কোরান সূরা তাওবা আয়াত 11 তাফসীর
﴿فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ﴾
[ التوبة: 11]
অবশ্য তারা যদি তওবা করে, নামায কায়েম করে আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। আর আমি বিধানসমূহে জ্ঞানী লোকদের জন্যে সর্বস্তরে র্বণনা করে থাকি। [সূরা তাওবা: 11]
Surah At-Tawbah in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Tawbah ayat 11
কিন্তু যদি তারা তওবা করে, আর নামায কায়েম করে, আর যাকাত আদায় করে, তবে তারা ধর্মে তোমাদের ভাই। আর আমরা নির্দেশাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি সেই লোকদের জন্য যারা জানে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১১. যদি তারা তাদের কুফরি থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়, কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে, সালাত কায়েম করে ও তাদের সম্পদের যাকাত দেয় তখন তারা মুসলিম হিসেবেই পরিচিতি পাবে এবং তারা তাহলে তোমাদের ধর্মীয় ভাই হিসেবে পরিগণিত হবে। তাদের জন্যও তাই থাকবে যা তোমাদের জন্য থাকছে এবং তাদের উপরও তাই বর্তাবে যা তোমাদের উপর বর্তায়। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা তোমাদের জন্য বৈধ হবে না। তাদের ইসলামই তখন তাদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা করবে। বস্তুতঃ আমি আমার আয়াতগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি কেবল জ্ঞানবান লোকদের জন্য। কারণ, তারাই তো তদ্বারা লাভবান হবে এবং অন্যকে লাভবান করবে।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
অতঃপর তারা যদি তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত দেয়, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। [১] আর জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি নিদর্শনসমূহ স্পষ্টরূপে বিবৃত করি। [১] নামায হল তাওহীদ ও রিসালতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার পর ইসলামের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, যা আল্লাহর হক। তাতে আল্লাহর ইবাদতের বিভিন্ন দিক রয়েছে। এতে রয়েছে হাত বেঁধে কিয়াম, রুকূ ও সিজদা। এতে রয়েছে দু'আ ও মুনাজাত, আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা এবং নিজের মিনতি ও অসহায়তার প্রকাশ। ইবাদতের এই সমস্ত প্রকার ও ধরন কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। নামাযের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও ফরযকৃত রুকন হল যাকাত। যাতে আল্লাহর ইবাদতের সাথে সাথে বান্দারও হক শামিল রয়েছে। যাকাতের অর্থ দ্বারা সমাজের ও বিশেষ করে যাকাতদাতার আত্মীয় গরীব-মিসকীন ও অক্ষম লোকদের প্রয়োজন মিটে থাকে। এই জন্য হাদীসে দুই সাক্ষ্য দানের পর উক্ত দু'টি বিষয়কে পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। নবী ( সাঃ ) বলেছেন, " আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে, লোকদের বিরুদ্ধে আমি যেন ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ( সাঃ ) আল্লাহর রসূল। আর নামায কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে। " ( বুখারী ঈমান অধ্যায়, মুসলিম ঈমান অধ্যায় ) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বলেছেন, 'যে ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে না, তার নামাযও গ্রহণযোগ্য নয়।' ( ঐ )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
অতএব তারা যদি তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই [ ১ ]; আর আমরা আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে [ ২ ]। [ ১ ] মুশরিকদের উপরোক্ত ঘৃণ্য চরিত্রের প্রেক্ষিতে মুসলিমদের জন্যে তাদের সাথে চিরতরে সম্পর্কচ্ছেদ করে নেয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু না কুরআন যে আদর্শ ও ন্যায় নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার আলোকে মুসলিমদের হেদায়াত দেয়ঃ “ তবে, তারা যদি তাওবাহ করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই" । এখানে বলা হয় যে, কাফেররা যত শক্রতা করুক, যত নিপীড়ন চালাক, যখন সে মুসলিম হয়, তখন আল্লাহ যেমন তাদের কৃত অপরাধগুলো ক্ষমা করেন, তেমনি সকল তিক্ততা ভুলে তাদের ভ্রাতৃ-বন্ধনে আবদ্ধ করা এবং ভ্রাতৃত্বের সকল দাবী পূরণ করা মুসলিমদের কর্তব্য। এ শর্ত পূরণ করার ফলে তাদের উপর হাত তোলা ও তাদের জান-মাল নষ্ট করাই শুধু তোমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে না, বরং তার অধিক ফায়েদা এই হবে যে, তারা অন্যান্য মুসলিমদের সমান হতে পারবে। কোনরূপ বৈষম্য ও পার্থক্য থাকবে না। এ আয়াত প্রমাণ করে যে, ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথম, কুফর ও শির্ক থেকে তাওবাহ। দ্বিতীয় সালাত কায়েম করা, তৃতীয় যাকাত আদায় করা। আইসারুত তাফসীর কারণ, ঈমান ও তাওবাহ হল গোপন বিষয় এর যথার্থতা সাধারণ মুসলিমের জানার কথা নয়। তাই ঈমান ও তাওবাহর দুই প্রকাশ্য আলামতের উল্লেখ করা হয়, আর তা হল, সালাত ও যাকাত। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এ আয়াত সকল কেবলানুসারী মুসলিমের রক্তকে হারাম করে দিয়েছে। [ তাবারী; ফাতহুল কাদীর ] অথাৎ যারা নিয়মিত সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করে এবং ইসলামের বরখেলাফ কথা ও কর্মের প্রমাণ পাওয়া যায় না, সর্বক্ষেত্রে তারা মুসলিমরূপে গণ্য, তাদের অন্তরে সঠিক ঈমান বা মুনাফিকী যাই থাক না কেন। আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু আনহু যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে এ আয়াত থেকে অস্ত্ৰধারনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে সাহাবায়ে কেরামের সন্দেহ নিরসন করেছিলেন। [ তাবারী ] [ ২ ] এখানে জ্ঞান সম্পন্ন লোক বলতে তাদের বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ্র নাফরমানী করার পরিণাম জানে ও বুঝে এবং তার ভয়ও তাদের মনে জাগরুক রয়েছে। তাদের জন্যই আগের কথাগুলো বলা হলো, তাদের মাধ্যমেই আয়াত ও আহকাম জানা যাবে, আর তাদের মাধ্যমেই দ্বীন ইসলাম ও শরীআত জানা যাবে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাদের মধ্যে গণ্য করুন যারা জানে ও সে অনুসারে আমল করে [ সা’দী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
৯-১১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের নিন্দার সাথে সাথে মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উৎসাহিত করছেন। তিনি বলছেন যে, ঐ কাফিররা নগণ্য ও নশ্বর দুনিয়াকে মনোরম ও চিরস্থায়ী আখিরাতের বিনিময়ে পছন্দ করে নিয়েছে। তারা নিজেরাও আল্লাহর পথ থেকে সরে রয়েছে এবং মুমিনদেরকেও ঈমান থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। তাদের আমল অতি জঘন্য। তারা মুমিনদের শুধু ক্ষতি করতেই চায় । তারা না কোন আত্মীয়তার খেয়াল রাখে, না চুক্তির কোন পরোয়া করে। তারা সীমালংঘন করেছে। হ্যা, তবে হে মুমিনগণ! এখনও যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদেরই লোক হয়ে যেতে পারে। হাফিজ আবু বকর আল বাযযার ( রঃ )-এর হাদীস গ্রন্থে আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ যে ব্যক্তি দুনিয়াকে এই অবস্থায় ছেড়েছে যে, সে আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করেছে, তার সাথে কাউকে শরীক করেনি, সালাত প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দিয়েছে, সে দুনিয়া হতে এমন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হলো যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছেন ।” এটাই হচ্ছে আল্লাহর ঐ দ্বীন যা নিয়ে নবীগণ ( আলাইহিমুসসালাম ) এসেছিলেন এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ওরই তাবলীগ করতে থাকেন। তাদের এই প্রচারকার্য ছিল কথা ছড়িয়ে পড়ার এবং ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি বেড়ে যাওয়ার পূর্বে। এর সত্যতা আল্লাহর কিতাবের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।যদি তারা তাওবা করে অর্থাৎ মূর্তিগুলো ও মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এবং সালাতী ও যাকাতদাতা হয়ে যায় তবে ( হে মুসলিমগণ! ) তোমরা তাদের পথ ছেড়ে দাও। তারা তখন তোমাদেরই দ্বীনী ভাই। ইমাম বাযযার ( রঃ ) বলেনঃ “ আমার ধারণায় ( আরবী ) ( অর্থাৎ সে দুনিয়া হতে এমন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হলো যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট ) এখান থেকেই মারফু হাদীস শেষ এবং বাকী অংশটুকু বর্ণনাকারী রাবী ইবনে আনাস ( রঃ )-এর কথা । এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সূরা তাওবা আয়াত 11 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং
- এবং আমার কাজ সহজ করে দিন।
- অতঃপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছল তখন বললঃ হে আযীয, আমরা ও আমাদের পরিবারবর্গ কষ্টের
- অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ গ্রহণের
- কোন কোন আহলে কিতাব এমনও রয়েছে, তোমরা যদি তাদের কাছে বহু ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তাহলেও
- মুমিনগণ, তোমরা এহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের মধ্যে যে জেনেশুনে শিকার বধ করবে,
- অতঃপর সমুদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রলয়ংকর বিপর্যয় দ্বারা।
- যখন মূসা তাঁর যুবক (সঙ্গী) কে বললেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌছা পর্যন্ত আমি আসব
- হে মানব মন্ডলী, পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু-সামগ্রী ভক্ষন কর। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো
- তাদের ভয় করা উচিত, যারা নিজেদের পশ্চাতে দুর্বল অক্ষম সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেলে তাদের জন্যে তারাও
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা তাওবা ডাউনলোড করুন:
সূরা Tawbah mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Tawbah শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers