কোরান সূরা জুমু'আ আয়াত 9 তাফসীর
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
[ الجمعة: 9]
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। [সূরা জুমু'আ: 9]
Surah Al-Jumuah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Jumuah ayat 9
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন জুমু'আর দিনে নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্র স্মরণে তাড়াতাড়ি করবে ও বেচা-কেনা বন্ধ রাখবে। এইটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
৯. হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো এবং তাঁর প্রবর্তিত বিধান অনুযায়ী আমল করে থাকো জুমআর দিন ইমাম মিম্বরে আরোহণ করার পর যখন আযান দেয়া হয় তখন তোমরা খুৎবা ও নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে তাড়াতাড়ি যাও এবং বিক্রয় বন্ধ করো। যেন তা তোমাদেরকে আনুগত্য থেকে বারণ করতে না পারে। জুমআর নামাযের দিকে তাড়াতাড়ি যাওয়া ও বিক্রয় বন্ধ করার এ নির্দেশ তোমাদের জন্য অতি উত্তম যদি তোমরা তা জানতে। অতএব, তোমরা নির্দেশিত বিষয়ের আনুগত্য করো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
হে বিশ্বাসীগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। [১] এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর। [১] এই আযান কিভাবে দেওয়া হবে, তার শব্দাবলী কি হবে? কুরআন মাজীদে কোথাও তার উল্লেখ নেই। অবশ্য হাদীসে আছে। এ থেকে জানা যায় যে, হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝাও সম্ভব নয় এবং তার উপর আমল করাও সম্ভব নয়। 'জুমআহ'কে জুমআহ এই জন্য বলা হয় যে, এই দিনে আল্লাহ তাআলা সমস্ত বস্তুর সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করেন। যেন সকল সৃষ্টি এই দিন 'জমা' ( একত্রিত ) হয়েছে। অথবা নামাযের জন্য মানুষ জমা ও সমবেত হয়, তাই এই দিনকে জুমআহর দিন বলা হয়। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) فَاسْعَوْا ( ধাবিত হও ) এর অর্থ এই নয় যে, দৌড়ে এস। বরং অর্থ হল, আযানের পর সত্বর চলে এস এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ কর। কেননা, হাদীসে নামাযের জন্য দৌড়ে আসতে নিষেধ এবং ধীর-স্থিরতার সাথে আসতে তাকীদ করা হয়েছে। ( বুখারী, আযান অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসজিদ অধ্যায় ) কেউ কেউ وَذَرُوا الْبَيِعَ ( ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর বা কেনাবেচা বন্ধ কর )-কে দলীল বানিয়ে বলেছেন যে, জুমআহ কেবল শহরেই ফরয, গ্রামবাসীদের উপর ফরয নয়। কেননা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় কেবল শহরেই হয়, গ্রাম-গঞ্জে হয় না। অথচ প্রথমতঃ দুনিয়াতে কোন গ্রাম এমন নেই, যেখানে কেনাবেচা এবং কোন ব্যবসা হয় না। অতএব এ দাবীই হল বাস্তবতার বিপরীত। দ্বিতীয়তঃ বেচাকেনা ও ব্যবসা বলতে বুঝানো হয়েছে, যাবতীয় পার্থিব ব্যস্ততাকে; তা যেমন এবং যে প্রকারেরই হোক না কেন, জুমআর আযানের পর তা ত্যাগ করতে হবে। গ্রামবাসীদের বৈষয়িক ব্যস্ততা থাকে না কি? চাষাবাদ, ঘর-সংসারের নানা ব্যস্ততা দুনিয়া থেকে ভিন্ন জিনিস নাকি?
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
হে ঈমানদারগণ ! জুমু’আর দিনে [ ১ ] যখন সালাতের জন্য ডাকা হয় [ ২ ] তখন তোমারা আল্লাহর স্বরণে ধাবিত হও [ ৩ ] এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমারা জানতে। [ ১ ] এই দিনটি মুসলিমদের সমাবেশের দিন। তাই এই দিনকে "ইয়াওমুল জুম'আ' বলা হয়। এই দিনের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হাদীসে এসেছে; যেমন, "আল্লাহ তা'আলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুম'আর দিন [ মুসলিম: ২৭৮৯ ] আরও এসেছে, “ যে দিনগুলোতে সূৰ্য উদিত হয় তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে, জুম'আর দিন । এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম সৃজিত হন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয় এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। আর কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।” [ মুসলিম: ৮৫৪ ] আরও এসেছে, “এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দো'আই করে, তাই কবুল হয় [ বুখারী:১৯৩৫, মুসলিম: ৮৫২ ] আল্লাহ তা'আলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু পূৰ্ববতীর্ণ উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইয়াহুদীরা "ইয়াওমুস সাব্ত” তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয় এবং নাসারারা রবিবারকে। আল্লাহ তা'আলা এই উম্মতকে তওফীক দিয়েছেন যে, তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছে। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ আমরা সবশেষে এসেও কিয়ামতের দিন অগ্রণী হব । আমরাই প্রথম জান্নাতে প্ৰবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল, আর আমাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি, তারা এতে মতভেদ করেছে। অত:পর আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনের সঠিক হেদায়াত করেছেন। তা হলো, জুম'আর দিন। সুতরাং আজ আমাদের, কাল ইয়াহুদীদের। আর পরশু নাসারাদের।” [ বুখারী: ৮৭৬, মুসলিম: ৮৫৫ ] সম্ভবত ইয়াহুদীদের আলোচনার পর পবিত্র কুরআনের জুম'আর আলোচনার কারণ এটাই যে, তাদের ইবাদতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কেবলমাত্র মুসলিমদের ইবাদতের দিনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে জুম'আর দিন। মূর্খতাযুগে শুক্রবারকে "ইয়াওমে আরূবা’ বলা হত। বলা হয়ে থাকে যে, আরবে কা'ব ইবনে লুয়াই সর্বপ্রথম এর নাম "ইয়াওমুল জুমুআ’ রাখেন। কারণ, জুম'আ শব্দটির অর্থ একত্রিত করা। এই দিনে কুরাইশদের সমাবেশ হত এবং কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন। সারকথা এই যে, ইসলাম পূর্বকালেও ক’ব ইবনে লুয়াই-এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দান করা হত। তিনিই এই দিনের নাম জুমআর দিন রেখেছিলেন। কিন্তু সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় যে, “ আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টিকে এই দিন একত্রিত করা হয়েছিল বলেই এই দিনকে জুম'আ নামকরণ করা হয়েছে ।” [ মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৪১২, নং: ১০২৮, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ৩/১১৮, নং: ১৭৩২, ত্বাবরানী: মুজামুল কাবীর ৬/২৩৭ নং ৬০৯২, মুজামুল আওসাত্ম: ১/২৫০, নং ৮২১, মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ২/৩৯০ ] [ ২ ] نودي অর্থ যখন ডাকা হয়। এখানে খোতবার আযান বোঝানো হয়েছে। [ ফাতহুল কাদীর, বাগভী ] সায়েব ইবনে ইয়াযীদ বলেন, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ, আবু বকর এবং উমরের যুগে জুম'আর দিনে ইমাম যখন মিম্বরে বসত তখন প্রথম আযান দেয়া হত । তারপর যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর যুগ আসল এবং মানুষ বেড়ে গেল তখন তৃতীয় আহবানটি তিনি বাড়িয়ে দেন” [ বুখারী: ৯১২ ] [ ৩ ] আয়াতে বর্ণিত فاسْعَوْا শব্দের এক অর্থ দৌঁড়ানো এবং অপর অর্থ কোন কাজ গুরুত্ব সহকারে করা। এখানে এই অর্থ উদ্দেশ্য। কারণ, সালাতের জন্যে দৌড়ে আসতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, “ প্রশাস্তি ও গাম্ভীৰ্য সহকারে সালাতের জন্যে গমন কর ।” [ বুখারী: ৬৩৬, মুসলিম: ৬০২ ] আয়াতের অর্থ এই যে, জুমআর দিনে জুমআর আযান দেয়া হলে আল্লাহর যিকিরের দিকে গুরুত্বসহকারে যাও। অর্থাৎ সালাত ও খোতবার জন্যে মসজিদে যেতে যত্নবান হও। যে ব্যক্তি দৌঁড় দেয়, সে যেমন অন্য কোন কাজের প্রতি মনোযোগ দেয় না, তোমরাও তেমনি আযানের পর সালাত ও খোতবা ব্যতীত অন্য কাজের দিকে মনোযোগ দিও না। এখানে যিকার’ বলে জুম'আর সালাত এবং এই সালাতের অন্যতম শর্ত খোতবাও বোঝানো হয়েছে। বহু হাদীসে জুম'আর দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে হাযির হওয়ার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ যে জুম'আর দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মত গোসল করবে, তারপর ( প্রথম ঘণ্টায় ) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কুরবানী করল । আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেল সে যেন গরু কুরবানী করল। যে তৃতীয় ঘন্টায় গেল সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কুরবানী করল। যে চতুর্থ ঘন্টায় গেল সে যেন মুরগী উৎসর্গ করল। যে পঞ্চম ঘন্টায় গেল সে যেন ডিম উৎসর্গ করল। তারপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা ( লিখা বন্ধ করে ) ইমামের কাছে হাযির হয়ে যিকর ( খুতবা ) শুনতে থাকে।” [ বুখারী: ৮৮১ ] তাছাড়া এটা অনেকের নিকট দো'আ কবুল হওয়ার সময়। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ জুম'আর দিনে এমন একটি সময় আছে কোন মুসলিম যদি সে সময়ে আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ চায় তবে অবশ্যই তিনি তাকে সেটা দিবেন” । [ বুখারী: ৬৪০০ ]
সূরা জুমু'আ আয়াত 9 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- তারা বলল-হে হুদ, তুমি আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নিয়ে আস নাই, আমরা তোমার কথায় আমাদের
- তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।
- তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে
- সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি কখনও ভ্রান্ত নই; কিন্তু আমি বিশ্বপ্রতিপালকের রসূল।
- আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম
- এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল
- ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে জ্বালানো হবে।
- যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং
- আমি তাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছি, তা আপনাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
- এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা না আসে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা জুমু'আ ডাউনলোড করুন:
সূরা Jumuah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Jumuah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers