কোরান সূরা তাওবা আয়াত 108 তাফসীর
﴿لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا ۚ لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ﴾
[ التوبة: 108]
তুমি কখনো সেখানে দাড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন। [সূরা তাওবা: 108]
Surah At-Tawbah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Tawbah ayat 108
তুমি কখনো এতে দাঁড়াবে না। নিঃসন্দেহ সেই মসজিদ যা প্রথম দিন থেকেই ধর্মনিষ্ঠার উপরে স্থাপিত তার বেশি দাবি রয়েছে যে তুমি সেখানে দাঁড়াবে। তাতে এমন লোক রয়েছে যারা ভালো পায় যে তারা পবিত্র হবে। আর আল্লাহ্ ভালোবাসেন তাদের যারা পবিত্র হয়েছে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১০৮. হে নবী! এ ধরনের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য মুনাফিকরা আপনাকে ডাকলে আপনি সাড়া দিবেন না। কারণ, মসজিদে ক্বুবার প্রথম ভিত্তিই হয় আল্লাহভীতির উপর। তাতে সালাত আদায় কুফরির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। মসজিদে ক্বুবায় এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পানি দিয়ে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নাপাক থেকে এবং তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সকল পাপ থেকে পবিত্রতা অর্জন করা পছন্দ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নাপাক এবং গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তুমি কখনো ওতে ( নামাযের জন্য ) দাঁড়াবে না;[১] অবশ্যই যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই আল্লাহভীতির উপর স্থাপিত হয়েছে, তাতেই ( নামাযের জন্য ) দাঁড়ানো তোমার অধিক সমুচিত।[২] সেখানে এমন সব লোক রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে পছন্দ করে।[৩] আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদেরকে পছন্দ করেন। [১] অর্থাৎ, তুমি সেখানে গিয়ে নামায পড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, সে অনুযায়ী সেখানে গিয়ে নামায পড়বে না। সুতরাং মহানবী ( সাঃ ) সেখানে নামায তো পড়েননি; বরং কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে সেই তথাকথিত মসজিদটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এই কর্ম দ্বারা দলীল নিয়ে উলামাগণ বলেন, যদি কোন মসজিদ আল্লাহর ইবাদত ব্যতীত, মুসলিমদেরকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়, তবে তাকে 'মসজিদে য্বিরার' বলা যাবে এবং তা ভেঙ্গে ধ্বংস করে দিতে হবে। যাতে মুসলিমদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও ভেদাভেদ সৃষ্টি না হয়। [২] 'যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই আল্লাহ-ভীতির উপর স্থাপিত হয়েছে' সে মসজিদ কোনটি? এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। কেউ কেউ মসজিদে ক্বুবা, আবার কেউ কেউ মসজিদে নববী বলেছেন। সালাফদের কেউ কেউ উভয়কেই বলেছেন। ইমাম ইবনে কাসীর ( রহঃ ) বলেন, যদি এই আয়াত দ্বারা মসজিদে ক্বুবা ধরা হয়, তবে কতিপয় হাদীস দ্বারা মসজিদে নববীকে ( أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى ) বলে সমর্থন করা হয়েছে এবং উভয়ের মাঝে কোন বিরোধ নেই। কারণ মসজিদে ক্বুবা যদি ( أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى ) এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়, তবে মসজিদে নববী তো আরো অধিকভাবে সেই মর্যাদার অধিকারী। [৩] হাদীসে এসেছে যে, তাঁরা হলেন ক্বুবাবাসী। তাঁরা পবিত্রতা অর্জনে পানি ব্যবহার করতেন বলে মহান আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করেছেন। ( প্রকাশ থাকে যে, ঢেলার সাথে পানি ব্যবহার করার হাদীস সহীহ নয়। ইরওয়াউল গালীল ৪২নং দ্রঃ ) ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, এই আয়াত এই কথার প্রমাণ যে, এমন পুরাতন মসজিদে নামায আদায় করা উত্তম, যে মসজিদ একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার নিমিত্তে নির্মাণ করা হয়েছে। অনুরূপ নেক লোকদের জামাআতে এবং এমন ব্যক্তিদের সাথে নামায পড়া উত্তম যারা পূর্ণরূপে ওযূ করতে ও পবিত্রতা অর্জনে বিশেষ যত্নবান।
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আপনি তাতে কখনো সালাতের জন্য দাঁড়াবেন না [ ১ ]; যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই স্থাপিত হয়েছে তাক্ওয়ার উপর [ ২ ], তাই আপনার সালাতের জন্য দাঁড়ানোর বেশী হকদার। সেখানে এমন লোক আছে যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন ভালবাসে , আর পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন [ ৩ ]। [ ১ ] এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে মসজিদে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে দাঁড়ানো থেকে নিষেধ করার অর্থ, আপনি সে মসজিদে কখনো সালাত আদায় করবেন না। [ ইবন কাসীর ] [ ২ ] প্রশংসিত সে মসজিদ কোনটি, তা নির্ণয়ে দু’টি মত রয়েছে, কোন কোন মুফাসসির আয়াতের বর্ণনাধারা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তা হলো মসজিদে কুবা। [ ইবন কাসীর; সা’দী ] যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সালাত আদায় করতে আসতেন। [ মুসলিম: ১৩৯৯ ] যার কেবলা জিবরীল নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন [ আবুদাউদ: ৩৩; তিরমিযী: ৩১০০; ইবন মাজাহ: ৩৫৭ ] যেখানে সালাত আদায় করলে উমরার সওয়াব হবে বলে ঘোষণা করেছেন। [ তিরমিযী: ৩২৪; ইবন মাজাহ: ১৪১১ ] হাদীসের কতিপয় বর্ণনা থেকেও এটিই যে তাকওয়ার ভিত্তিতে নির্মিত মসজিদ সে কথার সমর্থন পাওয়া যায়। আবার বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এ মসজিদ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ উল্লেখ করা হয়েছে। [ উদাহরণস্বরূপ দেখুন, মুসলিম: ১৩৯৮; মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৩১ ] বস্তুত: এ দু’য়ের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ উভয় মাসজিদই তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [ কুরতুবী; সা’দী ] [ ৩ ] এখানে সেই মসজিদকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযে অধিকতর হকদার বলে অভিহিত করা হয়, যার ভিত্তি শুরু থেকেই তাকওয়ার উপর রাখা হয়েছে। সে হিসেবে মসজিদে কুবা ও মসজিদে নববী উভয়টিই এ মর্যাদায় অভিষিক্ত। সে মসজিদেরই ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তথাকার মুসল্লীগণ পাক-পবিত্রতা অর্জনে সবিশেষ যত্নবান। পাক-পবিত্রতা বলতে এখানে সাধারণ না-পাকী ও ময়লা থেকে পাক-পরিচ্ছন্ন হওয়া বুঝায়। আর মসজিদে নববীর মুসল্লীগণ সাধারণতঃ এসব গুণেই গুণান্বিত ছিলেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবাবাসীদের বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্র হও? তারা বলল, আমরা সালাতের জন্য অযু করি, জানাবাত থেকে গোসল করি এবং পানি দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করি। [ ইবন মাজাহ: ৩৫৫ ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১০৭-১০৮ নং আয়াতের তাফসীর: এই আয়াতগুলোর শানে নুযূল ( অবতীর্ণ হওয়ার কারণ ) এই যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মদীনায় আগমনের পূর্বে সেখানে খাযরাজ গোত্রের একটি পোর্ক বাস করতো যার নাম ছিল আবু আমির রাহিব । অজ্ঞতার যুগে সে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং আহলে কিতাবের জ্ঞান লাভ করেছিল। জাহিলিয়াতের যুগে সে। বড় আবিদ লোক ছিল। নিজের গোত্রের মধ্যে সে খুব মর্যাদা লাভ করেছিল। নবী ( সঃ ) যখন হিজরত করে মদীনায় আসেন এবং মুসলিমরা তাঁর কাছে একত্রিত হতে শুরু করে ও ইসলামের উন্নতি সাধিত হয় এবং বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে জয়যুক্ত করেন, তখন এটা আবু আমিরের কাছে খুবই কঠিন বোধ হয়। সুতরাং সে খোলাখুলিভাবে ইসলামের প্রতি শ্রঞতা প্রকাশ করতে শুরু করে এবং মদীনা হতে পলায়ন করে মক্কার কাফির ও মুশরিক। কুরায়েশদের সাথে মিলিত হয়। তাদেরকে সে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে আরবের সমস্ত গোত্র একত্রিত হয় এবং উহুদ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। অবশেষে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং মুসলিমদের উপর যে বিপদ ও কষ্ট পৌছার ছিল তা পৌঁছে যায়। মহা মহিমান্বিত আল্লাহ এই যুদ্ধে মুসলিমদেরকে পরীক্ষা করেন। তবে পরিণাম ফল তো আল্লাহভীরুদের জন্যেই বটে। এ পাপাচারী ( আবু আমির ) উভয় দিকের সারির মাঝে কয়েকটি গর্ত খনন করে রেখেছিল। একটি গর্তে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) পড়ে যান এবং আঘাতপ্রাপ্ত হন। তার চেহারা মুবারক যখম হয়ে যায় এবং নীচের দিকের সামনের চারটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। তাঁর পবিত্র মস্তকও যখম হয়। যুদ্ধের শুরুতে আবু আমির তার কওম আনসারের দিকে অগ্রসর হয়ে তাদেরকে সম্বোধন করে তাকে সাহায্য সহযোগিতার জন্যে দাওয়াত দেয়। যখন আনসারগণ আবৃ আমিরের এসব কার্যকলাপ লক্ষ্য করলেন তখন তারা তাকে বললেনঃ “ ওরে নরাধম ও পাপাচারী! ওরে আল্লাহর শত্রু! আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন!” এভাবে তারা তাকে গালি দেন । ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করেন। তখন সে বলেঃ “ আমার পরে আমার কওম আরো বিগড়ে গেছে ।” এ কথা বলে সে ফিরে যায়। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাকে তার মদীনা হতে পলায়নের পূর্বে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং কুরআনের অহী শুনিয়েছিলেন। কিন্তু সে ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তার প্রতি বদ দুআ' দেন যে, সে যেন নির্বাসিত হয় এবং বিদেশেই যেন সে মৃত্যুবরণ করে। এই বদ দুআ তার প্রতি কার্যকরী হয়ে যায় এবং এটা এভাবে সংঘটিত হয় যে, জনগণ যখন উহুদ যুদ্ধ শেষ করলো এবং সে লক্ষ্য করলো যে, ইসলাম দিন দিন উন্নতির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে তখন সে রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে গমন করলো এবং রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর বিরুদ্ধে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলো। সম্রাট তাকে সাহায্য করার অঙ্গীকার করলো। সে তার আশা পূর্ণ হতে দেখে হিরাক্লিয়াসের কাছেই অবস্থান করলো। সে তার কওম আনসারদের মধ্যকার মুনাফিকদেরকে এ বলে মক্কা পাঠিয়ে দিলোঃ “ আমি সেনাবাহিনী নিয়ে আসছি । রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে ভীষণ যুদ্ধ সংঘটিত হবে। আমরা তার উপর জয়যুক্ত হবো এবং ইসলামের পূর্বে তার অবস্থা যেমন ছিল তিনি ঐ অবস্থাতেই ফিরে যাবেন।” সে ঐ মুনাফিকদের কাছে চিঠি লিখলো যে, তারা যেন তার জন্যে একটা আশ্রয়স্থান নির্মাণ করে রাখে। আর যেসব দূত তার নির্দেশনামা নিয়ে যাবে তাদের জন্যেও যেন অবস্থানস্থল ও নিরাপদ জায়গা বানানো হয়, যাতে সে নিজেও যখন যাবে তখন সেটা গুপ্ত অবস্থান রূপে কাজ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঐ মুনাফিকরা মসজিদে কুবার নিকটেই আর একটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ওটাকে পাকা করে নির্মাণ করে। রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর তাবুক অভিমুখে বের হওয়ার পূর্বেই তারা ওর নির্মাণ কার্য শেষ করে ফেলে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর কাছে এসে আবেদন করেঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আপনি আমাদের ওখানে চলুন এবং আমাদের মসজিদে সালাত পড়ুন, যাতে এই সনদ হয়ে যায় যে, এই মসজিদটি স্বীয় স্থানে অবস্থানযোগ্য এবং এতে আপনার সমর্থন রয়েছে । তাঁর সামনে তারা বর্ণনা করে যে, দুর্বল লোকদের জন্যেই তারা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছে এবং ঠাণ্ডার। রাত্রিতে যেসব রোগগ্রস্ত লোক দূরের মসজিদে যেতে অক্ষম হবে তাদের পক্ষে এই মসজিদে আসা সহজ হবে, এই উদ্দেশ্যেই তারা মসজিদটি নির্মাণ করেছে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তো স্বীয় নবী ( সঃ )-কে ঐ মসজিদে সালাত আদায় করা থেকে রক্ষা করতে চাচ্ছিলেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তাদেরকে বললেনঃ “ এখন তো আমরা সফরে বের হওয়ার জন্যে ব্যস্ত রয়েছি, ফিরে আসলে আল্লাহ চান তো দেখা যাবে ।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) যখন তালূক হতে মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং মদীনায় পৌছতে একদিনের পথ বাকী থাকে বা তার চেয়ে কিছু কম, তখন জিবরাঈল ( আঃ ) মসজিদে যিরারের খবর নিয়ে তার কাছে হাযির হন এবং মুনাফিকদের গোপন তথ্য প্রকাশ করে দেন যে, মসজিদে কুবার নিকটে আর একটি মসজিদ নির্মাণ করে মুসলিমদের দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাই হচ্ছে ঐ কাফির ও মুনাফিকদের আসল উদ্দেশ্য। মসজিদে কুবা হচ্ছে এমন এক মসজিদ যার ভিত্তি প্রথমদিন হতেই তাওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে।এটা জানার পর নবী ( সঃ ) মদীনা পৌছার পূর্বেই কতকগুলো লোককে মসজিদে যিরার বিধ্বস্ত করার জন্যে পাঠিয়ে দেন। যেমন আলী ইবনে আবি তালহা ( রাঃ ) এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করে বলেন যে, তারা ছিল আনসারের লোক যারা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিল এবং আবৃ আমির তাদেরকে বলেছিলঃ “ তোমরা একটি মসজিদ নির্মাণ কর এবং সম্ভব মত সেখানে অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের আসবাবপত্র লুকিয়ে রাখো, আর ওটাকে আশ্রয়স্থল ও গুপ্তস্থান বানিয়ে দাও । কেননা আমি রোমক বাদশাহর নিকট যাচ্ছি। রোম থেকে আমি সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আসবো এবং মুহাম্মাদ ( সঃ ) ও তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে মদীনা হতে বের করে দেবো।” সুতরাং মুনাফিকরা মসজিদে যিরারের নির্মাণ কার্য সমাপ্ত করে নবী ( সঃ )-এর দরবারে হাযির হয় এবং আবেদন করেঃ “ আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা এই যে, আপনি আমাদের মসজিদে গিয়ে সালাত পড়বেন এবং আমাদের জন্যে বরকতের দুআ করবেন ।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ ( আরবী ) হতে ( আরবী ) পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ( রঃ ) ইসনাদসহ এই রিওয়ায়াত করেছেন যে, নবী ( সঃ ) তাবক হতে ফিরার পথে “ যীরাওমান” নামক স্থানে অবতরণ করেন । মদীনা এখান থেকে কয়েক ঘন্টার পথ। নবী ( সঃ ) যখন তাবূকের সফরের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় মসজিদে যিরারের নির্মাণকারীরা তাঁর কাছে এসে বলেছিলঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আমরা রুগ্ন, অভাবী এবং বর্ষা ও ঠাণ্ডার রাত্রে আগমনকারী মুসলিম জামাআতের উপকারার্থে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি । আমরা চাই যে, আপনি সেখানে তাশরীফ এনে আমাদেরকে নামায পড়াবেন। তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ এখন তো সফর যাত্রায় খুবই ব্যস্ত রয়েছি ।” অথবা তিনি বলেছিলেনঃ “ ফিরে আসার পর ইনশাআল্লাহ আমি তোমাদের ওখানে যাবো এবং তোমাদের সাথে সালাত আদায় করব ।” সুতরাং যখন তিনি তাবুক হতে মদীনায় ফিরবার পথে “ যীরওমান” নামক স্থানে অবতরণ করেন তখন তিনি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঐ মসজিদে যিরারের খবর পান । তিনি তখন বানু সালিমের ভাই মালিক ইবনে দাখশামকে ও মাআন ইবনে আদী অথবা তার ভাই আমির ইবনে আদীকে আহ্বান করেন। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ তোমরা দু'জন ঐ যালিমদের মসজিদটির নিকট গমন কর এবং ওটাকে বিধ্বস্ত কর ও জ্বালিয়ে দাও ।” তৎক্ষণাৎ তারা দু'জন বানু সালিম ইবনে আউফের নিকট আগমন করে। সে ছিল মালিক ইবনে দাখনানের গোত্রের লোক। মালিক মাআনকে বললোঃ “ থামো, আমি আমার লোকদের নিকট থেকে আগুন নিয়ে আসি ।” এ কথা বলে মালিক নিজের লোকদের কাছে আসলো। গাছের একটি বড় ডাল নিল এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দিলো। ওটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়লো । তারা উভয়ে মসজিদে পৌছলো। মসজিদে তখন কাফিররা মওজুদ ছিল। ঐ দু’জন ঐ মসজিদকে জ্বালিয়ে দিলো। লোকেরা সেখান থেকে পালিয়ে গেল এবং ঐ মুনাফিকদের ব্যাপারে ( আরবী ) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ে গেল। যারা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিল তারা ছিল বারোজন। তারা হচ্ছে-( ১ ) খুযাম ইবনে খালিদ, তারই বাড়ী থেকে মসজিদে শিকাকের রাস্তা বের হয়ে এসেছে। ( ২ ) বান উমাইয়ার খাদেম সা'লাবা ইবনে হাতিব। ( ৩ ) মাতআব ইবনে কুশায়ের। ( ৪ ) আবু হাবীবাহ্ ইবনে আজআর । ( ৫ ) আব্বাদ ইবনে হানীফ। ( ৬ ) হারিসা ইবনে আমির। ( ৭ ) মাজমা ইবনে হারিসা। ( ৮ ) যায়েদ ইবনে হারিসা। ( ৯ ) নাবতাল আল হারিসা। ( ১ ) নাজরা। ( ১১ ) বাজ্জাদ ইবনে ইমরান এবং ( ১২ ) আবু লুবাবার গোত্রের খাদেম ওয়াদীআহ ইবনে সাবিত। যারা এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিল তারা শপথ করে করে বলেছিলঃ “ আমরা তো সৎ উদ্দেশ্যেই এর ভিত্তি স্থাপন করেছি । আমাদের লক্ষ্য শুধু জনগণের মঙ্গল কামনা।” কিন্তু আল্লাহ তা'আলা বলছেনঃ ( আরবী )। অর্থাৎ “ আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী ।” অর্থাৎ তারা তাদের যে উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা বলছে তাতে তারা মিথ্যাবাদী। তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধু মসজিদুল কুবার ক্ষতি সাধন করা, কুফরী ছড়িয়ে দেয়া, মুসলিমদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে গুপ্ত স্থান বানিয়ে রাখা, যেখানে তাদের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঐ লোকটি হচ্ছে আবূ আমির, সে পাপাচারী, যাকে রাহিব বা আবিদ বলা হতো, আল্লাহ তার উপর লা'নত বর্ষণ করুন।আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ ( আরবী ) আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে ঐ মসজিদে সালাত পড়তে নিষেধ করে দিয়েছেন । সালাত না পড়ার মধ্যে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর অনুসারী এবং উম্মতও শামিল রয়েছে। সুতরাং মুসলিমদের প্রতিও এই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, তারাও যেন ঐ মসজিদে কখনো সালাত আদায় না করে। অতঃপর মসজিদে কুবায় সালাত পড়তে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রথম থেকেই মসজিদে কুবার ভিত্তি আল্লাহভীরুতার উপর স্থাপন করা হয়েছে। তাকওয়া বলা হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( সঃ )-এর আনুগত্য করাকে। এখানে মুসলিমরা পরস্পর মিলিত হয় এবং ধর্মীয় পরামর্শ করে। এটা হচ্ছে ইসলাম ও আহলে ইসলামের আশ্রয়স্থল। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ অবশ্য যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে তা এরই উপযোগী যে, তুমি তাতে সালাতের জন্যে দাঁড়াবে । আর ইবাদতের হিসাব মসজিদে কুবার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ জন্যেই সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ মসজিদে কুবায় সালাত পড়া ( সওয়াবের দিক দিয়ে ) একটি উমরা আদায় করার মত ।” আরো সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মসজিদে কুবায় সওয়ার হয়েও আসতেন এবং পদব্রজেও আসতেন। বিশুদ্ধ হাদীসে আরো এসেছে যে, রাসূলল্লাহ ( সঃ ) যখন মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন এবং ওর ভিত্তি স্থাপন করেন তখন তিনি সর্বপ্রথম আমর ইবনে আউফ গোত্রের নিকট অবস্থান করতে শুরু করেন এবং জিবরাঈল ( আঃ ) কিবলার দিক নির্ধারিত করে দেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ ( আরবী ) -এ আয়াতটি আহলে কুবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেন যে, তারা পানি দ্বারা পবিত্রতা লাভ করতো। সুতরাং তাদের প্রশংসায় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ( এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদে আবু হুরাইরা (রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে) ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন ( আরবী ) -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন তিনি উওয়াইম ইবনে সাঈদা ( রাঃ )-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমাদের এটা কোন পবিত্রতা যার কারণে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রশংসা করেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ ) ! আমাদের কোন পুরুষ বা স্ত্রী লোক যখন পায়খানার কাজ সেরে বেরিয়ে আসে তখন সে তার লিঙ্গ ও গুহ্যদ্বারকে পানি দ্বারা উত্তমরূপে ধৌত করে ।” তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বললেনঃ “ হ্যা, ( প্রশংসার কারণ ) এটাই বটে ।”উওয়াইম ইবনে সাঈদা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) মসজিদে কুবায় তাদের নিকট আগমন করেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমাদের মসজিদের ঘটনায় তোমাদের পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা অতি উত্তম ভাষায় প্রশংসা করেছেন । তোমরা যদদ্বারা পবিত্রতা লাভ করে থাকো সেটা কি?” তাঁরা উত্তরে বলেনঃ “ হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! আল্লাহর শপথ, আমরা তো এটা ছাড়া আর কিছুই জানি না যে, ইয়াহূদীরা আমাদের প্রতিবেশী ছিল । তারা পায়খানার কাজ সেরে পানি দ্বারা তাদের গুহ্যদ্বার ধৌত করতো। সুতরাং আমরাও তদ্রুপ করে থাকি।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)ইবনে খুযাইমা ( রঃ ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উওয়াইম ইবনে সাঈদা ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের কি প্রকারের পবিত্রতার কারণে তোমাদের প্রশংসা করেছেন? তিনি জবাবে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! পানি দ্বারা আমরা আমাদের গুহ্যদ্বার ধৌত করে থাকি ।” ইবনে জারীর ( রঃ ) বলেন যে, ( আরবী ) এই আয়াতটি ঐ লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা ( পায়খানার কাজ সেরে ) তাদের গুহ্যদ্বার পানি দ্বারা ধৌত করতো।ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ ) ইসনাদসহ বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মসজিদে কুবাতে এসে ( আহলে কুবাকে ) বলেনঃ “ আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পবিত্রতার খুবই প্রশংসা করেছেন, সেটা কি?” উত্তরে তারা বলেনঃ “আমরা তাওরাতে পানি দ্বারা ইসতিনজা করার নির্দেশ লিখিত পেয়েছি ।” তাঁদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারী ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ), যিনি আহলে তাওরাত ছিলেন।সহীহ হাদীসে এসেছে যে, মদীনার মধ্যস্থলে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর যে মসজিদটি রয়েছে ওটাই হচ্ছে সেই মসজিদ যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপন করা হয়েছে। এটা সঠিক কথাও বটে। এই আয়াত এবং এই হাদীসের মধ্যে কোনই বৈপরীত্য নেই। কেননা প্রথম দিন থেকে মসজিদে কুবার ভিত্তি যখন তাকওয়ার উপর স্থাপন করা হয়েছে তখন মসজিদে নববীর ভিত্তি যে তাকওয়ার উপর স্থাপিত এটা তো বলাই বাহুল্য। এ জন্যেই মুসনাদে আহমাদে উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপন করা হয়েছে তা আমার এই মসজিদই বটে ।” ( এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ ) একাকী বর্ণনা করেছেন)সাহল ইবনে সা'দ ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর যুগে দু'টি লোকের মধ্যে ঐ মসজিদের ব্যাপারে মতানৈক্য হয় যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপিত। একজন বলে যে, এটা হচ্ছে মসজিদে নববী ( সঃ )। আর অপরজন বলে যে, ওটা হচ্ছে মসজিদে কুবা। অতঃপর তারা উভয়ে নবী ( সঃ )-এর কাছে এসে ঐ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) উত্তর দেনঃ “ ওটা হচ্ছে আমার এই মসজিদ ।” ( এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ ) বর্ণনা করেছেন)আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, দু’টি লোকের মধ্যে ঐ মসজিদ সম্পর্কে মতভেদ সৃষ্টি হয় যার ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত। একজন বলে যে, ওটা হচ্ছে মসজিদে কুবা এবং অপরজন বলে যে, ওটা হচ্ছে মসজিদে নববী। তখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ “ ওটা হচ্ছে আমার মসজিদ ।” ( মুসনাদে আহমাদেই এই হাদীসও বর্ণিত হয়েছে )এর পরে এ বিষয়েরই আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হামীদ আল খারাত আল মাদানী ( রঃ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু সালমা ইবনে আবদির রহমান ইবনে আবি সাঈদ ( রঃ )-কে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে তাকওয়ার ব্যাপারে আপনি আপনার পিতা থেকে কি শুনেছেন? তিনি উত্তরে ( পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর নিকট আগমন করি এবং তার কোন এক স্ত্রীর বাড়ীতে তার কাছে প্রবেশ করি। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল ( সঃ )! যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত সেটা কোথায়? তিনি তখন এক মুষ্টি কংকর উঠিয়ে নিয়ে যমীনে মেরে বললেনঃ “ ওটা হচ্ছে এই মসজিদটি ( অর্থাৎ মসজিদে নববী ) ।” ইমাম মুসলিম ( রঃ ) ইসনাদসহ হামীদ আল খারাত ( রঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুরুজনদের একটি দলের এটাই উক্তি যে, ওটা মসজিদে নববী । উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ ), তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ ( রাঃ ), যায়েদ ইবনে সাবিত ( রাঃ ) এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ( রঃ ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইবনে জারীরও ( রঃ ) এটাকে পছন্দ করেছেন। ( আরবী )-এই আয়াতটি এ কথার দলীল যে, যে। প্রাচীন মসজিদগুলোর প্রথম ভিত্তি এক ও লা-শারিক আল্লাহর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত সেগুলোতে সালাত পড়া মুসতাহাব। এই মুসতাহাব হওয়ারও দলীল এই যে, জামাআতে সালেহীন ও ইবাদে আমেলীনের সাথে সালাত পড়া উচিত এবং যথানিয়মে পূর্ণ মাত্রায় অযু করা দরকার, আর সালাতে ময়লা ও অপবিত্র কাপড় পরিধান না করা উচিত।ইমাম আহমাদ ( রঃ ) ইসনাদসহ বর্ণনা করেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) ফজরের সালাত পড়ান এবং তাতে সূরায়ে “ রূম” পাঠ করেন । পাঠে তাঁর কিছু সন্দেহ হয়। সালাত শেষে তিনি বলেনঃ “ আমার কুরআন পাঠে কিছু বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছিল । দেখো! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যে আমার সাথে সালাত আদায় করে, কিন্তু উত্তমরূপে অযু করে না। সুতরাং যে আমাদের সাথে সালাত পড়তে চায় তার উচিত উত্তমরূপে অযু করার ব্যাপারে কোন ত্রুটি করা।”যুলকিলা ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর সাথে সালাত পড়েন, তখন তিনি তাঁকে এই হিদায়াতই করেন। এটা এরই প্রমাণ যে, উত্তমরূপে অযু করা ইবাদতে দাঁড়ানো অবস্থাকে সহজ করে তোলে এবং ইবাদতের পরিপূর্ণতায় সহায়ক হয়। আকূল আলিয়া ( রঃ ) ( আরবী ) আল্লাহ পাকের এই উক্তির ব্যাপারে বলেন যে, পানি দ্বারা পবিত্রতা লাভ করা তো অতি উত্তম কাজ বটেই, তবে আল্লাহ তা'আলা যাদের পবিত্রতার প্রশংসা করেছেন তারা হচ্ছেন ঐসব লোক যাঁরা নিজেদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন। আ’মাশ ( রঃ ) বলেন যে, এই তাহারাত দ্বারা গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং শিরক থেকে পবিত্র থাকা বুঝানো হয়েছে। হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আহলে কুবাকে বলেনঃ “ আল্লাহ তাআলা যে তোমাদের তাহারাতের প্রশংসা করেছেন তা কিরূপ?” তারা উত্তরে বলেনঃ “আমরা পানি দ্বারাই ইসতিনজা করে থাকি ।”হাফিজ আবু বকর বাযযায ( রঃ ) ইসনাদসহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি আহলে কুবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। যখন রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) আহলে কুবাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ তোমাদের তাহারাত কিরূপ?” তারা উত্তরে বলেনঃ “প্রথমে আমরা ঢিলা ব্যবহার করি, তারপর পানি দ্বারা ধৌত করি ।” এটা বায ( রঃ ) রিওয়ায়াত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “ এটাকে শুধু মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল আযীয এবং তাঁর থেকে তাঁর পুত্র বর্ণনা করেছেন ।” আমি বলি, আমি এ ব্যাখ্যা এখানে এই জন্যেই করলাম যে, এটা ফকীহদের নিকট মাশহুর হলেও পরবর্তী অধিকাংশ মুহাদ্দিস এটাকে সুপরিচিত হিসাবে স্বীকার করেন না। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সূরা তাওবা আয়াত 108 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা সবাই তোমাদের পালনকর্তার সামনে কথা কাটাকাটি করবে।
- এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।
- সে সমস্ত লোক যারা ভৎর্সনা-বিদ্রূপ করে সেসব মুসলমানদের প্রতি যারা মন খুলে দান-খয়রাত করে এবং
- অনেক নিদর্শন রয়েছে নভোমন্ডলে ও ভু-মন্ডলে যেগুলোর উপর দিয়ে তারা পথ অতিক্রম করে এবং তারা
- এবং তোমরাও অপেক্ষা করে থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম।
- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ব্যতিত ওরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে
- আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম
- তারা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে
- নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি
- আমার জানা আছে যে, তাদের উক্তি আপনাকে দুঃখিত করে। অতএব, তারা আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাওবা ডাউনলোড করুন:
সূরা Tawbah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Tawbah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers