কোরান সূরা হুদ আয়াত 6 তাফসীর
﴿۞ وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ﴾
[ هود: 6]
আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে। [সূরা হুদ: 6]
Surah Hud in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Hud ayat 6
আর পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যার জীবিকার ভার আল্লাহ্র উপরে নয়, আর তিনিই জানেন তার বাসস্থান ও তার বিশ্রামস্থল। সবই আছে এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬. জমিনের বুকে বিচরণকারী এমন কোন সৃষ্টি নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা করুণাবশতঃ গ্রহণ করেন নি। তিনি পৃথিবীর মধ্যকার প্রত্যেকের অবস্থানস্থল সম্পর্কে অবহিত আছেন। অনুরূপভাবে তিনি কে কোথায় মারা যাবে প্রত্যেকের সেই মৃত্যুর স্থান সম্পর্কেও অবহিত। সুতরাং প্রত্যেক জন্তু, তাদের রিজিক, তাদের আশ্রয়স্থল ও তাদের মৃত্যুর স্থান স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা হলো লাওহে মাহফ‚য।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।[১] আর তিনি প্রত্যেকের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র সম্বন্ধে জ্ঞান রাখেন;[২] সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থে ( লাওহে মাহ্ফুযে লিপিবদ্ধ ) রয়েছে। [১] অর্থাৎ, তিনি রুযীর যিম্মাদার ও দায়িতত্ত্বশীল। ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল সৃষ্টিজীব, মানুষ হোক বা জীন, পশু হোক বা পক্ষীকুল, ছোট হোক বা বড়, জলচর হোক বা স্থলচর; মোটকথা, তিনি সমুদয় প্রাণীকে তার প্রয়োজন মত রুযী দান করেন। [২] مستقر ومستودع ( স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র )এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। অনেকের নিকট مستقر হল চলা ফেরা করতে করতে যেখানে থেমে যায় সেই জায়গা এবং যেখানে অবস্থান করে তা হল مستودع । কেউ কেউ বলেন, মায়ের গর্ভাশয় হল مستقر আর পিতার পিঠ হল مستودع। আবার অনেকের নিকট মানুষ বা পশু জীবিত অবস্থায় যেখানে অবস্থান করে তা হল তার مستقر এবং মৃত্যুর পর যেখানে দাফন করা হবে তা হল তার مستودع। ( তাফসীর ইবনে কাসীর ) ইমাম শওকানী ( রঃ ) বলেন, مستقر হল মায়ের গর্ভাশয় এবং مستودع হল পৃথিবীর সেই অংশ যেখানে মানুষ দাফন হয়। ইমাম হাকেমের এক বর্ণনা অনুযায়ী এই অর্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং অর্থ যাই হোক, আয়াতের অর্থ পরিষ্কার যে, আল্লাহ তাআলা সকলের ( স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র ) সম্পর্কে অবগত। তিনি সকলকে রুযী দানের ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি রুযীর দায়িতত্ত্বশীল। আর তিনি আপন দায়িতত্ত্ব পূর্ণ করে থাকেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর যমীনে বিচরণকারী সবার জীবিকার [ ১ ] দায়িত্ব আল্লাহ্রই [ ২ ] এবং তিনি সেসবের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি [ ৩ ] সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে [ ৪ ]।
[ ১ ] রিযিকের আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যা কোন প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে, যার দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয়, প্রবৃদ্ধি সাধন এবং জীবন রক্ষা করে থাকে। রিযিকের জন্য মালিকানা স্বত্ব শর্ত নয়। সকল জীব জন্তু রিযিক ভোগ করে থাকে কিন্তু তারা তার মালিক হয় না। কারণ, মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ওদের নেই। অনুরূপভাবে ছোট শিশুরাও মালিক নয়, কিন্তু ওদের রিযিক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌছতে থাকে। [ কুরতুবী ]
[ ২ ] এমন সব প্রাণীকে ( دابة ) বলে যা ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে। [ কুরতুবী ] পক্ষীকুলও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, খাদ্য গ্রহনের জন্য তারা ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করে থাকে এবং তাদের বাসস্থান ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন হয়ে থাকে। সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ ও পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল। কেননা, সাগর-মহাসাগরের তলদেশেও মাটির অস্তিত্ব রয়েছে। মোটকথা, সমুদয় প্রাণীকুলের রিযিকের দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহন করছেন। এবং একথা এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন যা দ্বারা দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দেশ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, “ তাদের রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত” । একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তা'আলার উপর এহেন গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার মত কোন ব্যক্তি বা শক্তি নেই, বরং তিনি নিজেই অনুগ্রহ করে গ্রহন করে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। আর এক পরম সত্য, দাতা ও সর্বশক্তিমান সত্তার ওয়াদা যাতে নড়চড় হওয়ার অবকাশ নেই। সুতরাং নিশ্চয়তা বিধান করণার্থে এখানে ( على ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা ফরয বা অবশ্যকরণীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অথচ আল্লাহ্র উপর কোন কাজ ফরয বা ওয়াজিব হতে পারে না, তিনি কারো হুকুমের তোয়াক্কা করেন না। বরং এটি সম্পূর্ণ তার অনুগ্রহ। [ কুরতুবী ] কোন কোন মুফাসসির অবশ্য বলেছেন যে, এখানে ( على ) বা উপরে বলে ( من ) বা হতে বলা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সবার রিযক আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসে। [ কুরতুবী ]
[ ৩ ] আয়াতে উল্লেখিত ( مستقر ) এবং ( مستودع ) এর অর্থ, ( مستقر ) শব্দটির কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে, ১.
যমীনের বুকে অবস্থান স্থল। বা পিতার পিঠে অবস্থানকে। ২.
দিন বা রাতে আশ্রয় নেয়ার স্থান। আর ( مستودع ) শব্দটিরও কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে, ১.
মায়ের রেহেমে অবস্থান বা ডিমের মধ্যে অবস্থানকে। ২.
মৃত্যু হওয়ার স্থানকে। [ দেখুন, তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; সাদী ] এ ব্যাপারে এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ যখন কারো মৃত্যু কোন যমীনে লিখা থাকে তখন সে সেখানে যাওয়ার জন্য কোন না কোন প্রয়োজন অনুভব করবে । তারপর সে যখন সেখানে পৌছবে তখন তাকে মৃত্যু দেয়া হয়। আর কিয়ামতের দিন যমীন তাকে বের করে দিয়ে বলবে, ( هٰذَا ما اسْتَوْدَعْتَنِيْ ) অর্থাৎ এটা আমার কাছে আপনি আমানত রেখেছিলেন। [ মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ১/৪২, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকীঃ ৯৮৮৯ ] কালেমাদ্বয়ের আরো বিস্তারিত তাফসীর সূরা আলআন’আমের ৯৮ নং আয়াতে করা হয়েছে।
[ ৪ ] আয়াতে বর্ণিত সুস্পষ্ট কিতাব বলতে লাওহে মাহফুজকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বান্দার সমস্ত কর্মকাণ্ড সুস্পষ্ট কিতাবে লিখে নিয়েছেন এবং তার জ্ঞান থেকে এর সামান্যও গোপন থাকে না, এটা তিনি পবিত্র কুরআনে বারবার ঘোষণা করেছেন। [ দেখুন, সূরা আল-আনআমঃ৩৮, ৫৯, সূরা ইউনুসঃ ৬১ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তাআ’লা সংবাদ দিচ্ছেন যে, ছোট-বড় স্থলভাগে অবস্থানকারী এবং জলভাগে অবস্থানকারী সমস্ত মাখলুকের জীবিকা তাঁরই যিম্মায় রয়েছে। তিনিই ওগুলির চলা, ফেরা, আসা, যাওয়া, স্থির থাকা, মৃত্যুর স্থান, গর্ভাশয়ের মধ্যে অবস্থানের স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণভাবে অবহিত রয়েছেন। এটা মুজাহিদ ( রঃ ), ইবনু আব্বাস ( রাঃ ), যহ্হাক ( রঃ ) এবং একদল মনীষী বর্ণনা করেছেন। এখানে ইবনু আবি হা’তিম ( রঃ ) মুফাসসিরদের উক্তিগুলি উল্লেখ করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। এসব ঘটনা ঐ কিতাবে লিখিত আছে যা আল্লাহ তাআ’লার নিকট রয়েছে এবং ঐ কিতাবই এর ব্যাখ্যা দান করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী যে কোন প্রাণী রয়েছে এবং যে কোন পাখী তার ডানার সাহায্যে উড়ে থাকে, সবগুলিই তোমাদের মতো এক একটি জাতি, কোন কিছুই আমি কিতাবে লিখতে ছাড়ি নাই, অতঃপর সবকিছুকেই তাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত করা হবে ।” ( ৬: ৩৮ ) আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া কেউই তা জানে না, যা কিছু জলে ও স্থলে রয়েছে সেগুলির খবরও একমাত্র তিনিই জানেন, যে পাতা ঝরে পড়ে সে সংবাদও তিনিই রাখেন, যমীনের অন্ধকারে এমন কোন দানা নেই এবং আর্দ্র ও শুস্ক এমন কোন জিনিষ নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই ।” ( ৬: ৫৯ )
সূরা হুদ আয়াত 6 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
- আর আমি যে উহা বিলম্বিত করি, তা শুধু একটি ওয়াদার কারণে যা নির্ধারিত রয়েছে।
- নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি
- কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর।
- এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
- এরপর আল্লাহ যাদের প্রতি ইচ্ছা তওবার তওফীক দেবেন, আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
- সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে।
- যিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা, দয়াময়, কেউ তাঁর সাথে কথার অধিকারী হবে
- এবং আপনার পালনকর্তা, তিনি তো প্রবল পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।
- এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা হুদ ডাউনলোড করুন:
সূরা Hud mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Hud শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers