কোরান সূরা নাজ্ম আয়াত 62 তাফসীর
﴿فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا ۩﴾
[ النجم: 62]
অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর এবাদত কর। [সূরা নাজ্ম: 62]
Surah An-Najm in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Najm ayat 62
অতএব আল্লাহ্র প্রতি সিজদা করো এবং উপাসনা করো।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬২. তাই এককভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদা করো এবং তাঁর উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠভাবে ইবাদাত করো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অতএব তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ইবাদত কর। [১] [১] মুশরিক ও ( কুরআনকে ) মিথ্যাজ্ঞানকারীদেরকে তিরস্কার করার জন্য এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের আচরণ যখন এই যে, তারা কুরআনকে সত্য মানার পরিবর্তে তার মান খাটো ও তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে এবং আমার নবীর উপদেশ ও নসীহতের কোন প্রভাব তাদের উপর পড়ছে না, তখন তোমরা হে মুসলিমগণ! আল্লাহর সমীপে নত হয়ে ও তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্য প্রদর্শন করে পবিত্র কুরআনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা কর। সুতরাং এই আদেশ পালন করার জন্য নবী করীম ( সাঃ ) এবং সাহাবায়ে কিরাম ( রাঃ ) সিজদা করেন। এমনকি সেখানে সভায় উপস্থিত কাফেররাও সিজদা করে। যে কথা বহু হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। ( এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ'রাফের শেষ আয়াতের ৭:২০৬ টীকা দেখুন। )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অতএব আল্লাহকে সিজদা কর এবং তাঁর ‘ইবাদাত কর [ ১ ]। [ ১ ] এসব আয়াতের দাবি এই যে, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে বিনয় ও নম্রতা সহকারে নত হও এবং সেজদা কর ও একমাত্র তাঁরই ইবাদত কর। [ মুয়াসসার ] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, সূরা নাজমের এই আয়াত পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা করলেন এবং তার সাথে সব মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সেজদা করল। [ বুখারী: ৪৮৬২ ] অপর এক হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নজম পাঠ করত তেলাওয়াতের সেজদা আদায় করলে তার সাথে উপস্থিত সকল মুমিন ও মুশরিক সেজদা করল, একজন কোরাইশী বৃদ্ধ ব্যতীত। সে একমুষ্টি মাটি তুলে নিয়ে কপালে স্পর্শ করে বললঃ আমার জন্য এটাই যথেষ্ট। [ বুখারী: ১০৬৭, ১০৭০, মুসলিম: ৫৭৬ ] আবদুল্লাহ ইবনে-মসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এই ঘটনার পর আমি বৃদ্ধকে কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে ছিল উমাইয়া ইবনে খালাফ ৷ [ বুখারী: ৪৮৬৩ ] |
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৫৬-৬২ নং আয়াতের তাফসীর: ইনি অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ ( সঃ ) ভয় প্রদর্শক। তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী রাসূলদের রিসালাতের মতই। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ ( হে নবী সঃ )! তুমি বলঃ আমি নতুন রাসূল তো নই ।” ( ৪৬:৯ ) অর্থাৎ রিসালাত তো আমা হতে শুরু হয়নি। বরং আমার পূর্বে দুনিয়ায় বহু রাসূল আগমন করেছিলেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত আসন্ন। না এটাকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে, না এর নির্ধারিত সময়ের অবগতি আল্লাহ ছাড়া আর কারো আছে। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া এটা সংঘটনের নির্দিষ্ট সময় কারো জানা নেই।আরবী ভাষায় ( আরবী ) ওকে বলা হয়, যেমন একটি দল রয়েছে, যাদের মধ্যে একটি লোক কোন ভয়ের জিনিস দেখে দলের লোককে সতর্ক করে। অর্থাৎ ভয়ের খবর শুনিয়ে দেয়। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তিনি তো আসন্ন কঠোর শাস্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ককারী মাত্র ।” ( ৩৪:৪৬ )। হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় গোত্রকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ “ আমি তোমাদেরকে প্রকাশ্যভাবে সতর্ককারী বা ভয় প্রদর্শনকারী ।” অর্থাৎ যেমন কেউ কোন খারাপ জিনিস দেখে নেয় যে, ওটা তার কওমের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, তখন সে যে অবস্থায় রয়েছে ঐ অবস্থাতেই ভয়ে দৌড়িয়ে এসে হঠাৎ করে স্বীয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দেয় এবং বলেঃ “ দেখো, এই বিপদ আসছে, সুতরাং আত্মরক্ষার ব্যবস্থা কর ।” অনুরূপভাবে কিয়ামতের ভয়াবহ শাস্তিও জনগণের উদাসীনতার অবস্থায় তাদের একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তা হতে তাদেরকে সতর্ক করছেন। যেমন এর পরবর্তী সূরায় রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে ।” ( ৫৪:১ )। হযরত সাহল ইবনে সা'দ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তোমরা ছোট ছোট গুনাহগুলোকে ছোট ও তুচ্ছ জ্ঞান করা হতে বেঁচে থাকো । ছোট ছোট গুনাহগুলোর দৃষ্টান্ত এমন, যেমন একটি যাত্রীদল কোন জায়গায় অবতরণ করলো। সবাই এদিক ওদিক চলে গেল এবং কিছু কিছু করে জ্বালানী কাঠ নিয়ে আসলো। এখন যদিও প্রত্যেকের কাছে অল্প অল্প কাষ্ঠ রয়েছে, কিন্তু যখন ওগুলো একত্রিত করা হলো, তখন একটা বড় স্তুপ হয়ে গেল যার দ্বারা হাঁড়ি হাঁড়ি খাদ্য রান্না করা যাবে। অনুরূপভাবে ছোট ছোট পাপ জমা হয়ে ঢেরি হয়ে যায় এবং আকস্মিকভাবে ঐ পাপীকে পাকড়াও করা হয়। সুতরাং সে ধ্বংস হয়ে যায়।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাহল ইবনে সা'দ ( রাঃ ) হতেই বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ আমার এবং কিয়ামতের দৃষ্টান্ত এ দুটির মত ।” অতঃপর তিনি স্বীয় তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলিদ্বয়ের মাঝে কিছুটা ফাঁকা রেখে দেন। তারপর তিনি বলেনঃ “ আমার এবং কিয়ামতের দৃষ্টান্ত দু’টি ঘোড়ার মত ।” এরপর তিনি বলেনঃ “ আমার এবং আখিরাতের দিনের দৃষ্টান্ত ঠিক ঐ ব্যক্তির মত যাকে তার সম্প্রদায় নৈশ পাহারায় পাঠালো । অতঃপর সে যখন শত্রু সেনাবাহিনীকে একেবারে নিকটে চলে আসতে দেখলো তখন সে একটি টিলার উপর চড়ে তার কাপড় নেড়ে নেড়ে ইঙ্গিতে তার কওমকে সতর্ক করলো। তারপর রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ আমিও ঐরূপ ।” ( এই হাদীসের সাক্ষী হিসেবে আরো বহু হাসান ও সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে )এরপর আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের এ কাজের উপর ঘৃণা প্রকাশ করছেন যে, তারা কুরআন শ্রবণ করে বটে, কিন্তু তা হতে বিমুখ হয়ে যায় ও বেপরোয়া হয় এবং বিস্মিতভাবে ওর রহমতকে অস্বীকার করে বসে। আর হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ-উপহাস করে থাকে। তাদের উচিত ছিল যে, মুমিনদের মত ওটা শুনে কাঁদতো এবং উপদেশ গ্রহণ করতো। যেমন মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন যে, তারা আল্লাহর কালাম শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, সিজদায় পড়ে যায় এবং তাদের বিনয় বৃদ্ধি পায়।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) গানকে বলা হয়। এটা ইয়ামানী ভাষা। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতেই ( আরবী )-এর অর্থ বিমুখ হওয়া এবং অহংকার করাও বর্ণিত আছে। হযরত আলী ( রাঃ ) এবং হযরত হাসান ( রাঃ ) বলেন যে, এর অর্থ হলো উদাসীন।এরপর আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দিচ্ছেনঃ তোমরা একত্ববাদী ও অকপট হয়ে যাও। বিনয়ের সাথে তোমরা ভূমিতে লুটিয়ে পড়। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, সূরায়ে নাজমের সিজদার স্থলে নবী ( সঃ ) সিজদা করেন এবং তার সাথে মুসলমানরা, মুশরিক এবং দানব ও মানব সবাই সিজদা করে। ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেন)হযরত মুত্তালিব ইবনে আবি অদাআহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মক্কায় সূরায়ে নাজম পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সিজদা করেন এবং ঐ সময় তার কাছে যারা ছিল তারা সবাই সিজদা করে। বর্ণনাকারী মুত্তালিব ( রাঃ ) বলেনঃ “ আমি তখন আমার মাথা উঠালাম এবং সিজদা করলাম না ।” তখন পর্যন্ত মুত্তালিব ( রাঃ ) ইসলাম গ্রহণ করে নি। এরপরে যে কেউই এই সূরা তিলাওয়াত করতেন এবং যিনি শুনতেন তখন তিনিও তাঁর সাথে সিজদা করতেন। ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) এবং ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন)
সূরা নাজ্ম আয়াত 62 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয়
- আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে
- এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের উপর লা’নত করেছেন আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং। বস্তুতঃ আল্লাহ যার
- স্বর্ণ খচিত সিংহাসন।
- যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ, অতঃপর
- আর তারা বলবে-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।
- এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
- সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত কি হতে পারে?
- আলিফ-লাম-মীম।
- তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাজ্ম ডাউনলোড করুন:
সূরা Najm mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Najm শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers