কোরান সূরা বাকারাহ্ আয়াত 5 তাফসীর
﴿أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
[ البقرة: 5]
তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। [সূরা বাকারাহ্: 5]
Surah Al-Baqarah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Baqarah ayat 5
এরাই আছে তাদের প্রভুর তরফ থেকে হেদায়তের উপরে, আর এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫. উক্ত গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিরাই হিদায়েতের পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। আর তারাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে তাদের কাক্সিক্ষত বিষয় তথা জান্নাত পেয়ে এবং অনাকাক্সিক্ষত বিষয় তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে সফল হবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। এখানে সেই ঈমানদার বা বিশ্বাসীদের পরিণামের কথা বলা হয়েছে, যারা ঈমান আনার পর আল্লাহভীরু ও আমল করা সহ সঠিক আক্বীদার উপর কায়েম থাকার প্রতি যত্ন নেয়; কেবল মৌখিক ঈমান প্রকাশকে যথেষ্ট মনে করে না। আর সফলকাম হওয়ার অর্থ, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর রহমত ও ক্ষমা লাভ। এর সাথে যদি দুনিয়াতেও সুখ-সাছন্দ্য ও সফলতা লাভ হয়ে যায় তাহলে তো 'সুবহানাল্লাহ' ( বিরাট সৌভাগ্য )। নচেৎ আখেরাতের সফলতাই হল প্রকৃত সফলতা। এর পর মহান আল্লাহ অন্য এক দলের কথা বলছেন যারা কেবল কাফেরই নয়, বরং তাদের কুফরী ও অবাধ্যতা এমন অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এর পর তাদের কোন মঙ্গল বা ইসলাম কবুল করার কোন আশাই নেই।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তারাই তাদের রব-এর নির্দেশিত হেদায়েতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। [ ১ ] [ ১ ] যারা মুত্তাকী তারাই সফলকাম। এখানে মুত্তাকীদের গুণাগুণ বর্ণনা করার পরে হিদায়াতের জন্য তাদেরকে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে, তারাই তাদের রব-এর দেয়া হিদায়াত পাবে এবং তারাই সফলকাম হবে। আল্লাহ্র এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সৎলোকেরা জান্নাতে স্থান পাবে। বর্তমান জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অসমৃদ্ধি, সাফল্য ও ব্যর্থতা আসল মানদণ্ড নয়। বরং আল্লাহ্র শেষ বিচারে যে ব্যক্তি উত্রে যাবে, সে-ই হচ্ছে সফলকাম। আর সেখানে যে উত্রোবে না, সে ব্যর্থ। সূরা আল-বাকারার প্রথম পাঁচটি আয়াতে কুরআনকে হিদায়াত বা পথপ্রদর্শনের গ্রন্থরূপে ঘোষণা করে সকল সন্দেহ ও সংশয়ের উর্ধ্বে স্থান দেয়ার পর সে সমস্ত ভাগ্যবান ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা এ গ্রন্থের হিদায়াতে পরিপূর্ণভাবে উপকৃত ও লাভবান হয়েছেন এবং যাদেরকে কুরআনের পরিভাষায় মুমিন ও মুত্তাকী উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তাদের বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী এবং পরিচয়ও বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী পনেরটি আয়াতে সে সমস্ত লোকের বিষয় আলোচিত হয়েছে, যারা এ হিদায়াতকে অগ্রাহ্য ও অস্বীকার করে বিরুদ্ধাচরণ করেছে। এরা দু’টি দলে বিভক্ত। একদল প্রকাশ্যে কুরআনকে অস্বীকার করে বিরুদ্ধাচারণের পথ অবলম্বন করেছে। কুরআন তাদেরকে কাফের বলে আখ্যায়িত করেছে। অপর দল হচ্ছে, যারা হীন পার্থিব উদ্দেশ্যে অন্তরের ভাব ও বিশ্বাসের কথাটি খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করতে সাহস পায়নি, বরং প্রতারণার পথ অবলম্বন করেছে; মুসলিমদের নিকট বলে, আমরা মুসলিম; কুরআনের হিদায়াত মানি এবং আমরা তোমাদের সাথে আছি। অথচ তাদের অন্তরে লুক্কায়িত থাকে কুফর বা অস্বীকৃতি। আবার কাফেরদের নিকট গিয়ে বলে, আমরা তোমাদের দলভুক্ত, তোমাদের সাথেই রয়েছি। মুসলিমদের ধোকা দেয়ার জন্য এবং তাদের গোপন কথা জানার জন্যই তাদের সাথে মেলামেশা করি। কুরআন তাদেরকে ‘মুনাফিক' বলে আখ্যায়িত করেছে। এ পনরটি আয়াত যারা কুরআন অমান্য করে তাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তন্মধ্যে ৬ ও ৭নং আয়াতে যারা প্রকাশ্যে অস্বীকার করে তাদের কথা ও স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। আর পরবর্তী তেরটি আয়াতই মুনাফেকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াতগুলোর বিস্তারিত আলোচনায় মনোনিবেশ করলে বোঝা যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলা সূরা আল-বাকারার প্রথম বিশটি আয়াতে একদিকে হিদায়াতের উৎসের সন্ধান দিয়ে বলেছেন যে, এর উৎস হচ্ছে তাঁর কিতাব এই কুরআন; অপরদিকে সৃষ্টিজগতকে এ হিদায়াত গ্রহণ করা ও না করার নিরিখে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন। যারা গ্রহণ করেছে, তাদেরকে মু’মিন-মুত্তাকী বলেছেন, আর যারা অগ্রাহ্য করেছে তাদেরকে কাফের ও মুনাফেক বলেছেন। কুরআনের এ শিক্ষা থেকে একটি মৌলিক জ্ঞাতব্য বিষয় এও প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ববাসীকে এমনভাবে দু’টি ভাগ করা যায়, যা হবে আদর্শভিত্তিক। বংশ, গোত্র, দেশ, ভাষা ও বর্ণ এবং ভৌগলিক বিভক্তি এমন কোন ভেদরেখা নয়, যার ভিত্তিতে মানবজাতিকে বিভক্ত করা যেতে পারে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
অর্থাৎ ঐ সব লোক, যাদের গুণাবলী পূর্বে বর্ণিত হয়েছে, যেমন অদৃশ্যের উপর ঈমান আনা, নামায কায়েম করা, আল্লাহর দেয়া বন্ধু হতে দান করা, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান আনা, তাঁর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখা, পরকালের প্রতি বিশ্বাস রেখে তথায় উপকার দেয় এরূপ কাজ করা এবং মন্দ ও হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা। এসব লোকই হিদায়াত প্রাপ্ত, এদেরকেই আল্লাহর নূর ও তাঁর সূক্ষ্ম অন্তদৃষ্টি দ্বারা ভূষিত করা হয়েছে। আর এ সমুদয় লোকের জন্যেই ইহকালে ও পরকালে সফলতা রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হিদায়াতের তাফসীর করেছেন নূর ও দৃঢ়তা দ্বারা এবং ফালাহ’ -এর তাফসীর করেছেন প্রয়োজন মিটে যাওয়া ও পাপ এবং দুস্কার্য থেকে বেঁচে যাওয়া ইত্যাদি দ্বারা।ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেছেনঃ ‘এসব লোক স্বীয় প্রভুর পক্ষ হতে নূর, দলীল, দৃঢ়তা এবং সত্যতার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে, আর এরাই তাদের পবিত্র কার্যাবলীর কারণে পুণ্য ও চিরস্থায়ী জান্নাত লাভের দাবীদার এবং এরাই শাস্তি হতে দূরে সরে থাকবে।' ইবনে জারীর ( রঃ ) আরও বলেন যে, দ্বিতীয় ( আরবি )-এর ইঙ্গিত হয়েছে, আহলে কিতাবের দিকে, যার ( আরবি ) তার পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এ হিসেবে ( আরবি ) প্রথম আয়াত হতে পৃথক হবে এবং ( আরবি ) হয়ে ( আরবি ) হবে এবং তার ( আরবি ) হবে ( আরবি )। কিন্তু তার ইঙ্গিত পূর্বোল্লিখিত গুণাবলীর অধিকারীদের দিকে হওয়াই বেশী পছন্দনীয় মত। তারা আহলে কিতাব হোক অথবা আরবের মুমিনই হোক।।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) এবং আরও কয়েকজন সাহাবী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ( আরবি ) আরবের মুমিনগণকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে এবং তার পরবর্তী বাক্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে আহলে কিতাবের মুমিনগণ। অতঃপর এই উভয় দলের জন্যেই শুভ সংবাদ দেয়া হচ্ছে যে, এরা হিদায়াত প্রাপ্ত ও সফলকাম। পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, এ আয়াতগুলো সাধারণ এবং ইঙ্গিত ও সাধারণ। আল্লাহই এ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জানেন।মুজাহিদ ( রঃ ) আবুল আলিয়া, ( রঃ ), রাবী' বিন আনাস ( রাঃ ) এবং কাতাদাহ ( রঃ ) হতে এটাই বর্ণিত আছে। একবার কেউ রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কে প্রশ্ন করেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! পবিত্র কুরআনের কতগুলো আয়াত তো আমাদেরকে উৎসাহিত করছে এবং আমাদের মনে অনন্ত আশার সঞ্চার করছে, কিন্তু কতকগুলো আয়াত আবার আমাদের আশা ভরসাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে এবং নৈরাশ্যের সাগরে নিক্ষেপ করছে ।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন বললেনঃ ‘এসো! আমি তোমাদের জান্নাত ও জাহান্নামীদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেই।' অতঃপর তিনি ( আরবি ) হতে ( আরবি ) পর্যন্ত পাঠ করে বললেনঃ এরা তো জান্নাতী।' সাহাবীগণ ( রাঃ ) খুশী হয়ে বললেনঃ “ আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের আশা আছে যে, আমরা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবো ।' অতঃপর তিনি ( আরবি ) হতে ( আরবি ) পর্যন্ত পড়লেন এবং বললেনঃ “ এরা জাহান্নামী । তাঁরা বললেনঃ ‘আমরা এরূপ নই।' রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ হাঁ ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম )।
সূরা বাকারাহ্ আয়াত 5 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না।
- তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ
- অতঃপর তা আকস্মিকভাবে তাদের কাছে এসে পড়বে, তারা তা বুঝতে ও পারবে না।
- বস্তুতঃ এভাবে আমি বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা করি, যাতে তারা ফিরে আসে।
- তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ জেনে নেবেন
- আপনার অন্তরে, যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হন,
- হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে
- তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময়
- তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার
- মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা বাকারাহ্ ডাউনলোড করুন:
সূরা Baqarah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Baqarah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers