কোরান সূরা লুকমান আয়াত 12 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Luqman ayat 12 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা লুকমান আয়াত 12 আরবি পাঠে(Luqman).
  
   

﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ۚ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ﴾
[ لقمان: 12]

আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। [সূরা লুকমান: 12]

Surah Luqman in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Luqman ayat 12


আর ইতিপূর্বে আমরা লুকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এই বলে -- ''আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আর যে, কেউ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো কৃতজ্ঞতা দেখায় নিজেরই জন্যে, আর যে-কেউ অকৃতজ্ঞতা দেখায় আল্লাহ্ তো তবে স্বয়ংসমৃদ্ধ, পরম প্রশংসিত।’’


Tafsir Mokhtasar Bangla


১২. আর আমি লুকমানকে দ্বীনের বুঝ ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সূ2 জ্ঞান দান করেছি। তাকে বলেছি, হে লুকমান! তুমি তোমার রবের শুকরিয়া আদায় করো ওই নি‘আমতের যা তিনি তাঁর আনুগত্যের তাওফীক দানের মাধ্যমে তোমাকে দান করেছেন। বস্তুতঃ যে শুকরিয়া আদায় করে মূলতঃ সে নিজেরই উপকার করলো। কেননা, আল্লাহ তাঁর শুকরিয়া পাওয়ার অমুখাপেক্ষী। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয় তার ক্ষতি তাকেই পোহাতে হবে। সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা, তিনি তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষিতার ঊর্ধ্বে, সর্বাবস্থায় তিনি প্রশংসিত।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


আমি লুকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম[১] ( আর বলেছিলাম ), ‘তুমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।[২] যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা নিজেরই জন্য করে এবং কেউ অকৃতজ্ঞতা করলে নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।’ [১] লুকমান আল্লাহর একজন নেক বান্দা ছিলেন, যাঁকে আল্লাহ তাআলা হিকমত অর্থাৎ, সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি এবং দ্বীনী ইলমে উচ্চ স্থান দান করেছিলেন। একদা তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসা করল যে, 'আপনি এই জ্ঞান-বুদ্ধি কিভাবে অর্জন করলেন?' তার উত্তরে তিনি বললেন, 'সত্যবাদিতা ব্যবহার করে, আমানত রক্ষা করে, বাজে কথা থেকে দূরে থেকে এবং নীরবতা অবলম্বন করে।' তাঁর প্রজ্ঞা ও হিকমত পূর্ণ একটি ঘটনা এ রকমও প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি একজন দাস ছিলেন। একদা তাঁকে তাঁর মালিক বললেন, 'ছাগল যবেহ করে তার মধ্য হতে সর্বোৎকৃষ্ট দুই টুকরো কেটে নিয়ে এস।' সুতরাং তিনি জিভ ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে এসে দিলেন। অন্য এক দিন তাঁর মালিক তাঁকে ছাগল যবেহ করে তার মধ্য হতে সব থেকে নিকৃষ্ট দুই টুকরো নিয়ে আসার আদেশ করলে তিনি পুনরায় জিভ ও হৃৎপিণ্ড নিয়ে উপস্থিত হলেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, 'জিভ ও হৃৎপিণ্ড যদি ঠিক থাকে, তাহলে তা সর্বোৎকৃষ্ট জীব। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তার চেয়ে নিকৃষ্ট জীব আর কিছু হতে পারে না। ( ইবনে কাসীর ) [২] কৃতজ্ঞতা বা শুক্র এর অর্থ হল, আল্লাহর নিয়ামতের উপর তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর আদেশ মেনে চলা।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


আর অবশ্যই আমরা লুক্‌মান [] কে হিকমত [] দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা করে নিজেরই জন্য এবং কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ্ তো অভাবমুক্ত, চির প্রশংসিত []। [] কোন কোন তাবেয়ী আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত লুকমানকে আইইয়্যূব আলাইহিস সালাম-এর ভাগ্নে বলেছেন। আবার কেউ কেউ তার খালাতো ভাই বলে বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন তফসীরে রয়েছে যে, তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেছিলেন এবং দাউদ আলাইহিস সালাম-এর সময়েও বেঁচে ছিলেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, লুকমান ছিলেন একজন হাবশী গোলাম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, মুজাহিদ, ইকরিমাহ ও খালেদ আর-রাবাঈও একথাই বলেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি ছিলেন নূবার অধিবাসী। অপর বর্ণনায় তিনি বলেন, লুকমান চেপ্টা নাকবিশিষ্ট, বেঁটে আকারের হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন। সাঈদ ইবনে মুসাইয়েবের উক্তি হচ্ছে, তিনি মিসরের কালো লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মুজাহিদ বলেন, তিনি ফাটা পা ও পুরু ঠোঁটবিশিষ্ট হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন। এ বক্তব্যগুলো প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছে। কারণ আরবের লোকেরা কালো বর্ণের মানুষদেরকে সেকালে প্রায়ই হাবশী বলতো। আর নূবা হচ্ছে মিসরের দক্ষিণে এবং সূদানের উত্তরে অবস্থিত একটি এলাকা। তাই উক্ত বক্তব্যগুলোতে একই ব্যক্তিকে নূবী, মিসরীয় ও হাবশী বলা কেবলমাত্র শাব্দিক বিরোধ ছাড়া আর কিছুই নয়। অর্থের দিক দিয়ে এখানে কোন বিরোধ নেই। এ ব্যক্তি আসলে বাসিন্দা ছিলেন মাদ্‌য়ান ও আইল ( বর্তমান আকাবাহ ) এলাকার। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনা অনুযায়ী লুকমান কাঠ চেরার কাজ করতেন। আবার কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি দর্জি ছিলেন। কোন কোন গবেষক লুকমানকে আদ জাতির অন্তর্ভুক্ত ইয়ামনের বাদশাহ মনে করতো। তাদের মতে ‘আদ জাতির ওপর আল্লাহর আযাব নাযিল হবার পর হূদ আলাইহিস সালামের সাথে তাদের যে ঈমানদার অংশটি বেঁচে গিয়েছিল লুকমান ছিলেন তাঁদেরই বংশোদ্ভূত। ইয়ামনে এ জাতির যে শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তিনি ছিলেন তার অন্যতম শাসক ও বাদশাহ। কিন্তু প্ৰবীণ সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্য বর্ণনাগুলো এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সম্ভবত: এর কারণ হচ্ছে, ইতিহাসে লুকমান ইব্‌ন ‘আদ নামক এক ব্যক্তি প্ৰসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। কোন কোন গবেষক তাকে এই লুকমান হাকীমই ধরে নিয়েছেন। আল্লামা সুহাইলী এ সন্দেহ অপনোদন করে বলেছেন যে, লুকমান হাকীম ও লুকমান ইবনে আদ দু'জন আলাদা ব্যক্তি। তাদেরকে এক ব্যক্তি মনে করা ঠিক নয়। লুকমান কোন নবী ছিলেন না; বরং ওলী, প্রজ্ঞাবান ও বিশিষ্ট মনীষী ছিলেন। ইবনে কাসীর বলেন যে, প্রাচীন ইসলামী মনীষীবৃন্দ এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি নবী ছিলেন না। কেবল ইকরিম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু এর বর্ণনাসূত্র বা সনদ দুর্বল। ইমাম বগবী বলেন, একথা সর্বসম্মত যে, তিনি বিশিষ্ট ফকীহ ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন, নবী ছিলেন না। ইবনে কাসীর আরো বলেন, তার সম্পর্কে কাতাদাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ লুকমানকে নবুওয়ত ও হেকমত বা প্রজ্ঞা-দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ দেন। তিনি হেকমতই গ্রহণ করেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, তাকে নবুওয়ত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তিনি আরয করলেন যে, “ যদি আমার প্রতি এটা গ্ৰহণ করার নির্দেশ হয়ে থাকে, তবে তা শিরোধার্য । অন্যথায় আমাকে ক্ষমা করুন।” কাতাদা থেকে আরও বর্ণিত আছে যে, লুকমানের নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আপনি হেকমতকে নবুওয়ত থেকে সমধিক গ্রহণযোগ্য কেন মনে করলেন, যখন আপনাকে যে কোন একটা গ্রহণ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল? তিনি বললেন যে, নবুওয়ত বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদ। যদি তা আমার ইচ্ছা ব্যতীত প্ৰদান করা হতো, তবে স্বয়ং মহান আল্লাহ তার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন যাতে আমি সে কর্তব্যসমূহ পালন করতে সক্ষম হই। কিন্তু যদি আমি তা স্বেচ্ছায় চেয়ে নিতাম, তবে সে দায়িত্ব আমার উপর বর্তাতো। বর্ণিত আছে যে, দাউদ আলাইহিস সালাম-এর আবির্ভাবের পূর্বে লুকমান শরীয়তী মাসআলাসমূহ সম্পর্কে জনগণের নিকট ফতোয়া দিতেন। দাউদ আলাইহিস সালাম-এর নবুওয়ত প্ৰাপ্তির পর তিনি এ ফতোয়া প্ৰদান কার্য পরিত্যাগ করেন এই বলে যে, এখন আর তার প্রয়োজন নেই। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তিনি ইসরাঈল গোত্রের বিচারপতি ছিলেন। লুকমানের বহু জ্ঞানগর্ভ বাণী লিপিবদ্ধ আছে। কোন কোন তাবেয়ী বলেন, আমি লুকমানের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দশ হাজারের চাইতেও বেশী অধ্যায় অধ্যায়ন করেছি। একদিন লুকমান এক বিরাট সমাবেশে উপস্থিত জনমণ্ডলীকে বহু জ্ঞানগর্ভ কথা শোনাচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলো যে, আপনি কি সে ব্যক্তি – যে আমার সাথে অমুক বনে ছাগল চরাতো? লুকমান বলেন, হ্যাঁ-আমিই সে লোক। অতঃপর লোকটি বললো, তবে আপনি এ মর্যাদা কিভাবে লাভ করলেন যে, আল্লাহ্‌র গোটা সৃষ্টিকুল আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং আপনার বাণী শোনার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে এসে জমায়েত হয়? উত্তরে লুকমান বললেন যে, এর কারণ আমার দুটি কাজ-[ এক ] সর্বদা সত্য বলা, [ দুই ] অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা পরিহার করা। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, লুকমান বলেছেন, এমন কতগুলো কাজ আছে যা আমাকে এর স্তরে উন্নীত করেছে। যদি তুমি তা গ্রহণ কর, তবে তুমিও এ মর্যাদা ও স্থান লাভ করতে পারবে। সে কাজগুলো এই : নিজের দৃষ্টি নিম্নমুখী রাখা এবং মুখ বন্ধ করা, হালাল জীবিকাতে তুষ্ট থাকা, নিজের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা, সত্য কথায় অটল থাকা, অঙ্গীকার পূর্ণ করা, মেহমানের আদর-আপ্যায়ন ও তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, প্রতিবেশীর প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় কাজ ও কথা পরিহার করা। [ ইবন কাসীর: আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ] [] হেকমত অর্থ প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, পাণ্ডিত্য, যুগ ও সময়োপযোগী কথা বলা ও কাজ করার যোগ্যতা ইত্যাদি। [ তাবারী, ইবন কাসীর, বাগভী ] [] অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফারী তার নিজের জন্য ক্ষতিকর। এতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না। তিনি অমুখাপেক্ষী। কারো কৃতজ্ঞতার মুখাপেক্ষী নন। কারো কৃতজ্ঞতা তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বে কোন বৃদ্ধি ঘটায় না। বান্দার যাবতীয় নিয়ামত যে একমাত্র তাঁরই দান, কারো অকৃতজ্ঞতা ও কুফরী এ জাজ্জ্বল্যমান সত্যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। কেউ তাঁর প্রশংসা করুক বা নাই করুক। তিনি আপনা আপনিই প্রশংসিত। বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি অণু-কণিকা তাঁর পূর্ণতা ও সৌন্দর্য এবং তাঁর স্রষ্টা ও অন্নদাতা হবার সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং প্রত্যেকটি সৃষ্ট বস্তু নিজের সমগ্র সত্তা দিয়ে তাঁর প্রশংসা গেয়ে চলছে। [ ফাতহুল কাদীর ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


হযরত লোকমান নবী ছিলেন কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ গুরুজনের মতে তিনি নবী ছিলেন না; বরং পরহেযগার, অলী এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একজন হাবশী ক্রীতদাস ও ছুতার ছিলেন। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রঃ ) বলেন যে, তিনি মিসরে বসবাসকারী একজন হাবশী ছিলেন। তাঁকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল, কিন্তু নবুওয়াত দেয়া হয়নি।হযরত লোকমান সম্পর্কে হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ্ ( রাঃ )-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “ তিনি ছিলেন বেঁটে, উঁচু নাক ও মোটা ঠোট বিশিষ্ট একজন জ্ঞানী ব্যক্তি ।”আব্দুর রহমান ইবনে হারমালা ( রঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা এক কৃষ্ণ বর্ণের হাবশী ক্রীতদাস হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রঃ )-এর নিকট আগমন করে। তাকে তিনি বলেনঃ “ তোমার দেহের রঙ কালো বলে তুমি নিজেকে ঘৃণ্য মনে করো না । তিনজন লোক, যারা সমস্ত লোক অপেক্ষা উত্তম ছিলেন তাঁরা। সবাই কালো বর্ণের ছিলেন। প্রথম হলেন হযরত বিলাল ( রাঃ ), যিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর গোলাম ছিলেন। দ্বিতীয় হলেন হযরত মুহাজ্জা ( রাঃ ), যিনি ছিলেন হযরত উমার ফারুক ( রাঃ )-এর গোলাম। তৃতীয় হলেন হযরত লোকমান হাকীম, যিনি ছিলেন হাবশের একজন সাধারণ অধিবাসী।হযরত খালিদ রাবঈ ( রঃ ) বলেন যে, হযরত লোকমান ছিলেন একজন হাবশী ক্রীতদাস ও ছুতার। একদা তার মনিব তাঁকে বলেঃ “ তুমি একটি বকরী যবেহ কর এবং ওর গোশতের উৎকৃষ্ট দু’টি টুকরা আমার কাছে নিয়ে এসো ।” তিনি হৃৎপিণ্ড ও জিহ্বা নিয়ে আসলেন। কিছুদিন পর পুনরায় তাঁর মনিব তাঁকে এই আদেশই করলো এবং বকরীর গোশতের নিকৃষ্ট দু’টি খণ্ড আনতে বললো। তিনি এবারও উক্ত দুটি জিনিসই নিয়ে আসলেন। তার মনিব তখন বললো: “ ব্যাপার কি? এটা কি ধরনের কাজ হলো?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “এ দু’টি যখন ভাল থাকে তখন দেহের কোন অঙ্গই এ দু’টির চেয়ে ভাল নয় । আবার এ দুটি জিনিস যখন খারাপ হয়ে যায় তখন সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস এ দু’টোই হয়ে থাকে।” হযরত মুজাহিদ ( রঃ ) বলেন যে, হযরত লোকমান নবী ছিলেন না, একজন সৎ লোক ছিলেন। তিনি ছিলেন কালো বর্ণের একজন ক্রীতদাস। তাঁর ঠোট ছিল মোটা এবং পদযুগল ছিল মাংসপূর্ণ।অন্য এক বুযর্গ ব্যক্তি হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বানী ইসরাঈলের একজন বিচারক ছিলেন। আর একটি উক্তিতে আছে যে, হযরত দাউদ ( আঃ )-এর যুগে হযরত লোকমান জীবিত ছিলেন। একদা তিনি কোন এক মজলিসে ওয়াজ করছিলেন। তখন একজন রাখাল তাকে বলেঃ “ তুমি কি ঐ ব্যক্তি নও যে অমুক অমুক জায়গায় আমার সাথে বকরী চরাতে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যা, আমি ঐ ব্যক্তিই বটে ।” রাখালটি তখন তাকে প্রশ্ন করে- “ তাহলে তুমি কি করে এ মর্যাদা লাভ করলে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “সত্য কথা বলা এবং বাজে কথা না বলার কারণেই আমি এই মর্যাদা লাভ করেছি ।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি তাঁর উচ্চ মর্যাদা লাভের কারণ বর্ণনায় বলেনঃ “ আমার এ উচ্চ মর্যাদা লাভের কারণ হলো আল্লাহর অনুগ্রহ, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং বাজে কাজ বর্জন ।” মোটকথা, এরূপই পরিষ্কার রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, তিনি নবী ছিলেন না। এসব বর্ণনায় এও রয়েছে যে, তিনি গোলাম ছিলেন। এর দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি নবী ছিলেন না। কেননা, দাসত্ব নবুওয়াতের বিপরীত। নবীরা সবাই উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। এ জন্যেই পূর্বযুগীয় জমহুর উলামার উক্তি এই যে, হযরত লোকমান নবী ছিলেন না। হ্যা, তবে ইকরামা ( রঃ ) বলেন যে, তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু এটা সঠিক প্রমাণিত হবে যদি সনদ সহীহ হয়। কিন্তু এর সনদে জাবির ইবনে ইয়াযীদ জুফী রয়েছেন, যিনি দুর্বল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। বর্ণিত আছে যে, হযরত লোকমান হাকীমকে কোন একটি লোক জিজ্ঞেস করলো: “ তুমি তো লোকমান, তুমি কি বানু হাসহাসের গোলাম নও ।” তিনি উত্তর দিলেনঃ “ হ্যা, তাই ।” লোকটি আবার প্রশ্ন করলো: “ তুমি কি বী চরাতে না?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হ্যা, চরাতাম বটে ।” পুনরায় লোকটি জিজ্ঞেস করলো: “ তুমি কি কৃষ্ণ বর্ণের লোক নও?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি যে কৃষ্ণ বর্ণের লোক তা তো দেখতেই পাচ্ছ ভাই । এখন তুমি আমাকে কি বলতে চাও, বল।” লোকটি বললো: “ তাহলে বল তো, তোমার মধ্যে কি এমন গুণ আছে যার কারণে তোমার মজলিস সদা লোকে ভরপুর থাকে? জনগণ তোমার দ্বারে আসে এবং তোমার কথা আগ্রহের সাথে শ্রবণ করে?” তিনি জবাব দিলেনঃ “আমি তোমাকে যে কথাগুলো বলছি সেগুলোর উপর আমল কর, দেখবে, তুমিও আমারই মত হয়ে গেছে । কথাগুলো হলো- হারাম জিনিস হতে চক্ষু বন্ধ রাখবে, জিহ্বাকে অশ্লীল কথা হতে সংযত রাখবে, হালাল খাদ্য খাবে, স্বীয় গুপ্তাঙ্গের হিফাযত করবে, সত্য কথা বলবে, অঙ্গীকার পূরণ করবে, অতিথির সম্মান করবে, প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রাখবে এবং বাজে ও অনর্থক কাজ পরিত্যাগ করবে। এসব গুণের কারণেই আমি এই মর্যাদা লাভ করেছি।” একদা হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) হযরত লোকমান হাকীমের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, হযরত লোকমান কোন বড় পরিবারের লোক ছিলেন না এবং ধনী ও সম্ভ্রান্ত বংশেরও ছিলেন না। হ্যা, তবে তাঁর মধ্যে বহু উত্তম গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন চরিত্রবান, স্বল্পভাষী, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী। তিনি দিনে শয়ন করতেন না, লোকজনের সামনে থুথু ফেলতেন না, মানুষের সামনে প্রস্রাব, পায়খানা ও গোসল করতেন না, বাজে কাজ হতে দূরে থাকতেন। তিনি হাসতেন না এবং যে কথা বলতেন তা জ্ঞানপূর্ণ কথাই হতো। তাঁর ছেলে মারা গেলে তিনি ক্রন্দন করেননি। তিনি বাদশাহ ও আমীরদের দরবারে একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই গমন করতেন যে, যেন চিন্তা-গবেষণা এবং শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের সুযোগ লাভ হয়। এ জন্যেই তিনি বুযর্গী লাভ করেছিলেন।হযরত কাতাদা ( রঃ ) একটি বিস্ময়কর কথা বর্ণনা করেছেন। তা এই যে, হযরত লোকমানকে নবুওয়াত ও হিকমতের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার দেয়া হলে তিনি হিকমতকেই গ্রহণ করেন। তখন রাত্রে তাঁর ঘুমন্ত অবস্থায় হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) তাঁর নিকট আগমন করেন এবং সারা রাত ধরে তাঁর উপর হিকমত বর্ষণ করতে থাকেন। সকাল হলে দেখা যায় যে, তাঁর মুখ দিয়ে যতগুলো কথা বের হচ্ছে সবই জ্ঞানপূর্ণ কথা। তাঁকে নবুওয়াতের উপর হিকমতকে পছন্দ করার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “ যদি আল্লাহ্ আমাকে নবী বানিয়ে দিতেন তবে তো কোন কথাই থাকতো না । আমি ইনশাআল্লাহ নবুওয়াতের দায়িত্ব ভালভাবেই পালন করতে পারতাম। কিন্তু যখন আমাকে নবুওয়াত ও হিকমতের মধ্যে একটিকে বেছে নেয়ার অধিকার দেয়া হলো তখন আমি ভয় পেলাম যে, হয়তো নবুওয়াতের দায়িত্ব আমি ভালরূপে পালন করতে পারবো না। তাই আমি হিকমতকেই গ্রহণ করলাম।” ( এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ ) বর্ণনা করেছেন। এতে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন সাঈদ ইবনে বাশীর, যিনি দুর্বল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)হযরত কাতাদা ( রঃ ) এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন যে, হিকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হিকমতের মাধ্যমে ইসলামকে ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করা। হযরত লোকমান নবী ছিলেন না এবং তাঁর কাছে অহীও আসতো না। সুতরাং হিকমত দ্বারা বোধশক্তি, জ্ঞান ও শিক্ষাকে বুঝানো হয়েছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি লোকমানকে নির্দেশ দিয়েছিলাম- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। জেনে রেখো যে, যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা নিজেরই মঙ্গলের জন্যে করে, এতে আল্লাহর লাভ-লোকসান কিছুই নেই। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ ( আরবি ) অর্থাৎ “ যারা সঙ্কর্ম করে তারা নিজেদেরই জন্যে রচনা করে সুখ-শয্যা ।( ৩০:৪৪ ) এখানে বলা হয়েছেঃ যে অকৃতজ্ঞ হয় তার জানা উচিত যে, এতে আল্লাহর কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। তিনি বান্দাদের কাজের ব্যাপারে বেপরোয়া। বান্দাদের সবাই আল্লাহ তা'আলার মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ তা'আলা কারো মুখাপেক্ষী নন। সমগ্র ধরাবাসী যদি কাফির হয়ে যায়। তাহলেও তার কিছুই আসে যায় না। তিনি সকল হতেই অভাবমুক্ত। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমরা তার ছাড়া আর কারো দাসত্ব করি না।

সূরা লুকমান আয়াত 12 সূরা

ولقد آتينا لقمان الحكمة أن اشكر لله ومن يشكر فإنما يشكر لنفسه ومن كفر فإن الله غني حميد

سورة: لقمان - آية: ( 12 )  - جزء: ( 21 )  -  صفحة: ( 412 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. তার হিসাব-নিকাশ সহজে হয়ে যাবে
  2. এটা এ কারণে যে, তাদের কাছে তাদের রসূলগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলীসহ আগমন করলে তারা বলতঃ মানুষই
  3. হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা
  4. আর মুশরিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে
  5. আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে,
  6. আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃষ্টি
  7. যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা যাদু, আমরা একে মানি না।
  8. আল্লাহই সত্যসহ কিতাব ও ইনসাফের মানদন্ড নাযিল করেছেন। আপনি কি জানেন, সম্ভবতঃ কেয়ামত নিকটবর্তী।
  9. তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড।
  10. এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা লুকমান ডাউনলোড করুন:

সূরা Luqman mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Luqman শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত লুকমান  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত লুকমান  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত লুকমান  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত লুকমান  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত লুকমান  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত লুকমান  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত লুকমান  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত লুকমান  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত লুকমান  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত লুকমান  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত লুকমান  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত লুকমান  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত লুকমান  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত লুকমান  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত লুকমান  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত লুকমান  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত লুকমান  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত লুকমান  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত লুকমান  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত লুকমান  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত লুকমান  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত লুকমান  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত লুকমান  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত লুকমান  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত লুকমান  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Thursday, May 9, 2024

لا تنسنا من دعوة صالحة بظهر الغيب