কোরান সূরা নামল আয়াত 66 তাফসীর
﴿بَلِ ادَّارَكَ عِلْمُهُمْ فِي الْآخِرَةِ ۚ بَلْ هُمْ فِي شَكٍّ مِّنْهَا ۖ بَلْ هُم مِّنْهَا عَمُونَ﴾
[ النمل: 66]
বরং পরকাল সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে গেছে; বরং তারা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষন করছে বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ। [সূরা নামল: 66]
Surah An-Naml in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Naml ayat 66
বস্তুতঃ তাদের জ্ঞান পরলোকে সীমিত হয়ে গেছে, বরং তারা এ বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে, বস্তুতঃ এ সন্বন্ধে তারা অন্ধ।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬৬. নাকি তাদের নিকট আখিরাত সম্পর্কীয় ধারাবাহিক জ্ঞান এসে গিয়েছে যা তারা বিশ্বাস করেছে? না, বরং তারা আখিরাত সম্পর্কে সন্দেহ ও অস্থিরতায় রয়েছে। বরং তাদের দূরদৃষ্টি এ ব্যাপারে অন্ধ।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
বরং পরলোক সম্পর্কে তো ওদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়েছে;[১] বরং ওরা তো এ বিষয়ে সন্দিগ্ধ, বরং এ বিষয়ে ওরা অন্ধ। [২] [১] অর্থাৎ, তাদের জ্ঞান পরলোক কখন হবে তা জানতেও অক্ষম। বা তাদের জ্ঞান আখেরাতের ব্যাপারে অন্যদের সমান। যেমন নবী ( সাঃ ) জিবরীলের জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেছিলেন যে, জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসক অপেক্ষা বেশী জানে না। অথবা এর অর্থ এই যে, তাদের কিয়ামত সম্পর্কিত জ্ঞান পূর্ণ হয়ে গেছে। কারণ তারা কিয়ামতের ব্যাপারে কৃত ওয়াদা নিজ চোখে দেখে নিয়েছে; যদিও এ জ্ঞান তাদের কোন উপকার দেবে না। কারণ পৃথিবীতে তারা তাকে মিথ্যাজ্ঞান করত। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,{أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا لَكِنِ الظَّالِمُونَ الْيَوْمَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ} অর্থাৎ, তারা যেদিন আমার নিকট আসবে সেদিন তারা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে! কিন্তু সীমালংঘনকারীগণ আজ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে। ( সূরা মারয়্যাম ১৯:৩৮ আয়াত ) [২] অর্থাৎ, পৃথিবীতে আখেরাত সম্বন্ধে সন্দেহ পোষণ করে; বরং তারা অন্ধ। যেহেতু জ্ঞান ও বুদ্ধি-ভ্রষ্টতার কারণে তারা আখেরাতের বিশ্বাস হতে বঞ্চিত।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
বরং আখেরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তো নিঃশেষ হয়েছে [ ১ ]; তারা তো এ বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে, বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ [ ২ ]। [ ১ ] আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে, اِدَّارَكَ শব্দটি। এ শব্দে বিভিন্ন কেরাআত আছে এবং অর্থ সম্পর্কেও নানা উক্তি রয়েছে। কোন কোন তাফসীরকার اِدَّارَكَ শব্দের অর্থ নিয়েছেন تكامل অর্থাৎ পরিপূর্ণ হওয়া এবং فِى الْاٰخِرَةِ কে اِدَّارَكَ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে আয়াতের অর্থ এই সাব্যস্ত করেছেন যে, আখেরাতে এ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা, তখন প্রত্যেক বস্তুর স্বরূপ পরিস্ফুট হয়ে সামনে এসে যাবে। তবে তখনকার জ্ঞান তাদের কোন কাজে লাগবে না। কারণ, দুনিয়াতে তারা আখেরাতকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করত। তখন পরবর্তী বাক্য ‘তারা তো এ বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে, বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ’ এর দ্বারা দুনিয়ার বর্তমান অবস্থা বুঝানো উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ একই আয়াতের প্রথমাংশ আখেরাতের সাথে আর বাকী অংশ দুনিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট। [ দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ] আবার কেউ কেউ ‘আখেরাতে তাদের জ্ঞান পরিপূর্ণ হওয়া’ কথাটি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অস্বীকারের সুরে এবং উপহাস হিসেবে নিয়েছেন। অর্থাৎ আখেরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কি পরিপূর্ণতা লাভ করেছে যে, তারা এতো বেপরোয়া হয়ে গেছে? পরবর্তী আয়াতাংশ ‘তারা তো এ বিষয়ে সন্দেহে রয়েছে, বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ’ এর দ্বারা উপরোক্ত অর্থের জোরালো সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। [ দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর ] কোন কোন তাফসীরকারের মতে, اِدَّارَكَ শব্দের অর্থ ضَلَّ ও غٰابَ এবং فِى الْاٰخِرَةِ শব্দটি عِلْمُهُم এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ আখেরাতের ব্যাপারে তাদের জ্ঞান উধাও হয়ে গেছে। তারা একে বুঝতে পারেনি। [ ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ] [ ২ ] عَمُونْ শব্দটি عم শব্দের বহুবচন। এটা অন্তরের অন্ধত্বকে বুঝায়। অর্থাৎ তারা অন্তর্দৃষ্টি অভাবে কোন দলীল-প্রমাণই প্রত্যক্ষ করছে না। তারা যেন অন্ধই থেকে যাবে। তাদের কাছে কোন দলীল-প্রমাণই কাজে আসবে না। [ ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৬৫-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন সারা জগতবাসীকে জানিয়ে দেন যে, অদৃশ্যের খবর কেউ জানে না। এখানে( আরবি ) হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মানব, দানব এবং ফেরেশতা গায়েব বা অদৃশ্যের খবর জানে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ তার নিকটই গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি রয়েছে, তিনি ছাড়া ওটা কেউ জানে না ।” ( ৬:৫৯ ) আর এক জায়গায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন ।” ( ৩১:৩৪ ) এই বিষয়ের আরো বহু আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ তারা জানে না তারা কখন পুনরুত্থিত হবে। কিয়ামতের সময় কখন হবে তা আসমান ও যমীনের অধিবাসীদের কেউই জানে না। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ( আরবি )অর্থাৎ “ আসমান ও যমীনে এই ইলম বা জ্ঞান ( সবারই উপর ) মুশকিল ও ভারী, ওটা তো আকস্মিকভাবে তোমাদের নিকট এসে পড়বে ।” ( ৭: ১৮৭ )হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যে বলে যে, রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) আগামীকালের কথা জানতেন সে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার উপর খুব বড় অপবাদ দিয়েছে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ ( হে নবী সঃ )! তুমি বলে দাও যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুত্থিত হবে” । ( এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)কাতাদা ( রঃ ) বলেন যে, আল্লাহ তাআলা তারকারাজির মধ্যে তিনটি উপকার রেখেছেন। তাহলো আকাশের সৌন্দর্য, পথভ্রান্তদেরকে পথ-প্রদর্শন এবং শয়তানদেরকে প্রহারকরণ। এগুলো ছাড়া তারকারাজির উপর অন্য কোন বিশ্বাস রাখা নিজের মতে কথা বানানো, কষ্ট উঠানো এবং নিজের অংশকে হারানো ছাড়া আর কিছুই নয়। অজ্ঞ লোকেরা তারকারাজির সাথে জ্যোতির্বিদ্যাকে দোদুল্যমান রেখে বাজে কথা বানিয়ে নিয়েছে যে, এই তারকার সময় যে বিয়ে করবে সে এইরূপ হবে। অমুক তারকার সময় সফর করলে এই হয়, অমুক নক্ষত্রের সময় সন্তান হলে এইরূপ হয় ইত্যাদি। তাদের এসব হলো অসম্ভব ও প্রতারণামূলক কথা। অধিকাংশ সময়ই তাদের কথার বিপরীত হয়ে থাকে। প্রত্যেক তারকার সময়েই কৃষ্ণবর্ণের, গৌরবর্ণের, বেঁটে, লম্বা, সুন্দর এবং কুৎসিত সন্তান জন্মগ্রহণ করেই থাকে। না কোন জন্তু অদৃশ্যের খবর জানে, না কোন পাখী দ্বারা অদৃশ্য জানা যায় এবং না কোন তারকা অদৃশ্যের খবর দিতে পারে। সবারই জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে এ ফায়সালা হয়েই গেছে যে, আসমান ও যমীনের সমস্ত সৃষ্টজীব অদৃশ্য হতে বে-খবর রয়েছে। তারা তো নিজেদের পুনরুত্থানের সময়ও অবহিত নয়।হযরত কাতাদা ( রঃ )-এর এ উক্তিটি সত্যি সঠিকই বটে। এটা তাঁর খুবই উপকারী ও জ্ঞানগর্ভ উক্তি। এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আখিরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তো নিঃশেষ হয়েছে। অন্যেরা ( আরবি ) পড়েছেন। অর্থাৎ আখিরাতের সঠিক সময় না জানার ব্যাপারে সবারই জ্ঞান সমান। যেমন রাসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) হযরত জিবরাঈল ( আঃ )-এর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন- “ আমার ও আপনার জ্ঞান এর জবাব দিতে অপারগ ।” এখানেও বলা হয়েছেঃ আখিরাত সম্পর্কে তাদের জ্ঞান তো নিঃশেষ হয়ে গেছে। কাফিররা তাদের প্রতিপালক থেকে অজ্ঞ বলে তারা আখিরাতকেও অস্বীকারকারী! সেখান পর্যন্ত তাদের জ্ঞান পৌছেনি।একটি উক্তি এও আছে যে, আখিরাতে তারা এই জ্ঞান লাভ করবে বটে, কিন্তু তা হবে বৃথা। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “ যেদিন তারা আমার কাছে পৌছবে সেই দিন তারা বড়ই শ্রবণকারী ও দর্শনকারী হয়ে যাবে, কিন্তু আজ যালিমরা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতার মধ্যে হবে ।”অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ বরং তারা তো এ বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। এর দ্বারা কাফিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট হাযির করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবেঃ তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই তোমরা আমার নিকট হাযির হয়েছে; অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্যে প্রতিশ্রুত ক্ষণ আমি উপস্থিত করবো না।” ( ১৮:৪৮ ) উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদের মধ্যে কাফিররা এটা মনে করতো। সুতরাং উপরোল্লিখিত আয়াতে যদিও( আরবি ) টি ( আরবি ) -এর দিকে ফিরেছে, কিন্তু উদ্দেশ্য কাফিরই বটে! এ জন্যেই শেষে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন: বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ। তারা চক্ষু বন্ধ করে রেখেছে।
সূরা নামল আয়াত 66 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তোমাদের কেউ পছন্দ করে যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান হবে, এর তলদেশ দিয়ে
- ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে
- আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার
- আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
- এবং যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।
- আর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?
- অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।
- আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, তারা তথায় অনন্তকাল থাকবে।
- আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ,
- তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নামল ডাউনলোড করুন:
সূরা Naml mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Naml শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers