর মধ্যে তাকে আল্লাহ তা'আলা শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলেন। সর্বযুগের নারীদের উপর যে হযরত মরিয়ম ( আঃ )-কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছিল এটা উদ্দেশ্য নয়। কেননা, উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা ( রাঃ ) হযরত মরিয়ম ( আঃ ) অপেক্ষা উত্তম ছিলেন বা কমপক্ষে সমান তো ছিলেন। অনুরূপভাবে ফিরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া বিনতে মাযাহিমও ( রাঃ ) ছিলেন। আর হযরত আয়েশা ( রাঃ )-এর ফযীলত সমস্ত নারীর উপর তেমনই যেমন সুরুয়ায় বা ঝোলে ভিজানো রুটির ফযীলত অন্যান্য খাদ্যের উপর। মহান আল্লাহ বানী ইসরাঈলের উপর তার আরো একটি অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে ঐ সব যুক্তি-প্রমাণ, নিদর্শন, মু'জিযা ও কারামত দান করেছিলেন যেগুলোর মধ্যে হিদায়াত অনুসন্ধান কারীদের জন্যে সুস্পষ্ট পরীক্ষা ছিল।
সূরা দুখান আয়াত 33 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাতছাড়া হয়ে কাফেরদের কাছে থেকে যায়, অতঃপর তোমরা সুযোগ পাও,
- শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,
- তুমি বলে দাও, কাফেরদেরকে যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে যা কিছু ঘটে গেছে
- আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃজিত বস্তু দ্বারা ছায়া করে দিয়েছেন এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন
- পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,
- তখন লোকজন তার দিকে ছুটে এলো ভীত-সন্ত্রস্ত পদে।
- ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ আগমন করল, তখন বলল, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং
- তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবে। এটা সৎকর্মীদের পুরস্কার।
- তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।
- বলুনঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা দুখান ডাউনলোড করুন:
সূরা Ad Dukhaan mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Ad Dukhaan শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers