কোরান সূরা আলে-ইমরান আয়াত 51 তাফসীর
﴿إِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۗ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
[ آل عمران: 51]
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা-তাঁর এবাদত কর, এটাই হলো সরল পথ। [সূরা আলে-ইমরান: 51]
Surah Al Imran in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Al Imran ayat 51
''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ আমার প্রভু ও তোমাদেরও প্রভু, অতএব তাঁরই উপাসনা করো, -- এই হচ্ছে সহজ-সঠিক পথ।’’
Tafsir Mokhtasar Bangla
৫১. আর তা এ কারণে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার ও তোমাদের প্রভু। একমাত্র তিনিই আনুগত্য ও ভয় পাওয়ার উপযুক্ত। তাই তোমরা এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করো। আমি তোমাদেরকে তাকওয়া ও ইবাদাতের যে আদেশ করেছি তাই হিদায়েতের সঠিক ও সরল পথ। এর মধ্যে কোন ধরনের বক্রতা নেই।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা তাঁর উপাসনা কর। এটাই হল সরল পথ। [১] [১] অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত সম্পাদনে এবং তাঁর সামনে অসহায়তা ও অপরাগতার প্রকাশ করার ব্যাপারে আমি ও তোমরা সমান। সুতরাং এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর উপাস্যত্বে অন্য কাউকে শরীক না করাই হল সঠিক ও সরল পথ।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমার রব এবং তোমাদেরও রব, কাজেই তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। এটাই সরল পথ [ ১ ]। ’ [ ১ ] এখানেও ‘সিরাতে মুস্তাকীম' বলে ইসলাম বোঝানো হয়েছে। যেমন পূর্বে সূরা আল ফাতিহার তাফসীরে বর্ণিত হয়েছে।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর: ফেরেশতারা হযরত মারইয়াম ( আঃ )-কে বলেনঃ “ আপনার ছেলেকে অর্থাৎ হযরত ঈসা ( আঃ )-কে আল্লাহ গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেবেন । ( আরবী ) শব্দের তাফসীর সূরা-ই-বাকারায় হয়ে গেছে। আর আল্লাহ পাক তাকে তাওরাত শিক্ষা দেবেন যা হযরত মূসা ইবনে ইমরান ( আঃ )-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তাঁকে ইঞ্জীল শিক্ষা দেবেন যা তাঁর নিজের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। এ দু'টো কিতাব হযরত ঈসা ( আঃ )-এর মুখস্থ ছিল। আল্লাহ তা'আলা তাকে বানী ইসরাঈলের নিকট নবী করে পাঠাবেন, যেন তিনি তাদেরকে স্বীয় অলৌকিক ঘটনা দেখাতে পারেন যে, তিনি মাটি দিয়ে পাখীর আকৃতি গঠন করেন। অতঃপর ওর মধ্যে ফুকার দেন, আর তেমনই ওটা বাস্তব পাখী হয়ে তাদের সামনে উড়তে থাকে। এটা আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমেই হয়েছিল। হযরত ঈসা ( আঃ )-এর নিজস্ব কোন ক্ষমতা ছিল না। বরং এটা তার জন্যে একটা মু'জিযা ছিল। ( আরবী ) ঐ অন্ধকে বলা হয় যে দিনে দেখতে পায় কিন্তু রাত্রে দেখতে পায় না। কেউ কেউ বলেন যে, টেরা চক্ষু বিশিষ্ট লোককে বলা হয়। কারো কারো উক্তি এও রয়েছে যে, ( আরবী ) ঐ অন্ধকে বলা হয় যে মায়ের গর্ভ হতেই অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এখানে এ অনুবাদই যথোপযুক্ত হবে। কেননা, এর দ্বারাই অলৌকিকতার পূর্ণতা প্রকাশ পায় এবং বিরুদ্ধবাদীকে অসমর্থ করার জন্যে এটাই উত্তম পন্থা। ( আরবী ) শ্বেত কুষ্ঠকে বলা হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশক্রমে হযরত ঈসা ( আঃ ) এ রোগগ্রস্থ ব্যক্তিকেও নিরাময় করে দিতেন। আল্লাহ পাকের হুকুমে তিনি মৃতকেও জীবিত করতেন। অধিকাংশ আলেমের উক্তি এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক যুগের নবীকে যুগোপযোগী বিশেষ বিশেষ মু'জিযা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। হযরত মূসা ( আঃ )-এর যুগে যাদুর খুব প্রচলন ছিল এবং যাদুকরদেরকে অত্যন্ত সম্মান করা হতো। তাই আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা ( আঃ )-কে এমন মু'জিযা দান করেন যে, যাদুকরগণ বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ে এবং তাদের পূর্ণ বিশ্বাস জন্মে যে, এটা কখনও যাদু হতে পারে না, বরং এটা মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর একটা বড় দান। অতএব তারা অবনত মস্তকে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং অবশেষে তারা আল্লাহ পাকের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত হয়। হযরত ঈসা ( আঃ )-এর যুগটা ছিল চিকিৎসক ও বৈজ্ঞানিকদের যুগ। তথায় তখন বড় বড় বৈজ্ঞানিক এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক বিদ্যমান ছিল। সুতরাং মহান আল্লাহ হযরত ঈসা ( আঃ )-কে এমন মু'জিযা দান করেন যার সামনে ঐ বড় বড় চিকিৎসকগণ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। জন্মান্ধকে চক্ষু দান করা, শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করা ও নির্জীব পদার্থের মধ্যে প্রাণ দেয়া এবং সমাধিস্থ ব্যক্তিকে জীবিত করার ক্ষমতা কোন ব্যক্তির রয়েছে? একমাত্র আল্লাহ তাআলার নির্দেশক্রমে মু'জিযা রূপে তার দ্বারা এ সমুদয় কার্য সাধিত হয়। অনুরূপভাবে যে যুগে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা ( সঃ )-এর আবির্ভাব ঘটে সেটা ছিল সাহিত্য, কবিতা ও বাকপটতার যুগ। এসব বিষয়ে খ্যাতনামা কবিগণ এমন পূর্ণতা অর্জন করেছিল যে, সারা দুনিয়া তাদের সামনে মাথা হেঁট করেছিল। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে এমন এক গ্রন্থ দান করলেন যার ঔজ্জ্বল্যের সামনে তাদের সমস্ত দীপ্তি ম্লান হয়ে যায় এবং তাদের বিশ্বাস জন্মে যে, এটা মানুষের কথা নয়। সারা বিশ্বের সামনে জোরে শশারে বারবার ঘোষণা করা হয়-এরূপ কথা বলতে পারে এমন কেউ আছে কি? একা একা নয় বরং তোমরা সবাই মিলিত হয়ে যাও, শুধু মানব নয় বরং দানবদেরকেও তোমাদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও, অতঃপর পুরো কুরআনের সমান নয়, শুধুমাত্র ওর মত দশটি সূরা আনয়ন কর। আচ্ছা এও যদি সম্ভব না হয় তবে ওর মত একটি সূরাই নিয়ে এসো। কিন্তু তাদের কোমর ভেঙ্গে পড়ে, সাহস হারিয়ে যায়, কণ্ঠরোধ হয়ে যায়, বাকশক্তি লোপ পায় এবং আজ পর্যন্ত সারা বিশ্ব এ কাজে অসমর্থই রয়েছে, আর কিয়ামত পর্যন্ত অসমর্থ থেকেও যাবে। কোথায় আল্লাহ পাকের কালাম এবং কোথায় মানব ও দানবের কথা? সুতরাং এ যুগ হিসেবে এ মু'জিযা ক্রিয়াশীল হয় এবং বিরুদ্ধবাদীদেরকে অস্ত্র সংবরণ করতেই হয়। তারা দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় ।অতঃপর হযরত ঈসা ( আঃ )-এর আরও মু'জিয়ার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যা তিনি বলেছিলেন এবং করেও দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, “ তোমাদের মধ্যে যে কেউ বাড়ীতে যা কিছু খেয়ে এসেছে এবং আগামীকালের জন্যে সে যা কিছু জমা করে রেখেছে, আল্লাহর হুকুমে আমি তা বলে দিতে পারবো । এতে আমার সত্যবাদীতার দলীল রয়েছে, আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি তা চরম সত্য। তবে তোমাদের মধ্যে যদি ঈমানই না থাকে তবে আর কি হবে? আমি আমার পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতকে স্বীকার করছি এবং দুনিয়ায় ওর সত্যতার কথা ঘোষণা করছি। আমি তোমাদের জন্য এমন কতগুলো জিনিস বৈধ করতে এসেছি যেগুলো আমার পর্বে তোমাদের জন্য অবৈধ ছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) তাওরাতের কতগুলো বিধান রহিত করেছেন। কয়েকজন তাফসীরকারের ধারণা এর বিপরীত হলেও এটাই সঠিক কথা। কোন কোন মনীষী বলেন যে, হযরত ঈসা ( আঃ ) তাওরাতের কোন বিধান রহিত করেননি। তবে এটা অবশ্যই সত্য যে, কতগুলো বৈধ জিনিসে যে মতভেদ ছিল এবং তা বৃদ্ধি পেতে পেতে অবৈধতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, হযরত ঈসা ( আঃ ) ঐগুলোর যথার্থতা বর্ণনা করতঃ ঐগুলোর বৈধতার উপর শীল ( মোহর ) মেরে দেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা যে ব্যাপারে পরস্পর মতভেদ করছো আমি তোমাদের জন্যে তার মীমাংসা করে দেবো ।'( ৪৩:৬৩ )অতঃপর তিনি বলেনঃ “ আমার নিকট আমার সত্যবাদিতার উপর আল্লাহ প্রদত্ত প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে । তোমরা আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর, আমার কথা মান্য কর এবং জেনে রেখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু, সুতরাং তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। আর এটাই হচ্ছে সরল সঠিক পথ।
সূরা আলে-ইমরান আয়াত 51 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ
- আর তাদের কেউ বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং পথভ্রষ্ট করবেন না। শোনে রাখ, তারা তো
- এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
- ফেরাউন, তাঁর পূর্ববর্তীরা এবং উল্টে যাওয়া বস্তিবাসীরা গুরুতর পাপ করেছিল।
- অতএব, কাফেরদের কি হল যে, তারা আপনার দিকে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে।
- হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার
- এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।
- যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেন। নিশ্চয়
- সমুদ্রে ভাসমান পর্বতসম জাহাজসমূহ তাঁর অন্যতম নিদর্শন।
- তোমাদের কে প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বিশ্বস্ত।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আলে-ইমরান ডাউনলোড করুন:
সূরা Al Imran mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Al Imran শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers