কোরান সূরা নাহল আয়াত 69 তাফসীর
﴿ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
[ النحل: 69]
এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। [সূরা নাহল: 69]
Surah An-Nahl in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nahl ayat 69
''তারপর প্রত্যেক ফল থেকে খাও, তারপর তোমার প্রভুর রাস্তা অনুসরণ কর সুগম-করা পথে।’’ তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৬৯. অতঃপর তুমি নিজ চাহিদা মাফিক প্রত্যেক ফল খাও এবং তোমার প্রতিপালক তোমাকে যে সহজ পথে চলতে শিখিয়েছেন সে পথে চলো। এ মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রকমের মধু বেরিয়ে আসে। যার মধ্যে রয়েছে সাদা, হলদে ইত্যাদি রং। যাতে মানুষের রোগসমূহের চিকিৎসা রয়েছে। নিশ্চয়ই মৌমাছিকে এ বার্তা দেয়ার মাঝে এবং তার পেট থেকে আহরিত মধুর মাঝে চিন্তাশীল জাতির জন্য আল্লাহর কুদরত এবং তাঁর সৃষ্টির সমূহ ব্যাপার পরিচালনার উপর বিশেষ নিদর্শন রয়েছে। কারণ, তারাই তো কেবল সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এরপর প্রত্যেক ফল হতে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর;[১] ওর উদর হতে নির্গত হয় নানা রঙের পানীয়;[২] যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগমুক্তি।[৩] অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। [১] মৌমাছি প্রথমে পাহাড়ে, গাছে, মানুষের ঘরের উঁচু ছাদে এমনভাবে মৌচাক তৈরী করে যে, মাঝে কোথাও ফাঁক থাকে না। তারপর বাগান, জঙ্গল, পাহাড় ও উপত্যকায় ( অনুরূপ ফুলে ভরা শস্যক্ষেতে ) ঘুরে বেড়ায় এবং প্রত্যেক ফুল-ফলের মধু ও রস আহরণ করে পেটে জমা করে। আর যে রাস্তায় যায় সেই রাস্তায় ফিরে এসে মৌচাকে গিয়ে বসে। যেখানে তার মুখ দিয়ে মধু উগরে দেয়, যাকে মহান আল্লাহ পানীয় বলে উল্লেখ করেছেন। [২] লাল, সাদা, নীল, হলুদ বিভিন্ন রঙের। যে ধরনের ফুল-ফল ও ক্ষেত থেকে তারা মধু সংগ্রহ করে, সেই হিসাবে তার রঙ ও স্বাদ বিভিন্ন হয়ে থাকে। [৩] شفاء ( রোগমুক্তি ) অনির্দিষ্ট বাহুল্য বর্ণনার জন্য। অর্থাৎ, মধুতে বহু রোগের আরোগ্য রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটি সকল রোগের ঔষধ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, মধু অবশ্যই আরোগ্য দানকারী আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক এক পানীয়, তবে বিশেষ বিশেষ রোগের জন্য; সকল রোগের জন্য নয়। হাদীসে বর্ণিত, নবী ( সাঃ ) মিষ্টি জিনিস ও মধু পছন্দ করতেন। ( বুখারীঃ পানীয় অধ্যায় ) অন্য এক বর্ণনায় আছে তিনি ( সাঃ ) বলেছেন, " তিনটি জিনিসে আরোগ্য রয়েছে; শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পান করাতে ও দাগানোতে। তবে আমি আমার উম্মতকে দাগাতে নিষেধ করছি। " ( বুখারীঃ মধু দ্বারা চিকিৎসা পরিচ্ছেদ ) হাদীসে একটি ঘটনাও এসেছে। নবী ( সাঃ ) পাতলা পায়খানার এক রোগীকে মধু পান করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু তাতে তার রোগ আরো বেড়ে গেল। তিনি দ্বিতীয়বার আবার মধু পান করার পরামর্শ দিলেন। যাতে রোগীর পুরাতন মল বেরিয়ে আসতে লাগল। রোগীর বাড়ির লোকেরা ভাবল যে, রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার এক ভাই আবার নবী ( সাঃ )-এর নিকট এল। তখন তিনি বললেন, " আল্লাহ সত্য, তোমার ভায়ের পেট মিথ্যা। যাও, তাকে আবারো মধু পান করাও। " অতঃপর তৃতীয়বার মধু পান করালে সে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে। ( বুখারী, মুসলিম )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
‘এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু খাও, অতঃপর তোমার রবের সহজ পথ অনুসরণ কর [ ১ ]’। তার পেট থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন রঙ এর পানীয় [ ২ ]; যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য [ ৩ ]। নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন [ ৪ ]। [ ১ ] 'রবের সহজ পথ’ এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, তুমি অনুগত হয়ে সে পথে চল যে পথ তোমার রব তোমাকে শিখিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন। রবের রাস্তা বলা হয়েছে এজন্যে যে, সে রবই তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ পথে চলা শিখিয়েছেন। সুতরাং তুমি তোমার রবের শিখিয়ে পথগুলোতে বিভিন্ন স্থানে রিযিকের খোঁজে বেরিয়ে পড়। পাহাড়ে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! তুমি যা খেয়েছ তা তোমার রবের নির্দেশক্রমে ও তাঁর শক্তিতে তোমার শরীরের মধ্য দিয়ে মধু তৈরীর প্রক্রিয়া পরিণত কর। অথবা আয়াতের অর্থ, হে মৌমাছি! যখন তুমি দূরে কোন স্থানে মধু আহরণের জন্য যাবে, তখন সেটা সংগ্রহ করে আবার তোমার গৃহে ফিরে আস, তোমার প্রভুর শিখিয়ে দেয়া পথসমূহ অবলম্বন করে। পথ হারিয়ে ফেলো না। [ ফাতহুল কাদীর ] মূলত: তিনটি অর্থই উদ্দেশ্য হওয়া সম্ভব। [ ২ ] এখানে ওহীর মাধ্যমে প্রদত্ত এই নির্দেশের যথাযথ ফলশ্রুতি বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে, তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। খাদ্য ও ঋতুর বিভিন্নতার কারণে মধুর রঙ বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণেই কোন বিশেষ অঞ্চলে কোন বিশেষ ফল-ফুলের প্রাচুর্য থাকলে সেই এলাকার মধুতে তার প্রভাবও স্বাদ অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। মধু সাধারণতঃ তরল আকারে থাকে, তাই একে পানীয় বলা হয়েছে। এ বাক্যেও আল্লাহর একত্ব ও অপার শক্তির অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান। একটি ছোট্ট প্রাণীর পেট থেকে কেমন উপাদেয় ও সুস্বাদু পানীয় বের হয়। এরপর সর্বশক্তিমানের আশ্চর্যজনক কারিগরি দেখুন, অন্যান্য দুধের জন্তুর দুধ ঋতু ও খাদ্যের পরিবর্তনে লাল ও হলদে হয় না, কিন্তু মৌমাছির মধু সাদা, হলুদ, লাল ইত্যাদি বহু রঙের হয়ে থাকে। [ দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর ] [ ৩ ] মধু যেমন বলকারক খাদ্য এবং রসনার জন্য আনন্দ এবং তৃপ্তিদায়ক, তেমনি রোগ-ব্যাধির জন্যও ফলদায়ক ব্যবস্থাপত্র। মধু বিরেচক এবং পেট থেকে দূষিত পদার্থ অপসারক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে কোন এক সাহাবী তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিলে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবী বললেনঃ অসুখ পূর্ববৎ বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এল যে, অসুখে কোন পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেনঃ ( صَدَقَ اللّٰهُ وَكَذَبَ بَطْنُ اَخِيْكَ ) অর্থাৎ আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যাবাদী। যাও তাকে মধু খাইয়ে দাও, তারপর লোকটি গিয়ে মধু খাওয়ানোর পর সে আরোগ্য লাভ করল। [ বুখারীঃ ৫৭১৬, মুসলিমঃ ২২১৭ ] এখানে আল্লাহর উক্তি সত্য এবং পেট মিথ্যাবাদী হওয়ার উদ্দেশ্য এই যে, ঔষধের দোষ নাই। রুগীর বিশেষ মেজাযের কারণে ঔষধ দ্রুত কাজ করেনি। এরপর রুগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে উঠে। তবে সমস্ত রোগের জন্য সরাসরি মধু ব্যবহার করতে হবে তা এ আয়াতে বলা হয়নি। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশে তা আরোগ্য দানকারী প্রতিষেধকে পরিণত হয়। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা দুটি আরোগ্যকে আঁকড়ে ধরবে, কুরআন এবং মধু” [ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৫২, মুস্তাদরাকে হাকেম ৪/২০০ ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর হাদীসে বলেনঃ “ তিনটি বস্তুতে আরোগ্য রয়েছে, শিঙ্গা, মধু এবং আগুনের ছেঁক । তবে আমি আমার উম্মাতকে ছেঁক দিতে নিষেধ করি” [ বুখারীঃ ৫৬৮০, মুসলিমঃ ২২০৫ ] তবে আলোচ্য আয়াতে ( شفاء ) শব্দটি থেকে মধু যে প্রত্যেক রোগের ঔষধ, তা বোঝা যায় না। কিন্তু ( شفاء ) শব্দের ( تنوين ) যা ( تعظيم ) এর অর্থ দিচ্ছে, তা থেকে অবশ্যই বোঝা যায় যে, মধুর নিরাময় শক্তি বিরাট ও স্বতন্ত্র ধরণের। যদিও কোন কোন আলেম বলেনঃ মধু সর্বরোগের প্রতিষেধক। তারা মহান পালনকর্তার উক্তির বাহ্যিক অর্থেই এমন প্রবল ও অটল বিশ্বাস রাখেন যে, তারা ফোঁড়া ও চোখের চিকিৎসাও মধুর মাধ্যমে করেন এবং দেহের অন্যান্য রোগেরও। এ কারণেই হয়তঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও মধু পছন্দ করতেন [ দেখুনঃ বুখারীঃ ৫৪৩১, ৫৬১৪, মুসলিমঃ ১৪৭৪, আবুদাউদঃ ৩৭৫১, তিরমিযীঃ ১৮৩২, ইবনে মাজাহঃ ৩৩২৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/৫৯ ] ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার শরীরে ফোঁড়া বের হলেও তিনি তাতে মধুর প্রলেপ দিয়ে চিকিৎসা করতেন। এর কারণ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা কুরআনে কি মধু সম্পর্কে ( فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ) বলেননি? অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ এতে ( অর্থাৎ মধুতে ) মৃত্যু ছাড়া আর সব রকমের রোগের আরোগ্য রয়েছে" । [ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৫৭ ] আয়াতের মর্ম অনুযায়ী আরো জানা গেল যে, ঔষধের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা বৈধ। [ কুরতুবী ] কারণ, আল্লাহ্ তা'আলা একে নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যত্র বলা হয়েছে ( وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ ) [ আল-ইসরাঃ ৮২ ]। হাদীসে ঔষধ ব্যবহার ও চিকিৎসার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে। মোটকথা, চিকিৎসা করা ও ঔষধ ব্যবহার করা যে বৈধ, এ বিষয়ে সকল আলেমই একমত এবং এ সম্পর্কে বহু হাদীস ও রেওয়ায়েত বর্ণিত রয়েছে। [ ৪ ] নিশ্চয় এ ছোট প্রাণীটিকে সঠিক পথে সহজভাবে চলার ইলহাম করা, বিভিন্ন গাছ থেকে মধু নেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া, তারপর সেটাকে মোমের মধ্যে ও মধুর জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে রাখা যা অন্যতম উত্তম বস্তু হিসেবে বিবেচিত। অবশ্যই চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে বড় নিদর্শন রয়েছে। যা তার সৃষ্টিকর্তার মহত্বতার উপর প্রমাণবহ। এর দ্বারা তারা এটার উপর প্রমাণ গ্রহণ করবেন যে, তিনি সব করতে সক্ষম, প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী, দাতা, দয়ালু। [ ইবন কাসীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৬৮-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর এখানে ওয়াহী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইলহাম বা অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দেয়া। মৌমাছিদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এটা বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, ওরা যেন পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং ( মানুষের বাড়ীর ) ছাদে ওদের মৌচাক তৈরী করে। এই দুর্বল সৃষ্টজীবের ঘরটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়! ওটা কতই না মজবুত, কতই না সুন্দর এবং কতই কারুকার্য খচিত!অতঃপর মহান আল্লাহ মৌমাছিদেরকে হিদায়াত করেন যে, ওরা যেন ফল, ফুল এবং ঘাসপাতা হতে রস আহরণ করে ও যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গমনাগমন করে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সময় যেন সরাসরি নিজেদের মৌচাকে পৌঁছে যায়। উঁচু পাহাড়ের চূড়া হোক, মরু প্রান্তর হোক, বৃক্ষ হোক, লোকালয় হোক, জনশূন্য স্থান ইত্যাদি যে স্থানই হোক না কেন ওরা পথ ভুলে না। যত দূরেই গমন করুক না কেন ওরা প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি নিজেদের মৌচাকে নিজেদের বাচ্চা, ডিম ও মধুতে পৌঁছে যায়। ওরা ডানার সাহায্যে মোম তৈরী করে এবং মুখ দ্বারা জমা করে মধু।( আরবি ) এর তাফসীর ‘বশীভূত’ দ্বারাও করা হয়েছে। যেমন ( আরবি ) স্থলেও এটাই ভাবার্থ। সুতরাং ( আরবি ) এটা থেকে ( আরবি ) হবে এর একটি দলীল এটাও যে, লোকেরা মৌচাককে এক শহর হতে অন্য শহর পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট। অর্থাৎ ( আরবি ) এটা বা পথ হতে ( আরবি ) হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর ( রাঃ ) দুটোকেই সঠিক বলেছেন। হযরত আনাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মাছির বয়স হলো চল্লিশ দিন । আর মৌমাছি ছাড়া সমস্ত মাছি আগুনে থাকবে।” ( এ হাদীসটি আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)মধু সাদা, হলদে লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ-এর হয়ে থাকে। ফল, ফুল ও মাটির রঙ-এর বিভিন্নতার কারণেই মধুর এই বিভিন্ন রং হয়ে থাকে। মধুর বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চমকের সাথে সাথে ওর দ্বারা রোগ হতেও আরোগ্য লাভ হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা বহু রোগ হতে আরোগ্য দান করে থাকেন। এখানে ( আরবি ) বলা হয় নাই। এরূপ বললে এটা সমস্ত রোগের আরোগ্য দানকারী রূপে সাব্যস্ত হতো। বরং ( আরবি ) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এতে লোকদের জন্যে শিফা রোগের আরোগ্য) রয়েছে। এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের প্রতিষেধক। ঔষধ সব সময় রোগের বিপরীত হয়ে থাকে। মধু গরম, কাজেই এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের জন্যে উপকারী। মুজাহিদ ( রঃ ) এবং ইবনু জারীর ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনে শিফা রয়েছে। এ উক্তিটি আপন স্থানে সঠিক বটে, কিন্তু এখানে তো মধুর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ফলে এখানে মুজাহিদের ( রঃ ) উক্তির অনুসরণ করা হয়নি। হ্যা, তবে কুরআনের শিফা হওয়ার বর্ণনা অন্য জায়গায় দেয়া হয়েছে। যেমনঃ ( ১৭:৮২ ) এই আয়াতে এবং ( আরবি ) এই আয়াতে ( আরবি ) আল্লাহ পাকের এই উক্তিতে দ্বারা যে মধু উদ্দেশ্য তার দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) কাছে এসে বললোঃ “ আমার ভাই-এর পেট ছুটে গিয়েছে । ( অর্থাৎ খুব পায়খানা হচ্ছে )।” তিনি বলেনঃ “ তাকে মধু পান করিয়ে দাও ।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। আবার সে আসলো এবং বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসুল ( সঃ )! তার রোগ তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । তিনি এবারও বললেনঃ “ যাও, তাকে মধু পান করাও ।” সে গেল এবং তাকে মধু পান। করালো। পুনরায় এসে সে বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তার পায়খানা তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ।” তিনি বললেনঃ “ আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাই-এর পেট মিথ্যাবাদী । তুমি যাও এবং তাকে মধু পান করাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। এবার সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করলো। ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) এবং ইমাম মুসলিম ( রঃ ) তাঁদের সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা)কোন কোন ডাক্তার মন্তব্য করেছেন যে, সম্ভবতঃ ঐ লোকটির পেটে ময়লা আবর্জনা খুব বেশী ছিল। মধুর গরম গুণের কারণে ওগুলি হজম হতে থাকে। ফলে ঐ ময়লা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট অংশগুলি বেরিয়ে যেতে শুরু করে। কাজেই পাতলা মল খুব বেশী হয়ে বেরিয়ে যায়। বেদুঈন ওটাকেই রোগ বৃদ্ধি বলে মনে করে এবং রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) নিকট অভিযোগ করে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে আরো মধু পান করাতে বলেন। এতে ময়লা আবর্জনা পাতলা মলরূপে আরো বেশী হয়ে নামতে শুরু করে। পুনরায় মধু পান করানোর পর পেট সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সে পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে। ফলে রাসূলুল্লাহর ( সঃ ) কথা, যা তিনি আল্লাহ তাআলার ইঙ্গিতেই বলেছিলেন, সত্য প্রমাণিত হয়। হযরত আয়েশা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )হাওয়া ও মধু খুব ভালবাসতো। ( এ হাদীসটিও সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, কিন্তু এটা সহীহ বুখারীর শব্দ )হযরত ইবনু আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ তিনটি জিনিসে শিফা বা রোগ মুক্তি রয়েছে । শিঙ্গা লাগানো মধুপান এবং ( গরম লোহা দ্বারা ) দাগ দিয়ে নেয়া। কিন্তু আমার উম্মতকে আমি দাগ নিতে নিষেধ করছি।” ( এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) বলতে শুনেছেনঃ “ তোমাদের ওষুধগুলির মধ্যে কোন গুলিতে যদি শিফা’ থেকে থাকে তবে সেগুলি হচ্ছে শিঙ্গা লাগানো, মধুপান এবং আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়া, যেটা যে রোগের জন্যে উপযুক্ত । তবে আমি দাগিয়ে নেয়াকে পছন্দ করি না।” ( এ হাদীসটিও সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “ আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়াকে আমি অপছন্দ করি, বরং পছন্দ করি না )হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “রোগের আরোগ্যদানকারী দুটি জিনিসকে তোমরা নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নাও । সে দু’টি জিনিস হচ্ছে মধু ও কুরআন।” ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন )আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী ইবনু আবি তালিব, ( রাঃ ) বলেনঃ “ তোমাদের কেউ যদি তার রোগের শিফা চায়, তবে সে যেন কুরআনের কোন আয়াতকে একটি সহীফায় লিখে নেয় এবং ওটাকে বৃষ্টির পানি দ্বারা ধৌত করে । অতঃপর তার স্ত্রীর নিকট থেকে একটা দিরহাম রৌপ্য মুদ্রা চেয়ে নেয় যা সে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করবে। তারপর ঐ দিরহাম দ্বারা কিছু মধু কিনে নেয় এবং তা পান করে। এইভাবে কয়েকটি কারণে এর দ্বারা শিফা পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি কুরআনে ওটা নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্যে শিফা ( রোগমুক্তি ) ও রহমত স্বরূপ ।” ( ১৭:৮২ ) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ আমি আকাশ হতে বরকতময় পানি বর্ষিয়ে থাকি ।” ( ৫০:৯ ) আর এক জায়গায় বলেছেন ( আরবি ) অর্থাৎ যদি তারা ( তোমাদের স্ত্রীরা ) মহরের কিয়দাংশ ছেড়ে দেয় তবে তা তোমরা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।” ( ৪:৪ ) মধুর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ এতে ( মধুতে ) লোকদের জন্যে শিফা রয়েছে।” ( এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে নেয় তার উপর কোন বড় বালা মসীবত আসে না । ( এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যুবাইর ইবনু সাঈদ এবং তার বর্ণিত হাদীস পরিত্যাজ্য )আবু উবাই ইবনু উম্মি হারাম ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে ( সঃ ) বলতে শুনেছেনঃ “ তোমরা ( আরবি ) ও ( আরবি ) ব্যবহার কর । কেননা, এতে প্রত্যেক রোগের শিফা’ রয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ ( আরবি ) এর অর্থ কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “ মৃত্যু” । ( এ হাদীসটিও ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন )কেউ কেউ বলেছেন যে, ( আরবি ) ঐ মধুকে বলা হয় যা ঘিয়ের মশকে রাখা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে! অর্থাৎ হে মানব মণ্ডলী! মৌমাছির মত অতি দুর্বল ও শক্তিহীন প্রাণী তোমাদের জন্যে মধু ও মোম তৈরী করা, স্বাধীনভাবে বিচরণ করা এবং বাসস্থান ভুল না করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যারা চিন্তা গবেষণা করে তাদের জন্যে এতে আমার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আধিপত্যের বড় নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর বিজ্ঞানময়, জ্ঞানী, দাতা এবং দয়ালু হওয়ার দলীল লাভ করতে পারে।
সূরা নাহল আয়াত 69 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে
- এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
- সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের
- তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারিবর্ষণের মাধ্যমে।
- শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন,
- অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বলল, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ
- যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা
- মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের
- ঐ দিনকে ভয় কর, যে দিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই তার কর্মের
- ইনসাফ অবশ্যম্ভাবী।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাহল ডাউনলোড করুন:
সূরা Nahl mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nahl শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers