কোরান সূরা সাফ্ফাত আয়াত 113 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Assaaffat ayat 113 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা সাফ্ফাত আয়াত 113 আরবি পাঠে(Assaaffat).
  
   

﴿وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَىٰ إِسْحَاقَ ۚ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ مُبِينٌ﴾
[ الصافات: 113]

তাকে এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট জুলুমকারী। [সূরা সাফ্ফাত: 113]

Surah As-Saaffat in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Assaaffat ayat 113


আর আমরা আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলাম তাঁর উপরে ও ইসহাকের উপরে। আর তাঁদের দুজনের বংশধরদের মধ্যে থেকে কেউ হচ্ছেন সৎকর্মশীল, আর কেউ হচ্ছে তাদের নিজেদের প্রতি স্পষ্টভাবে অন্যায়াচারী।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১১৩. আর আমি তাঁর ও তাঁর সন্তান ইসহাকের প্রতি আমার পক্ষ থেকে বরকত অবতীর্ণ করি। ফলে তাঁদের উভয়ের উদ্দেশ্যে নিআমতের প্রাচুর্য প্রদান করি। তন্মধ্যে রয়েছে উভয়ের সন্তানদের আধিক্য। আর তাদের সন্তানদের মধ্যে রয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আনুগত্যের মাধ্যমে সৎকর্মশীল। আবার তাদের কেউ আপন আত্মার উপর কুফরি ও সুস্পষ্ট জুলুম এবং পাপাচারের মাধ্যমে অবিচারকারী।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তাকে এবং ইসহাককে আমি সমৃদ্ধি দান করেছিলাম;[১] তাদের উভয়ের বংশধরদের মধ্যে কিছু সৎকর্মপরায়ণ এবং কিছু নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী। [২] [১] অর্থাৎ, তাঁদের উভয়ের বংশ বিস্তার করেছিলাম। অধিকাংশ আম্বিয়া ও রসূলদের আগমন তাঁদের বংশ থেকেই ঘটেছে। ইসহাক ( আঃ )-এর পুত্র ইয়াকুব ( আঃ ) ছিলেন, যাঁর বারটি সন্তান থেকে বানী ইস্রাঈলের বারটি গোত্র সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাঁদের বংশ থেকেই বানী ইস্রাঈল জাতি বিস্তার লাভ করে এবং অধিকাংশ আম্বিয়া তাঁদের মধ্য থেকেই আগমন করেন। ইবরাহীম ( আঃ )-এর দ্বিতীয় পুত্র ইসমাঈল ( আঃ ) থেকে আরবদের বংশ বিস্তার হয় এবং তাদের মধ্য হতে শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ ( সাঃ ) জন্মগ্রহণ করেন। [২] তারা শিরক, পাপাচার, অত্যাচার ও ফাসাদ করে। ইবরাহীম ( আঃ )-এর বংশধরে বরকত থাকা সত্ত্বেও এখানে তাদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও অত্যাচারী বলে ইঙ্গিত করে দিয়েছেন যে, মর্যাদাসম্পন্ন বাপদাদা ও বংশের সম্পর্ক আল্লাহর নিকট কোন মূল্য রাখে না। সেখানে শুধু ঈমান ও নেক আমলের গুরুত্ব আছে। ইয়াহুদী ও নাসারাগণ যদিও ইসহাক ( আঃ )-এর সন্তান, অনুরূপ আরবের মুশরিকরা ইসমাঈল ( আঃ )-এর সন্তান, কিন্তু তাদের আমল যেহেতু স্পষ্ট ভ্রষ্টতা বা শিরক ও অবাধ্যতার উপর ছিল, সেহেতু উক্ত উচ্চ বংশ-মর্যাদা তাদের আমলের পরিবর্ত হতে পারে না।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর আমরা ইবরাহীমের ওপর বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাকের উপরও; তাদের উভয়ের বংশধরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুহসিন এবং কিছু সংখ্যক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী।

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


৯৯-১১৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা সংবাদ প্রদান করছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমান আনয়ন হতে নিরাশ হয়ে গেলেন, কারণ তারা আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশক বহু নিদর্শন দেখার পরও ঈমান আনলো না, তখন তিনি সেখান থেকে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে ইচ্ছা করে প্রকাশ্যভাবে তাদেরকে বললেনঃ “ আমি আমার প্রতিপালকের দিকে চললাম । তিনি অবশ্যই আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন। আর তিনি প্রার্থনা করলেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন!” অর্থাৎ ঐ সন্তান যেন একত্ববাদে তাঁর সঙ্গী হয় । মহান আল্লাহ বলেনঃ “ আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম ।” ইনিই ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ), হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর প্রথম সন্তান। বিশ্ব মুসলিম এর ঐকমত্যে তিনি হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর বড় ছিলেন। একথা আহলে কিতাবও মেনে থাকে। এমনকি তাদের কিতাবেও লিখিত আছে যে, হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর জন্মের সময়। হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর বয়স ছিল ছিয়াশি বছর। আর হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর যখন জন্ম হয় তখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর বয়স নিরানব্বই বছরে পৌঁছেছিল। তাদেরই গ্রন্থে একথাও লিখিত রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-কে তার একমাত্র সন্তানকে কুরবানী করার হুকুম হয়েছিল। কিন্তু ইয়াহুদীরা হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর বংশধর এবং আরবরা হলো হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর বংশধর, শুধু এই কারণেই তারা কুরবানীর মর্যাদা হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) হতে সরিয়ে হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে প্রদান করেছে। আর অনর্থক ব্যাখ্যা করে আল্লাহর বাণীর পরিবর্তন সাধন করেছে। তারা একথাও বলেছেঃ “ আমাদের কিতাবে ( আরবী ) শব্দ রয়েছে, যার অর্থ একমাত্র সন্তান নয়, বরং এর অর্থ হলোঃ “যে তোমার নিকট বর্তমানে একাকী রয়েছে । এটা এজন্যেই যে, ঐ সময় হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) মক্কায় তাঁর মায়ের কাছে ছিলেন এবং হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর নিকট শুধুমাত্র হযরত ইসহাক ( আঃ ) ছিলেন।কিন্তু এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল কথা। কেননা, ওকেই বলে যে একমাত্র সন্তান, যার আর কোন ভাই নেই। আর একথাও সত্য যে, যার একটি মাত্র সন্তান, আর তার পরে কোন সন্তান নেই তার প্রতি স্বাভাবিকভাবে মমতা বেশীই হয়ে থাকে। এজন্যে তাকে কুরবানী করার আদেশ দান পরীক্ষা করার একটি বিরাট হাতিয়ার। পূর্বযুগীয় কতক গুরুজন এমনকি কতক সাহাবীও ( রাঃ ) যে এ মত পোষণ করতেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসহাক ( আঃ ), এটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু এটা আল্লাহর কিতাব ও রাসূল ( সঃ )-এর সুন্নাত সম্মত নয়। বরং এরূপ ধারণা করা যায় যে, তাঁরা বানী ইসরাঈলের কথাকে বিনা প্রমাণেই মেনে নিয়েছেন, এর পিছনে কোন যুক্তি তাঁরা অন্বেষণ করেননি। আমরা আল্লাহর কালাম দ্বারাই প্রমাণ করবো যে, হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) ছিলেন যাবীহুল্লাহ। সুসংবাদে বলা হয়েছেঃ ( আরবী ) অর্থাৎ সহনশীল সন্তান। অতঃপর কুরবানীর উল্লেখ রয়েছে। এসব বর্ণনা সমাপ্ত করার পর সৎ নবী হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর জন্মের সুসংবাদ রয়েছে এবং তাঁর সম্পর্কে ফেরেশতারা ( আরবী ) বা বিজ্ঞ সন্তান বলেছেন। তারপর তার সুসংবাদের সাথে ইরশাদ হয়েছেঃ ( আরবী ) ( ১১:৭১ ) অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর জীবদ্দশাতেই হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব ( আঃ ) জন্মগ্রহণ করবেন। আর এভাবেই তাঁর বংশ বৃদ্ধির সংবাদ প্রথমেই জানানো হয়। তাহলে তাঁকে যবেহ করার আদেশ কি প্রকারে সম্ভব হতে পারে? এটা আমরা ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি। অবশ্য এখানে হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-কে ধৈর্যশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং তা যবেহ করার কাজের সাথে অতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।এখন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) বড় হলেন। এখন তিনি পিতার সাথে চলাফেরা করতে পারেন। ঐ সময় তিনি তাঁর মাতার সাথে ফারান নামক এলাকায় থাকতেন। হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) প্রায়ই সেখানে যাতায়াত করতেন। এ কথাও বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) তথায় বুরাক নামক যানে যাওয়া আসা করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), হযরত মুজাহিদ ( রঃ ), হযরত ইকরামা ( রঃ ), হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজন বলৈনঃ এই বাক্যের অর্থ এও হতে পারে যে, হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) ঐ সময় প্রায় যৌবনে পদার্পণ করেছিলেন এবং পিতার ন্যায় চলাফেরা করা ও কাজকর্ম করার যোগ্য হয়ে উঠেছিলেন। তখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানকে কুরবানী করছেন। হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের ( রাঃ ) বলেন যে, নবীদের স্বপ্ন হলো অহী। অতঃপর তিনি। ( আরবী )-এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। একটি মার’ হাদীসেও এটা রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ ঘুমে নবীদের ( আঃ ) স্বপ্ন হলো অহী ।( এহানসটি মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে)আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) স্বীয় সন্তানের পরীক্ষার জন্যে এবং এজন্যেও যে, হঠাৎ কুরবানীর কথা শুনে তিনি যেন হতবুদ্ধি না হয়ে পড়েন, নিজের মত ও সত্য স্বপ্ন তার সামনে প্রকাশ করলেন। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান উত্তর দিলেনঃ “ পিতঃ! বিলম্ব করছেন কেন? একথা কি জিজ্ঞেস করতে হয়? যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন তা সত্বর করে ফেলুন । ইনশাআল্লাহ আমি ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আপনার বাসনা চরিতার্থ করবো।” তিনি যা বললেন তাই করে দেখালেন এবং তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী রূপে প্রমাণিত হলেন। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ স্মরণ কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইসমাঈল ( আঃ )-এর কথা, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী, এবং সে ছিল রাসূল, নবী । সে তার পরিজনবর্গকে নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিতো এবং সে ছিল তার প্রতিপালকের সন্তোষজন।”( ১৯:৫৪-৫৫ )পিতা-পুত্র উভয়ে যখন একমত হলেন তখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-কে মাটিতে কাত করে শায়িত করলেন বা অধোমুখে মাটিতে ফেলে দিলেন, যাতে যবেহ করার সময় প্রাণপ্রিয় সন্তানের মুখমণ্ডল দেখে মায়ার উদ্রেক না হয়। মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে একট বর্ণনা রয়েছে যে, যখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) স্বীয় সন্তানকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান সামনে এসে হাযির হলো। কিন্তু তিনি শয়তানকে পিছনে ফেলে অগ্রসর হলেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) সহ, জামরায়ে অকাবায় উপস্থিত হলেন। এখানেও শয়তান সামনে আসলে তার দিকে তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি জামরায়ে উসতার নিকট এসে পুনরায় শয়তানের দিকে সাতটি কংকর ছুঁড়লেন। অতঃপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে ছেলেকে মাটিতে শায়িত করলেন। ঐ সময় ছেলের গায়ে সাদা রঙ-এর চাদর ছিল। তিনি পিতাকে চাদরটি খুলে নিতে বললেন, যাতে ঐ চাদর দ্বারা তাঁর কাফনের কাজ হয়। এহেন অবস্থায় পিতা হয়ে পুত্রের দেহ অনাবৃত করা অতি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। এমন সময় শব্দ এলোঃ “ হে ইবরাহীম ( আঃ )! তুমি তো স্বপ্নদেশ সত্যিই পালন করলে । তখন তিনি পিছনে ফিরে একটি দুম্বা দেখতে পেলেন, যার শিং ছিল বড় বড় এবং চক্ষুদ্বয় ছিল অতি সুন্দর।হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ “ এ জন্যেই আমরা কুরবানীর জন্যে এই প্রকারের দুম্বা মনোনীত করে থাকি ।" হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর অপর এক বর্ণনায় হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর নাম উল্লিখিত রয়েছে। ফলে তাঁর বর্ণনায় দু’জনের নাম পাওয়া যায়। সুতরাং প্রথমটিই গ্রহণযোগ্য। ইনশাআল্লাহ এর প্রমাণ পেশ করা হবে।আল্লাহ তা'আলা কুরবানীর জন্যে একটি দুম্বা দান করলেন। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, ওটা জান্নাতের দুম্বা ছিল। চল্লিশ বছর ধরে সেখানে পালিত হয়েছিল। এটা দেখে হযরত ইবরহীম ( আঃ ) পুত্রকে ছেড়ে দিয়ে সেই দিকে অগ্রসর হলেন। প্রথম জামরায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে জামরায়ে উসতায় আসলো। সেখানেও তিনি সাতটি কংকর হুঁড়লেন। আবার প্রথম জামরায় এসে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। সেখান হতে যবেহের স্থানে এসে দুষাটি কুরবানী করলেন। এটার মাথাসহ শিং কা’বার দেয়ালে লটকানো ছিল। পরে ওটা শুকিয়ে যায় এবং ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত সেখানেই বিদ্যমান ছিল। বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) হযরত কা'ব ( রাঃ ) একত্রিত হন। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) নবী ( সঃ ) হতে হাদীস বর্ণনা করছিলেন এবং হযরত কা'ব ( রাঃ ) আল্লাহর কিতাব হতে ঘটনা বর্ণনা করছিলেন। হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ “ প্রত্যেক নবী ( আঃ )-এর জন্যে একটি ককূলকৃত দুআ রয়েছে । আমার এই কবুলকৃত দু'আ আমি আমার উম্মতের শাফাআতের জন্যে গোপন রেখেছি যা কিয়ামতের দিন হবে।” হযরত কা'ব ( রাঃ ) তখন হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ )-কে বলেনঃ “ তুমি কি স্বয়ং এটা রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হতে শুনেছো?” হযরত আবু হুরাইরা ( রাঃ ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, আমি নিজেই শুনেছি ।” তখন হযরত কা'ব ( রাঃ ) খুব খুশী হন এবং বলেনঃ “ তোমার উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গকৃত হোক অথবা নবী ( সঃ )-এর উপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গকৃত হোক ।” অতঃপর হযরত কা'ব ( রাঃ ) হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর ঘটনা শুনালেন। তিনি বর্ণনা করলেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে যবেহ করার জন্যে প্রস্তুত হলেন তখন শয়তান ( মনে মনে ) বললোঃ “ আমি যদি এ সময়ে এ কাজ থেকে তাঁকে টলাতে না পারি তবে আমাকে এ জন্যে সারা জীবন নিরাশ থাকতে হবে । প্রথমে সে হযরত সারার নিকট গেল এবং তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ তোমার স্বামী তোমার পুত্রকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা জান কি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হয়তো নিজের কোন কাজের জন্যে । নিয়ে যাচ্ছেন।” সে বললোঃ “ না, না, বরং তাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন । হযরত সারা বললেন:“ তিনি নিজের পুত্রকে যবেহ করবেন এটা কি সম্ভব?” অভিশপ্ত শয়তান জবাব দিলোঃ “তোমার স্বামী বলেন কি জান? তাঁকে নাকি আল্লাহ এই নির্দেশ দিয়েছেন!” হযরত সারা তখন বললেনঃ “তাকে যদি আল্লাহ নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে তিনি ঠিকই করছেন । আল্লাহর হুকুম পালন করে তিনি ফিরে আসবেন।” সে এখানে ব্যর্থ হয়ে হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর নিকট গেল এবং তাকে বললোঃ “ তোমাকে তোমার আব্বা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা জান কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হয়তো কোন কাজের জন্যে কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন ।” শয়তান বললোঃ “ না, বরং তোমাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন । হযরত ইসহাক ( আঃ ) বললেনঃ “ এটা কি করে সম্ভব?” শয়তান । বললোঃ “ তোমাকে যবেহ করতে নাকি আল্লাহ তাকে আদেশ করেছেন ।” তখন হযরত ইসহাক ( আঃ ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! যদি সত্যি আল্লাহ আমাকে যবেহ করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে তো তাড়াতাড়ি তার এ কাজ করা উচিত ।”শয়তান এখানেও নিরাশ হয়ে হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর নিকট গিয়ে বললোঃ “ ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “প্রয়োজনীয় কাজে যাচ্ছি ।” শয়তান বললোঃ “ না, তা নয় । বরং তাকে যবেহ করার জন্যে নিয়ে যাচ্ছে।” হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) বললেনঃ “ তাকে আমি কেন যবেহ করবো?” শয়তান জবাব দিলোঃ “হয়তো আপনার প্রতিপালক আপনাকে এ কাজে আদেশ করেছেন । তিনি তখন বললেনঃ “ আমার প্রতিপালক যদি আমাকে আদেশ করেই থাকেন তবে আমি তা করবোই ।" ফলে শয়তান এখানেও নিরাশ হয়ে গেল। অপর এক বর্ণনায় বলা হয় যে, এই সব ঘটনার পর মহান আল্লাহ হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে বললেনঃ “ তুমি আমার নিকট যে দু'আ করবে আমি তা ককূল করবো । হযরত ইসহাক ( আঃ ) তখন দু'আ করলেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! যারা আপনার সাথে কোন শরীক স্থাপন করবে না তাদেরকে আপনি জান্নাত দান করুন!” রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বর্ণনা করেনঃ “দু'টি বিষয় আমার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে । একটি হলো এই যে, আমার অর্ধেক উম্মতকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর দ্বিতীয় হলো এই যে, আমাকে শাফাআত করার অধিকার দেয়া হবে। অমি শাফাআত করাকেই প্রাধান্য দিলাম, এই আশায় যে, ওটা সাধারণ হবে। হ্যা, তবে একটি দু'আ ছিল যে, আমি ওটাই করতাম। কিন্তু আমার পূর্বেই আল্লাহর এক সৎ বান্দা তা করে ফেলেছেন। ঘটনা এই যে, যখন হযরত ইসহাক ( আঃ ) যবেহ-এর বিপদ হতে মুক্তি পেলেন তখন তাঁকে বলা হলোঃ “ আমার নিকট চাও, যা চাইবে তাই আমি দিবো ।” তখন হযরত ইসহাক ( আঃ ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! শয়তান ধোকা দেয়ার পূর্বেই আমি তা চাইবো । হে আল্লাহ! যে আপনার সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে তাকে আপনি জান্নাতে প্রবিষ্ট করুন!” ( এ হাদীসটি মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। এর সনদ গারীব ও মুনকার। আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম নামক এর একজন বর্ণনাকারী দুর্বল। আর আমার তো এই ভয়ও হয় যে, “ যখন আল্লাহ হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে বললেন ...
শেষ পর্যন্ত এ কথাগুলো তার নিজের কথা, যেগুলো তিনি হাদীসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন ।
যাবীহুল্লাহ তো ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) এবং যবেহ-এর স্থান তো মিনা, যা মক্কায় অবস্থিত এবং হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) মক্কাতেই ছিলেন, হযরত ইসহাক ( আঃ ) নন, তিনি তো ছিলেন সিরিয়ার কিন’আন শহরে)মহান আল্লাহ বলেনঃ “ যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইবরাহীম ( আঃ ) তাঁর পুত্র ( ইসমাঈল আঃ )-কে কাত করে শায়িত করলেন তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললামঃ হে ইবরাহীম ( আঃ )! তুমি তো স্বপ্নদেশ সত্যিই পালন করলে!” হযরত সুদ্দী ( রঃ ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর গলায় ছুরি চালাতে শুরু করলেন তখন গলা তামা হয়ে গেল, ফলে ছুরি চললো না ও গলা কাটলো না । ঐ সময় ( আরবী ) এই শব্দ আসলো।আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ “ এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি । অর্থাৎ তাদেরকে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করে থাকি। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পরিত্রাণের উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযক দান করে থাকেন যে, ওটা তার ধারণা বা কল্পনাও থাকে না । আল্লাহর উপর ভরসাকারীর জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পুরো করেই থাকেন এবং প্রত্যেক জিনিসেরই তিনি পরিমাপ নির্ধারণ করে রেখেছেন।”( ৬৫:২-৩ )এই আয়াত দ্বারা আলেমগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কাজের উপর ক্ষমতা লাভের পূর্বেই হুকুম রহিত হয়ে যায়। অবশ্য মু'তাযিলা সম্প্রদায় এটা মানে না। দলীল গ্রহণের কারণ প্রকাশমান। কেননা, হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-কে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তিনি যেন তার পুত্রকে কুরবানী করেন। অতঃপর যবেহ করার। পূর্বেই ফিদিয়ার মাধ্যমে এ হুকুম রহিত করে দেয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে, তাকে ধৈর্য ও আদিষ্ট কাজ প্রতিপালনে সদা প্রস্তুত থাকার উপর বিনিময় প্রদান করা হবে। এজন্যেই ইরশাদ হয়েছেঃ “ নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা । একদিকে হুকুম এবং অপরদিকে তা প্রতিপালন। এজন্যেই মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-এর প্রশংসায় বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ ঐ ইবরাহীম ( আঃ ), যে পালন করেছিল তার দায়িত্ব ।( ৫৩:৩৭ )হযরত সুফিয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন যে, যে ফিদিয়া দান করা হয়েছিল তার রঙ ছিল সাদা, চক্ষু বড় এবং বড় শিং বিশিষ্ট উৎকৃষ্ট খাদ্যে প্রতিপালিত ভেড়া। যা সাবীর’ নামক স্থানে বাবুল বৃক্ষে বাঁধা ছিল। ওটা জান্নাতে চল্লিশ বছর ধরে ছিল। মিনাতে সাবীরের নিকট ওটাকে যবেহ করা হয়। এটা সেই ভেড়া যাকে হাবীল কুরবানী করেছিলেন। হযরত হাসান ( রঃ ) বলেন যে, ঐ ভেড়াটির নাম ছিল জারীর। ইবনে জুরায়েজ ( রঃ ) বলেন যে, ওটাকে মাকামে ইবরাহীমে যবেহ করা হয়। মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, ওটাকে মিনার নহরের স্থানে যবেহ করা হয়। বর্ণিত আছে যে, একটি লোক নিজেকে কুরবানী করার মানত মানে এবং হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁর কাছে ফতওয়া জিজ্ঞেস করে। তিনি তাকে একশটি উট কুরবানী করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি বলতেনঃ “ তাকে যদি আমি একটি মাত্র ভেড়া কুরবানী করতে বলতাম তাহলেও যথেষ্ট হতো । কেননা কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ ( আঃ )-এর ফিদিয়া ওটা দ্বারাই দেয়া হয়েছিল।”কেউ কেউ বলেন যে, ওটা পাহাড়ী ছাগল ছিল। কারো কারো মতে ওটা ছিল হরিণ।মুনসাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) হযরত উসমান ইবনে তালহা ( রাঃ )-কে ডেকে বলেনঃ “ কা’বা ঘরে প্রবেশ করে আমি ভেড়ার শিং দেখেছি । কিন্তু ওটা তোমাকে ঢেকে রাখতে বলার কথা আমি ভুলে গেছি। যাও, ওটা ঢেকে দাও। কাবা ঘরে এমন কোন জিনিস থাকা ঠিক নয় যাতে নামাযীর নামাযে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।” সুফিয়ান সাওরী ( রঃ ) বলেন যে, ওটা কা'বা ঘরেই ছিল। পরবর্তীকালে কা'বা ঘরে আগুন লাগায় ওটা পুড়ে যায়। এর দ্বারাও হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর কুরবানী হওয়ার প্রমাণ মিলে। কেননা, উক্ত শিং তখন থেকে নিয়ে ইসলামের আবির্ভাব পর্যন্ত কুরায়েশদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে রক্ষিত ছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। অধ্যায়: প্রকৃত যাবীহ কে ছিলেন সে সম্পর্কে পূর্বযুগীয় গুরুজন হতে যেসব ‘আসার’ এসেছে সেগুলোর বর্ণনাঃ যারা দাবী করেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসহাক ( আঃ ), তাঁদের যুক্তি, যথাঃ হযরত আবু মায়সারা ( রঃ ) বলেন যে, হযরত ইউসুফ ( আঃ ) মিসরের বাদশাহকে বলেনঃ “ আপনি কি আমার সাথে খেতে চান? আমি হলাম ইউসুফ ইবনে ইয়াকূব ইবনে ইসহাক যাবীহুল্লাহ ইবনে ইবরাহীম খালীলুল্লাহ ( আঃ )”হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের ( রঃ ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা ( আঃ ) বলেনঃ “ হে আমার প্রতিপালক! মানুষরা মুখে মুখে হযরত ইবরাহীম ( আঃ ), হযরত ইসহাক ( আঃ ) এবং হযরত ইয়াকূব ( আঃ )-এর মা’রূদের শপথ করে থাকে । এর কারণ কি?" উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ কারণ এই যে, হযরত ইবরাহীম ( আঃ ) প্রত্যেকটি বিষয়ে আমাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে । ইসহাক ( আঃ ) আমার পথে কুরবানী হওয়ার জন্যে নিজেকে আমার হাতে সমর্পণ করে। আর ইয়াকূব ( আঃ )-কে আমি যতই বিপদাপদে নিপতিত করি, তার শুভ ধারণা ততই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।”হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ )-এর সামনে একদা এক ব্যক্তি তার পূর্বপুরুষের গৌরবের কথা বলাবলি করছিল। তিনি তাকে বললেনঃ “ প্রকৃত গৌরবের অধিকারী হওয়ার যোগ্য হযরত ইউসুফ ( আঃ ) কেননা, তিনি হচ্ছেন ইয়াকূব ( আঃ ) ইবনে ইসহাক যাবীহুল্লাহ ( আঃ ) ইবনে ইবরাহীম খালীলুল্লাহ ( আঃ )-এর বংশধর।”ইকরামা ( রঃ ), ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), আব্বাস ( রাঃ ), আলী ( রাঃ ), যায়েদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), শাবী ( রঃ ), উবায়েদ ইবনে উমায়ের ( রঃ ), যায়েদ ইবনে আসলাম ( রঃ ), আবদুল্লাহ ইবনে শাকীক ( রঃ ), কাসিম ইবনে আবি বুরযা ( রঃ ), মাকহুল ( রঃ ), উসমান ইবনে আবি হাযির ( রঃ ), সুদ্দী ( রঃ ), হাসান ( রঃ ), কাতাদা ( রঃ ), আবূ হুয়েল ( রঃ ), ইবনে সাবিত ( রঃ ), কাবুল আহবার ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজন এই মত পোষণ করেন যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসহাকই ( আঃ ) ছিলেন। ইমাম ইবনে জারীরও ( রঃ ) এই মত গ্রহণ করেছেন। সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই আছে। তবে বাহ্যতঃ এটা জানা যায় যে, উক্ত মনীষীবৃন্দের উস্তাদ ছিলেন হযরত কা'বুল আহবার ( রঃ )। তিনি হযরত উমার ফারূক ( রাঃ )-এর খিলাফতের যুগে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি হযরত উমার ( রাঃ )-কে প্রাচীন কিতাবগুলোর ঘটনা শুনাতেন। জনগণের মধ্যেও তিনি ঐ সব কথা বলতেন। তখন শুদ্ধ ও অশুদ্ধের পার্থক্য উঠে যায়। সঠিক কথা তো এই যে, এই জাতির জন্যে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের একটি কথারও প্রয়োজন নেই। ইমাম বাগাবী ( রঃ ) আরো কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীর নাম সংযোজন করেছেন যাঁরা সবাই হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে যাবীহুল্লাহ বলতেন। একটি মারফু হাদীসেও এরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু হাদীসটি সহীহ হলে তো বিবাদের মীমাংসা হয়েই যেতো। আসলে হাদীসটি সহীহ নয়। কেননা, এর সনদে দুজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন। হাসান ইবনে দীনার পরিত্যক্ত এবং আলী ইবনে যায়েদ মুনকারুল হাদীস। আর সৰ্বাধিক সঠিক কথা এই যে, হাদীসটি মাওকুফ। কেননা, অন্য এক সনদে একথা হযরত আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই বেশী সঠিক কথা। তবে সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।এখন ঐ সব ‘আসার’ বর্ণনা করা হচ্ছে যেগুলো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ )। আর এটাই অকাট্যরূপে সত্য।হযরত ইবনে আব্বাস বলেন যে, যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ )। ইয়াহূদীরা যে হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে যাবীহুল্লাহ বলেছে তা তারা ভুল বলেছে। হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), শা'বী ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব কারাযী ( রঃ ) প্রমুখ গুরুজন মত প্রকাশ করেন যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) ছিলেন। হযরত শাবী ( রঃ ) বলেনঃ ‘যাবীহুল্লাহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) এবং আমি কা'বা গৃহে ভেড়ার শিং দেখেছি।”মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব ( রঃ ) বলেন যে, মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-কে তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। উক্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাক ( আঃ )-এর, সে ছিল এক নবী, সৎকর্মশীলদের অন্যতম । হযরত ইবরাহীম ( আঃ )-কে পুত্র ইসহাক ( আঃ )-এর জন্ম হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে এবং এর সাথে আরো বলা হয়েছে। যে, হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব ( আঃ ) জন্ম লাভ করবেন। সুতরাং হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর পুত্র হযরত ইয়াকূব ( আঃ )-এর জন্মগ্রহণের পূর্বে তাঁকে কুরবানী করার হুকুম দেয়া কি করে সম্ভব? কেননা, এটা আল্লাহ তাআলার ওয়াদা যে, হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর ঔরষে হযরত ইয়াকুব ( আঃ )-এর জন্ম হবে। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-কেই কুরবানী দেয়ার হুকুম হয়েছিল, হযরত ইসহাক ( আঃ )-কে নয়।হযরত ইবনে ইসহাক ( রঃ ) বলেনঃ একথা আমি বহু লোককে বলতে শুনেছি। এ প্রসঙ্গে হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয ( রঃ ) বর্ণনা করেনঃ “ এটা অতি পরিষ্কার প্রমাণ । আমিও জানতাম যে, যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈলই ( আঃ ) ছিলেন। অতঃপর তিনি সিরিয়ার একজন ইয়াহূদী আলেমকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যিনি মুসলমান হয়েছিলেন। উত্তরে ঐ আলেম বলেছিলেনঃ “ হে আমীরুল মুমিনীন! সত্য কথা এটাই যে, যাকে কুরবানী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) কিন্তু যেহেতু আরবরা ছিল তাঁর বংশধর, তাই এই মর্যাদা তাদের দিকেই, প্রত্যাবর্তিত হয়। এতে ইয়াহূদীরা হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর নাম পরিবর্তন করে হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর নাম প্রবিষ্ট করে। এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। আমাদের ঈমান রয়েছে যে, হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) হযরত ইসহাক ( আঃ ) উভয়েই ছিলেন সৎ, পবিত্র ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং আল্লাহর খাটি অনুগত বান্দা। কিতাবুয যুহদে বর্ণিত আছে যে, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ )-কে তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ্ ( রঃ ) এই মাসআলা জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “ যাবীহ ছিলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ) হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ইবনে উমার ( রাঃ ), আবু তোফায়েল ( রঃ ), সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রঃ ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের ( রঃ ), হাসান ( রঃ ), মুজাহিদ ( রঃ ), শা’বী ( রঃ ), মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব ( রঃ ), মুহাম্মাদ ইবনে আলী ( রঃ ), আবূ সালেহ ( রঃ ) প্রমুখ মনীষীবৃন্দ হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইমাম বাগাবী ( রঃ ) আরো কিছু সাহাবী ও তাবেয়ীর নাম উল্লেখ করেছেন। এর স্বপক্ষে একটি গারীব বা দুর্বল হাদীসও রয়েছে। তাতে রয়েছে যে, সিরিয়ায় আমীর মু'আবিয়া ( রাঃ )-এর সামনে যাবীহুল্লাহ কে ছিলেন এ প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তিনি জবাবে বলেন, আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি এটা অবগত আছি। শুনুন, আমি একদা নবী ( সঃ )-এর নিকটে ছিলাম এমন সময় একজন লোক এসে বলতে শুরু করলোঃ “ হে আল্লাহর পথে উৎসর্গীকৃত দুই ব্যক্তির বংশের রাসূল ( সঃ )! আমাকেও গানীমাতের মাল হতে কিছু প্রদান করুন!” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) মুচকি হাসলেন । হযরত মু'আবিয়া ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “ হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ যাবীহদ্বয় কারা?” তিনি জবাবে বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ( সঃ )-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব যখন যমযম কূপ খনন করেন তখন তিনি নযর মেনেছিলেন যে, যদি কাজটি সহজভাবে সমাপ্ত হয় তবে তিনি তাঁর একটি ছেলেকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবেন । কাজটি সহজভাবে সমাপ্ত হলো। তখন কোন ছেলেকে কুরবানী করা যায় এটা নির্ণয় করার জন্যে তিনি লটারী করেন। লটারীতে রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর পিতা আবদুল্লাহর নাম উঠে। এ দেখে তাঁর নানারা এ কাজ করতে তাঁকে নিষেধ করলো এবং বললোঃ “ তার বিনিময়ে একশটি উট কুরবানী করে দাও ।” তিনি তাই করলেন। আর দ্বিতীয় যাবীহ হলেন হযরত ইসমাঈল ( আঃ ), যা সর্বজন বিদিত।" তাফসীরে ইবনে জারীর ও মাগাযী উমুবীতে এ রিওয়াইয়াতটি বিদ্যমান রয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) হযরত ইসহাক ( আঃ ) যাবীহুল্লাহ হওয়ার একটি দলীল এই পেশ করেছেন যে, যে ( আরবী ) বা সহনশীল ছেলের সুসংবাদের উল্লেখ রয়েছে তার দ্বারা হযরত ইসহাককেই ( আঃ ) বুঝানো হয়েছে। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় ( আরবী ) অর্থাৎ “ তারা তাকে এক জ্ঞানী ও বিজ্ঞ সন্তানের সুসংবাদ দিলো ।( ৫১:২৮ ) আর হযরত ইয়াকূব ( আঃ )-এর সুসংবাদের জবাব এই দিয়েছেন যে, তিনি তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর সম্ভবতঃ হযরত ইয়াকূব ( আঃ )-এর সাথেই আরো সন্তানও থেকে থাকবে। কা'বা ঘরে শিং থাকার ব্যাপারে বলেছেন। যে, ওটা কিনআন শহর হতে এনে এখানে রেখে দেয়া হয়েছে। কোন কোন লোক হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর কথা খোলাখুলিভাবেই বলেছেন। কিন্তু এসব কথা বাস্তবতা শূন্য। অবশ্য হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর যাবীহুল্লাহ হওয়ার ব্যাপারে মুহাম্মাদ ইবনে কাব কারাযীর ( রঃ ) প্রমাণ খুব স্পষ্ট ও সবল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। প্রথমে যাবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈল ( আঃ )-এর জন্ম লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং এরপর তাঁর ভাই হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর জন্মের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। সূরায়ে হৃদ ও সূরায়ে হিজরে এর বর্ণনা গত হয়েছে।( আরবী ) শব্দটি হয়েছে, অর্থাৎ তিনি নবী হবেন সৎ। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেন যে, যাবীহ ছিলেন হযরত ইসহাক ( আঃ ) এবং এখানে নবুওয়াত হলো হযরত ইসহাক ( আঃ )-এর সুসংবাদ। যেমন হযরত মূসা ( আঃ ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভ্রাতা হারূন ( আঃ )-কে নবীরূপে ।"( ১৯:৫৩ ) প্রকৃতপক্ষে হযরত হারূন ( আঃ ) হযরত মূসা ( আঃ )-এর চেয়ে বড় ছিলেন। এখানে তাঁর নবুওয়াতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখানেও সুসংবাদ ঐ সময় দেয়া হয় যখন তিনি যবেহ-এর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল প্রমাণিত হয়েছিলেন। এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এ সুসংবাদ দুইবার প্রদান করা হয়েছে। প্রথমবার জন্মের পূর্বে এবং দ্বিতীয়বার নবুওয়াতের কিছু পূর্বে। এটা হযরত কাতাদা ( রঃ ) হতে বর্ণিত হয়েছে।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “ আমি তাকে বরকত দান করেছিলাম এবং ইসহাককেও ( আঃ ), তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতক নিজেদের প্রতি স্পষ্ট অত্যাচারী । যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ “ বলা হলো- হে নূহ ( আঃ )! অবতরণ কর আমার দেয়া শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যেসব সম্প্রদায় তোমার সাথে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ; অপর সম্প্রদায়সমূহকে জীবন উপভোগ করতে দিবো, পরে আমা হতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে ।"( ১১:৪৮ )

সূরা সাফ্ফাত আয়াত 113 সূরা

وباركنا عليه وعلى إسحاق ومن ذريتهما محسن وظالم لنفسه مبين

سورة: الصافات - آية: ( 113 )  - جزء: ( 23 )  -  صفحة: ( 450 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।
  2. ফিরে যাও তাদের কাছে। এখন অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মোকাবেলা
  3. বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ
  4. কোন কারণে তোমরা এমন জন্তু থেকে ভক্ষণ করবে না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়,
  5. আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন, আপনি কেন তাদের অব্যাহতি দিলেন, যে পর্যন্ত না আপনার কাছে পরিষ্কার
  6. যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে
  7. এবং সংরক্ষিত পানপাত্র
  8. অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিনঃ আমি তোমাদেরকে পরিস্কার ভাবে সতর্ক করেছি
  9. অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং বলুন, ‘সালাম’। তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
  10. এটা তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি ভূমন্ডল ও সমুচ্চ নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন।

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা সাফ্ফাত ডাউনলোড করুন:

সূরা Assaaffat mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Assaaffat শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত সাফ্ফাত  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Thursday, May 16, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب