কোরান সূরা ইউসুফ আয়াত 86 তাফসীর
﴿قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾
[ يوسف: 86]
তিনি বললেনঃ আমি তো আমার দুঃখ ও অস্থিরতা আল্লাহর সমীপেই নিবেদন করছি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তা তোমরা জান না। [সূরা ইউসুফ: 86]
Surah Yusuf in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Yusuf ayat 86
তিনি বললেন -- ''আমার অসহনীয় দুঃখ ও আমার বেদনা নিবেদন করছি আল্লাহ্রই কাছে, আর আমি আল্লাহ্র তরফ থেকে জানি যা তোমরা জান না।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৮৬. তাদের পিতা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আমি আমার দুঃখ-বেদনা কেবল আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি। দুর্দশাগ্রস্তের ডাকে আল্লাহর সাড়া দেয়া এবং তার প্রতি তাঁর অফুরন্ত দয়া, করুণা এবং প্রতিদানের বিষয়ে আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সে বলল, ‘আমি আমার অসহনীয় বেদনা ও দুঃখ শুধু আল্লাহরই নিকট নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহর নিকট হতে তা জানি, যা তোমরা জান না। [১] [১] এর উদ্দেশ্য, হয় সেই ইউসুফের দেখা স্বপ্ন যার সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, এর ব্যাখ্যা ( বাস্তবতা ) অবশ্যই সামনে আসবে এবং তিনি ইউসুফকে সিজদা করবেন। অথবা তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, ইউসুফ জীবিত আছে, জীবনে অবশ্যই তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
তিনি বললেন, ‘আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ শুধু আল্লাহ্র কাছেই নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে তা জানি যা তোমরা জান না [ ১ ]। [ ১ ] অর্থাৎ ইয়াকূব ‘আলাইহিস্ সালাম ছেলেদের কথা শুনে বললেনঃ “ আমি আমার ফরিয়াদ ও দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা তোমাদের অথবা অন্য কারো কাছে করি না; বরং আল্লাহ্র কাছে করি । কাজেই আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও।” সাথে সাথে এ কথাও প্রকাশ করলেন যে, “ আমার স্মরণ করা বৃথা যাবে না । আমি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এমন কিছু জানি, যা তোমরা জান না”। এর কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে- ( এক ) আল্লাহ্ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি আমাকে সবার সাথে মিলিত করবেন। ( দুই ) আমি জানি যে, আল্লাহ্ তা'আলা কায়মনো বাক্যে দো'আকারীর দো'আ ফেরৎ দেন না। ( তিন ) আমি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জানি যে, ইউসুফ জীবিত। ( চার ) অথবা, আমি জানি যে, ইউসুফের স্বপ্ন সত্য হবে। ( পাঁচ ) অথবা, আমি মুসীবতে ধৈর্য্য ধারণ করার কারণে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এমন কিছু আশা করি, যা তোমরা কর না। [ ফাতহুল কাদীর ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৮৩-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর ছেলেদের মুখে এ খবর শুনে হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) ঐ কথাই বললেন যা তিনি ইতিপূর্বে বলেছিলেন যখন তাঁর ছেলেরা ইউসুফের ( আঃ ) জামায় মিথ্যা রক্ত মাখিয়ে তার সামনে হাজির করেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “ এখন ধৈর্য ধারণই উত্তম ।” তিনি বুঝে নেন যে, এবারও তাঁর ছেলেরা বানানো কথা বলছে। ছেলেদেরকে এ কথা বলার পর তিনি নিজের আশা প্রকাশ করেন, যে আশা তিনি মহান আল্লাহর কাছে করছিলেন। তিনি বলেন যে, খুব সম্ভব অতি সত্ত্বরই আল্লাহ তাআ’লা তার তিন ছেলেকেই তার সাথে সাক্ষাৎ করাবেন। অর্থাৎ ইউসুফকে ( আঃ ) বিনইয়ামীনকে এবং বড় ছেলে রাওভীলকে, যিনি মিসরে এই উদ্দেশ্যে রয়ে গেছেন যে, সুযোগ পেলে তিনি গুপ্তভাবে বিনইয়ামীনকে নিয়ে পালিয়ে আসবেন অথবা মহান আল্লাহ স্বয়ং কোন উপায় করে দেবেন।তিনি বলেনঃ “ আল্লাহ তাআ’লা সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় । তিনি আমার অবস্থা সম্যক অবগত। তাঁর সমস্ত কাজ হিকমতে পরিপূর্ণ। এখন তাঁর নতুন দুঃখ ও শোক পুরাতন শোককেও জাগিয়ে তুললো। হযরত ইউসুফের ( আঃ ) বিরহ বিচ্ছেদে তিনি একেবারে ভেঙ্গে পড়লেন। হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর ( রঃ ) বলেন যে, দুঃখ ও বিপদের সময় শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মদিয়াকেই ( সঃ ) ( আরবি ) ( নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তনকারী ) ( ২: ৫৬ ) বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী উম্মতবর্গ তাদের নবীগণসহ এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত ছিলেন। দেখা যাচ্ছে যে, হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) এই অবস্থায় ( আরবি ) এই কথা বলেছিলেন। শোকে, দুঃখে হযরত ইয়াকুবের ( আঃ ) চোখ দু’টি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি ছিলেন অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিস্ট। অর্থাৎ তিনি মাখলুকের কারো কাছে কোন অভিযোগ করতেন না। সদা সর্বদা তিনি অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনা ভারাক্রান্ত অবস্থায় থাকতেন। হযরত আহ্নাফ ইবনু কায়েস ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ হযরত দাউদ ( আঃ ) আল্লাহ তাআ’লার নিকট আরয করেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! বানী ইসরাঈল আপনার কাছে হযরত ইবরাহীম ( আঃ ), হযরত ইসহাক ( আঃ ) ও হযরত ইয়াকুবের ( আঃ ) মাধ্যমে প্রার্থনা করে থাকে । আমাকে তাদের জন্যে চতুর্থ ব্যক্তি করে দিন।” তখন আল্লাহ তাআ’লা তাঁকে ওয়াহীর দ্বারা জানিয়ে দেনঃ “ হে দাউদ ( আঃ )! নিশ্চয় ইবরাহীমকে ( আঃ ) আমার কারণে আগুণে নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং ঐ সময় সে ধৈর্য ধারণ করেছিল । তুমি এখনো ঐ রূপ পরীক্ষায় পতিত হও নাই। ইসহাক ( আঃ ) নিজেকে আল্লাহর পথে কুরবানী করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মত হয়েছিল। তোমার উপর কিন্তু এখনো এই পরীক্ষা আসে নাই। আর ইয়াকুব ( আঃ ) হতে তার কলিজার টুকরাকে পৃথক করে দেয়া হয়েছিল। ঐ সময় সে সবর করেছিল। তুমি এখনো ঐ ভাবে পরীক্ষিত হও নাই।” ( এ হাদীসটি তাফসীরে ইবনে হাতিমে রয়েছে। এ রিওয়াইয়াতটি মুরসাল। এতে নাকারাত ও রয়েছে। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, “ যাবীহুল্লাহ” হচ্ছেন হযরত ইসহাক (আঃ ); অথচ সঠিক কথা এই যে, “যাবীহুল্লাহ” হচ্ছেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক অবগত । খুব সম্ভব আহনাফ ইবনু কায়েস ( রঃ ) এই রিওয়াইয়াতটি বনী ইসরাইল হতে গ্রহণ করেছেন। যেমন কা'ব, অহাব প্রভৃতি হতে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধকারী)বর্ণিত আছে যে, মিসরে বিনইয়ামীনের বন্দীত্বের অবস্থায় হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) হযরত ইউসুফের কাছে ( আঃ ) পত্র লিখেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর করুণা আকর্ষণ করে বলেছিলেনঃ “ আমরা বিপদগ্রস্ত লোক । আমার দাদা হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আমার পিতা হযরত ইসহাক ( আঃ ) কে কুরবানী দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল স্বয়ং আমি ইউসুফের ( আঃ ) বিচ্ছেদের দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছি।” ( এটাও বনী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াত। সনদ দ্বারা এটা সাব্যস্ত নয় )হযরত ইয়াকুবের ( আঃ ) পূত্রগণ পিতার এই অবস্থা দেখে তাঁকে সান্ত্বনার সুরে বলেনঃ “ আব্বাজান! ইউসুফের ( আঃ ) জন্যে এতো চিন্তা করবেন না । নইলে এই চিন্তা আপনাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ আমি তো তোমাদেরকে কিছুই বলছি না । আমি আমার মহান প্রতিপালকের কাছে আমার দুঃখ প্রকাশ করছি। তাঁর কাছে আমি অনেক কিছু আশা করি। তিনি কল্যাণদাতা। ইউসুফের ( আঃ ) স্বপ্নের কথা আমি ভুলি নাই। ঐ স্বপ্নের তাৎপর্য অবশ্যই একদিন প্রকাশিত হবে।”বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) কে তার এক অন্তরঙ্গ বন্ধু জিজ্ঞেস করেনঃ “ কিভাবে আপনার চক্ষু নষ্ট হয়ে গেল এবং কিসে আপনার পিঠকে বাঁকা করে দিলো?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ইউসুফের ( আঃ ) জন্যে কেঁদে কেঁদে আমি চক্ষু নষ্ট করে ফেলেছি এবং বিনইয়ামীনের দুঃখ ও বেদনা আমার পিঠ বাঁকা করে দিয়েছে ।” ঐ সময়েই হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁর নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ “ আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়ে বলেছেনঃ “অন্যের কাছে আমার অভিযোগ করতে তুমি লজ্জা কর না?” হযরত ইয়াকুব ( আঃ ) তৎক্ষণাৎ বলেনঃ “আমি আমার অসহনীয় বেদনা, আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকট নিবেদন করছি ।” হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তখন তাকে বলেনঃ “ আপনার অভিযোগ সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা পূর্ণ ওয়াকিফহাল ।” ( এটাও তাফসীরে ইবনু হাতিমে হযরত আনাস ইবনু মা’লিক (রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তবে এটাও গারীব হাদীস এবং এতে অস্বীকৃতিও রয়েছে)
সূরা ইউসুফ আয়াত 86 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ কিতাব।
- তোমরা কি কানকথা বলার পূর্বে সদকা প্রদান করতে ভীত হয়ে গেলে? অতঃপর তোমরা যখন সদকা
- আপনি বলুনঃ তিনিই শক্তিমান যে, তোমাদের উপর কোন শাস্তি উপর দিক থেকে অথবা তোমাদের পদতল
- আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোক হল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল
- এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।
- তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা সদকা বন্টনে আপনাকে দোষারূপ করে। এর থেকে কিছু পেলে
- সেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মত।
- এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে
- অতঃপর মূসা তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করল, হঠাৎ তা তাদের অলীক কীর্তিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল।
- তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন? যদি তিনি ইচ্ছা করেন,
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা ইউসুফ ডাউনলোড করুন:
সূরা Yusuf mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Yusuf শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers