কোরান সূরা নাহল আয়াত 1 তাফসীর
﴿أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
[ النحل: 1]
আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে। [সূরা নাহল: 1]
Surah An-Nahl in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nahl ayat 1
আল্লাহ্র হুকুম এসেই গেছে, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। সমস্ত মহিমা তাঁরই, আর তারা যা অংশী করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১. হে কাফিররা! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে শাস্তি দেয়ার যে ফায়সালা করেছেন তা নিকটবর্তী। তাই তোমরা সময়ের আগে তা দ্রæত কামনা করো না। মুশরিকরা আল্লাহর যে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে তা থেকে তিনি পূত-পবিত্র।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল্লাহর আদেশ আসবেই;[১] সুতরাং তোমরা তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যাকে অংশী করে তিনি তার উর্ধে। [১] আদেশ বলতে কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে, অর্থ কিয়ামত নিকটবর্তী যাকে তোমরা দূর মনে কর। অতএব তোমরা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করো না। অথবা সেই আযাবকে বুঝানো হয়েছে যা মুশরিকরা চাইত। এ কথাটি ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়ার পরিবর্তে অতীতকালের ক্রিয়া দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যেহেতু তার আগমনে কোন সন্দেহ নেই।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আল্লাহ্র [ ১ ] আদেশ আসবেই [ ২ ]; কাজেই তা [ ৩ ] তাড়াতাড়ি পেতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যা শরীক করে তিনি তা থেকে উর্ধ্বে [ ৪ ]। ১২৮ আয়াত, মক্কী --------------- [ ১ ] এ সূরা নাহলকে বিশেষ কোন ভূমিকা ছাড়াই কঠোর শাস্তির সতর্কবাণী ও ভয়াবহ বিষয়বস্তু দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এর কারণ ছিল মুশরিকদের এই উক্তি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেয়ামত ও আযাবের ভয় দেখায় এবং বলে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে জয়ী করা এবং বিরোধীদেরকে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আমাদের তো এরূপ কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। তোমরা তাড়াহুড়া করো না। [ দেখুন, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর ] [ ২ ] অর্থাৎ তা একেবারে আসন্ন হয়ে উঠেছে। তার প্রকাশ ও প্রয়োগের সময় নিকটবর্তী হয়েছে। ব্যাপারটা একেবারেই অবধারিত ও সুনিশ্চিত অথবা একান্ত নিকটবতী এ ধারণা দেবার জন্য ব্যাক্যটি অতীতকালের ক্রিয়াপদের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। [ আদওয়াউল বায়ান; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর ] তবে এ “আদেশ বা ফায়সালা” কি ছিল এবং কোন আকৃতিতে এসেছে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছেঃ কোন কোন মুফাসসির বলেন যে, এখানে আল্লাহর নির্দেশ’বলে কেয়ামত বোঝানো হয়েছে। এর এসে যাওয়ার অর্থও এই যে, আসা অতি নিকটবতী। সমগ্র জগতের বয়সের দিক দিয়ে দেখলে কেয়ামতের নিকটবতী হওয়া কিংবা এসে পৌছাও দূরবর্তী কোন বিষয় নয়। অথবা, তা অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণে অতীতকালের পদ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে” [ সূরা আল-আম্বিয়া: ১ ] আরও এসেছে, “কিয়ামত কাছাকাছি হয়েছে, আর চাদ বিদীর্ণ হয়েছে" [ সূরা আল-কামারঃ ১ ] [ ইবন কাসীর ] কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ আল্লাহর নির্দেশ’ বলে এখানে আল্লাহর আদেশ নিষেধ সম্পর্কিত, হালাল হারাম সম্বলিত বিধানাবলী বোঝানো হয়েছে। [ কুরতুবী ] কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে “ আল্লাহর নির্দেশ" বলে তাদের উপর যে শাস্তি আসার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করাতেন তা বুঝানো হয়েছে । আযাবের ব্যাপারে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের সবরের পেয়ালা কানায় ভরে উঠেছিল এবং শেষ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসে গিয়েছিল বলেই অতীতকালের ক্রিয়াপদ দ্বারা একথা বলা হয়েছে। [ কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর ] [ ৩ ] কাফের মুশরিকগণের চিরাচরিত নিয়ম ছিল যে, তারা আল্লাহর আযাবকে কামনা করত, তারা ভাবত যে আল্লাহর আযাব যদি আসবে তবে আসে না কেন? কিন্তু আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি কোন জাতিকে ধ্বংস করার পূর্বে তাকে প্রচুর সময় দেন। এ ব্যাপারটি আল্লাহ তা'আলা অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন। দেখুন, [ সূরা আল-আনকাবূতঃ ৫৩,৫৪ ] [ ইবন কাসীর ] [ ৪ ] এখানে তাদের শির্ক বলতে, তারা যে আযাব তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল, অথবা কিয়ামত তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল তা-ই বোঝানো হয়েছে। কেননা এর দ্বারা তারা মূলত: আল্লাহর ওয়াদাকে ভ্রান্ত সাব্যস্ত করেছে, এটা কুফরী ও শির্ক। তারা মনে করছে যে, আল্লাহ এটা করতে সম্ভব নন। তিনি সেটা করতে পারবে না। আর অপারগতা মূলত: বান্দাদের গুণ। বান্দাদের গুণকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা শির্ক। এ হিসেবে তারা শির্কে লিপ্ত হয়েছিল। [ ফাতহুল কাদীর ] নতুবা আল্লাহর সাথে কারো শরীক হবার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর সত্তা এর অনেক উধের্ব এবং এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। মোট কথাঃ তারা যে শির্ক করছে আল্লাহ তা'আলা তা থেকে পবিত্র। একটি কঠোর সতর্কবাণীর মাধ্যমে তাওহীদের দাওয়াত দেয়া এই আয়াতের সারমর্ম।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
