কোরান সূরা আ'রাফ আয়াত 72 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Araf ayat 72 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা আ'রাফ আয়াত 72 আরবি পাঠে(Araf).
  
   

﴿فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا مُؤْمِنِينَ﴾
[ الأعراف: 72]

অনন্তর আমি তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করত তাদের মূল কেটে দিলাম। তারা মান্যকারী ছিল না। [সূরা আ'রাফ: 72]

Surah Al-Araf in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Araf ayat 72


কাজে কাজেই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম আমাদের থেকে অনুগ্রহ বশতঃ, আর কেটে দিয়েছিলাম তাদের শিকড় যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল ও যারা মুমিন ছিল না।


Tafsir Mokhtasar Bangla


৭২. অতঃপর আমি হূদ ( আলাইহিস-সালাম ) ও তাঁর মু’মিন সাথীদেরকে আমার দয়ায় নিরাপদে রেখেছি। আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং তারা ঈমান না এনে মিথ্যারোপকারী সেজে নিজেরাই শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে তাদেরকে আমি ধ্বংসের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেছি।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


অতঃপর তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে আমার দয়াতে উদ্ধার করেছিলাম এবং আমার নিদর্শনসমূহকে যারা মিথ্যা মনে করেছিল এবং যারা অবিশ্বাসী ছিল তাদেরকে নির্মূল করেছিলাম। [১] [১] এই জাতির উপর প্রবল ঝঞ্চাবায়ুর আযাব এসেছিল। তা সাত রাত এবং আট দিন পর্যন্ত লাগাতার অব্যাহত ছিল। আর এই ঝঞ্চাবায়ু প্রতিটি জিনিসকে ধূলিসাৎ করে ছেড়েছিল। যে আ'দ গোত্রের লোকেরা নিজেদের শক্তির উপর বড়ই অহংকার প্রদর্শন করত, তাদের লাশগুলো কাটা খেজুর গাছের কান্ডের ন্যায় মাটিতে পড়েছিল। ( সূরা হাক্কার ৬৯:৬-৮ নং, সূরা হূদের ১১:৫৩-৫৬ নং এবং সূরা আহক্বাফের ৪৬:২৪-২৫ নং আয়াতগুলো দ্রষ্টব্য। )

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তারপর আমারা তাকে ও তার সাথীদেরকে আমাদের অনুগ্রহে উদ্ধার করেছিলাম; আর আমাদের আয়াতসমূহে যারা মিথ্যারোপ করেছিল এবং যারা মুমিন ছিল না তাদেরকে নির্মূল করেছিলাম []। [] এ অনুবাদটি এ হিসেবে যে, তাদের ধ্বংসের কারণ দু’টি। তারা মিথ্যারোপ করেছিল এবং ঈমান না এনে কুফরী করেছিল। [ আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর ] আয়াতের অর্থ এভাবেও করা যায় যে, যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছিল তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছি। আর তারা ঈমান গ্রহণকারী ছিল না, কারণ তারা আয়াতসমূহের উপর মিথ্যারোপ এবং সৎকাজ ছেড়ে দিয়েছিল। [ মুয়াসসার ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৭০-৭২ নং আয়াতের তাফসীর: কাফিরগণ হযরত হূদ ( আঃ )-এর সাথে কিরূপ অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছিল তারই বর্ণনা আল্লাহ পাক এখানে দিচ্ছেন। তারা তাকে বলেছিল-“ হে হূদ ( আঃ )! আমাদের পূর্বপুরুষরা যাদের ইবাদত-বন্দেগী করতো তাদেরকে ছেড়ে আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি এজন্যেই কি তুমি আমাদের কাছে এসেছো? আচ্ছা, তুমি যদি তোমার কথায় সত্যবাদী হও তবে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর ।” যেমন কাফির কুরাইশরা বলছে- “ তুমি আমাদেরকে শাস্তির যে ভয় দেখাচ্ছ তা যদি সত্য হয় তাহলে আকাশ থেকে পাথর বর্ষিয়ে নাও এবং আমাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেই ফেলো ।” মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) বলেন যে, হযরত হূদ ( আঃ )-এর কওম মূর্তিসমূহের পূজা করতো। একটি মূর্তির নাম ছিল সামাদ, একটির নাম ছিল ‘সামুদ' এবং একটির নাম ছিল ‘হাবা’! এজন্যেই হূদ ( আঃ ) তাদেরকে বলেছিলেন, তোমাদের একথা বলার কারণেই তোমাদের উপর আল্লাহর গযব ওয়াজিব হয়ে গেছে। বলা হয়েছে যে, ( আরবী ) শব্দটি ( আরবী ) -এরই প্রতিশব্দ । হ্রদ ( আঃ ) বলেনঃ “ তোমরা কি আমার সাথে এমনসব মূর্তির ব্যাপার নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছে যেগুলোর নাম তোমরা নিজেরা রেখেছে বা তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছে । এসব মূর্তি তো তোমাদের কোন লাভও করতে পারে না এবং কোন ক্ষতিও করতে পারে না। আল্লাহ তোমাদেরকে এগুলোর ইবাদত করার কোন সনদও দেননি এবং তোমাদের কাছে এর কোন দলীল প্রমাণও নেই। যদি কথা এটাই হয় তবে ঠিক আছে, তোমরা শাস্তির জন্যে অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি। এটা রাসূলের পক্ষ থেকে তাঁর কওমের প্রতি কঠিন হুমকি ও ভয় প্রদর্শন। সুতরাং এর পরই ইরশাদ হচ্ছে- আমি হদ ( আঃ )-কে এবং তার অনুসারী সঙ্গী সাথীদেরকে তো বাঁচিয়ে নিলাম, কিন্তু যারা তার উপর ঈমান আনেনি এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল আমি তাদের মূলোৎপাটন করলাম। আদ জাতির ধ্বংসের ঘটনা কুরআন মাজীদের অন্য জায়গায় এরূপ বর্ণিত আছে- “ তাদের উপর আমি এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিবায়ু প্রেরণ করলাম এবং যাদের উপর দিয়ে ওটা বয়ে গেল তাদের সবকেই তচনচ্ করে দিলো ।” যেমন অন্য একটি আয়াতে আছে- “ আর আ’দ সম্প্রদায়কে এক প্রচণ্ড ঝঞাবায়ু দ্বারা বিধ্বস্ত করা হয়েছে । যে বায়ুকে আল্লাহ সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত তাদের উপর একাধারে চাপিয়ে রেখেছিলেন, অতএব, তুমি ঐ সম্প্রদায়কে ওতে এমনভাবে ভূপতিত দেখতে পেতে, যেন তারা উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডসমূহ। সুতরাং তাদের কাউকেও কি তুমি অবশিষ্ট দেখতে পাও?” তাদের ঔদ্ধত্যের কারণে তাদের উপর এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিবার্তা প্রেরণ করে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ঐ বায়ু তাদেরকে আকাশে নিয়ে উড়তেছিল এবং পরে মাথার ভরে যমীনে নিক্ষেপ করে দিচ্ছিলো। ফলে তাদের মাথাগুলো ভেঙ্গে দেহ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিলো। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেছেন যে, তারা সেই খেজুর গাছের কাণ্ডের মত হয়ে গিয়েছিল যেগুলো সম্পূর্ণরূপে ডাল-পাতা শূন্য ছিল। ঐ লোকগুলো ইয়ামানে আম্মান ও হারামাউতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতো। তাছাড়া তারা সারা দুনিয়ায় দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা শক্তির দাপটে জনগণের উপর অত্যাচার চালাতো। তারা মূর্তিপূজা করতো। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে হূদ ( আঃ )-কে পাঠালেন। তিনি তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশীয় ছিলেন। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন যে, তারা যেন আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করে নেয় এবং তার সাথে কাউকে শরীক না করে। আর তারা যেন লোকদের উপর অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করে এবং তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতঃ বলে- “ আমাদের অপেক্ষা বড় শক্তিশালী আর কে আছে?” অন্যান্য লোকেরাও তাদের অনুসরণ করে । হ্রদ ( আঃ )-এর প্রতি ঈমান আনয়নকারী লোকের সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। যখন আ’দ সম্প্রদায় এরূপ অবাধ্যতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে শুরু করে, আর বিনা প্রয়োজনে বড় বড় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করে, তখন হযরত হূদ ( আঃ ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “ তোমরা সব জায়গায় বিনা প্রয়োজনে ঘরবাড়ী নির্মাণ করছে এবং ওগুলোকে এতো মজবুত করে তৈরী করছো যে, মনে হচ্ছে তোমরা এখানে চিরকাল থাকবে! যখন তোমরা কারো উপর ক্ষমতা প্রাপ্ত হচ্ছে তখন তার সাথে অত্যন্ত কঠোরতাপূর্ণ ব্যবহার করছো! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার কথা মেনে চল ।” তারা তখন তাকে বললোঃ “ হে হূদ ( আঃ )! তুমি প্রমাণবিহীন কথা বলছো । তোমার কথায় আমরা আমাদের মা’বৃদদেরকে ছেড়ে দিতে পারি না এবং তোমার উপর ঈমানও আনব না। আমাদের তো ধারণা হচ্ছে যে, তোমার উপর আমাদের কোন মা'বুদের গযব পতিত হয়েছে, ফলে তুমি পাগল হয়ে গেছো।” হুদ ( আঃ ) তাদেরকে বললেনঃ “ আমি আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাক যে, আমি তোমাদের শিকযুক্ত চিন্তা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত । এখন তোমরা সবাই মিলে আমার সাথে যা কিছু ছল-চাতুরী করতে চাও কর এবং আমাকে অবকাশ দিয়ো না। আমি আল্লাহর উপরই ভরসা করছি। তিনি আমার প্রভু এবং তোমাদেরও প্রভু। আমার প্রতিপালক যা কিছু বলেন ঠিকই বলেন।” ঐ লোকগুলো যখন কুফরীর উপর অটল থাকলো তখন আল্লাহ তা'আলা তিন বছর পর্যন্ত তাদের উপর বৃষ্টি বন্ধ রাখলেন। তারা তখন কঠিন বিপদে পতিত হলো। যখন তারা কোন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতো তখন সেই বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্যে আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানাতো। ঐ সময় তারা কাউকে বায়তুল্লাহ শরীফে পাঠিয়ে দিতো। ঐ যুগে তাদের গোত্রের আমলীক নামে পরিচিত কতকগুলো লোক মক্কায় বসবাস করছিল। তারা ছিল আমালীক ইবনে লাও ইবনে সাম ইবনে নূহ ( আঃ )-এর বংশধর। মুআবিয়া ইবনে বকর নামক একটি পোর্ক ছিল তাদের নেতা। তার মা ছিল আ’দ সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তার নাম ছিল জুলহিয়া । সে ছিল খাবীরীর কন্যা। যা হাক, আ’দ সম্প্রদায় সত্তরজন লোকের এক প্রতিনিধি দলকে হারাম শরীফের দিকে পাঠিয়ে দিলো, যেন তারা কা’বাতুল্লাহয় গিয়ে পানি বর্ষণের জন্যে প্রার্থনা করে। ঐ লোকগুলো মক্কার বাইরে তাদের গোত্রীয় লোক মুআবিয়ার নিকট অবস্থান করে। এক মাস পর্যন্ত তারা তার কাছেই অবস্থান করতে থাকে। তারা সেখানে মদ্যপান করতে এবং মুআবিয়ার দু’জন গায়িকা দাসীর গান শুনতো। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে তাদের অবস্থান মুআবিয়ার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু অতিথিদেরকে বিদায় হয়ে যাওয়ার কথা বলতে সে লজ্জাবোধ করছিল। অবশেষে সে কতকগুলো ছন্দ রচনা করলো এবং ওগুলো তাদের সামনে গায়িকাদেরকে গাইতে বললো। ছন্দগুলোর অনুবাদ নিম্নরূপঃ“ হে কায়েল! তোমার উপর আফসোস! যাও, প্রার্থনা কর । হয়তো আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণের জন্যে মেঘ পাঠাবেন। ফলে আ’দ সম্প্রদায়ের ভূমি অদ্র ও সতেজ হয়ে উঠবে। কেননা, আ’দ সম্প্রদায়ের অবস্থা তো এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা ভালভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। পিপাসায় এখন তাদের ওষ্ঠাগত প্রাণ। বুড়ো ও যুবক কারো জীবনের আশা নেই। তাদের মহিলাদেরও অবস্থা ভাল নয়। ক্ষুধা ও পিপাসায় এখন তাদের চলৎশক্তি রহিত। বন্য জঙুগুলো অতি সহজেই তাদের বস্তিতে ঢুকে পড়েছে। কেননা, আ’দ সম্প্রদায় সম্পর্কে তাদের এখন কোন ভয় নেই যে, তারা ওদেরকে তীর মেরে হত্যা করবে। কারণ, এখন তাদের তীর চালাবার শক্তিও নেই। সুতরাং জেনে রেখো যে, তাদের এখন দিবস ও রজনী শেষ হয়েই গেছে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দল তোমাদের ন্যায় এতো নিষ্ঠুর হতে পারে না। তোমাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হাক!” একথা শুনে ঐ প্রতিনিধি দলের লোকদের চৈতন্য ফিরলো। তারা কাবা ঘরে গিয়ে কওমের জন্যে প্রার্থনা করতে শুরু করলো। ঐ প্রতিনিধি দলের নেতার নাম ছিল কায়েল। আল্লাহর হুকুমে তিন খণ্ড মেঘ প্রকাশিত হলো। এক খণ্ড সাদা, এক খণ্ড কালো এবং এক খণ্ড লাল। আকাশ থেকে একটা শব্দ শোনা গেল- “ নিজের কওমের জন্যে এই তিন খণ্ড মেঘের যে কোন একখণ্ড পছন্দ করে নাও ।”কায়েল বললোঃ “ আমি কালো মেঘখণ্ডই পছন্দ করলাম । কালো মেঘ থেকেই অধিক বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে থাকে।” পুনরায় শব্দ আসলো-“ তুমি তো ভষ্ম ও মাটিকে পছন্দ করলে । আ’দ সম্প্রদায়ের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। এ মেঘ তো পিতাকে ছাড়বে না এবং পুত্রকেও ছাড়বে না, বরং সবকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু আ’দ সম্প্রদায়ের বানী আযিয়া গোত্র নিরাপত্তা লাভ করবে।” আ’দ সম্প্রদায়ের এ গোত্রটি মক্কায় অবস্থান করছিল। তারা শাস্তির কিছুই টের পায়নি। আ’দ সম্প্রদায়ের সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যারা রক্ষা পেয়েছিল তারা ছিল এই বানী আযিয়া গোত্রেরই লোক। এর বংশ ও সন্তানদের মধ্য থেকে ঐ কওম অবশিষ্ট থাকে যাদেরকে আ’দে সানী’ বা দ্বিতীয় আ’দ বলা হয়। কথিত আছে যে, আল্লাহ তা'আলা একটা কলো মেঘখণ্ড পাঠিয়েছিলেন যাকে কায়েল পছন্দ করেছিল এবং এটাই ঐ সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। ঐ মেঘখণ্ডটি মুগীস নামক একটি উপত্যকা হতে উঠেছিল। জনগণ ওটা দেখে খুব খুশী হয় এবং বলে- “ এটা তো বর্ষণকারী মেঘ ।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ প্রবল ঝটিকা এই মেঘ বয়ে নিয়ে আসে । এরই মধ্যে ছিল যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, যা সব কিছুকেই ধ্বংস করে দেয়। এই মেঘের মধ্যে একটি জিনিস সর্বপ্রথম যে দেখেছিল, সে ছিল একটি মহিলা। তার নাম ছিল মুমীদ। সে মেঘের মধ্যে যা দেখেছিল তা দেখে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে সে বলেঃ “ এই মেঘের মধ্যে আগুনের শিখা ছিল । কতকগুলো লোককে দেখা যাচ্ছিল যারা ঐ শিখাগুলো টেনে আনছিল।” সাতরাত ও আটদিন পর্যন্ত ঐ মেঘ হতে পানি বর্ষিতে থাকে। আ’দ সম্প্রদায়ের এমন লোক অবশিষ্ট ছিল না যে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল। হূদ ( আঃ ) এবং তাঁর সঙ্গী মুমিনগণ এখান থেকে সরে গিয়েছিলেন এবং একটি শস্যক্ষেত্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন। ঠাণ্ডা বায়ু তাদের দেহ স্পর্শ করছিল এবং তাদের আত্মাকে সতেজ ও পরিতৃপ্ত রাখছিল । কিন্তু আ’দ সম্প্রদায়ের প্রতি ঐ মেঘ ঝটিকা পাথর বর্ষণ করছিল। তাদের মাথাগুলো ভেঙ্গে গিয়েছিল। এ ঘটনার বর্ণনা খুবই দীর্ঘ এবং এর রচনাভঙ্গীও বেশ বিস্ময়কর। এর থেকে কয়েকটি ফলাফলও বের হয় । আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ আমার আযাব যখন এসে পৌঁছেই গেল তখন আমি হূদ ( আঃ )-কে এবং তার সঙ্গীয় মুমিনদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম । যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে তারা নিরাপদে থাকলো।”হারিসুল বিকরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি আ’লা ইবনে হারামীর অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট যাচ্ছিলাম। আমি কওমের পার্শ্ব দিয়ে গমন করছিলাম। এমতাবস্থায় বানী তামীম গোত্রের একটি মহিলা যে তার গোত্র থেকে ছুটে গিয়ে একা পড়ে গিয়েছিল, আমাকে বললো- “ হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এর কাছে নিয়ে চলুন । তাঁর আমার প্রয়োজন রয়েছে। আমি তখন তাকে আমার উটের উপর বসিয়ে নিয়ে মদীনায় পৌঁছলাম। মসজিদ লোকে পরিপূর্ণ ছিল এবং একটি কালো পতাকা উত্তোলিত ছিল। হযরত বিলাল ( রাঃ ) স্বীয় তরবারী লটকিয়ে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম- এ লোকগুলোর জমায়েত হওয়ার কারণ কি? উত্তর হলোঃ “ আমর ইবনুল আস ( রাঃ )-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রেরণ করা হচ্ছে ।” আমি বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) স্বীয় কক্ষে প্রবেশ করলেন। আমি তার কাছে হাযির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। আমি তার কাছে হাযির হয়ে সালাম করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- “ তোমার ও তাদের মধ্যে মননামালিন্য আছে কি?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যাঁ, তাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ রয়েছে । এখন আমি আপনার নিকট আসছিলাম, এমতাবস্থায় পথে বানী তামীম গোত্রের এক বুড়ীর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। সে তার গোত্র থেকে ছাড়া পড়ে গিয়েছিল। সে আমাকে বলে- আল্লাহর রাসূল ( সঃ )-এর কাছে আমার প্রয়োজন রয়েছে । সুতরাং আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন। সে দরজাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( আঃ ) তাকে ডেকে নিলেন।সে এসে পড়লে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমার ও বানী তামীমের মধ্যে আড়াল করে দিন। একথা শুনে বানী তামীম গোত্রের ঐ বুড়ীটি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো এবং বললোঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! তাহলে এই নিরাশ্রয়া কোথায় আশ্রয় নেবে? আমি তখন বললাম, আমার এই দৃষ্টান্ত তো হচ্ছে “বকরী নিজেই নিজের মৃত্যুকে টেনে আনলো” -এই প্রবাদ বাক্যের মতই । আমি এই বুড়ীকে নিজের সোয়ারীর উপর চড়িয়ে আনলাম, আমি কি জানতাম যে, সেই আমার শত্রুরূপে সাব্যস্ত হবে! আমি আ’দ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মত হয়ে যাই এর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ আ’দ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের ঘটনাটি কি?” অথচ তিনি এটা আমার চেয়ে অনেক বেশী জানতেন । কিন্তু তিনি এটা আমার নিকট থেকে শুনতে আগ্রহী ছিলেন। সুতরাং আমি বলতে লাগলাম, আ’দ সম্প্রদায় দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়েছিল। তাই তারা একটা প্রতিনিধি দল মক্কায় প্রেরণ করে। তাদের নেতা ছিল কায়েল নামক একটি লোক। তারা মক্কায় গিয়ে মুআবিয়া ইবনে বকরের নিকট অবস্থান করে। সেখানে তারা দীর্ঘ এক মাস ধরে বাস করে এবং মদ্যপানরত.থাকে। তাছাড়া তারা জারাদাতান নাম্নী" দু'টি দাসীর গান শুনতে থাকে। অতঃপর তাদের নেতা কায়েল মুহরার পাহাড়ের দিকে গমন করে এবং প্রার্থনা জানিয়ে বলে- “ হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে আমরা কোন রোগীর রোগ মুক্তির দুআ’র জন্যে আসিনি বা কোন বন্দীর মুক্তিপণের জন্যে প্রার্থনা করছি না । বরং আমাদের প্রার্থনা এই যে, আপনি আ’দ সম্প্রদায়ের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন।” তখন আল্লাহর হুকুমে তিনখণ্ড মেঘ প্রকাশিত হলো ( মেঘখণ্ডগুলো ছিল সাদা, কালো ও লাল )। দৈববাণী হলো- “ যে কোন একখণ্ড মেঘ গ্রহণ কর ।” সে কালো মেঘ খণ্ডটি পছন্দ করল। পুনরায় শব্দ আসলো-“ তুমি তো মাটি পাবে । আ’দ সম্প্রদায়ের একটি প্রাণীও রক্ষা পাবে না বরং সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।” অতঃপর আল্লাহ তা'আলা একটা প্রবল ঝটিকা প্রেরণ করেন। সেই বায়ু ছিল বায়ু ভাণ্ডারের মধ্যে যেন আমার আংটির বৃত্তের সমপরিমাণ। তাতে সমস্ত আ’দ সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে গেল। এখন আরবের লোকেরা কোন প্রতিনিধি দল পাঠালে প্রবাদ বাক্য হিসেবে বলে থাকেঃ আদ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মতো হয়ো না। ( এটা ইমাম তরমিযী (রঃ ), ইমাম নাসাঈ ( রঃ ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) এটা তাখরীজ করেছেন)

সূরা আ'রাফ আয়াত 72 সূরা

فأنجيناه والذين معه برحمة منا وقطعنا دابر الذين كذبوا بآياتنا وما كانوا مؤمنين

سورة: الأعراف - آية: ( 72 )  - جزء: ( 8 )  -  صفحة: ( 159 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু।
  2. তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল।
  3. হে হারূণ-ভাগিনী, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ছিল না ব্যভিচারিনী।
  4. আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেমন পরীক্ষা করেছি উদ্যানওয়ালাদের, যখন তারা শপথ করেছিল যে, সকালে বাগানের
  5. তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল। তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট
  6. এবং যারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে বিতর্ক করে, তারা যেন জানে যে, তাদের কোন পলায়নের জায়গা
  7. সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন।
  8. তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।
  9. সে বলল-কি দুর্ভাগ্য আমার! আমি সন্তান প্রসব করব? অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত
  10. অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আ'রাফ ডাউনলোড করুন:

সূরা Araf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Araf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত আ'রাফ  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত আ'রাফ  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত আ'রাফ  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত আ'রাফ  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Sunday, December 22, 2024

Please remember us in your sincere prayers