কোরান সূরা তাওবা আয়াত 36 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Tawbah ayat 36 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা তাওবা আয়াত 36 আরবি পাঠে(Tawbah).
  
   

﴿إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ﴾
[ التوبة: 36]

নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। [সূরা তাওবা: 36]

Surah At-Tawbah in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Tawbah ayat 36


নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র কাছে মাসগুলোর সংখ্যা হচ্ছে আল্লাহ্‌র বিধানে বারো মাস, -- যেদিন থেকে তিনি মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, -- এর মধ্যে চারটি হচ্ছে পবিত্র। এই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, কাজেই এদের মধ্যে তোমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করো না, আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধ করো যেমন তারা সমবেতভাবে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রেখো -- আল্লাহ্ আলবৎ ধর্মভীরুদের সঙ্গে রয়েছেন।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৩৬. আল্লাহর বিধান ও ফায়সালায় এক বছরের মাসের সংখ্যা সর্বমোট বারোটি। যা আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টির শুরুতে লাওহে মাহফ‚যে লিপিবদ্ধ করেছেন। উক্ত বারো মাসের চার মাসে আবার আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করেছেন। যা লাগাতার তিন মাস তথা যুল-কি’দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। আরেকটি একক মাস তথা রজব। উক্ত বাৎসরিক মাসের সংখ্যা ও সেগুলোর চারটিকে হারাম করে দেয়া মূলতঃ একটি সঠিক ধর্ম। তাই তোমরা এ হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে এবং এগুলোর সম্মান নষ্ট করে নিজেদের উপর যুলুম করো না। আর তোমরা সকল প্রকারের মুশরিকের সাথে যুদ্ধ করো যেমনিভাবে তারা সবাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। তোমরা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য ও অনুগ্রহ নিয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকীদের সাথেই রয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যার সাথে রয়েছেন তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ ( পবিত্র )।[১] এটাই সরল বিধান।[২] অতএব তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি যুলুম করো না।[৩] আর অংশীবাদীদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। [৪] আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ সাবধানীদের সাথে রয়েছেন। [১] আল্লাহর বিধান 'কিতাবুল্লাহ' থেকে উদ্দেশ্য হল 'লাওহে মাহফূয'। সৃষ্টির প্রারম্ভিক কাল থেকেই আল্লাহ তাআলা ( বছরে ) বার মাস নির্ধারিত করেছেন। তার মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ মাস, যাতে বিশেষ করে লড়াই-ঝগড়া নিষিদ্ধ। এই কথাকে নবী ( সাঃ ) এইভাবে বর্ণনা করেছেন, "যামানা ঘুরে-ফিরে পুনরায় সেই অবস্থাতে এসে গেছে যে অবস্থাতে তখন ছিল, যখন আল্লাহ তাআলা আকাশ-পৃথিবী রচনা করেছেন; বার মাসে এক বছর। যার মধ্যে চারটি হল নিষিদ্ধ মাস; তিনটি মাস ক্রমান্বয়ে যুলকা'দাহ, যুলহাজ্জাহ ও মুহাররাম। আর চতুর্থ মাসটি হল রজব মুযার; যা জুমাদাল আখের ও শা'বান মাসের মধ্যস্থলে পড়ে। ( বুখারঃ কিতাবুত তাফসীর সূরা তাওবাহ ৯:পরিচ্ছেদ, মুসলিম ক্বাসামাহ অধ্যায় ) " যামানা ঘুরে-ফিরে পুনরায় সেই অবস্থাতে এসে গেছে " এর অর্থ হল আরবের মুশরিকরা মাসগুলিকে নিয়ে যে আগা-পিছা করত ( যার বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে ) এ কথায় তার খন্ডন করা হয়েছে।[২] অর্থাৎ, এই মাসগুলি এই পর্যায়ক্রমে হওয়া যেমন আল্লাহ রেখেছেন, যার মধ্যে চার মাস হল নিষিদ্ধ মাস। আর এই হিসাবই সঠিক ও সংখ্যাও পরিপূর্ণ।[৩] অর্থাৎ, এই নিষিদ্ধ ও পবিত্র মাসগুলিতে লড়াই-ঝগড়া করে তার পবিত্রতা বিনষ্ট করে এবং আল্লাহর অবাধ্য হয়ে।[৪] কিন্তু এই নিষিদ্ধ মাসগুলি অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর। তবে যদি তারা যুদ্ধ করতে বাধ্য করে, তাহলে নিষিদ্ধ মাসগুলিতেও তোমাদের জন্য যুদ্ধ করা বৈধ হবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই [] আল্লাহ্‌র বিধানে [] আল্লাহ্‌র কাছে গণনায় মাস বারটি [], তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস [], এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন []। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের সাথে আছেন [] এর দ্বারা এদিকে ঈঙ্গিত করা হয় যে, মাসগুলোর ধারাবহিকতা নির্ধারিত হয় আসমান ও যমীনের সৃষ্টি পরবর্তী মুহুর্তে। [ সা'দী ]। [] এখানে ( فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ ) বলে স্পষ্ট করা হয় যে, বিষয়টি সৃষ্টির প্রথম দিনেই তাকদীরে সুনির্দিষ্ট করা আছে। সিা’দী আর সে অনুসারে লওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে। [ কুরতুবী ] [] অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট গণনায় মাস হল বারটি। এখানে উল্লেখিত ( عدة ) অর্থ গণনা। ( شهور ) হল ( شهر ) এর বহুবচন। আয়াতের সারমর্ম হল, আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যাটি বারটি নির্ধারিত, এতে কম বেশি করার কারো সুযোগ নেই। জাহেলিয়াতের লোকেরা বদলালেও তোমরা সেটা বদলাতে পার না। তোমাদের কাজ হবে আল্লাহর এ নির্দেশ মোতাবেক সেটাকে ঠিক করে নেয়া। কুরতুবী] [] বিদায় হজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খোতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন: তিনটি মাস হল ধারাবাহিকযিলকদ, যিলহজ ও মহররম, অপরটি হল রজব। [ বুখারী ৩১৯৭; মুসলিম: ১৬৭৯ ] আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে, হারাম মাস। তিনটি পরপর যিলকদ, যিলহজ, ও মুহাররাম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাস সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে থাকে। [ বুখারী ৪৬৬২; মুসলিম: ১৬৭৯ ] [] অর্থাৎ মাসগুলোর ধারাবাহিকতা নির্ধারণ ও সম্মানিত মাসুগলোর সাথে সম্পৃক্ত হুকুমআহকামকে সৃষ্টির প্রথম পর্বের ইলাহী নিয়মের সাথে সঙ্গতিশীল রাখাই হল সঠিক দ্বীন। এতে কোন মানুষের কম-বেশী কিংবা পরিবর্তন - পরিবর্ধন করার প্রয়াস অসুস্থ বিবেক ও মন্দ স্বভাবের আলামত। এর দ্বারা আরও প্রমাণিত হয় যে, ধারাবাহিকতা এবং মাসগুলোর যে নাম ইসলামী শরীআতে প্রচলিত, তা মানবরচিত পরিভাষা নয়, বরং রাববুল আলামীন যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিনই মাসের তারতীব, নাম ও বিশেষ মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট হুকুম আহকাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আয়াত দ্বারা আরও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দৃষ্টিতে শরীআতের আহকামের ক্ষেত্রে চন্দ্রমাসই নির্ভরযোগ্য। চন্দ্রমাসের হিসেব মতেই রোযা, হজ ও যাকাত প্রভৃতি আদায় করতে হয়। [ কুরতুবী ] তবে কুরআন মজীদ চন্দ্রের মত সূর্যকেও সন-তারিখ ঠিক করার মানদন্ডরূপে অভিহিত করেছেন। [ সূরা আল-আনআমঃ ৯৬; সূরা আর-রাহমান: ৫ সূরা ইউনুস:৫ ] অতএব চন্দ্র ও সূর্য উভয়টির মাধ্যমেই সনতারিখ নির্দিষ্ট করা জায়েজ। তবে চন্দ্রের হিসাব আল্লাহর অধিকতর পছন্দ। তাই শরীআতের আহকামকে চন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট রেখেছেন। এজন্যে চন্দ্র বছরের হিসাব সংরক্ষণ করা ফরযে-কেফায়া, সকল উম্মত এ হিসাব ভুলে গেলে সবাই গোনাহগার হবে। চাদের হিসাব ঠিক রেখে অন্যান্য সূত্রের হিসাব ব্যবহার করা জায়েয আছে।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