আল্লাহ তাআলা কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার খবর দিচ্ছেন। কিয়ামত যেন সংঘটিত হয়েই গেছে। এ জন্যেই তিনি অতীত কালের ক্রিয়া দ্বারা এই বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ ( আরবি ) অর্থাৎ মানুষের হিসাব নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসিনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” ( ২১:১ )। মহান আল্লাহ বলেনঃ “ কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে ।” এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ তোমরা এই নিকটবর্তী বিষয়ের জন্যে তাড়াহুড়া করো না ।” • সর্বনামটি হয়তো বা ‘আল্লাহ’ শব্দের দিকে ফিরছে। তখন অর্থ হবেঃ “ তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট ওটা তাড়াতাড়ি চেয়ো না । কিংবা ওটা প্রত্যাবর্তিত হচ্ছে ‘আযাব’ শব্দের দিকে।” অর্থাৎ ‘আযাবের জন্যে তাড়াতাড়ি করো না। দু'টি অর্থই পরস্পর সম্বন্ধ যুক্ত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ ( হে নবী (সঃ )! লোকেরা তোমার কাছে তাড়াতাড়ি শাস্তি চাচ্ছে, যদি শাস্তির জন্যে একটা নির্ধারিত সময় না থাকতো, তবে অবশ্যই তা তাদের উপর চলে আসতো, কিন্তু তা অবশ্যই অকস্মাৎ তাদের উপর চলে আসবে এবং তারা তা বুঝতেই পারবে না । তারা তোমার কাছে আযাবের জন্যে তাড়াতাড়ি করছে, নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী।”যহহাক ( রঃ ) এই আয়াতের এক বিস্ময়কর ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “ আল্লাহ তাআলার ফারায়ে ওহুদূদ নাযিল হয়ে গেছে ।” ইমাম ইবনু জারীর ( রঃ ) কঠোর ভাবে এটা খণ্ডন করেছেন এবং বলেছেনঃ “ আমাদের মধ্যে তো এমন একজনও নেই, যে শরীয়তের অস্তিত্বের পূর্বে এটা চাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছে । বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আযাবের জন্যে তাড়াহুড়া করা যা কাফিরদের অভ্যাস ছিল। কেননা, তারা ওটাকে মানতই না।” যেমন কুরআন পাকে রয়েছেঃ “ বেঈমানেরা তো এর জন্যে তাড়াতাড়ি করছে অথচ ঈমানদাররা এর থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত রয়েছে । কেননা, তারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে; প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী দূরের বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে।” হযরত উকবা ইবনু আমির ( রাঃ ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নিকটবর্তী সময়ে পশ্চিম দিকহতে ঢালের মত কালো মেঘ প্রকাশিত হবে এবং ওটা খুবই তাড়াতাড়ি আকাশের উপরে উঠে যাবে । অতঃপর ওর মধ্য হতে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে। লোকেরা বিস্মিত হয়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করবেঃ “ কিছু শুনতে পেয়েছো কি?” কেউ কেউ বলবেঃ “হাঁ, পেয়েছি ।” আর কেউ কেউ ওটাকে বাজে কথা বলে উড়িয়ে দেবে। আবার ঘোষণা দেয়া হবে এবং বলা হবেঃ “ হে লোক সকল!” এবার সবাই বলে উঠবে- “হাঁ, শব্দ শুনতে পেয়েছি ।” তৃতীয়বার ঐ ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে; “ হে লোক সকল! আল্লাহর হুকুম এসে গেছে । এখন তাড়াতাড়ি করো না।” আল্লাহর কসম! এমন দু ব্যক্তি যারা কাপড় ছড়িয়ে রাখতো তারা জড় করার সময় পাবে না, কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ হয়তো তার পানির হাউয ঠিক করতে থাকবে, সেই পানি পান করতে পারবে না, কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। দুধ দোহনকারী দুধ পান করার অবসর পাবে না, কিয়ামত হয়ে যাবে। লোকেরা শসব্যস্ত হয়ে পড়বে।এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় পবিত্র সত্তার শিরক ও অন্যের ইবাদত হতে বহু উর্ধ্বে থাকার বর্ণনা দিচ্ছেন। বাস্তবিকই তিনি ঐ সমুদয় বিষয় থেকে পবিত্র এবং তা থেকে তিনি বহু দূরে ও বহু উর্ধ্বে রয়েছেন। এরাই মুশরিক যারা কিয়ামতকেও অস্বীকারকারী। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে।
সূরা নাহল আয়াত 1 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- হা-মীম।
- এরাই হলো সে লোক যাদের সমগ্র আমল দুনিয়া ও আখেরাত উভয়লোকেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে
- অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয়,
- যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা। এদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলাম।
- যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে
- মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি
- লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।
- যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।
- বলুন, তোমাদের জন্যে একটি দিনের ওয়াদা রয়েছে যাকে তোমরা এক মহূর্তও বিলম্বিত করতে পারবে না
- এটা এজন্য যে, তারা তাদেরকে বলে, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব অপছন্দ করেঃ আমরা কোন কোন
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নাহল ডাউনলোড করুন:
সূরা Nahl mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nahl শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers