কোরান সূরা নিসা আয়াত 48 তাফসীর
﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا﴾
[ النساء: 48]
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল। [সূরা নিসা: 48]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 48
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না যে, তাঁর সাথে কাউকে শরিক করা হোক, আর তা ছাড়া আর সব তিনি ক্ষমা করেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে কেউ আল্লাহ্র সাথে শরিক করে সে তাহলে উদ্ভাবন করেছে বিরাট পাপ।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৪৮. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিসমূহের কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে তিনি শিরক ও কুফরির নিচের গুনাহসমূহ যার জন্য চান তাঁর অনুগ্রহে ক্ষমা করবেন অথবা তাদের মধ্যকার যাদেরকে চান তাঁর ইনসাফ অনুযায়ী তাদের গুনাহসমূহের সমপরিমাণ শাস্তি দিবেন। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করবে সে যেন এক মহা পাপ রচনা করলো যার উপর মারা গেলে কাউকে ক্ষমা করা হবে না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী ( শিরক ) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যার জন্য ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। [১] আর যে কেউ আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন ( শিরক ) করে, সে এক মহাপাপ করে। [২] [১] অর্থাৎ, এমন অপরাধ ও গুনাহ, যা থেকে তওবা না করেই মু'মিন মারা গেছে। আল্লাহ তাআলা কারো জন্য চাইলে কোন প্রকারের শাস্তি না দিয়েই তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং অনেককে শাস্তি দেওয়ার পর ক্ষমা করবেন। আবার অনেককে নবী করীম ( সাঃ )-এর সুপারিশে ক্ষমা করবেন। কিন্তু আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করার অপরাধ কোন অবস্থাতেই মাফ হবে না। কেননা, মুশরিকের উপর তিনি জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। [২] অন্যত্র বলেছেন, [إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ] " শিরক হল সব চেয়ে বড় অন্যায়। " ( লুকমানঃ ১৩ ) হাদীসেও শিরককে সব থেকে বড় পাপ গণ্য করা হয়েছে। أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الشِّرْكُ بِاللهِ ...।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক [ ১ ] করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন [ ২ ]। আর যে-ই আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে এক মহাপাপ রটনা করে। [ ১ ] আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, যে কোন সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে তেমন কোন বিশ্বাস পোষণ করাই হল শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্ট বস্তুকে ইবাদাত কিংবা মহব্বত ও সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহর সমতুল্য মনে করাই শির্ক। জাহান্নামে পৌঁছে মুশরিকরা যে উক্তি করবে, আল্লাহ তা’আলা তা উল্লেখ করেছেন যে, “ আল্লাহর শপথ, আমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত ছিলাম যখন আমরা তোমাদেরকে বিশ্ব-পালনকর্তার সমতুল্য স্থির করেছিলাম ।” সূ[ রা আশ-শু’আরাঃ ৯৭-৯৮ ] শির্কের প্রকারভেদ সম্পর্কে সূরা আল-বাকারাহ এর ২২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, যুলুম ও অবিচার তিন প্রকার। এক প্রকার যুলুম যা আল্লাহ্ তা’আলা কখনো ক্ষমা করবেন না। দ্বিতীয় প্রকার যুলুম যা মাফ হতে পারে। আর তৃতীয় প্রকার যুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ তা’আলা না নিয়ে ছাড়বেন না। প্রথম প্রকার যুলুম হচ্ছে শির্ক, দ্বিতীয় প্রকার আল্লাহর হকে ক্রটি করা এবং তৃতীয় প্রকার বান্দার হক বিনষ্ট করা। [ ইবন কাসীর ] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তিনি তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। এর বাইরে যত গোনাহ আছে সবই তিনি যার জন্যে ইচ্ছে ক্ষমা করে দিবেন। আর যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে সে অবশ্যই এক বড় মিথ্যা অপবাদ রটনা করল। অন্য আয়াতে অবশ্য আল্লাহ তা’আলা শির্ককারীদের মধ্যে যারা তাওবা করবে তাদেরকে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “ আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, ...তবে যদি তারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে” [ সূরা আল-ফুরকান:৭০ ] সুতরাং তাওবাহ্ করলে শির্কও মাফ হয়ে যায় । [ ২ ] আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আমরা কবীরা গোনাহকারীর জন্য ইস্তেগফার করা থেকে বিরত থাকতাম। শেষ পর্যন্ত যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ আয়াত শুনলাম এবং আরো শুনলাম যে, তিনি বলছেনঃ ‘আমি আমার দো’আকে গচ্ছিত রেখেছি আমার উম্মতের কবীরা গোনাহ্গারদের সুপারিশ করার জন্য। ইবন উমর বলেনঃ এরপর আমাদের অন্তরে যা ছিল, তা অনেকটা কেটে গেল ফলে আমরা ইস্তেগফার করতে থাকলাম ও আশা করতে থাকলাম। [ মুসনাদে আবি ইয়া'লাঃ ৫৮১৩ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। আমি আমার মহা মর্যাদাবান গ্রন্থ আমার উত্তম নবী ( সঃ )-এর উপর অবতীর্ণ করেছি, যার মধ্যে স্বয়ং তোমাদের কিতাবের সত্যতা ও স্বীকৃত রয়েছে। সুতরাং তোমরা এর উপর ঈমান আনয়ন কর এর পূর্বে যে, আমি তোমাদের আকৃতি বিকৃত করে দেই। অর্থাৎ মুখ বিপরীত দিকে করে দেই এবং তোমাদের চক্ষু এ দিকের পরিবর্তে ঐ দিকে হয়ে যায়।' কিংবা ভাবার্থ এই যে, তোমাদের চেহারা নষ্ট করে দেই যাতে তোমাদের কান, নাক সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। অতঃপর এ বিকৃত চেহারাও উল্টো হয়ে যায়।' এ শাস্তি তাদের কর্মেরই পূর্ণ ফল। এরা সত্য হতে সরে মিথ্যার দিকে এবং সুপথ হতে বিপথের দিকে ধাবিত হচ্ছে, কাজেই আল্লাহ তা'আলাও তাদেরকে ধমক দিয়ে বলছেনঃ ‘আমিও এভাবেই তোমাদের মুখ উল্টিয়ে দেবো যেন তোমাদেরকে পিছন পায় চলতে হয়। তোমাদের চক্ষুগুলো তোমাদের গ্রীবার দিকে করে দেবো'। আর এ রকমই তাফসীর কেউ কেউ ( আরবী ) ( ৩৬:৮ ) -এ আয়াতের তাফসীরেও করেছেন। মোটকথা তাদের পথভ্রষ্টতা ও সুপথ হতে সরে পড়ার এ খারাপ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- “ আমি তোমাদেরকে সত্যপথ হতে সরিয়ে ভ্রান্তির পথের দিকে নিয়ে যাবো, তোমাদেকে কাফির বানিয়ে দেবো এবং তোমাদের চেহারা বানরের চেহারার মত করে দেবো ।' আবু যায়েদ ( রঃ ) বলেনঃ ‘ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ এই যে, তাদেরকে হিযাখ্যা হতে সিরিয়ায় পৌছিয়ে দেন। এও বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি শুনেই হযরত কা'ব ইবনে আহবার ( রাঃ ) ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তাফসীর-ইইবনে জারীরে রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম ( রঃ )-এর সামনে যখন হযরত কা'ব ( রঃ )-এর ইসলাম গ্রহণের আলোচনা হয়, তখন তিনি বলেনঃ হযরত কা'ব ( রঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর যুগে মুসলমান হয়েছিলেন। কিন্তু বায়তুল মুকাদ্দাস যাওয়ার পথে মদীনায় আগনম করেন। হযরত উমার ( রাঃ ) তার নিকট গিয়ে বলেনঃ “ হে কাব ( রঃ )! মুসলমান হয়ে যাও । উত্তরে তিনি বলেনঃ আপনারা তো কুরআন কারীমে পড়েছেন-“ যাদের দ্বারা তাওরাত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, অতঃপর তারা তা উঠায়নি তাদের দৃষ্টান্ত গাধার ন্যায়, যে বোঝা বহন করে থাকে । আর আপনি এটাও জানেন যে, যাদের দ্বারা তাওরাত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে আমিও তাদের মধ্যে একজন। তখন হযরত উমার তাঁকে ছেড়ে দেন। তিনি এখান হতে রওয়ানা হয়ে হেমসে পৌঁছেন। তথায় তিনি শুনতে পান, যে, তারই বংশের একজন লোক ( আরবী ) -এ আয়াতটি পাঠ করছেন। তাঁর পাঠ শেষ হলে হযরত কা'ব ( রঃ ) ভয় করেন যে, এ আয়াতে যাদেরকে এ শাস্তি প্রদানের ভয় দেখানো হয়েছে তিনিও তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান কি-না এবং না জানি তাঁর আকারই বিকৃত হয়ে যায়। সুতরাং তৎক্ষণাৎ তিনি বলে উঠেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ হে আমার প্রভু! আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম ।”অতঃপর তিনি হেমস হতেই স্বীয় দেশ ইয়ামনে ফিরে আসেন। এখানে এসে তিনি সপরিবারে মুসলমান হয়ে যান। মসুনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত কা'ব ( রঃ )-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা নিম্নরূপ বর্ণিত আছে যে, তার শিক্ষক আবু মুসলিম জালিলী তাঁর রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর ব্যাপারে বিলম্বের কারণে সদা তাকে তিরস্কার করতে থাকেন। অতঃপর তাওরাতে যে নবীর শুভ সংবাদ দেয়া হয়েছে ও তার গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে, মুহাম্মাদ ( সঃ ) সত্যই সেই নবী কি-না তা দেখার জন্য হযরত কা'ব ( রঃ )-কে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। হযরত কা'ব ( রঃ ) বলেনঃ ‘আমি মদীনায় পৌছি। হঠাৎ আমি শুনতে পাই যে, একটি লোক কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতটি পাট করছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ হে গ্রন্থ প্রাপ্তগণ! তোমাদের সঙ্গে যা আছে-তার সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা আমি অবতীর্ণ করেছি, তপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এর পূর্বে যে, আমি বহু মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেই, তৎপর তাদেরকে পৃষ্ঠের দিকে উল্টিয়ে দেই। এটা শুনেই আমি চমকিত হয়ে উঠি এবং তাড়াতাড়ি গোসলের কাজে লেগে পড়ি। আমি আমার চেহারার উপর হাত দিয়ে দেখি যে, না জানি আমার ঈমান আনয়নে বিলম্ব হয়, ফলে আমার মুখমণ্ডল পৃষ্ঠের দিকে উল্টে যায়! এরপর অতিসত্বর আমি মুসলমান হয়ে যাই।অতঃপর বলা হচ্ছে- ‘অথবা শনিবারীয়দের প্রতি আমি যেরূপ অভিসম্পাত করেছিলাম দ্রুপ তাদের উপরও অভিম্পাত করি।' অর্থাৎ যারা কৌশল করে শনিবার দিন মৎস শিকার করেছিল, অথচ সে দিন তাদেরকে মৎস শিকার করতে নিষেধ করা হয়েছিল। যার প্রতিফল স্বরূপ তারা বানর ও শূকরে পরিণত হয়েছিল। এর বিস্তারিত ঘটনা ইনশাআল্লাহ সূরা-ই-আ'রাফে আসবে।এরপর বলা হচ্ছে- আল্লাহর আদেশ সুসম্পন্ন হয়েই থাকে। তিনি যখন কোন নির্দেশ দেন তখন এমন কেউ নেই যে, তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে বা তাকে বাধা প্রদান করে। এরপরে আল্লাহ পাক বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা তার সাথে অংশীস্থাপনকারীর পাপ মার্জনা করেন না। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে, সে মুশরিক, তার জন্যে ক্ষমার দরজা বন্ধ। এ পাপ ছাড়া অন্য পাপ যত বেশী হোক না কেন তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমা করতে পারেন। এ পবিত্র আয়াত সম্পর্কে বহু হাদীস রয়েছে। আমরা এখানে কিছু কিছু বর্ণনা করছি।( ১ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ পাপের বিভাগ ( দেওয়ান ) হচ্ছে তিনটি। প্রথম হচ্ছে ঐ পাপ যার আল্লাহ তা'আলা কোন পরওয়া করেন না। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ পাপ যার মধ্যে হতে আল্লাহ তা'আলা কিছুই ছাড়েন না। তৃতীয় হচ্ছে ঐ পাপ যা আল্লাহ তা'আলা কখনও ক্ষমা করেন না। যে পাপ তিনি ক্ষমা করেন না তা হচ্ছে শিরক। আল্লাহ তা'আলা বলেন-“ নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সাথে অংশীস্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না । অন্য জায়গায় বলেন, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীস্থাপন করে তিনি তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। যে দেওয়ানের আল্লাহ তাআলার নিকট কোন গুরুত্ব নেই তা হচ্ছে বান্দার নিজের জীবনের উপর অত্যাচার করা, যার সম্পর্ক বান্দা ও আল্লাহর সাথে রয়েছে। যেমন সে কোন দিনের রোযা ছেড়ে দিয়েছে বা নামায ছেড়েছে। আল্লাহ তা'আলা এটা ক্ষমা করে থাকেন। আর আল্লাহ তাআলা যে দেওয়ানের কিছুই ছাড়েন না তা হচ্ছে বান্দাদের পরস্পরের অত্যাচার যার কিসাস বা প্রতিশোধ গ্রহণ জরুরী হয়ে থাকে। ( ২ ) মুসনাদ-ই-আবু বাকার আল-বাযযারের মধ্যে হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেনঃ অত্যাচার তিন প্রকার। প্রথম হচ্ছে ঐ অত্যাচার যা আল্লাহ ক্ষমা করেন না। দ্বিতীয় হচ্ছে ঐ অত্যাচার যা আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করে থাকেন। তৃতীয় হচ্ছে ঐ অত্যাচার, আল্লাহ তা'আলা যার কিছুই ছাড়েন না। যে অত্যাচার আল্লাহ ক্ষমা করেন না তা হচ্ছে শিক। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ নিশ্চয়ই শির্ক হচ্ছে বড় অত্যাচার । দ্বিতীয় অত্যাচার হচ্ছে বান্দাদের নিজের জীবনের উপর অত্যাচার, যার সম্পর্ক তাদের ও তাদের প্রভুর মধ্যে রয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা যে অত্যাচারের কিছুই ছাড়েন না তা হচ্ছে বান্দাদের একের অপরের প্রতি অত্যাচার, আল্লাহ তা'আলা এটা ছেড়ে দেন না যে পর্যন্ত একে অন্যের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ না করে। ( ৩ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত মুআবিয়া ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছিঃ ‘আল্লাহ তা'আলা সমস্ত পাপই মার্জনা করে থাকেন, শুধু ঐ ব্যক্তিকে তিনি ক্ষমা করেন না যে কুফরীর অবস্থায় মারা যায় এবং ঐ ব্যক্তিকে মার্জনা করেন না, যে কোন মুমিনকে জেনে শুনে হত্যা করে। ( ৪ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন-হে আমার বান্দা! তুমি যে পর্যন্ত আমার ইবাদত করতে থাকবে এবং আমার নিকট হতে ভাল আশা পোষণ করবে, আমিও তোমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করতে থাকব। হে আমার বান্দা! তুমি যদি সারা পৃথিবীপূর্ণ পাপ নিয়ে আমার নিকট আগমন কর, আমি পৃথিবীপূর্ণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করবো এ শর্তে যে, তুমি আমার সাথে অংশীস্থাপন করনি।( ৫ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু যার ( রাঃ ) হতেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলে এবং এর উপরই মৃত্যুবরণ করে সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে ।' এ কথা শুনে হযরত আবূ যার ( রাঃ ) বলেন, যদিও সে ব্যভিচার এবং চুরিও করে?' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ যদিও সে ব্যভিচার এবং চুরিও করে।' তিনবার একই প্রশ্ন ও উত্তর হয়। চতুর্থবারে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ যদিও আবূ যারের নাক ধূলায় মলিন হয় । তথা হতে হযরত আবু যার ( রাঃ ) স্বীয় চাদর টানতে টানতে বের হন এবং বলতে বলতে যানঃ যদিও আবূ যারের নাক ধূলায় মলিন হয়। এরপরেও যখনই তিনি এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন তখন এ বাক্যটি অবশ্যই বলতেন। এ হাদীসটি অন্য সনদে কিছু অতিরিক্ততার সঙ্গেও বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, হযরত আবু যার ( রাঃ ) বলেন, 'আমি মদীনার প্রান্তরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সঙ্গে চলছিলাম। আমাদের দৃষ্টি ছিল উহুদ পাহাড়ের দিকে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ হে আবু যার ( রাঃ )! আমি বলিঃ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি হাযির আছি । তিনি বলেনঃ “ জেনে রেখো যে, যদি আমার নিকট এ উহুদ পাহাড়ের সমানও স্বর্ণ থাকে তবুও আমি চাইব না যে, তৃতীয় সন্ধ্যায় আমার নিকট ওর মধ্য হতে কিছু অবশিষ্ট থাক ঐ দীনারটি ছাড়া যা আমি ঋণ পরিশোধের জন্য রেখে দেই । বাকী সমস্ত মাল আমি এভাবে ও এভাবে আল্লাহর পথে আল্লাহর বান্দাদেরকে দিয়ে দেবো। আর তিনি ডানে, বামে ও সম্মুখে অঞ্জলি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর কিছুক্ষণ ধরে আমরা চলতে থাকি। আবার রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আমাকে ডাক দেন ও বলেনঃ এখানে যার অধিক রয়েছে, কিয়ামতের দিন তার অল্প থাকবে; কিন্তু যে এরূপ করে এবং তিনি তার ডানে, বামে ও সামনে অঞ্জলি ভরে এভাবে ইশারা করেন। আবার কিছুক্ষণ চলার পর আমাকে বলেনঃ “ হে আবূ যার ( রাঃ )! তুমি এখানে থামো, আমি আসছি ।' তিনি চলে যান এবং আমার চক্ষু হতে অদৃশ্য হন কিন্তু আমি তাঁর শব্দ শুনতে পাই। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি যে, না জানি একাকী পেয়ে তাকে কোন শত্রু আক্রমণ করে বসে। আমি তার নিকট পৌছার ইচ্ছে করি, কিন্তু সাথে সাথে তার এ নির্দেশ আমার স্মরণ হয়-“ আমি না আসা পর্যন্ত এখানেই অপেক্ষা কর । সুতরাং আমি সেখানই রয়ে গেলাম। অবশেষে তিনি ফিরে আসেন। আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি কেমন যেন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম? তিনি বলেনঃ - আমার নিকট হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) এসেছিলেন এবং বলেছিলেন- আপনার উম্মতের মধ্যে যে এমন অবস্থায় মারা যাবে যে, সে আল্লাহর সঙ্গে কাউকেও শরীক করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে। আমি বলি- 'যদিও সে ব্যভিচার এবং চুরি করে?' তিনি বলেনঃ “ হ্যা যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে । এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এও রয়েছে যে, হযরত আবু যার ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি রাত্রে বের হই । দেখি যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) চলতে রয়েছেন। আমি ধারণা করি যে, সম্ভবতঃ এ সময় তিনি কাউকেও সঙ্গে নিতে চান না। তাই আমি চন্দ্রের ছায়ায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পিছনে চলতে থাকি। তিনি ঘুরে যখন আমাকে দেখতে পান তখন বলেনঃ ‘কে তুমি?' আমি বলি- আবু যার, আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গ করুন। তখন তিনি আমাকে বলেনঃ ‘এসো আমার সঙ্গে চল। কিছুক্ষণ ধরে আমরা চলতে থাকি। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ আধিক্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন অল্পের অধিকারী হবে, তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা ধন-মাল দিয়েছেন, সেই মাল তারা ডানে, বামে, সামনে, পিছনে ভাল কাজে খরচ করে থাকে । আবার কিছুক্ষণ চলার পর আমাকে বলেনঃ ‘এখানে বস।' তিনি আমাকে এমন এক জায়গায় বসিয়ে দেন যার চতুর্দিকে পাথর ছিল। তিনি আমাকে বলেনঃ “ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখানে বসে থাক ।' অতঃপর তিনি চলে যান এবং দৃষ্টি হতে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর খুব বিলম্ব হয়ে যায়। অবশেষে আমি দেখি যে, তিনি বলতে বলতে আসছেনঃ যদিও ব্যভিচার করে থাকে এবং যদিও চুরি করে থাকে। যখন তিনি আমার নিকট পৌছেন তখন আমি থাকতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করি, আল্লাহ তা'আলা আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন, আপনি মাঠের প্রান্তে কার সাথে কথা বলছিলেন? আমি শুনেছি, তিনি আপনাকে উত্তরও দিচ্ছিলেন। তিনি বলেনঃ তিনি ছিলেন জিবরাঈল ( আঃ )। এখানে এসে তিনি আমাকে বলেনঃ 'আপনার উম্মতকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীস্থাপন না করা অবস্থায় মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে। আমি বলি, হে জিবরাঈল ( আঃ )। যদিও সে চুরিও করে এবং ব্যভিচারও করে?' তিনি বলেনঃ হ্যা'। আমি বলি, 'যদিও সে চুরিও করে এবং ব্যভিচারও করে?' তিনি বলেনঃ ‘হ্যা, এমনকি যদি সে মদ্যপানও করে।( ৬ ) মুসনাদ-ই-আবৃদ ইবনে হামীদের মধ্যে হযরত জাবির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! ওয়াজিবকারী জিনিসগুলো কি?' তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি শির্ক না করেই মারা গেল তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব এবং যে ব্যক্তি শিরুক করে মারা গেল তার জন্যে জান্নাম ওয়াজিব।' এ হাদীসটি অন্য রীতিতেও বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে- “ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করেই মারা গেল তার জন্যে ক্ষমা বৈধ । আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছে করলে তাকে শাস্তি দেবেন এবং ইচ্ছে করলে ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক। করে তাকে তিনি ক্ষমা করেন না। ঐ ব্যক্তিকে ছাড়া যাকে তিনি ইচ্ছে ক্ষমা করে থাকেন। ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ) অন্য সনদ হতে বর্ণিত আছে। যে, রাসূলুল্লাহ ( স ) বলেন :বান্দার উপর ক্ষমা সর্বদা চালু থাকে যে পর্যন্ত পর্দা না পড়ে যায়। জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! পর্দা পড়া কি? তিনি বলেনঃ “ যে ব্যক্তি শিরক না করা অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে সাক্ষাত করে তার জন্যে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমা বৈধ হয়ে যায় । তিনি ইচ্ছে করলে তাকে শাস্তি দেবেন এবং ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর তিনি। ( আরবী ) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। ( মুসনাদ-ই-আবূ ইয়ালা )।( ৭ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন না করে মারা গেল সে জান্নাতে প্রবেশ করলো ।'( ৮ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) একদা সাহাবীদের নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ “ তোমাদের মহান সম্মানিত প্রভু আমাকে আমার উম্মতের মধ্যকার সত্তর হাজার লোকের উপর এ অধিকার দিয়েছেন যে, তারা বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে । আমার জন্য আমার উম্মতের ব্যাপারে যা রক্ষিত রয়েছে তা আমি তার নিকট প্রকাশ করবো।' তখন কোন একজন সাহাবী ( রাঃ ) বলেন, “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্যে কি ওটা সংরক্ষিত রাখবেন’? একথা শুনে তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন । অতঃপর তিনি তাকবীর পাঠ করতে করতে বাইরে আসেন এবং বলেনঃ আমার প্রভু আমাকে প্রত্যেক হাজারের সঙ্গে সত্তর হাজার বেশী দান করেছেন এবং তার নিকটে ঐ সংরক্ষিত অংশও রয়েছে। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী ( রাঃ ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করেন তখন হযরত আবু রাহাম ( রঃ ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘ঐ সংরক্ষিত জিনিস কি? জনগণ তখন আবু রাহাম ( রঃ )-কে ধমক দিয়ে বলেনঃ “ কোথায় তুমি এবং কোথায় রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সংরক্ষিত জিনিস?' হযরত আবু আইয়ুব ( রাঃ ) জনগণকে তখন বলেনঃ “তোমরা লোকটিকে ছেড়ে দাও । এসো আমি আমার ধারণা মতে তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সংরক্ষিত জিনিসের সংবাদ দেই। এমনকি আমি প্রায় নিশ্চিতরূপেই বলতে পারি যে, ঐ জিনিস হচ্ছে প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জান্নাতে প্রবেশ লাভ যে খাটি অন্তরে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ( সঃ ) তাঁর বান্দা এবং রাসূল।' ( ৯ ) হযতর আবু আইয়ুব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার একটি ভ্রাতুস্পুত্র রয়েছে, সে হারাম হতে বিরত থাকে না। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বলেনঃ তার দ্বীনদারী কিরূপ?' লোকটি বলে, “ সে নামাযী ও আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বলেনঃ যাও, তার নিকট তার দ্বীন দান হিসেবে যাজ্ঞা কর। যদি অস্বীকার করে তবে কিনে নাও।' লোকটি গিয়ে তার নিকট যাজ্ঞা করে। কিন্তু সে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। লোকটি এসে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এ সংবাদ দেয়। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘আমি তাকে স্বীয় ধর্মের প্রতি অটল পেলাম। সে সময় ( আরবী ) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম )( ১০ ) হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করে বলে, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমি কোন প্রয়োজন ও প্রয়োজন বিশিষ্টকে না করে ছাড়িনি।' তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ তুমি কি তিন বার এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ ( সঃ ) আল্লাহর রাসূল? লোকটি বলে, 'হাঁ ।' তিনি বলেন: ‘এটা এ সবগুলোর উপর জয়যুক্ত হবে।' ( ১১ ) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত যমযম ইবনে জাওশুল ইয়ামানী ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “ আমাকে হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) বলেন, ‘হে জাওশ ইয়ামানী ( রঃ )! কোন মানুষকে কখনও বল না যে, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন না । আমি তখন বলি, “ হে আবু হুরাইরা ( রাঃ )! এ কথাতো আমাদের প্রত্যেকেই ক্রোধের সময় তার ভাই ও বন্ধুকে বলে থাকে । তিনি বলেন, সাবধান! কখনও বলো না। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলতে শুনেছি, বানী ইসরাঈলের মধ্যে দু'টি লোক ছিল। একজন ছিল চরম উপাসক এবং অপরজন ছিল স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচারী। উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বভাব ছিল। উপাসক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রায় কোন না কোন পাপ কার্যে লিপ্ত দেখত এবং তাকে বলতো, 'তুমি এ কাজ হতে বিরত থাক। সে তখন উত্তরে বলতো, “ আমাকে আমার প্রভুর উপর ছেড়ে দাও । তুমি কি আমার রক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছো?' একদা উপাসক ব্যক্তি দেখে যে, সে পুনরায় এমন এক পাপ কাজ করতে রয়েছে যা তার নিকট অত্যন্ত বড় পাপ বলে মনে হয়। তাই সে তাকে বলে, তোমাকে সতর্ক করছি, তুমি বিরত থাক।' সে ঐ উত্তরই দেয়। উপাসক ব্যক্তি তখন বলেঃ আল্লাহর শপথ! আল্লাহ। তোমাকে কখনও ক্ষমা করবেন না এবং তোমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন না। আল্লাহ তাআলা তখন তাদের নিকট ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন যিনি তাদের রূহ্ কব্য করে নেন। যখন তারা আল্লাহ তাআলার নিকট একত্রিত হয় তখন আল্লাহ তা'আলা ঐ পাপীকে বলেন- ‘আমার করুণার ভিত্তিতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।' আর ঐ উপাসককে বলেন- “ তোমার কি প্রকৃত জ্ঞান ছিল? তুমি কি আমার অধিকৃত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান ছিলেঃ ( হে ফেরেশতাগণ! ) তোমরা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাও ।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ যার হাতে আবুল কাসিম ( সঃ )-এর প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! সে এমন এক কথা মুখ দিয়ে বের করে যা তার দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস করে দেয়।( ১২ ) তাবরানীর হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন- যে ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে যে, আমি পাপ মার্জনায় সক্ষম, আমি তার পাপ মার্জনাই করে থাকি এবং এতে কোন পরওয়া করি না যে পর্যন্ত না আমার সঙ্গে অংশী স্থাপন করে ।'হাফিয আবু বাকর আল বাযযায ( রঃ ) এবং হাফিয আবুল ইয়ালা ( রঃ )-এর। গ্রন্থদ্বয়ে হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে কার্যের উপর আল্লাহ তা'আলা কোন পুরস্কারের অঙ্গীকার করেছেন তা তিনি অবশ্যই পূরণ করবেন এবং যে কার্যের উপর শাস্তির অঙ্গীকার করেছেন তা তার ইচ্ছাধীন ।মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমের মধ্যে হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা নবী ( সঃ )-এর সাহাবীগণ হত্যাকারী, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণকারী, পবিত্র নবীদের উপর অপবাদ প্রদানকারী এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীদের ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করতাম না। অবশেষে। ( আরবী )-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং নবী ( সঃ )-এর সাহাবীগণ সাক্ষ্য প্রদান হতে বিরত থাকেন।তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের মধ্যে ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “ আল্লাহ তা'আলার কিতাবের মধ্যে যে সমস্ত পাপ কার্যের উপর জাহান্নামের বর্ণনা রয়েছে সেসব কার্যে লিপ্ত ব্যক্তিদের উপর জাহান্নাম ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে আমরা কোন সন্দেহ পোষণ করতাম না । অবশেষে আমাদের উপর উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এটা শুনার পর আমরা সাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাকি এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহ তা'আলার উপর সমর্পণ করি।' বায ( রঃ ) স্বীয় হাদীস গ্রন্থে হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, বড় বড় পাপ কার্যে লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা হতে আমরা বিরত ছিলাম। অবশেষে আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে উপরোক্ত আয়াত শ্রবণ করি এবং তিনি একথাও বলেনঃ আমি আমার শাফাআতকে কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের কাবীরা গুনাহ্কারীদের জন্যে পিছিয়ে রেখেছি। ইমাম আবু জাফর রাযী ( রঃ )-এর বর্ণনায় হযরত ইবনে উমার ( রাঃ )-এর নিম্নরূপ উক্তি রয়েছেঃ যখন ( আরবী ) অর্থাৎ হে আমার ঐ বান্দাগণ যারা নিজেদের জীবনের উপর অত্যাচার করেছে, তোমরা আমার করুণা হতে নিরাশ হয়ো না'। ( ৩৯:৫৩ ) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন একটি লোক দাঁড়িয়ে বলে, হে আল্লাহর নবী ( সঃ )! আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপনকারীও কি? আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) তার এ প্রশ্ন অপছন্দ করেন এবং তাকে, আয়াতটি পাঠ করে শুনিয়ে দেন।ইবনে মিরদুওয়াই ( রঃ ) হযরত উমার ( রাঃ )-এর রীতি হতে বর্ণনা করেছেন যে, সূরা-ই-তানযীল’-এর এ আয়াতটি তাওবার সঙ্গে শর্তযুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি যে কোন পাপ কার্য হতে তাওবা করে, আল্লাহ তা'আলা তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হন, যদিও সে বারবার সেই কাজ করে। সুতরাং নিরাশ না হওয়ার আয়াতে তাওবার শর্ত অবশ্যই রয়েছে। নচেৎ তার, সাথে মুশরিকও চলে আসবে এবং ভাবার্থ সঠিক হবে না। কেননা ( আরবী )–এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে অংশী স্থাপনকারীর ক্ষমা নেই। হ্যা, তবে এটা ছাড়া অন্যান্য পাপের জন্য যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করবেন যদিও সে তাওবা না করে। এ ভাবার্থ হলে এ আয়াতই অপেক্ষাকৃত বেশী আশা উৎপাদক হবে। এসব বিষয় আল্লাহ পাকই সব চেয়ে বেশী জানেন। এরপর বলা হচ্ছে- “ যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন করে সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে । যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ “ নিশ্চয়ই শির্ক খুব বড় অত্যাচার ।'( ৩১:১৩ )সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! সবচেয়ে বড় পাপ কি? রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ তা এই যে, তুমি আল্লাহর অংশ স্থির কর, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন । অতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন।তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আমি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় পাপের কথা বলছি ।' অতঃপর তিনি ( আরবী )-এ অংশটুকু পাঠ করেন। তারপর বলেনঃ এবং মা-বাপের অবাধ্য হওয়া। অতঃপর তিনি, ( আরবী ) ( ৩১:১৪ ) –এ অংশটুকু পাঠ করেন। অর্থাৎ আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং আমারই নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল।
সূরা নিসা আয়াত 48 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ আসল হে মূসা,
- ভয় কর তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে সেসব বস্তু দিয়েছেন, যা তোমরা জান।
- এবং এটা একটা বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। অতএব তোমরা কি একে অস্বীকার কর?
- তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন এবং নারীরা
- যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার
- যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং
- গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে
- আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।
- পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না
- যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে;
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers