কোরান সূরা আনফাল আয়াত 41 তাফসীর
﴿۞ وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ وَمَا أَنزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
[ الأنفال: 41]
আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। [সূরা আনফাল: 41]
Surah Al-Anfal in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anfal ayat 41
আর জেনে রেখো যা কিছু তোমরা যুদ্ধক্ষেত্রে লাভ করো তার পঞ্চমাংশ তাহলে আল্লাহ্র, জন্য যথা রসূলের জন্য, আর নিকটাত্মীয়ের জন্য, আর এতীমদের, মিসকিনদের, ও পথচারীদের জন্য, যদি তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহ্তে আর তাতে যা আমরা আমাদের বান্দার কাছে অবতারণ করেছি সেই ফুরকানের দিনে, যেদিন দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪১. হে মু’মিনরা! যদি তোমরা আমি আল্লাহর উপর এবং বদরের দিন আমার বান্দা মুহাম্মাদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর প্রতি যা নাযিল করেছি তার উপর বিশ্বাসী হয়ে থাকো তাহলে এ কথা জেনে রাখো যে, তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে কাফিরদের থেকে যা কিছু হাসিল করো তা পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে: যার চার ভাগ মুজাহিদদের মাঝে বন্টন করা হবে এবং অবশিষ্ট পঞ্চম ভাগকে আবারো পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে: যার এক ভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য অর্থাৎ তা মুসলমানদের সাধারণ খরচের খাতে ব্যয় করা হবে। আরেক ভাগ নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর আত্মীয় তথা বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবের জন্য। আরেক ভাগ এতীমের জন্য। আরেক ভাগ ফকির ও মিসকিনের জন্য। আরেক ভাগ পথে আটকে পড়া মুসাফিরদের জন্য। যে বদরের দিন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে নিজেদের শত্রæদের উপর বিজয়ী করে সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন। বস্তুতঃ যে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন তিনি সব কিছুই করতে সক্ষম।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আরো জেনে রাখ যে, যুদ্ধে যা কিছু তোমরা ( গনীমত ) লাভ কর[১] তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রসূলের, রসূলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতীম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য;[২] যদি তোমরা আল্লাহতে ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও যা ফায়সালার দিন[৩] ( বদরে ) আমি আমার দাসের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম;[৪] যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল[৫] এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। [১] 'গনীমতের মাল' থেকে সেই মাল উদ্দেশ্য যা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর লাভ হয়। পূর্বের উম্মতে এই মাল বিতরণের পদ্ধতি এই ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কাফেরদের নিকট হতে লাভ করা সমস্ত মাল-সম্পদকে এক জায়গায় জমা করা হত, আর আসমান হতে আগুন এসে তাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিত। কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য এই গনীমতের মাল আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন। আর যে মাল দুই দলের সন্ধি চুক্তির ভিত্তিতে বিনা যুদ্ধে অথবা জিযিয়া কর ও খাজনা আদায়ের মাধ্যমে লাভ হয় তাকে 'ফাই-এর মাল' বলা হয়। কখনো কখনো গনীমতের মালকেও ফাই-এর মাল বলা হয়ে থাকে। من شيءٍ অর্থঃ যা কিছু। অর্থাৎ, কম হোক অথবা বেশী, মূল্যবান হোক অথবা সামান্য মূল্যের, সমস্তকে জমা করে তা যথারীতি বণ্টন করা হবে। কোন সৈন্যের জন্য তা হতে বণ্টনের পূর্বে কোন বস্তু রেখে নেওয়ার অনুমতি নেই। [২] এখানে 'আল্লাহ' শব্দটি বরকতস্বরূপ। পরন্তু এই জন্যও যে, প্রত্যেক জিনিসের প্রকৃত পক্ষে মালিক হলেন তিনিই। আর আদেশও তাঁরই চলে। আল্লাহ ও তদীয় রসূলের ভাগ থেকে উদ্দেশ্য একটাই। অর্থাৎ, সমস্ত গনীমতের মালকে পাঁচ ভাগ করে চার ভাগ সেই মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যেও পদাতিক ( পায়ে হাঁটা ব্যক্তিদের )-কে এক ভাগ এবং অশ্বারোহীকে তিন ভাগ দেওয়া হবে। আর পঞ্চম ভাগটাকে পুনরায় পাঁচ ভাগ করা হবে, তার মধ্যে রসূল ( সাঃ )-এর জন্য এক ভাগ। অতঃপর বাকী ভাগগুলি মুসলিমদের সাধারণ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। যেমন, নবী ( সাঃ ) নিজেও এই ভাগগুলি মুসলিমদের উপরেই খরচ করতেন। বরং তিনি বলেছেনও, الخمسُ مَردودٌ عليكم ( সুনানে নাসাঈ, সহীহ নাসাঈ ৩৮৫৮নং, আহমাদ ৫/৩১৯ ) অর্থাৎ, আমার ভাগে যে পঞ্চম অংশ রয়েছে সেটাও মুসলিমদের উপকারে ব্যয় করা হবে। দ্বিতীয় ভাগ রসূল ( সাঃ )-এর আত্মীয়-স্বজনের জন্য। অতঃপর এতীম ও মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য। আরো বলা হয় যে, এই পঞ্চম ভাগটি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করা হবে। [৩] 'ফায়সালার দিন' বলতে হক ও বাতিলের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালার দিন, বদর যুদ্ধের দিন। এ যুদ্ধ সন ২ হিজরী, রমযানের ১৭ তারীখে ঘটেছিল। সেই দিনটিকে 'ফায়সালার দিন' এই জন্য বলা হয় যে, এটা ছিল কাফের ও মুসলিমদের মাঝে প্রথম যুদ্ধ এবং তাতে মুসলিমদেরকে বিজয়ী করে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম ধর্মই হল সত্য ধর্ম আর কুফর ও শিরক হল বাতিল ধর্ম। [৪] এখানে 'যা অবতীর্ণ' বলতে ফিরিশতা এবং অলৌকিক কিছু বিষয় ইত্যাদি অবতীর্ণ করাকে বুঝানো হয়েছে, যা বদর যুদ্ধের দিন ঘটেছিল। [৫]অর্থাৎ, মুসলিম ও কাফিরদের সৈনদল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা গনীমত হিসেবে লাভ করেছ ,তার এক-পঞ্চামাংশ আল্লাহ্র [ ১ ] , রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং সফরকারীদের [ ২ ] যদি তোমারা ঈমান রাখ আল্লাহ্তে এবং তাতে যা মীমাংসার দিন আমারা আমাদের বান্দার প্রতি নাযিল করেছিলাম [ ৩ ], যে দিন দু দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।আর আল্লাহ্ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [ ১ ] এ আয়াতে গনীমতের বিধান ও তার বন্টননীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অভিধানে গনীমত বলা হয় সে সমস্ত মাল-সামানকে যা শক্রর নিকট থেকে লাভ করা হয়। শরীআতের পরিভাষা অনুযায়ী অমুসলিমদের নিকট থেকে যুদ্ধ-বিগ্রহে বিজয়ার্জনের মাধ্যমে যে মালামাল অর্জিত হয়, তাকেই বলা হয় ‘গনীমতী’ [ ফাতহুল কাদীর ] আর যা কিছু আপোষ, সন্ধি-সম্মতির মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাকে বলা হয় ’ফাই’। [ ইবন কাসীর ] কুরআনুল কারামে এতদুভয় শব্দের মাধ্যমে ( অর্থাৎ ‘গনীমত’ ও ‘ফাই’ ) এতদুভয় প্রকার মালামালের হুকুম-আহকাম তথা বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে এবং এ আয়াতে শুধুমাত্র গনীমতের মালামালের কথাই আলোচিত হয়েছে যা যুদ্ধকালে অমুসলিমদের কাছ থেকে লাভ হয়েছে। ‘ফাই’-এর আলোচনা সূরা হাশর-এ আসবে। [ ২ ] এখানে জিহাদের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ গণীমতের হকদারদের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সমস্ত সম্পদ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। এর চার ভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। আর বাকী এক পঞ্চমাংশ পাঁচভাগে ভাগ করা হবে। প্রথমভাগ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এ অংশ মুসলিমদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষনে ব্যয় হবে। দ্বিতীয়ভাগ রাসূলের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত। তারা হলেন ঐ সমস্ত লোক যাদের উপর সদকা খাওয়া হারাম। অর্থাৎ বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। কারণ তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব রাসূলের ছিল। তিনি তার নবুওয়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় তাদের জন্য এ গণীমতের মাল থেকে দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তৃতীয়ভাগ ইয়াতিমদের জন্য সুনির্দিষ্ট। চতুর্থভাগ ফকীর ও মিসকিনদের জন্য, আর পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের জন্য। [ ইবন কাসীর ] ইবন তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পুরো এক পঞ্চমাংশই বর্তমানে ইমামের কর্তৃত্বে থাকবে। তিনি মুসলিমদের অবস্থা অনুযায়ী কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন। [ ইবন কাসীর ] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, গণীমতের মাল যদিও পূর্বে সূরা আনফালের প্রথম আয়াতে শুধু আল্লাহ ও তার রাসূলের বলা হয়েছে তবুও তা মূলতঃ মুসলিমদের মধ্যেই পুনরায় বন্টন হয়ে গেছে। রাসূল তার জন্য তার জীবদ্দশায় যা কিছু পেতেন তাও বর্তমানে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। [ ৩ ] অর্থাৎ সে সাহায্য ও সহায়তা, যার বদৌলতে তোমরা জয়লাভ করেছ। [ মুয়াসসার ] এখানে মীমাংসার দিন বলে বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে। কারণ এ দিন তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করেছেন, ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর বিজয়ী করেছেন এবং তার দ্বীন, তার নবী ও অনুসারীদেরকে উপরে উঠিয়েছেন। [ ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
এখানে আল্লাহ তা'আলা গনীমত বা যুদ্ধলব্ধ মালের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন যা তিনি বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার জন্যেই হালাল করেছেন। পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যে এটা হারাম ছিল। গনীমত ঐ মালকে বলা হয় যা কাফিরদের উপর আক্রমণ চালানোর পর লাভ করা হয়। আর ফাই' হচ্ছে ঐ মাল যা যুদ্ধ না করেই লাভ করা হয়। যেমন তাদের সাথে সন্ধি করে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কিছু আদায় করা হয় বা ঐ মাল যার কোন উত্তরাধিকারী নেই অথবা যে মাল জিযিয়া, খিরাজ ইত্যাদি হিসাবে পাওয়া যায়। ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মাশায়েখদের একটি জামা'আতের অভিমত এটাই। কিন্তু কোন কোন আলেম গনীমতের প্রয়োগ ফাই-এর উপর এবং ফাই-এর প্রয়োগ গনীমতের উপর করে থাকেন। এ জন্যেই কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এই আয়াত দ্বারা সূরায়ে হাশরের ( আরবী ) ( ৫৯:৭ )-এই আয়াতটিকে রহিত করা হয়েছে। আর এভাবে গনীমতের মালের পাঁচ অংশের মধ্য হতে চার অংশ তো মুজাহিদদের মধ্যে বন্টিত হবে এবং এক অংশ তাদেরকে দেয়া হবে যাদের বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে। কিন্তু এই উক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, এই আয়াতটি বদর যুদ্ধের পরে অবতীর্ণ হয়, আর ঐ আয়াতটি ইয়াহদ বানী নাযীরের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। আর জীবনী লেখক ও ইতিহাস লেখক আলেমদের কারো এ ব্যাপারে দ্বি-মত নেই যে, বানী নাযীরের ব্যাপারটি হচ্ছে বদর যুদ্ধের পরের ঘটনা। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু যারা গনীমত' ও ফাই’-এর মধ্যে পার্থক্য আনয়ন করে থাকেন তাঁরা বলেন যে, ঐ আয়াতটি ফাই’ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয় এবং এই আয়াতটি গনীমত সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। আবার কতক লোক ‘ফাই’ ও ‘গনীমত'-এর ব্যাপারটিকে ইমামের মতের উপর নির্ভরশীল বলে মনে করেন । ইমাম ঐ ব্যাপারে নিজের মর্জি মোতাবেক কাজ করবেন। এভাবেই এই দু'টি আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য এসে যায়। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এই আয়াতে বর্ণনা রয়েছে যে, গনীমতের মাল হতে এক পঞ্চমাংশ বের করে নিতে হবে, তা কমই হাক আর বেশীই হাক। তা সূচই হাক বা সূতাই হোক না কেন। বিশ্ব প্রতিপালক ঘোষণা করছেন যে, যে খিয়ানত করবে সে তা নিয়ে কিয়ামতের দিন হাযির হবে এবং প্রত্যেককেই তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। কারো উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবে না। বলা হয়েছে যে, এক পঞ্চমাংশ হতে আল্লাহ তাআলার অংশ কা'বা ঘরে দাখিল করা হবে। আবুল আলিয়া রাবাহী ( রঃ ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যুদ্ধলব্ধ মালকে পাঁচ ভাগ করতেন। চার ভাগ তিনি মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। তারপর এক পঞ্চমাংশ হতে মুষ্টি ভরে বের করতেন এবং তা কা'বা ঘরে দাখিল করে দিতেন। অতঃপর অবশিষ্টাংশকে আবার পাঁচ ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগ তার, দ্বিতীয় ভাগ আত্মীয়দের, তৃতীয় ভাগ ইয়াতীমদের, চতুর্থ ভাগ মিসকীনদের এবং পঞ্চম ভাগ মুসাফিরদের। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এখানে আল্লাহর অংশের নাম শুধুমাত্র বরকতের জন্যে নেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অংশ থেকেই যেন। বর্ণনা শুরু হয়েছে। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন কোন সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন এবং গনীমতের মাল লাভ করতেন তখন তিনি ওটাকে প্রথমে পাঁচ ভাগে ভাগ করতেন। তারপর পঞ্চমাংশকে আবার পাঁচ অংশে বিভক্ত করতেন। অতঃপর তিনি এ আয়াতটিই তিলাওয়াত করেন। সুতরাং ( আরবী ) এটা শুধু বাক্যের শুরুর জন্যে বলা হয়েছে। আকাশসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তো আল্লাহর। কাজেই এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এরই প্রাপ্য। বহু মনীষী ও গুরুজনের এটাই উক্তি যে, আল্লাহ ও রাসূল ( সঃ )-এর একটাই অংশ। ( এটা নাখঈ (রঃ ), হাসান বসরী ( র ), শাবী ( রঃ ), আতা ( রঃ ) এবং কাতাদা ( রঃ ) প্রমুখ মনীষীয়উক্তি) সহীহ সনদে বর্ণিত নিম্নের হাদীসটি এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক ( রঃ ) একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, ওয়াদীল কুরায় আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) গনীমতের ব্যাপারে আপনি কি বলেন? নবী ( সঃ ) উত্তরে বলেনঃ “ ওর এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহর জন্যে এবং বাকী চার অংশ হচ্ছে মুজাহিদদের জন্যে ।” আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, কারো উপর কারো কি অধিক হক নেই? তিনি জবাব দিলেন- “ না, এমন কি তুমি তোমার বন্ধুর দেহ থেকে যে তীরটি বের করবে সেই তীরটিও তুমি তোমার সেই মুসলিম ভাই এর চেয়ে বেশী নেয়ার হকদার নও ।” ( এ হাদীসটি ইমাম হাফিয আবু বকর আল-বায়হাকী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হাসান ( রাঃ ) স্বীয় মাল হতে এক পঞ্চমাংশের অসিয়ত করেন এবং বলেনঃ “ আমি কি নিজের জন্যে ঐ অংশের উপর সম্মত হবো না যা আল্লাহ স্বয়ং নিজের জন্যে নির্ধারণ করেছেন?”ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, গনীমতের মালকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হতো । চার ভাগ ঐ সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো যারা ঐ যুদ্ধে শরীক থাকতেন। আর পঞ্চম ভাগটি থাকতো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর জন্যে। এটাকে আবার চারভাগে ভাগ করা হতো। এর এক চতুর্থাংশের প্রাপক হতেন আল্লাহ ও তার রাসূল ( সঃ )। আল্লাহ ও তার র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )। আল্লাহ ও তার রাসুল ( সঃ )-এর প্রাপ্য এই অংশটি রাসুলুল্লাহ ( সঃ )-এর আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হতো। এক পঞ্চমাংশ থেকে নবী ( সঃ ) নিজে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা ( রাঃ ) বলেন যে, আল্লাহর অংশ হচ্ছে তাঁর নবী ( সঃ )-এর অংশ এবং নবী ( সঃ )-এর অংশ তাঁর স্ত্রীদের প্রাপ্য। আতা ইবনে আবি রাবাহ ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর যেটা অংশ সেটা শুধু রাসূল ( সঃ )-এরই অংশ। ওটা তার ইচ্ছাধীন, তিনি যে কোন কাজে তা ব্যয় করতে পারেন । মিকদাদ ইবনে মা’দীকারাব ( রাঃ ) একদা উবাদা ইবনে সামিত ( রাঃ ), আবু দারদা ( রাঃ ) এবং হারিস ইবনে মুআবিয়া কান্দীর ( রাঃ ) সাথে বসেছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হাদীসগুলোর আলোচনা করছিলেন। আবূ দারদা ( রাঃ ) উবাদা ইবনে সামিত ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ অমুক অমুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এক পঞ্চমাংশের ব্যাপারে কি কথা বলেছিলেন?” উত্তরে উবাদা ইবনে সামিত ( রাঃ ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) এক যুদ্ধে গনীমতের এক পঞ্চমাংশের একটি উটের পিছনে সাহাবীদেরকে নামায পড়ান । সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে যান এবং ঐ উটটির কিছু পশম হাতে নিয়ে বলেন- “ গনীমতের এই উটটির এই পশমগুলোও গনীমতের মালেরই অন্তর্ভুক্ত । এ মাল আমার নয়। আমার অংশ তো তোমাদেরই সাথে এক পঞ্চমাংশ মাত্র। এটাও আবার তোমাদেরকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং সুঁচ, সূতা এবং ওর চেয়ে বড় ও ছোট প্রত্যেক জিনিসই পৌছিয়ে দাও। খিয়ানত করো না। খিয়ানত বড়ই দূষণীয় কাজ এবং খিয়ানতকারীর জন্যে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই আগুন রয়েছে। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী লোকদের সাথে আল্লাহর পথে জিহাদ জারী রাখো । শরীয়তের কাজে ভৎসনাকারীর ভৎসনার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করো না। স্বদেশে এবং বিদেশে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ জারী করতে থাকো। আল্লাহর ব্যাপারে জিহাদ করতে থাকো। জিহাদ হচ্ছে জান্নাতের বড় বড় দরজাসমূহের মধ্যে একটি দরজা। এই জিহাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলা দুঃখ ও চিন্তা হতে মুক্তি দিয়ে থাকেন।” ( ইবনে কাসীর (রঃ ) বলেন, এটা হচ্ছে অতি উত্তম হাদীস। আমি এটা এভাবে ছয়টি গ্রন্থে দেখিনি। তবে এর পক্ষে বহু সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে)আমর ইবনে আনবাসা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে নিয়ে গনীমতের একটি উটের কাছে নামায পড়েন। সালাম ফিরানোর পর তিনি ঐ উটের কিছু পশম নিয়ে বলেনঃ “ তোমাদের গনীমতের মালের মধ্য হতে আমার জন্যে এক পঞ্চমাংশ ছাড়া এই পশম পরিমাণও হালাল নয় । আর এই পঞ্চমাংশও তোমাদেরকেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। ( এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) ও ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) এই অংশের মধ্য হতে কিছুটা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নিজের জন্যেও নির্দিষ্ট করতেন। যেমন দাস, দাসী, তরবারী, ঘোড়া ইত্যাদি। এটা মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন ( রঃ ), আমির শা'বী ( রঃ ) এবং অধিকাংশ আলেম বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ( রঃ ) এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, যুলফিকার’ তরবারীটি বদর যুদ্ধের গনীমতেরই অন্তর্ভুক্ত, যা নবী ( সঃ )-এর কাছে ছিল এবং যার ব্যাপারে তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন স্বপ্ন দেখেছিলেন। আয়েশা ( রাঃ ) বলেন যে, সাফিয়া ( রাঃ ) এভাবেই রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর হস্তগত হয়েছিলেন। ( ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) এটা স্বীয় সুনানে বর্ণনা করেছেন)ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একটা বেড়ার মধ্যে বসেছিলাম এমন সময় একটি লোক আমাদের কাছে আসলেন। তার হাতে এক খণ্ড চামড়া ছিল। তাতে যা লিখিত ছিল আমরা তা পড়তে লাগলাম। তাতে লিখিত ছিল- “ এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ( সঃ )-এর পক্ষ হতে যুহাইর ইবনে আকীশের নিকট প্রেরিত । যদি তোমরা আল্লাহর একত্র ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান কর, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দাও, যুদ্ধলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ আদায় কর এবং নবী ( সঃ )-এর অংশ ও উৎকৃষ্ট অংশ আদায় করতে থাকো তবে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর নিরাপত্তার মধ্যে থাকবে।” ( বর্ণনাকারী বলেনঃ ) আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ “ এটা কে লিখেছেন?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “( এটা ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ( লিখেছেন ) ।” ( এটা ইমাম আবু দাউদ (রঃ ) ও ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন) সুতরাং এসব বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা এটাই প্রমাণিত হচ্ছে এবং এ জন্যেই অধিকাংশ গুরুজন এটাকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিশিষ্টতার মধ্যে গণ্য করেছেন।কেউ কেউ বলেন যে, এক পঞ্চমাংশ গনীমতের ব্যাপারে তৎকালীন সময়ের শাসনকর্তার স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি মুসলমানদের কল্যাণার্থে তা ইচ্ছামত ব্যয় করতে পারেন। যেমন ফাই’-এর মালের ব্যাপারে তার সব কিছু করার অধিকার রয়েছে। শায়েখ আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ ( রঃ ) বলেন যে, ইমাম মালিক ( রঃ )-এর এটাই উক্তি। অধিকাংশ গুরুজনেরও উক্তি এটাই এবং এটাই সর্বাধিক সঠিক উক্তি। এটা যখন প্রমাণিত হয়ে গেল এবং জানাও হলো তখন এও মনে রাখা দরকার যে, পঞ্চমাংশ যা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অংশ ছিল, এখন তার পরে ওটা কি করতে হবে? এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেন যে, এখন এটা সমকালীন ইমাম অর্থাৎ খলীফাতুল মুসলিমীনের অধিকারে থাকবে। আবু বকর ( রাঃ ), আলী ( রাঃ ), কাতাদা ( রঃ ) এবং একটি জামা'আতের এটাই উক্তি। আর এ ব্যাপারে একটি মারফু হাদীসও এসেছে। অন্যান্যেরা বলেন যে, এটা মুসলমানদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। অন্য একটি উক্তি রয়েছে যে, এটাও অবশিষ্ট অন্যান্য শ্রেণীর মধ্যে খরচ করা হবে অর্থাৎ আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের মধ্যে বণ্টিত হবে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এটাই পছন্দ করেছেন। অন্যান্য বুযুর্গদের নির্দেশ এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অংশ ও তার আত্মীয়দের অংশ ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদেরকে দিয়ে দেয়া হবে। ইরাকবাসী একটি দলের এটাই উক্তি। আবার এ কথাও বলা হয়েছে যে, পঞ্চমাংশের এই পঞ্চমাংশ সবই আত্মীয়দের প্রাপ্য। যেমন ইবনে জারীর ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, মিনহাল ইবনে আমর ( রঃ ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ( রঃ )-কে এবং আলী ইবনে হুসাইন ( রঃ )-কে এক পঞ্চমাংশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেনঃ “ এটা আমাদেরই প্রাপ্য ।” আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আয়াতে ইয়াতীম ও মিসকীনদের বর্ণনাও ততা রয়েছে? উত্তরে তাঁরা দু’জন বললেনঃ “ এর দ্বারাও আমাদেরই ইয়াতীম ও মিসকীনদেরকে বুঝানো হয়েছে ।” ইমাম হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়্যাহ ( রঃ )-কে ( আরবী )-এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ বাক্যটি এভাবে শুরু করা হয়েছে মাত্র, নচেৎ দুনিয়া ও আখিরাতের সব কিছুই তো আল্লাহরই ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পরে এ দুটো অংশ কে পাবেন এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অংশ তাঁর খলীফাগণ পাবেন। কারো কারো মতে এটা তাঁর আত্মীয়েরা পাবেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ওটা খলীফার আত্মীয়েরা পাবেন। সম্মিলিতভাবে তাঁদের মত এই যে, এই অংশ দুটোকেই ঘোড়া ও অস্ত্রশস্ত্রের কাজে লাগানো হবে। আবু বকর ( রাঃ ) ও উমার ( রাঃ )-এর খিলাফতের যুগে এরূপই করা হয়েছিল। ইবরাহীম ( রঃ ) বলেন যে, আবু বকর ( রাঃ ) এবং উমার ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অংশটি জিহাদের কাজে খরচ করতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “ আলী ( রাঃ ) এ ব্যাপারে কি করতেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এ ব্যাপারে তিনি সর্বাপেক্ষা কঠিন ছিলেন ।” অধিকাংশ আলেমের এটাই উক্তি। হ্যাঁ, তবে আত্মীয়দের অংশটির প্রাপক আব্দুল মুত্তালিবের সন্তানরা । কেননা, তাঁরাই অজ্ঞতার যুগে এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে হাশিমের সন্তানদের সাথে সহযোগিতা করেছিল এবং তাদের সাথে তারা ঘাঁটিতে বন্দী জীবন যাপনকেও স্বীকার করে নিয়েছিল। কারণ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) অত্যাচারিত হচ্ছিলেন বলে এ লোকগুলো রাগান্বিত হয়েছিল এবং তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল। মুসলমানরা তাকে সাহায্য করেছিলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্যের কারণে। আর এই কাফিররা তাকে সাহায্য করেছিল বংশীয় পক্ষপাতিত্ব এবং আত্মীয়তার খাতিরে । কিন্তু বানু আবদে শামস্ ও বানু নাওফিল রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর চাচাতো ভাই হলেও তার সাথে সহযোগিতা করেনি, বরং বিরুদ্ধাচরণ করেছিল এবং তাঁকে পৃথক করে দিয়েছিল। তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল এবং বলেছিল যে, কুরায়েশের অন্যান্য সমস্ত গোত্রই তাঁর বিরোধী। এ জন্যেই আবু তালিব তাঁর ভৎসনামূলক ও নিন্দাসূচক কবিতায় তাদেরকে বহু তিরস্কার ও নিন্দে করেছেন। কেননা, তারা ছিল রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকটতম আত্মীয়। তিনি বলেছেনঃ “ অতিসত্বরই তারা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের অপকর্মের পূর্ণ বদলা পেয়ে যাবে । এই নির্বোধরা নিজের লোক হয়েও এবং একই বংশ ও রক্তের লোক হয়েও আমাদের দিক থেকে চক্ষু ফিরিয়ে নিচ্ছে!” ইত্যাদি। জুবাইর ইবনে মুতঈম ইবনে আদী ইবনে নওফেল ( রাঃ ) বলেন, আমি এবং উসমান ইবনে আফফান ইবনে আবিল আস ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদে শামস্ ( রাঃ ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি খায়বারের যুদ্ধলব্ধ মালের এক পঞ্চমাংশ হতে বানু আবদিল মুত্তালিবকে দিলেন, কিন্তু আমাদেরকে ছেড়ে দিলেন। অথচ আপনার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের দিক দিয়ে আমরা ও তারা সমান! তখন তিনি বললেনঃ “ বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব তো একই জিনিস ।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) কয়েকটি বাবে বা অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন) কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে, তাঁরা বলেনঃ “ তারা তো অজ্ঞতার যুগেও আমাদের থেকে পৃথক হয়নি এবং ইসলামের যুগেও না ।” এটা হচ্ছে জমহুর উলামার উক্তি যে, তারা হলো বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব। কেউ কেউ বলেন যে, এরা হচ্ছে শুধু বানু হাশিম। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা জানতেন যে, বানু হাশিমের মধ্যে দরিদ্র লোক রয়েছে । তাই সাদকার স্থলে গনীমতের মালে তাদের অংশ নির্ধারিত করেছেন। এরা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ঐ আত্মীয় যাদের জন্যে সাদকা হারাম।” আলী ইবনে হুসাইন ( রঃ ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। কেউ কেউ বলেন যে, এরা সবাই কুরায়েশ। ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “ যাবীল কুরবা কারা?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন- “আমরা তো বলতাম যে, আমরাই । কিন্তু আমাদের কওম তা স্বীকার করে না। তারা বলে যে, সমস্ত কুরায়েশই যাবিল কুরবা।” ( এ হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে রয়েছে ) কোন কোন রিওয়াইয়াতে শুধু প্রথম বাক্যটিই রয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যটির বর্ণনাকারী হচ্ছে আবু মাশার নাজীহ্ ইবনে আবদির রহমান মাদানী। তার বর্ণনাতেই এই বাক্যটি রয়েছে। তারা বলে যে, সমস্ত কুরায়েশই যাবীল কুরবা'। এতে দুর্বলতাও রয়েছে। ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমাদের জন্যে লোকদের ময়লা থেকে আমি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি । তোমাদের জন্যে এক পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশই যথেষ্ট।” ( ইবনে কাসীর (রঃ ) বলেন যে, এটা বড়ই উত্তম হাদীস। এর বর্ণনাকারী ইবরাহীম ইবনে মাহদীকে ইমাম আবু হাতিম ( রঃ ) বিশ্বাসযোগ্য বলেছেন) এই আয়াতে ইয়াতীমদের উল্লেখ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, ইয়াতীমরা যদি দরিদ্র হয় তবে তারা হকদার হবে। আবার অন্য কেউ বলেন যে, ধনী দরিদ্র সব ইয়াতীমই এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। মিসকীন শব্দ দ্বারা ঐ অভাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদের কাছে এই পরিমাণ মাল নেই যে, তা দ্বারা তাদের দারিদ্রতা ও অভাব দূর হতে পারে এবং তা তাদের জন্যে যথেষ্ট হয়। ইবনুস সাবীল দ্বারা ঐ মুসাফিরকে বুঝানো হয়েছে যে দেশ থেকে বের হয়ে এতো দূরে যাচ্ছে যেখানে পৌছলে তার জন্যে নামায কসর করা জায়েয হবে এবং সফরের যথেষ্ট খরচ তার কাছে নেই। এর তাফসীর সূরায়ে বারাআতের। ( আরবী ) ( ৯:৬০ ) এই আয়াতে ইনশাআল্লাহ আসবে। আল্লাহ তা'আলার উপরই আমাদের ভরসা এবং তাঁরই কাছে আমরা সাহায্য প্রার্থনা করছি। ( আরবী ) অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর উপর এবং তাঁর বান্দার প্রতি নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান এনে থাকো তবে তিনি যা আদেশ করেছেন তা পালন কর। অর্থাৎ, যুদ্ধলব্ধ মাল হতে এক পঞ্চমাংশ পৃথক করে দাও। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আবদে কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদলকে বলেছিলেনঃ “ আমি তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিচ্ছি । আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার অর্থ কি তা কি তোমরা জান? তা হচ্ছে সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর রাসূল। আর নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করা, যাকাত দেয়া এবং গনীমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ আদায় করা”। সুতরাং এক পঞ্চমাংশ আদায় করাও ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বুখারী ( রঃ ) স্বীয় কিতাব সহীহ বুখারীতে একটি বাব বা অনুচ্ছেদ বেঁধেছেন যে, ‘খুমুস বা এক পঞ্চমাংশ বের করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি ঐ হাদীস আনয়ন করেছেন। আমরা শারহে সহীহ বুখারীর মধ্যে এর পূর্ণ ভাবার্থ আলোচনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর একটা ইহসান ও ইনআমের কথা বর্ণনা করছেন যে, তিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য আনয়ন করেছেন। তিনি স্বীয় দ্বীনকে জয়যুক্ত করেছেন, স্বীয় নবী ( সঃ ) ও তার সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছেন এবং বদরের যুদ্ধে তাদেরকে জয়যুক্ত করেছেন। তিনি ঈমানের কালেমাকে কুফরীর কালেমার উপর উঠিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ কুফরীর কালেমা ঈমানের কালেমার নীচে পড়ে গেছে। সুতরাং ( আরবী ) দ্বারা বদরের দিনকে বুঝানো হয়েছে, যেই দিন হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়েছে। বহু গুরুজন হতে এর তাফসীর এরূপই বর্ণিত হয়েছে। এটাই ছিল প্রথম যুদ্ধ। মুশরিক সেনাদলের নেতা ছিল উবা ইবনে রাবীআ'। ঐ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ১৭ই বা ১৯শে রমযান, রোজ শুক্রবার। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীবর্গের সংখ্যা ছিল তিন শ'র কিছু বেশী। আর মুশরিকদের সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। এতদ্সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা কাফিরদের পরাজয় ঘটিয়ে দেন। তাদের সত্তরজনেরও অধিক নিহত হয় এবং ততজনই বন্দী হয়।মুসতাদরিকে হাকিমে রয়েছে যে, ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমরা একাদশ রাত্রিতেই লায়লাতুল কদরকে নিশ্চিতরূপে অনুসন্ধান কর । কেননা, ওর সকালই ছিল বদরের যুদ্ধের দিন।” হাসান ইবনে আলী ( রাঃ ) বলেন যে, লায়লাতুল ফুরকান, যেইদিন উভয় দলে ভীষণ ও ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ওটা ছিল রমযান মাসের সতের তারিখ এবং রাত্রিটিও ছিল জুমআ’র রাত্রি। ধর্মযুদ্ধ ও জীবনী গ্রন্থের লেখকদের মতে এটাই সঠিক কথা। তবে ইয়াযীদ ইবনে জাআ'দ ( রঃ ), যিনি তার যুগের মিশরীয় এলাকার একজন ইমাম ছিলেন, তিনি বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিনটি ছিল সোমবার। কিন্তু অন্য কেউই তাঁর অনুসরণ করেননি এবং জমহুরের উক্তিটিই নিশ্চিতরূপে তার এই উক্তির উপর প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।
সূরা আনফাল আয়াত 41 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আমি তওরাত অবর্তীর্ন করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা
- অতঃপর তারা যখন ঐ উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তখন আমি তাদের সামনে
- অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে
- তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত
- আর যখন আমি মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তারা তাতে আনন্দিত হয় এবং তাদের কৃতকর্মের
- বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য?2474;্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র
- হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।
- আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে
- অতএব যারা হতভাগ্য তারা দোযখে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে।
- কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদের উপর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনফাল ডাউনলোড করুন:
সূরা Anfal mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anfal শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers