কোরান সূরা ফুরকান আয়াত 47 তাফসীর
﴿وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُورًا﴾
[ الفرقان: 47]
তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে। [সূরা ফুরকান: 47]
Surah Al-Furqan in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Furqan ayat 47
আর তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছেন আবরণী, আর ঘুমকে বিশ্রামস্বরূপ, আর দিনকে করেছেন জেগে ওঠার জন্য।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪৭. আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদের জন্য রাতকে পোশাকের ন্যায় বানিয়েছেন যা তোমাদেরকে ও অন্যান্য জিনিসকে ঢেকে রাখে। তেমনিভাবে তিনি ঘুমকে আরামদায়ক বানিয়েছেন যেন তার মাধ্যমে তোমরা ব্যস্ততা ছেড়ে আরাম করতে পারো। আর তিনি তোমাদের জন্য দিনকে কর্মসময় বানিয়েছেন যার ভিত্তিতে তোমরা নিজেদের কাজের দিকে রওয়ানা করতে পারো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তিনিই তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছেন আবরণস্বরূপ,[১] নিদ্রাকে করেছেন বিশ্রামস্বরূপ[২] এবং দিনকে করেছেন উত্থানের জন্য।[৩] [১] অর্থাৎ, আবরণ ও পোশাক যেমন মানুষের শরীর ঢেকে রাখে, অনুরূপ রাত্রের অন্ধকার তোমাদের লুকিয়ে রাখে। [২] سُبات এর অর্থ কাটা বা বিচ্ছিন্ন করা, ঘুম মানুষকে তার কাজকর্ম ও ব্যস্ততা হতে বিচ্ছিন্ন করে, যাতে মানুষ আরাম ও স্বস্তিবোধ করে। কিছু উলামার নিকট سُبات এর অর্থ লম্বা হওয়া। যেহেতু ঘুমের সময় মানুষ তার দেহকে মাটিতে লম্বা করে দেয়, সেহেতু ঘুমকে سُبات বলা হয়। [৩] ঘুম যা মৃত্যুর এক ভাই। দিনে মানুষ ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজকর্মে লিপ্ত হয়। হাদীসে এসেছে, নবী ( সাঃ ) যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, তখন এই দু'আ পাঠ করতেনঃ الحَمْدُ للهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيهِ النُّشُور। অর্থাৎ, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে মারার পর জীবিত করেছেন। আর তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। ( বুখারী, মিশকাতঃ দাওয়াত অধ্যায় )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, বিশ্রামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন নিদ্ৰা [ ১ ] এবং ছড়িয়ে পড়ার জন্য করেছেন দিন [ ২ ]। [ ১ ] এ আয়াতে রাত্রিকে ‘লেবাস’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। লেবাস যেমন মানবদেহকে আবৃত করে, রাত্ৰিও তেমনি একটি প্রাকৃতিক আবরণ, যা সমগ্র সৃষ্টজগতের উপর ফেলে দেয়া হয়। سُبِاتًا শব্দটি سبت থেকে উদ্ভূত। এর আসল অর্থ ছিন্ন করা। سُبَاتٌ এমন বস্তু যদ্দারা অন্য বস্তুকে ছিন্ন করা হয়। নিদ্রাকে আল্লাহ্ তা‘আলা এমন করেছেন যে, এর ফলে সারাদিনের ক্লান্তি ও শ্রান্তি ছিন্ন তথা দূর হয়ে যায়। চিন্তা ও কল্পনা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মস্তিষ্ক শান্ত হয়। তাই سُبَاتٌ এর অর্থ করা হয় আরাম, শান্তি। আয়াতের অর্থ এই যে, আমি রাত্রিকে আবৃতকারী করেছি, অতঃপর তাতে মানুষ ও প্রাণীদের উপর নিদ্রা চাপিয়ে দিয়েছি, যা তাদের আরাম ও শান্তির উপকরণ। [ দেখুন- কুরতুবী, আদওয়াউল বায়ান ] [ ২ ] এখানে দিনকে نشور অর্থাৎ ‘জীবন বা ছড়িয়ে পড়া’ বলা হয়েছে। কেননা, এর বিপরীত অর্থাৎ নিদ্রা এক প্রকার মৃত্যু। [ আদওয়াউল বায়ান ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৪৫-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে স্বীয় অস্তিত্ব ও বিভিন্ন প্রকার জিনিস সৃষ্টি করার উপর পূর্ণ ও ব্যাপক ক্ষমতার দলীল প্রমাণাদি বর্ণনা শুরু করেছেন। তিনি বলেনঃ তমি কি তোমার প্রতিপালকের প্রতি লক্ষ্য কর না কিভাবে তিনি ছায়া সম্প্রসারিত করেন?’ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), ইবনে উমার ( রাঃ ), আবুল আলিয়া ( রঃ ), আবূ মালিক ( রঃ ), মাসরূক ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), সাঈদ ইবনে জুবাইর ( রঃ ), নাখঈ ( রঃ ), যহহাক ( রঃ ), হাসান ( রঃ ) এবং কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, এটা হচ্ছে ফজর প্রকাশিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত এ দুয়ের মধ্যবর্তী সময়। আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তিনি ইচ্ছা করলে এটাকে স্থির অর্থাৎ স্থায়ী ও সদা বিরাজমান রাখতে পারতেন। যেমন তিনি বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তুমি বলে দাও-তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, যদি আল্লাহ তোমাদের উপর রাত্রিকে স্থির ও চিরস্থায়ী করতেন ।” ( ২৮:৭১ )মহান আল্লাহর উক্তিঃ অনন্তর আমি সূর্যকে করেছি এর নির্দেশক। অর্থাৎ যদি সূর্য উদিত না হতো তবে দিবস ও রজনীর পরিচয় পাওয়া যেতো না। কেননা, বিপরীতকে বিপরীতের মাধ্যমেই চেনা যায়।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ অতঃপর আমি এটাকে আমার দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনি। অর্থাৎ সহজে গুটিয়ে আনি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) ( আরবি ) অর্থ করেছেন ( আরবি ) অর্থাৎ তাড়াতাড়ি। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলো গোপন করা। সুদ্দী ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবি ) -এর অর্থ হলো গোপনীয়ভাবে গুটিয়ে নেয়া। শেষ পর্যন্ত ছাদের নীচে ও গাছের নীচে ছাড়া ভূ-পৃষ্ঠের অন্য কোন জায়গায় ছায়া থাকবে না। সূর্য ছায়া দেবে যা ওর উপরে রয়েছে। আইয়ুব ইবনে মূসা ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবি )-এর অর্থ হলো অল্প অল্প করে গুটিয়ে নেয়া।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তিনিই তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ স্বরূপ। অর্থাৎ রাত্রি আবরণ দ্বারা সব কিছুকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ অর্থাৎ “ শপথ রজনীর, যখন সে আচ্ছন্ন করে ।” ( ৯২: ১ ) এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ বিশ্রামের জন্যে তোমাদের দিয়েছেন নিদ্রা। অর্থাৎ দেহের বিশ্রামের জন্যে গতিশীলতা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেননা, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দিনের বেলায় জীবিকা উপার্জনের জন্যে গতিশীল থাকে বলে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর যখন রাত্রি আসে তখন গতিশীলতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেহ আরাম পায়। আর এর ফলে ঘুম এসে যায় এবং এতে একই সাথে দেহ ও আত্মা শান্তি ও বিশ্রাম লাভ করে।মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আর তিনি সমুথানের জন্যে দিয়েছেন দিবস। অর্থাৎ দিনের বেলায় মানুষ জীবিকা ও জীবনের বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহের নিমিত্তে ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ এটাও আল্লাহর একটা অনুগ্রহ ও করুণা যে, তিনি তোমাদের জন্যে রাত্রি ও দিবস বানিয়েছেন, যেন তোমরা তাতে শান্তি পাও এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান কর ।” ( ২৮:৭৩ ) ৪৮। তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী রূপে। বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমি আকাশ হতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।
সূরা ফুরকান আয়াত 47 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- এখনও কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আযাব তাদের উপর রাতের বেলায়
- নিশ্চয় এই মহা সাফল্য।
- তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
- আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার
- দু’টি সমুদ্র সমান হয় না-একটি মিঠা ও তৃষ্ণানিবারক এবং অপরটি লোনা। ঊভয়টি থেকেই তোমরা তাজা
- নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত। যদি না সে
- শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়,
- তাতে করে তাদেরকে দ্রুত মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং তারা বোঝে না।
- উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণীসমূহে।
- যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ফুরকান ডাউনলোড করুন:
সূরা Furqan mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Furqan শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers