কোরান সূরা আনআম আয়াত 65 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Anam ayat 65 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আনআম আয়াত 65 আরবি পাঠে(Anam).
  
   

﴿قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَىٰ أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ﴾
[ الأنعام: 65]

আপনি বলুনঃ তিনিই শক্তিমান যে, তোমাদের উপর কোন শাস্তি উপর দিক থেকে অথবা তোমাদের পদতল থেকে প্রেরণ করবেন অথবা তোমাদেরকে দলে-উপদলে বিভক্ত করে সবাইকে মুখোমুখী করে দিবেন এবং এককে অন্যের উপর আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। দেখ, আমি কেমন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিদর্শনাবলী বর্ণনা করি যাতে তারা বুঝে নেয়। [সূরা আনআম: 65]

Surah Al-Anam in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anam ayat 65


বলো -- ''তিনি ক্ষমতাশীল তোমাদের উপরে শাস্তি আরোপ করতে তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে, অথবা তোমাদের দিশাহারা করতে পারেন দলাদলি করিয়ে, আর তোমাদের একদলকে ভোগ করাতে পারেন অন্য দলের নিপীড়ন।’’ দেখো, কিরূপে আমরা নির্দেশসমূহ নানাভাবে বর্ণনা করি যেন তারা বুঝতে পারে!


Tafsir Mokhtasar Bangla


৬৫. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে সক্ষম যে, তিনি তোমাদের নিকট তোমাদের উপর থেকে পাথর, বজ্র ও তুফানের আযাব পাঠাতে পারেন অথবা নিচ থেকে ভ‚মি ধ্বস ও ভ‚কম্পন কিংবা তোমাদের অন্তরগুলোর মাঝে ভিন্নতা সৃষ্টি করতে পারেন। তখন তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে একে অপরকে হত্যা করবে। হে রাসূল! আপনি একটু ভেবে দেখুন, আমি কীভাবে বিভিন্ন দলীল ও অকাট্য প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে তাদের জন্য উপস্থাপন করছি। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, আপনার আনীত বিষয় সত্য আর তাদের নিকট থাকা সব বাতিল।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


বল, ‘তোমাদের ঊর্ধ্বদেশ[১] অথবা পদতল[২] হতে শাস্তি প্রেরণ করতে, তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং এক দলকে অপর দলের নিপীড়নের আস্বাদ গ্রহণ করাতে তিনিই সক্ষম।’[৩] দেখ, কিরূপ বিভিন্ন প্রকারে আয়াতসমূহ বিবৃত করি; যাতে তারা অনুধাবন করে। [১] অর্থাৎ, আসমান হতে। যেমন, অতি বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, শিলাবৃষ্টি, বজ্রাঘাত দ্বারা আযাব কিংবা ( উচ্চশ্রেণী ) শাসকদের পক্ষ হতে যুলুম-অত্যাচার।[২] যেমন, ভূমি ধস, বান-বন্যা; যাতে সব কিছুই ডুবে যায়। অথবা অর্থ হল, ( নিম্নশ্রেণী ) ক্রীতদাস ও ভৃত্য-চাকরদের তরফ হতে আযাব। তাদের আন্তরিকতাহীন ও বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাওয়া।[৩] يَلْبِسَكُمْ أَي: يَخْلُطَ أَمْرَكُمْ অর্থাৎ, তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপকে এমন গোলমেলে ও সন্দিগ্ধ করে দেবেন যে, তার কারণে তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। وَيُذِيْقُ، أَي: يَقْتُلُ بَعْضُكُمْ بَعْضًا فَتُذِيْقَ كُلُّ طَائِفَةٍ الأخرَى أَلَمَ الْحَرْبِ অর্থাৎ, তোমাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে। এইভাবে প্রত্যেক দল অপর দলকে যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করাবে। ( আয়সারুত্ তাফাসীর ) হাদীসে এসেছে, নবী করীম ( সাঃ ) বলেছেন যে, " আমি আল্লাহ তাআলার কাছে তিনটি দু'আ করি। ( ক ) আমার উম্মতকে ডুবিয়ে যেন ধ্বংস না করা হয়। ( খ ) ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা তাদের বিনাশ সাধন যেন না হয়। ( গ ) তাদের আপোসে যেন লড়াই-ঝগড়া ( গৃহযুদ্ধ ) না হয়। মহান আল্লাহ প্রথম দু'টি দু'আ কবুল করলেন এবং তৃতীয় দু'আ থেকে আমাকে বঞ্চিত করলেন। " ( সহীহ মুসলিম ২২১৬নং ) অর্থাৎ, আল্লাহর জ্ঞানে এ কথা ছিল যে, মুহাম্মাদ ( সাঃ )-এর উম্মতের মধ্যে অনৈক্য ও বিরোধ সংঘটিত হবে। আর তার কারণ হবে আল্লাহর অবাধ্যতা এবং কুরআন ও হাদীস থেকে বিমুখতা। ফলে এই ধরনের আযাব থেকে মুহাম্মাদ ( সাঃ )-এর উম্মত সুরক্ষিত থাকতে পারবে না। অর্থাৎ, এর সম্পর্ক আল্লাহর সেই চিরন্তন বিধানের সাথে যা সমূহ জাতির আখলাক-চরিত্র এবং তাদের আচার-আচরণ অনুযায়ী সর্বযুগে থেকেছে; যাতে কোন প্রকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। {فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا} " তুমি আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবে না। " ( সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৩ )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


বলুন [], ‘তোমাদের উপর [] বা নীচ থেকে শাস্তি পাঠাতে [] ,বা তোমাদেরকে বিভিন্ন সন্দেহপূর্ণ দলে বিভক্ত করতে বা এক দলকে অন্য দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহণ করাতে [] তিনি ( আল্লাহ ) সক্ষম।’ দেখুন,আমারা কি রূপে বিভিন্নভাবে আয়াতসদমূহ বিবৃত করি যাতে তারা ভালোভাবে বুঝতে পারে। [] এখানে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা যেকোন আযাব ও যেকোন বিপদ দূর করতে যেমন সক্ষম, তেমনিভাবে তিনি যখন কোন ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়কে অবাধ্যতার শাস্তি দিতে চান, তখন যেকোন শাস্তি দেয়াও তার পক্ষে সহজ। কোন অপরাধীকে হয় না এবং কোন সাহায্যকারীরও প্রয়োজন হয় না। বলা হচ্ছে, আল্লাহ্ তাআলা এ বিষয়েও শক্তিমান যে, তোমাদের প্রতি উপরদিক থেকে কিংবা পদতল থেকে কোন শাস্তি পাঠিয়ে দেবেন কিংবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করে পরস্পরের মুখোমুখি করে দেবেন এবং এক কে অপরের হাতে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন। মূলত: আল্লাহর শাস্তি তিন প্রকারঃ ( এক ) যা উপর দিক থেকে আসে, ( দুই ) যা নিচের দিক থেকে আসে এবং ( তিন ) যা নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের আকারে সৃষ্টি হয়। এ সব প্রকার আযাব দিতে আল্লাহ্ তা'আলা সক্ষম। [] মুফাসসিরগণ বলেন, উপর দিক থেকে আযাব আসার দৃষ্টান্ত বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে অনেক রয়েছে। যেমন, নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের উপর প্লাবণাকারে বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, আদ জাতির উপর ঝড়-ঝঞা চড়াও হয়েছিল, লুত আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের উপর প্রস্তর বর্ষিত হয়েছিল এবং ইসরাঈল যখন মক্কার উপর চড়াও হয়, তখন পক্ষীকুল দ্বারা তাদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করা হয়। ফলে সবাই চর্বিত ভূষির ন্যায় হয়ে যায়। [ বাগভী ] [] এমনিভাবে বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে নীচের দিক থেকে আযাব আসারও বিভিন্ন প্রকার অতিবাহিত হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের প্রতি উপরের আযাব বৃষ্টির আকারে এবং নীচের আযাব ভূতল থেকে পানি স্ফীত হয়ে প্রকাশ পেয়েছিল। তারা একই সময়ে উভয় প্রকার আযাবে পতিত হয়েছিল। ফিরআউনের সম্প্রদায়কে পদতলের আযাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারুণ স্বীয় ধন-ভাণ্ডারসহ এ আযাবে পতিত হয়ে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রোথিত হয়েছিল। [ বাগভী ] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণ বলেন, উপরের আযাবের অর্থ অত্যাচারী বাদশাহ ও নির্দয় শাসকবর্গ এবং নীচের আযাবের অর্থ নিজ চাকর, নোকর ও অধীনস্ত কর্মচারীদের বিশ্বাসঘাতক, কর্তব্যে অবহেলাকারী ও আত্মসাৎকারী হওয়া। [ ফাতহুল কাদীর ] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ যখন আল্লাহ তা'আলা কোন প্রশাসক বা শাসনকর্তার মঙ্গল চান, তখন তাকে উত্তম সহকারী দান করেন, যাতে প্রশাসক আল্লাহর কোন বিধান ভুলে গেলে সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়, আর যদি প্রশাসক আল্লাহর বিধান স্মরণ করে তখন সে তা বাস্তবায়নে সহায়তা করে পক্ষান্তরে যখন কোন প্রশাসক বা শাসনকর্তার অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন, তখন মন্দ লোকদেরকে তার পরামর্শদাতা নিযুক্ত করা হয়; ফলে সে যখন আল্লাহর কোন বিধান ভুলে যায় তখন তারা তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না। আর যদি সে প্রশাসক নিজেই স্মরণ করে তখন তারা তাকে তা বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করে না। [ আবু দাউদ: ২৯৩২; নাসায়ী: ৪২০৪ ] এসব হাদীস ও আলোচ্য আয়াতের উল্লেখিত তাফসীরের সারমর্ম এই যে, জনগণ শাসকবর্গের হাতে যেসব কষ্ট ও বিপদাপদ ভোগ করে, তা উপর দিককার আযাব এবং যেসব কষ্ট অধীন কর্মচারীদের দ্বারা ভোগ করতে হয়, সেগুলো নীচের দিককার আযাব! এগুলো কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং আল্লাহর আইন অনুসারে মানুষের কৃতকর্মের শাস্তি। সুফিয়ান সওরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন আমি কোন গোনাহ করে ফেলি, তখন এর ক্রিয়া স্বীয় চাকর, আরোহণের ঘোড়া ও বোঝা বহনের গাধার মেজাজেও অনুভব করি। এরা সবাই আমার অবাধ্যতা করতে থাকে। [] আয়াতে বর্ণিত তৃতীয় প্রকার আযাব হচ্ছে, বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যাওয়া এবং একদল অন্য দলের জন্য আযাব হওয়া। তাই আয়াতের অনুবাদ এরূপ হবে, এক প্রকার আযাব এই যে, জাতি বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে যাবে। এ কারণেই আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘সাবধান! তোমরা আমার পরে পুনরায় কাফের হয়ে যেয়ো না যে, একে অন্যের গর্দান মারতে শুরু করবে। [ বুখারীঃ ১২১ ] সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস বলেন, ‘একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে চলতে চলতে বনী মুয়াবিয়ার মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকাআত সালাত আদায় করলাম। তিনি তার রবের কাছে অনেকক্ষণ দুআ করার পর বললেনঃ আমি রব-এর নিকট তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেছি- তিনি আমাকে দুটি বিষয় দিয়েছেন, আর একটি থেকে নিষেধ করেছেন। আমি প্রার্থনা করেছি যে, ( এক ) আমার উম্মতকে যেন দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা দ্বারা ধ্বংস করা না হয়, আল্লাহ্ তা'আলা এ দু'আ কবুল করেছেন। ( দুই ) আমার উম্মতকে যেন নিমজ্জিত করে ধ্বংস করা না হয়। আল্লাহ্ তা'আলা এ দু'আও কবুল করেছেন। ( তিন ) আমার উম্মত যেন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দ্বারা ধ্বংস না হয়। আমাকে তা প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। [ মুসলিমঃ ২৮৯০ ] এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর বিগত উম্মতদের ন্যায় আকাশ কিংবা ভূতল থেকে কোন ব্যাপক আযাব আগমন করবে না; কিন্তু একটি আযাব দুনিয়াতে তাদের উপরও আসতে থাকবে। এ আযাব হচ্ছে পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং দলীয় সংঘর্ষ। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত জোর সহকারে উম্মতকে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। তিনি প্রতি ক্ষেত্রেই হুশিয়ার করেছেন যে, দুনিয়াতে যদি তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে, তবে তা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমেই আসবে। অন্য আয়াতে এ বিষয়টি পূর্ববর্তী জাতিদের ক্ষেত্রে আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, “ তারা সর্বদা পরষ্পরে মতবিরোধই করতে থাকবে, তবে যাদের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমত রয়েছে, তারা এর ব্যতিক্রম ।" [ সূরা হুদ ১১৮-১১৯ ] এতে বুঝা গেল যে, যারা পরস্পর ( শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া ) মতবিরোধ করে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত কিংবা দূরবতী। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, যারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং মতবিরোধ করেছে, তোমরা তাদের মত হয়ো না। কেননা যারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে তারা আল্লাহর রহমত হতে দূরে সরে এসেছে।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর: মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেনযখন বান্দা স্থলভাগ ও জলভাগের অন্ধকারের মধ্যে অর্থাৎ কঠিন বিপদ-আপদের মধ্যে পতিত হয় তখন আমি তাদেরকে কি প্রকারে মুক্তি দিয়ে থাকি। যখন বান্দা সমুদ্রের ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল এবং সেখানে বিচ্ছিন্ন বায়ু প্রবাহিত হচ্ছিল তখন তারা প্রার্থনার জন্যে এক আল্লাহকেই নির্দিষ্ট করে নিয়েছিল। যেমন এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যখন সমুদ্রে তোমাদের উপর কোন বিপদ পৌঁছে তখন সমস্ত অংশীদারকে ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডেকে থাক ।( ১৭:৬৭ ) আল্লাহ পাক এক স্থানে বলেনঃ “ তিনি সেই আল্লাহ যিনি জলে ও স্থলে তোমাদেরকে ভ্রমণ করিয়ে থাকেন । যখন জাহাজ উত্তম ও অনুকূল বাতাসে চলতে থাকে তখন তোমরা খুবই খুশী হও। আর যখন বিচ্ছিন্ন ও প্রতিকূল বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সব দিক থেকে ঢেউ এসে পড়ে আর তোমাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মে যে, মৃত্যু তোমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তোমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকেই ডাকতে থাক এবং বল-হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।"ইরশাদ হচ্ছে- চিন্তা কর তো, জল ও স্থলের অন্ধকারের মধ্যে তোমাদেরকে সোজা পথে কে পরিচালিত করে? আর স্বীয় অনুগ্রহে নির্মল বাতাস কে প্রবাহিত করে? আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ আছে কি যাদেরকে তোমরা শরীক বানিয়ে নিয়েছো?মহান আল্লাহ বলেনঃ স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকার থেকে কে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন? যাঁকে তোমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে ডেকে ডেকে বল- যদি আপনি আমাদেরকে বিপদ থেকে মুক্তি দান করেন তবে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাবো। হে রাসূল ( সাঃ )! তুমি তাদেরকে বলে দাওআল্লাহই তোমাদেরকে এই সমুদয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দান করে থাকেন। অথচ তোমরা খুশী মনে প্রতিমাগুলোকে তাঁর শরীক বানিয়ে নিচ্ছ! আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করতে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যেমন সূরায়ে সুবহানে রয়েছে, তোমাদের প্রতিপালকই জাহাজসমূহ সমুদ্রে চালিয়ে থাকেন যেন তোমরা সম্পদ উপার্জন করতে পার। তিনি তোমাদের প্রতি দাতা ও দয়ালু। যখন তোমাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন তোমরা তোমাদের সমুদয় মূর্তিকে ভুলে গিয়ে আল্লাহকেই স্মরণ করে থাকো। আর যখন তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রের বিপদ থেকে বাঁচিয়ে স্থলভাগে আনয়ন করেন তখন তোমরা আল্লাহকে এড়িয়ে চল, মানুষ খুবই অকৃতজ্ঞ। তোমরা কি মনে করেছে যে, স্থলভাগে এসেই রক্ষা পেয়ে গেছো? তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়ার মত যমীনেও ঢুকিয়ে দিতে পারেন কিংবা আকাশ থেকে তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করতে পারেন, অতঃপর তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। পুনরায় তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে ভ্রমণ করিয়ে প্রতিকূল বায়ু প্রবাহিত করতঃ পানিতে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম বা তোমাদের পায়ের নীচে থেকেই তোমাদের প্রতি শাস্তি প্রেরণে পূর্ণ ক্ষমতাবান। হাসান বলেন যে, এর দ্বারা মুশরিকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহ পাক ক্ষমা করুন। আমরা তারই উপর ভরসা করি। এখানে আমরা উপরোক্ত আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত কতগুলো হাদীস বর্ণনা করবোঃ ইমাম বুখারী ( রাঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) এর অর্থ হচ্ছে- তোমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এই ধরনের শাস্তিতে জড়িত করতে পারেন। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন ( আরবী ) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সাঃ ) বলেনঃ অর্থাৎ আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।' আর -এর সময়ও বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ আমি আপনারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আবার যখন তিনি। শুনেন তখন বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে এটা অনেকটা সহজ।' হযরত জাবির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন ( আরবী ) -এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ এর থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।' অতঃপর ( আরবী ) -এটুকু শুনে বলেনঃ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তারপর ( আরবী ) -এটুকু শুনে বলেনঃ “ এটা সহজতর বটে ।' তিনি ওটা থেকে আশ্রয় চাইলেও চাইতে পারতেন। হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াত শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ ‘এটা অবশ্যই হবে, এখন পর্যন্ত হয়নি।'হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ? ‘আমরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে চলছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা বানী মুআবিয়া ( রাঃ )-এর মসজিদে আগমন করি। তিনি মসজিদে প্রবেশ করে দু'রাকআত নামায পড়েন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি মহা মহিমান্বিত আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ “ আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তিনটি জিনিসের আবেদন জানিয়েছিলাম- ( ১ ) আমার উম্মত যেন পানিতে ডুবে যাওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে না যায় । তিনি তা কবুল করেছেন। ( ২ ) আমার উম্মত যেন ( আরবী ) বা দুর্ভিক্ষে ধ্বংস হয়ে না যায়। তিনি ওটাও ককূল করেছেন। ( ৩ ) তাদের পরস্পরের মধ্যে যেন যুদ্ধ-বিগ্রহের সৃষ্টি না হয়। তিনি ওটা না মঞ্জুর করেন।” ( এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম (মঃ ) কিতাবুল ফিতানের মধ্যে তাখরীজ করেছেন। ( আরবী ) শব্দের অর্থ হচ্ছে দুর্ভিক্ষ)ইমাম আহমাদ ( রঃ ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে জাবির ইবনে উতাইক ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ বানু মু'আবিয়া পল্লীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) আমাদের নিকট আগমন করেন, ওটা হচ্ছে আনসারদের একটা গ্রাম। এসে তিনি বলেন- “ তোমাদের এই মসজিদে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) কোথায় নামায পড়েছিলেন তা তুমি জান কি?' আমি বললাম, হ্যা, এবং একটি কোণের দিকে ইশারা করলাম । তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “ তিনি তিনটি কি কি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করেছিলেন তা কি তুমি জান? আমি উত্তরে বললাম, হ্যা । তিনি বললেনঃ ‘ঐগুলোর সংবাদ আমাকে দাও। আমি তখন বললাম, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর উম্মতের উপর যেন কোন শত্রু জয়যুক্ত না হয় এবং তারা যেন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। ঐ দুটি মঞ্জুর করে নেয়া হয়। আর তিনি এই প্রার্থনাও করেন যে, তারা যেন। পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে। এটা গৃহীত হয়নি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার ( রাঃ ) তখন বলেনঃ তুমি ঠিকই বলেছো। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের স্পরের মধ্যে যুদ্ধ হতেই থাকবে। ( ইবনে কাসীর (রঃ ) বলেন যে, এই হাদীসটির ইসনাদ খুবই উত্তম ও মযবুত বটে, কিন্তু ছ'টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে এটি বর্ণিত হয়নি)ইমাম আহমাদ ( রঃ ) হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ ‘সফরে একদা আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে দেখেছি যে, তিনি চাশতের আট রাকআত নামায পড়লেন। অতঃপর নামায শেষ করে তিনি বললেনঃ আমি রগবত’ ও ‘রহবতের’ ( আগ্রহ ও ভীতির ) নামায পড়লাম। আমার প্রভুর কাছে আমি তিনটি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করলাম। তিনি দু'টি ককূল করলেন কিন্তু একটি ককূল করলেন না। আমি প্রার্থনা করলাম যে, আমার উম্মত যেন দুর্ভিক্ষের কবলে না পড়ে। এটা তিনি মঞ্জুর করলেন। আমি আবেদন জানালাম যে, আমার উম্মতের উপর যেন তাদের শত্রুরা জয়যুক্ত হতে না পারে। এটাও তিনি ককূল করলেন। আমি দরখাস্ত করলাম যে, আমার উম্মত যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ে। এটা তিনি মঞ্জুর করলেন না।হযরত মুআহ্ ইবনে জাবাল ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গেলাম। বলা হলো যে, তিনি এখনই বেরিয়ে গেলেন। যেখানেই যাই সেখানেই বলা হয় যে, তিনি এখনই চলে গেলেন। অবশেষে আমি তাঁকে এক জায়গায় নামাযের অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমি তাঁর সাথে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়লেন। নামাযের পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি এতো দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়লেন কেন? তিনি উত্তরে বললেন ঃ “ আমি ভয় ও আগ্রহের নামায পড়ছিলাম । অতঃপর তিনি উপরোক্ত তিনটি প্রার্থনার বর্ণনা দেন।ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বানী যাহরার গোলাম খাব্বাব ইবনে আরত ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি বলেনঃ একদা আমি সারা রাত ধরে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে নামায পড়ছিলাম। তিনি নামাযের সালাম ফিরালে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি আজ এতো দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়লেন যে, এর পূর্বে কোন দিন আমি আপনাকে এত লম্বা সময় ধরে নামায পড়তে দেখিনি ( এর কারণ কি? )! তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এটা ছিল রগবত ও ভীতির নামায । এই নামাযে আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট তিনটি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করেছিলাম। দু’টি তিনি মঞ্জুর করেছেন এবং একটি মঞ্জুর করেননি। আমার মহান প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম যে, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে যে জিনিসে ধ্বংস করে দিয়েছিল তা যেন আমাদেরকে ধ্বংস না করে। এটা তিনি কবুল করেছেন। আমার সম্মানিত প্রভুর নিকট আমি আবেদন জানালাম যে, আমাদের উপর আমাদের শত্রুরা যেন জয়যুক্ত হতে না পারে। এটাও গৃহীত হয়েছে। আমার মহা মর্যাদাবান প্রতিপালকের কাছে আমি দরখাস্ত করলাম যে, আমরা যেন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ি। এটা তিনি কবুল করলেন না। ( এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ), ইমাম নাসাঈ ( রঃ ), ইবনে হিব্বান ( রঃ ) এবং ইমাম তিমিযী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী ( রঃ ) এটাকে হাসান ও সহীহ বলেছেন) আবু মালিক ( রঃ ) বলেনঃ “ আমি বর্ণনাকারী নাফে ইবনে খালিদকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এই হাদীসটি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যা, আমি ঐ লোকদের মুখে শুনেছি যারা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখে শুনেছিলেন । হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার জন্যে যমীনকে নিকটবর্তী করে দিয়েছেন, এমন কি আমি ওর মাশরিক ও মাগরিবকে দেখতে পাই এবং আমার উম্মত এই সবের মালিক হয়ে যাবে। আমাকে দুটি ধন-ভাণ্ডার দেয়া হয়েছে। একটি সাদা ও অপরটি লাল। ( সাদা ও লাল ধন-ভাণ্ডার দ্বারা স্বর্ণ ও রৌপ্য বুঝানো হয়েছে ) আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, আমার উম্মত যেন সাধারণ দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত না হয়। আরও প্রার্থনা জানিয়েছিলাম যে, তাদের উপর শক্ররা যেন এমনভাবে জয়যুক্ত না হয় যার ফলে তারা সাধারণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। আমার প্রার্থনা এটাও ছিল যে, আমার উম্মত যেন দলে দলে বিভক্ত না হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আমি যে ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছি তা রদ হবে না । আমি তোমার এই প্রার্থনা মঞ্জুর করলাম যে, তোমার উম্মত সাধারণ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে না। আর আমি তোমার এই প্রার্থনাও কবুল করলাম যে, তোমার উম্মতের উপর তাদের শত্রুরা এমনভাবে জয়যুক্ত হবে না যে, তাদেরকে ধ্বংস করবে, হত্যা করবে এবং বন্দী করবে।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আমি শুধুমাত্র আমার উম্মতের পথভ্রষ্ট ইমাম ও নেতৃবর্গকে ভয় করি । যদি একবার আমার উম্মতের উপর তরবারী চড়ে যায় তবে তা আর নামবার নয়। বরং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকবে।” ( ইবনে কাসীর (রঃ ) বলেন যে, এই হাদীসটি ছ’টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি। তবে এর ইসনাদ খুবই উত্তম ও মযবুত)তিবরানী ( রঃ ) হযরত জাবির ইবনে সুমরাতুস সুওয়ারী ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিসের জন্যে আবেদন জানিয়েছিলাম। তিনি দুটি মঞ্জুর করেছেন এবং একটি না মঞ্জুর করেছেন। আমি প্রার্থনা করেছিলাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মতকে আপনি ক্ষুধায় ধ্বংস করবেন না। তিনি বললেনঃ “ এটা তোমার জন্যে কবুল করা হলো ।” আমি বললাম, হে আমার প্রভু! আপনি তাদের উপর তাদের ছাড়া অন্যদেরকে অর্থাৎ মুশরিকদেরকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন না যে, তারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবে। তিনি বললেনঃ “ এটাও তোমার জন্যে মঞ্জুর করলাম ।” আমি প্রার্থনায় বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার উম্মতের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করবেন না। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেন। আমার প্রভু এটা মঞ্জুর করলেন না।হযরত নাফে' ইবনে খালিদ খুযায়ী ( রঃ ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাহাবীদের মধ্যে একজন এবং বৃক্ষের নীচে অনুষ্ঠিত বায়আতুর রিযওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) নামায পড়েন। জনগণ তাকে ঘিরে রয়েছিলেন। তিনি হালকাভাবে নামায আদায় করেন, তবে রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবেই করেন। কিন্তু তাঁর নামাযের বৈঠক খুবই দীর্ঘ হয়। এমন কি আমরা একে অপরকে ইঙ্গিতে বলি যে, সম্ভবতঃ তার উপর অহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ না, রগবত ও ভীতির নামায পড়ছিলাম ।” এই পূর্ণ হাদীসটি শোনার পর নাফে' ইবনে খালিদ খুযায়ীকে বলি, আপনার পিতা কি রাসুলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখ থেকে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ “ হ্যা, আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখে তার দশটি অঙ্গুলির মত দশবার শুনেছেন । হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেন, আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট প্রার্থনা করেছি যে, তিনি যেন তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে দূরে রাখেন। তখন আল্লাহ তাদেরকে দুটি জিনিস থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মতের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ না করেন, তারা যেন ফিরাউন ও তার লোকজনদের মত ডুবে না মরে, তারা যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ে এবং তারা যেন পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে। মহান আল্লাহ তখন পাথর বর্ষণ না করা এবং ডুবে না মরার প্রার্থনা কবুল করেছেন বটে, কিন্তু তারা দলে দলে বিভক্ত না হওয়া এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত না হওয়া এই প্রার্থনা দু’টি তিনি ককূল করেননি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ ( আরবী ) তখন নবী ( সঃ ) উঠে অযু করেন এবং দুআ করতে থাকেনঃ “ হে আল্লাহ! উপর ও নীচ হতে আমার উম্মতের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন না এবং তাদের মধ্যে যেন দলাদলি সৃষ্টি না হয়, তারা যেন পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে ।” তখন হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) এসে বলেন, “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আল্লাহ তা'আলা আপনার উম্মতকে আকাশ থেকে শাস্তি অবতীর্ণ হওয়া থেকে এবং পায়ের নীচ হতে আযাব নাযিল হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন । এর পরে এই শ্ৰেণীরও এই বিষয়ের আরও কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর পুনরাবৃত্তি তরজমা ও তাফসীর পাঠকদের জন্যে নিষ্প্রয়োজন। আসমানী আযাব দ্বারা পাথর বর্ষণ এবং পায়ের নীচের শাস্তি দ্বারা যমীন ধ্বসে যাওয়া বুঝানো হয়েছে। উল্লিখিত চারটি জিনিসের মধ্যে দু'টি নবী ( সঃ )-এর ইন্তেকালের পঁচিশ বছর পর থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। অর্থাৎ মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ ও দলাদলি সৃষ্টি এবং তাদের দু'দলের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু। আর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ ও যমীন ধ্বসে যাওয়া থেকে উম্মতে মুহাম্মদিয়াকে মাহফুয ও নিরাপদ রাখা হয়েছে। মুজাহিদ ( রঃ ), সাঈদ ইবনে জুবাইর ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ), ইবনে যায়েদ ( রঃ ) এবং ইবনে জারীর ( রঃ ) ভাবার্থ এটাই গ্রহণ করেছেন।এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ( রাঃ ) মসজিদে অথবা মিম্বরের উপরে অবস্থানরত অবস্থায় চীৎকার করে বলেছিলেন, “ হে লোক সকল! তোমাদের উপর আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে । যদি আকাশ থেকে শাস্তি এসে যায় তবে কারও রক্ষা নেই। আর যদি পায়ের নীচ থেকে আযাব এসে পড়ে তবে তোমাদেরকে নিয়ে যমীন ধ্বসে যাবে এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড় এবং পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে যাও তবে এটা সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হবে।" হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলতেন যে, উপরোক্ত আয়াতের ( আরবী ) দ্বারা দুষ্ট নেতাদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং ( আরবী ) দ্বারা বুঝানো হয়েছে দুষ্ট খাদেম এবং খারাপ অনুসারীদেরকে। অথবা এর দ্বারা আমীর ও গরীবদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, এই উক্তিটি যুক্তিপূর্ণ হলেও প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট ও মযবুত। তিনি বলেন যে, এর সঠিকতার সাক্ষ্য স্বয়ং মহান আল্লাহর নিম্নের উক্তিটি বহন করছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ তোমরা কি এর থেকে নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আল্লাহ যমীনকে ধ্বসিয়ে দিয়ে তোমাদেরকে ওর ভিতরে ঢুকিয়ে দিবেন এবং ওটা গরম হয়ে গিয়ে টগবগ করে ফুটতে থাকবে? অথবা তোমরা কি এর থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ যে, তিনি তোমাদের উপর পূর্ববর্তী কওমের মত আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করবেন? সত্বরই তোমরা জানতে পারবে যে, আমার ভীতি প্রদর্শন কিরূপ সঠিক ছিল ।( ৬৭:১৬-১৭ )হাদীসে রয়েছে যে, আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হওয়া, যমীন ধ্বসে পড়া, আকৃতি পরিবর্তিত হওয়া, এইগুলো এই উম্মতের মধ্যে সংঘটিত হবে এবং এইগুলো হচ্ছে কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কিয়ামতের পূর্বে এই নিদর্শনগুলো প্রকাশিত হবে এবং ইনশাআল্লাহ এইগুলোর বর্ণনা ওর স্থানে দেয়া হবে। ( আরবী ) দ্বারা বিভিন্ন ফিরকা বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আমার উম্মত তেহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়ে যাবে। এক ফিরকা ছাড়া বাকী সবগুলোই জাহান্নামী হবে। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, শাস্তি ও হত্যার মাধ্যমে এক দলকে অন্য দলের উপর বিজয়ী করে দেয়া হবে।( আরবী ) অর্থাৎ লক্ষ্য কর? আমি বারে বারে বিভিন্ন উপায়ে আমার নিদর্শন ও যুক্তি প্রমাণ বর্ণনা করছি, উদ্দেশ্য এই যে, যেন বিষয়টিকে তারা পূর্ণরূপে জ্ঞানায়ত্ব ও হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারে। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম ( রাঃ ) বলেন যে, যখন ( আরবী ) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেয়ো না যে, তরবারী দ্বারা একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দেবে ।” তখন জনগণ বলেন, আমরা তো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল ( এর পরেও কি আমরা এরূপ কাজ করবো? ) রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ হ্যা ।” তখন তাদের কেউ একজন বলেন, আমরা যখন মুসলমান তখন এটা হতে পারে না যে, আমাদের একে অপরকে হত্যা করবে। সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইরশাদ হচ্ছেঃ ( আরবী ) হে নবী ( সঃ )! তোমার সম্প্রদায় একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে অথচ এটা প্রমাণিত সত্য, তুমি বলে দাওআমি তোমাদের উকিল হয়ে আসিনি। মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ প্রত্যেকটি সংবাদ প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। অতি শীঘ্রই তোমরা নিজেদের পরিণতি সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। ( এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) ও ইবনে জারীর ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন)

সূরা আনআম আয়াত 65 সূরা

قل هو القادر على أن يبعث عليكم عذابا من فوقكم أو من تحت أرجلكم أو يلبسكم شيعا ويذيق بعضكم بأس بعض انظر كيف نصرف الآيات لعلهم يفقهون

سورة: الأنعام - آية: ( 65 )  - جزء: ( 7 )  -  صفحة: ( 135 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?
  2. তোমাদের কি হল যে, কথা বলছ না?
  3. যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা যাদু, আমরা একে মানি না।
  4. কতক মানুষ জ্ঞান; প্রমাণ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।
  5. অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বললঃ আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
  6. সেদিন আমি কাফেরদের কাছে জাহান্নামকে প্রত্যক্ষ ভাবে উপস্থিত করব।
  7. আমি ফেরাউনকে আমার সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে।
  8. হে আমার পিতা, আমি আশঙ্কা করি, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের
  9. আমি এর জন্যে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তা দেবেন।
  10. নূহ আরও বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি পৃথিবীতে কোন কাফের গৃহবাসীকে রেহাই দিবেন না।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনআম ডাউনলোড করুন:

সূরা Anam mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anam শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আনআম  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আনআম  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আনআম  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আনআম  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আনআম  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আনআম  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আনআম  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আনআম  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আনআম  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আনআম  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আনআম  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আনআম  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আনআম  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আনআম  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আনআম  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আনআম  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আনআম  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আনআম  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আনআম  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আনআম  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আনআম  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আনআম  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আনআম  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আনআম  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আনআম  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Tuesday, July 16, 2024

Please remember us in your sincere prayers