কোরান সূরা নিসা আয়াত 12 তাফসীর

  1. Mokhtasar
  2. Ahsanul Bayan
  3. AbuBakr Zakaria
  4. Ibn Kathir
Surah Nisa ayat 12 Bangla tafsir - তাফসীর ইবনে কাসীর - Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান - Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স - বাংলা ভাষায় নোবেল কোরআনের অর্থের অনুবাদ উর্দু ভাষা ও ইংরেজি ভাষা & তাফসীর ইবনে কাসীর : সূরা নিসা আয়াত 12 আরবি পাঠে(Nisa).
  
   

﴿۞ وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوا أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ﴾
[ النساء: 12]

আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। [সূরা নিসা: 12]

Surah An-Nisa in Bangla

জহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 12


আর তোমাদের স্ত্রীরা যা রেখে যায় তার অর্ধেক তোমাদের জন্য যদি তাদের কোনো ছেলেপিলে না থাকে, কিন্তু যদি তাদের সন্তান থাকে তবে তোমাদের জন্য তারা যা রেখে গেছে তার এক-চতুর্থাংশ, -- কোনো ওছিয়ৎনামায় তারা উইল করে থাকলে বা দেনা থাকলে তা আদায়ের পরে। আর তাদের জন্য যা তোমরা রেখে যাও তার এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে, কিন্তু যদি তোমাদের ছেলেপিলে থাকে তবে তাদের জন্য যা তোমরা রেখে গেছ তার আট ভাগের একভাগ, -- কোনো ওছিয়ৎনামায় তোমরা উইল করে থাকলে বা দেনা থাকলে তা আদায়ের পরে। আর যদি কোনো পুরুষ বা স্ত্রীলোককে নিঃসন্তান-ভাবে উত্তরাধিকার করতে হয় ও তার এক ভাই বা এক বোন থাকে তবে তাদের উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ, কিন্তু যদি তারা এর চেয়ে বেশী হয় তবে তারা হবে এক তৃতীয়াংশের অংশীদার, -- কোনো ওছিয়ৎনামায় তারা উইল করে থাকলে বা দেনা থাকলে তা আদায়ের পরে, -- কোনো ক্ষতি না করে, এ হচ্ছে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে বিধান। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা, অতি অমায়িক।


Tafsir Mokhtasar Bangla


১২. হে স্বামীরা! তোমরা সন্তানহীন স্ত্রীর অর্ধেক মিরাস পাবে। সন্তান থাকলে তাদের মিরাসের এক চতুর্থাংশ পাবে। এ বন্টনটি মূলতঃ তাদের অসিয়ত বাস্তবায়ন এবং তাদের জিম্মায় থাকা ঋণসমূহ আদায়ের পরই হবে। হে স্বামীরা! তোমরা নিঃসন্তান হলে তোমাদের মিরাস থেকে তোমাদের স্ত্রীরা এক চতুর্থাংশ পাবে। আর থাকলে মিরাসের এক অষ্টমাংশ পাবে। এ বন্টনটিও মূলতঃ তোমাদের অসিয়ত বাস্তবায়ন এবং তোমাদের জিম্মায় থাকা ঋণসমূহ আদায়ের পরই হবে। পুরুষ বা মহিলা মাতা-পিতা এবং সন্তানহীন মারা গেলে তাদের বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বোন থাকলে তাদের বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বোন তাদের জন্য নির্ধারিত এক ষষ্টমাংশই পাবে। আর যদি তাদের বৈপিত্রেয় ভাই অথবা বোন একাধিক থাকে তাহলে তাদের সবার জন্য এক তৃতীয়াংশ মিরাস রয়েছে যাতে তারা নির্ধারিতভাবে সমান অংশীদার হবে। তাতে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার। তবে তারাও তাদের অংশ গ্রহণ করবে মৃতের অসিয়ত বাস্তবায়ন এবং তার জিম্মায় থাকা ঋণসমূহ আদায়ের পরই। এ শর্তে যে, তার ওসিয়তও তার ওয়ারিশদের কোন ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না। যেমন: তার ওসিয়ত মিরাসের এক তৃতীয়াংশের বেশি হওয়া। আয়াতে উল্লেখিত বিধানটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি চুক্তিস্বরূপ যা তিনি তোমাদের উপর বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতের সব লাভজনক বিষয় জানেন। তিনি ধৈর্যশীল। কোন পাপীকে তিনি দ্রæত শাস্তি দেন না।

Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান


তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে, কিন্তু তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ। [১] এ তারা যা অসিয়ৎ করে তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর। আর তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ তাদের জন্য, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ।[২] এ তোমরা যা অসিয়ৎ কর তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর। যদি কোন পুরুষ অথবা নারী পিতা-মাতা ও সন্তানহীন অবস্থায় কাউকে উত্তরাধিকারী করে[৩] এবং তার এক ( বৈপিত্রেয় ) ভাই ও বোন থাকে,[৪] তবে প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। তারা এর অধিক হলে সকলে এক-তৃতীয়াংশের অংশীদার হবে।[৫] এ যা অসিয়ৎ করা হয় তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর[৬] এবং এ যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়।[৭] এ হল আল্লাহর নির্দেশ। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম সহনশীল। [১] সন্তানাদি না থাকা অবস্থায় পুত্রের সন্তানরা অর্থাৎ, পোতারা সন্তানের বিধানভুক্ত হবে। এ ব্যাপারে উলামাগণ ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। ( ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর ) মৃত স্বামীর সন্তানাদির বিধানও অনুরূপ, তাতে তারা উত্তরাধিকারিণী এই স্ত্রীর গর্ভজাত হোক অথবা তার অপর কোন স্ত্রীর গর্ভজাত হোক। মৃতা স্ত্রীর সন্তানাদির ব্যাপারটাও অনুরূপ, তাতে তারা এই স্ত্রীর উত্তরাধিকারী স্বামীর হোক অথবা স্ত্রীর পূর্বের স্বামীর হোক।[২] স্ত্রী একজন হলে সে এক চতুর্থাংশ অথবা এক অষ্টমাংশ পাবে। অনুরূপ একাধিক স্ত্রী হলেও এই অংশই ( এক চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশ ) তাদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। প্রত্যেকে একাকিনী এক চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশ পাবে না। এ ব্যাপারেও সকলে একমত। ( ফাতহুল ক্বাদীর ) [৩] كَلالَة এর অর্থ হল, এমন মৃত যার না পিতা আছে, না পুত্র। এটা إكلِيل ধাতু থেকে গঠিত। আর তা এমন জিনিস ( মুকুট )-কে বলা হয় যা মাথাকে তার চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে। 'কালালা'কে এই জন্যই 'কালালা' বলা হয় যে, মূল বা শাখা হিসাবে তো তার কেউ ওয়ারিস হয় না, কিন্তু ধার-পাশ দিয়ে ওয়ারিস গণ্য হয়ে যায়। ( ফাতহুল ক্বাদীর ও ইবনে কাসীর ) বলা হয় যে, 'কালালা' كلل ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ, ক্লান্ত হয়ে পড়া। অর্থাৎ, বংশ সূত্র মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, সামনে আর অগ্রসর হতে পারেনি।[৪] এ থেকে বৈপিত্রেয় ( এক মাতার গর্ভে ভিন্ন পিতার ঔরসজাত ) ভাই-বোনকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, সহোদর ও বৈমাত্রেয় ভাই-বোনদের অংশ এই রকম নয়। এদের বর্ণনা সূরার শেষে আসবে। আর এ মতও সর্বসম্মত মত। আসলে জন্মসূত্র সম্পর্কিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে [لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ] ( একটি পুরুষের ভাগ দুটি মহিলার সমান ) নিয়ম চলে। এই কারণেই বেটা-বেটীদের জন্য এখানে এবং ভাই-বোনদের জন্য সূরা নিসার শেষের আয়াতে ( ৪:১৭৬ ) এই নিয়মের কথাই আলোচিত হয়েছে। কিন্তু মায়ের সন্তানদের ( বৈপিত্রেয় ভাই-বোনদের ) যেহেতু জন্মসূত্রের নিয়মে অংশ ভাগ হয় না, তাই তাদের ( নারী-পুরুষ ) সকলকে সমান সমান অংশ দেওয়া হয়। কথা হল, কেবল একজন ভাই অথবা একজন বোন হলে, প্রত্যেকে এক ষষ্ঠাংশ পাবে।[৫] আর একাধিক হলে সকলে এক তৃতীয়াংশে শরীক হবে। অনুরূপ এদের মধ্যে নারী-পুরুষেরও কোন পার্থক্য হবে না। নারী-পুরুষ সকলে সমান সমান অংশ পাবে। বিঃ দ্রষ্টব্যঃ বৈপিত্রেয় ভাই-বোন কোন কোন বিধানে অন্যান্য ওয়ারিসদের থেকে ভিন্ন। যেমনঃ ( ক ) এরা কেবল তাদের মায়ের কারণে ওয়ারিস হবে। ( খ ) এদের নারী-পুরুষের অংশ সমান সমান হবে। ( গ ) এরা তখনই ওয়ারিস হবে, যখন মৃত 'কালালা' ( মূল ও শাখাবিহীন ) হবে। অতএব পিতা, পিতামহ, পুত্র এবং পৌত্রের উপস্থিতিতে এরা ওয়ারিস হবে না। ( ঘ ) তারা নারী-পুরুষ যত জনই হোক না কেন, তাদের অংশ এক তৃতীয়াংশের বেশী হবে না এবং যেমন পূর্বে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের মৃত বৈপিত্রেয় ভাই থেকে যে মাল পাবে তাতে নারী ও পুরুষের অংশ সমান সমান হবে; পুরুষরা নারীদের দ্বিগুণ পাবে না। উমার ( রাঃ ) তাঁর রাজত্বকালে এই ফায়সালাই করেছিলেন। ইমাম যুহরী বলেন, উমার ( রাঃ ) যখন এ ফায়সালা করেছেন, তখন অবশ্যই তাঁর কাছে এ ব্যাপারে নবী করীম ( সাঃ ) এর কোন হাদীস ছিল। ( ইবনে কাসীর ) [৬] মীরাসের বিধান বর্ণনা করার সাথে সাথে এখানে তৃতীয়বার বলা হচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির ত্যক্ত সম্পত্তির ভাগাভাগি তার অসিয়ত পালন এবং ঋণ পরিশোধ করার পর হবে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই দু'টি বিষয়ের উপর আমল করা অতীব জরুরী। অতঃপর এ ব্যাপারেও সকলে একমত যে, প্রথমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে, তারপর অসিয়ত কার্যকরী হবে। কিন্তু মহান আল্লাহ তিন স্থানেই অসিয়তের উল্লেখ ঋণের পূর্বে করেছেন। অথচ ক্রমানুযায়ী ঋণের উল্লেখ প্রথমে হওয়া উচিত ছিল। এর কারণ হল, ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব তো মানুষ দেয়, না দিলেও প্রাপক জোর করে তা আদায় করে নেয়। কিন্তু অসিয়তের উপর আমল করা জরুরী মনে করা হয় না। অধিকাংশ লোক এ ব্যাপারে ঢিলামি ও গড়িমসি করে। এই কারণেই অসিয়তের কথা আগে উল্লেখ করে তার গুরুত্বের কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। ( রূহুল মাআ'নী ) বিঃ দ্রষ্টব্যঃ যদি স্ত্রীর দেনমোহর আদায় করা না হয়, তাহলে সেটাও ঋণ বলে গণ্য এবং ত্যক্ত সম্পত্তির ভাগাভাগির পূর্বে তা আদায় করা জরুরী হবে। আর তার ( স্ত্রীর ) নির্দিষ্ট অংশ হবে এ থেকে পৃথক।[৭] এটা এইভাবে যে, অসিয়তের মাধ্যমে কোন ওয়ারিসকে বঞ্চিত করা হবে অথবা কারো অংশে কমবেশী করা হবে কিংবা কেবল ওয়ারিসদের ক্ষতি করার জন্য বলে দেবে যে, অমুকের কাছ থেকে এতটা ঋণ নিয়েছি, অথচ সে কিছুই নেয়নি। অর্থাৎ, ক্ষতির সম্পর্ক অসিয়ত ও ঋণ উভয়েরই সাথে এবং এই উভয় পন্থায় ক্ষতিগ্রস্ত করা নিষেধ ও তা মহাপাপ। পরন্তু এ রকম অসিয়তও বাতিল গণ্য হবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স


তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ; ওসিয়াত পালন এবং ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ; তোমরা যা ওসিয়াত করবে তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর []। আর যদি কোন পুরুষ অথবা নারীর ‘কালালাহ []’ বা পিতা-মাতা ও সন্তানহীন উত্তরাধিকারী হয়, আর থাকে তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন, তবে প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। তারা এর বেশি হলে সবাই সমান অংশীদার হবে তিন ভাগের এক ভাগে; এটা যা ওসিয়াত করা হয় তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর, কারো ক্ষতি না করে []। এ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। [] উপরোক্ত বর্ণনায় স্ত্রীর অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে স্বামীর অংশ ব্যক্ত করা হয়েছে। মৃতা স্ত্রীর যদি কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্বামী তার সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। অবশিষ্ট অর্ধেক থেকে অন্যান্য ওয়ারিশ যেমন মৃতার পিতা-মাতা, ভাই-বোন যথারীতি অংশ পাবে। মৃতার যদি সন্তান থাকে, এক বা একাধিক -পুত্র বা কন্যা, এ স্বামীর ঔরসজাত হোক বা পূর্ববর্তী কোন স্বামীর ঔরসজাত, তবে বর্তমান স্বামী ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর মৃতার সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। অবশিষ্ট তিন-চতুর্থাংশ অন্যান্য ওয়ারিশরা পাবে। পক্ষান্তরে যদি স্বামী মারা যায় এবং তার কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে, এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওসিয়ত কার্যকর করার পর স্ত্রী আট ভাগের এক ভাগ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও উপরোক্ত বিবরণ অনুযায়ী এক অংশ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমহারে বন্টন করা হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রীই এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশ পাবে না, বরং সবাই মিলে এক-চতুর্থাংশ কিংবা এক-অষ্টমাংশে অংশীদার হবে। উভয় অবস্থাতে স্বামী অথবা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তাদের অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে প্রথমে দেখা উচিত যে, যদি স্ত্রীর মাহ্‌র পরিশোধ করা না হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মতই প্রথমে মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে মাহ্‌র পরিশোধ করার পর ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা হবে। মোহারানা দেয়ার পর স্ত্রী ওয়ারিশী স্বত্বে অংশীদার হবার দরুন এ অংশও নেবে। মাহ্‌র পরিশোধ করার পর যদি মৃত স্বামীর সম্পত্তি অবশিষ্ট না থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মত সম্পূর্ণ সম্পত্তি মাহ্‌র বাবদ স্ত্রীকে সমর্পণ করা হবে এবং কোন ওয়ারিশই অংশ পাবে না। [] আলোচ্য আয়াতে ‘কালালাহ’র পরিত্যক্ত সম্পত্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে। ‘কালালাহ’র অনেক সংজ্ঞা রয়েছে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যে মৃত ব্যক্তির উর্ধ্বতন ও অধঃস্তন কেউ নেই, সে-ই ‘কালালাহ’। [ তাবারী ] [] ‘কারো ক্ষতি না করে’ এ কথার দু’টি দিক আছে। প্রথমত, মৃত ব্যক্তি যেন ওসিয়ত বা ঋণের মাধ্যমে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। ওসিয়ত করা কিংবা নিজের যিম্মায় ভিত্তিহীন ঋণ স্বীকার করার মাধ্যমে ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা লুকায়িত না রাখে। এ রকমের ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও কবিরা গোনাহ। দ্বিতীয়ত, যারা কালালাহ জনিত ওয়ারিশ তারাও যেন মৃত ব্যক্তির ন্যায়সঙ্গত অসিয়ত কার্যকরণে কোন প্রকার বাধা না দেয়। ইবন আব্বাস বলেন, ওসিয়্যতে ক্ষতিগ্রস্ত করা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। [ তাবারী ]

Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর


আল্লাহ তা'আলা বলেন-হে পুরুষ লোকেরা! তোমাদের স্ত্রীগণ যা ছেড়ে যাবে, যদি তাদের ছেলে মেয়ে থাকে তবে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে। এটা তাদের অসিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পরে হবে। শৃংখলা বিধান হচ্ছে এই যে, পূর্বে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, তারপরে তাদের অসিয়ত পূরণ করতে হবে এবং পরে তাদের পরিত্যক্ত মাল বন্টিত হবে। এটা এমন একটি জিজ্ঞাস্য বিষয় যার উপর উম্মতের সমস্ত আলেমের ইজমা রয়েছে। এ মাসআলায় পুত্রের হুকুমে পৌত্র রয়েছে। এমনকি তাদের সন্তান এবং সন্তানের সন্তানও এ হুকুমেরই আওতাভুক্ত। অর্থাৎ তাদের বিদ্যমানতায়ও স্বামী তার স্ত্রীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ পাবে।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা স্ত্রীদের অংশের কথা বলছেন যে, তারা স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ পাবে বা এক অষ্টমাংশ পাবে। স্বামীর সন্তান না থাকলে চতুর্থাংশ পাবে এবং সন্তান থাকলে এক অষ্টমাংশ পাবে। এই এক চতুর্থাংশ বা এক অষ্টমাংশের মধ্যে মৃত স্বামীর সমস্ত স্ত্রীই জড়িত থাকবে। চারজন, তিনজন বা দু’জন হলে তাদের মধ্যে এই অংশ সমানভাবে বন্টিত হবে। আর যদি একজনই হয় তবে অংশ সে একাই পাবে। ( আরবী )-এর তাফসীর ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ( আরবী ) 'শব্দটিকে ( আরবী ) শব্দ হতে বের করা হয়েছে ঐ মুকুট ইত্যাদিকে বলা হয় যা মস্তককে চতুর্দিক হতে ঘিরে নেয়। এখানে এর ভাবার্থ এই যে, তার উত্তরাধিকারী হচ্ছে চার পাশের লোক। তার আসল ও ফরা’ অর্থাৎ মূল ও শাখা নেই।হযরত আবু বকর ( রাঃ )-কে ( আরবী ) শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “ আমি আমার মতানুসারে উত্তর দিচ্ছি । যদি সেটা সঠিক হয় তবে তা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই হবে। আর যদি ভুল হয় তবে শয়তানের পক্ষ থেকে হবে। আল্লাহ ও তদীয় রাসূল ( সঃ ) এটা হতে সম্পূর্ণরূপে দোষমুক্ত হবেন। তাকেই বলে যার পিতা ও পুত্র থাকে না। হযরত উমার ফারূক ( রাঃ ) খলীফা হলে তিনিও তার অনুকূলেই মত প্রকাশ করেন এবং বলেন হযরত আবু বকর ( রাঃ )-এর মতের বিরুদ্ধাচরণ করতে আমি লজ্জাবোধ করি। ( তাফসীর-ই ইবনে জারীর ইত্যাদি )হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) বলেনঃ হযরত উমার ( রাঃ )-এর সর্বশেষ যুগ আমি পেয়েছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি-কথা ওটাই যা আমি বলেছি। সঠিক কথা এই যে, ( আরবী ) তাকেই বলা হয় যার পিতা ও পুত্র নেই। হযরত আলী ( রাঃ ), হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ), হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত ( রাঃ ), হযরত আশবাঈ ( রাঃ ), হযরত নাখঈ ( রঃ ), হযরত হাসান বসরী ( রঃ ), হযরত কাতাদা ( রঃ ) এবং হযরত জাবির ইবনে যায়েদও ( রঃ ) এ কথাই বলেন। মদীনাবাসী, কুফাবাসী এবং বসরাবাসীরও এটাই উক্তি। সাতজন ধর্মশাস্ত্রবিদ, ইমাম চতুষ্টয় এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত জমহূর-ই-উলামাও এটাই বলেন। বহু মনীষী এর উপর ইজমা নকল করেছেন। একটি মারফু হাদীসেও এটাই এসেছে। ইবনে লাব্বান ( রঃ ) বলেনঃ “ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে যে, ( আরবী ) তাকেই বলে যার সন্তান থাকে না । কিন্তু প্রথমটিই সঠিক এবং খুব সম্ভব বর্ণনাকারী ভাবার্থই বুঝেনি।অতঃপর বলা হচ্ছে যে-তার ভাই অথবা বোন থাকে, অর্থাৎ মা পক্ষীয় ভাই বা বোন যেমন হযরত সা'দ ইবনে আবি ওক্কাস ( রাঃ ) প্রভৃতি পূর্ববর্তী কয়েকজন মনীষীর কিরআত রয়েছে। হযরত আবু বকর ( রাঃ ) প্রভৃতি ( মহামানব ) হতেও এ তাফসীরই বর্ণিত আছে। তাহলে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ। আর যদি একাধিক থাকে তবে সবাই এক তৃতীয়াংশে অংশীদার হবে। মাতাজাত ভ্রাতাগণ কয়েকটি কারণে অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ হতে পৃথক। একটি এই যে, যারা তাদেরকে উত্তরাধিকারী করে দিচ্ছে তাদেরও তারা উত্তরাধিকারী হবে। যেমন মা। দ্বিতীয় এই যে, তাদের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী অর্থাৎ ভাই ও বোন সমান সমান মীরাস পাবে। তৃতীয় এই যে, তারা শুধুমাত্র ঐ সময়েই উত্তরাধিকারী হবে যখন মৃত ব্যক্তি পিতা ও পুত্রহীন হবে। সুতরাং তারা পিতা ও পিতামহ এবং পুত্র ও পৌত্রের বিদ্যমানতায় উত্তরাধিকারী হবে না। চতুর্থ এই যে, তারা এক তৃতীয়াংশের বেশী কোন অবস্থাতেই পায় না। তাদের সংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন এবং পুরুষই হোক আর স্ত্রীই হোক। হযরত উমার ( রাঃ )-এর ফায়সালা মতে মাতাজাত ভ্রাতা ভগ্নী তাদের মীরাস পরস্পরের মধ্যে এভাবে বন্টন করবে যে, ভাই পাবে দ্বিগুণ এবং বোন পাবে একগুণ। হযরত যুহরী ( রঃ ) বলেন যে, হযরত উমার ( রাঃ ) এ ফায়সালা করতে পারেন না যে পর্যন্ত না তিনি রাসূলুল্লাহ ( সঃ )-এর মুখে শুনে থাকবেন। আয়াতে তো এটা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে যে, যদি একাধিক থাকে তবে তারা সবাই এক তৃতীয়াংশে অংশীদার হবে। এমন অবস্থায় আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে যে, যদি মৃতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে স্বামী, মাতা বা পিতামহী এবং দু' মা পক্ষীয় ভাই ও একটি বা একাধিক বাপ ও মা প্ৰক্ষীয় ভাই থাকে তবে জমহুরের মতে এ অবস্থায় স্বামী অর্ধেক পাবে, মাতা বা পিতামহী পাবে এক ষষ্ঠাংশ, মা পক্ষীয় ভ্রাতাগণ পাবে এক তৃতীয়াংশ এবং এতে মা ও বাপ উভয় পক্ষীয় ভ্রাতাগণও জড়িত থাকবে।আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ফারূক ( রাঃ )-এর যুগে এরূপই একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন তিনি অর্ধেক মাল স্বামীকে প্রদান করেন এবং মা পক্ষীয় ভ্রাতাগণকে প্রদান করেন এক তৃতীয়াংশ। পরে মা ও বাপ উভয় পক্ষীয় ভ্রাতাগণ তাদের নিজেদের দাবীর কথা জানালে তিনি বলেনঃ “ তোমরা তোমাদের মা পক্ষীয় ভাইদের সঙ্গেই অংশীদার রয়েছ । অন্যান্য বর্ণনায় হযরত উসমানেরও ( রাঃ ) এরূপ অংশীদার করে দেয়ার কথা বর্ণিত আছে। এরূপই একটি বর্ণনা হযরত ইবনে মাসউদ ( রাঃ ), যায়েদ ইবনে সাবিত ( রাঃ ) এবং ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে বর্ণিত আছে। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব ( রাঃ ), কাজী শুরাইহ ( রঃ ), মাসরূক ( রঃ ), তাউস ( রঃ ), মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন ( রঃ ), ইবরাহীম নাখঈ ( রঃ ), উমার ইবনে আবদুল আযীয ( রঃ ), সাওরী ( রঃ ) এবং শুয়েক ( রঃ )-এর এটাই উক্তি। ইমাম মালিক ( রঃ ), ইমাম শাফিঈ ( রঃ ) এবং ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ্ও ( রঃ ) এ দিকেই গিয়েছেন।তবে হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ( রাঃ ) এতে অংশীদার হওয়ার মত সমর্থন করতেন না। বরং তিনি ঐ অবস্থায় মা পক্ষীয় সন্তানদেরকে এক তৃতীয়াংশ প্রদান করতেন এবং একই মা-বাপের সন্তানদেরকে কিছুই প্রদান করতেন না। কেননা এরা আসাবা। আর আসাবা তখনই পেয়ে থাকে যখন নির্দিষ্ট অংশ প্রাপকদের অংশ নেয়ার পর বেঁচে যায়। এমন কি হযরত অকী ইবনে জাররাহ ( রঃ ) বলেন যে, হযরত আলী ( রাঃ ) হতে এর বিপরীত করার কথা বর্ণিতই নেই। হযরত উবাই ইবনে কা'ব ( রাঃ ) এবং আবূ মূসা আশ আরীরও ( রাঃ ) এটাই উক্তি। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতেও এটাই প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। শা'বী ( রঃ ), ইবনে আবি লাইলা ( রঃ ), ইমাম আবু হানীফা ( রঃ ), ইমাম আবু ইউসুফ ( রঃ ), মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ( রঃ ), হাসান ইবনে যিয়াদ ( রঃ ), যুফার ইবনে হাযীল ( রঃ ), ইমাম আহমাদ ( রঃ ), ইয়াহইয়া ইবনে আদম ( রঃ ), নাঈদ ইবনে হাম্মাদ ( রঃ ), আবূ সাউর ( রঃ ), দাউদ ইবনে যাহেরীও ( রঃ ) ঐদিকেই গিয়েছেন।অতঃপর বলা হচ্ছে- ‘এই মীরাস বন্টন অসিয়ত পুরো করার পরে হতে হবে। অসিয়ত এমন হবে যে, যেন কোন অবিচার না হয়, কারও কোন ক্ষতি না হয়, কেউ অত্যাচারিত না হয়, কোন উত্তরাধিকারীর উত্তরাধিকার যেন মারা না যায় বা যেন কোন কম বেশী না হয়। এর বিপরীত অসিয়তকারী এবং এরূপ শরীয়ত বিরোধী অসিয়তের ব্যাপারে চেষ্টাকারী হচ্ছে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অমান্যকারী, তাঁর শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণকারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণকারী। রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেনঃ অসিয়তের ব্যাপারে কারও কোন ক্ষতি সাধন করা কাবীরা গুনাহ। ( মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম ) সুনান-ই-নাসাঈর মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ )-এর উক্তিও এভাবেই বর্ণিত আছে। কোন কোন বর্ণনায় হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) হতে তার এ ঘঘাষণার পরে আয়াতের এ অংশটি পাঠ করার কথাও বর্ণিত আছে। ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ )-এর উক্তি অনুসারে সঠিক কথা এই যে, এটা মারফু হাদীস নয়, বরং মাওকুফ হাদীস। মৃত ব্যক্তি স্বীয় উত্তরাধিকারীর জন্যে কিছু চুক্তি করতে পারে কি-না এ ব্যাপারে ইমাম মহোদয়গণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারও কারও মতে এরূপ চুক্তি করা ঠিক নয়। কেননা, এতে অপবাদের সুযোগ রয়েছে।হাদীস শরীফে বিশুদ্ধ সনদে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক হকদারের হক পৌছিয়ে দিয়েছেন । সুতরাং এখন উত্তরাধিকারীর জন্যে কোন অসিয়ত নেই।' ইমাম মালিক ( রঃ ), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ( রঃ ) এবং ইমাম আবু হানীফা ( রঃ )-এরও এটাই উক্তি। ইমাম শাফিঈ ( রঃ )-এর প্রথম উক্তি এটাই ছিল। কিন্তু তাঁর শেষ উক্তি এই যে, চুক্তি করা ঠিক হবে। তাউস ( রঃ ), আতা' ( রঃ ), হাসান বসরী ( রঃ ) এবং হযরত উমার ইবনে আবদুল আযীয ( রঃ )-এরও উক্তি এটাই। হযরত ইমাম বুখারীও ( রঃ ) এটাই পছন্দ করেছেন এবং স্বীয় গ্রন্থ সহীহ বুখারীর মধ্যে এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এর প্রমাণ হিসেবে নিম্নরূপ একটি বর্ণনাও রয়েছেঃ হযরত রাফে ইবনে খুযায়েজ ( রাঃ ) অসিয়ত করেন যে, ফাযারিয়্যাহ যে জিনিসের উপর স্বীয় দরজা বন্ধ রাখে তা যেন ভোলা না হয় ।' হযরত ইমাম বুখারী ( রঃ ) বলেনঃ “ কোন কোন লোক বলেন যে, মৃত ব্যক্তির এ চুক্তি উত্তরাধিকারীগণের কুধারণার কারণেই বৈধ হয় । কিন্তু আমি বলি যে, রাসূলুল্লাহ ( সঃ ) তো বলেছেনঃ ‘তোমরা কুধারণা হতে বেঁচে থাক, কুধারণা সবেচেয়ে বড় মিথ্যাআল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যাদের আমানত তোমদের নিকট রয়েছে তাদের নিকট তোমরা তা পৌছিয়ে দাও । এখানে উত্তরাধিকারী ও অউত্তরাধিকারীকে বিশিষ্ট করা হয়নি। এটা স্মরণীয় বিষয় যে, এ মতবিরোধ ঐ সময় রয়েছে যখন এ চুক্তি প্রকৃতই সঠিক হবে এবং প্রকৃত কাজ অনুযায়ী হবে। যদি এ চুক্তি শুধুমাত্র ছল-চাতুরীর জন্য হয় এবং কোন কোন উত্তরাধিকারীকে বেশী দেয়া ও কাউকে কম দেয়ার জন্যে হয় তবে তা পুরো করা যে হারাম এ বিষয়ে সবাই একমত। এ আয়াতের স্পষ্ট শব্দগুলোও এর অবৈধতার ফতওয়া দিচ্ছে। এরপরে বলা হচ্ছে যে, এগুলো হচ্ছে সেই আল্লাহর নির্দেশ যিনি মহাজ্ঞানী ও সহিষ্ণু।

সূরা নিসা আয়াত 12 সূরা

ولكم نصف ما ترك أزواجكم إن لم يكن لهن ولد فإن كان لهن ولد فلكم الربع مما تركن من بعد وصية يوصين بها أو دين ولهن الربع مما تركتم إن لم يكن لكم ولد فإن كان لكم ولد فلهن الثمن مما تركتم من بعد وصية توصون بها أو دين وإن كان رجل يورث كلالة أو امرأة وله أخ أو أخت فلكل واحد منهما السدس فإن كانوا أكثر من ذلك فهم شركاء في الثلث من بعد وصية يوصى بها أو دين غير مضار وصية من الله والله عليم حليم

سورة: النساء - آية: ( 12 )  - جزء: ( 4 )  -  صفحة: ( 79 )


English Türkçe Indonesia
Русский Français فارسی
تفسير Urdu اعراب

বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত

  1. বনী-ইসলাঈলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মতনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা একারণে
  2. নিশ্চয় তোমরা তাদের অন্তরে আল্লাহ তা’আলা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ। এটা এ কারণে যে, তারা এক
  3. অতঃপর তাদের কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না; তবে এটুকুই যে তারা বলবে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম,
  4. ও পাতাঘন উদ্যান।
  5. বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে,
  6. তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্যে সে ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি
  7. ফেরাউন বলল, হে হামান, তুমি আমার জন্যে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর, হয়তো আমি পৌঁছে
  8. সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।
  9. আমরা আশা করি, আমাদের পালনকর্তা আমাদের ক্রটি-বিচ্যুতি মার্জনা করবেন। কারণ, আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারীদের মধ্যে অগ্রণী।
  10. হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে; যা তোমার কাছে আসেনি, সুতরাং আমার অনুসরণ

বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :

সুরত আল বাক্বারাহ্ আলে ইমরান সুরত আন-নিসা
সুরত আল-মায়েদাহ্ সুরত ইউসুফ সুরত ইব্রাহীম
সুরত আল-হিজর সুরত আল-কাহফ সুরত মারইয়াম
সুরত আল-হাজ্জ সুরত আল-ক্বাসাস আল-‘আনকাবূত
সুরত আস-সাজদা সুরত ইয়াসীন সুরত আদ-দুখান
সুরত আল-ফাতহ সুরত আল-হুজুরাত সুরত ক্বাফ
সুরত আন-নাজম সুরত আর-রাহমান সুরত আল-ওয়াক্বি‘আহ
সুরত আল-হাশর সুরত আল-মুলক সুরত আল-হাক্কাহ্
সুরত আল-ইনশিক্বাক সুরত আল-আ‘লা সুরত আল-গাশিয়াহ্

সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:

সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
সুরত নিসা  ভয়েস আহমেদ আল-আজমি
আহমেদ আল-আজমি
সুরত নিসা  ভয়েস ইব্রাহীম আল-আখদার
ইব্রাহীম আল-আখদার
সুরত নিসা  ভয়েস বান্দার বেলাইলা
বান্দার বেলাইলা
সুরত নিসা  ভয়েস খালিদ গালিলি
খালিদ গালিলি
সুরত নিসা  ভয়েস হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
সুরত নিসা  ভয়েস খলিফা আল টুনাইজি
খলিফা আল টুনাইজি
সুরত নিসা  ভয়েস সাদ আল-গামদি
সাদ আল-গামদি
সুরত নিসা  ভয়েস সৌদ আল-শুরাইম
সৌদ আল-শুরাইম
সুরত নিসা  ভয়েস সালাহ আবু খাতর
সালাহ বুখাতীর
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল বাসিত আব্দুল সামাদ
আবদ এল বাসেট
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল রশিদ সুফি
আবদুল রশিদ সুফি
সুরত নিসা  ভয়েস আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
আব্দুল্লাহ্ বাস্‌ফার
সুরত নিসা  ভয়েস আবদুল্লাহ আওওয়াদ আল-জুহানী
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
সুরত নিসা  ভয়েস আলী আল-হুদায়েফি
আলী আল-হুদায়েফি
সুরত নিসা  ভয়েস আলী জাবের
আলী জাবের
সুরত নিসা  ভয়েস ফারেস আব্বাদ
ফারেস আব্বাদ
সুরত নিসা  ভয়েস মাহের আলমাইকুলই
মাহের আলমাইকুলই
সুরত নিসা  ভয়েস মোহাম্মদ আইয়ুব
মোহাম্মদ আইয়ুব
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মাদ জিব্রীল
মুহাম্মাদ জিব্রীল
সুরত নিসা  ভয়েস মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি
আল-মিনশাবি
সুরত নিসা  ভয়েস আল হোসারি
আল হোসারি
সুরত নিসা  ভয়েস আল-আফসী
মিশারী আল-আফসী
সুরত নিসা  ভয়েস নাসের আল কাতামি
নাসের আল কাতামি
সুরত নিসা  ভয়েস ইয়াসের আল-দোসারি
ইয়াসের আল-দোসারি


Wednesday, December 18, 2024

Please remember us in your sincere prayers