কোরান সূরা আনআম আয়াত 110 তাফসীর
﴿وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوا بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَنَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ﴾
[ الأنعام: 110]
আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব। [সূরা আনআম: 110]
Surah Al-Anam in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Anam ayat 110
আর আমরাও তাদের অন্তঃকরণ ও তাদের দৃষ্টি পাল্টে দেবো যেমন তারা প্রথমবার এতে বিশ্বাস করে নি, আর তাদের ছেড়ে দেবো তাদের অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতে।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১১০. আমি সেগুলো ও সৎপথের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের অন্তর ও চোখগুলোকে উল্টিয়ে দেবো। যেমনিভাবে আমি প্রথমবার তাদের হঠকারিতার দরুন তাদের মাঝে ও কুর‘আনের উপর ঈমান আনার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছি। আর আমি তাদেরকে তাদের ভ্রষ্টতা ও প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে অস্থিরতা ও বিভ্রান্তিতে ছেড়ে দিবো।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
তারা যেমন প্রথমবারে ওতে বিশ্বাস করেনি, তেমনি আমিও তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেব[১] এবং তাদেরকে অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে দেব। [১] এর অর্থ হল, প্রথমবার ঈমান না আনার কারণে তার শাস্তি তাদের উপর এমনভাবে এল যে, আগামীতেও তাদের ঈমান আনার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। অন্তঃকরণ ও দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ এটাই। ( ইবনে কাসীর )
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
আর তারা যেমন প্রথমবারে তাতে ঈমান আনেনি, তেমনি আমরাও তাদের অন্তরসমূহ ও দৃষ্টিসমূহ পাল্টে দেব এবং আমারা তদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরপাক খাওয়া অবস্থায় ছেড়ে দেব [ ১ ]। [ ১ ] অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, এভাবেই আমরা তাদেরকে শাস্তি দেব। কারণ, তারা আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেয়নি। অথচ তাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা আল্লাহর আহবান ও তারই বাণী। সুতরাং তাদের অন্তর চিরন্তন পাল্টে যেতে থাকবে, ঈমান ও তাদের মাঝে বাধা এসে যাবে, তারা সঠিক পথে চলতে সক্ষম হবে না। এটা আল্লাহর ইনসাফেরই দাবী। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যারা তাদের নিজের উপর অপরাধ করে, তার অবারিত রহমত দর্শনের পরও তাতে অবগাহন না করে, সঠিক পথ দেখানোর পরও তাতে না চলে, তিনি তাদের থেকে সেটা গ্রহণ করার তাওফীক উঠিয়ে নেন। [ সা'দী ]
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১০৯-১১০ নং আয়াতের তাফসীর:
মুশরিকরা আল্লাহর নামে কসম করে বলে-যদি মুহাম্মাদ ( সঃ )-কে কোন মু'জিযা দেয়া হয় এবং তার দ্বারা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয় তবে ঈমান আনবো। তাদের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল ( সঃ )-কে বলেন, হে নবী ( সঃ )! তুমি তাদেরকে বলে দাও, মু'জিযা তো আল্লাহ্ তা'আলার কাছে রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে আমাকে মুজিযা প্রদান করবেন, ইচ্ছা না করলে না করবেন। কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-কে বলেছিল- “ হে মুহাম্মাদ ( সঃ )! আপনি তো আমাদেরকে বলেছেন যে, হযরত মূসা ( আঃ ) তাঁর লাঠিখানা পাথরের উপর মারা মাত্রই তাতে বারোটি ঝরণা বের হয়েছিল । হযরত ঈসা ( আঃ ) মৃতকে জীবিত করতেন। সামুদ জাতিও ( হযরত সালিহ আঃ -এর কাছে ) উন্ত্রীর মু'জিযা দেখেছিল। সুতরাং আপনিও যদি এ ধরনের কোন মুজিযা আমাদের সামনে পেশ করতে পারেন তবে আমরা আপনাকে সত্য নবী বলে মেনে নেবো।” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তখন তাদেরকে বলেছিলেনঃ “ তোমরা কি মুজিযা দেখতে চাও?” তারা উত্তরে বলেছিলঃ “এই সাফা পাহাড়কে আমাদের জন্যে সোনা বানিয়ে দিন । তিনি তাদেরকে বলেনঃ “ যদি এরূপ হয়ে যায় তবে তোমরা একত্ববাদে বিশ্বাস করবে তো?” তারা উত্তরে বলেঃ “হ্যা, আমরা সবাই ঈমান আনবো ।” তিনি তখন উঠেন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করেন। তখন জিবরাঈল ( আঃ ) আগমন করেন এবং বলেনঃ “ আপনি চাইলে সাফা পাহাড়কে সোনায় পরিণত করা হবে । কিন্তু তারপরেও যদি তারা ঈমান না আনে তবে তৎক্ষণাৎ তাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসবে। আর আপনি ইচ্ছা করলে এদেরকে এভাবেই ছেড়ে দেয়া হাক। কেননা, হয়তো পরবর্তীকালে এদের মধ্যে কেউ কেউ ঈমান আনবে এবং তাওবা করবে। তাই, আল্লাহ পাক বলেনঃ “ তারা কঠিন অঙ্গীকার সহকারে আল্লাহর নামে কসম করে বলে ...
তারা ঈমান আনবে না । কিন্তু কথা এই যে, তাদের অধিকাংশই অজ্ঞ ও মূর্খ । আল্লাহ পাক বলেনঃ মু'জিযা প্রেরণে আমার কাছে শুধু এটাই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে, তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা মু'জিযা দেখার পরেও ঈমান আনেনি। সুতরাং এরাও যদি মু'জিযা দেখার পরেও ঈমান আনয়ন না করে তবে সাথে সাথেই তাদের উপর শাস্তি এসে পড়বে এবং যে অবকাশ তাদেরকে দেয়া হয়েছে তা আর থাকবে না। তোমাদেরকে কি করে বুঝানো যাবে যে, তাদের কাছে মুজিযা আসলেও তারা ঈমান আনবে না। কেউ কেউ বলেছেন যে, ( আরবী ) দ্বারা মুশরিকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহ পাক যেন তাদেরকে বলছেন- যে ঈমান যুক্ত কথাগুলো কসম করে করে লা হচ্ছে সেগুলো কি তোমরা প্রকৃতই সত্য মনে করছো?( আরবী ) এখানেও ( আরবী ) -এর ( আরবী ) -কে যের দিয়ে পড়া হয়েছে এই ভিত্তিতে যে, মু'জিযা দেখার পর ঈমান না আনার সংবাদ শুরু করা হয়েছে। কাজেই ‘ইন্না পড়তে হচ্ছে। কেউ কেউ ( আরবী ) অর্থাৎ ( আরবী ) দ্বারা পড়েছেন এবং বলা হয়েছে যে, ( আরবী ) দ্বারা মুমিনদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ “ হে মুমিনগণ! তোমরা কি জান যে, এই নিদর্শনগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরেও এরা ঈমান আনবে না?” এই অবস্থায় ( আরবী ) এর ( আরবী ) কে যবরের সাথেও পড়া যেতে পারে এবং যেরের সাথেও পড়া যেতে পারে । অর্থাৎ এটা ( আরবী )-এর ( আরবী ) হয়ে এবং এই অবস্থায় ( আরবী ) এর ( আরবী ) হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) ( ৭:১২ ), এখানেও ( আরবী ) এ ( আরবী ) শব্দটি ( আরবী ) হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) ( ২১:৯৫ ) এখানেও অনুরূপ অবস্থা। ...
( আরবী )-এই আয়াতের লুক্কায়িত ভাবার্থ হচ্ছে - হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে এর কি প্রমাণ আছে যে, এরা এদের চাওয়া নিদর্শন ও মু'জিযা দেখে অবশ্যই ঈমান আনবে? কেউ কেউ একথাও বলেছেন যে, ( আরবী ) এখানে ( আরবী ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ কথা শোনা গেছে যে, আরববাসী বলে থাকেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ তুমি বাজারে যাও এবং আমাদের জন্যে কিছু খরিদ করে আনবে। অর্থাৎ ( আরবী ) সম্ভবতঃ তুমি খরিদ করবে। অনুরূপভাবে এই দাবীর অনুকূলে আরবদের কবিতা পেশ করা হয়েছে।আল্লাহ পাক বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যেহেতু তারা প্রথমবার ঈমান আনেনি, এর ফলে আমি তাদের মনোভাবের ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে দেবো ।” অর্থাৎ তাদের অস্বীকার ও কুফরীর কারণে আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তর এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তারা এখন কিছুই মানতে রাজী নয়। তাদের মধ্যে ও ঈমানের মধ্যে বিচ্ছেদ এসে গেছে। তারা সারা দুনিয়ার নিদর্শন ও মু'জিযা দেখলেও ঈমান আনবে না। যেমন প্রথমবার তাদের মধ্যে ও তাদের ঈমানের মধ্যে প্রতিবন্ধকতার সষ্টি হয়েছিল। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, তারা যা বলবে তা বলার পূর্বেই আল্লাহ ওর সংবাদ দিয়েছেন এবং তারা যে আমল করবে, পূর্বেই তিনি সেই খবর দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ ( মহা মহিমান্বিত ) খবরদাতার মত কেউ তোমাকে খবর দিতে পারে না ।" ( ৩৫:১৪ ) “ মানুষ বলবে, হায়, আফসোস! যে বাড়াবাড়ি ও পাপ কার্য আমি করেছি ......
যদি আমাকে পুনরায় দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো, তবে আমি সৎকর্মশীল লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম ।” আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ যদি তাদেরকে দুনিয়ায় পুনরায় ফিরিয়ে দেয়াও হয় তথাপি আবারও তারা হিদায়াতের উপর থাকবে না ।” তিনি আরও বলেনঃ “ যদি তাদেরকে ( দুনিয়ায় ) ফিরিয়ে দেয়াও হয় তবুও তারা নিষিদ্ধ কাজগুলোতেই পুনরায় লিপ্ত হয়ে পড়বে, নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী ।” অর্থাৎ দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার পরেও তারা পূর্বের মতই ঈমান আনবে না। কেননা, এই সময়ের ন্যায় ঐ সময়েও আল্লাহ তাদের অন্তর ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাবেন এবং আবারও তাদের মধ্যে ঈমানের প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি হয়ে যাবে। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যেই বিভ্রান্ত থাকতে দেবেন।
সূরা আনআম আয়াত 110 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।
- জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
- এবং ইহাও যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
- শপথ তাদের, যারা সন্তরণ করে দ্রুতগতিতে,
- যাতে এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে
- হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন।
- অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ-তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
- তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার
- বলেছিঃ আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের উপর
- এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা আনআম ডাউনলোড করুন:
সূরা Anam mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Anam শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers