কোরান সূরা মায়িদা আয়াত 4 তাফসীর
﴿يَسْأَلُونَكَ مَاذَا أُحِلَّ لَهُمْ ۖ قُلْ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ ۙ وَمَا عَلَّمْتُم مِّنَ الْجَوَارِحِ مُكَلِّبِينَ تُعَلِّمُونَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَكُمُ اللَّهُ ۖ فَكُلُوا مِمَّا أَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ﴾
[ المائدة: 4]
তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে যে, কি বস্তু তাদের জন্যে হালাল? বলে দিন, তোমাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হয়েছে। যেসব শিকারী জন্তুকে তোমরা প্রশিক্ষণ দান কর শিকারের প্রতি প্রেরণের জন্যে এবং ওদেরকে ঐ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এমন শিকারী জন্তু যে শিকারকে তোমাদের জন্যে ধরে রাখে, তা খাও এবং তার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ সত্ত্বর হিসাব গ্রহণকারী। [সূরা মায়িদা: 4]
Surah Al-Maidah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Maidah ayat 4
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে কি তাদের জন্য হালাল হয়েছে। বলো -- ''ভালো বস্তু তোমাদের জন্য বৈধ হয়েছে । আর শিকারী পশুপক্ষীদের শিকার করতে যা শিখিয়েছ -- তাদের তোমরা শিখিয়েছ যা আল্লাহ্ তোমাদের শিখিয়েছেন, কাজেই তারা তোমাদের কাছে যা ধরে আনে তা থেকে তোমরা খাও, তবে তার উপরে আল্লাহ্র নাম উল্লেখ করো। আর আল্লাহ্কে ভয়-ভক্তি করো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হিসেব-নিকেশে তৎপর।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪. হে রাসূল! আপনার সাহাবীগণ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কী খাওয়া হালাল করেছেন? আপনি বলুন, হে রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হালাল করেছেন সকল পবিত্র খাদ্য এবং দন্ত বিশিষ্ট প্রশিক্ষিত পশু যেমন: কুকুর ও বাঘ এবং থাবাযুক্ত পাখী যেমন: বাজ ইত্যাদির শিকার। প্রশিক্ষিত পশু-পাখির গুণ হলো তাদেরকে শিকারের আদেশ করা হলে সে আদেশ মানে আর তা থেকে বিরত থাকতে ধমক দেয়া হলে তা থেকে বিরত হয়। তাই সেগুলোর হত্যা করা শিকার তোমরা খেতে পারো। তবে তোমরা সেগুলোকে ছাড়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। আর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমলসমূহের দ্রæত হিসাবকারী।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী বৈধ করা হয়েছে? বল, সমস্ত ভাল ( পবিত্র ) জিনিস তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে[১] এবং শিকারী পশুপক্ষী যেগুলোকে তোমরা শিকার শিক্ষা দিয়েছ; যেভাবে আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন[২] -ঐ ( শিক্ষা দেওয়া পশুপক্ষী )গুলো যা তোমাদের জন্য ধরে আনে তা ভক্ষণ কর এবং ( তাদেরকে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় ) আল্লাহর নাম নাও।[৩] আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর। [১] এখানে ঐ সমস্ত জিনিসের কথা উল্লেখ হয়েছে, যেগুলি বৈধ বা হালাল। শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, প্রত্যেক হালাল জিনিস পবিত্র ও উপাদেয়। আর প্রত্যেক হারাম জিনিস নোংরা ও অপবিত্র। [২] جَوَارِحٌ শব্দটি جاَرِحٌ শব্দের বহুবচন, যা উপার্জনকারী অর্থে ব্যবহার হয়। এখানে এর ভাবার্থ হল, শিকারী কুকুর, বাজপাখী, শিকরে পাখী, চিতা এবং অন্যান্য শিকারী পাখী ও হিংস্রজন্তু। مكلبين এর সারমর্ম হল; শিকারের উপর ছাড়ার পূর্বে যাকে শিকার সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেমন, যখন শিকার করার জন্যে তাকে প্রেরণ করা হবে, তখন সে দৌড়ে যাবে। আবার যখন তাকে থামতে বলা হবে, তখন সে থেমে যাবে। যখন তাকে ডাকা হবে, তখন সে ( কাল বিলম্ব না করে ) ফিরে আসবে। [৩] ( উপরে উল্লিখিত ) এই শিক্ষিত শিকারী জন্তুর শিকার করা পশু-পাখী দুটি শর্ত সাপেক্ষে খাওয়া হালাল বা বৈধ। ( ক ) শিকারে প্রেরণ করার পূর্বে 'বিসমিল্লাহ' বলতে হবে। ( খ ) শিকারী পশু শিকার করা জিনিস ( পশু বা পাখী ) মালিকের জন্য রেখে দিবে এবং তার অপেক্ষা করবে; নিজে তা ভক্ষণ করবে না। যদিও সে শিকারকৃত পশু বা পাখীকে মেরে ফেলেছে, তবুও তা খাওয়া হালাল এই শর্তে যে, সে যেন শিকারের ব্যাপারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয় এবং তাকে প্রেরণ করার সময় তার সাথে অন্য কোন পশু শরীক না থাকে। ( সহীহ বুখারী 'যবেহ' অধ্যায় ও মুসলিম 'শিকার' অধ্যায় )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
মানুষ আপনাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? বলুন, ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমস্ত পবিত্র জিনিস [ ১ ]। আর শিকারী পশু-পাখি, যাদেরকে তোমরা শিকার শিখিয়েছ – আল্লাহ তোমাদেরকে যা শিখিয়েছেন তা থেকে সেগুলোকে তোমরা শিখিয়ে থাক –সুতরাং এই ( শিকারী পশুপাখি )-গুলো যা কিছু তোমাদের জন্য ধরে আনে তা থেকে খাও। আর এতে আল্লাহর নাম স্মরণ কর [ ২ ] এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী’।
[ ১ ] এ আয়াতে বর্ণিত ( طيبات ) শব্দের তিনটি অর্থ হয়ে থাকে। এক.
যাবতীয় রুচিসম্পন্ন। দুই.
যাবতীয় হালালকৃত। তিন.
যাবতীয় যবাইকৃত প্রাণী। কারণ, যবাই করার কারণে সেগুলোতে পরিচ্ছন্নতা এসেছে। [ ফাতহুল কাদীর ]
[ ২ ] আয়াতে শিকারী কুকুর, বাজ ইত্যাদি দ্বারা শিকার করা জন্তু হালাল হওয়ার জন্যে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম শর্তঃ কুকুর অথবা বাজ শিক্ষাপ্রাপ্ত হতে হবে। শিকার পদ্ধতি এই যে, আপনি যখন কুকুরকে শিকারের দিকে প্রেরণ করবেন, তখন সে শিকার ধরে আপনার কাছে নিয়ে আসবে- নিজে খাওয়া শুরু করবে না। বাজপাখীর বেলায় পদ্ধতি এই যে, আপনি ফেরৎ আসার জন্যে ডাক দেয়া মাত্রই সে কাল বিলম্ব না করে ফিরে আসবে- যদিও তখন কোন শিকারের পিছনে ধাওয়া করতে থাকে। শিকারী জন্তু এমনভাবে শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে গেলে বোঝা যাবে যে, সে আপনার জন্যে শিকার করে, নিজের জন্যে নয়। এমতাবস্থায় এগুলোর ধরে আনা শিকার স্বয়ং আপনারই শিকার বলে গন্য হবে। যদি শিকারী জন্তু কোন সময় এ শিক্ষার বিরুদ্ধাচরণ করে যেমন, কুকুর নিজেই খাওয়া আরম্ভ করে কিংবা বাজপাখী আপনার ডাকে ফেরৎ না আসে, তবে এ শিকার আপনার শিকার নয়। কাজেই তা খাওয়াও বৈধ নয়। দ্বিতীয় শর্তঃ আপনি নিজ ইচ্ছায় কুকুরকে অথবা বাজকে শিকারের পেছনে প্রেরণ করবেন। কুকুর অথবা বাজ যেন স্বেচ্ছায় শিকারের পেছনে দৌড়ে শিকার না করে। আলোচ্য আয়াতে এ শর্তটি ( مكلبين ) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এটি ( تكليب ) ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর আসল অর্থ কুকুরকে শিক্ষা দেয়া। এরপর সাধারণ শিকার জন্তুকে শিক্ষা দেয়ার পর শিকারের দিকে প্রেরণ করা বা ( ارسال ) এর অর্থেও ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এর অর্থ শিকারের দিকে প্রেরণ করা। তৃতীয় শর্তঃ শিকার জন্তু নিজে শিকারকে খাবে না; বরং আপনার কাছে নিয়ে আসবে। এ শর্তটি ( مِمَّا اَمْسَكْنَ عَلَيْكُمْ ) বাক্যাংশে বর্ণিত হয়েছে। চতুর্থ শর্তঃ শিকারী কুকুর অথবা বাজকে শিকারের দিকে প্রেরণ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে। উপরে বর্ণিত চারটি শর্ত পূর্ণ হলে শিকার আপনার হাতে পৌঁছার পূর্বেই যদি মরে যায়, তবুও তা হালাল হবে; যবেহ্ করার প্রয়োজন হবে না। আর যদি জীবিত অবস্থায় হাতে আসে, তবে যবেহ্ ব্যতীত হালাল হবে না। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে, শিকার হিসেবে ঐসব বন্য জন্তুর ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে, যে গুলো কারও করতলগত নয়। পক্ষান্তরে কোন বন্য জন্তু কারও করতলগত হয়ে গেলে, তা নিয়মিত যবেহ করা ব্যতীত হালাল হবে না। [ ইবন কাসীর ও কুরতুবী থেকে সংক্ষেপিত ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী আদী ইবন হাতিমকে বললেন, যখন তুমি শিকারের উদ্দেশ্যে তোমার কুকুরকে পাঠাবে এবং পাঠানোর সময় আল্লাহর নাম নিবে, তারপর যদি সে কুকুর কোন শিকার পাকড়াও করে, তবে তা থেকে খাও, যদিও সে শিকারটিকে হত্যা করে ফেলে থাকে। তবে যদি কুকুর সেটা থেকে নিজে খেয়ে নেয় সেটা ভিন্ন। সেটা খেয়ো না। কারণ, সেটা সে নিজের জন্য শিকার করেছে এমন আশঙ্কা রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য কুকুর এর সাথে মিশে শিকার করলেও সেটা খেয়ো না। [ বুখারী ৫৪৭৫; মুসলিম: ১৯২৯ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
মহান আল্লাহ পূর্ববর্তী আয়াতে শরীর বা দ্বীন অথবা উভয়ের পক্ষে ক্ষতিকর ও অপবিত্র বস্তুগুলোকে হারাম করেছেন। তবে প্রয়োজনবোধে আবার ঐগুলোকে হালাল করেছেন। যেমন আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলেছেনঃ “ আল্লাহ তোমাদের জন্যে বিশদভাবে হারাম বস্তুগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন । তবে যদি তোমরা অনন্যোপায় হয়ে পড় তবে ঐগুলো খাওয়া তোমাদের জন্যে হালাল।” এরপর মহান আল্লাহ কোন কোন বস্তু হালাল সে সম্পর্কে এ আয়াতে বর্ণনা করেছেন। যেমন সূরা আ'রাফে আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর গুণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পবিত্র বস্তুগুলোকে তার উম্মতের জন্যে হালাল করেছেন এবং অপবিত্র বস্তুগুলো তাদের জন্যে হারাম করেছেন। ইবনে আবি হাতিম তাঁর সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, একদা তাই গোত্রের আলী ইবনে হাতিম নামক একজন লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ মৃত্যু কে হারাম করেছেন । এখন আমাদের জন্যে কোন বস্তুগুলো হালাল?” তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সাঈদ বলেন যে, যবেহকৃত জন্তুকেই তাইয়েব বলা হয়। একদা ইমাম যুহরীকে “ ওষুধ হিসেবে প্রস্রাব পান করা জায়েয কি না”-এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল । উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “ ওটা পবিত্র নয়?” ইবনে আবি হাতিম এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন । ইবনে ওয়াহ্হাব বলেন যে, মানুষ যে সমস্ত পশু খায় না সেগুলো বেচা-কেনা করা জায়েয কি না সে সম্পর্কে একদা। ইমাম মালিক ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেন যে, ওগুলোর বিক্রয়লব্ধ অর্থ পবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়।( আরবী ) কুকুর, চিতাবাঘ, বাজপাখী প্রভৃতি শিকারী জানোয়ার তোমাদের জন্যে যা শিকার করে আনে সেটাও তোমাদের জন্যে হালাল। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ এবং ইমামের এটাই অভিমত। আলী ইবনে আবি তালহা ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, শিকারী পশু বলতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, বাজপাখী এবং অন্যান্য পশুকে বুঝানো হয়। এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন যে, খায়সামা, তাউস, মুজাহিদ, মাকহুল এবং ইয়াহইয়া ইবনে কাসীর হতেও এ ধরনের বর্ণনা এসেছে। হাসান হতে বর্ণিত আছে যে, বাজ ও সাকার’ পাখী দু’টিও -এর অন্তর্ভুক্ত। আলী ইবনে হুসাইন হতেও এ ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। মুজাহিদের মতে যে কোন ধরনের পাখীর শিকার খাওয়া মাকরূহ। তার এ মতের স্বপক্ষে তিনি ( আরবী ) -এ আয়াতটি উল্লেখ করেন। সাঈদ ইবনে যুবাইর হতেও এ ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনে জারীর এ মতটি যহ্হাক এবং সুদ্দী থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে জারীর তাঁর সনদের মাধ্যমে ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেন যে, বাজ এবং অন্যান্য শিকারী পাখীর শিকার যদি জীবিতাবস্থায় পাওয়া যায় তবে তা যবেহ করে। খাওয়া হালাল, অন্যথায় তা হালাল নয়। ইবনে কাসীর ( রঃ ) বলেনঃ অধিকাংশ আলেমের মতে শিকারী পাখীর শিকার শিকারী কুকুরের শিকারের ন্যায় খাওয়া হালাল। কারণ, শিকারী কুকুর যেমন শিকারকে থাবা দ্বারা যখম করে, অনুরূপভাবে পাখীও শিকারকে থাবা দ্বারা যখম করে। সুতরাং পাখী এবং কুকুরের মধ্যে এ ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। এটাই ইমাম চতুষ্টয় এবং অন্যান্যদের অভিমত। ইবনে জারীরও এ মতকেই সমর্থন করেন। তারা এ মতের স্বপক্ষে আদী ইবনে হাতিমের হাদীসটিকে উল্লেখ করেছেন। আদী ইবনে হাতিম বলেনঃ আমি একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বাজ পাখীর শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেনঃ “ যদি সে তোমার জন্যে শিকার করে নিয়ে আসে তবে তুমি তা খেতে পার ।” ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ )-এর মতে কাল কুকুর দ্বারা শিকার করা জায়েয় নয়। তিনি প্রমাণ হিসেবে সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু বকর ( রাঃ ) হতে বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখ করেন। হাদীসটি নিম্নরূপঃরাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তিনটি জিনিস নামায ভঙ্গ করে থাকে । গাধা, স্ত্রীলোক ও কালো কুকুর ।” বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করলামঃ লাল কুকুর হতে কালো কুকুরকে পার্থক্য করার কারণ কি? তিনি উত্তরে বললেন :“ কালো ।” অন্য আর একটি হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা সকল প্রকার কুকুরকে হত্যা করার জন্যে আদেশ দেন। পরে তিনি আবার বলেনঃ “ সকল প্রকার কুকুরকে হত্যা করার প্রয়োজন নেই । শুধু কালো কুকুরগুলোকে তোমরা হত্যা কর। ( আরবী ) শব্দটি ( আরবী ) ধাতু হতে উদ্ভূত। ( আরবী )-এর অর্থ হলো অর্জন করা। যেহেতু শিকারী জন্তুগুলো মালিকের জন্যে শিকারকে অর্জন করে নিয়ে আসে, সেহেতু এ জন্তুগুলোকে ( আরবী ) বলা হয়ে থাকে। আর আরবের অধিবাসীরা এ কথাটি ঐ সময় বলে যে সময় কোন ব্যক্তি তার পরিবার পরিজনের জন্যে ভাল কিছু অর্জন করে নিয়ে আসে। ঠিক এমনিভাবে তারা বলে থাকে ( আরবী )” অর্থাৎ অমুক ব্যক্তির কোন অর্জনকারী নেই! পবিত্র কুরআনেও ( আরবী ) শব্দটি অর্জন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা দিবাভাগে ভাল বা মন্দ যাই কর, আল্লাহ তা সম্যক অবগত আছেন ।”( ৬:৬০ ) এ আয়াতের শানে নকূল প্রসঙ্গে ইবনে আবি হাতিম বর্ণিত একটি হাদীস রয়েছে। হাদীসটি নিম্নরূপঃ আবু রাফে’ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা সকল প্রকার কুকুরকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। তখন বহু কুকুরকে হত্যা করা হলো। ফলে সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি যেগুলোকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো দ্বারা আমাদের কি ধরনের উপকার বৈধ?” তিনি তাদের এ প্রশ্নের উত্তরে চুপ থাকলেন । তখন পবিত্র কুরআনের ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ যখন কোন লোক তার কুকুরকে শিকারের উদ্দেশ্যে পাঠায় এবং পাঠাবার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করে, এমতাবস্থায় যদি কুকুর শিকার করে মালিকের জন্যে রেখে দেয় এবং তা না খায় তবে উক্ত শিকার খাওয়া যাবে ।" ইবনে জারীর তার সনদের মাধ্যমে আবু রাফে’ হতে বর্ণনা করেন যে, একদা হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন, কিন্তু অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও যখন তিনি ভেতরে আসলেন না তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে বললেনঃ “ হে আল্লাহর দূত! আমাদের অনুমতি দেয়া সত্ত্বেও কেন আপনি ভেতরে প্রবেশ করছেন না? তিনি উত্তরে বললেনঃ “যেই ঘরে কুকুর থাকে সেই ঘরে আমরা প্রবেশ করি না । এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত আবু রাফে’ ( রাঃ )-কে মদীনার সকল প্রকার কুকুর হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত আবু রাফে’ বলেনঃ “ আমি তখন সকল প্রকার কুকুরকে হত্যা করতে লাগলাম । এক পর্যায়ে আমি এক বৃদ্ধা মহিলার একটি কুকুরকে হত্যা করতে উদ্যত হলাম। কুকুরটি তখন মহিলাটির নিকট গিয়ে ঘেউ ঘেউ করে আশ্রয় প্রার্থনা করলো। এ দেখে আমার অন্তরে দয়ার উদ্রেক হলো। আমি তখন কুকুরটিকে হত্যা করা হতে বিরত থাকলাম এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকটে এসে ব্যাপারটি বললাম। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে পুনরায় কুকুরটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সুতরাং আমি ওকে হত্যা করি। সাহাবায়ে কিরাম তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে বললেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি যে জন্তুগুলোকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন, ওগুলো দ্বারা আমরা কোন উপকার লাভ করতে পারি কি?”ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন । হাকিম এ হাদীসটিকে তাঁর গ্রন্থে স্থান ( আরবী ) দিয়েছেন এবং হাদীসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন যে, এটি একটি সহীহ হাদীস। কিন্তু ইমাম বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটিকে তাঁদের গ্রন্থে স্থান দেননি।ইবনে জারীর ইকরামা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আবু রাফে’ ( রাঃ )-কে কুকুর হত্যা করার জন্যে প্রেরণ করেন। তিনি তখন কুকুর হত্যা করতে করতে মদীনার উঁচু এলাকায় উপস্থিত হন। সে সময় আসিল ইবনে আদী ( রাঃ ), সা’দ ইবনে খুযাইমা ( রাঃ ) এবং ওয়াইম ইবনে সায়েদা ( রাঃ ) নামক সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে বলেনঃ “ আমরা এ জন্তুগুলো হতে কি ধরনের উপকার গ্রহণ করতে পারি?” তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় । হাকিমও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব আল কুরজীও এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, কুকুর হত্যা প্রসঙ্গে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে।( আরবী ) এটা ( আরবী ) –এর ( আরবী ) হতে ( আরবী ) হয়েছে। এ অবস্থায় এটা বাক্যের কর্তার অবস্থা বর্ণনা করে। এটা ( আরবী ) –এরও ( আরবী ) হতে পারে। এ অবস্থায় এটা বাক্যের কর্মের অবস্থা বর্ণনা করে। অর্থাৎ যে সমস্ত শিকারী পশুকে তোমরা শিকার করা শিক্ষা দিয়েছ, আর তারা তাদের থাবা এবং নখ দ্বারা শিকার করে, তাদের শিকার তোমরা খেতে পারবে। সুতরাং এ হতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, শিকারী জন্তু যদি তার আঘাতের দ্বারা শিকারকে হত্যা করে তবে তা খাওয়া জায়েয হবে না। এটা ইমাম শাফিঈ ( রঃ )-এর দু'টি উক্তির একটি। একদল আলেমও এ অভিমত পোষণ করেন।( আরবী ) অর্থাৎ জন্তু তখনই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবে যখন তার মধ্যে নিম্নলিখিত তিনটি গুণ পাওয়া যাবে। ( ক ) যখন তাকে শিকারের জন্যে পাঠানো হয় তখন সে ছুটে যায়, ( খ ) যখন তাকে ডাকা হয় তখন সাথে সাথে ফিরে আসে এবং ( গ ) শিকার করার পর ওটা সে নিজে ভক্ষণ না করে তার মালিকের জন্যে রেখে দেয়। আর আল্লাহ এজন্যেই বলেনঃ “ শিকারী জন্তুগুলো তোমাদের জন্যে যা রেখে দেয় তা তোমরা খাও এবং শিকারী পশুগুলোকে শিকারের জন্যে পাঠাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ কর ।” অর্থাৎ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জন্তুকে শিকারের জন্যে পাঠাবার সময় যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় তবে ওর শিকার খাওয়া হালাল, যদিও সে শিকার করার পর ওকে হত্যা করে ফেলে। এ ব্যাপারে সকল আলেমই একমত। এ আয়াত শিকার সম্পর্কে যে নির্দেশের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করে, হাদীসেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবূ ইবনে হাতিম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাতিম, ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরকে শিকারের জন্যে পাঠাই এবং ঐ সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাঁকে বললেনঃ “ তোমার কুকুর যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং ওকে শিকারের জন্যে পাঠাবার সময় যদি তুমি আল্লাহর নাম নিয়ে থাক তবে ওটা তোমার জন্যে যা শিকার করে আনবে তা তুমি খেতে পার, যদিও কুকুর ওকে মেরেও ফেলে । তবে হ্যাঁ, এটা অবশ্যই জরুরী যে, ওটা শিকারের সময় অন্য কুকুর যেন ওর। সাথে মিলিত না হয়। কেননা, তুমি তোমার কুকুরটিকে আল্লাহর নাম নিয়ে ছেড়েছো বটে, কিন্তু অন্য কুকুরটিকে তো বিসমিল্লাহ বলে ছাড়া হয়নি।”আমি বললাম, আমি ধারাল খড়ি দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ “ যদি ওটা তীক্ষ প্রান্ত দিয়ে আহত করে তবে তুমি খেতে পার । কিন্তু যদি ভোতা দিক দিয়ে আহত করে তবে খেয়ো না। কেননা, ওকে ঝাপটা দিয়ে মারা হয়েছে।” অন্য বর্ণনায় নিম্নরূপ শব্দ রয়েছে-যখন তুমি তোমার কুকুরটিকে ছেড়ে দেবে তখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে। অতঃপর যদি ওটা শিকারকে ধরে রাখে এবং তোমার নিকট পৌছার সময় ঐ শিকার জীবিত থাকে তবে ওকে যবেহ করবে। আর যদি কুকুরটাই ওকে মেরে ফেলে এবং তার থেকে কিছুই ভক্ষণ না করে তবে ওটাও তুমি খেতে পার। কেননা, কুকুরের ওটাকে শিকার করাই হচ্ছে ওকে যবেহ করা। আর এক বর্ণনায় নিম্নরূপ শব্দগুলোও রয়েছে- যদি ওটা ওকে ভক্ষণ করে তাহলে তুমি ওটা খেয়ো না। কেননা, আমার আশংকা হচ্ছে যে, কুকুরটি শিকারটিকে নিজের জন্যেই তো ধরে রাখেনি? এটাই জমহূরের দলীল। আর প্রকৃতপক্ষে ইমাম শাফিঈ ( রঃ )-এর সহীহ মাযহাবও এটাই যে, কুকুর যখন শিকারকে খেয়ে নেবে তখন ওটা সাধারণভাবেই হারাম হয়ে যাবে। এতে কোন ব্যাখ্যা নেই, যেমন হাদীসে রয়েছে। হ্যাঁ, তবে পূর্ববর্তী গুরুজনদের একটি দলের উক্তিও এটাই যে, ওটা সাধারণভাবেই হালাল। তাদের দলীল হচ্ছে নিম্নরূপঃ হযরত সালমান ফারসী ( রাঃ ) বলেনঃ তুমি ( ঐ শিকার ) খেতে পার, যদিও কুকুরটি ওর এক তৃতীয়াংশ খেয়ে ফেলে। হযরত সাঈদ ইবনে আবি আক্কাস ( রাঃ ) বলেনঃ কুকুর যদি দুই তৃতীয়াংশও খেয়ে ফেলে তবুও তুমি ওটা খেতে পার। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ )-এর এটাই নির্দেশ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) বলেনঃ “ যখন তুমি বিসমিল্লাহ বলে তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরটিকে শিকারের জন্যে ছেড়ে দেবে তখন ওটা যে জন্তুটিকে তোমার জন্যে ধরে রাখবে, তুমি ওটা খাবে, কুকুরটি ওটা থেকে কিছু খেয়ে থাকুক বা না থাকুক ।” হযরত আলী ( রাঃ ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস ( রা ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আতা' ( রঃ ) এবং হযরত হাসান বসরী ( রঃ ) হতে এ ব্যাপারে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। যুহরী ( রঃ ) রাবীআহ ( রঃ )-এবং মালিক ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত হয়েছে। ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) স্বীয় প্রথম উক্তিতে এ দিকেই গেছেন এবং নতুন উক্তিতেও ঐ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। হযরত সালমান ফারসী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত ইবনে জারীর ( রঃ )-এর একটি মারফু হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যখন কোন লোক শিকারের উদ্দেশ্যে স্বীয় কুকুরটিকে প্রেরণ করে, অতঃপর শিকারকে এমন অবস্থায় পায় যে, কুকুরটি ওকে খেয়ে ফেলেছে তখন যা অবশিষ্ট রয়েছে সে তা খেতে পারে ।” এ হাদীসের সনদে ইবনে জারীর ( রঃ )-এর উক্তি অনুসারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে এবং বর্ণনাকারী সাঈদ ( রঃ )-এর হযরত সালমান ফারসী ( রাঃ ) হতে শ্রবণ জানা যায়নি। আর বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী ওকে মারফু করেন না, বরং হযরত সালমান ফারসী ( রাঃ )-এর উক্তি নকল করেন মাত্র। এ উক্তিটি সঠিক বটে, কিন্ত এ অর্থেরই অন্যান্য মারফু হাদীসও বর্ণিত আছে। সুনানে আবি দাউদে হযরত আমর ইবনে শুআইব তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, আবু সা'লাবা ( রাঃ ) নামক একজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার নিকট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিকারী কুকুর রয়েছে। ওর শিকার সম্পর্কে ফতওয়া কি? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তরে বললেনঃ “ ওটা যে জন্তু তোমার জন্যে ধরে আনে তা তোমার জন্যে হালাল ।' তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ যবেহ করতে পারি বা না পারি, সর্বাবস্থাতেই কি ( হালাল )? এবং কুকুরটি তা খেয়ে থাকে তবুও কি ( হালাল )? তিনি জবাবে বললেনঃ হ্যাঁ, যদি খেয়ে থাকে তবুও ( হালাল )।' তিনি আর একটি প্রশ্ন করলেনঃ আমি আমার তীর ও কামান দ্বারা শিকার করবো, এ ব্যাপারে ফতওয়া কি? তিনি জবাব দিলেনঃ “ এমনকি যদি তুমি দেখতেও না পাও এবং অনুসন্ধানের পর পাওয়া যায় তবুও, যদি না তাতে অন্য কারও তীরের চিহ্ন থাকে । তিনি তৃতীয় প্রশ্ন করলেনঃ প্রয়োজনবোধে অগ্নিপূজকদের বরতন ব্যবহার করা আমাদের জন্যে কিরূপ? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ তুমি ওটা ধুয়ে নাও । অতঃপর তুমি তাতে খেতে ও পান করতে পার।” হাদীসটি সুনানে নাসাঈর মধ্যে রয়েছে। সুনানে আবি দাউদের দ্বিতীয় হাদীসে রয়েছেঃ “ যখন তুমি স্বীয় কুকুরকে আল্লাহর নাম নিয়ে পাঠাও তখন তুমি ওর শিকারকে খেতে পার, যদিও কুকুর তা থেকে কিছু খেয়েও নেয় । আর তোমার হাত যে শিকারকে তোমার জন্যে নিয়ে আসে ওটাও তুমি খেতে পার।” এ দু'টি হাদীসের সনদ খুবই মজবুত ও উত্তম। অন্য হাদীসে আছে-তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর যে, শিকার তোমার জন্যে ধরে আনে, তুমি ওটা খেয়ে নাও। হযরত আদী ( রাঃ ) জিজ্ঞেস করলেনঃ যদি কুকুর তা থেকে কিছু খেয়ে নেয় তবুও কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ হ্যা, তবুও?” এসব আছার ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, শিকারী কুকুর শিকারের কিছু অংশ খেয়ে ফেললেও বাকী অংশ কুকুরের প্রভু খেতে পারে । এসব হচ্ছে ঐসব লোকের দলীল, যারা কুকুর ইত্যাদির ভক্ষণকৃত শিকারকে হারাম বলেন না। এ দুটি দলের ( যারা সরাসরি হারাম বলেন বা হালাল বলেন ) মাঝামাঝি আর একটি দল রয়েছেন। তারা বলেন যে, যদি কুকুর শিকার ধরার পর পরই তা খেয়ে ফেলে তবে বাকী অংশ হারাম। কিন্তু যদি শিকার ধরার পর স্বীয় প্রভুর জন্যে অপেক্ষা করে এবং দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও প্রভুকে না পায়, তারপর ক্ষুধার তাড়নায় তা খেয়ে ফেলে তবে অবশিষ্ট অংশ হালাল। প্রথম কথাটির উপর প্রযোজ্য হয় হযরত আদী ( রাঃ ) সম্বলিত হাদীস। দ্বিতীয় কথাটির উপর প্রযোজ্য হযরত আবু সা'লাবা ( রাঃ ) সম্বলিত হাদীস। এ দু'টি মতভেদ অতি উত্তম এবং এর দ্বারা দু’টি বিশুদ্ধ হাদীস একত্রিত হচ্ছে। উস্তাদ আবুল মায়ালী জুয়াইনী ( রাঃ ) স্বীয় গ্রন্থ ‘নিহায়ার মধ্যে এ আশা করেছেন যে, যদি কেউ এর মধ্যে এ ব্যাখ্যা করে নেয়। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা যে, জনগণই এর ব্যাখ্যা করে নিয়েছে। এ মাসআলায় চতুর্থাংশের মত এই যে, কুকুরের ভক্ষিত শিকার হারাম, যেমন নাকি হযরত আদী ( রাঃ )-এর হাদীসে রয়েছে। আর বাজ পাখীর ভক্ষিত শিকার হারাম নয়, কেননা সে তো খাবারের মাধ্যমেই শিক্ষা অর্জন করে থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যদি পাখী স্বীয় মনিবের কাছে ফিরে আসে এবং শিকারকে হত্যা না করে, অতঃপর সে যদি পাখায় খামচা দেয় অথবা গোস্ত খায় তবে তুমি তা খেয়ে নাও। ইবরাহীম নাখঈ, শা’বী ও হাম্মাদ ইবনে সুলাইমানও এ কথা বলেন। তাদের দলীল হযরত ইবনে আবু হাতিমের বর্ণনা করা এ হাদীস যে, হযরত আদী ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমরা কুকুর এবং বাজের দ্বারা শিকার করে থাকি। এটা কি আমাদের জন্যে হালাল? তিনি ( সঃ ) বলেনঃ “ যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিকারী জন্তু তোমাদের জন্যে শিকারকে ধরে রাখে এবং তোমরা ওকে পাঠাবার সময় আল্লাহর নাম করে থাক, তোমরা ঐ শিকার খেয়ে নাও ।” তিনি পুনরায় বললেনঃ “ তুমি যে কুকুরকে আল্লাহর নাম নিয়ে ছেড়েছো, সে যে জন্তুকে ধরে রাখবে, তুমি তা খাও ।” ( আদী রাঃ বলেনঃ ) আমি বললামঃ সে যদি ওকে মেরে ফেলে তবুও কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ “ মেরে ফেলে তবুও । তবে শর্ত এই যে, যেন খেয়ে না থাকে।” আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ যদি ঐ কুকুরের সঙ্গে অন্য কুকুরও মিলিত হয়ে যায় তাহলে? তিনি জবাবে বললেনঃ “ তাহলে তা তুমি খেয়ে না যে পর্যন্ত না তোমার মনে বিশ্বাস জন্মে যে, তোমার কুকুরই ওকে শিকার করেছে ।” আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলামঃ মানুষ তীর দ্বারা শিকার করে থাকে। ওর মধ্যে কোনটা হালাল? তিনি উত্তর দিলেনঃ “ যে তীর আহত করে এবং তুমি ওটা ছাড়বার সময় আল্লাহর নাম নিয়ে থাকে, ঐ শিকার তুমি খেতে পার ।” প্রকাশ থাকে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কুকুরের বেলায় না খাওয়ার শর্ত আরোপ করলেন, কিন্তু বাজ পাখীর বেলায় সেই শর্ত আরোপ করলেন না। সুতরাং এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য সাব্যস্ত হয়ে গেল। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ তোমাদের জন্তুগুলো যে হালাল জন্তুগুলো শিকার করে আনে তা তোমরা খাও এবং ঐ শিকারী জন্তুগুলোকে ছাড়বার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। যেমন হযরত আদী ( রাঃ ) ও হযরত সা'লাবা ( রাঃ ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে। এজন্যেই ইমাম আহমাদ ( রঃ ) প্রমুখ ইমামগণ এ শর্ত গুরুত্বের সাথে আরোপ করেছেন যে, শিকারের জন্যে শিকারী জন্তুকে ছাড়বার সময় এবং তীর ছাড়বার সময় বিসৃমিল্লাহ্ অবশ্যই উচ্চারণ করতে হবে। জমহুরের প্রসিদ্ধ মাযহাব এটাই যে, এ আয়াত ও হাদীসের ভাবার্থ হচ্ছে শিকারী জন্তুকে শিকারের উদ্দেশ্যে পাঠাবার সময় অল্লাহর নাম নেয়া। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ শিকারী জন্তুকে শিকারের জন্যে প্রেরণের সময় বিসমিল্লাহ পড়ে নাও । তবে ভুলে গেলে কোন দোষ নেই। কেউ কেউ বলেন। যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে খাওয়ার সময় বিসৃমিল্লাহ বলা। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উমার ইবনে আবূ সালমা ( রাঃ )-এর পালিতা মেয়েকে বলেছিলেনঃ “ আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর, ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনের দিক থেকে খাও ।' সহীহ বুখারীতে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, জনগণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! এমন লোকেরা আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসে যারা নওমুসলিম, তারা ( জন্তু যবেহ্ করার সময় ) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে কি করে না তা আমাদের জানা নেই। আমরা সেই গোশত খেতে পারি কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তা খেয়ে নাও।' মুসনাদে আহমাদে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা ছয়জন সাহাবীর সাথে খানা খাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে তা হতে দু’গ্রাস খেয়ে নেয়। তখন নবী ( সঃ ) বললেনঃ “ যদি লোকটি বিসমিল্লাহ বলতো তবে এ খাদ্য তোমাদের সকলের জন্যেই যথেষ্ট হতো । তোমাদের কেউ যখন খানা খেতে বসবে তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে নেয়। যদি প্রথমে ( বিসমিল্লাহ বলতে ) ভুলে যায়। তবে যখন স্মরণ হবে তখন যেন বলে ( আরবী ) আল্লাহর নামে শুরু করছি এর প্রথমের জন্য ও শেষের জন্য। এ হাদীসটিই মনকাতা সনদে সুনানে ইবনে মাজার মধ্যেও রয়েছে। অন্য সনদে এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদ, জামেউত তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ এবং মুসনাদে আহমাদের মধ্যে রয়েছে। ইমাম তিরিমিযী ( রঃ ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। জাবির ইবনে সাবীহ ( রঃ ) বলেনঃ “ আমি ( একবার ) হযরত মুসা ইবনে আবদুর রহমান খুযাঈর সাথে ( ওয়াসিত নামক জায়গা )-এর সফরে বের হই । তার অভ্যাস ছিল এই যে, তিনি খাদ্য খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতেন এবং শেষ গ্রাসের সময় ( আরবী ) বলতেন। তিনি আমাকে বললেন যে, খালিদ ইবনে উমাইয়া ইবনে মাখশা ( রাঃ ) নামক সাহাবী বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি আহারের সময় বিসমিল্লাহ বলে না তার সাথে শয়তান খেতে থাকে । অতঃপর যখন সে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন তার ( শয়তানের ) বমি হয়ে যায় এবং যতটা সে খেয়েছে তার সবই বেরিয়ে পড়ে।” ( মুসনাদ আহমাদ ইত্যাদি ) ইবনে মুঈন ( রঃ ) এবং নাসাঈ ( রঃ ) এ হাদীসের বর্ণনাকারীকে নির্ভরযোগ্য বলেন বটে, কিন্তু আবু ফাতহ ইযদী ( রঃ ) বলেন যে, এ বর্ণনাকারীর হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত হুযাইফা ( রাঃ ) বলেনঃ আমরা যখন নবী ( সঃ )-এর সাথে আহারে বসতাম তখন খাদ্যে তাঁর হাত দেয়ার পূর্বে আমরা হাত দিতাম না। ( একদা ) আমরা তার সাথে আহার করছিলাম, এমন সময় একটি মেয়ে পড়তে পড়তে আসলো, কেউ যেন তাকে ধাক্কা দিচ্ছিল। এসেই সে মুখে গ্রাস উঠিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু নবী ( সঃ ) তার হাত ধরে নিলেন। এরপর এভাবেই একজন বেদুঈন আসলো এবং এসেই পাত্রে হাত দিতে গেল। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তারও হাতটি ধরে ফেললেন এবং বললেনঃ “ যখন কোন খাদ্যের উপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না তখন শয়তান ঐ খাদ্যকে নিজের জন্যে হালাল করে নেয় । সে আমাদের সাথে খাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে এ মেয়েটির সাথে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি তার হাত ধরে ফেলেছি। তারপর সে এ বেদুঈনের সাথে এসেছে। আমি তার হাত ধরে ফেলেছি। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এ দু’জনের হাতের সাথে শয়তানের হাতও আমার হাতের মধ্যে রয়েছে।” ( এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে নাসাঈতে রয়েছে )সহীহ মুসলিম, সুনানে আবি দাউদ, সুনানে নাসাঈ ও সুনানে ইবনে মাজার মধ্যে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ মানুষ যখন বাড়ীতে প্রবেশের সময় ও খাদ্য খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন শয়তান ( তার অধীনস্থদেরকে ) বলে-“ তোমাদের জন্যে না আছে রাত্রি কাটানোর জায়গা এবং না আছে রাত্রির আহারের ব্যবস্থা ।” আর যখন বাড়ীতে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না তখন শয়তান বলে-“ তোমরা রাত্রি কাটানোর এবং রাত্রির আহারের জায়গা পেয়ে গেছো ।" মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে ইবনে মাজার মধ্যে রয়েছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর খিদমতে হাযির হয়ে অভিযোগের সুরে বললোঃ আমরা খাদ্য খাই কিন্তু পরিতৃপ্ত হই না, ( এর কারণ কি )। তিনি উত্তরে বললেনঃ “ সম্ভবতঃ তোমরা পৃথক পৃথকভাবে খানা খেয়ে থাক । তোমরা সবাই মিলিতভাবে খানা খাও এবং বিসমিল্লাহ বল। এতে আল্লাহ তোমাদের জন্যে ( খাদ্যে ) বরকত দান কররেন।”
সূরা মায়িদা আয়াত 4 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- এটা ক্ষমাশীল করুনাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন।
- বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর
- যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের
- যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।
- তোমরা কি প্রতিটি উচ্চস্থানে অযথা নিদর্শন নির্মান করছ?
- না, সত্ত্বরই তারা জানতে পারবে,
- তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও
- সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।
- কিন্তু যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে মিলিত হয় যে, তোমাদের মধ্যে ও তাদের মধ্যে চুক্তি আছে
- যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা মায়িদা ডাউনলোড করুন:
সূরা Maidah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Maidah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers