কোরান সূরা নিসা আয়াত 134 তাফসীর
﴿مَّن كَانَ يُرِيدُ ثَوَابَ الدُّنْيَا فَعِندَ اللَّهِ ثَوَابُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا بَصِيرًا﴾
[ النساء: 134]
যে কেউ দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করবে, তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ আল্লাহরই নিকট রয়েছে। আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন। [সূরা নিসা: 134]
Surah An-Nisa in Banglaজহুরুল হক সূরা বাংলা Surah Nisa ayat 134
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ন্যায়বিচারের দৃঢ় প্রতিষ্ঠাতা হও, আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যায় অথবা পিতা-মাতার ও নিকট-আত্মীয়ের, সে ধনী হোক অথবা গরীব, -- কেননা আল্লাহ্ তাদের উভয়ের বেশি নিকটবর্তী। কাজেই কামনার অনুবর্তী হয়ো না পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হও। আর যদি তোমরা বিকৃত করো অথবা ফিরে যাও, তবে নিঃসন্দেহ তোমরা যা করো আল্লাহ্ হচ্ছেন তার পূর্ণ ওয়াকিফহাল।
Tafsir Mokhtasar Bangla
১৩৪. হে মানুষ! তোমাদের কেউ নিজ আমলের মাধ্যমে শুধু দুনিয়ার প্রতিদান চাইলে সে যেন জেনে রাখে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিদান। তাই তাঁর কাছ থেকেই সেগুলোর প্রতিদান কামনা করতে হবে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সব কথাই শুনছেন এবং তোমাদের সকল কাজই দেখছেন। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন।
Tafsir Ahsanul Bayan তাফসীরে আহসানুল বায়ান
যে কেউ ইহকালের পুরস্কার কামনা করে ( সে জেনে রাখুক যে ), আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালের পুরস্কার রয়েছে।[১] আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [১] যেমন, কেউ যদি জিহাদ কেবল গনীমতের মাল লাভের জন্য করে তবে তা কতই না মূর্খতার কথা। যেহেতু মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতের সওয়াব দেওয়ার উপর ক্ষমতাবান। অতএব তাঁর কাছে কেবল একটি জিনিসই কেন চাওয়া হয়? দুটোই কেন চাওয়া হয় না?
Tafsir Abu Bakr Zakaria bangla কিং ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স
কেউ দুনিয়ার পুরস্কার চাইলে তবে ( সে যেন জেনে নেয় যে ) দুনিয়া ও আখেরাতের পুরস্কার আল্লাহর কাছেই রয়েছে [ ১ ]। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [ ১ ] এ আয়াতদৃষ্টে মনে হতে পারে যে, দুনিয়ার পুরস্কার চাইলেই তাকে তা দেয়া হবে। মূলত: অন্য আয়াতে সেটাকে শর্তযুক্ত করে বলা হয়েছে যে, “ যে দুনিয়া চায়, তাকে আমি দুনিয়াতে যা ইচ্ছা করি যতটুকু ইচ্ছা করি প্রদান করি” [ সূরা আল-ইসরা: ১৮ ] সুতরাং দুনিয়া চাইলেই পাবে, তা কিন্তু নয় । যাকে যতটুকু দেয়ার ইচ্ছা আল্লাহর হবে, ততটুকুই সে পাবে। এর বাইরে নয়।
Tafsir ibn kathir bangla তাফসীর ইবনে কাসীর
১৩১-১৩৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, আকাশ ও পৃথিবীর একমাত্র অধিকারী তিনিই। তিনি বলেন-যে নির্দেশাবলী তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে, তার একত্বে বিশ্বাস করবে, তার ইবাদত করবে এবং তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না, এ নির্দেশাবলীই তোমাদের পূর্বে আহলে কিতাবকেও দেয়া হয়েছিল। আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তবে তাঁর কি ক্ষতি করতে পারবে? তিনি তো একাই আকাশ ও পৃথিবীর মালিক। যেমন হযরত মূসা ( আঃ ) স্বীয় গোত্রের লোককে বলেছিলেনঃ যদি তোমরা ও সারা জগতের লোক আল্লাহকে অস্বীকার কর তবুও তিনি তোমাদের হতে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী এবং প্রশংসার যোগ্য। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেন- ( আরবী ) অর্থাৎ তারা অস্বীকার করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, আল্লাহ তাদের হতে অমুখাপেক্ষী হয়েছিলেন, তিনি বড়ই অমুখাপেক্ষী এবং প্রশংসিত। ( ৬৪:৬ )বলা হচ্ছে-তিনি আকাশ ও পৃথিবীর সমুদয় জিনিসের মালিক ও তিনি প্রত্যেকের সমস্ত কার্যের উপর সাক্ষী। কোন কিছুই তার অজানা নেই। তিনি এ ক্ষমতাও রাখেন যে, তোমরা যদি তার অবাধ্যাচরণ কর তবে তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস করে তোমাদের স্থলে অন্য মাখলুক আনয়ন করবেন।যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য সম্প্রদায়কে আনয়ন করবেন যারা তোমাদের মত হবে না। ( ৪৭:৩৮ )পূর্ব যুগের কোন একজন মনীষী বলেনঃ “ তোমরা এ আয়াতটি সম্বন্ধে গবেষণা কর যে, পাপী বান্দারা আল্লাহ তা'আলার নিকট কত তুচ্ছ?' এ আয়াতে এটাও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার নিকট এ কাজ মমাটেই কঠিন নয়! অতঃপর তিনি বলেন-হে ঐ ব্যক্তি! যার মনোবাসনা ও চেষ্টা একমাত্র দুনিয়ার জন্যে সে যেন জেনে নেয় যে, দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত মঙ্গল আল্লাহ তা'আলার অধিকারেই রয়েছে । সুতরাং যখন তুমি তার নিকট দু'টোই যাজ্ঞা করবে তখন তিনি তোমাদেরকে দু'টোই দান করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে অমুখাপেক্ষী করে দেবেন এবং পরিতৃপ্ত করবেন। অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ( আরবী ) অর্থাৎ মানুষের মধ্যে এমনও রয়েছে যে বলে- হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে আপনি দুনিয়া দান করুন, তাদের জন্য পরকালের কোনই অংশ। নেই। আর তাদের মধ্যে এমনও রয়েছে যে বলে- হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে দুনিয়ায় মঙ্গল দান করুন এবং পরকালেও মঙ্গল দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। এদের জন্যে ঐ অংশ রয়েছে। যা তারা অর্জন করেছে।' ( ২:২০০-২০২ ) আর এক আয়াতে আছে ( আরবী ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি পরকালের ক্ষেত্রের আকাঙ্খ করে আমি তার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করে দেবো।' ( ৪২৪ ২০ ) অন্য স্থানে রয়েছে ( আরবী ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুনিয়া যাা করে, তখন আমি যাকে চাই ও যত চাই দুনিয়ায় প্রদান করে থাকি।' ( ১৭:১৮ ) ইমাম ইবনে জারীর ( রঃ ) ( আরবী ) -এ আয়াতের ভাবার্থ। এই বর্ণনা করেছেন যে, মুনাফিকরা দুনিয়া অনুসন্ধানে ঈমান কবুল করেছিল, তারা দুনিয়া পেয়ে যায় বটে, অর্থাৎ মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধলব্ধ মালে অংশীদার হয়ে যায়, কিন্তু পরকালে তাদের জন্যে আল্লাহ তা'আলার নিকট যা তৈরী রয়েছে তা সেখানে তারা পেয়ে যাবে। অর্থাৎ জান্নামের অগ্নি ও তথাকার বিভিন্ন ধরনের শাস্তি। সুতরাং উক্ত ইমাম সাহেবের মতে এ আয়াতটি ( আরবী ) ( ১১:১৫ ) -এ আয়াতটির মতই। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এ আয়াতের অর্থ তো বাহ্যতঃ এটাই, কিন্তু প্রথম আয়াতটিকেও এ অর্থে নেয়ার ব্যাপারে চিন্তার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এ আয়াতের শব্দগুলো ততা স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল দান আল্লাহর হাতেই রয়েছে, কাজেই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত যে, সে যেন তার জীবনটা একটি জিনিসের অনুসন্ধানেই শেষ করে না দেয়। বরং সে যেন দুটো জিনিসই লাভ করার জন্যে সচেষ্ট হয়।বলা হচ্ছে-যে তোমাদেরকে দুনিয়া দিচ্ছেন, আখিরাতের অধিকারীও তিনিই। এটা বড়ই কাপুরুষতার পরিচয় যে, তোমরা তোমাদের চক্ষু বন্ধ করে নেবে এবং অধিক প্রদানকারীর নিকট অল্প যাজ্ঞা করবে। না, না বরং তোমরা ইহকাল ও পরকালের বড় বড় কাজ ও উত্তম উদ্দেশ্য লাভের চেষ্টা কর। স্বীয় লক্ষ্যস্থল শুধু দুনিয়াকে বানিয়ে নিও না, বরং উচ্চাকাঙ্খর দ্বারা দৃষ্টি প্রসারিত করতঃ উভয় জগতে শান্তি লাভের চেষ্টা কর। মনে রেখ যে, উভয় জগতেরই মালিক তিনিই। প্রত্যেক লাভ ও ক্ষতি তারই হাতে রয়েছে। এমন কেউ নেই যে, তার অংশীদার হতে পারে কিংবা তাঁর কার্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য তিনিই বন্টন করেছেন। ধন ভাণ্ডারের চাবিগুলো তিনি স্বীয় হস্তে রেখেছেন। তিনি প্রত্যেক হকদারকেই চেনেন এবং যে যার হকদার তিনি তাকে তাই পৌছিয়ে থাকেন। তোমাদের তো এটা চিন্তা করা উচিত যে, যিনি তোমাদেরকে দেখবার শুনবার ক্ষমতা দান করেছেন, তাঁর দর্শন ও শ্রবণ কেমন হতে পারে।
সূরা নিসা আয়াত 134 সূরা
English | Türkçe | Indonesia |
Русский | Français | فارسی |
تفسير | Urdu | اعراب |
বাংলায় পবিত্র কুরআনের আয়াত
- বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে
- যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন কাফেররা মুমিনদেরকে বলেঃ দুই দলের
- তারা আপনার কাছে কোন সমস্যা উপস্থাপিত করলেই আমি আপনাকে তার সঠিক জওয়াব ও সুন্দর ব্যাখ্যা
- আর আমি মূসা (আঃ) কে প্রেরণ করি আমার নিদর্শনাদি ও সুস্পষ্ট সনদসহ;
- এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে
- শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে
- যারা ছিল আদ, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে?
- অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার
- আমি জানি যে আপনি তাদের কথাবর্তায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন।
- যারা তাতে বিশ্বাস করে না তারা তাকে তড়িৎ কামনা করে। আর যারা বিশ্বাস করে, তারা
বাংলায় কোরআনের সূরা পড়ুন :
সবচেয়ে বিখ্যাত কোরআন তেলাওয়াতকারীদের কণ্ঠে সূরা নিসা ডাউনলোড করুন:
সূরা Nisa mp3 : উচ্চ মানের সাথে সম্পূর্ণ অধ্যায়টি Nisa শুনতে এবং ডাউনলোড করতে আবৃত্তিকারকে বেছে নিন
আহমেদ আল-আজমি
ইব্রাহীম আল-আখদার
বান্দার বেলাইলা
খালিদ গালিলি
হাতেম ফরিদ আল ওয়ার
খলিফা আল টুনাইজি
সাদ আল-গামদি
সৌদ আল-শুরাইম
সালাহ বুখাতীর
আবদ এল বাসেট
আবদুল রশিদ সুফি
আব্দুল্লাহ্ বাস্ফার
আবদুল্লাহ আল-জুহানী
আলী আল-হুদায়েফি
আলী জাবের
ফারেস আব্বাদ
মাহের আলমাইকুলই
মোহাম্মদ আইয়ুব
মুহাম্মদ আল-মুহাইসনি
মুহাম্মাদ জিব্রীল
আল-মিনশাবি
আল হোসারি
মিশারী আল-আফসী
নাসের আল কাতামি
ইয়াসের আল-দোসারি
Please remember us in your sincere prayers