আবু বাকরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) তাঁর ( বিদায় ) হজ্বের ভাষণে বলেনঃ “ যামানা ঘুরে ঘুরে নিজের মূল অবস্থায় এসে গেছে । বছরের বারোটি মাস হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে চারটি হচ্ছে সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন মাস। তিনটি ক্রমিকভাবে রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে যুলক্বাদ, যুলহাজ্বা ও মুহাররম। আর চতুর্থটি হচ্ছে মুযার গোত্রের ( কাছে অতি সম্মানিত ) রজব মাস, যা জামাদিউল উখরা ও শা'বানের মধ্যভাগে রয়েছে। ( এটা ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী ( রঃ ) এটাকে তাঁর তাফসীরে পূর্ণতার সাথে তাখরীজ করেছেন) অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ আজ কোন্ দিন?” ( বর্ণনাকারী বলেন ) আমরা উত্তরে বললামঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ( সঃ ) ভাল জানেন ।" রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। আমরা মনে করলাম যে, তিনি হয়তো এর অন্য কোন নাম বলবেন। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ আজ কি ইয়াওমুন নাহর' বা কুরবানীর ঈদের দিন নয়?" আমরা উত্তর দিলামঃ হ্যা । পুনরায় তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ এটা কোন মাস?” আমরা জবাব দিলাম, এ সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরই ( সঃ ) ভাল জ্ঞান আছে । এবারও তিনি চুপ থাকলেন। সুতরাং আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি এ মাসের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “ এটা কি যুলহাজ্বাহ্ মাস নয়?” আমরা জবাব দিলামঃ হ্যা । এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ এটা কোন শহর?” আমরা উত্তরে বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ( সঃ ) এটা ভাল জানেন । তিনি এবারও নীরব হয়ে যান এবং আমরা এবারও মনে করলাম যে, তিনি হয় তো এর অন্য কোন নাম রাখবেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ এটা কি বালাদা ( মক্কা ) নয়?” আমরা জবাবে বললামঃ হ্যা । এরপর তিনি বললেনঃ “ জেনে রেখো যে, তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল, তোমাদের মান-মর্যাদা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে এরূপই মর্যাদাসম্পন্ন যেমন মর্যাদাসম্পন্ন তোমাদের এ দিনটি, এ মাসটি এবং এ শহরটি । সত্বরই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সাবধান! আমার পরে যেন তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং যেন একে অপরকে হত্যা না কর! আমি কি ( শরীয়তের সমস্ত কথা তোমাদের কাছে ) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? জেনে নাও, তোমাদের যারা এখানে বিদ্যমান রয়েছে তারা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এসব কথা পৌছিয়ে দেয়। কেননা, হতে পারে যে, যারা উপস্থিত নেই তাদের কেউ কেউ শ্রোতাদের অপেক্ষা বেশী স্মরণশক্তির অধিকারী।”অন্য রিওয়ায়াতে আছে যে, এটা হচ্ছে 'মিনা' নামক স্থানে ‘আইয়ামুত তাশরীক” ( যিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়ামুত তাশরীক বলা হয় ) এর মধ্যভাগে বিদায় হজ্বের ভাষণের আলোচনা। আবূ হামযা রুকাশী ( রঃ ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন যিনি একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর এ খুত্বার সময় আমি তাঁর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে ছিলাম এবং মানুষের ভীড় ঠেকিয়ে রাখছিলাম ।” তাঁর “ যামানা ঘুরে ফিরে নিজের আসল অবস্থায় ফিরে এসেছে এ উক্তির ভাবার্থ এই যে, অজ্ঞতার যুগে মুশরিকরা মাসগুলোর ব্যাপারে যে কম বেশী করতো এবং এগিয়ে দিতে বা পিছিয়ে দিতো, সেগুলো ঘুরে ফিরে এখন সঠিক অবস্থায় এসে গেছে । যে মাস এখন আছে তা প্রকৃত অবস্থাতেই আছে। যেমন মক্কা বিজয়ের সময় রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছিলেনঃ “ এই শহর ( মক্কা ) সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত রয়েছে । আর কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিতই থাকবে।” সুতরাং আরবদের মধ্যে যে এই প্রথা চালু হয়েছিল যে, তারা তাদের অধিকাংশ হজ্ব যিলহজ্ব মাসে করতো না, ঐ বছর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হজ্বের ব্যাপারে এটা ঘটেনি, বরং হজ্ব সঠিক মাসেই হয়েছিল। কেউ কেউ এর সাথে একথাও বলেছেন যে, আবু বকর সিদ্দীক ( রাঃ )-এর হজ্ব যুলকা'দা মাসে হয়েছিল। কিন্তু এ উক্তির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আমরা এটা ...
( আরবী ) আয়াতের তাফসীরে প্রমাণসহ বর্ণনা করবো। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজনের এ উক্তিও রয়েছে যে, ঐ বছর ঘটনাক্রমে ইয়াহূদী, খ্রীষ্টান ও মুসলমান সবারই হজ্ব একই দিনে হয়েছিল। অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিনে। কিন্তু এ উক্তিটি আরো বেশী গারীব বা দুর্বল। ‘ফসল' বা পরিচ্ছেদ: শায়েখ ইলমুদ্দীন সাখাভী ( রঃ ) তাঁর ( আরবী ) নামক গ্রন্থে লিখেছে- মুহাররম মাসকে ওর সম্মানের কারণে মুহাররম বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার মতে তো এই নামের কারণ হচ্ছে ওর সম্মানের প্রতি গুরুত্ত্বারোপকরণ। কেননা, অজ্ঞতা যুগের আরবরা ওকে বদলিয়ে দিতো। কখনো হালাল করতো, আবার কখনো হারাম করতো। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) এসে থাকে। ‘সফর’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে সাধারণতঃ তাদের ঘর খালি বা শূন্য থাকতো। কেননা, এই মাসটি তারা যুদ্ধ বিগ্রহে ও ভ্রমণে কাটি দিতো। ঘর শূন্য হয়ে গেলে আরবরা ( আরবী ) বলে থাকে। ( আরবী ) হলো এর বহুবচন। যেমন ( আরবী )- এর বহুবচন ( আরবী ) এসে থাকে। ‘রাবীউল আওয়াল’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে আরবরা। বাড়ীতেই অবস্থান করে থাকে। অবস্থান করাকে ( আরবী ) বলা হয়। এর বহুবচন ( আরবী ) এসে থাকে। যেমন ( আরবী )-এর বহুবচন ( আরবী ) এসে থাকে। এর বহুবচন ( আরবী ) ও হয়, যেমন ( আরবী ) -এর বহুবচন হয়। ‘রাবীউল আখির’ এর নামকরণের কারণও এটাই। এটা যেন বাড়ীতে অবস্থানের দ্বিতীয় মাস। ‘জামাদিউল উলা’ এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে পানি জমে যেতো। তাদের হিসাবে মাস আবর্তিত হতো না। অর্থাৎ ঠিক প্রতি মৌসুমেই প্রতিটি মাস আসতো। কিন্তু এ কথাটি যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা, ঐ মাসগুলোর হিসাব যখন চন্দ্রের উপর নির্ভরশীল তখন এটা পরিষ্কার কথা যে, প্রতি বছর প্রতি মাসে মৌসুমী অবস্থা একরূপ থাকবে না। হ্যা, তবে খুব সম্ভব, যে বছর এই মাসের নাম রাখা হয় ঐ বছর ঐ মাসটি খুব কনকনে শীতে এসেছিল এবং পানি জমে গিয়েছিল। যেমন একজন কবিও বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ জামাদিউর কঠিন অন্ধকার রাত, যার অন্ধকারে গোলাম তাঁবুর খুঁটি পর্যন্ত দেখতে পায় না । ঐ রাতে কুকুর একবার ছাড়া ঘেউ ঘেউ করতে পারে না, এমন কি শেষ পর্যন্ত সে ( ককনে শীতের কারণে ) তার লেজকে নাকের উপর গুটিয়ে নেয়। এর বহুবচন ( আরবী ) আসে। যেমন ( আরবী )( আরবী )-এর ব্যবহার। এটা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়। ‘জামাদিউল উখরা এর নামকরণের কারণও এটাই। এটা যেন পানি জমে যাওয়ার দ্বিতীয় মাস। ‘রজব' শব্দটি ( আরবী ) শব্দ থেকে গৃহীত। ( আরবী ) বলা হয় ( আরবী ) বা সম্মান। এই মাসটি মর্যাদাপূর্ণ মাস বলে একে রজব বলা হয়। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) আসে। ‘শা'বান' এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে আরবরা লুটপাট করার জল বিচ্ছিন্নভাবে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তো। ( আরবী )-এর অর্থ হচ্ছে পৃথক পৃথক হওয়া। এজন্যেই এই মাসের এই নাম রাখা হয়েছে। এর বহুবচন ( আরবী )( আরবী ) এসে থাকে। “রমাদান' এর নামকরণের কারণ এই যে, এই মাসে অত্যাধিক গরমের কারণে উটের পা পুড়ে যায়। ( আরবী ) ঐ সময় বলা হয় যখন উন্ত্রীর বাচ্চা খুবই পিপাসার্ত থাকে। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) এসে থাকে। কারো কারো মতে এটা অলাহ তা'আলার নামসমূহের একটি নাম। কিন্তু এটা ভুল ও অযৌক্তিক কথা মাত্র। আমি বলি যে, এই ব্যাপারে একটি হাদীসও এসেছে। কিন্তু ওটা দুর্বল( আরবী ) এ আমি এটা বর্ণনা করেছি। ‘শাওয়াল' ( আরবী ) থেকে গৃহীত। এই মাসটি হচ্ছে উটের উত্তেজনার মাস। এই মাসে উট লেজ পিঠে করে দৌড়াতে শুরু করতো। এজন্যেই এই মাসের এই নাম হয়ে যায়। এর বহুবচন। ( আরবী ) এবং ( আরবী ) এসে থাকে। ‘যুলক্বাদা' নাম হওয়ার কারণ এই যে, এই মাসে আরবের লোকেরা বাড়ীতে বসে থাকতো। তারা এই মাসে যুদ্ধের জন্যেও বের হতো না এবং সফরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতো না। এর বহুবচন ( আরবী ) এসে থাকে । ‘যুলহাজ্বা' মাসে হজ্বব্রত পালিত হতো বলেই এর নাম যুলহাজ্বা' হয়ে যায়। এর বহুবচন ( আরবী ) এসে থাকে। এতো হলো এই মাসগুলোর নামকরণের কারণ। এখন সপ্তাহের সাত দিনের নাম এবং এ নামগুলোর বহুবচন বর্ণনা করা হচ্ছে- রবিবারকে ( আরবী ) বলে। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) এসে থাকে । সোমবারকে ( আরবী ) বলা হয়। এর বহুবচন ( আরবী ) আসে। মঙ্গলবারকে ( আরবী ) বলে। এটা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ উভয়রূপেই কথিত হয়। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) আসে। বুধবারকে ( আরবী ) বলা হয়। এর বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) এসে থাকে। বৃহস্পতিবারকে ( আরবী ) বলে। এর বহুবচন ( আরবী )( আরবী ) এসে থাকে। শুক্রবারকে ( আরবী ) বলে। এর ( আরবী ) বহুবচন ( আরবী ) এবং ( আরবী ) আসে। শনিবারকে ( আরবী ) বলা হয়। ( আরবী ) এর অর্থ হচ্ছে শেষ হওয়া। সপ্তাহের গণনা এখানেই শেষ হয় বলে একে ( আরবী ) বলা হয়। প্রাচীন আরবে সপ্তাহের দিনগুলোর নাম ছিল নিম্নরূপঃ আওয়াল, আহ্ওয়ান, জুবার, দুবার, মুনাস, উরূবা এবং শিয়ার। প্রাচীন খাঁটি আরব কবিদের কবিতার মধ্যেও সপ্তাহের এ নামগুলোর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ এই বারো মাসের মধ্যে চারটি মাস ( বিশেষ ) মর্যাদাপূর্ণ। অজ্ঞতার যুগের আরবরাও এ চার মাসকে সম্মানিত মাসরূপে স্বীকার করতো। কিন্তু বাসল’ নামক একটি দল তাদের গোঁড়ামীর কারণে আটটি মাসকে সম্মানিত মাস মনে করতো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ভাষণে রজব মাসকে মুযার' গোত্রের দিকে সম্পর্কযুক্ত করার কারণ এই যে, যে মাসকে তারা রজব মাস হিসেবে গণনা করতো, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিকটেও ওটাই রজব মাস ছিল, যা জামাদিউল উখরা এবং শাবানের মাঝে রয়েছে। কিন্তু রাবীআ গোত্রের নিকট রজব মাস শাবান ও শাওয়াল মাসের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমযানের নাম ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্পষ্টভাবে বলে দিলেন যে, সম্মানিত মাস হচ্ছে মুযার গোত্রের রজব মাস, রাবীআ' গোত্রের রজব মাস নয়। সম্মানিত এই চারটি মাসের মধ্যে তিনটি ক্রমিকরূপে হওয়ার যৌক্তিকতা এই যে, হাজীরা যুলক্বাদা মাসে বাড়ী হতে বের হন। ঐ সময় যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারপিট, ঝগড়া-বিবাদ এবং খুনাখুনি বন্ধ করে লোকেরা বাড়ীতে বসে থাকে। অতঃপর যুলহাজ্ব মাসে তারা হজ্বের আহকাম নিরাপত্তার সাথে এবং উত্তমরূপে আদায় করেন। তারপর মর্যাদাপূর্ণ মুহাররম মাসে তারা নিরাপদে বাড়ীর দিকে প্রত্যাবর্তন করে থাকেন। বছরের মধ্যভাগে রজব মাসকে সম্মানিত বানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন যিয়ারতকারিগণ বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফের আকাঙ্ক্ষা উমরার আকারে পূর্ণ করতে পারে। যারা বহু দূরের লোক তারাও যেন সারা মাস ধরে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা এই মাসগুলোর যথাযথ মর্যাদা দান কর। বিশেষভাবে এই মাসগুলোতে পাপকার্য থেকে দূরে থাকো। কেননা, এতে পাপের দুস্ক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পায়। যেমন হারাম শরীফে কৃত পাপ অন্যান্য স্থানে কৃত পাপ অপেক্ষা বেশী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যে ব্যক্তি ওর মধ্যে ( হারাম শরীফের মধ্যে ) অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি করে ধর্মদ্রোহীতার কাজে লিপ্ত হবে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো ।” অনুরূপভাবে এই মাগুলোর মধ্যে পাপকার্য করলে আন্যান্য মাসে কৃত পাপকার্যের চেয়ে গুনাহ্ বেশী হয়। এ কারণেই ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং আলেমদের একটি বৃহৎ দলের মতে এই মাসগুলোর মধ্যে কেউ কাউকেও হত্যা করলে ওর রক্তপণও কঠিন হবে। এ রকমই হারাম শরীফের ভিতরের হত্যা ও নিকটতম আত্মীয়ের হত্যা। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) শব্দ দ্বারা বছরের সমস্ত মাসকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ পাকের এ উক্তির মর্মার্থ হচ্ছে- তোমরা সমস্ত মাসে পাপকার্য থেকে বিরত থাকবে, বিশেষ করে এই চার মাসে। কেননা, এগুলো বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন মাস। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং পুণ্য বা সাওয়াব প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। কাতাদা ( রাঃ ) বলেন যে, এই সম্মানিত মাসগুলোতে পাপের শাস্তির বোঝা বেড়ে যায়, যদিও অত্যাচার সর্বাবস্থাতেই খারাপ। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাঁর যে কাজকে ইচ্ছা বড় করে থাকেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় সৃষ্টির মধ্য থেকেও বাছাই ও মনোনীত করেছেন। তিনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে দূত মনোনীত করেছেন, মানব জাতির মধ্য থেকে রাসূলদেরকে মনোনীত করেছেন, কালামের মধ্য থেকে তাঁর যিকরকে পছন্দ করেছেন, যমীনের মধ্যে মসজিদসমূহকে পছন্দ করেছেন, মাসগুলোর মধ্যে রমযান ও হারাম মাসগুলোকে মনোনীত করেছেন, দিনগুলোর মধ্যে শুক্রবারকে পছন্দ করেছেন এবং রাতগুলোর মধ্যে লায়লাতুল কদরকে মনোনীত করেছেন। এভাবে মহান আল্লাহ যেটাকে ইচ্ছা করেছেন একটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুতরাং যেগুলোকে আল্লাহ তা'আলা মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেগুলোর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য কর্তব্য। বুদ্ধিমান ও বিবেচক লোকদের মতে কোন বিষয়ের ঐ পরিমাণ সম্মান করা উচিত যে পরিমাণ সম্মান আল্লাহ পাক ওতে দান করেছেন। ওগুলোর সম্মান না করা হারাম। এ মাসগুলোতে যা করা হারাম তা হালাল করা চলবে না এবং যা হালাল তা হারাম করা উচিত নয়, যেমন মুশরিকরা করতো। এটা তাদের কুফরীর মধ্যে বৃদ্ধিরই শামিল।আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা এই মুশরিকদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মর্যাদা সম্পন্ন এই চার মাসের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা করা হারাম হওয়ার হুকুম মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কি এখনও এ হুকুম বিদ্যমান আছে এ ব্যাপারে আলেমদের দু'টি উক্তি রয়েছে। প্রথম উক্তি এই যে, এ হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এটাই প্রসিদ্ধতর উক্তি। এ আয়াতের শব্দগুলোর প্রতি চিন্তাযুক্ত দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রথমে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে-এ মাসগুলোতে যুলুম করো না। অতঃপর হুকুম করা হচ্ছে-তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। বাহ্যিক শব্দ দ্বারা তো জানা যায় যে, এ হুকুম আম বা সাধারণ। এতে হারাম মাসগুলোও এসে গেল। যদি এ মাসগুলো স্বতন্ত্র হতো তবে এগুলো অতিক্রান্ত হওয়ার শর্ত অবশ্যই আরোপিত হতো। আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) যুলক্বাদা মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন যা সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে একটি মাস। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) শাওয়াল মাসে হাওয়াযেন গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। তারা পরাজিত হয়। তাদের মধ্যে যারা প্রাণে বেঁচে যায় তারা পালিয়ে তায়েফে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) সেখানে গমন করেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত তায়েফ অবরোধ করে রাখেন। তারপর ওটা জয় না করেই তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাহলে জানা গেল যে, তিনি হারাম মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন।দ্বিতীয় উক্তি এই যে, হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধের সূচনা করা হারাম এবং এই মাসগুলোর হুরমতের হুকুম মানসূখ হয়নি। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর প্রতীকসমূহের অসম্মান করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহেরও না ।" অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “ সম্মানিত মাস সম্মানিত মাসের বিনিময়ে, আর এসব সম্মান তো পারস্পরিক বিনিময়ের বস্তু, সুতরাং যে ব্যক্তি তোমাদের উপর উৎপীড়ন করে, তোমরাও তাদের উপর উৎপীড়ন করবে, যেরূপ সে তোমাদের প্রতি উৎপীড়ন করেছে ।” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ অতএব যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হয়ে যায় তখন সেই মুশরিকদেরকে যেখানে পাও বধ কর ।”এ কথা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, এই নির্ধারিত চারটি মাস প্রতি বছরেই থাকবে, দু'টি উক্তির মধ্যে একটি উক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র সফরের মাসগুলোতে নয়।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ তোমরা সমস্ত মুসলিম ঐ মুশরিকদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ।” হতে পারে যে, এটা পূর্ব হুকুম থেকে একটা স্বতন্ত্র হুকুম নয়। আবার এও হতে পারে যে, এটা একটা পৃথক ও নতুন হুকুম। আল্লাহ তা'আলা হয়তো মুসলিমদেরকে উৎসাহিত ও জিহাদের প্রতি উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে বলছেন-তারা যেমন তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সবাই চতুর্দিক থেকে সমবেতভাবে তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে, তদ্রুপ তোমরাও সমস্ত মুমিনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মুকাবিলা কর। এটাও সম্ভব যে, এই বাক্যে মুসলিমদেরকে নিষিদ্ধ মাসগুলোতেও যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যখন আক্রমণের সূচনা তাদের পক্ষ থেকে হবে। যেমন ( আরবী ) ( ২:১৯৪ ) এ আয়াতে রয়েছে এবং আরো রয়েছে। ( আরবী ) এই আয়াতে। অর্থাৎ “ আর তোমরা তাদের ( মুশরিকদের ) সাথে মসজিদুল হারামের নিকট যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত না তারা তথায় তোমাদের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় । যদি তারাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হয় তবে তোমরাও তাদেরকে হত্যা কর।" ( ২:১৯১ ) সম্মানিত মাসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর তায়েফ অবরোধ করার জবাব এটাই যে, এটা ছিল হাওয়াযেন গোত্র ও তাদের মিত্র বানু সাকীফ গোত্রের যৌথ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। যুদ্ধের সূচনা তাদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। তারা এদিক ওদিক থেকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিরোধী লোকদেরকে একত্রিত করে যুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছিল। সুতরাং নবী ( সঃ ) তাদের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর এই অগ্রযাত্রাও আবার সম্মানিত মাসে ছিল না। এখানে পরাজিত হয়ে ঐ লোকগুলো পালিয়ে গিয়ে তায়েফে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেখানে দুর্গ স্থাপন করেছিল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ঐ কেন্দ্রকে খালি করার উদ্দেশ্যে আরো সামনে অগ্রসর হন। তারা মুসলমানদের ক্ষতি সাধন করে এবং মুসলমানদের একটি দলকে হত্যা করে ফেলে। এদিকে মিনজীক প্রভৃতি গোত্রসমূহের মাধ্যমে অবরোধ অব্যাহত থাকে। প্রায় চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাদেরকে ঘিরে রাখা হয়। মোটকথা, যুদ্ধের সূচনা সম্মানিত মাসে হয়নি। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সম্মানিত মাসও চলে আসে। কিছুদিন অতিবাহিত হলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অবরোধ উঠিয়ে নেন। সুতরাং যুদ্ধ জারি রাখা এক কথা এবং যুদ্ধের সূচনা হওয়া আর এক কথা। এর বহু নবীর রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এ সম্পর্কে যেসব হাদীস এসেছে সেগুলো আমি “ সীরাত"-এর মধ্যে বর্ণনা করেছি । এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাপেক্ষা বেশী জ্ঞানের অধিকারী।

সূরা তাওবা আয়াত 36 সূরা

إن عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا في كتاب الله يوم خلق السموات والأرض منها أربعة حرم ذلك الدين القيم فلا تظلموا فيهن أنفسكم وقاتلوا المشركين كافة كما يقاتلونكم كافة واعلموا أن الله مع المتقين

سورة: التوبة - آية: ( 36 )  - جزء: ( 10 )  -  صفحة: ( 192 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন
  2. তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে।
  3. তোমরা আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং ঐ অঙ্গীকারকেও যা
  4. এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।
  5. যেন সে পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেণী।
  6. তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী
  7. এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের
  8. বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং
  9. মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ
  10. যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবেএর অনুরূপ কোন রচনা উপস্থিত করুক।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাওবা ডাউনলোড করুন:

সূরা Tawbah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Tawbah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত তাওবা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত তাওবা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত তাওবা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত তাওবা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত তাওবা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত তাওবা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত তাওবা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত তাওবা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত তাওবা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত তাওবা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত তাওবা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত তাওবা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত তাওবা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত তাওবা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত তাওবা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত তাওবা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত তাওবা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত তাওবা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত তাওবা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত তাওবা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত তাওবা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, December 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers