কোরান সূরা সাফ্ফ আয়াত 4 তাফসীর
﴿إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ﴾
[ الصف: 4]
আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। [সূরা সাফ্ফ: 4]
Surah As-Saff in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Saff ayat 4
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ভালবাসেন তাদের যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে সারিবদ্ধভাবে, যেন তারা একটি জমাট গাঁথুনি।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪. আল্লাহ ওই সব মু’মিনকে ভালোবাসেন যারা এমনভাবে পাশাপাশি লেগে লেগে দাঁড়িয়ে কাতারবন্দী হয়ে তাঁর সন্তুষ্টি কামনান্তে তাঁর পথে যুদ্ধ করে যেন তারা সিসা ঢালা প্রাচীর। যা পরস্পর মিলিত হয়ে থাকে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যারা আল্লাহর পথে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।[১] [১] এখানে জিহাদকে একটি বড় মাহাত্ম্যপূর্ণ নেক কাজ বলা হয়েছে; যা আল্লাহর নিকট অনেক প্রিয় আমল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ আমরা একদা পরস্পর আলোচনা করছিলাম যে, আমাদের মধ্যে কেউ যদি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতো যে, আল্লাহ তা'আলার নিকট কোন আমল সবচেয়ে প্রিয়? কিন্তু তখনো কেউ দাঁড়ায়নি, ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর দূত আমাদের নিকট আসলেন এবং এক এক করে প্রত্যেককে ডেকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট নিয়ে গেলেন । আমরা সবাই একত্রিত হলে তিনি এই পূর্ণ সূরাটি আমাদেরকে পাঠ করে শুনালেন।" ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত এক হাদীসে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ “ আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে ভয় পাচ্ছিলাম ।” তাতে এও রয়েছে যে, যেমনভাবে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পূর্ণ সূরাটি পাঠ করে শুনিয়েছিলেন তেমনিভাবেই এই হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী তাবেয়ীকে পাঠ করে শুনান, তাবেয়ী তার ছাত্রকে এবং তার ছাত্র তার ছাত্রকে পাঠ করে শুনান। এই ভাবে শেষ পর্যন্ত উস্তাদ তার শাগরিদকে পাঠ করে শুনিয়ে দেন।অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমরা বলেছিলাম যে, যদি আমরা এরূপ আমলের খবর জানতে পারি তবে অবশ্যই আমরা ওর উপর আমলকারী হয়ে যাবো ।”আমাকে আমার উস্তাদ শায়খুল মুসনাদ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে আবি তালিব হাজ্জারও ( রঃ ) স্বীয় সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করে শুনিয়েছেন এবং তাতেও ক্রমিকভাবে প্রত্যেক শিক্ষকের তার ছাত্রকে এই সূরাটি পাঠ করে শুনানো বর্ণিত আছে। এমনকি আমার উস্তাদও এটা তার উস্তাদ হতে শুনেছেন। কিন্তু তিনি নিজে নিরক্ষর ছিলেন এবং এটাকে মুখস্থ করার সময় পাননি বলে আমাকে পাঠ করে শুনাননি। কিন্তু সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, আমার অন্য উস্তাদ হাফিয কাবীর আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে উসমান ( রঃ ) স্বীয় সনদে এ হাদীসটি আমাকে পড়াবার সময় এই সূরাটিও পূর্ণভাবে পাঠ করে শুনিয়েছেন। ১-৪ নং আয়াতের তাফসীর: প্রথম আয়াতের তাফসীর কয়েকবার গত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।এরপর আল্লাহ তা'আলা ঐ লোকদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন যারা এমন কথা বলে যা নিজেরা করে না এবং ওয়াদা করার পর তা পুরো করে না। পূর্বযুগীয় কোন কোন আলেম এই আয়াতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে বলেন যে, ওয়াদা পূর্ণ করা সাধারণভাবেই ওয়াজিব। যার সাথে ওয়াদা করে সে তা পূর্ণ করার তাগিদ করুক আর নাই করুক। তারা তাদের দলীল হিসেবে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত এ হাদীসটিও পেশ করেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মুনাফিকের নিদর্শন হলো তিনটি । ( এক ) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করবে, ( দুই ) কথা বললে মিথ্যা বলবে এবং ( তিন ) তার কাছে আমানত রাখা হলে তা খিয়ানত করবে।” অন্য সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “ চারটি অভ্যাস যার মধ্যে আছে সে নির্ভেজাল মুনাফিক । আর যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি অভ্যাস রয়েছে তার মধ্যে নিফাক বা কপটতার একটি অভ্যাস রয়েছে যে পর্যন্ত সে তা পরিত্যাগ করে। এগুলোর মধ্যে একটি অভ্যাস হলো ওয়াদা ভঙ্গ করা। শারহে বুখারীর শুরুতে আমরা এই হাদীসগুলো পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা।এ জন্যেই এখানেও আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেনঃ তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক।হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমির ইবনে রাবীআহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাদের নিকট আগমন করেন, ঐ সময় আমি নাবালক ছিলাম। খেলা করার জন্যে আমি বের হলে আমার মা আমাকে ডাক দিয়ে বললেনঃ “ হে আল্লাহর বান্দা! এসো, তোমাকে কিছু দিচ্ছি ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমার মাতাকে বললেনঃ ‘সত্যি কি তুমি তোমার ছেলেকে কিছু দিতে চাও?' আমার মাতা উত্তরে বললেনঃ “ জ্বী হ্যাঁ, খেজুর দিতে চাই ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বললেনঃ “ তাহলে ভাল, অন্যথায় জেনে রেখো যে, যদি কিছুই না দেয়ার ইচ্ছা করতে তবে মিথ্যা বলার পাপ তোমার উপর লিখা হতো ( তোমাকে মিথ্যাবাদিনী হিসেবে গণ্য করা হতো ) ।" ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) ও ইমাম আবু দাউদ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) ইমাম মালিক ( রঃ ) বলেন যে, যদি ওয়াদার সাথে ওয়াদাকৃত ব্যক্তির তাগীদের সম্পর্ক থাকে তবে ঐ ওয়াদা পুরো করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। যেমন কেউ যদি কাউকেও বলেঃ “ তুমি বিয়ে কর, আমি তোমাকে দৈনিক এতো এতো দিতে থাকবো ।” তার কথা মত যদি ঐ লোকটি বিয়ে করে নেয় তবে যতদিন ঐ বিয়ে টিকে থাকবে ততদিন ঐ ব্যক্তির উপর তার ওয়াদা মুতাবিক দিতে থাকা ওয়াজিব হবে। কেননা, তাতে মানুষের এমন হকের সম্পর্ক সাব্যস্ত হয়ে গেছে যার উপর তাকে কঠিনভাবে জবাবদিহি করতে হবে। জমহুরে মাযহাব এই যে, ওয়াদা পূরণ করা সাধারণভাবে ওয়াজিবই নয়। এই আয়াতের জবাব তাঁরা এই দেন যে, যখন জনগণ তাদের উপর জিহাদ ফরয হওয়া কামনা করলো এবং তা তাদের উপর ফরয হয়ে গেল তখন কতক লোক ভীত ও চিন্তিত হয়ে পড়লো এবং জিহাদ হতে বিমুখ হয়ে গেল। ঐ সময় ( আরবী )-এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যাদেরকে বলা হয়েছিলঃ তোমরা তোমাদের হস্ত সংবরণ কর, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দাও? অতঃপর যখন তাদেরকে যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো তখন তাদের একদল মানুষকে ভয় করছিল আল্লাহকে ভয় করার মত অথবা তদপেক্ষা অধিক, এবং বলতে লাগলোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্যে যুদ্ধের বিধান কেন দিলেন? আমাদেরকে কিছু দিনের অবকাশ দেন না? বলঃ পার্থিব ভোগ সামান্য এবং যে মুত্তাকী তার জন্যে পরকালই উত্তম । তোমাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমন কি তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দূর্গে অবস্থান করলেও।” ( ৪:৭৭-৭৮ ) আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী )অর্থাৎ “ মুমিনরা বলে- কেন তাদের উপর কোন সূৱা অবতীর্ণ হয় না? অতঃপর যখন কোন সুস্পষ্ট মর্ম বিশিষ্ট আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তাতে যুদ্ধের বর্ণনা দেয়া হয় তখন যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তাদেরকে তুমি দেখো যে, মৃত্যুর অজ্ঞানতা যাকে পেয়ে বসেছে তার মত তারা তোমার দিকে তাকাতে রয়েছে ।” ( ৪৭:২০ ) এই আয়াতটিও এই রূপই।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, জিহাদ ফরয হওয়ার পূর্বে কতক মুমিন বলেছিলঃ “ যদি আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্যে এমন আমল অবশ্যপালনীয় করতেন যা তার নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় তাহলে কতই না ভাল হতো!' তখন মহান আল্লাহ স্বীয় নবী ( সঃ )-কে জানিয়ে দিলেনঃ “আমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় হলো ঈমান, যা সম্পূর্ণরূপে সন্দেহমুক্ত এবং বেঈমানদের সাথে জিহাদ করা ।' এটা কতক মুমিনের নিকট খুবই ভারী বোধ হলো। মহামহিমান্বিত আল্লাহ তখন বললেনঃ “ তোমরা যা কর না তা কেন বল?” ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এটাই পছন্দ করেছেন । মুকাতিল ইবনে হাইয়ান ( রঃ ) বলেন যে, মুমিনরা বলেছিলঃ “ কোন্ আমল আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় তা যদি আমরা জানতাম তবে অবশ্যই আমরা ঐ আমল করতাম । তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাদেরকে এটা জানাতে গিয়ে বলেনঃ “ যারা আল্লাহর পথে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত হয়ে সংগ্রাম করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন ।” অতঃপর উহুদের দিন তাদের পরীক্ষা হয়ে যায়। তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। তখন আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেনঃ “ হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল?” তিনি বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে আমার পথে যুদ্ধ করেছে ।'কোন কোন গুরুজন বলেন যে, এটা ঐ লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা বলতোঃ “ আমরা যুদ্ধ করেছি', অথচ তারা যুদ্ধ করেনি, বলতোঃ “আমরা আহত হয়েছি', অথচ আহত হয়নি, বলতোঃ “আমরা প্রহৃত হয়েছি’ অথচ প্রহৃত হয়নি, বলতোঃ ‘আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি', অথচ ধৈর্যধারণ করেনি, বলতোঃ ‘আমাদেরকে বন্দী করা হয়েছে, অথচ তাদেরকে বন্দী করা হয়নি ।ইবনে যায়েদ ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। তারা মুসলমানদেরকে সাহায্য করার ওয়াদা করতো, কিন্তু প্রয়োজনের সময় সাহায্য করতো না। যায়েদ ইবনে আসলাম ( রঃ ) বলেন যে, এর দ্বারা জিহাদ উদ্দেশ্য।মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, যারা এসব কথা বলেছিলেন তাঁদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আনসারী ( রাঃ )-ও একজন ছিলেন। যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হলো এবং জানা গেল যে, জিহাদ হলো সবচেয়ে উত্তম আমল তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে, মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নিজেকে আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিলেন। ওরই উপর তিনি কায়েম থাকেন এবং আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যান।হযরত আবুল আসওয়াদ দাইলী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু মূসা ( রাঃ ) একবার বসরার কারীদেরকে ডেকে পাঠান। তখন তিনশজন কারী তাঁর নিকট আগমন করেন যাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কুরআনের পাঠক। অতঃপর তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ দেখুন, আপনারা হলেন বসরাবাসীদের কারী এবং তাদের মধ্যে উত্তম লোকে । জেনে রাখুন যে, আমরা একটি সূরা পাঠ করতাম যা ( আরবী ) সূরাগুলোর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত ছিল। অতঃপর তা আমাদেরকে ভুলিয়ে , দেয়া হয়েছে। ওর মধ্য হতে শুধু এটুকু আমার স্মরণ আছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে মুমিনগণ! যা তোমরা কর না তা তোমরা কেন বল?” সুতরাং ওটা লিখা হবে এবং সাক্ষী হিসেবে তোমাদের গলদেশে লটকানো হবে । অতঃপর কিয়ামতের দিন ওটা সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। এরপর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ 'যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন।' অর্থাৎ এটা হলো আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে সংবাদ যে, তিনি তাঁর ঐ মুমিন বান্দাদেরকে ভালবাসেন যারা শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, যাতে আল্লাহর কালেমা সমুন্নত হয়, ইসলামের হিফাযত হয় এবং তাঁর দ্বীন সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত হয়। হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বলেছেনঃ “ তিন প্রকারের লোককে দেখে আল্লাহ্ তা'আলা হেসে থাকেন । ( এক ) যারা রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে, ( দুই ) নামাযের জন্যে যারা কাতারবন্দী বা সারিবদ্ধ হয় এবং ( তিন ) যুদ্ধের জন্যে যারা সারিবদ্ধ হয়।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন) হযরত মাতরাফ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “ হযরত আবু যারের ( রাঃ ) রিওয়াইয়াতকৃত একটি হাদীস আমার নিকট পৌঁছে । আমার মনে বাসনা জাগলো যে, আমি স্বয়ং তার সাথে সাক্ষাৎ করে তার মুখে হাদীসটি শুনবো। সুতরাং একদা আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং আমার মনের বাসনা তাঁর সামনে প্রকাশ করলাম। তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বললেনঃ “ হাদীসটি কি?” আমি বললামঃ আল্লাহ্ তা'আলা তিন ব্যক্তিকে শত্রু মনে করেন এবং তিন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব রাখেন । তিনি বললেনঃ “ হ্যাঁ, আমি আমার বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ ( সাঃ )-এর উপর কখনো মিথ্যা আরোপ করতে পারি না । সত্যিই তিনি আমাদের নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করলামঃ যাদের সাথে আল্লাহ পাক বন্ধুত্ব রাখেন ঐ তিন ব্যক্তি কারা? তিনি জবাবে বললেনঃ “ এক তো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে । একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বের হয়ে শত্রুদের সাথে বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করে। তুমি এর সত্যতা আল্লাহর কিতাবেও দেখতে পার।” অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন, তারপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমের এ হাদীসটি এভাবে এই শব্দেই এতোটুকুই বর্ণিত হয়েছে। হাঁ, তবে জামে তিরমিযী ও সুনানে নাসাঈতে হাদীসটি পূর্ণভাবে রয়েছে এবং আমরাও এটাকে অন্য জায়গায় পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং আল্লাহরই জন্যে সমস্ত প্রশংসা।মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত কা'ব আহবার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী ( সঃ )-কে বলেনঃ “ তুমি আমার বান্দা, আমার উপর নির্ভরশীল এবং আমার নিকট পছন্দনীয় । তুমি দুশ্চরিত্র ও কর্কশভাষী নও। তুমি বাজারে শোরগোলকারী নও। মন্দের প্রতিশোধ তুমি মন্দ দ্বারা গ্রহণ কর না বরং মার্জনা ও ক্ষমা করে থাকো। তোমার জন্মস্থান মক্কা, হিজরতের স্থান তাবাহ, দেশ সিরিয়া। তোমার উম্মতের সংখ্যা অধিক যারা আল্লাহর প্রশংসাকারী। সর্বাবস্থায় ও সর্বস্থলে তারা সদা আল্লাহর প্রশংসা করে থাকে। সকাল বেলায় নিম্নস্বরে তাদের আল্লাহর যিক্রের শব্দ সর্বদা শোন যায়, যেমন মৌমাছির গুনগুন্ শব্দ। তারা তাদের গোঁফ হেঁটে থাকে ও নখ কেটে থাকে। তারা তাদের পদনালীর অর্ধেক পর্যন্ত তাদের লুঙ্গী লটকিয়ে থাকে। জিহাদের মাঠে তাদের সারি নামাযের সারীর মত।” অতঃপর হযরত কা'ব আহবার ( রাঃ ) ( আরবী ) -এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। তারপর বলেনঃ “ তারা সূর্যের প্রতি লক্ষ্য রাখে, যখনই এবং যেখানেই সময় হয় তারা নামায আদায় করে থাকে যদিও সওয়ারীর উপরও অবস্থান করে ।”হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় সেনাবাহিনীকে সারিবদ্ধ না করা পর্যন্ত শত্রুদের সাথে যুদ্ধ শুরু করতেন না। সুতরাং কাতারবন্দী বা সারিবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা মুসলমানদেরকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন যে, ( আরবী )-এর অর্থ হচ্ছেঃ যুদ্ধে তারা একে অপরের সাথে মিলিত অবস্থায় সারিবদ্ধ হয়। কাতাদা ( রঃ ) ( আরবী )-এর ভাবার্থ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তুমি কি দেখনি যে, অট্টালিকা নির্মাণকারী তার অট্টালিকার কোন জায়গায় উঁচু নীচু হোক বা আঁকা বাকা হোক এটা সে চায় না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা'আলাও চান না যে, তাঁর কাজে মতভেদ হোক। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং মুমিনদেরকে তাদের যুদ্ধে এবং তাদের নামাযে কাতারবন্দী করেছেন। সুতরাং মুমিনদের উচিত যে, তারা আল্লাহ তা'আলার হুকুম মেনে চলবে। যারা তাঁর হুকুম মেনে চলবে ওটা হবে তাদের পরিত্রাণের উপায়।”যারা আল্লাহর পথে সগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। অতঃপর হযরত আবূ বাহরিয়্যাহ ( রঃ ) বলেনঃ “ যখন আপনারা আমাকে দেখবেন যে, আমি কাতার বা সারির মধ্যে এদিক ওদিক ভ্রুক্ষেপ করছি তখন আপনারা আমাকে ইচ্ছামত ভৎসনা ও গালিগালাজ করতে পারেন ।” [ এটা বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) ]
সূরা সাফ্ফ আয়াত 4 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন।
- অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত
- কোরাইশের আসক্তির কারণে,
- আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম।
- বসবাস ও অবস্থানস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা।
- আর তারা বলবে-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।
- দুনিয়ার জীবনেই এদের জন্য রয়েছে আযাব এবং অতি অবশ্য আখেরাতের জীবন কঠোরতম। আল্লাহর কবল থেকে
- তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময়
- আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে
- আপনার পালনকর্তা তো পরাক্রমশালী পরম দয়ালু।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা সাফ্ফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Saff mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Saff শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers