কোরান সূরা কাহ্ফ আয়াত 65 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Kahf ayat 65 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা কাহ্ফ আয়াত 65 আরবি পাঠে(Kahf).
  
   

﴿فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا﴾
[ الكهف: 65]

অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। [সূরা কাহ্ফ: 65]

Surah Al-Kahf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Kahf ayat 65


তারপর তাঁরা আমাদের বান্দাদের মধ্যের একজন বান্দাকে পেলেন যাকে আমরা আমাদের তরফ থেকে করুণা দান করেছিলাম এবং যাঁকে আমাদের তরফ থেকে জ্ঞান শিখিয়েছিলাম।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৬৫. যখন তারা মাছ হারানোর জায়গায় পৌঁছালো তখন সেখানে তারা আমার এক নেক বান্দার সাক্ষাত পেলো। তিনি হলেন খাজির ( আলাইহিস-সালাম )। আমি তাঁকে বিশেষ রহমত দিয়েছি এবং আমার পক্ষ থেকে এমন এক জ্ঞান দিয়েছি যা আর কোন মানুষই জানে না। আর সেটি হলো এ ঘটনায় যা রয়েছে তা।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের;[১] যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ[২] দান করেছিলাম ও যাকে আমি আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। [৩] [১] এই দাস বা বান্দা হলেন খাযির। বহু সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এটা বর্ণিত হয়েছে। 'খাযির'-এর অর্থ সবুজ-শ্যামল। তিনি একদা সাদা যমীনের উপর বসলে, যমীনের সেই অংশটুকু তাঁর নীচে দিয়ে সবুজ হয়ে উঠে। এই কারণেই তাঁর নাম হয়ে যায় 'খাযির'। ( বুখারীঃ সূরা কাহ্ফের তাফসীর ) [২] رَحْمَةٌ এর অর্থ কোন কোন মুফাসসির নিয়েছেন বিশেষ অনুগ্রহ যা আল্লাহ তাঁর এই বিশিষ্ট বান্দাকে প্রদান করেছিলেন। তবে অধিকাংশ মুফাস্সির এর অর্থ নিয়েছেন নবুঅত। [৩] এটা মূসা ( আঃ )-এর কাছে যে জ্ঞান ছিল সেই নবুঅত ছাড়াও এমন সৃষ্টিগত বিষয়ের এমন জ্ঞান, যে জ্ঞান দানে মহান আল্লাহ কেবল খাযিরকেই ধন্য করেছিলেন এবং মূসা ( আঃ )-এর কাছেও এ জ্ঞান ছিল না। এটাকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করে কোন কোন সুফিপন্থীরা দাবী করে যে, আল্লাহ তাআলা নবী নন এমন কোন কোন লোককে, 'ইলমে লাদুন্নী' ( বিশেষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান ) দানে ধন্য করেন। আর এ জ্ঞান কোন শিক্ষক ছাড়াই কেবল আল্লাহর অপার দয়া ও করুণায় লব্ধ হয় এবং এই 'বাতেনী ইলম' ( গুপ্ত জ্ঞান ) শরীয়তের বাহ্যিক জ্ঞান -- যা কুরআন ও হাদীস আকারে বিদ্যমান তা -- থেকে ভিন্ন হয়, বরং কখনো কখনো তার বিপরীত ও বিরোধীও হয়। কিন্তু এ দলীল এই জন্য সঠিক নয় যে, তাঁকে যে কিছু বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মহান আল্লাহ নিজেই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অথচ অন্য কারো জন্য এ ধরনের কথা বলা হয়নি। যদি এটাকে ব্যাপক করে দেওয়া হয়, তবে প্রত্যেক যাদুকর-ভেল্কিবাজ এই ধরনের দাবী করতে পারে। তাই তো সুফিবাদীদের মাঝে এই দাবী ব্যাপকহারে বিদ্যমান। তবে এই ধরনের দাবীর কোনই মূল্য নেই।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


এরপর তারা সাক্ষাত পেল আমাদের বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমরা আমাদের কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমাদের কাছ থেকে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান []। [] কুরআনুল কারামে ঘটনার মূল ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি; বরং عَبْدً امِّنْ عِبَادِنَآ ( আমার বান্দাদের একজন ) বলা হয়েছে। বুখারীর হাদীসে তার নাম “ খাদির উল্লেখ করা হয়েছে । খাদির অর্থ সবুজ-শ্যামল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নামকরণের কারণ প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি যেখানে বসতেন, সেখানেই ঘাস উৎপন্ন হয়ে যেত, মাটি যেরূপই হোক না কেন। [ বুখারীঃ ৩৪০২ ] খাদির কি নবী ছিলেন, না ওলী ছিলেন, এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে গ্রহণযোগ্য আলেমদের মতে, খাদির ‘আলাইহিস সালামও একজন নবী। [ ইবন কাসীর ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৬০-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত মুসাকে ( আঃ ) বলা হয় যে, দই সমুদ্রের মিলন স্থলের ( মোহনার ) পার্শ্বে আল্লাহ তাআলার এমন এক বান্দা রয়েছে তার ঐ জ্ঞান রয়েছে যেই জ্ঞান হযরত মূসার ( আঃ ) নেই। তৎক্ষণাৎ হযরত মূসা ( আঃ ) তার সাথে সাক্ষাৎ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। সুতরাং তিনি তাঁর সঙ্গীকে বলেনঃ “ আমি তো সেখানে না পৌঁছা পর্যন্ত থামবো না এবং বিশ্রাম গ্রহণ করবো না, বরং যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবো ।” বর্ণিত আছে যে, ঐ দুটি সমুদ্রের একটি হচ্ছে পূর্ব পারস্য উপসাগর এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে পশ্চিম রোম সাগর। এই স্থানটি তানজা'র পার্শ্বে পশ্চিমা শহরগুলির শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ আমাকে যদি যুগ যুগ ধরেও চলতে হয় তবুও কোন ক্ষতি নেই । বলা হয়েছে যে, কায়েসের অভিধানে ( আরবী ) বছরকে বলা হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) দ্বারা আশি বছর বুঝানো হয়েছে। হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) সত্তর বছর বলেছেন। হযরত ইবুন আব্বাস ( রাঃ ) এর অর্থ যুগ বলেছেন। হযরত মূসাকে ( আঃ ) আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছিলেনঃ তুমি লবন মাখানো একটি ( মর ) মাছ সাথে নিবে। যেখানে ঐ মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানে তুমি আমার ঐ বান্দার সাক্ষাৎ পাবে। মাছ সঙ্গে নিয়ে তাঁরা দুজন চলতে শুরু করেন এবং চলতে চলতে দুই সমদ্রের মিলন স্থলে পৌঁছে গেলেন। সেখানে নহরে হায়াত ছিল। সেখানে তারা দুজন শুয়ে পড়ায় মাছটি নড়ে ওঠে। মাছটি তার সঙ্গী হযরত ইউশার ( আঃ ) থলেতে রাখা ছিল। ওটা সমুদ্রের ধারেই ছিল। মাছটি সমুদ্রে লাফিয়ে পড়বার জন্যে ছটফট করতে থাকে। তখন হযরত ইউশা ( আঃ ) জেগে ওঠেন। মাছটি তার চোখের সামনে দিয়ে পানিতে নেমে যায় এবং পানিতে সোজাসুজিভাবে সুড়ঙ্গ হতে থাকে। স্থলে যেমনভাবে সুড়ঙ্গ হয় ঠিক তেমনিভাবে মাছটির গমনের পথে সুড়ঙ্গ হয়ে যায়। পানি এদিক-ওদিক খাড়া হয়ে যায় এবং ঐ সুড়ঙ্গটি সম্পূর্ণরূপে খোলা থাকে। পাথরের মত পারি মধ্যে ছিদ্র হয়ে যায়। মাছটি যেখান দিয়ে গিয়েছে তথাকার পানি পাথরের মত হয়ে গেছে এবং সুড়ঙ্গ হয়ে গেছে। মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক ( রঃ ) মারফুরূপে হাদীস এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ দুনিয়া সৃষ্টির প্রথম থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত পানি এভাবে জমাট হয়ে যায় নাই । যেমন ভাবে জমাট হয়েছিল ঐ মাছটির গমন পথের আশে পাশের পানি।” স্থল ভাগের সুড়ঙ্গের মতই পানির এই সুড়ঙ্গের চিহ্ন হযরত মূসার ( আঃ ) সেখানে ফিরে আসা পর্যন্ত বাকী থেকে যায়। ঐ চিহ্ন দেখেই হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ আমরা তো এরই সন্ধানেই ছিলাম ।” মাছটির কথা ভুলে গিয়ে তাঁরা দুজন সামনের দিকে এগিয়ে যান। এখানে একথাটি স্মরণ রাখার বিষয় যে, একটি কাজ দু’জনের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হয়েছে। মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলেন শুধু হযরত ইউশা ( আঃ ) অথচ বলা হয়েছে যে, তারা দু'জন ভুলে গেলেন। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ এ দু’টি সমুদ্রের মধ্য হতে মুক্তা ও প্রবাল-রত্মসমূহ বের হয়ে থাকে ।" ( ৫৫:২২ ) অথচ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, মণিমুক্তা শুধু লবণাক্ত পানির সমুদ্র হতেই বের হয়।কিছু পথ অতিক্রম করার পর হযরত মূসা ( আঃ ) তার সঙ্গীকে বললেনঃ “ আমাদের প্রাতঃরাশ নিয়ে এসো । আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারা এই ক্লান্তি অনুভব করেছিলেন তাদের গন্তব্য স্থান অতিক্রম করার পর। গন্তব্য স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাঁরা কোন কান্তি অনুভব করেন নাই। ঐ সময় তাঁর সঙ্গীর মাছের কথা মনে পড়ে যায়। তাই, তিনি হযরত মূসাকে ( আঃ ) বলেনঃ “ যখন আমরা শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম । তখন আমি মাছের ঐ কথা বর্ণনা করতে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নিয়ে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল। হযরত ইবনু মাসউদের ( রাঃ ) কিরআতে ( আরবী ) রয়েছে। হযরত ইউশার ( আঃ ) একথা শুনে হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ আমরা তো ঐস্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম ।” অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ সেখানে তারা আমার বান্দাদের মধ্যে একজন বান্দার সাক্ষাৎ পেলো, যাকে আমি আমার নিকট থেকে অনুগ্রহ দান করেছিলাম এবং আমার নিকট হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। আল্লাহ তাআলার এই বান্দা হলেন হযরত খিযুর ( আঃ )। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর ( রাঃ ) হরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাসকে ( রাঃ ) বলেনঃ “ নাউফ নামক লোকটির ধরণা এই যে, হযরত খিযুরের ( আঃ ) সাথে সাক্ষাৎকারী মূসা বানী ইসরাঈলের মূসা ( আঃ ) ছিলেন না ।” একথা শুনে হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ আল্লাহর ঐ শত্রু মিথ্যাবাদী । আমি হযরত উবাই ইবনু কা'ব ( রাঃ ) থেকে শুনেছি যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) বলতে শুনেছেনঃ “ একদা হযরত মূসা ( আঃ ) বাণী ইসরাঈলের মধ্যে খুৎবা দিচ্ছিলেন । ঐ সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়ঃ ‘সবচেয়ে বড় আলেম কে?" তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “ আমি” তিনি জবাবে আল্লাহ জানেন” একথা না বলায় আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন । তৎক্ষণাৎ তিনি তাঁর কাছে ওয়াহী নাযিল করেনঃ “ আমার এমন এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়েও বড় আলেম ।” তখন হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! আমি তার কাছে কিরূপে পৌছতে পারি?” উত্তরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দেনঃ “তুমি একটি মাছ সঙ্গে নাও এবং ওটা থলেতে রেখে দাও । যেখানে এ মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই তুমি আমার ঐ বান্দার সাক্ষাৎ লাভ করবে। এই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত মূসা ( আঃ ) হযরত ইউশা ইবনু নূনকে ( আঃ ) সাথে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। একটি শিলাখণ্ডের পাশে গিয়ে মাথাটি ওর উপর রেখে কিছুক্ষণের জন্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এদিকে থলের মধ্যে মাছটি লাফাতে শুরু করে এবং এমনভাবে সমুদ্রে নেমে যায় যেমন কেউ সুড়ঙ্গ দিয়ে যমীনের মধ্যে নেমে থাকে। আল্লাহ তাআলা পানির প্রবাহ ও চলাচল বন্ধ করে দেন এবং তাকের মত সমুদ্রের মধ্যে ঐ সুড়ঙ্গটি বাকী থেকে যায়। তিনি জেগে উঠলে তার সঙ্গী হযরত ইউশা ( আঃ ) তাঁকে মাছের ঐ ঘটনাটি বলতে ভুলে যান। অতঃপর তারা সেখান থেকে চলতে শুরু করেন। দিন শেষে সারা রাত্রি তাঁরা চলতে থাকেন। হযরত মূসা ( আঃ ) ক্লান্তি ও ক্ষুধ্য অনুভব করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে যেখানে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই জায়গা অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি ক্লান্তি মোটেই অনুভব করেন নাই। তিনি তার সঙ্গীর কাছে নাশতা চান এবং ক্লান্তির কথা বলেন। তখন তাঁর সঙ্গী তাকে বলেনঃ “ যখন আমরা পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এবং ঐ সময় আমি মাছটিকে ভুলে গিয়েছিলাম এবং ঐ কথা আপনার কাছে বর্ণনা করতে শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল । সেখানে মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়ে তাতে নেমে গিয়েছিল। সমুদ্রে তার জন্যে সুড়ঙ্গ হয়ে গিয়েছিল।” তখন হযরত মূসা ( আঃ ) তাকে বলেনঃ “ আমরা ঐ স্থানটিরই সন্ধানে ছিলাম ।” অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। ঐ পাথরটির নিকট পৌঁছে দেখেন সেখানে একটি লোক কাপড় জড়িয়ে বসে রয়েছেন। হযরত মূসা ( আঃ ) তাকে সালাম দেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেনঃ “ এই ভূখণ্ডে এই সালাম কেমন?" তিনি বলেনঃ আমি হলাম মুসা ( আঃ ) তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “ বানী ইসরাঈলের মূসা ( আঃ )?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হাঁ, আমি আপনার কাছে এই জন্যেই এসেছি যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে আপনি যেসব ভাল কথা শিখেছেন তা আমাকে শিখিয়ে দিবেন ।” তিনি বললেনঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না । কারণ, আমার যে জ্ঞান রয়েছে আপনার তা নেই এবং আপনার যে জ্ঞান রয়েছে তা আমার নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের দু’জনকে পৃথক পৃথক জ্ঞান দান করেছেন।” তখন হযরত মূসা ( আঃ ) বললেনঃ “ ইনশাআল্লাহ আপনি দেখবেন যে, আমি ধৈর্য ধারণ করবো । আপনার কোন কাজেরই আমি বিরুদ্ধাচরণ করবো না।” হযরত খিয়র ( আঃ ) তখন তাকে বললেনঃ “ আচ্ছা, আপনি যদি আমার সাথে থাকতেই চান, তবে আমাকে নিজে কোন কথা জিজ্ঞেস করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি আপনাকে জানিয়ে দেই । এভাবে কথা করে নিয়ে তারা দুজন চলতে শুরু করলেন। নদীর তীরে একটি নৌকা ছিল। মাঝিকে হযরত খিয়র ( আঃ ) তাঁদেরকে নৌকায় নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। মাঝি হযরত খিরকে ( আঃ ) চিনে নেয় এবং বিনা ভাড়াতেই তাদেরকে নৌকায় উঠিয়ে নেয়। নৌকায় চড়ে তারা কিছু দূর গিয়েছেন এমতাবস্থায় হযরত মূসা ( আঃ ) দেখেন যে, হযরত খিষ্যর ( আঃ ) নীরবে কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা ফাড়তে রয়েছেন। এ দেখেই হযরত মূসা ( আঃ ) তাকে বললেনঃ “ আপনি এ করেন কি? মাঝি তো আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছে যে, আমাদেরকে বিনা ভাড়ায় নৌকায় উঠিয়েছে । অরি আপনি তার নৌকা ছিদ্র করতে রয়েছেন! এর ফলে তো নৌকার সব আরোহী ডুবে যাবে। এতো বড়ই অন্যায় কাজ।” জবাবে হযরত খ্যির ( আঃ ) তাকে বললেনঃ “ দেখুন ! আমি তো আপনাকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না?” হযরত মূসা ( আঃ ) তখন ওযর পেশ করে বললেনঃ “ আমার ত্রুটি হয়ে গেছে । ভুল বশতঃ আমি প্রশ্ন করে বসেছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি কঠোর হবেন না।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ সত্যিই তাঁর প্রথম ত্রুটিটি ভুল বশতঃই ছিল। বর্ণিত আছে যে, ঐ নৌকাটির একটি তক্তার উপর একটি পাখি এসে বসে এবং পানিতে চঞ্চ ডুবিয়ে পানি নিয়ে উড়ে যায়। ঐ সময়। হযরত খিযুর ( আঃ ) হযরত মূসাকে ( আঃ ) বলেনঃ “ হে মূসা ( আঃ ) আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় আমার ও আপনার জ্ঞান ততটুকু, এইপাখীটির চঞ্চুতে ওঠা পানিটুকু সমুদ্রের সমস্ত পানির তুলনায় যতটুকু ।" অতঃপর নৌকাটি তীরে লেগে যায়। নৌকা থেকে নেমে তাঁরা চলতে থাকেন। পথে কতকগুলি শিশু খেলা করছিল। হযরত খি ( আঃ ) ওদের একজনকে ধরে এমনভাবে তার গলা মোচড় দেন যে, সাথে সাথেই সে মারা যায়। এতে হযরত মূসা ( আঃ ) হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন এবং তাকে বলে ফেলেনঃ “ করলেন কি? অন্যায়ভাবে আপনি এই শিশুটিকে মেরে ফেললেনঃ আপনি বড়ই অপরাধমূলক কাজ করলেন?” উত্তরে হযরত খ্যির ( আঃ ) তাকে বললেনঃ “আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না?' এবার হযরত খ্যির ( আঃ ) পূর্বাপেক্ষা বেশী কঠোর হলেন । তখন হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁকে বললেনঃ “ আচ্ছা, এরপরে যদি আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে আপনার সঙ্গে রাখবেন না এ অধিকার আমি আপনাকে দিলাম । আমার ওযর আপত্তির চূড়ান্ত হয়েছে।” আবার তারা চলতে থাকেন। তারা এক গ্রামে গিয়ে পৌঁছেন। তাঁরা ঐ গ্রামবাসীর কাছে খেতে চাইলে তারা তাদের আতিথেয়তা করতে পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করে। অতঃপর তারা তথায় এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পান।। হযরত খিযর ( আঃ ) ওটাকে সুদৃঢ় করে দেন। হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁকে বলেনঃ “ আমরা তাদের অতিথি হতে চাইলাম, কিন্তু তারা আমাদের আতিথেয়তা করলো না । এর পরেও যখন আপনি তাদের এই কাজটি করে দিলেন তখন এর জন্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন?" হযরত খির ( আঃ ) তখন বললেনঃ “ এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হলো । যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারনে নাই আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবো। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ যদি হযরত মূসা ধৈর্য অবলম্বন করতেন, তবে আল্লাহ তাদের দুজনের আরো বহু কথা আমাদের সামনে বর্ণনা করতেন।" হযরত ইবনু আব্বাসের ( রাঃ ) কিরআতে ( আরবী ) এর স্থলে ( আরবী ) রয়েছে এবং ( আরবী ) এর পরে ( আরবী ) শব্দটিও রয়েছে। আর ( আরবী ) এরপরে ( আরবী ) শব্দও আছে। অন্য সনদেও এই হাদীসটি বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছে যে, ঐ পাথরটির কাছে হযরত মূসা ( আঃ ) থেমে যান। সেখানে একটি প্রস্রোবণ ছিল যার নাম ছিল নহরে হায়াত। ওর পানি যার উপর পড়তো সে জীবিত হয়ে যেতো। তাতে ঐ পাখিটির পানি নেয়ার পর হযরত খিযরের ( আঃ ) নিম্নের উক্তিটিও বর্ণিত আছে। তিনি বলেছিলেনঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আমার, আপনার এবং সমস্ত মাখলুকের জ্ঞান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের তুলনায় ততুটুকু, এই পাখিটির চঞ্চুর পানি এই সমুদ্রের তুলনায় যতটুকু ( শেষ পর্যন্ত )"সহীহ বুখারীর আর একটি হাদীসে আছে যে, হযরত সাঈদ জুবাইর ( রাঃ ) বলেনঃ একদা আমি হযরত ইবনু আব্বাসের ( রাঃ ) বাড়ীতে তার কাছে ছিলাম। তিনি বলেনঃ “ কারো কিছু প্রশ্ন করার থাকলে আমাকে করতে পারো । আমি বললামঃ আল্লাহ আমাকে আপনার উপর উৎসর্গ করুন। কুফার একজন বক্তা আছে যার নাম নাউফ। তারপর পূর্ণ হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসটির মতই বর্ণনা করা হয়। তাতে রয়েছে যে, হযরত মূসার ( আঃ ) ঐভাষণে চক্ষুগুলি অশ্রুসিক্ত হয়েছিল এবং অন্তরগুলি কোমল হয়ে পড়েছিল। তাঁর বিদায় বেলায় একটি লোক তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “ সারা ভূ-পৃষ্ঠে আপনার চেয়ে বড় আলেম আর কেউ আছে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “না ।” তাঁর এই জবাবে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। কেননা, তিনি এর সঠিক জ্ঞান আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরিয়ে দেন নাই। তাতে রয়েছে যে, হযরত মূসা ( আঃ ) লক্ষণ দেখতে চাইলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেনঃ “ একটি মরা মাছ তোমার সাথে রাখো । যেখানে মাছটি জীবিত হয়ে যাবে সেখানে তুমি ঐ জ্ঞানী ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে।” মহান আল্লাহর এই নিদের্শ অনুযায়ী তিনি একটি মরা মাছ নিয়ে থলেতে রেখে দেন এবং স্বীয় সঙ্গীকে বলেনঃ “ তোমার কাছে শুধু এটুকুই যে, যেখানে এই মাছটি তোমার নিকট থেকে চলে যাবে সেখানে আমাকে খবর দেবে ।" তাঁর সঙ্গী বললেনঃ “ এতো খুবই সহজ কাজ ।” তাঁর নাম ছিল ইউশা ইবনু নূন ( আঃ )( আরবী ) দ্বারা তাঁকেই বুঝানো হয়েছে।ঐ দুই বুযর্গ ব্যক্তি একটি গাছের নীচে সিক্ত জায়গায় অবস্থান করছিলেন। হযরত মূসাকে ( আঃ ) ঘূমে ধরে বসে এবং হযরত ইউশা ( আঃ ) জেগে থাকেন। এমন সময় মাছটি লাফিয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন যে, এখন তাকে জাগানো ঠিক নয়। ঐ হাদীসে এও রয়েছে যে, মাছটি পানিতে নেমে যাওয়ার সময় পানিতে যে সুড়ঙ্গ হয়েছিল সেটাকে হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আমর ( রাঃ ) নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও ওর পার্শ্ববর্তী দু’টি অঙ্গুলীকে বৃত্ত করে দেখিয়ে দেনঃ এই ভাবে হয়েছিল যেভাবে পাথরে হয়ে থাকে। ফিরবার পথে সমুদ্র তীরে বিছানো সবুজগদীর উপর হযরত খিয়রকে ( আঃ ) তিনি দেখতে পান। ঐ সময় তিনি গায়ে চাদর জড়িয়ে ছিলেন। হযরত মূসার ( আঃ ) সালামের পর তিনি কথা বলেন। ঐ হাদীসে এও রয়েছে যে, হযরত খ্যির ( আঃ ) হযরত মূসাকে ( আঃ ) বলেছিলেনঃ “ আপনার কাছে তো তাওরাত বিদ্যমান । রয়েছে এবং আকাশ থেকে আপনার নিকট ওয়াহী আসছে, এটা কি যথেষ্ট নয়? আমার জ্ঞান তো আপনার জন্যে উপযুক্ত নয় এবং আপনাকে জ্ঞান দত্রে যোগ্যতাও আমার নেই। তাতে আছে যে, নৌকাটির তক্তা ভেঙ্গে নিয়ে তাতে তিনি একটি তাঁত বেঁধে দেন। প্রথম বারের প্রশ্নটি হযরত মূসার ( হঃ ) ভুল বশতঃই ছিল। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল শর্ত হিসেবে। আর তৃতীয় প্রশ্নটি তিনি পৃথক হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করেই করেছিলেন। তাতে আছ যে, যে ছেলেগুলি খেলা করছিল তাদের মধ্যে একটি ছেলে ছিল কাফির ও বুদ্ধিমান। তাকে হযরত খিযুর ( আঃ ) লটকিয়ে দিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। একটি কিরআতে ( আরবী ) ও রয়েছে। ( আরবী ) এর স্থলে ( আরবী ) ও আছে। ঐ অত্যাচারী বাদশাহর নাম ছিল হাদাদ ইবনু বাদাদ। যে ছেলেটিকে হত্যা করা হয়েছিল তার নাম ছিল হায়সূর। বর্ণিত আছে যে, ঐ ছেলেটির বিনিময়ে একটি মেয়ে দান করা হয়। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা ( আঃ ) ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেনঃ আল্লাহ তাআলাকে ও তাঁর আমরকে আমার চেয়ে বেশী কেউ জানে না ( শেষ পর্যন্ত )”ঐ নাউফ ছিল হযরত কাবের ( রাঃ ) স্ত্রীর ( পূর্ব স্বামীর ) ছেলে। তার উক্তি এই যে, এই আয়াতে যে মূসার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তিনি ছিলেন মূসা ইবনু মীশা। আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত মূসা ( আঃ ) মহান আল্লাহ্ব নিকট প্রার্থনা করেছিলেনঃ “ হে আল্লাহ! আপনার বান্দাদের মধ্যে আমার চেয়ে বড় আলেম কেউ যদি থেকে থাকেন তবে আমাকে অবহিত করুন ।” ঐ। হাদীসে আছে যে, লবণ মাখানো মাছ তিনি নিজের সঙ্গে রেখেছিলেন। তাতে রয়েছে যে, হযরত খির ( আঃ ) হযরত মূসাকে ( আঃ ) বলেছিলেনঃ “ আপনি এখানে কেন এসেছেন? বাণী ইসরাঈলের ব্যাপারেই তো আপনার ব্যস্ততা রয়েছে?” তাতে আছে যে, গুপ্ত কথা হযরত খিয়রকে ( আঃ ) জানানো হতো । তাই, তিনি হযরত মূসাকে ( আঃ ) বলেছিলেনঃ “ আপনি আমার কাছে থাকতে পারেন না । কেননা, আপনি তো বাহ্যিক বিষয় দেখেই ফায়সালা করবেন। আর আমি গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অবহিত রয়েছি।” সুতরাং তিনি হযরত মূসার ( আঃ ) সঙ্গে শর্ত করলেনঃ “ উল্টো যা কিছুই আপনি দেখুন না কেন, কিছুই বলতে পারেন না যে পর্যন্ত না আমি বলে দেই ।” বর্ণিত আছে যে, যে নৌকায় তারা আরোহণ করেছিলেন ঐ নৌকাটি ছিল সবচেয়ে দৃঢ়, উত্তম ও সুন্দর। যে শিশুটিকে তিনি হত্যা করেছিলেন সে ছিল অতুলনীয় শিশু। দেখতে ছিল খুবই সুন্দর এবং খুবই বুদ্ধিমানও ছিল। হযরত খ্যির ( আঃ ) তাকে ধরে পাথরে তার মাথা কুচলিয়ে দিয়ে হত্যা করেন। এ দেখে হযরত মূসা ( আঃ ) আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হন যে, এমন একটি নিস্পাপ শিশুকে বিনা কারণে হযরত খি ( আঃ ) নির্মমভাবে হত্যা করলেন। পতনোন্মুখ প্রাচীরটিকে দেখে হযরত খির ( আঃ ) থমকে দাড়ান। প্রথমে ওটাকে নিয়মিতভাবে ফেলে দেন। তারপর সুন্দরভাবে ওটাকে তৈরী করে দেন। এতে হযরত মূসা ( আঃ ) বিরক্তি প্রকাশ করেন, এই ভেবে যে, এটা যেন নিজের খেয়ে অপরের মহিষ চরানোরই নামান্তর। হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ঐ দেয়ালের নীচের গুপ্তধন ছিল শুধু ইলম।আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, যখন হযরত মূসা ( আঃ ) ও তার কওম মিসরের উপর জয়যুক্ত হন তখন তারা এখানে এসে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। তখন হযরত মূসাকে ( আঃ ) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেনঃ “ তোমার কওমকে আল্লাহর নিয়ামত সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও ।" এই নিদের্শ অনুযায়ী হযরত মূসা ( আঃ ) ভাষণ দেয়ার জন্যে দাড়িয়ে যান এবং তাঁর কওমের সামনে মহান আল্লাহর নিয়ামতরাজির বর্ণনা শুরু করে দেন। তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ আল্লাহ তাআ'লা তোমাদেরকে এই নিয়ামত দান করেছেন । ফিরাউন ও তার লোক লস্কর থেকে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন এবং তোমাদের ঐ শত্রুদেরকে পানিতে নিমজ্জিত করেছেন। তরিপর তোমাদেরকে তাদের যমীনের মালিক বানিয়েছেন। তোমাদের বীর সাথে তিনি কথা বলেছেন এবং তাঁকে নিজের জন্যে পছন্দ করেছেন। তিনি তোমাদের সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়েছেন। তোমাদের নবী সমস্ত দুনিয়াবাসী। হতে উত্তম।" মোট কথা, বেশ জোরে শোরে আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতরাজি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। তখন বাণী ইসরাঈলের একজন লোক তাকে বলেঃ “ আপনি সবই সত্য কথাই বললেন । হে নবী ( আঃ )! দুনিয়ায় আপনার চেয়ে বড় আলেম আর কেউ আছে কি?” তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে ফেলেনঃ “ না ।” তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈলকে ( আঃ ) তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন এবং তার মাধ্যমে বলেনঃ “ হে মূসা ( আঃ )! আমি আমার ইলম কোথায় কোথায় রাখি তা তুমি জান কি? নিশ্চয়ই সমুদ্রের ধারে একজন লোক রয়েছে যে তোমার চেয়েও বড় আলেম ।" হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ এর দ্বারা হযরত খিকে ( আঃ ) বুঝানো হয়েছে। হযরত মূসা ( আঃ ) তখন আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “ হে আল্লাহ আমি তাকে দেখতে চাই ।" তার কাছে ওয়াহী আসলোঃ “ তুমি সমুদ্রের ধারে চলে যাও । সেখানে একটা মাছ পাবে তা তুমি নিয়ে নেবে। ঐ মাছটি তুমি তোমার সঙ্গীর কাছে সমর্পণ করবে। তারপর সমুদ্রের ধার দিয়ে চলতে থাকবে। যেখানে তুমি মাছটিকে ভুলে যাবে এবং ওটা তোমার নিকট থেকে হারিয়ে যাবে সেখানে তুমি আমার ঐ বান্দাকে পাবে।” হযরত মূসা ( আঃ ) চলতে চলতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লেন তখন তিনি তার গোলাম সঙ্গীটিকে মাছের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। সে উত্তরে বললোঃ “ যে পথরের কাছে আমরা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেখানে আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম এবং আপনার কাছে ওটা বর্ণনা করা হতেও শয়তান আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল । আমি দেখলাম যে, মাছটি যেন সুড়ঙ্গ বানিয়ে নিয়ে সমুদ্রে গমন করছিল।" হযরত মূসা ( আঃ ) একথা শুনে খুবই বিস্মিত হন। ফিরে গিয়ে যখন সেখানে পৌঁছেন তখন দেখতে পান যে, মাছটি পানির মধ্যে যেতে শুরু করেছে। হযরত মূসা ( আঃ ) স্বীয় লাঠি দ্বারা পানি ফেড়ে ফেড়ে মাছটির পিছনে পিছনে চলতে থাকেন। মাছটি যেখান দিয়ে যাচ্ছিল সেখানকার দুদিকের পানি পাথরে পরিণত হচ্ছিল। এটা দেখেও আল্লাহর নবী ( আঃ ) অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হন। মাছটি তাকে একটি উপদ্বীপে নিয়ে যায় ( শেষ পর্যন্ত )।হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) ও হুররা ইবনু কায়েসের মধ্যে মতানৈক্য ছিল যে, মূসার ( আঃ )( শিক্ষাদাতা ) সঙ্গীটি কে ছিলেন?" হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) বলতেন যে, তিনি ছিলেন হযরত খিষ্যর ( আঃ )। ঐ সময়েই হযরত উবাই ইবনু কা'ব ( রাঃ ) তাঁর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) তাঁকে ডেকে নিয়ে তাদের মতানৈক্যের কথা বলেন। তিনি তখন রাসূলুল্লাহ( সঃ ) মুখে শোনা হাদীসটি বর্ণনা করেন যা উপরে বর্ণিত হাদীসটির প্রায় অনুরূপ। তাতে প্রশ্নকারী লোকটির প্রশ্নের ধারা ছিল নিম্নরূপঃ “ঐ ব্যক্তির অস্তিত্বও কি আপনার জানা আছে যে আপনার চেয়েও বেশী জ্ঞানী?”

সূরা কাহ্ফ আয়াত 65 সূরা

فوجدا عبدا من عبادنا آتيناه رحمة من عندنا وعلمناه من لدنا علما

سورة: الكهف - آية: ( 65 )  - جزء: ( 15 )  -  صفحة: ( 301 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. অপরাধীরা আগুন দেখে বোঝে নেবে যে, তাদেরকে তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে
  2. ফেরাউন গোত্রের এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে
  3. হে নবী, তাদেরকে বলে দাও, যারা তোমার হাতে বন্দী হয়ে আছে যে, আল্লাহ যদি তোমাদের
  4. নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা-তাঁর এবাদত কর, এটাই হলো সরল পথ।
  5. অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে।
  6. এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ূ,
  7. যা আছে এক গোপন কিতাবে,
  8. আমি যদি এমন বায়ু প্রেরণ করি যার ফলে তারা শস্যকে হলদে হয়ে যেতে দেখে, তখন
  9. মূসা বলল, তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরও পালনকর্তা।
  10. অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তা˦#2503;দরকে

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা কাহ্ফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Kahf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Kahf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত কাহ্ফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Friday, November 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers